ভারতের শিক্ষিত-মহিলা | দশনপাস্তে গবর্ণমেণ্ট উপাধি'পরীক্ষায় বিশেষ যোগ্যতার সহিত উত্তীর্ণ, বারাণ, "স্থ গবর্ণমেপ্ট কলেজের সংস্কৃত-বিভাগের “রাণী মবুমতী নার্শনিব বৃত্তি” ও “মহারাণী স্ব্ণময়ী দার্শনিক পারিতোষিক” প্রাপ্, এবং উক্ত কলেজের ইংরাজি-সংস্কত-বিভাগের ভূতপৃন্দ সিনিয়ার শ্রেণীস্ত ছাএ. কলিকাতাস্ত মহাকালী পাঠশাল! . স্থাপন সর্বপ্রথম প্রবর্তক, সাহিত্যসভ! প্রভৃতির কাধানির্বাহক সমিতির সদশ্ত, যুক্তপ্রদেশস্থ ধাম- পুরের স্বাদীন অধিপতির় ভূতপূর্বর সংস্কৃতাধ্যাসক, ভারতের সর্ধপ্রধান স্বাধীন হিন্দুনরপতি বারাদাধিপতি কর্তৃক সংস্কৃত বক্ততার্থ বঝেদায় নিমন্ত্রিত কলিকাতাস্থ বশপ্ন- কলেজের সংস্কৃত-প্রোফেনার্‌,“সংস্কৃত- রঞ্জিক।.” “দি ষ্টডি অব্‌ দি গীতা” ; পভ়ৃতি প্রণেতা, প্রাঞ্জল বঙ্গ- ভাষায় সাংখ্য-পাতঞ্ল প্রভৃতি ষড় দর্শনের অন্ু- বাদক. ওকাশীর গণেশ মহল্লাস্থ স্ুপ্রসিদ্ধ “কোলালিয়ার ভট্টাচাধ্য”- বংশ-সম্ভৃত শ্রীনুক্ত পণ্ডিত হরিদেব শাস্ত্রী হহার প্রণেতা ও নিজ ব্যয়ে প্রকাশক। দ্বিতী সংস্করণ | ১:১১ বঙ্গাব। 4117 718%45 /2১6/2%4, মূল্য এক টাকা মাত্র। ১১৭1১ বহুবাজার ট্রাট, কলিকাতা কলেজ প্রেসে, এম, সি, চকবর্তী দ্বারা মুদ্রিত! দ্বিতীয় সংস্করণের বিজ্ঞীপন | সংবাদপত্রে, পুস্তকের দৌকানে, ও নিজ বাটার দ্বারো- পরি “দাইনরোর্ডে” বিজ্ঞাপন, এবং সহরের পথে পথে বড় বড় লাল নীল অক্ষরে “প্ল্যাকার্ড” প্রভৃতি উপায় অবলম্বন ব্যতিরেকেই প্রথম সংস্করণের সমস্ত পুস্তক নিঃশোষ্ত হওয়ায় দ্বিতীয় সংস্করণ বাহির হইল। দ্বিতীয় সংস্গরণে অনেক নূতন বিষয় সান্নবেশিত হইয়াছে। ইহা প্রায় দ্বিপ্তণ হইল | অথচ ইহার মুলা বদ্ধিত হইল না? দ্বিতায় সংস্করণর কাগজ, ছাপ ও বাধাই "এই সমস্তই পর্ববাপেক্ষা অনেক উত্তম হইয়াছে। স্বৃতরাং এই সকলের জন্য দ্বিগুণ অর্থও ব্যয়ত হইয়াছে। অথচ পুস্তকের মূলা সেই এক টাফাই রহিল। মুল্য বাড়িল ন]। কারণ, ঈদৃশ পুস্তকের বহুল প্রচারই উদ্দেশ্য । পুস্তক বিক্রয় করিয়া বেশী লাভ করা উদ্দেশ্য নয়। মূল্য বাড়াইলে অনেকে সামর্থ/সন্ত্বেও পুস্তকৎক্রয়করেন না। এইজন্ই আমার বাঁকরণ-সাহি ঠা-দর্শন-তন্ত্রাদি নানাশান্ত্অধায়ী ছাত্র, কল্সিকাত! হাই কোর্টের স্ৃপ্রদিদ্ধ স্বিচারক, লক্ষমীও সরম্বতীর একাধান্, মাননীয় মিষ্টার্‌ জগ্ঠিশ জে, জি, উ ডোফ. এম্‌, এ, বি, সি, এল্‌, বার-য়্যাট-ল, সাহেব মহোদয় এই পুস্তকের প্রথম সংস্করণের বেলায় বলিয়াছিলেন যে, পের্জিও “পাণ্ডিত মহাশয়, বনু অর্থ ব্যয়ে ও বহু পরিশ্রমে সম্পাদিত কৌন একখানি প্রয়োজনীয় উত্তম পুস্তকের মুল্য অতিঅঙ্ এক টাক। মাত্র হইলেও অনেক ক্রয়সমর্থ ভারতীয় লোক উহা! বিনা ঘুলো গ্রহণকরিতে চেষ্টাকরে। *কিন্তু ইউরোপ ও আমেরিকার লোক এতই গুণগ্রানহ্থী যে, এরূপ একখানি পুস্তক বাহির হইবামাত্র যে কোন প্রকারে অন্ত? “৭ করিয়াও উহা ক্ররকরিয়া পাঠকরে। অতএব আপনি ঈংরাজাভাষায় ইহার শনুবুদ করুন। *আমিই উহার ুদরাক্কনবায়-ভার গ্রহণকরিব। ইউরোপের ও আমে, “রকাঁর ইংরাজিভ্ঞ বাক্তিগণ ভারতমহিলাগণের খভ্ভ্ঞাত- পূর্ব শিক্ষা প্রদ জীবনচরিত জানিবার জন্য উৎসুক হইয়া আপনার পুস্তক ক্রয় করিবে” । উত্তরপাড়ার রাজা পিয়ারীমোহন মুখোপাধ্যায় এম, এ, বি, এল, সি, এস্‌, আই, বাহাদুর মহোদয় এই পুস্তকের প্রথম সংস্করণ দেখিয়া অত্যন্ত সন্তুষ্ট হইয়া বলিয়াছিলেন, “শাস্ত্রী মহাশয়, গুণগ্রাহীর দেশ বিলাত হইলে যেদিন ঈদৃশ উত্তম পুস্তক- খানি ৰাহির হইয়াছিল, সেই দিনই পুস্তকবিক্রেতৃগণ ছাপাখানায় আসিয়া গাড়ী বোঝাই করিয়৷ বিক্রয়ার্থ আপনার পুস্তক নিজ নিজ দোক'মে লইরা যাইত” । মাননীয় মিষ্টার্‌ উদড্ভোফ. এবং রাফ! বাহাদুর যাহা বলিয়াছেন,'তাহ। বর্ণে বর্ণে সত্য। এদেশে গুগগ্রাহী উশুসাহদাতা লোক যে, একেবারে নাই, তাহা'নয়। তকে &/০ খুবঅল্প! ফ্টার্‌ থিয়েটারের নাট্যাচাধ ্রীঘুক্ত বাবু মত লাল বস মহাশয় এই পুস্তক বাহির হইবার প্রায় দুই মাস পু দশ একখানি প্রয়োজনীয় পুস্তক বাহির হইবে, এই কাঁথা শুসিবামাত্র তৎক্ষণাৎ তাহার উৎকলদেশীয সদৃশ্য “থলি”টি বাহির করিয়া একটি টাকা আমার হস্তে দিয়া বলিয়াছিলেন, “যেদিন ঈদশ খুস্তকখানি বাহির হই, সেই দিনই পুস্তকখানি যেন পাই ।” পুস্তক বাহির হইবার *পুবেবই, মুল্যদান, প্রীবল পিপঠিঘা ও সাধুতাব পরিচয় নয় কি তিনি যেরূপ অধায়নশীল লোক ও তাহার বৃহৎ লীইত্রেরিতে যেরূপ পুস্তক-সংগ্রহ দেখিলাম, তাহাতে হাহার পক্ষে এইরূপ পুস্তকপাঠের আগ্রহ ৪ কর্তবাবৃদ্ধি 'বচিত্র নহে। কলিকাতা হাটখোলার বিখ্যাত উত্তমর্ণ ধনী বদ্ধান গুগ্রাহী মাননীয় রায় বাহাদুর শ্রীযুক্ত সীতানাথ রাধ এম, এ, বি, এল, মহাশয়, এই পুস্তক উপহ্বর পাইয়া ও পাঠ করিয়া এতই সন্তুষ্ট হইয়াছিলেন যে, তিনি ইহার এক টাকা খুলের পরিবর্তে পাঁচ টাকা প্রদান করিয়াছিলেন। শামি বলয়াছিলায়, যে পুস্তকখানি উপহার দেওয়া হয়, তাহার দুল লইতে নাই। আমি উপহার দিয়া ইহার মুল্য লইব বলিফ্কা অ শাও করি মাই” । ইহাতে ভিনি বলিয়াছিলেন, “আপনার এই গুস্তকখানি অমূল্য হইয়াছে। স্ৃতরাং ইহার মূলা দেওয়া .হইতেছেনা, কিন্তু ইহার মুস্রাঙ্কন-ব্যয়ে সাহাধ্যার্থ আমি অতি সামান্য কিঞ্ দিতে, অতান্ত ইচ্ছুক 10 হইয়ীছি। ইহা! আপনাকে লইতেই হইবে” । জোড়া- সাকৌর ঠাকুরবংশীয় শ্রীযুক্ত বাবু. খতেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় এই পুস্তক উপহার পাইয়া ও পাঠকরিয়!/ ঠিক পীরূপ কথা বলিয়াছিলেন, ও ইহার পাঁচ টাক গুল্য দিয়া স্বীয় গুণগ্রাহিতার পরিচয় “দিয়াছিলেন। আমি ইাহাদিগকে পুস্তক, উপহার দিয়া টাকা পাইবার আশাও করি নাই।' অস্মদ্দেশের বালিকাদিগকে সনাতন বৈদিক- ধন্ম ও মনুপ্রভৃতির স্মাতধম্ম-অনুখায়া আচারববাবহার রীতি-নীতি, পিতা-মাতা শশুর-শবঙ্ প্রভৃতি গুরুজনের প্রঠি ভক্তি, ব্রত, পুজা, ও বিদ্যা শিক্ষার্দিবার জন্য আমি কলিকাঠায় একটি হিন্দুবালিক।-বিদ্যালয়-স্থপনের প্রয়োজনীয় তা বৃদিন হইতেই উপলব্ধি করিয়। আিতে ছিলাম। কিন্তু ঈদৃশ বিদ্যালয়-স্থাপনে প্রভূত বায়ের প্রয়োজন বলিয়! কৃতকার্ধা হইতে পারি নাই অবশোসে সৌভাগ্যক্রমে ১৮৯২ খ্রীষ্টাব্দে স্বগীয়া বিছ্ধী আমতা মাতাজী মহারাণা মহোদয়া মুশিদাবাদ-রাসিম্বাজারের বিখ্া।ত দানশীল! মহারাণা ৬ স্বর্ণময়ী মহোদয়ার কলিকাতী- জোড়াসাকোর বাটাতে আসিয়া বাস করিতেছিলেন। আমিই তাহার নিকটে সর্বপ্রথম শুভক্ষণে এই বিষয় প্রস্তাবকরিলে তিনি বলিয়াছিলেন)”যছ বহু আচ্ছী' বা হায়। . মহারাণী স্বর্ণময়ীকো ইস্‌ বিষয় নিবেদন করনা চাহিয়ে”। তিনি মহারাণী ৬ স্বর্ণময়ী মহোদয়াকে "4০ এই বিষয় নিবেদন করিলে মহারাণী স্বর্ণময়ী মহোদয় এই বিষয়ে পরামর্শ করিবার জন্য মাতাজী মহোদয়াকে ও স্বামীকে মুশিদাবাদে আসিবাঁর জন্য নিমন্ত্রণ করিয়া চিলেন্ঈ। ৬ মহারাণা ন্র্ণময়ী মহোদরার ভগিনীপুজ তকালীন শ্ুযোগ্য দিওয়ান কলাণ-ভ্বীজন বায় বাহাদুর শ্বীনাথ, পালি বি, এ মহাশয়, যেরূপ মহাযত ও রাজ. (ভোগের সহিত আমাদিগকে মুর্শিদাবাদে জঙগে করিয়া লয়! গিয়াচিলেন, তাহার স্মৃতি কখনই বিলুপ্ত হইবে না ম্ারাণা ৬ স্বরগয়ী মহোদয়! ঈদুশী পাঠশালাব বায়, নির্বনহের জন্য প্রতিশ্রাত হইলেন। মহারাজ শ্রীযুক্ত মণান্দ্রচন্দ্র নন্দী বাহাদুর অদ্দাপি মহাকালী পাঠশালাকে উক্ত সাহাযা দানকরির। আসিতেছেন। ৬ মাতাজী মহারাণী মহোদয় ঈদৃশী পাঠশালার উপ- যোগী একথানি পুস্তক লিখিবার জন্য আমাকে মাদেশ করায় আমি ১৮৯২ খৃষ্টাব্দে আমাদের জন্য নির্দিষ্ট কাসিম- বাজার-রাজ-বাটার পার্বস্থ “গোলাবাড়ীর” বৈঠকখানায় বিয়া « সংস্কৃত-রর্ডিকা”-নান্দী একখানি পুস্তিকা রচনা করিয়াছিলেন! এবং মহাকালী পাঠশালাকে সেই পুস্তিকার স্বর প্রদান করিযাছিলাম। উহার কয়েকটি সংস্করণও বাহির হইয়াছিল। কিন্থু পাঠশালার অর্থাভাবে উহার আর নূতন নূতন সংস্করণ বাহির হয় নাই। মহাকালী পাঠশালারু উদ্দেশ্য টি যে, সাধিত হইয়াছে, ইহা স্বীকার 17৮৫ করিরতৈই হইবে। ইহার ' শাখা-প্রশাখা ভারতের প্রায় সব্বত্র বিস্তৃত হইয়! পড়িয়াছে । এই কয়েক বৎসরের মধ্যে বু সহস্ত হিন্দু বালিকা এই সকল পাঠশালায় শিক্ষার ফল প্রাপ্ত হইয়া বহু সহঙ্র গৃহস্থাশ্রমেন অ্িষঠত্রী দেবতারূপে বিরাজিত হইতে পারিাছেন।, “মহাকালী পাঠশাল"” যুগান্তর উপস্থিত করিতে সমর্থ হইয়াছে । দেশের প্রভৃত উপকার সাধিত হইয়াছে । আমার এই “ভারতের শিক্ষিত-মহিলা”*নামক পুস্তক মানি লিখিতে অগেক পুস্তক পাঠকরিতে হইয়াছে। সেই জন্য আনেক সময় লাগিয়ান্ে। এই সংস্করণে রাণী দুর্গাবত অহলা"বাউ ওগ্রাণী ভবানার জীবনচরিত জজ ভাবে সনিবেশিত হইয়াছে ও অনেক নৃতন কথা সন্নিবদ্ধ হইয়াছে; সেইজন্য গ্রন্থকলেবর পুর্ববাপেক্ষা প্রায় দ্বি্ুণ বদ্ধিত হইয়াছে । রাণী ছুর্গাবতীর জীবন-চরিত সবিশ্ষে জানিবার জন্য রাণী ছুর্গাৰতীর ভূতপূর্বব রাজা জবধলপুর ও তন্নিকটবত্তী স্থানের কয়েক বাক্তির নিকটে অনেক অনুসন্ধান করিতে হইয়াছে, তজ্জন্যও অনেক সময় গিয়াছে। রাণী দুর্গাবন্তীর সন্থান্ধে যিনি যেবপ পুস্তক লিখিয়াছেন, এবং রাণী ভবানীর সম্থা্বী যে কয়েকখানি পুস্তক বাহির হইয়াছে, সেগুলি সাময়িক, চিত্রপট বা গল্প পুস্তক ব' উপন্যাস মাত্র । ঈদৃশ পুস্তক তাদৃশ উপাদানে রচিত হয় নাই। স্থৃতরাং সেই সকল 'পুক্তরক হইতে, $৩/৩ অণুমাত্র সাহাষ্য লাভকরিতে*পারি নাই। কিন্তু রাজ- সাহীর সর্ববপ্রধান উকিল সাহিত্যিক ও ইতিহাসশাস্্ররত্ব শ্রীযুক্ত বাবু অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় মহাশয়ের নিকট হইতে রাণী ভধানীর সম্বন্ধে অনেক ছূর্বিবজ্ঞেয় তত্ব অবগশ্ হইয়া তাহার নিকটে কৃতজ্ঞতাপাশে বদ্ধ রহিলাম ও তাহাকে আস্তরিক ধন্যবাদ প্রদানকরিলাম। রাণী ভবানীর এঁতিহাসিক তত্ব অনুসন্ধান বিষয়ে তাহার দীর্ঘকালব্যাপিনী আলোচনা ও বিশেষ পরিশ্রম অত্যন্ত প্রশংসনীয় । রাণী অহল্যাবাইর জীবন-চরিত-লিখন সম্বন্ধে “মাইকেল মধুসুদল দত্তের জীবন-চরিত” প্রণেতা মিষ্টভাষী সদয় শ্রীযুক্ত বাবু যোগীন্দ্রনাথ বস্ত্র বি, এ, মহাশয়ের অনেক কখার সাহায্য লইয়াছি। অতএব তীহার নিকটেও কৃতজ্ঞ রহিলাম ও তাহাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ প্রদানকরিলাম। অস্মতকুল- প্রতিপালক মহামান্য কাশীর স্বাধীন মহারাজা বাহাদুর তাহার ডাক্তার শ্রীযুক্ত বাবু মহেন্দ্রনাথ আচার্য মহাশয়ের নিকট হইতে আমার এই পুস্তকের প্রথম সংস্করণের কয়েক পত্রের হিন্রি অনুবাদ শ্রবণ করিয়া অত্যন্ত সন্তুষ্ট হইয়া বলিয়াছিলেন, “হিন্দি ভাষায় এই পুস্তকের অনুবাদ হওয়া উচিত”। প্রথম সংক্ষরণ অপেক্ষা দ্বিতীয় সংস্করণে অনেক নৃতন বিষয় সন্নিবেশিত করিয়া ইহার হিন্দি ও ইংরাজি অনুবাদ প্রকাশ করিব, এইরূপ ইচ্ছা করিয়া- ছিলাম। সেই জন্য, এবং আমি সাংখ্য পাতগ্রল বেদান্ত [ হ্যায় বৈশেধিক ও মীমাংসা। এই ছয়টি দর্শনশান্ত্র প্রাঞ্জল বঙ্গভাষায় স্ৃবিস্তৃত ভাবে অনুবাদ করিবার জন্য সর্ববদ! লিখনে ব্যস্ত থাকায় ও অন্যান্য নানাবিধ পুস্তক পাঠে আসক্ত থাকায় এই পুস্তকের দ্বিতীয় সৃংস্করণ * প্রকাশ করিতে কিঞ্চি বিলম্ব ঘটিয়াছে। শ্রীহরিদেব শর্মা । ১২।৫ ডাক্তার লেন। তাল্তল।, কলিকাত|। এই পুস্তকের প্রথম সংস্করণ সম্বন্ধে বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের মত $- বঙ্গীয় সাহিত্য-পরিষদের ভূতপূর্বব সভাপতি, কলিকাতা হাইকোটের ভূতপূর্বব বিচারপতি সত্যস্পউবাদী বিখ্যাত বিদ্বান শ্রীযুক্ত বাবু সারদা চরণ মিত্র মহাশয় ইহার প্রথম সংস্করণের বিজ্ঞাপনে লিখিয়াছিলেন*_ ০ “প্রিয় স্থহৃত শ্রীযুক্ত পঞ্চিত 'হরিদেব শান্্রী মহাশয়-.....বিদুষী স্ত্রীলোকদিগের বৃত্তান্ত'-".*-স্বগ্র্থে নিবেশিত করিয়া: ভারত-ছুহিতৃ-শিক্ষার গ্রকৃত আদর্শ /০ প্রদর্শন করিয়াছেন। ......কিন্ত শান্্রী মহাশয়ের 'এই পুস্তকখানি এরূপ পুস্তক হইতে অনেকাংশে উত্তম। কারণ ইহাতে আর্ধ্যনারীদিগের আচার-ব্যবহার রীতি-নীতি সম্বন্ধে 'অনেকম্প্রয়োজনীয় উত্তমোন্তম কথা আছে। শাস্ত্রী মহাশয়ের এই পুস্তকখানি সুন্দর স্ত্রীপাঠ্য হইয়াছে। আশা করি, প্রত্যেক হিন্দুর বাটীতে এই পুস্তকখানি কুল- মহিলাদিগের স্্রপাঠ্য হইবে এবং “মহাকালী পাঠশালা” ও ইহার শাখা বিদ্যালয়সমূহে ইহার কতক কতক অংশ নিন্মশ্রেণীতে ও কতক কতক অংশ উচ্চ /শ্রণীতে বালিকা- গণের "অবশ্য পাঠা হইবে। এই পুস্তকখানি যে, কেবল স্ত্রীলোকেরই পাঠ্য, তাহা নহে, যুবকগণ এই পুস্তক পাঠ করিলে স্ব স্ব গৃহের মহিলাদিগকে ধন্ম ও নীতি শিক্ষা দ্রিতে সমর্থ হইবেন। শাস্ত্রী মহাশয় এইরূপ উত্তম এক- খানি পুস্তক'লিখিয়৷ হিন্দুদমাজে একটি প্রধান অভাব দূর করিয়াছেন। শাস্ত্রা মহাশয়ের এই পুস্তকখানি বঙ্গসা হিত্য- উদ্যানের একটি নৃতন স্থুরতি পুষ্প। ইহার সৌরতে পাঠক-পাঠিকাগণ যথেষ্ট আমোদ্দিত ও উপকৃত হইবেন, "বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই” | 1৮5 ১৩১৭ সালের ২৫ংশ আষাঢ়, শনিবারের “বনুমতী”। “ভারতের শিক্ষিত-মহিলা। শ্রীযুক্ত পণ্ডিত হরিদেব শাস্ত্রী প্রণীত। বীধাই মুদ্রাঙ্কন ও কাগজ উত্কৃষ্ট। সাড়ে তিন শত ৃষ্টায় . সম্পূর্ণ। মূলা এক টাকা।" সাহস করিয়া বলা যাইতে পারে যে, বঙ্গভাষায় এরূপ পুস্তক বিরল। ইহ! কেবলমাত্র কতিপয় আর্ধা-মহিলার 'জীবন- চন্নিতে পূর্ণ নয়। ইহা ব্যক্তি বিশেষের কল্পনার ছবি নয়।” “ভারতের শিক্ষিত-মহিলা” প্রাচীন মাধ্য সমাজের এতিহাদিক "চিত্রের সমগ্টি। বঙ্গীয় সাহিতা-পরিষদের সভাপতি হাইকোটের ভূতপুর্বৰ বিচারপতি শ্রীযুক্ত সারদা চরণ মিত্র মহাশয় এই পুস্তকের ভূমিকায় লিখিয়াছেন; “এই পুস্তকখারি বঙ্গ সাহিতা-উদ্যানের একটি নূতন স্থরভি পুষ্প। ইহার মৌরভে পাঠক-পাঠিকাগণ যথেষ্ট আমোদিত ও উপকৃত হইবেন। ইহা /কেবল ত্ত্রীপাঠা পুস্তক নয়, যুবকগণ এইরূপ পুস্তন পাঠ করিলে স্ব গুহের মহিলাদ্রিগকে স্থৃশিক্ষা দিতে সমর্থ হইবেন ।..... কিন্তু শান্ত্রী মহাশয়ের এই পুস্তকখানি এরূপ পুম্তক হইতে অনেকাংশে উত্তন। কারণ, ইহাতে আধ্য-নারী- দিগের আচার-ব্যবহার রীতি-নীতি সম্বন্ধে অনেক প্রয়োজনীয় উত্তমোত্তম কথা আছে।-*.."মাশা করি | প্রত্যেক হিন্দুর বাটাতে এই পুস্তকখানি কুলমহিলাদিগৈর স্থপাঠ্য- হইবে ।.........শোন্্রী মহাশয় এইরূপ এইক্নপ একখানি উত্তন পুস্তক লিখিয়া হিন্দুদমাজে একটি প্রধান অভাব দুর করিয়াছেন” ।-_সারদা বাবু যাহা লিখিয়াছেন, তাহা বর্ণে বর্ণে সত্য এই গ্রন্থের উপাদান-সংগ্রহের জন শান্জ্রী মহাশয়কে বহু গ্রন্থ পাঠকরিতে হইয়াছে। তিনি আধ্য নারীর আচার-ব্যবহার শিক্ষা-দীক্ষ নবস্ধে শান্্ে যাহা দ্নেখিয়াছেন, তাহাই বঙ্গভাষায় লিপিবদ্ধ করিয়াছেন। শীল্্ী মহাশয় প্রতিপন্ন করিয়াছেন,__হিদ্দু স্্রী ভোগ্যা বা পরিচারিকা নহেন; হিন্দু স্ত্রী সহধর্মিণী, র্্মপত্রী, গৃহদেবতা, আদ্যাশক্তির অংশভূতা । যদি হিন্দু এই আদর্শের অনুপরণ করেন, তাহা হইলে হিন্দুর গৃহ ধর্মমন্দিরে পরিণত হইতে পাঁরে। যাহার! পুত্র কন্তা- দিগকে ধর্ঘটভাবে ও আর্ধাভাবে অনুপ্রাণিত করিতে চাহেন, তাহার! পুত্র কন্যাদিগকে এই পুস্তকখানি পাঠ করিতে দিন। , এই গ্রন্থে বর্ণিত নারীচরিত্র অধ্যয়ন করিলে হৃদয়ে বিস্ময় ও ভক্তির উদ্রেক হয়। ১২৫ ডাক্তার লেন, তালতলা, কলিকাতায় গ্রম্থকারের নিকটে ইস্থা প্রাপ্তব্য। এইরূপ গ্রন্থের বন্ুল প্রচার বাঞুনীয়”। এক্ষণে বিলীয় সাহিত্যের সর্ববপ্রধান আচার্য্য “সাধারণী”র ভূতপূর্বব সম্পাদক, চট্টগ্রাম-সাহিত্যন্শ্মিলনের ভূতপূর্বব সভাপতি প্রযুক্ত বাবু অক্ষয় চন্্র সরকার 7৩ মহাশয় চট্টগ্রাম-দাহিত্য 'সম্মিলনে অভিভাষণের সময় শ্রীযুক্ত পণ্ডিত হরিদেব শান্ত্রী মহাশয়ের “ভারতের শিক্ষিত মহিলা”র এইরূপ প্রশংস! করিয়াছিলেন 8১১৮ “ইহাতে প্রাচীনকালের এবং এখনকার দিনের বিখ্যাত ভারত মহিলার চরিত্রের পরিচয় আছে।......বঙ্গমহিলার এখানি স্ুপাঠ্য পুস্তক, পড়িলে জ্ঞানের সঙ্গে আমোদ পাইবেন” | বঙ্গবাসী। ১৩১৯ সাল, ১৬ই চৈত্র, শনিবার । গল 3081) 05৮, [8 ব0৪% 6, 1911, 9৮0, [১710011 [না 06৮ 917985171) 1015 ৮1611-1701 85 4 981751071 50170141010 38175101 51691:61 193 [00150] 0018. 0011-1116113615811 000৮ 0]7- 10160 “13176 91175118 8121112,1 0708 ৭9202 01থনা। 00110070805 00] ৪ 000806, 1176 7১০0 07181731165 01 170160. 1691060 11101] 70010000015 17016১ 01110017. 11 9150 10781631116 1091)0015) 00510105, 17069 ০1 000108110]) ৪110 1106 01 076 4৮090180169 01 [1018 ; 2100 2১ 9001) 090) 06 0561011য [1700 1) (116 1191705 01 01011150170 190165. 6 010061- 31700 (1700 01670709016 11. ]050106 1 ০0০001076 1145 [):011560 (9 [0001151 ৫ (90518010101. 0019 010 1:02]1911. 6 210 9150 (010 1181 (106 13677991 050%61)076101 001011560 10 1001017856 3$1] ০0165 01411015 10০01. এন্যুর 1] 4৬1২] 158৯2 74118) ]ঢা,খ 5, 191০, 11095 10661) ৪. 00101001) 10191216 10. 107217% 00121161510 11001210 01061) 1193 10261717519581- ০0 ৪. 101010]) 10101011170 (09 01121 01 1101) 117 211 01801215 0601210105 009 60000211017) 101151005 8056758006৭ 2100 1116 1116. 10660 1176 1১01)10 61161 717)0175 17190 560610173 01116 00111701111 ২0101151181 ৬০1)01) 21০ [7৩০100০ [07] ড0- $101]011 203 810. 50900659565) 8515 1116 0856. $৮1 9100175, হা 0116 59176 00901762511) 13817102105 00. 1210010 17081 06৮ ১1195011095 00176 9. 97681 9017৮1061০0 [11170001917 200 (0 1116. 11000561776 01 1116 50205 01 1110010 ডা017761) 9 [01151106115 1031018667 91710917115 চ191719- 1371)0. উলাজণন 0110 50106008300 5 [06906 10 10, 800 076 ৮01]. 1] 11901 15 5 11010011061) 01 [09061011209] 5600) ৪170 76- 5৪৪1:01. 776 91897 195 গোছা 1115 77816118]5 0হ 21] 25981181015 50901065200 190 017061 16001510001 006 685 870 00700 5217917 0] 10 00৮০ 1015 00106001025. 176 1785 9150, 1৮617 010£1800171081] 51660116501 50106 6101116101 [1701910 00)01) 19 9100 100৭ 19: 81001000) 80 2100 1621017 । 120 9৮ 0106 01106. [9560816 (০ 006 19101101006 20501590150, & দ611-1010মাটে 0/০ ১৪1791010 5010012) ৬1০১৩ £100 01 997510] ০1০- :0067)08 15 2111050 0110৩: 2100176 3675215, 18100101721) 06৮ 91795101125 1010560196৫ ৪ 17600080017) ৪100950 560010 (0 1)019) (01106 ৬৭৯ 11)1160 (09 0611561- 2:051010 019090:065 21 91101) 56815 01 39105107 16210010 25 95980174700 % 5001) 11105070005 1১07900৯ 2$ 0790260.921 01 381008.. 1715 0651) দো] ভা] 61১91156, 17800 00.) 10151720776 09 19931910 9100 61701 [3675] 10. 7681156 1,016 006. 01805 ০1 01707 1810] 06 59010152110. 11) 001:53106, (00195, [1১ 0০901 আ]]) ৩. 11016 770 8) 17090098160 70160 10 ৪৮1৬ 1361021]1 1100১6-101. [076 99০9115191৬ 10980 01 1659৯, ৪. 6. 840) 4০ 06০9. 9০011175601) 50661 800 01009 201110 212/5 1)০901017 19176) 121100119) ০8100005. 1115 ০]1-১০এ০এ ৪70 01061 ]১00160 10715 10100. 117] বাটা উংি08, ৯৬0২108৬, 1707732৮২17, 1910. 410311050 9109105 81971181 ০7 08০:9৫0০৪54 18165 01100191507 006 01৪. 0001) 6৮17010 & £000. 06981 91 09016106 16368101069) 41791 1899 ৪102159690% 001) 015 7961. 01 781001 [9 6৮ কী ৬ 14507), 076 ৮611-1070তা॥ ১2791016 50100121. [178 5160010 ৪080 ০1900 21691)60 £00) 210016100 2170. 01019521 15116200065) [010191895 & 50101101105 155111001)% 85 (0 1707 19.0195 9৮211- €0 (70677561505 01 1) 11017050 ০0008100 10 00১৩ 095, 210 [0:00 (11617561569 0176 0:06 1011077615০ 076] 10015102100. 10176 90107৩1 1125 12738060. 0০1]. 103 501000191 2170 0179 09061671079 0110018 19 06070791816 ০ 10163 0৮076 ৮৮০7" ৮6701216ণ 2180. ৩৮1) 0910 (170 11010356 11016 9170]. ০01 07911] 11) (1015 ০০00017) 2170 10৮ 0060 [01] 00107160 1106 2806১ 01172170200 9001) 0116161) 52170- 115 6৮০1) 10) 1101১ 08 25 019 19951 9190011007১ €)1 01071011000, 19,৮11 06811500 1176 11016১1 10215 01 90110010200 50171002101. 111)6 71069105 11001 01 300)6)10 1070তা 16056 200 (16 13671001 36011910701) 01076 11016116019] 200. 30917101] 1900110165 0০126210615 71260 10৮ 07618016১01 910167]1 10018 18 1011 201656৫ 19% £100100১ ০5207010501 40161) 814106)1, 151 2170 13041 01 961)673) 180163) ০010175 ৫0%] 9 19667 01195, 10 [009 ৪৮০7 1১6 £201:01760 ৪ 016 20709 ০01 91 7617 56%..001)9 20007 1095 98981 910 100ম 16171516 60010801010 01৪. 17181 06৮০107১20 ০108180067 ৪5 0176 01 07০ 01810165810 ০01 *১/৩ 006 11197011086 10061706501 17300017157 200 |।0৮ 130001765150165 110 18101, 19778170810 ১8100912101 200 06125 176901760 116 11101795£ 1161755 0160112)7067060 90৮87706770101) 27. 201)8, [06101 ৮10101) 51160 9. 10151061700170 (16171081765 ঢা] 00011961,16:80016, 016 1106 ১/:60765 0 ৫০1100100. 012 ] 106 ০] [১90181910 21012108269) 670105 অ10 07০5৪ 101 [২81765 1)022580৯ [39066 4১210 2 আাণ [২20৩6 [311952176৩, 001015]) 171665078 হণ 81300101156 77015. 10175 10100100107 10 0116 1099]. 15 10160 5 13800 98908 চোরা ভার 1 1015 05091 58065] টাঞাটাটতা,। জী আ1055) 81000600767 (01025) 091 80000101515 10018 10115101) 01511101001) ৮1117000197) ০0101791250 800 [1000 00105 9200 800 00100100165 [6179110) 61660. 17970 59) ম€ 10110 2000158. 79001 11271 08৮ ১19507. 195 0006 50০0৫ ১৮1০০ (0016 08036 01 1210919 €0009101 )% 1071081759৫ 2 4০০]. 50 93001691019 101 01১9 06৮6- 10101067701 116 017180061 01 00 £015) 2170 07 00086 000. স203618015 2150106005 0, (365 96015 1096 ০1 20010 870 1207 [0165 60 001%1706 0১5 6 01700517050 00. 085 50178170 1001১091106 01 6155800500৩ 00781 ৃ 56 0 [1079৮ 6৫0০81100. 10 ৪৪601301176" ১%০ 09015 08061011) 70010610106 00016100005 |. 00008150 01016 68100, 001010001101 ২1]0)16ণ, সীল * “খারারাম 00121018 সুর) 07 2001 তুহা। 1৮৮ থাঞগ্থা, 0100550 01 এথাঞনা, 09100 (0160৮. 070 006 10006. 10160800111 10111701712 ব10001016,171017, (71011. স্রগীপত্র। বিষয়ঞ নারীজাতি আদ্যাশক্তির* অংশ, নারীজাতি দেবতা বিশেষ, নারীজাতির পূজা সমাদর ও সম্মান। নারীজাতি স্ুপ্রসর থাকিলে কুনের মঙ্গল) স্লাজাতির গৃহাস্থালীশিক্ষ। অতীব প্রয়োজনীয়, ভারতমহিলা লক্জাশীলা ও সাবরণা ( “পর্দানসীন্‌” ) হইবে, স্ত্রী জাতির স্বাধীনতা নিষিদ্ধ। স্বামীর গৃহেই ভার্ধ্যার সদা অবস্থিতিই শাস্ত্ববিহিত। স্ীজাতির গৃহস্থিত বস্তগুলিকে সাজাইয়া গুছাইযা রাখার শিক্ষা, স্ত্রীজাতির বন্ধকা ধ্য-নিপুণতা। শ্বশুর- শ্বর্শতক্তি, পতির হিতানু্ঠান করিলে স্বর্গে গমন, পত্বীই গৃহস্থাশ্রমের মূল দেবতা, স্ত্রী পতীর অনল ও বগ্যা হইবে। দরিদ্র ও' রোগার্ত,গতির অবজ্ঞাকারিণী রং জন্মান্তরে রগতি, পতিবাক্য-লঙ্ঘনন ও পতিকে উপেক্ষাকরা ৷ নিষিদ্ধ, পতিসেবা করিলে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফললাঁভ, ' পতিসেবা! করিলে তীর ও গল্গাঙ্ানা্দির ফললাভ। পর্তির আজ্ঞা রিনা | ব্রত-উপবাঁসাদি- নিষেধ, গৃহে "বত তৈল তঙুরাদি ফুরাইয়া, যাইবার পূর্বেই পতিকে অভাব 'জ্ঞাগন কর) গৃহে “এটা নাই, ওটা] নাই/* এইরগ ক্রমাগত বলিয়া পতিকে উদ্বেজিত. রর _ পত্্ান্থ। ৬.১২ ৫ ১২-্প১ত ১৬১৭, ১৭১৯ ১1৬ বিষয়। অনুচিত, পির চরণ পূজা করিয়। ও পতিকে অগ্রে ভোজন করাইয়৷ পশ্চাৎ স্ত্রীর ভোজন কর! উচিত, বঙ্ত্রালঙ্কারের জন্য সর্বদা গতিকে উদ্বেচিত কেরা নিষিদ্ধ, সাংসারিক ব্যয় নির্বাহার্থ পত্তিকে মহারেশ- কর কাধ্যে নিয়োজিত করা নিষিদ্ধ, গুরুজন নীচাসনে বসিশে স্ত্রীলোকের টচ্চাননে উপবেখন নিষিদ্ধ, নারীর বঙ্কালঙ্কারের পৌন্দধায-প্রদর্শনার্থ সদা পরগৃহে নিমন্ত্রণ রক্ষাকর| নিষিদ্ধ, নারীজাতির'অশ্লীলবাক্য উচ্চারণ করা নিষিদ্ধ, পতি পরিভ্যাগ করিয়া একাকিনী নির্জন প্রদেশে গোপনে বিচরণ করিলে জন্মান্তরে দুর্গতি, দোষবশত: পতিকর্তৃক ভত্ণসত হইয়া পতিকে ভত্্ন| বা তাড়না করিলে জন্মান্তরে ুর্গতি, গোপনে পরপুরুষের প্রতি কটাক্ষপাত করিলে জন্মাস্তরে হূ্গতি, পতিকে মিষ্টানলাদি উত্তম বস্তু না! দিয়া গোপনে ভক্ষণ করিলে জন্মাস্তরে দুর্গতি। পতিসেবার রীতি, পতিব্রতার লক্ষণ, প্রাতঃকাল হইতে গ্ৃহকর্মের নিয়ম |. *, নারীর উচ্চৈঃস্বরে কথা কহা, অধিক কথা রে বিবাদ করা, লোকসম্মুথে বিলাপ করা নিষিদ্ধ, গৃহিণীর অতি", ব্যয়শীলতা, কার্পণ্য, ধর্মকর্ম পতিকে বাধ। দেওয়া নিষিদ্ব, নারীর গ্রমাদ, উদ্মাদ, ক্রোধ, খলতা, হিংসা, পরচর্চা, উহঙ্কার,, ধূর্ততা, ব্যভিচার, প্রবচন নাস্তিক ও চৌর্ধন্তি নিষিদ্ধ, অন রাণীর মত থাকা পত্রাঙ্ক ॥ ১৯ ও ২১২৩, ১5 ।বযয়। .. পত্রাঙ্ক। “অপেক্ষা পতিকুলে" দাশ্তাবৃত্তি করিয়াও থাকা ভাল, | উপযুক্ত পুত্রগণ বিদ্যমান থাকিতে পুনরায় দ্ারপরি- গ্রহ করানযিদ্ধ, নীধবা! কন্তাকে পতিগৃহে ন! পাঠাইয়া গৃহে পুষিয়া রাখা নিষিদ্ধ স্ত্রীলোক স্থুশিক্ষ। পাইলে ুষ্টাভিসদ্ধি, পিত্ঠার চক্রে পড়ে না। ২৪-_২৫ স্্রীশিক্ষ। বিষয়ে শান্প্রমাণ, স্্ীশিক্ষা বিষয়ে মূর্খের কুসংস্কার, সধবা! হইলেই শ্রীমতী হৃশীল' দেবী ও* বিধবা হইলেই '্িমত্যাঃ স্ুশীশা দেব্যাঃ এইরূপ স্বাক্ষর করা বিষয়ে ভ্রমনিরাস। রম ২৫_-২৮ যে ব্যক্তি স্্রীশিক্ষার বিরোধী, সে বেদবিরোধী,কালের কুটিলচক্রের ভ্রমণ বশতঃ উন্নতজ্গাতির অধোগতি ও নীচজাতির উন্নতি, স্ত্রীশিক্ষাবিষয়ে স্থৃতিশান্ত্ব হেমাদ্রি- গ্রন্থের প্রমাণ, সীত৷ ও সাবিত্রী প্রর্ভৃতির পতিভক্তি- বিষয়ক গ্রন্থপা অতি প্রয়োজনীয় । ১০১, ২৮_:৩৪ দ্বীশিক্ষাবিষয়ে বৈদিক নিদর্শন, বৈদিক মহিল! ত্রহ্গ- বাদিনী বিশ্ববারার সংকলিত বৈদিক মন্ত্রের অর্থ । ৩৫-_-৩৬ রহ্ষবাদ্িনী বৈদ্িকমহিল! ঘোষার সংকলিত বৈদিক মন্ত্রের অর্থ।* *** * নি ৬৬৩---৪৩ ্রহ্মবাদ্িনী বৈদিক মহিলা হু্যার নি বৈদিক মন্ত্রেরঅর্থ। 0: ৪৩৫৩, ্রহ্মকাদিনী বৈদিক মহিলা জুহু ও ও ইনাম পি বৈদিক মন্ত্রের অর্থ। , হি রি »॥ ৫৩-:৫৪ ্রঙ্গবাদিননী বৈদিক তি শচীর মংকলিত' বৈদিক ১1৮০ বিষয়। মন্ত্রের অর্থ। "৯, ৮ পু ্রহ্ষবাদিনী বৈদিক মহল! গোধার সংকলিত মঙ্তের অর্থ। রী ত্রন্ববাদিনী বৈদিক না ধীর ভি মন্ত্রে অর্থ। | বরঙ্গবার্দিনী 'বৈদিক মহিল! তি সং ও মন্ত্রের অর্থ। বরহ্মবাদিনী বৈদিক মহিলা শ্রদ্ধার রি বৈদিক মন্ত্রের অর্থ। ৬ র্গবাদিনী বৈদিক মহিলা লোপমুদ্রার ক মন্ত্রের অর্থ। ্রহ্মবাদিনী বৈদিক মহিলা তি সংকলিত বৈদিক মন্ত্রের অর্থ। ৰ ত্রদ্ধবাদিনী বৈদিক মৃহিলা রোমশার কা মন্ত্রের অর্থ। রী রি রি বরহ্মবাদিনী বৈদিক মৃহিল1 বপ্রিমতীর সংকলিত মন্ত্রের অর্থ। : বৈদিক যুগের রাজা পুরুকুৎ্সের রা মন্ত্র উচ্চারণ- পূর্ববক হোম। বৈদিকযুগের মহিলাগণের যুদ্ধে টানি রী |. স্ত্রীলোকের বৈর্দিকমন্ত্র উচ্চারণ, উচ্চারণপুর্ববক হোম ও সামবেদ গানের. অধিকার বিষয়ে নাটায়ন- এশ্রীতস্থত্র ও গোভিল-গৃষ্ৃতুত্রের প্রমাণ । ৫৫ ৫৫৫৬ ৫৬--৫৭ ৫৭ ৫৭-- ৫৮ ৫৮ ৫৯ ৫8৯ 8৮ ৬১৬২ ৬২৭১ ১1৪/৩ বিষয় । গৃহিণীই গৃহ ও গৃহের দেবতা | মৈত্রেয়ী। গাগা । রি বৈদিকযুগের শিক্ষিতা মাভার কথা। পৌরাণিকু যুগের মদালসা। পৌরাণিক যুগের স্থলভ| | পৌরাণিক যুগের সিদ্ধা শবরী শ্রমণা। পৌরাণিক যুগের ্লাত্রেয়ী। বৌদ্ধযুগের কামন্দকী | বৌদ্ধযুগে নর-নারীর একত্র অধ্যয়ন। বৌদ্ধযুগের সৌদামিনী। **, বৌদ্ধযুগের শুরু । বৌদ্ধযুগের সোমা । বৌদ্ধুগের কুবলয়া। বৌদ্বযুগের'কাশী সুন্দরী । বৌদ্ধযুগের ক্ষেমা।: বৌদ্ধযুগের প্রভবা। বৌদ্ধযুগের খুপ্রিয়া। বৌদ্ধযুগের কুক্সাবভী। **, বৌদ্ধযুগের রাজ্ননদিনী 'ালিনী। সঙ্কট অশে]কের কন্ত। সংঘমিদ্তা। মহাত্মা শঞ্চরাচার্য্যের বিচারে ষধাস্থা! ভারতের ০০৪ ৰা ২১উ ক. কী অধিতী হাপিক্িডা যহিক। উর ভারী পত্রাঙ্ক ।" ৭২-*৭৩' ৭৪---৯৩. ৯৪-১ ৩৮ ১০৮---১২০ ১২০স৮১৩৮ ১৪৩---১৪৭, ১৪৭-১৫২ ১৫২--+১৫৪. ১৫৪-_-১৫৬, ১৫৩ ১৫৭-_-১৫৮ ১৫৯--১৬২ ১৬২-_-১৬৬ ১৫৬১৭ ১৭৪.প১৭৩ ১৭৪-_১৭৫ ১৭৫---১৭৮ ১৮১৯২ ২৮২১৯৩ (২৯৬--২১৪ ১12 বিষয়। | প্রাস্থ অস্থশান্্রে মহাশিক্ষিতা লীলাবতী। রা ২৬৭-২৮২ ম্হাশিক্ষিত বঙ্গ-মহিলা: বৈজয়ন্তী দেবী । ... ২৮২--২৯৬ ম্হাশিক্ষিত! বঙ্গ-মহিল! প্রিয়ন্বদা দেবী। .*, ২৯৭-_:৩০৯, পূর্ববঙ্গের রাজা রাজবল্লভের ভ্রাতুশুত্রী মহা- শিক্ষিতা শ্রীমতী আননমরী দেবী। . ,,.. . ৩১৯--৩১৪ রাজনীতিশান্তে মহাশিক্ষিত! রাণী ছুর্গীবতী। ৩১৪-_৩৪৮ রাজনীতিশান্ত্রে মহাশিক্ষিতা রাণী ভবানী। ৩৪৮--৪৪৪ রাজনীতিশাস্ত্রে মহাশিক্ষিত৷ রাণী অহল্যাবাই । ৪98-_-৫২৫, ভারতের শিক্ষিত-মহিলা'। অতি প্রাচীনকালে , ভারতের আর্ধ্য'মহিলাগণের আচার-ব্যবহার, রীতি-নীতি ও শিক্ষা | চরম উৎকর্ষ লাভ করিয়াছিল। যে সকল গ্রন্থে আর্্য.মহিলাগণের আচার- ব্যবহারাদির কথা লিখিত আছে, মেই' সকল গ্রন্থের আলোচনা অস্মদ্দেশে প্রায়শঃ বিলুপ্ত হওয়াতেই অধুনা অনেকের হৃদয়ে নানাপ্রকার কুসংস্কার বন্ধমূল হইয়া গিয়াছে । *যে সকল পুস্তকে ভারতীয় আরধ্য-মহিলাদিগের ইতিবৃত্ত দেখিতে পাওয়। যায়, সেই সকল পুস্তকের সমাক্‌ আলোচনা লুণ্ত হওয়াতেই মহিলাদিগের শিক্ষা বিষয়ে অনেকেরই অনেক প্রকার ভ্রান্ত ধারণা দেখিতে পাওয়া যায়। 'অতি গ্রাচীনকালের মহিলা- জাতির আচাঁর। বিনয়, বিদ্যা, প্রতিষী, ধর্মনিষঠা, তগস্থা, দুয়া, দান, পরাক্রম, (২) সাহস, সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধি বহু প্রাচীন গ্রন্থে বর্ণিত আছে। মুসলমানদিগের ভারত আক্রমণকালেও ভারতীয় মহিলার অসাধারণ বীরত্ব ও সতীস্বের জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত সমগ্র জগৎকে বিস্ময়-সাগরে নিমগ্ন করিয়াছিল । ভারত-্ললনার পবিত্র চরিত্র বর্ণনা করা মাদৃশ ক্ষুদ্র ব্যক্তির সামথ্যাতীত। অলৌকিক শক্তিসম্পন্ন মহধিগণ এবং ইন্দ্রাদি দেবতার! ভগবতী আদ্যাশক্তির সম্যক বর্ণনায় অক্ষম হইয়া এই- মাত্র বলিয়৷ স্তব করিয়াছিলেন যে, হে দেবি দুর্গে, এ হগতে যত প্রকার বিদ্যা আছে, যত প্রকার নারী আছে এবং যত প্রকার কলাবিদ্যায় স্শিক্ষিতা মহিলা আছে, সেই সকলই তোমার অংশ । হে দেবি, তুমি স্ত্রীলোক, অতএব জগতের সমস্ত জ্্রীজাতিই তোমার ন্ায় পৃজ্যা ও মাননীয়া ।% যে দেশে মহাপ্রভাব মহধিগণ এবং ইন্ড্রাদি দেবতারা মহিলা-জাতিকে ঈদৃশ সম্মান দান করিয়া গিয়াছেন, সে দেশের স্ত্রীলোক পুরুষের নিকট যথাযোগা সম্মান ও উত্তম ব্যবহার প্রাপ্ত হয় না, এ কথা যাহারা বলে, তাহারা পক্ষপাতী এবং শাস্ত্রজ্তান-বিহীন ব্যক্তি । যে দেশে “এয়ে৷ সংক্রান্তি ব্রত,” কুমারী- পুজা, সধৰা- পুজা প্রভৃতি ধর্ম্নকৃত্য অনুষিত হুইরা থাকে, "যে দেশে কুমারা- পূজা ও সধবা-পূজার সময়ে কুমারীর ও সধবার পাপা পাপিশিপিপিতত ক বিদ্যা সমস্তাস্তব দেবি ভেদাঃ রিং সমস্তাঃ মকলা জগতসু 1-চত্তী | (৬) সুচারু চর্রণ-যুগল অলক্তকে রঞ্জিত হইয়া থাকে এবং উহা গঙ্গাজলে বিধৌত হইয়! উত্তমোত্তম পুষ্প, চন্দন, মালা, বন্ধন ও নৈবেদ্য দ্বারা অঙ্িত হয়, যে দেশে কুমারী-পুজার নিমিত্ত মহধিগ্ণ সং 'স্কৃত মন্ত্র পধ্যস্ত রচনা করিয়৷ গিয়াছেন এবং দেই কুমারী-পুজা-সময়ে ধপ-ধুনা ও গুগলের স্মগন্ধি ধূমরাশিতে সমগ্র পল্লী স্থুবাসিত হয়, সেই দেশের-»সেই একমাত্র ভারতবর্ষের আধ্য-সন্তানগণই নারীর গম্মান-দানে একমাত্র'মভিজ্ এ নারীদিগকে কিরূপে সন্মান করিতে হয়, তাহা শিখাইবার জন্য মনু, যাজবন্কা, ব্যাস, দক্ষ, অঙগিরাহ, বশিষ্ট প্রস্ততি মহুধিগণ ভুরি ভূরি শ্লোক বুচনা করিয়। গিয়াছেন। মনু বলিয়াছেন £--% পিতা, ভ্রাতা, পতি ও দেবর প্রভৃতি যদি গুহের কল্যাণ- কামনা করেন, তাহা হইলে তাহারা যেন তাহাদের গৃহের নারীদিগকে যথাযোগ্য সম্মান প্রদান করেন, পুজা করেন পেশী তশ তপপপাশপপপাপপীলপাপাপািপীপাপিপিপপেপিপপ লগ শিশির শিশিপাতিপশাপািপীশিপশিশপিপিস পিতৃভিন্রখতৃভিশ্চৈতাঃ পতিভিদেবরৈস্তথা । পৃজ্যা ভূষয়িতব্যাশ্চ বহুকল্যাণমিঙ্ছভি; যত্র নার্যস্ত'পৃজ্যস্তে রমস্তে তত্র দেবতাঃ। খব্ৈতাস্ত, ন পৃজ্ঞান্তে সর্বাস্তত্রাফলা; ক্িয়াঃ ॥ শোচত্তি যাময়ো যত্র বিনশ্টত্যাণ্ড তৎকুলম্‌। . ন'শোচস্তি তু যত্রৈতাঃ বর্ঘতে তদ্ধি সর্বদা ॥ তম্মানেতাঃ সদা পৃজ্যা ভূষণাচ্ছাদনাশনৈঃ | ভূতিকামৈর্নবৈমিত্যং সংকারেবৃত্সবেযু চ।-মন | (৪ ) এবং বিবিধ বস্ত্র, অলঙ্কার ও খাদ্য-দানে সন্তুষ্ট রাখেন । যে গৃহে নারীর উপযুক্ত সম্মান ও পুঞ্জা হয় এবং উত্তম খাদ্য-বস্ত্রঅলঙ্কারাদ্রি-দানে নারীকে সন্তুষ্ট রাখা হয়, সে গৃহে তেত্রিশ কোটি দেবতার আবির্ভাব * হয়, দেবতারা তথায় শদৃশ্যরূপে বিরাজ করেন। আর যে গৃহে নারীর পুজ! সম্যক্রূপে অনুষ্ঠিত হয না, সে গৃহের সমস্ত ক্রিয়া- কাণ্ড বিফল হইয়া যায়। যে গৃহে নারী উৎপীড়িত হইয়। ছুঃখ পায়, কষ্টে জীবনযাত্র! নির্ববাহ করে, এস গৃহের-_ে কংশের শীঘ্র ধ্বংস হয়। যে কুলে নারী মনের সুখে দিন- স্বাপন করে, সদা আপ্যায়িত থাকে, সেই কুল শীঘ্র সম্ৃদ্ধি- শালী হইয়া উঠে। অতএব ধাছারা কুলের মান-সম্ত্রম ও সমৃদ্ধি কামনা করেন, তাহারা উত্তম খাদ্য-বন্ত্র-অলম্কারাদি- দানে তাহাদের নারীদিগকে যেন সদা পুজ! করেন। কারণ, নারীই গৃহের দেবতা । যেমন দেবতাকে পুষ্প, চন্দন, মাল্য, ধূপ, বস্ত্র, অলঙ্কার ও নৈবেদ্য দ্বারা পুজা করিতে হয়, তত্রপ উত্তম বস্ত্র, অলঙ্কার, খাদ্য ও.গম্ধ্রব্যাদি দ্বারা দেবতারূপিণী নারীকেও পুজা করিতে হয়। ইহা স্ত্ৈশ দিগের কথা নয়, ইহা চির-ব্রক্মচারী মহাধগণের কথা। আত্মীয় স্ত্রীলোকদিগকে কিরূপে সম্মান করিতে হয়, তাহা শিখাইবার জন্য মনু বলিয়াছেন, % মাতৃ-ভগিনী, সী ৮৮ লী গা পাপ * মাতৃঘস! মংতুলানী শ্বজ্ীরথ পিতৃঘসা |. সম্পূজা গুরুপত্বীবং সমাস্তা! খুকভাধ্যয়া ॥ (2৫...) মাতুলানী, পিতৃ-ভগিনী এবং শ্বশ্রী-(শাশুড়ী) কে মাতা ও গুরুপত্রীর শ্যায় প্রণাম করিয়া! 'ঠাহাদের পদধূলি লইবে। প্রবাস হইতে প্রত্যাগত হইলে বয়োজ্যেষ্ঠ। জ্ঞাতিপত্বী, বৈবাহিক (ব্রেয়ান্‌) এবং পিতৃব্য-পত্ী ( খুড়ী জেঠাই ) প্রভৃতিকে প্রণাম করিয়া পদধূলি লইবে। কারণ, ইহার! মাতা ও গুরুপতীর ন্যায় মান্ত। বয়োজোষ্ঠা সবর্ণা ভ্রাত- পত্তীর ৪ লইয়া প্রণাম করা দেবরের দৈনিক কর্তব্য কম্্ম। * পিতৃভগিনী, মাতৃভগিনী ও জোষ্ট। ত্বগিনীর সহিত মাতৃবৎ রি করিবে। মাতা ইহাদের অপেক্ষা গুঁরু- তমা % পুজনীয় আত্মীয় স্ত্রীলোক বাতীত সাধারণতঃ সত্রীজাতিমাত্রের প্রতি সর্ব্বদা মানব অতি উত্তম ব্যবহার করিবে এবং সম্মন প্রদর্শন করিবে । এই জন্য মনু বলিয়াছেন, ণ' চক্রযুক্ত যানে (গাড়ীতে) আর ব্যক্তি, বৃদ্ধ রোগী, ভারধাহক ( মুটে ), নারী (যে কৌন জাতীয়া এবং যে কোন ধর্ম্মিণী হউক না কেন), গুরুগৃহ হইতে বিদ্যা- শিক্ষা সমাণ্ড করিয়া ও প্রত্যাবৃত্ত বিদ্বান্‌ ব্রাহ্মণ, হস্তী, ০ পিক পালাপপিপাশীীপপীপ পাপা ীশীিীসসপীপ। তুভাষ্লোপসাগ্রাহ্থা ভি | রিপ্রোষ্য তুপমগ্রাহা 1 জ্ঞাতিসম্বন্িযোধিত; ॥ পিতুর্ভগিন্াং মাতুশ্চ জ্যায়স্যাঞচ শ্বসর্যপি। মাতৃবৎ বৃত্তিমাতিষ্ঠেৎ মাতা তাভ্যো৷ গরীয়সী 1-_মন্থু॥ চক্রিণে দ্লমীস্স্য রোগিণে! ভারিণঃ স্্রিয়াঃ। * বাক্য চ বাজ্ঞশ্চ পম্থা দেয়ো বরস্ত চ1--মন্ু। ( ৬ ) ঘোটক, সৈন্য ও ভূৃত্যবর্গে পরিবেষ্টিত রাজা এবং বর, এই সকল লোককে অগ্রে যাইতে দিবার জন্য পথিক পথ ছাড়িয়া দিবে। স্ত্রীলোকের প্রতি সম্মান-প্রদর্শনার্থ শাস্ত্রে ভূরি ভূরি প্রমাণ আছে। মহধি যাজতবন্ বলিয়াছেন, * ভর্ত/ ভ্রাতা, পিতা, জ্ঞাতিবর্গ,শ্বশ্ন ৫শা শুড়ী), শ্বশুর, দেবর এবং অন্যান্য বন্ধুগণ, উত্তম খাদ্য, বন্্, অলঙ্কীর দ্বারা কুল- বধূকে দেবতার মত পুজা করিবে । কুলমহিলা কারাগারের বন্দিনী নয়. কিংবা কুকুর-বিড়ালের ন্যায়, হেয় .পণ্ট নয় কিংবা দাস-দাসীদিগের ন্যায় কঠোর পরিশ্রমের জীবও নয়"; কিন্তু কুলমহিলা গৃহের বাস্তুদেবতাশ্বরূপ। মনু বলিয়াছেন,ণ* গৃহে স্ত্রী যদি সু প্রসন্না থাকেন, তাহা হইলে সমস্ত কুলই স্প্রসন্ন থাকে, আর স্ত্রী যদি অপ্রসন্না থাকেন, তাহা হইলে সমস্তই অপ্রসন্ন বলিয়া বোধ হয়। ধাহাদের উত্তম, খাদা, বস্ত্র, অলঙ্কার দ্বার সামর্থ্য নাই, তাহারা স্ব স্ব স্ত্রীর মনস্তুষ্টির জন্য যেন অসঙ্গত উপায়ে এ সকল বস্তু সংগ্রহ না করেন। পতির স্থুমধুর বাক্য, উত্তম ব্যবহার, সদা যত, সেহ-সমাদরই পীর উত্তম খাদ্য-বনত্র অলঙ্কারাদি বস্তুর স্থানাপন্ন হওয়াই উচিত। কুলমহিল! শি ািশীাশপি পিপাশীশিি শশা ১০ ক্ষ ্ রতভরাতৃপিতৃজ্ঞাতিসবশ্গুরদেবৰৈ: | বন্ধৃভিষ্চ স্তরিয়ঃ পূজ্য। ভূষণাচ্ছাদনাশনৈঃ ।--যাজ্জবন্ধ্য | 1 স্রিয়ান্ত রোচমানায়াং সর্ধং তদ্রোচতে কুলম্‌। তন্তাং তূরোচমানায়াং সর্ধমেব ন রোচতে ।--মন্ু ॥ নি গৃহস্ফোচিত কার্যে শিক্ষিত! হইবে। গৃহকাধ্যে স্্রীরজাতি থশিক্ষিতা হইলে গৃহে কোন বিষয়ে বিশৃঙ্খলা ঘটে না। গুহে বহু দাস-দাসী থাকিলেও স্ত্রীলোক আলম্তে ও গুদাস্তে কালযাগন কর্ষরবে না; দাস-দাসীদ্রিগের কার্যাবলী নিরীক্ষণ করিবে; তাহাদিগকে উত্তমরূপে স্ব স্ব কার্যে নিয়োজিত করিয়া রাখিবে। স্ত্রীলোক সদা বিলাসে আসক্ত থাকিয়া নিজীব চিত্রপটের ন্যায় বিরাজ করিবে না। এইরূপ,ভাবে দা অবস্থান করিলে নারীর স্বাস্থ্যভঙ্ হয় এবং মেদ বদ্ধিত হওয়ায় তাঁদৃশী নারী অতি স্থুলাঙ্গী হইয়। পড়ে, ক্রমে বাতবাধি দ্বারা আক্রান্ত হইয়া কষ্ট "পায় এবং অবশেষে তাহার শরীর ছূর্ববহ হইয়া পড়ে। সেই জন্যই মনু বলিয়াছেন £_-% নারী গৃহকার্ষ্যে দক্ষ হইয়া গৃহের বস্তু সকল পরিস্কৃত, পরিচ্ছন্ন ও যথাস্থানে তৃসভ্জিত করিয়া রাখিবে; সংসারযাত্রা-নির্ববাহের্‌ জন্য অত্যধিক ব্যয় করিবে না। আয় অনুসারে ব্যয় করিবে। আয় ব্যয়ের একটা, “হিসাব-নিকাশ”: রাখিবে। না বুঝিয়া অতিব্যয় করা দারিজ্র্যের প্রথম সূচনা । অদ্য বৃহৎ রৌহিত মত্স্্ের *পোলাউ” ভক্ষণ, আর কল্য খাদ্যাভাবে উপরাসে ' দিনযাপন শান্ত্রনিষিদ্ধ। গৃহের দাস-দাসী- 2 তে ০ ০০ দা পাস সা প্রহষটয়া ভাব্যং গৃহকাধ্যেযু দক্ষয়া। সুসংস্কৃতোপস্করয়া ব্যয়ে চামুক্তহস্তয়। |__মন্ (1৮) দিগকে উত্তমরূপে ভোজন করাইবে। তাহাদের প্রতি গৃহকর্রী সরল ও উদার ভাব প্রদর্শন করিবে। তাহাদের সহিত পুক্র-কন্তার মত ব্যবহার করিবে । শকুন্তল! যখন শ্বশুরালয়ে গমন করিতেছিলেন, তখন তাহার প্রতিপালক পিতা মহফি কণু তাহাকে এইরূপ উপদেশ দিয়াছিলেন ৫-% শ্বশুর ও শঙ্খ (শ্বাশুড়ী) প্রভৃতি গুরুজনের সেবা করিও । তোমার পতির যদি অন্য কোন পত্তী থাকেন, তাহা হইলে তাহার সহিত ধপ্রয়-সখীর ন্যায় মাচরণ করিও । কদাপি উহার সহিত বিবাদ-বিসংবাদ “করিও না। যদ্রি কদাচিৎ কোন কারণ বশতঃ তোমার পতি তোমার প্রতি ক্রুদ্ধ হইয়া তোমাকে ভত্-সনা করেন, তাহা হইলে তীহার প্রতি রুট হইও না। তীহার প্রতিকূল আচরণ করিও মা। পরিজনের সহিত, দাস-দাসীদিগের সহিত সরল ও,উদার ব্যবহার করিও । ৌভাগ্া-সমৃদ্ধি হইলে কদাচ গর্বিবিত হইও না। এইরূপ উপদেশমত কাধ্য করিলেই প্রশংসনীয় গৃহিণীর পদ প্রাপ্ত হইতে পারিবে যে নারী এইরূপ উপদেশের বিপরীত আচরণ করে, সে শুশ্রন্ব গুরূন্‌ কুক প্রিয়সথীবৃ্তিং সপত্রীজনে ভর্ত,বিবপ্রকৃতাপি রোষণতয়া মাস্ম প্রতীপং গমঃ॥ ভূয়িসটং ভব দক্ষিণা পরিজনে ভাগোনুৎসেকিনী, যান্ত্যেবং গৃহিণীপদং যুবতয়ো বামাঃ কুলস্তাধয়ঃ ॥ | অভিজ্ঞানশধুস্তলম্‌ ( ৯ ) গৃহের ব্যাধিস্বরূপ ও কণ্টকন্বরূপ হইয়া সদা পুতি প্রভৃতির 'মানসী ব্যথ! উৎপাদন করিয়া থাকে । স্ত্রীলোকের স্বাধীনত| শান্ত্রনিষিদ্ধ ও ভারতীয় ব্যবহার-বিরুদ্ধ। শাস্্ বলেন ৪% স্ত্রীজাতি শৈশবে পৈতার রক্ষণ।বেক্ষণের অধীন হইয়। থাকিবে, যৌবনে পতির রক্ষণাধান হইবে এবং বুদ্ধা- বস্থায় পুল্রের সেবাধীন হইবে। স্ত্রীলোক কোন কালেই স্বাধীনতা পাইতে পারে না। মনু বলিয়াছেন, ণ* বালিকাই হুউক্‌, যুবতীই হউক্‌ ব্রা বৃদ্ধাই হউক্‌ না কেন, কুলমহিল কোন কালেই নিজ্‌ গুহেও স্বাধীনভাবে কোন কার্য করিতে* পারে না। নিজের গৃহমধ্যেই যখন স্বাধীনত। নিষিদ্ধ হইয়াছে, তখন বাহিরে স্বাধীনতা ত অত্যন্তই *নিষিদ্ধ। মহধি যাজ্ঞবন্ক/ বলিয়াছেন, *পঃ স্ত্রীলোক বাল্যকালে পিতার অধান হইবে, বিবাহের পর পতির অধীন হইবে এবং বৃদ্ধাবস্থায় পুজদিগের রক্ষণাবেক্ষণে থাকিবে.। যদি পিতা, পতি বা পিতা রক্ষৃতি কৌমারে ভর্তা রক্ষতি যৌবনে । পুজো রক্ষতি বাদ্ধক্যে ন স্ত্রী স্বাতন্্যমর্তি | বালয়া বা যুত্যা বা বৃদ্ধয়।৷ বাপি ফোষিতা। | ন স্বাতস্তর্েণ কর্তব্যং কিঞ্চিৎ কণ্ম গৃহেষপি | । রক্ষেৎ কন্যাং পিতাবিন্নাং পতিঃ পুশ্রান্ত বার্ধীকে। অভাবে জ্ঞাতয়স্তেযাং স্বাতন্্যং ন কচিৎ স্ত্রিয়াঃ ।-_যাজ্ঞবন্ধ্য ॥ ( ৯০ ) পুক্র না থাকে, তাহা হইলে ভ্ঞাতি বা অগ্য আত্মীয়গণের রক্ষণাধীন হইবে। স্ত্রীলোক কোন কালেই স্বাধীনতা পাইতে পারে না। শাস্ত্র পুনরায় বলিতেছেন £--% পিতা, পতি ও পুন্রগণ হইতে পৃথক্‌ শুইয়া স্ত্রীলোক কদাপি কোন স্থানে বাদ করিবে না। ইহাদের নিকট হইতে পৃথক্‌ হইয়। বাস করিলে পিতৃকুল ও শ্বশঠরকুলের নিন্দা হয়। ভারতের কুলমহিলা লঙ্জাশীলা হইবে। ভারতের কুলমহিলার পক্ষে পরপুরুষের” মুখ-দর্শন কর! শান্স্নিষিদ্ধ। ভারত-ললনা পরপুরুষের দৃষ্টিগোচর হুইবৈ না। পরপুরুষের দৃষ্টি-ব্যাঘাতের জন্য মবগুটন- বতী হইবে পরপুরুষের মুখ দেখা ত দুরের কথা, শান্ত বলিতেছেন £-- কুলমহিল! চন্দ্র-সূরধ্য পর্য্যন্ত দর্শন করিবে না । সেই জন্য শাস্ত্র কুলমহিলাকে “অসুষ্যম্পশ্য।” হইতে উপদেশ করিয়াছেন। এমন কি, পতির মুখ ছাড়। পুংলিজ-শব্দ- বাচ্য বৃক্ষাদি পদার্থকেও নিরীক্ষণ করিকে না। যেনারী এইরূপ শান্ত্রনীতি এবং প্রাচীন ভারতীয় পবিত্র হিন্দু সমাজ-নীতি অনুসারে পরিচালিত হয়, সেই নারীই ষথার্থ ধর্মমচারিণী। নতুবা কেবলমাত্র ' “মধুসংক্রান্তি ত্রভ” * পিত্রা ভত্রণ সুতৈর্বাপি নেচ্ছেৎ বিরহমাত্মনঃ। এধাং হি বিরহেণ স্ত্রী গর্ঠ্ে কুষ্যাদুভে কুলে ॥ ( ১৯ ) করিলেই কিংবা নাসিকায় তিলক অঙ্কিত করিয়৷ জপমালা লইয়া! জপ করিলেই মাত্র নারী ধর্মাচারিণী হয় না। শান্ত বলিয়াছেন --গোপনে মদ্য-মাংস-সেবন, ছুষট-্ত্ী-পুরুষের সহিত সংসর্গ, গতির সহিত বিচ্ছেদ, স্বাধীনভাবে ইতস্ততঃ পর্যটন, পরগুহে শয়ন ও পরগুহে বাস এই ছয়টি নারীর পক্ষে অত্যন্ত দুষণীয়। সত্রীজাতি রত্বত্বরূপ। হীরক-মুক্তা-মাণিক্যাদি রতু যেমন লোকে অতি মত্বে ও সাবধানে “মখ্মল্” প্রভৃতি অতি “কোমল বস্ত্-সমাচ্ছাদিত নূচারু কারুকার্যা সুশোভিত পেটিকার মধ্যে রক্ষা করে, কিন্তু ঘাটে মাঠে পথে জঙ্গলে অনাদূতভাবে ছড়াইয়া রাখে না, তদ্রুপ ঝুঁলমহিলাকে স্থসজ্জিত স্বাস্থ্যকর উত্তম মনোরম আবৃত গৃহে রাখিয়া প্রতিপালন করিবে; ঘাটে মাঁঠে হাটে পথে জঙ্গলে অবহেলা পূর্বকক অনাবৃতভাবে বিকী্ণ করিয়া রাখিবে না। রত্ব অবহেলার বন্ত্ব নয়। রত্বের প্রতি রত্বেচিত ব্যবহার করিবে। রত্বুকে অবহেলা করিলে দস্থ্য-তস্করাদির ভয় অবশ্যস্তাবী এবং ছল্সবেশী ভদ্রের ভয়ও অনিবার্ধ্য। কুলমহিলা সর্বদা যেখানে বাস করেন, তাহার নাম অন্তধ্পুর ; ' তাহার ভ্বপর নাম শুদ্ধান্ত। সে স্থান সদাই শুদ্ধ এবং উহা "পরপুরুষের দৃষ্টির মন্তরালে অবস্থিত হওয়া উচিত কলিয়া উহা শুদ্ধান্ত নামে অভিহিত। উহা! জনতা- পুর্ণ হট্র ও "সাধারণ পথের ন্যায় অনাবৃত, অপবিত্র ও ( ১২) সাধারণের গম্য স্থান নহে। উহা আবৃত পবিত্র স্বজনগণের অধুাষিত স্থান। কুলমহিলারূপ রত্বু তাদৃশ স্থানেই রক্ষণীয় বন্ত। যাহার যেমন আর্থিক অবস্থা, তিনি তদনুসারে বাসতবন নিজের আয়ত্ত করিয়া তার কুল- মহিলাদিগকে সাধারণের দৃষ্টিবহিষ্ভূতি করিয়া তথায় রক্ষা করিবেন, ইহাই শান্ত্রবাক্যের তাণুপত্্যার্থ। নিজের অবস্থানু- সারে এ স্থানকে যথাশক্তি পরিষ্কত, পবিত্র, মনোরম ও স্বাস্থাজনক করিয়া রাখিতে সদ চেষ্টা'করিবে। মনু বলিয়াছেন ঃ-ন্ত্রী, রত্ব, বিদ্যা, সতাধন্ম, পবিত্রতা, স্তমধূর উপদৈশবাক্য এবং নানাবিধ শিল্প সকলের নিকট হইতেই গ্রহণ করা' যাইতে পারে। সেই জন্য শান্তর আরও বলিতেছেন যে, “ল্ত্রীরত্বং দুক্ধুলাদপি” অর্থাৎ স্্ীজাতি রত্ববিশেষ বলিয়া অপেক্ষাকৃত নীচ কুল হইতেও উহা গ্রহণ করা যাইতে পারে। ভ্ত্রীজাতির উৎকৃষ্টতা” ও পবিত্রত প্রতিপাদন করিবার জন্যই শান্ত্র এরূপ কথা বলিয়াছেন । এই জন্যই শ্ত্রীজাতি ঈশ্বরের উত্তম সৃষ্টি ও উত্তম অর্ধা বাঁলয়া বর্ণিত হইয়া থাকে । মনু বলিয়াছেন £-_ যে কুলে ভর্তা ভার্যার প্রতি সদা সন্তুষ্ট থাকেন এবং ভার্ষ্যাও ভর্তার প্রতি পর্ববদা' সন্তুষ্ট থাকেন সে কুলের কল্যাণ অবশ্য্তাবী। সন্তোষই কল্যাণের একমাত্র মূল কারণ পতির ধনাভাব হেতু পতি যদি উচ্চ অট্টা লিকায় বাস করিতে না পারেন, তথাপি সাধবী পত্বী নির্ধন 1. 5: পতির সহিত পর্ণকুটারে বাস করিয়াও এবং দিনা্তে শাকান্নমাত্র তক্ষণ করিয়াও, মহাসন্তেষ অনুভব করিবে । কন্যার পিতা! স্বজাতীয় ৰা বিজাতীয় উপায়ে অর্থ উপার্জন করিয়া ধদি আপনাকে ধনী বলিয়া মনে করে, ধনমদে গর্বিত হয় এবং নিজের কন্যাকে দরিদ্র জামাতার পর্নকুটারে না পাঠাইয়! নিজ অট্রালিকায় খাবজ্জীবন আবদ্ধ করিয়া রাখে, তাহা হইলে এ অসাধু পিতা দত্তাপহারী হইয়া মর্রণান্তে * নরকে গমন করে। কন্ঠাকে জামাতার হস্তে সম্প্রদান করিলে এ কন্যাতে পিতার আর কোন স্বদ্ধ থাকে না; উহা জামাতার বস্তু হইয়া যায়। এই জন্য শাস্ত্র বলিয়াছেন :-_সম্প্রদানির পর কন্যা পরকীয় ধন হইয়া পড়ে। বিবাহের পর পতি পরিত্যাগ করিয়া পিত্রালয়ে যাবজ্জীবন বাস করা স্ত্রীর পক্ষে অত্যন্ত নিষিদ্ধ । এই জন্য অভিজ্ঞ্ঞানশকুন্তলে লিখিত আছে, “সধবা নারী সতীত্ব রক্ষা করিয়াও যদি যাবজ্ভীবন পিতৃগৃহে বাস করে, তথাপি জগতের ছিদ্রান্েষী নরনারীগণ তাহার চরিব্রে-বিষয়ে মানাপ্রকার সন্দেহ করিয়৷ থাকে; অতএব স্ত্রী পতির অপ্রিয়! হইলেও, পততি-গৃহে নানাবিধ কষ্ট* সত্বেও পতিঃসমীপেই সর্ববদ। বাম করিবে। *কারণ, আত্ীয়-মিত্র-বান্ধবগণ পতি-সমীপেই সধবা নারীর সদা অবশ্থিতি দেঞিতে এঁকান্তিক ইচ্ছা করেন,” স্বর্গ ও পর্ববতের ম্যায় অচল ও স্থির হইয়া পতি-গুহে যাবজ্জীবন ( ১৪ ) বাদ করিবার জন্য বেদ নববধূকে অমূল্য উপদেশ দিয়াছেন। “যেন যাবজ্জীবন পতি-গৃহেই বাস করিতে পারি, পতি-গৃহ পরিত্যাগ করিয়া যেন অন্যাত্র কুত্রাপি না যাই,” পরমেশ্বরের নিকটে এইরাপ প্রার্থনা করিবার জন্য বেদ স্ত্রীজাতিকে বিশেষভাবে উপদেশ করিয়াছেন। স্ত্রী সদা প্রিয়া ও প্রিয়বাদিনী হইবে। কোন ভার্থার “মুখে মধু হৃদে বিষ” হেতু তিনি বাহিরে লোকাচার- রক্ষণার্থ প্রিয়বাদিনী বা মধুরভাষিণী “হইয়া, থাকেন। কোন ভার্ধ্যার অন্তরটি খুব পবিত্র হইলেও, দয়া, স্নেহ ,ও "প্রেমে তাহার হৃদয় পূর্ণ হইলেও তিনি মুখরা, অপ্রিয়- বাদিনী, (কাপনস্বভাবা, কটুভাষিণী ও কোলাহলরত হওয়ায় পতির প্রিয়া বা গ্রীতিপ্রদা হইতে পারেন না। এই জন্য নীতিশান্ত্র বলেন যে, জগতে এই ছয়টি বড়ই স্থখকর। (১) সামান্য ব্যয়ের সহিত প্রচুর আয়, (২) সঙ্গা নীরোগ শরীর, (৩) প্রিয়া ভাষ্যা, (8) প্রিয়বাদিনী তাধ্যা, (৫) বশ্য পুল, ও (৬) অর্থকরী বিদ্যা। এ স্থলে ভাধ্্যার প্রিয়াত্ব এবং প্রিয়বাদিনীত্ব এই দ্রইটি গুণকে পৃথক্‌ পৃথক্রূপে গণনা করা হইয়াছে। শান্্ে ভাধ্যাকে পতির অর্দাঙ্গিনী কহে। ভার্্যাই উত্তম মগ্ধা্গ । : অদ্ধা- ঙ্গিনী গৃহিনীর সহিত ধর্মকর্ম অনুষ্ঠান করাই পির উচিত কাধ্য । অধর্ব-বেদ (১৪ কাণ্ু, ২ অনু, ১৮ মন্ত্র) উপদেশ করিয়াছেন, “ছে নারি ! তুমি দেবর-ঘাতিনী ও (১৫) পতি-ঘাতিনী হইও না; পতি ও দেবরের মনে কদাপি পীড়া জন্মাইও না; চর তাহাদিগকে সম্ষট রাখিও এবং তাহাদিগের প্রতি হিতাচরণ করিও; গুহস্থাশ্রমের গে, মহিষ, ছাশ, ঘোটক প্রভৃতি প্রতিপালা পশু ও পক্ষিগণের কলাণসাধন করিও; তাহাদিগকে যত্তের সহিষ্ভ প্রাতপালন করিও; তাহা হইলেই তুমি ঈশ্বরের কৃপায় বীর-প্রপবিনী হইবে ; পুক্র-পৌন্রাদি-সম্পন্ন হইয়া ন্বখে দিনযাপন ,করিবে। তুমি পতি ও দেবরাদির মঙ্গলবিধায়িনী হইয়া গৃহস্থাশ্রমের অর্চনীয় হোমাগ্নিকে আরাধনা! করিও।» পুরাকালে পত্বী পতির সহিত বৈদিক" পাঠ পূর্বক একত্র বসিয়! হোম করিতেন। সত্রীলোকের পাতিত্রত্য-ধর্থ্ম | স্্রীলোকের পত্িই একমাত্র গতি ও আরাধ্য দেবতা । মনু বলিয়াছেন, “পতি কদাচার, কুম্বভাব, যথেচ্ছাচারী, বিদ্যাবুদ্ধি-বিহীন ও রঁপপুণ-বিহীন হইলেও সাধবী স্ত্রী পতিকে দেবতার যায় তক্তি করিবে। স্ত্রীলোকের পতি ভিন্ন যত নাই, পতি ছাড়া অন্য ব্রত নাই, পতির সেবা করিলেই সমস্ত ব্রতের ফল লব্ধ হয় ; পতির সেবা করিলেই উপবাসের ফল-লাভ-হয়; পতির সেবা করিলেই নারী স্বর্গেও পৃজনীয়া হয়েন। ( ১৩ ) _ পতিতা।গিনী ও পতি-বিদ্বেষিণী নারীর সহিত সতী সী বাক্যালাপ করিবে না ॥ মহষি যাজ্জবন্কা বলিয়াছেন, পতির আদেশপালন করাই পত্বীর একমাত্র পৰম ধণ্ম। যে গৃহে পতি ও পত্রী পরস্পর পরস্পরের প্রতি অনুকূল থাকেন, কেহ কাহার প্রতিকুলতা্র৭ করেন না, সে গুভে ধর্ম-মর্থকাম এই তিবর্গের বুদ্ধি হয়।” মহষি যাজ্ভবন্থ্য বলিয়াছেন, “গৃহবধূ সর্ববদা গুহোপকরণ ও গ্যহশ্মিত বস্ত্ৃগুলিকে সুন্দরভাবে সাজা ইয়া-গুছাইয়৷ রাখিবে ; রন্ধনাদি কার্যে স্নিপুণ। হইবে; সর্বদা হৃফটচিন্তে হাস্তমুখে দিনঘাপন করিবে; প্রয়োজনাতিরিস্ত ব্যয় করিবে না; প্রতিদিন শ্বশ্ঠর ও শ্ব্শী ঠাকুরাণীর চরণে প্রণাম করিবে এবং পতির বশবত্তিনী হইয়া সকল কাধা করিবে । মহুধি যাল্জবন্কা বলিয়াছেন, যে নারী পতির প্রিয় ও হিতকর কাধ্যে সদা বাপৃতা, সদাচার- সম্পন্ন। এবং জিতেন্দ্রিয়া, তিনি ইহকালে স্থুযশ ও পর- কালে অনুপম উত্তম গতি প্রাপ্ত হয়েন। মহধি দক্ষ বলিয়াছেন, পত্বীই গৃহস্থাশ্রমের মুল-দেবতা । পত্বী যদি পতির বশবস্তিনী হয়েন, তাহ! হইলে গৃহস্থাশ্রমের তুল্য মহান্্খকর স্থান আর কুত্রাপি নাই। এ আশ্রমের 'ভুলনা 'নাই। পত্তী বশে থাকিলে এ আশ্রম স্বর্গ অপেক্ষাও স্থখকর স্থন হইয়! উঠে। স্ত্রী যদি মথেচ্ছাচারিণী হইয়া পড়ে এবং পতি যদ্দি অত্যন্ত স্ত্রিণতো ও অতি-গ্রীতি- 73 বশতঃ প্রথমকাল হইতে এ স্ত্রীকে নিবারণ না করে, তাহা হইলে এীন্ত্রী প্রথমে উপেক্ষিত রোগের ন্যায় বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় এবং পশ্ঢাঁ অবশ্য হইয়৷ মহা ক্রেশদায়িনী হয় । যোস্দ্রী সর্দ পতির অনুকূল আচরণ করেন, যিনি কর্কশভাষিণী না হইয়? সদ! মধুরভাধিণী হয়েন, ব্বধন্মন- রক্ষায় সদা ব্যাপূতা থাকেন এবং পতির প্রতি অকপট তক্তি প্রদর্শন করেন, তিনি নারী নহেন, তিনি দেবতা 1 এই মানুষই দেবত্ব-গুণসম্পন্ন হইলেই দেবতা বলিঘ! কথিত হয় এবং পশুত্ব-গুণসম্পন্ন হইলেই পণ্ু বলিফ! আখ্যাত হয়। মহধি দক্ষ বলিয়াছেন, “যে পুরুষের পত্তী অনুকূলা ও বশ্যা, তাহার ইহলোকেই স্বর্গম্বখভোগ হয় এবং যাহার পত্তী প্রতিকূল ও অবশ্যা, তাহার ইহুলোকেই নরক- ভোগ হয়। স্খভোগের নিমিত্তই লোকে গুহস্থাশ্রমে বাস করে। পৃহস্থাশ্রমে পত্বীই স্থখের মূল-কারপ | যে পত্বী বিনীতা, স্বামীর চিত্তানুবন্তিনী, স্খশাস্তিদায়িনী এবং বশ্যা, তিনিই যথার্থ পত্বীপদবাচ্যা হয়েন। *পতি দরিদ্র ও*রোগার্ত হইলে যে পত্ী তীহাকে ॥অবরজ্ঞ|। করে এবং তাহার সেব। করে না, সে পত্বী জম্ম- জন্মান্ত'রৈ গৃঁী, কুকুরী বা মকরী হইয়া অশ্ষে “কেশ ভোগ করে।” (১৮) 'স্কন্নপুরাণে লিখিত মাছে, “পত্রী কদাপি পতিবাকা লঙ্ঘন করিবে না। পতিবাক্য-পালনই পত্বীর পরম ধর্ম্ন, একমাত্র ব্রত এবং একমাত্র দ্েবার্চনা। পত্বী সদা পতিবাক্য পালন করিবে। | | পতি কাপুরুষই হউন্‌ আর দরিদ্রই হউন্, বৃদ্ধই হউন বা রোগগ্রন্ত হউন্‌, স্ুুসময়স্থ হউন্‌ বা ছুঃসময়স্থ' হউন্‌ "না, কেন, পত্বী পতিকে কদাপি উপেক্ষা করিবে না। অকপট ও পবিত্রহদয় স্ত্রী, পতি হৃষ্উ হইলে হাটা হয়েন; পতি কোন কারণবশতঃ বিষঞ্ বদন হইলে নিজেও বিষপ্-বদনা হয়েন। সাধবী স্ত্রী পতির সম্পদেও অনুগতা৷ এবং বিপদেও অনুগতা হইয়া পতির সুখে স্বখিনী এবং দুঃখে হুঃখিনী হয়েন। পতির সেবা করিলে অশ্বমেধ-যজ্জের ফল-লাভ হয়। পতির সেবা করিলে গঙ্গাস্ান, তীর্ঘদর্শন, দেবালয়ে গমন, ও পুরাণ-পাঠ-শ্রবণাদি পুণ্যকার্যের ফললাভ হয়। যদি কোন নারী গঙ্গান্নান করিতে বা কোন তীর্থ দর্শন করিতে ইচ্ছা করেন, তাহা হইলে তাহাকে, কষ্ট ভোগ করিয়া 'গঙ্গাতীরে কিংবা কোন তীর্ঘক্ষেত্রে বা কোন দেবালয়ে অথবা দেবী-মন্দিরে যাইতে হইবে না; যাইবার ক্লোন প্রয়োজনই নাই । কারণ, গুঁহে পতির পাদোদক পান, করিলেই গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী, কাবেরী প্রসৃতি পুণ্যতোয়া নদীতে স্নানের ফললাত হয় এবং কাশী, প্রীক্ষেত্র, বৃন্দাবন, (৯৯ ) মথুর! প্রভৃতি তীর্ঘ-দর্শনের ফললাভ হয়। কারণ, পতি শিব ও বিষুও হইতেও শ্রেষ্ঠ । পতির পাদোদক পান করিলে শিব ও বিষু-দর্শনের ফললাভ হয়। পতির আঙ্ঞ| বিনা যে নারী কোন ব্রত ও উপবাস করে, সে নারী পতির স্ায়ুক্ষয় করে এবং মরণান্তে নরকে গ্রমন করে। পতিব্রতা নারী গৃহে ঘৃত, লবণ, তৈল, ত্ৃগুল, ইন্ধন প্রভৃতি বস্ত্র ফুরাইয়! যাইবার পূর্বেবেই (সেই সেই বস্তুর অন্ভাব পতিকে জানাইবে। একেবারে ফুরাইয়া যাইবার পর মুভ্মুহঃ “এটা নাই, ওটা নাই” এইরূপ বলিয়া স্বমীকে উদ্বেজিত করিবে না। পত্তী নিজের" উত্তম বন্ত্রঅলঙ্কার পরিধানের বাসন! পরিতৃপ্ত করিবার জন্য পতিকে কোন ক্লেশকর কার্যে নিয়োজিত করিবে না । ঘে নারী পতির আহবানে অকারণ ক্ুদ্ধ হইয়া কর্কশ-স্বরে উত্তর দান করে, সে পরজন্মে গ্রাম্য কুক্ুরী বা বন্য শৃগালী হয়। পতির চরণ পূজা করিয়া, পতি-চরণে প্রণাম করিয়া সতী স্ত্রী পৃতিকে অদ্গ্রে ভোজন করাইবে। পতিকে মহাধত্রের সহিত ভোজন করাইয়া পম্চাৎ নিজে তোজন করিব্ধে। “পতির আহারান্তে ভোজন করাই সাধবী স্ত্রীর, অবশ] পালনীয় প্রাচীন সদাচার,” এইরূপ দৃঢ় বিশ্বাস ও নিশ্চয়ের সহিত সাধবী স্ত্রী, পতি-€সবায় রত থাকিবে। 25 কোন নারীর গুরুজন নীচাসনে বসিলে সেই নারী কখনও উচ্চাসনে বসিবে না । কোন নারী নিজের উত্তম বন্্র ও অলঙ্কারের সৌন্দর্য দেখাইবার জন্য আমোদ- প্রমোদ উপলক্ষে সদা মিমনতরণরক্ষার্থ : পর-গুহে গমন করিবে না। ভদ্রবংশীয়া নারী লজ্জাজনক অশ্লীল বাকা উচ্চারণ করিবে না।” প্রাচীন মহধিগণ মহিলাদিগকে লজ্জাশীলা হইবার জন্য এবং গৃহমধ্যে থাকিয়া গৃহকার্্যে ব্যাপৃতা হইবার জন্য তুরি ভুরি উপদেশ দিয়াছেন। ভদ্র-মহিলার পরগৃহে গমন শাস্ত্রনিষিদ্ধ। ভারতে আর্ধ্য-মহিলারা অতি প্রাচীন- কাল হইতেই লঙ্জামীলা ও সাবরণা ( “পর্দানসীন্” )। ইহাদের মধ্যে কেহ কেহ, এই জন্য শাস্ত্রে “অসূর্াম্পশ্যা” এই বিশেষণ পর্য্যন্ত লাভ করিয়াছেন । “যে ছুষ্টবুন্ধি নারী স্বামীকে পরিত্যাগ করিয়া স্বাধীন- ভাবে আত্মীয়গণের দৃষ্টির অন্তরালে নির্জন প্রদেশে গোপনে একাকিনী বিচরণ করে, সে" পরজম্মে উলুকী ( পেঁচা) হইয়! বৃক্ষকোটরে বাস করিবে । যেনারী নিজের দোষবশতঃ পতি কর্তৃক ভত“সিত বা তাড়িত হইয়া পতিকে ভঙ্পনা বা তাড়না করিতে ইচ্ছুক বা উদ্যত হয়, সে পরজন্মে ব্যাত্বী বা বিড়ালী হয় : যে নারী গোপনে পরপুরুষের প্রতি কটাক্ষপাত করে, সে পরজজন্মে কেকরাহ্ষী: (“টেরাচোখো” ) হয়। যে নারী ( ৪১ ) পতির দৃষ্টির অন্তরালে পরপুরুষের প্রতি কটাক্ষপাত করে, সে পরজন্মে কাণা, কুুদিতমুখী € কুরূপা হয়। যেনারী পতিকে মিষ্টান্নাদি উত্তম বস্ত্র প্রদান না করিয়া নিজেই? উহা! গোপনে ভক্ষণ করে, সে পরজনম্মে গ্রাম্য শুকরী হয় কিংঝ নিজ বিষ্ঠাভোজী বাছুড় হয়। * যে নারা স্বামীকে বাহির হইতে গৃহে সমাগত দেখিবা- মাত্র শীঘ্র পাদপ্রক্ষালনের জল আনয়ন করে, তাহার পাদ-প্রক্ষালন & কিব্ি বিশ্রামের পর তাহাকে ভোজন করাইবার জন্য খাদ্য বস্তু নিয়া তাহার সম্মুখে রাখিয়া দেয়, তাহার ভোজনের পর তাহাকে তাম্বুল প্রীদাৰ করিয়া ব্জন ও পদসেব। করে এবং ক্লান্তিনাশক শান্তি দায়ক সুমধুর অম্বৃতময় বচনে তাহাকে সিদ্ধ, স্থশীতল ও প্রীত করে, লে নারী স্বর্গ, মত্ত্য ও পাতালকেও প্রীত করে। লোকে ও শাস্ত্রে ঈদৃশী নারীকেই পতিব্রতু ও সতী কহে।” কেবলমাত্র চতুর্দশ বৎসর সাবিত্রী-ব্রত করিলেই সতী হয় না। “পিতা, মাতা, ভ্রাতা, দেবর, পুজ্র ও কন্যা প্রভৃতি সকূলে পরিমিত স্থদান করিয়া! থাকে মাত্র, কিন্তু পতি স্বর্গীয় স্থখসম অপূর্ব অনুপম পবিভত্রতম স্ুখদান করেন বলিয়া ভার্ধ্যা শপতিকে দেবতার গায় পূজা ও সম্মান (কর্রিবে। পতিই পত্ঠীর একমাত্র দেবতা । পতিই পত্বীর একমাত্র গুরু । পতি ছাড়! পত্বীর অন্ত কোন গুরুই নাই। সতী স্ত্রীর পতিই একমাত্র- ধর্ম, একমাত্র তীর্থ ও (২২ ) একমাত্র ব্রত; স্ৃতরাং সাধবী স্ত্রীব স্বতন্ত্র ধর্ম্মামুষ্ঠান, ব্রত-পরিপালন এবং তীর্থ ঝ| দেবালয়-দর্শন নিশ্রুযোজন । সতী স্ত্রী এ জগতে সমস্ত বস্তু পরিভাগ করিয়া একমাত্র পতিকেই পুজা করিবে। ৃ পতি দরিদ্র হইলেও, রোগার্ত 'ইইলেও অথন! কারধা- বশতঃ, পথভ্রমণ ও রাত্রি-জাগরণাদি নিবন্ধন ছুর্বিল, ক্ষীণ ও কূশ হইয়া গেলেও যে নারী পতিকে পরজর ন্যা অতিশয় যত, স্নেহ ও সমাদর কবে, শান ভাহাক্কেই সতী পতিব্রতা কহে ।” ' ব্যাস-সংহিতায় লিখিত আছে £_+ন্্রীলোক প্রত্যুষে পতির উঠিবাঁর পুর্বে শধ্যাতাগ করিয়। শখ্যাদ্রব্য যথা- স্থানে তুলিয়া রাখিবে; পরে শৌচকৃত্য সমাপ্ত করিবে ; তৎপরে জল-মিশ্রিত গোময় দ্বার! গৃহে গোবর-ছড়া” দিবে; তৎপরে রন্ধনোপযোগী ধৌত পাত্র সকল পুনরায় ধৌত করিবে, পাকশলার সমস্ত পাত্র প্রতিদিন বাহিরে আনিয়া উত্তমরূপে মার্জজিত করিবে; পরে সৃত্তিকা ও গোময় দ্বারা চুল্লী সংস্ক্ঠ করিবে; ততপরে স্নান করিয়া শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করিবে; তৎুপরে পূর্বোক্ত ধৌত পাত্রগুলি জল ও তণুলাদি-পুর্ণ করিয়! যথাস্থানে স্থাপিত করিবে; তৎপরে চুল্লীমধ্যে অগ্নি প্রন্থালিত করিবে; শিল-লোড়া, হাড়ী-সর!, হামান্-দিস্তা, উদৃখল, মুদল প্রভৃতি যুগ্ন বন্তগুলিকে যথাযোগ্য স্থানে ॥ ২৩ ) সম্িবেশিত করিবে । এইরূপে পূর্ববাহুকৃত্য সকল সমাধা করিয়া শ্বশ্রা, শশুর প্রভৃতি গুরুজনকে প্রণাম করিবে এবং ক্লায়মমোরাক্যে স্বীয় বিশুদ্ধ চরিত্র প্রদর্শন করিয়া সদা পতির আজ্ঞানুবন্তিনী হইবে। পরে অন্ন- ব্ঞ্জনাদি প্রস্তত করিয়া মধ্যান্কে অগ্রে শশ্, শ্বশুর ও পতিপুজ্র গ্রভৃতিকে উত্তমরূপে ভোজন করাইয় পশ্চাৎ নিজে ভোজন করিবে। এই প্রকারে যে নারী পতিকে* দেবতা ,জ্কান করিয়া ভক্তি-শ্রদ্ধার সহিত পতির সেবা করেন, সেই নারীই ইহলোকে পবিত্রকীত্তি ও কল্যাঃ- রাশি ভোগ করিয়া পরকালে পতির সহিত এক পুণ্যলোক প্রাপ্ত হইয়া থাকেন। নারী উচ্চৈঃম্বরে কথা কহিবে না; কাহারও সহিত কঠোর এবং অধিক কথ! কহিবে না; স্বামীকে অপ্রিয় বাক্য বলিরবেনা; কাহারও সহিত বিঝাদ করিবে না; কাহারও সম্মুখে বিলাপ, শোক বা অনুতাপ করিবে না; বিলাপ বা শোক-অনুতাপাদ্দির কারণ উপস্থিত হইলে নিজের মন্, মনেই বিলাপাদি করিবে ! গৃহিণী অতি ব্যয়শীলা হইবে না, কৃপণাও হইকে না; ম্যাধ্য বায় করিবে । স্বামী কোন একটি ধশ্রকর্ম্ের ানুষ্ধানে উদ্যত হইলে তাহাতে বাধা দিবে না]; প্রমাদ, উম্মাদ, ক্রোধ, খলতা, হিংসা, পরদোষচর্জগু, রিন্বেষ, অহঙ্কার, র্ততা, নাস্তিকা, অতি সাহম এবং চৌর্যবৃত্তি পরিত্যাগ ( ২৪ ) করিবে; কাহাকেও বঞ্চন। করিবে না; "আমার স্বামী, আমার পুক্র, আমার পিতা, আমার ভ্রাতা অতিশয় রূপবান, গুণবান্‌ ও ধনবান্ এইবুপ বলিয়া কাহারও নিকটে গর্ব প্রকাশ করিবে না ।% অভিজ্ঞান-শকুন্তলে লিখিত আছে, “পতিকুলে পতির নিকটে দাস্যবৃত্তি করিয়া কষ্টে দিনফাপন করাও ভাল, কিন্তু পতি পরিত্যাগ করিয়া পিতৃকুলে, মাতুল-কুলে কিংবা অন্য আত্মীয়-কুলে সম্তাজ্জীস্বরূপা হইয়াও জীবনযাত্রা নির্বাহ করা পাপানুষ্ঠান বলিয়া গণ্য ” যে পিঠা উপযুক্ত পুভ্র বিদ্যমান থাকিতেও বৃদ্ধা- বস্থায় পুনরায় দার-পরিগ্রহ করেন এবং নিজের কন্যার শ্বগুরালযুঘটিত সামান্য বিবাদ উপলক্ষ করিয়া এ কন্যাকে স্বগৃহে পুষিয়া রাখেন এবং বলেন যে, “আমার যদি একমুষ্টি অন্ন জোটে, তাহা হইলে আমার মেয়েও খাইতে পাইবে,” এই বলিয়া বৃদ্ধাবস্থায় যুবতী স্ত্রীর সহিত স্বয়ং মহানন্দে জীবনের অবশিষ্ট কতিপয় দিন যাপন করেন, কিন্তু কন্যার পতিবিরহজনিত কষ্টের প্রতি লক্ষ্য করেন না, তাদৃশ পিতা মহাপাপী। কারণ, কন্যাকে একমুষ্টি অন্ন ও কিঞ্চিত অলঙ্কার দান চন কন্যার পতি-বিরহ- জনিত নরক-মন্ত্রণার অবসান হয় না। শৃগাল, কুন্ধুর ও বিডালও 'একমুস্তি অন্ন পাইয়! থাকে যে পিতা অভি- মানের ও 'জেদের ডালি” মাথায় লইয়! কন্যার দর্ববনাশ- (২৫ ) সংসাধন ,করিতে পারে, তাদৃশ, ব্যক্তির মুখদর্শন করাও পাপ। শত-সহত্র অন্নমুটি ও রাশীকৃত বন্ত্রালঙ্কার দান করিলেও কন্যার তাদৃশী যন্ত্রণার অবসান হইতে পারে না। ঈদৃশ পিতার সংসারে পড়িয়া এরূপ কন্যা যাবজ্জীবন কষ্ট পাইতে থাকে । কিস্ত্রী যদি এ কন্যা কুমারী-অবস্থায় পণ্তিভক্তি সম্বন্ধে স্শিক্ষা লাভ করিবর সৌভাগ্য প্রাপ্ত হইত এবং তাদূক্‌ স্ুশিক্ষা-লাভ-জনিত সদৃগুণরাশিতে ভূষিত হইত, হা হইলে এরূপ দুষ্টাভিসন্ধি পিতা বা পিতৃব্যের কুচক্রে পড়িয়া সে কদাপি ঘুণ্যমান হইত না এবং তাদুশ কষ্ট পাইত না। পতিভক্তিবিষয়িণী সুশিক্ষা লাভ করিলে এ কন্যা শ্বশুরালয়ের যে কোন প্রকার কষ্ট ভোগ করিয়াও পর্তিকে সন্তুষ্ট রাখিয়৷ পরমানন্দে পতিকুলে দিনযাপন করিতে পারিত। স্থৃতরাং স্থশিক্ষাই সকল স্থবখের মুল। ন্তুশিক্ষাই সর্বপ্রকার যন্ত্রণার অবসানের একমাত্র উপায়। অতি প্রাচীনকালে এই পুণ্যভূমি ভারতবর্ষের আধ্য-মহিলাগণ [কিরূপ স্তুশিক্ষ। লাভ করিটেতন, তাহা জানিতে হইলে ইতিহাস, পুরাণ, সংহিতা ও কাব্যনাটকাদি শান্্র বিশেষ মনোযোগের সাহত পাঠ করা উচিত। যীহারা শাস্তচর্চাবিহীন ও ছুসস্থারাচ্ছন্ন, তাহারাই বলিয়া থাকেন যে, "ভ্্রীজাতি বিদ্যাভ্যাস করিলেই বিধবা হইয়া যায় ৮ আবার, এই বর্তমান যুগেও এমন অনেক মুর্তি বিদুমান সাছেন, ধাহার! ( ২৬ ) বলিয়া থাকেন, স্ত্রীলোকের সধবাবস্থায় নাম স্থাক্ষর করিবার সময় শ্রীমতী অমুকী দেবী বা দাসী” এইরূপ লিখিতে হয় এবং বিধবাবস্থায় “শ্রীমত্য। অমুকীদেব্যা বা দাস্যা” এইরূপ নাম স্বাক্ষর করিতে হয়। তীহাদের মতে শ্রীমতী ও দেবী বা দাসী এরপ' স্বাক্ষর সধবাবস্থা-সূচক এবং শ্রীমত্যা ও দেব্য! বা দাস্যা এইরূপ স্বাক্ষর স্ীলোকের বৈধব্যাবস্থাসূচক। এইরূপ অদ্ভুত শাস্ত্রের উপযুক্ত টাকাকার আবার এই কথা বলেন যে, 'পূর্বেবান্ত স্বাক্ষরবিধি উল্লঙ্ঘন করিলে সধবা বিধবা হইয়া যায় এবং বিধবাও সধবা হইয়া পড়ে !! যে দেশে এরূপ স্বাধীন শাস্ত্রের রচনা ও তাহার অদ্ভুত টাক! প্রবর্তিত হইয়াছে, সে দেশের স্ত্রীশিক্ষায় যে ঘোর বিপ্লীব উপস্থিত হইয়াছে, তাহা বলাই বান্ল্য মাত্র । পণ্ডিতগণ হয় তো প্রতিবাদচ্ছলে বলিবেন, এ কিরূপ অদ্ভুত বিধি? শ্রীমতী ও দেবী ইহার অর্থ শ্রীমতী দেবী স্বয়ং । লিখিতেছেন বলিতেছেন ইত্যািবূপ ক্রিয়াপদ্দের কর্তুপদ। আর শ্রীমত্যা দেব্যাঃ, ইহার অর্থ শ্রীমতী দেবীর। ইহা সম্বন্ধবাচক পদ। ইহাতে সধব/-বিধবার কথ৷ আমিল কিরূপে ? এখানে সধবাবিধবার কথা “কোন প্রকারেই আদিতে পারে না। কারণ, কোন একটি স্ত্রীরলান্চ যদি একখানি পত্র লিখিয়া সর্ববশেষে শ্রীমতী স্ৃশীলা দেবী এইবপ নাম স্বাক্ষর করে, তাহা হইলে এই বুঝিতে হইকে চি. যে, ইহা কর্তুপদ | এই পত্রখানি লিখিতেছেন বা পুর্বব- লিখিত বিষয়গুলি নিবেদন করিতেছেন, এইরূপ ক্রিয়াপদ তথায় উহ্ভ। অর্থাৎ এইরূপ ক্রিয়াপদ তথায় বুঝিয়া লইতে হইবে । ৫ কারণ, পত্রে লিখিত বিষয়গুলির সহিত নিম্নলিখিত শ্রীমতী স্শী্লা দেবী, এই নামের একটা কিছু অর্থসম্বদ্ধ থাকা আবশ্বক। পরস্পর অসংবদ্ধ , পদ- প্রয়োগ শিউসম্মত নহে। পক্ষান্তরে, যদি পত্রশেষে নিম্নে রূপ একটি নাম লিখিত না হয়, কিন্তু পত্র লিখিতব্য বিষয় লিখিবার পুর্বে “সবিনয়-নমন্কার-নিবেদন+ এইরূপ প্রাচীন লিখন-পদ্ধতি অবলম্িত হয়, তাহা হইলে সর্বশেষে নিন্ধে শ্রীমত্য। স্থশুলাদেব্যাঃ, এইরূপ'নাম স্বাক্ষর করিতে হয়। কারণ, এ পত্রের সর্ববপ্রথমে যে “সবিনয় নমস্কার-নিবেদন” এই কথাটি লিখিত হইয়াছে, এই সবিনয়- নমস্কার-নিবেদিনটি কাহার ? এই প্রশ্নের উত্তর দিবার জন্যই সর্বশেষে লিখিতে হয়-_“শ্রীমত্যা স্বশীলাদে ব্যাঃ”, অর্থাৎ এরূপ নিবেদনটি শ্রীমতী সুশীল! দেবীর । স্তুশীলা একটি স্ত্রীলিঙগান্ত পদ? একটি স্ত্রীলোকের নাম। শ্রীমতী ও দেবী বা,দাসী এই ছুইটি পদ উহার বিশেষণ। আর ভ্রীমন্যাঃ ও দেব্যাঃ এই দুইটি সম্বন্ধবাচক ব্ঠ্যন্ত পদ। ইহার অর্থ শ্রীমতী সীল! দেবীর। একটির অর্থ স্তশীলা 'দেবী, অন্তটির অর্থ সথশীল! দেবীর । ইহাতে সধবা-বিধবার কথা যে কোথা হইতে আসিল, তাহা সূর্বববিধ বাক্যের (১৮) মধিষ্টাত্রী ৬সরস্বতী দেবতার সমগ্র ভাগারে অন্বেষণ করিলেও জানা অসম্তভব। প্রাচীন স্ুসভা শিক্ষার মকর ভারতভূমির যে ঘোর দুর্দশা উপস্থিত হইয়াছে, ঈদৃশ স্বাধীন শাস্ত্রচনানৈপুণ্যই তাহার দেদীপামান প্রমাণ। ' যাহারা স্ত্রীশিক্ষার বিরোধী, তাহারা তাহাদের সনাতন বেদের বিরোধী । তাহারা আর্া-সন্তান বলিয়া অভিমান করে, কিন্তু তাহার! জানে না যে, তাহাদের অমুল্যধন বেদের বছ্‌ মন্ত্র তাহাদের দেশের কতিপয় মহিলা কর্তৃক সংকলিত হইয়াছে । সামান্য লৌকিক শাস্ত্বরচনার কথা ত* দুরের কথা, ভারতে মহিলাজাতি বেদের মন্ত্র পর্যান্ত সংকলন করিয়া গিয়াছেন। তাহাদের সংকলিত মন্ত্র পাঠ করিয়া, উচ্চেঃক্বরে গান করিয়া কত শত শত পুরুষ মহধি কৃত- কৃতা ও ধন্য হইয়া গিয়াছেন। যে দেশে বেদ-উপনিষদের পঠন-পাঠন-প্রথা বিলুপ্ত হইয়াছে, যে দেশে কেবল ব্যাকরণ, নব্যস্বৃতি ও নব্য ম্যায়চ্চায় বৈদিক ক্রিয়াকলাপ ও বেদের জ্ঞানকাণ্ড পণ্ড হইয়াছে এন্বং প্রাচীন, দর্শন-শাস্্র- পাঠ বিলুপ্ত হইয়াছে ও পরমেশ্বরের ভক্তি-জ্ঞান-মার্গ পরিত্যক্ত হইয়াছে, দে দেশের লোক যে কুসংস্কারাচ্ছন্ন হইয়া পড়িবে, তাহা বলাই বাহুলামাত্র। পরিবর্তনশীল: কালের কুটিল চক্রে পড়িয়া লোক যে কিরূপে ঘূর্ণি হয়, তাছা বুঝাইবার জন্য কবিকুল্চুড়ামণি কালিদাস স্বীয় (৫৯ ) অভিজ্ঞ ন-শকুন্তল নামক নাটকে লিখিয়া গিয়াছেন যে, এই ভূমগুলে স্বদেশে কালপ্রভাবে অতি উন্নতির পথে সমারূট জাতিও অতল পাঁতালগর্ভে বিলীন হইয়া যায় এবং পক্ষান্তষ্র, অপকুমাংসভোজী, বন্ধলপরিধায়ী, ভীষণজন্ত্রপূর্ণ অরণ্য *ও গ্রিরিগহবরনিবাসী, প্রকৃতধর্্ম- জ্ভানবিহীন বর্বর, অসভ্য ও অনাধ্য জাতিও সমৃদ্ধির চরমনীমায় উপনীত হয় ও আপনাদিগকে আধ্য-জাতি- মধো পুরিগনিত করিয়া লয়। কালিদাস দেখাইয়াছেন যে, মানুষের কথা তো সামান্য কথ, সর্ব্বোপরিস্থিত চন্দ্র ও সূর্যাদেবতারও কালপ্রভাবে উত্থান-পতন : ঘটিয়া থাকে। যে চন্দ্রদেব শহ্যাদিপদার্থের রসসঞ্চার জীবন- রক্ষা ও পুষ্টিবদ্ধীন করেন এবং স্ুশীতল শুভ্রকিরণ দ্বারা জগতের অন্ধকাররাশি নাশ করিয়া জগতকে স্িগ্ধ, প্বীত ও আলোকিত ক্রেন, জগতের ঈদৃশ মহোপ্রকারী চন্দ্রদেবও রাত্রি শেষ হইলে অন্তমিত হইয়া যান। তিনি অস্তমিত হইলে পর সৃষ্যদ্দেব অত্যুচ্চ আকাশমার্গে উদিত হয়েন। হার প্রভাবে সমস্ত গ্রহ-নক্ষত্রাদি জ্যোতির্লোক পরি- চালিত হয়, ধাহার প্রথর কিরণে অন্ধকাররাশি ছিন্ন- বিদ্চিন্ন হইয়া যায়, “জগতের নানা উপকার সাধিত হয় ।এবুং যিনি সমুদ্র, নদনদী ও পুষ্করিণীর জল আকর্ষণ করিয়া আকাশমার্গে লইয়া! গেলে ধাহার সাহায্যে মোঘের স্থষ্ি হয় ও সেই মেঘ হইতে পুধিবীতে জলবর্ষণ হুইলে নানাবিধ ক শশ্য-কলমূলাদি উৎপন্ন হয় বলিয়া যিনি জগতের প্রাণি গণের প্রাণরক্ষা করিয়া মহোপকারসাধন করেন, ঈদৃশ মহাপ্রভাব মহোপকারী সূর্ধযদেবও সায়ংকাল উপস্থিত হইলে অস্তমিত হইয়া যান। এই চন্দ্র ও সূর্য্য দেবতার কালপ্রভাবে উত্থান-পতন দেখাইয়া ঈশ্বর আমাদিগকে প্রতিদিনই এই শ্িক্ষ দিতেছেন যে, ঈদৃশ চন্দ্র ও সূর্য্ের ন্যায় মনুষ্যজাতিরও কালপ্রভাবে উত্থান ও পতন ঘটিয়া থাকে « যে.ভারতের মর্ধামহিলাগণ একদা বেদের মন্ত্রসংকলন পর্য্যন্ত মহা- ব্যাপার সংসাধন করিয়াছিলেন, অধুনা! সেই ভারতের আধ্যনারী ঘোর অধাম্মিক, অজ্ঞ ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন হইয়া পড়িয়াছেন এবং সেই ভারতের অশিক্ষিত সেই বৈদিক নারীগণের আধুনিক সন্তানগণ নূতন শান্তর রচনা করিতে- ছেন আর বলিতেছেন যে, “স্ত্রীলোক লেখাপড়। শিখিলেই বিধবা হয় এবং বিধবা হইলেই 'শ্রীমত্যা স্ুশীলাদেব্যাত” এইরূপ স্বাক্ষর করিতে হয়” !! এইরূপ পরিবর্তন দেখিয়া বিজ্ঞ ব্যক্তির বিস্মিত হওয়া বৃথা। কারণ, যুগধন্ম- মাহাত্ম্যেই এইরূপ পরিবর্তন এই পৃথিবীভে বহুবার ঘটিয়াছে, ঘটিতেছে ও ঘটিবে। যে ভারতের ভ্ত্রীজাঁতি একদা বেদের মন্ত্র সংকলন করিয়াছিলেন, উপনিষদের গভীর, তাৎপর্য বুঝিয়া বিচারশক্তি দ্বারা মহধি যাল্ত্রবন্থ্যকেও স্তম্ভিত করিয়াছিলেন, জ্ঞানিকুল-শিরোমণি রাজফি (৪১৯ ) দনককেও বিম্মিত করিয়াছিলেন, বিদ্যাপ্রভাবে রাম ও লক্মমণেরও একদা অন্বেষণীয়া ইইয়াছিলেন এবং মহষি পাণিনি ও ভাষ্যকার পাতগ্জলির নিকট হইতেও ব্যাকরণ- পাণ্ডিত্য-সৃচকঞনানাবিধ উপাধি ও বিশেষণ লাভ করিয়া- ছিলেন, অধুনা সেই ম্হলাজাতির শিক্ষার ঘোর দুর্দশ! উপ্নশ্থিত হইয়াছে এবং অনেক অজ্ঞ-ব্যক্তি বিধবা হইবার ভয় দেখাইয়া! অনেক মহিলাকে শিক্ষালীভে বঞ্চিত করিতেছে; তনধিকন্ত নূতন নূতন অদ্ভুত শান্জবাক্য রচনা করিয়া সমাজের অনিষ্টসাধন করিতেছে । কিন্তু আর্ধ্যদিশ্ষের প্রাচীন ধর্ম্শান্ত্র হেমাস্রি গ্রন্থ % উচ্চৈঃম্বরে ঘোষণা কদ্দিয়ঃ ছেন যে, নারীজাতি সধবা বা বিধবা হইবার পূর্বেই কুমারী-অবস্থায় বিদ্যালাভ করিবে। তাহাদিগকে কিরূপ বিদ্যাশিক্ষা দেওয়া উচিত? এইরূপ প্রশ্নের উত্তর দ্রিবার জন্য শাস্ত্র বলিতেছেন, ধর্ম ও নীতি-বিদ্যা শিক্ষা দিবে। কুরুচিকর নাটক “নভেল” “টট্া” না শিখাইয়া ও অঙ্গার গল্প-পুস্তক ন৷ পড়াইয়৷ ভ্্রীধন্মাজীবন-সংগঠনের জন্য ধর্মশান্ত্র ও নীতিশ্ন্র শিক্ষা দিবে। সীতা, সাবিত্রী, সস সস কুমারীং শিক্ষয়েদ্বিদ্যাং ধশ্মনীতৌ নিবেশয়েৎ। দ্বয়ো: কল্যাণদা পোক্ত যা বিদ্যামধি গচ্ছতি ততে। বরায় বিছুষে দেয়া কন্যা মনীষিভিঃ | অজ্ঞাতপতিমর্্াদাং অজ্ঞাতপতিসেবনাম্‌।, নোদ্বাহয়েৎ পিতা কন্যামজ্ঞাতধশ্মসাধনম | ( ৭২) দমযুন্তী, লোপামুদ্রা, দাক্ষায়ণী, অরুদ্ধতী, মদালসা প্রভৃতি পৰিব্র-চরিপ্রা মহিলাকু্ীললামভূতা দেবীদিগের কথা যে সকল গ্রন্থে বর্ণিত আছে, সেই সকল গ্রন্থ অধ্যয়ন করাইবে। সেই সকল পুস্তক পড়িলে পিত্বা, মাতা, শ্বশুর, শ্বশ্রী, পতি ও অন্যান্য গুরুজনের* প্রতি কিরূপ ব্যবহার করিতে হইবে, তাহা উত্তমরূপে শিক্ষা করিয়া মহিল!গণ পিতৃকুলের ও শ্শুরকুলের আনন্দবদ্ধন করিতে সম্্থ হইবে। যে কুমারী বিদ্যালাভ করে, সেই কুমারীই উভয় কুলের কল্যাণদায়িনী হইতে পারে। শুদ্ধ কেবলমাত্র এধোপার খাতা” ও বিবাহের পর বিদেশস্থিত পতির নিকটে প্রেমপত্র লিখিবার জন্য কুমারীগণকে শিক্ষা দিতে শান্দ কখনও অনুমোদন করেন না। যখন ধন্ম ও নীতি- শানে কুমারী সুশিক্ষিতা 'হুইবে, তখন এক বিছ্বান্‌ বরের করে তাহাকে ,সমর্পণ করিবে । আচার, দর্বনয়, বিদ্যা, প্রতিষ্ঠা, তীর্থ-দর্শন, নিষ্ঠা, বৃত্তি, তপস্যা ও দান এই নববিধ কুল-লক্ষণবর্জিত অথচ কুলীন-পদবাচ্য বরকে পঞ্চ সহশ্র মুদ্রায় ক্রয় করিয়া তাহার হস্তে কন্যা সম্প্রদান করিয়া পিত। কন্যার পবিত্র জীবনের সর্ববর্নাশলংসাধন করিবে না, ইহাই হেমা গ্লোকগুলির ভাবার্থ। ইহা আধুনিক স্রীশিক্ষা-প্রবর্তক ““বক্তৃতাবাগীশ”দিগের “ কথা নুয়। হেমাদ্রি বলিতেছেন, ইহা অতি প্রাচীন, আর্ধ্য-মহধিদিগের প্রদর্শিত নিষ্ণ্ক প্রশস্ত পথ। এই পথের গৌরব ( ৩) পুজ্যপাদ, প্রাচীন মহধিগণ কর্তৃক উচ্চরবে বিঘোষিত হইয়াছে। যে কুমারী পির প্রতি কিরূপ ব্যবহার করিতে হইবে, তাহ! জানে না, কিরূপে পতির মধ্যাদারক্ষা করিতে হয়, তাহা শিখে নাই, পতিকে কিরূপে সেবা করিতে হয়, তাহা পড়ে "মাই, ভাদৃশী কন্যাকে তাহার পিতা কখ্নই বিবাহ দিবে না, ইহাই হেমাব্রির উপদেশ। সীতা যেরূপ রামের অনুবস্তিনী হইয়াছিলেন, তত্রপ পতির অনুবন্তিনী হইবে। সীতার শ্বশুর সূর্য্যবংশীয় সম্রাট দশরথ। তাহার পিতা মিথিলাধিপতি মহ্ারার্জ জনক। এই উত্তয় রাজকুলে নানাবিধ উত্তমোন্তম খাদ্য* বন্ধ, মহামুল্য অলঙ্কার, শত,শত দাসদাসী ও ছুগ্ধীফেননিভ শয্য-আাসনাদি মহাস্্থকর বস্তু সকল ত্যাগ করিয়া সীতা ভীষণ জন্তপূর্ণ, কণ্টকাকীণ, খাদাপেয়াদিবর্জিত, নিবিড় অরণ্যমধ্যে চতুর্দশ বদর যাবৎ পতির সুখে সৃখিনী, পতির দুঃখে দুঃখিনী হইবার জন্য পতির অনুমরণ করিয়াছিলেন। রাম যখন গভীর অরণ্যানীমধ্যে চলিতে চলিতে ক্রান্ত হইয়৷ পড়িতেন এবং ফ্ষোন বৃক্ষতলে আশ্রয় লইয়। যখন শান্তিস্থখ অনুভব করিতেন, তখন সাধবী সীতাদেবীও পতির সহিত অনুপম খীন্তি-সাগরে নিমগ্ন হইয়া পড়িতেন। ৰ্বামের বনগমনসময়ে তিনি রামের সহিত না গিয়া যদি তাহার পিতা মহার)জ জনকের আলয়ে, গমন করিতেন, তাহা হইলে তাহার কোন ক্লেশই হৃইত না । মহারাজ ( ৩৪.) জনক অতি যর ও সমাদরের সহিত নিজ কন্যাকে অবশ্য প্রতিপালন করিতেন। কিন্ত তিনি তথায় ন! গিয়া স্বামীর সহিত চতুর্দশ বশুসর পর্যান্ত বনবাসের জঙ্য স্বামীর অনুবপ্তিনী হইয়াছিলেন। এইরূপ প্রগাট পতিতক্তির কথা যে সকল পবিত্র গ্রন্থে বর্ণিত শাছে, সেই সকল গ্রন্থ না পড়াইয়া কোন পিতা নিজ কন্ঠার বিবাহ যেন না দেন, ইহাই হেমাদ্রি গ্রন্থের পরম হিতোপদেশ। আবার মহানির্ববাণ-তন্ত্রও বলিয়াছেন, কন্যার লালন-পালন করা ধেমন পিতার অবশ্য কর্তব্য কর্ম, তদ্রুপ অতিশয় যত্ব- গুর্বক কন্যাকে শিক্ষা দেওয়াও পিতার অতান্ত উচিত কার্ধ্য। কণ্যাকে ধন্ম ও নীতি-শান্ত্রে স্রশিক্ষিত করিয়া একটি বিদ্বান পাত্রের হস্তে তাহাকে সমর্গণ করিবে । পাত্রী যদি বিদুষী হয় আর পাত্রটি যদি বিদ্বান ন1 হয়, তাহা হইলে উভয়ের, পরম্পর মনের মিলন হয়'না, সংসারে শান্তিরসের অনুভব হয় না। সেই জন্য বিদষী পাত্রীকে বিদ্বান্‌ পাত্রের হস্তে সমর্পণ করিবার বিধি শাস্ত্রে উল্লিখিত হইয়াছে । (৩৫) ্রহ্মবাদিনী বিশ্ববার!। পূর্ববকালে ভারতের আধ্য-মহিলাগণ বেদের মন্ত্র পধ্যন্ত সংকলন করিবার অধিকার লাভ করিয়াছিলেন। তীস্থারা ষে যে মন্ত্গুলিঞ্গংকলন করিয়াছিলেন, সেই সেই মন্ত্র “তাহাদের মন্ত্র” এই বলিয়। খ্যাত হইয়াছে । খগৃবেদের পঞ্চম মণ্ডলের ২৮ সুক্তটি মুত্রিগোত্রজ' বিশ্ববারান্নাম্ী "ব্রহ্মবাদিনী আর্ধ্য-মহিলাকর্তৃক সংকলিত হইয়াছে । এই সুক্তে ছয়টি মন্ত্র আছে। তাহার প্রথম মন্ত্রের অর্থ এই যে, অগ্নি উত্তমরূপে প্রজ্ুলিত হইয়া প্রদীপ্ত শিখা-বিস্তার পূর্ববকপ্রখরভাব ধারণ 'করিয়াছে। উষাকালে প্রশস্ত শিখা-বিস্তার করিয়৷ অগ্নি সাত্তিশয় শোভাম্বিত হইয়াছে। এই সময়ে ব্রহ্মবাদিনী বিশ্ববারা হোম করিবার জন্য ঘৃতাধার পাত্র হস্তে লইয়া বৈদিক মন্ত্র গানে ইন্দ্রাদি দেবগণকে স্তব করিতে করিতে পূর্ববাভি মুখে ঈদৃশ প্রস্বলিত শোতমান অগ্নির নিকটে গমন করিতেছেন, দ্বিতীয় ,মন্ত্রের অর্থ এই যে, হে অগ্নে, উত্তমরূপে প্রজ্বলিত হইয়া অমৃতৈর উপরে আধিপত্য বিস্তার কর। ভূমি হোতার মঙ্গলের জন্য তাহার সমীপে বিদ্যমান থাক। তুমি যে'ঘজমানের 'নিকট উপস্থিত হও, মে ষঞ্জমান সমগ্র ধনলাতে সমর্থ হয়েন,. তোমার মত, প্রধান অতিথির প্রাপ্য ( ৬৬ ) দৃতাদি উত্তম দ্রব্য প্রদান করেন। তোমার ন্তায় উপকারা অতিথিকে দ্ৃতান্ুতি প্রদান করিয়া সন্তুষ্ট করেন। তৃহীয় মন্ত্রের অর্থ এই যে, হে অগ্নে, আমাদের , মৌভাগাসংবদ্ধনের জন্য আমাদের প্রতি প্রসন্ন হও, তোমার কৃপায় আমরা যেন ধনবান্‌ হই। তুমি আমাদের শক্রগণকে বিনাশ কর। তোমার তেজঃসম্পন্তি আ'রও উৎকৃষ্ট হউকৃ। তুমি এ জগতে পতি ও পত্বীর পৰিত্র দাম্পতা-প্রেমকে অতি প্রগাঢট করিয়া দাও । তোমার আশীর্ববাদে দাম্পত্য প্রেম বৃদ্ধির চরম সীমা লাভ করুক । পতি ও পত্ীর কদাপি যেন পরস্পর বিচ্ছেদ না হয়। ষষ্ঠ মন্ত্রে বিশ্ববারা সকলকে এই বলিয়া উপদেশ দিতেছেন যে, যজ্ঞে ঘৃতবাহক অগ্নিতে হোম কর। অগ্নির সেবায় রত থাক। দেবগণের নিকটে ঘ্ৃত বহন করিয়' লইয়া যাইবার জন্য অগ্নিকে বরণ কর। ত্রহ্মবাদিনী ঘোষা | খগ্বেদের দশম মণ্ডলের ৩৯ এবং ৪০ মুক্ত কাক্ষী- বানের কন্য! ঘোষানান্ধী ব্রহ্মবাদিনী আর্ধ্য-মহিলা৷ কর্তৃব সংকলিত হইয়াছে । ৪* সুক্তের নবম মন্ত্রের অর্থ এই যে, হে স্বর্গের বৈদ্য অশ্রিনীকুমারন্বয়, আপনাদের অনুগ্রহে ৩ ) ও .আশীর্ব্বাদে ঘোষা স্ত্রীজনোচিত গুণলমূহে ভূষিত হইয়াছে ও সৌভাগ্যবতী হইয়াছে । ঘোষাকে বিবাহ করিবার জন্য পাত্রীকামী বর ইহার নিকটে আগমন করুক, ইহাকে বিবাহ করিৰার জন্তু ইহাকে দেখিতে আস্বক। আপনারা ইহার ভাবী পতির হিতার্থে আকাশ হইত প্রচুর বারি বর্ষণ করিবেন। ইহার ভাবী পৃতির হিতার্থে প্রভূত পরিমাণে শম্য-সমুহ যেন উৎপন্ন হয়। ইহার ভারী পতির মঙ্গলের জন্য ভবতপ্রেরিত বারিধারা যেরূপ প্রচুর পরিমাণে আকাশ হইতে ক্ষেত্রে পতিত হইবে, তব্রপ ততপরিমাণে রাশি রাশি শম্যও যেন উত্গন্ন' হয়। কোন শক্র ইহার ভাবী পতির অনিষ্*করিতে ও হিংসা করিতে যেন কদাপি সমর্থ না হয়। যুব পতিকে লাভ করিয়া ঘোষার যৌবন যেন চিরকাল অঙ্ষুন থাকে । আপনাদের আশীর্ববাদে ঘোষা যেন চিরুযৌবনা থাকে। দশম মন্ত্রের অর্থ এই যে, হে অশ্বিনীকুমারদ্বয়, যে ব্যক্তি আপনার স্ত্রীর প্রাণরপ্ষার জন্য ব্যাকুল হইয়া পড়ে, এমন কি, রোদন পূর্যযন্ত করে, এবং তাহাকে যজ্ঞকার্ষ্যে নিযুক্ত করে ও পুত্রসন্তান উৎপাদন পূর্ব্বক পিতৃলোকের তৃপ্তির জনয স্াহাকে হজ্ঞানুষ্ঠানে নিযুক্ত করে, তাদৃশী স্ত্রী পতির আলিঙ্গনে সৌভীগ্যবতী ও সমৃদ্ধিশালিনী হইতে পারে। ত্রয়োদশ মন্ত্রের অর্থ এই যে, হে অশ্বিনীকরমারছয়, আমি আপনাদিগকে সদা স্তব করিয়। থাকি। অতএব 73 আপনারা আমার প্রতি সন্তষ্ট হইয়। আমার পতিতভবনে ধনবল ও লোকবল বদ্ধিত করিয়া দিবেন । আমি ষে ঘাটের জল পান করি, এ ঘাটের জল স্থুনির্মল করিয়া দিবেন। আমার পতিগৃহে যাইবার পথে যদি কোন দৃষ্টাশয় ব্যক্তি বিদ্ধ উপস্থিত করে, তাহা হইলে তাহাকে বিনাশ করিবেন । ৩৯ সৃক্তে চতুর্দশটি মন্ত্র আছে । - প্রথম মন্ত্রের অর্থ এই যে, হে অশ্বিনীকুমারদ্য়, আপনাদ্রিগের যে বিশ্বসঞ্চারী রথ আছে, "উত্তমরূপে সম্বোধন পুর্ন্নক যে রথকে আহ্বান করা যাচ্ছ্িক বাক্তির ' দৈনিক কর্তব্য কর্ম, আমরা সর্বদা সেই রথের নাম সঃকীর্তন করিয়া থাকি ।. মানব পিত-নামোচ্চারণে বাদূক আনন্দ লাভ করে, তদ্রুপ আপনাদের এ রথের নামে আমরা অত্যন্ত আনন্দ অনুভব করি। দ্বিতীয় মন্ত্রের অর্থ এই যে, হে অশ্রিনীকুমারদবয়, আমাদিগকে ম্বমধুর বাকা উচ্চারণ করিবার প্রবৃত্তি প্রদান করুন। আপনাদের অনুগ্রহে আমাদের সমস্ত শুভক্রিয়। নির্বিবিদ্বে সম্পাদিত হউক্‌। আমাদের হৃদয়ে নানাপ্রকার বুদ্ধি উদ্দিত হউক্‌, ইহাই আমাদের একান্তিক বাসনা । গামাদিগকে প্রশংসনীয় ধনভাগ “ প্রদীন করুন । « যজ্ঞ সোমরস যেরূপ আনন্দ-বদ্ধন করিয়া থাকে, তদ্রপ আপনকের কৃপায় আমর! যেন লোকের আনন্দ-বদ্ধক ও প্রীতিভাজন হইতে পারি । তৃতীয় মন্ত্ার্থ এই যে, একটি ( ৩৯ ) কন্ঠ। পিত্রালয়ে অবিবাহিতাবস্থায় থাকিয়৷ প্রায় বাক্যে উপনীত হইতেছিল। আপনারাই তাহার জন্য একটি, সৌভাগাকর বর মানিয়৷ দিয়াছিলেন। আপনার! অন্ধ, খঞ্ত, নিরাশ্রয়, ঞ্লগ্ন ও দরিদ্র ব্যক্তিদিগের আশ্রয়স্বরূপ | রোরুদ্যমান অন্ধ, খর্জ, রুশ ব্যক্তিগণের ম্থুনিপুণ চিকিৎসক বলিষা আপনাদিগকে সকলেই প্রশংসা! করিয়া থাকে |, চতুর্থ মন্ত্রের অর্থ এই যে, কোন একখানি,রথ যখন পুরাতন ও*জীর্ণ হইয়া পড়ে, তখন উহাকে পুনরায় উত্তম- রূপে নিম্্াণ করিলে উহা যেমন নুতনব প্রতীয়মান হয়, তদ্রপ আপনারাই জরাজীর্ণ চ্যবন খষিকে পুনরায় নব্য- যুব! পুরুষের ন্যায় স্থুন্দর স্থুগঠিত করিয়া দিয়াছিলেন।, তুগ্রের তনয়কে নির্বিবত্বে জলোপরি বহন করিয়া তীরদেশে পার করিয়া দিয়াছিলেন। ভবত-সম্পাদদিত এই সকল উত্তম কার্ধ্য যঙ্ঞানুষ্ঠানসময়ে বিশেষভাবে উল্ল্লখ-যোগ্য | পঞ্চম মন্ত্রের অর্থ এই যে, আপনাদের বীরত্বসুচক পুর্বেবাক্ত কাধ্য সকল আমি লোক-সমাজে বর্ণনা করিয়। থাকি। এত্ন্ধ্যতীত আপনাদের আর একটি প্রশংসার কথা এই যে,আপনাঁরা স্থৃনিপুণ চিকিৎসক, স্বর্গের বৈদ্য । আপনাদের আশ্রয়-লাভীর্থ আমি আপনাদিগকে আস্তরিক ভক্তির সহিত স্তবকরিতেছি। হে স্বর্গীয় বৈদ্য অশ্বিনী- কুমারছয় আমি আশা করি; আমার এই স্তকে যাজ্জিক বাক্তি অবশ্য আন্তরিক বিশ্বাসস্থাপন করিবে । 887.) ষ্ঠ মন্ত্রের অর্থ এই যে, হে অশ্থিনীকুমারদ্ধয়, আপনা- দিগকে আমি আহ্বান করিতেছি । আপনারা কৃপাপূর্ববক আমার আহ্বান কর্ণগোচর করুন। পিতা পুক্রকে যেরূপ শিক্ষাপ্রদ্ান করে, তদ্রপ আপনারা আমাকে স্ুশিক্ষা প্রদান করুন। আমার জ্ঞতি কিন্বা কুটুন্ব কেহই নাই। আত্ীয়-মিত্র-বান্ধবাদি কেহ নাই। আমি জ্ঞানবুদ্ধি- বিহীন । .অতএব আমার এই প্রার্থনা যে, আমার যেন কদাপি কোন ছুর্গতি না ঘটে। ছুর্গতি ঘটিবার পুবেন দুর্গতির কারণগুলি যেন সমূলে উত্পাটিত হয়। সপ্তম মন্ত্রের অর্থ এই যে, আপনারাই শুন্ধাব-নান্ী পুরুমিত্র-রাজার কন্যাকে রাখাপরি অরোহণ করাইয়া- ছিলেন এবং বিমদের সহিত তাহার বিবাহ দিয়া- ছিলেন। বধ্রিমতী প্রসব-বেদনায় কাতর হইয়! যখন আপনাদের সাহাধ্য-প্রার্থিনী হইয়াছিল এবং আপনা- দিগকে আহ্বান করিয়ছিল, তখন আপনারাই উহাকে সুখে প্রসব করাইয়াছিলেন। আপনারা স্থনিপুণ ন্ব্গীয় চিকিৎসক । অষ্টম মন্ত্রের অর্থ এই যে, কলি জরাজীর্ণ হইয়৷ যখন আপনাদিগকে স্তব করিয়াছিল, তখন আপনারাই উহাকে নবীন যুবাপুরুষ করিয়া দিয়াছিলেন। আপনারা বন্ধল- নামক ব্যক্তিকে কূপের ভিতর হইতে উদ্ধার করিয়া- ছিলেন। বিপ্ললা-নান্মী মহিলার চরণ ছিন্ন হইয়া! গেলে (১) আপনারাই লৌহময় কৃত্রিম চরণ সংযোজিত কারয়৷ তাহাকে চলন-শক্তিশালিনী করিয়া দিয়াছিলেন। নবম মন্ত্রের অর্থ এই যে, হে অভীফটপ্রদদ অশ্বিনী- কুমারদ্বয়, যখব শক্রগণ রেভকে মৃতপ্রায় করিয়া গুহামধ্যে নিক্ষেপ করিয়াছিল, তখন আপনারাই উহাকে এই বিপত্তি হইতে উদ্ধার করিয়াছিলেন। আপনারাই তখন উহাকে রক্ষা করিয়াছিলেন। সপ্তবন্ধনে বন্ধ অত্রিমুনি ঘখন জবলদগ্রিকুণ্ডের“মুধ্যে নিক্ষিপ্ত হইয়াছিলেন, তখন আপনারাই সেই যক্্কুণ্ডের অগ্নিকে নির্ববাপিত করিয়াছিলেন । আপনাদেরই অসীম প্রভাবে এঁ অগ্নিকুণ্ড ঝটিতি স্থর্গীতল পাত্রে পরিণত হইয়াছিল। দশম মন্ত্রের অর্থ এই যে, হে অশ্বিনীকুমারদ্ধয়, আপনাদের নিকট হইতেই পেছু-নামক রাজা নবনবতি ঘোটকের সহিত একটি উত্তম স্থদৃশ্য *শুভ্রবর্ণ ঘোটক লাভ করিয়াছিলেন। এ ঘোটকটিকে দেখিবামাপ্রই শক্রগণ পলায়ন করে। এ ঘোটকটি মানবের অমূল্য রত্ব- স্বরূপ। উহার নাম* করিলেই হৃদয়ে অপূর্বব আনন্দের সঞ্চার হয়। একাদশ মন্ত্রের অর্থ এই যে) আপনাদের নামোচ্চারণ- মাত্রেই অতিশয় আনন্দ হয়। আপনারা যখন যে পথে গমন করেন, তখন চতুন্দিক হইতেই সকলে আপনাদিগকে বন্দনা করে। যদি সন্ত্রীক কোন, ব্যক্তিকে আপনারা ॥ (৪২ নিঙ্ত রথোপরি উপবেশন করাইয়া আশ্রয়দানে স্থখী করেন, তাহা হইলে এ সন্ত্রীক ব্যক্তির কোন বিপত্তি বা দুর্গতি ঘটে না। দ্বাদশ মন্ত্রের অর্থ এই যে, হে অশ্বরিনীকুমারদ্বয়, ঝভু-নামক দেবগণ দ্বারা আপনাদের যে রথ নির্মিত হইয়াছিল, যে রথ আকাশমার্গে উত্থিত হইলে আকাশ- কন্যা উষাদেবীর আবির্ভাব হয় এবং সূর্ধ্যদের হইতে দ্রিন ও রজনী উৎপন্ন হয়, মন্‌ "হইতেও অতি বেগশালী সেই রথে আরোহণ করিয়া আপনারা আগমন 'করুন। ত্রয়োদশ মন্ত্রার্থ এই যে, হে অশ্বিনীকুমারদ্বয়, আপনারা উল্ত রথোপরি আরোহণ করিয়া পর্ববতাতিমুখে গমন করুন। শযু-নামক ব্যক্তির বৃদ্ধ! ধেনুকে পুনরায় ছুপ্ধবতী করিয়া দ্রিন। রুকের করাল বদনের মধ্যে ধর্তিকা পতিত হইয়াছিল, আপনারাই উহার মুখের ভিতর হইতে এ ব্তিকা উদ্ধত করিয়াছিলেন । চতুর্দশ মন্ত্রের অর্থ এই যে, ভ্ৃগুসন্তানগণ যজ্জপ রথ নিশ্মাণ করে, তজ্রপ আমিও আপনাদের জন্য এই স্তুতি মন্ত্রগুলি রচনা করিলাম । কন্যা-সম্প্রদান-কালে পিতা যেমন কন্যাকে উত্তম বসনভূষণে সমলঙ্কৃত করে, তব্রপ আমিও আপনাদের এই স্ততি-মন্ত্রগুলিকে আপনাদিগের প্রশংসা দ্বারা অলঙ্কৃত করিলাম । আপনাদের আশীর্ববাদে ( ৪৩ ) আমার পুক্রপৌত্র প্রপৌত্রাদি যেন স্থপ্রতিষ্টিত হইয়া! দিন- যাপন করে। ৪৭ সুক্তের অফটম মন্ত্রের অর্থ এই যে, হে অশ্বিনী- কুমারদ্বয়, কৃশ* ও শৈষুব-নামক দুইটি লোককে এবং একটি অসহায়া বিধবা গ্লারীকে আপনারাই রক্ষা করিয়া- ছিঙিলন। যজমানদিগের আনন্দ-বদ্ধনার্থ আপনারাই মেঘ- পটল বিদীর্ণ করেন এবং সেই বিদীর্ণ জলদুরাশি শব্দ করিতে করিতেযেন সপ্তমুখ ব্যাদান করিয়া জলধারা বর্ষণ করে। ৪০ সুক্তের দ্বাদশ মন্ত্রের অর্থ এই যে, হে অন্নধন* শালিন্‌ অশ্বিনীকুমারদ্বয়। আপনারা আমার প্রপ্তি কৃপাবিন্দু বর্ণ করুন। আমার মনের অভিলাষ পুর্ণ করুন। আমার মঙ্গল করুন। আমার রক্ষক হউন। আমি যেন পতিগুহে গমন করিয়া পির প্রিয়পাত্রী হই, ইহাই আমার একান্তিক প্রার্থনা । ব্রহ্মবাদিনী তৃর্য্যা। ধরগ্বেদের দশর্ম মণ্ডলের ৮৫ সুক্তটি সূষধ্যানান্দী 'রঙ্ষবার্দিনী আর্ধ্য-মহিল। কর্তৃক সংকলিত হইয়াছে । ৮৫ সুক্তের ষ্ঠ মন্ত্রের অর্থ এই ধে, সূরধ্যার বিবাহ-দময়ে রৈভী- না্দী ধক্-( মন্ত্র) গুলি সূর্ধ্যার সহচরী হইয়াছিল। ( 8৪ ) নরাশংসী-নান্না খক্-(মন্ত্রগুলি তাহার দাসী হৃইয়াছিল। তীহার মনোহর বসনখানি যেন সামবেদের গান দ্বারা পবিত্রীকৃত হইয়াছিল । এই মন্ত্রের তাঁৎপর্য্যার্থ এই যে, বিবাহ-সময়ে পাত্রীর সমবয়স্কা কয়েকটি সঙ্গিনী পাত্রীর চিত্ত-বিনোদনার্থ পাত্রীর সহচরী ছইয়া থাকে। পতিগৃহে যাইবার সময় পাত্রীর সঙ্গে একটি দাসী যায়। বিৰাহ- সময়ে পাত্রী পবিত্র উজ্জ্বল পট্টবন্ত্র পরিধান করে। সূর্য্যার বিবাহ-সময়ে এই সকলের তত প্রয়োজন হয় নাই। কারণ, তিনি রৈভী খক্-মেন্ত্) গুলিকে সম্পূর্ণরূপে আয়ন্ত “করিয়াছিলেন । তিনি উত্তমরূপে স্থমধুর উচ্ৈঃম্বরে রৈতী- নামক মন্ত্রগুলি গান করিতে পারিতেন, উহাতে তিনি অসাধারণ পাপ্ডিত্য লাভ করিয়াছিলেন। এ মন্ত্রগুলিই তাহার চিত্ত-বিনোদনের জন্য সহচরী বা সঙ্গিনীর কার্য্য করিত বলিয়া অন্য মানবী সহচরীর প্রয়োজন হয় নাই। নবোট! বালিকা যখন পতিগৃহে যায়, তখন তথায় পতি ছাড়। সকলেই তাহার অপরিচিত। পতির সহিত পরিচয়ও সবেমাত্র একদিন পূর্বেই হইয়াছে! অতএব অপরিচিত গুহে তাহাকে উৎসাহিত ও মামোদিত করিবার জন্য তাহার পিত্রালয়ের একটি যত্ব-স্সেহকারিণী দাসী তাহার জুহিত তাহার পতিগৃছে গমন করে। সূর্য্যার সহিত ঈদৃশী দাসী প্রেরণ করিবার কোন প্রয়োজনই হয় নাই।' কারণ, সূর্য্য নরাশংসী-নাম্ী খক্-(মন্ত্র) গুলিকে সম্পূর্ণরূপে (৪৫ ) আয়ত্ত করিয়াছিলেন | তাহারাই তাহার অপরিচিত স্থানে ত্রাহাকে উতুসাহিন্, আমোদিত ও শনশ্চিন্ত করিয়া রাখিতে সমর্থ ছিল। তিনি আধুনিক সাধারণ নবোঢ়। বালিকার স্যায় অশিক্ষিতা* ছিলেন না, সুতরাং পতিগুহে পিতামাতা, ভ্রাতা ও ভগিনী প্রন্ভৃতির বিরহজনিত দুঃখ তাহার হৃদয়কে স্পর্শ করিতে পারে নাই। তাহার স্থশিক্ষাগুণে পতিগৃহস্থ সমস্ত অপরিচিত লোক পূরবব-পরিচিতের ন্যায় প্রতীয়মান হইয়াছিল। বিবাহকালে পাত্রী উত্তম উজ্জ্বল পবিত্র পট্রবস্্ পরিধান করিয়া থাকে। সূর্য্যার পবিভ্র বন্ত্রখানি সূ্যার পবিত্র স্তবমধুর সাম-গানে যেন পবিক্রতর হইয়াছিল। তিনি সামবেদে অসাধারণ পািত্য লাভ করিয়াছিলেন । দেই পবিভ্রতম মনোরঞীন সাম-গানে তাহার পবিত্র বস্ত্রথানি যেন রঞ্রিত হইয়া উজ্জ্বলভাৰ ধারণ করিয়াছিল।' তিনি সামান্য একখানি বস্ত্র পরিধান করিলেও মনোরঞ্জন পবিভ্রতম সামবেদে তাহার অগাধ উজ্জ্বল জ্ঞান, তাঁহার বর্ণরঞ্জিত উজ্জ্বল পবিত্র পট্টবস্ত্রের অভাব পুর্ণ করিয়াছিল । সপ্তম মন্ত্রের" অর্থ এই যে, পতিগুহে আগমন-সময়ে সূরধম্নর গঠিত ধন্জীবনই বিবাহের পর জামাতৃগৃহে প্রেরণীয় দ্রব্য-সন্তারম্বরূপ হইয়! তাহার সহিত চলিল। তাহার প্রশস্ত আকর্ণ-িস্তৃত নয়নযুগুলই তৈল- হরিদ্রাদি অভ্যঞ্জন সেহ-দ্রব্ন্বরূপ হইয়া যেন তাহার (৪৬ ) সহিত চলিল। স্বর্গ ও পৃথিবী তীহার কোষ-পেটিকা- ( ক্যাশ্বাক্স ) স্বরূপ হইয়া যেন তাহার সহিত চলিল। এই মন্ত্রের ভাবার্থ এই যে, বিবাহের পর নবোঢ। বালিকা যখন শ্বশুরালয়ে গমন করে, তখন তাহাকে বসন ও ক্রীড়া- দব্যাদি-পূর্ণ একটি পেটিকা (প্যারা বা তোরঙ্গ) এবং ধন ও অলঙ্কারাদি-পুর্ণ একটি কোষ-পেটিক! (ক্যাশ্বাঝস,) প্রদান করিতে হয়। বহু সহস্র বর্ধ পুর্বে ভারতবর্ষে বৈদিকযুগে হিন্দুসমাজে এইরূপ রীতি প্রচলিত ডিল এবং অদ্যাপিও প্রচলিত আছে। কেহ বা একটি পেটিকাতেই সমস্ত প্রদেয় দ্রব্য দিয়া থাকে, কেহ বা পুবেবাক্তরূপ* ছুইটি পেটিকা ( বস্থাদি দ্রব্যের পেটিকা ও কোষ-পেটিকা বা “ক্যাশ্বাঝস” ) প্রদান করে। কিন্তু সুধ্যার বিবাহের পর পতিগুঁহে যাইবার সময় তাহার সহিত এইরূপ ধন-পেটিক! প্রেরণের তাদৃক প্রয়োজন হয় নাই। কারণ, তিনি ঈদৃশী সুচরিত্রা, স্থৃশিক্ষিতা ও গুণবতী ছিলেন যে, তাহার চরিত্র শিক্ষা ও সদগুণরাশির স্ুনির্্ীল যশোরূপ ধন, স্বর্গে ও মর্তে সর্বত্রই পরিব্যাপ্ত হইয়া পড়িয়াছিল। স্ৃতরাং স্বর্গ ও মত্ত্যলোক; তাহার কোষা- গারস্বরূপ হইয়াছিল। বিবাহের সময়*পাত্রের গৃহে ত্ৈল- হরিদ্রাদি অভ্যঞ্রন-দ্রব্য £প্ররণ করিতে হয়। কিন্তু সুধ্যার বিবাহের সময় এরূপ বস্ত্র সকল প্রেরণ করিবার তাদৃশ প্রয়োজন হয় নাই। কারণ, তীহার সনি, (৪৭ ) মনোরমণস্থদীর্ঘ, স্থ প্রশস্ত নয়নযুগল হইতে যেন স্বাভাবিক সেহধার! নিঃস্তন্দিত হইতেছিল। তাহার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সকল স্বাভাবিক স্স্সিগ্ধ, সুন্দর ও সমুজ্ত্বল ছিল ।* স্থৃতয়াং তৈলাদি স্নেহ-পদার্থে ও হরিদ্রাদি অভ্যপ্রন-দ্রব্যে তাহার অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কৃত্রিম সিগ্ধতা ও বর্ণর উজ্জ্বলতা সংবদ্ধন করিবার জন্য এই সকল,দ্রব্য প্রেরণ করিবার তাদূক্‌ প্রয়োজন হয় নাই। দশম মন্ত্রে অর্থ এই* যে, ধিবাহের পর পতিগৃহে গমনকালে তাহার ্তপ্রশস্ত, সরল, উদার, নিষ্পাপ মনই তাহার যানম্বরূপ ( গাড়ী, পাক্ধী, ডুলি বা চতুর্দোলা 1) হইয়াছিল। উপরিসথ আকাশই এই যানের উদ্ধাচ্ছাদন-স্বরূপ হইয়াছিল । এইরূপে তিনি বিবাহের পর, পতিগুহে গমন করিয়া- ছিলেন। ত্রয়োবিংশতি মন্ত্রের অর্থ এই যে, আমাদের বন্ধুগণ বিবাহার্থ পাত্র। অন্বেষণ করিবার জন্য যে সকল পথে গমন করে, সেই সকল পথ যেন নিষ্ষণ্টক ও নিরুপদ্রব হয়। হে ইন্দ্রাদি দেবতাগণ, পতি ও পত্বী যেন দৃঢ়রূপে একটি প্রেমসত্রে গ্রথিত হয়। পঞ্চবিঃশতি মন্ত্রের অর্থ এই যে, এই কন্যারূপ পবিত্র পু্পটিকে পিতৃকুলরীপ বক্ষ হইতে উত্তোলিত করিয়া পির হস্তে গ্রথিত' করিয়। দিলাম। হে ইন্দ্রদেব, এই কন্যাটি'যেন পতিগৃহে গিয়া সৌভাগাবত্টু ও সমুদ্ধিশালিনী হয়, ইহাই আন্তরিক প্রার্থনা । বড় ধিংশ.মন্ত্রের অর্থ এই (৪৮ ) যে, পুষ! (দেবত1) তোমার হস্ত ধারণ করিয়া পিতৃগৃহ হইতে পতিগৃহে নির্বিন্ষে লইয়া যাউন। স্বর্গবৈদ্য অশ্বিনীকুমারছয় তোমাকে রথে আরোহণ করাইয়া পিতৃ- গুহ হইতে পতিগুহে লইয়া যাউন। তুধি পতিগৃহে গমন করিয়া প্রশংসনীয় গৃহকত্রী হও ।ৎতুমি পতিগুহে সকলের প্রভু হইয়া শান্তম্বভাব, ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তার সহিত সকলের উপরে প্রতৃত্ব করিও । উনত্রিংশ মন্ত্রের অর্থ এই বে, হে সৌভাগ্যবতি নারি, তুমি মলিন বন্্র পরিত্যাগ করিও! কদাপি মলিন বস্ত্র পরিধান করিও না। মলিন বস্ত্র পরিধান কর! দারিপ্র্যের লক্ষণ। পরমেশ্বরকে যাহার' স্নবদ| উপাসন। করে, পুজ। করে, স্ব করে, তাহাদিগকে যথাসাধ্য ধন দান করিও। হে হিতৈধিগণ, তোমর; সকলে দেখ, পত্ী পতির সহিত অভিন্নরূপা হইয়! কেমন শ্বশুরালয়ে যাইতেছে। দ্বাত্রিংশৎ মন্ত্রের অর্থ এইযে, যাহার! অনিষ্টাচরণের জগ্ট এই দম্পতীর নিকটে আসিবে, তাহারা বিনষ্ট হউকৃ। এই দম্পতী যেন সদুপায় দ্বারা বিপত্তি'জালকে ছিন্ন-ভিন্ন করিতে পারে। এই দম্পতীকে দেখিবামাত্র শক্রগণ যেন দূরে পলায়ন করে। ্রয়ন্ত্রিশৎ মন্ত্রের অর্থ এই খে এই নবপরিণীত। বধূ অতি স্লক্ষণ-সম্পন্না। তোমরা সকলে মিলিয়া আইস। এই বধূকে দেখ। এই বধূ সৌ্তীগ্যবতী হউন্‌। সমুদ্ধিশালিনী হউন্। পতির প্রিয়পাত্রী (৪৯) হউন্‌। "এইরূপ আশীর্বাদ করিয়া তোমরা স্ব স্ব গুহে গমন কর। 4 যট্ত্রিংশৎ মন্ত্রের অর্থ এই যে, হে বধু; তুমি সৌভাগ্য- বতী হইবে বলিয়া আমি তোমার হস্ত ধারণ করিয়াছি। আমাকে পতিরূপে গ্রহণ করিয়া তুমি বৃদ্ধাবস্থায় উপনীত হও। আমার সহিত গৃহস্থা শ্রমের ধর্ম আঁচরণ করিবার জন্য দেবতারা তোমাকে আমার হস্তে সমর্পণ করিয়াছেন। দ্বিচত্বারিংশ মন্ত্রের অর্থ এই যে, হে দম্পতি, তোসর] দুই জন সদা একস্থানেই বাস করিও, কদাগি পরস্পর পৃথকৃভাবে বাস করিও না।" ছুই জনে মিলিয়া নানাবিধ সুখাদা বস্তু ভোজন করিও । নিজগৃহে বাস [স করিয়া পুক্র- পৌত্রাদির সহিত আমোদ-আহলাদে ক্রীড়া ক্রয় দিন বাপন করিও । ত্রিচত্বারিংশৎ মন্ত্রের অর্থ এই যে, প্রজাপতির অনুগ্রহে ও আশীর্ববাদে আমাদের উত্তম পুরপৌত্রাদি উৎপন্ন হুউক্‌। অর্ধ ( দেবতা ) আমাদিগকে ্ধাবস্থা পর্যন্ত একত্র সম্মিলিত করিয়া রাখুন । হে বধু, তুমি কল্যাণভাগিনী হইয়া! পতিগৃহে চিরকাল অবস্থিতি করিও । এক মুহূর্তের জন্য পতিগৃহ পরিত্যাগ কিয় স্থানাস্তরে যাইও না ও থাকিও না। দাসদাসী ও গে! [ঘোটকাদি গৃহপাল্য পশুদিগের প্রতি সদয় ব্যবহার কারও “তাহা, (৫০ ) দিগকে পুক্রনিরিবশেষে যত করিও, প্রতিপালন করিও এবং তাহাদিগের কল্যাণসাধন করিও । চতুশ্চত্বারিংশৎ মন্ত্রের অর্থ এই যে, হে বধু, তোমার নেত্রদ্ধয় ষেন নির্দোষ হয়। ভূমি পতির কল্যাণকারিণী হই৪। বিশ্বাসপাত্রী হইও। তোমার মন যেন সদা প্রফুল্ল থাকে! তোমার শরীর যেন লাবণ্যপুণণ হয় ও উজ্জ্বল বর্ণ ধারণ করে। তুমি বীরপ্রসবিনী হইও। পরমেশ্বরে তোমার যেন অচল! ভক্তি ও বিশ্বাস থাকে। গৃহের দাসদাসী ও পশুদিগের প্রতি সদা সদয় ব্যবহার করিও এব" তাহাদের কল্যাণ কামনা! করিও । পঞ্চচত্বারিংশত মন্ত্রের অর্থ এই যে, হে জলবধিন্‌ ইন্্রদেব, আপনর কৃপায় ও আশীর্ববাদে এই বধূর যেন উৎকৃষ্ট পুক্র জন্মে এবং সৌভাগ্য-সম্দ্ধি বন্ধিত হয়। ইহার গর্ভে যেন দশটি পুক্র জন্মে এবং ইহার পতিকে লইয়া এই বধ “ঘন একাদশব্যক্তিমতী হয়। ষট্চস্বারিংশগ মন্ত্রের অর্থ এই যে, হে বধু, তুমি তোমার শ্বশুরালয়ের সম্রাজ্ঞী ইইও। তুমি তোমার শ্বশুর মহাশয়ের প্রতি, শব্ধ ঠাকুরানীর প্রতি, ননদদিগের প্রতি এবং দেবরদিগের প্রতি লমরাজন্বরূপা হইও। অর্থাৎ কোন একটি সম্রা্জী যেমন কোটি কোটি প্রজার কল্যাণ করেন, মাতার ন্যায় তাহাদিগকে প্রতিপালন করেন, সুবিচার, স্থুবীতি, স্থব্যবস্থা ও হৃশামনগুণে প্রঙ্জা- (৫১ ) গণকে মন্ত্রমুগ্ধবৎ স্ববশে রাখিয়া থাকেন, নানা বিপদ্‌ হইতে ক্ষা করেন এবং তাহার রাজ্যমধ্যে সদ সর্ববত্র শ্ুখশাস্তি বদ্ধন করেন, তদ্রুপ তুমিও পতিকুলে গৃহকত্রী হইয়া সকল বিষয়ে ব্যবস্থা করিও | সকলের প্রতি স্ববিচার করিও । সকলের রক্ষণাবেক্ষণে মনোযোগিনী হইও। সকলের প্রতি সদয় উত্তম ব্যবহার করিও। সকলকে আধি-ব্যাধি প্রভৃতি বিপদ হইতে উদ্ধার করিও। নিজগ্জণে সকলকে বশীভূত করিয়া বাখিও এবং গৃহরূপ তোমার একটি ক্ষুদ্র রাজ্যে যাহাতে সর্বদা সুখ ও শান্তি বিরাজ করিতে পারে, তদ্বিষয়ে সর্বদা নত্নবতী হইও, অবহেলা করিও না ৃ “তুমি শ্বশ্বর শাশুড়ী প্রভৃতির উপর সম্রান্তীস্বরূপ। হইও)” খগৃবেদের এই কথার এইরূপ অর্থ যেন কেহ না বুঝেন যে, স্আাজন্তী যেমন সিংহাসনে বসিয়া থাকেন ও রাজোর প্রধান প্রধান মাননীয় প্রজারা যেমন তীহার সম্মুখে আসিয়া মস্তক অবনত করিয়া তিনবার প্রণাম করেন এবং তিনিও যেমন আদেশবাণী প্রচার করেন ও তাহার৷ যেমন উহ] শিরোধার্য্য করেন, তজ্ধপ বধু সর্ববদ] “ইিজি চেয়ারে” বলিয়া থাকিবেন এবং তীহার শ্বশুর শাশুড়ী প্রভৃতি তাহার সম্মুখে দাড়াইয়া অবনত-মস্তকে তাহাকে তিনবার প্রণাম করিবে ও তাহার আদেশ শিরোধার্ধা করিবে, এইরূপ অর্থ কেহ যেন না বুঝেন। সপ্তচত্বারিংশৎ মন্ত্রের অর্থ এই"ঘে, ইন্দ্রাদিদেবগণ, (৫১ ) আমাদের (পতি ও পত্বীর ) হৃদয় ও মনকে এক করিয়া দিন।. বায়ু, ধাতা ও বাগ্দেবী আমাদিগকে উত্তমরূপে একত্র সম্মিলিত করিয়া রাখুন, ইহাই আমাদিগের আন্তরিক প্রার্থনা । খগ্েদের দশম মগুলের ৯৫ সুক্তটি পুরূরবা-নামক পতি ও উর্ববশী-নান্নী পত্ী কর্তক ংকলিত। এই সৃক্তে ১৮টি মন্ত্র মাছে । এ মন্তরগুলি স্বামী ও স্ত্রীর পরস্পর উক্তি-প্রত্যুক্তিতে পরিপূর্ণ । গ্রন্থের কলেবর বিস্তৃত হইয়। পড়ে বলিয়৷ এগুলির অর্থ লিখিত হইল না। খগেেদের দশম মণ্ডলের ১০২ সুক্তের দ্বিতীয় মন্ত্রে দেখিতে পাওয়া বায় যে, মুদগল খধির পত্তী ইন্দ্রসেনা রথে মারোহণ করিয়া যুদ্ধ করিয়াছিলেন, সহজ শক্র- জয়িনী হইয়াছিলেন এবং বিপক্ষীয় সৈন্যদিগের হস্ত হইতে ধেন্ু মকলকে উদ্ধার করিয়াছিলেন । তাহার দোদদ ু- প্রতাপে ও অসাধারণ বীরত্বের প্রভাবে তৎকালে বৈদিক যুগে ভারতের গোধন শক্র-হস্তগত হইতে পারে নাই । গোধন যে কি অমূল্য বস্ত, তাহ! বৈদিক যুগের আধ্য- মহিলারাই বিশেষরূপে জানিতেনণ তাহার! স্ত্রীলোক হইয়াও ভারতের গোধন-রক্ষার জন্য রথে চড়িয়া যুদ্ধ পধ্যন্ত মহাকাণ্ড করিতে পারিতেন। তীহারা উত্তমোন্তম দুগ্ধ, ক্ষীর, নবনীত ও দ্বতের অভাব কখনই অনুভব করিতেন ন!। এই সকল উতকৃষ্টতম বস্তু ভক্ষণ করিয়া তাহারা উত্তম স্বাস্থ ভোগ করিত্ঞ্টে এবং উত্তমরূপে ( ৫৩) সান্তিকী বুদ্ধিবৃত্তি পরিচালনা করিতে পারিতেন। অধুনা এঁ সকল বস্তুর নিকৃষ্টতা, অভাব ও মহার্ঘ্য বশতঃ নরনারী- গণ উত্তম স্বাস্থ্য লাভ করিতে পারেন না এবং তাহাদের মধ্যে অনেকের বুদ্ধিবৃত্তিও সান্ডিক পথে পরিচালিত হয় না। | /ত ভু ঝগ্থেদের দশম মগুলের ১০৯ সূক্তটি বৃহস্পতির ভার্ষা জু কর্তৃক সংকলিত হইয়াছে । এই সুক্তে ৭টি গন্ধ আছে। শশা শীল ইন্দ্রাণী । খণ্েদের দশম মগুলের ১৪৫ সুক্তটি ইন্দ্রাণী-নান্দী আর্ধা-মহিলা কর্তৃক সংকলিত। এই সুক্তে ৬টি মনত আছে। জগতে সপতুম পীড়াদায়িকা হইয়া থাকে বলিয়া কাহারও যেন ঝঁদাপি সপত্ী না হয়, এইরূপ জদিচছা- প্রপ্টেদিত হইয়া তিনি এই মন্ত্রগুলি সংকলন করিয়া- ছিলেন। অতি প্রাচীন স্থুসভ্যতার আকর ভারতভূমিতে শান্তিপূর্ণ গৃহস্থাশ্রমে সপতীর আবির্ভাব বৈদিিযুগে মহা অমঙ্গলজনক বলিয়া বিবেচিত হইত,। এক স্ত্রী জীবিত (৫৪) থাকিতে দারান্তর পরিগ্রহ করা ততকালে স্ত্যসমাজের রঁতিবিকুদ্ধ কাধ্য বলিয়া গণ্য হইত এবং ভতি দ্বৃণিত কারা বলিয়া বিবেচিত হইত । এই জন্য বৈদিক মন্ত্রে সপত্ীর উচ্ছেদকামনা দৃষ্ট হইয়া থাকে'। অন্যাপি অন্য সমাক্ত অপেক্ষা বঙ্গের বৈদিক সমাজে এই বছু-বিবাহরূপ কুরীতি প্রচলিত নাই। অন্যাপি বৈদিক-শ্রেণীস্থ ঢোক সকল বনু সহজ বধ পূর্বের তাহাদের বৈদিকধুগ-প্রচলিত সদাচার রক্ষা করিতেছেন। কলির .প্রভাববৃদ্ধি ও ধর্ম “হানির সন্ষে সঙ্গে ভারতে কোন কোন সমাজে এই কুপ্রথা প্রচলিত হইয়াছে । এমন কি, এক রাটীয় কুলীন ব্রা্গণের * ১০৮টি পর্য্যন্ত বিবাহ শ্রুতিগোচর হইয়াছে । ইহা মনে করিলেও গাত্র শিহরিয়া উঠে !! ঘ্বণার উদ্রেক হয়। কৌলীন্য শব্দের অর্থ দুর্ব্বোধ্য হইয়া উঠে । সপ পশপিপিপিশি শচী। ধথেদের দশম মণ্ডলের ১৫৯ সূক্তটি শচী-নান্মী ব্রহ্ম .বাদিনী আধ্য-মহিলা কর্তৃক সংকলিত হইয়াছে । এই সুক্তে ৬টি মন্ত্র আছে। কাহারও যেন সপতী না হয়, ইহাই বুঝাইবার জন্য এ মন্ত্রগুলি সংকলিত হইয়াছে । (৫৫ ) গোৌধা। খথেদের দশম মগ্ডলের ১৩৪ সুক্তের সপ্তম মন্ত্রটি গোধা-নান্ী আর্ধ্য-মহিলা কর্তৃক সংকলিত । অপ্তম মন্ত্রটির অর্থ এই ষে, 'হে দ্েবগ্রণ, আমি আপনাদিগের জপ, হোম ও স্ৃতিপাঠাদি বিষয়ে কখনই কোনরূপ ত্রুটি করি নাই। আঁমি আপনাদিগের পুঙা-আরাধনাদি বিষয়ে কখনই গুঁদাস্য বা আলম্তভাব প্রদর্শন করি নাই। বৈদিক বিধি অনুলারে আমি প্রায় সর্নবদাই যক্ঞ্ত অনুষ্ঠান করিয়া থাকি। বেদোক্ত আচার-বাবহারে সদাই রত থাকি। ছুই হস্তে যজ্ভীয় দ্রব্যসম্তার লইয়া যচ্দ্ধ সম্পাদন করি । | যী" ঝণ্েদের দশম মণ্ডলের ১৫৪ সুক্টি। ব্রহ্মবাদিনী যমী- নান্দী আর্ধ্-মহিলা কর্তৃক সংকলিত। এই সুক্তে পাঁচটি মন্ত্র আছে। দ্বিতীয় মন্ত্রের অর্থ এই যে, হে প্রেতাত্মন্‌, যে সকল মহাত্র্$ তপস্যাপ্রভাবে শক্র কর্তৃক অনাক্রমণীয় হইয়াছেন, ধাহারা তপঃপ্রভাবে স্বর্গগামী হইয়াছেন, ধাহার! অত্যন্ত কঠোর তপস্যা করিয়াছেন, হে প্রেতাত্বুন, আপনি তীহাদিগের নিকটেই গমন করুন। তৃতীয় 'মন্ত্রের অর্থ এই যে, হে প্রেতাত্বান, যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ- নীতি অনুসারে যাহারা রীতিমত যুদ্ধু করিয়াছেন, ধাঁহারা ( ৫৬ ) যুদ্ধক্ষেত্রে শরীরের মায়া ত্যাগ করিতে পশ্চাঙ্ুপদ হয়েন নাই, ধাহার! যজ্ঞে সহ সহস্র মুদ্রা দক্ষিণা দিয়াছেন, হে প্রেতাত্মন্, আপনি তাহাদের নিকটেই গমন করুন । চতুর্থ মন্ত্রের অর্থ এই যে, যে সকল গ্রাচীন পুণ্যকম্মমা লোক পুণ্যকর্দ অনুষ্ঠান করিয়া' পুণ্যকীন্তি হইয়াছেন, পুণৃধারা প্রবাহিত করিয়াছেন এবং কঠোর তপস্যার প্রভাবে যে পুণ্যধামে গিয়াছেন, হে প্রেতাত্মন্, আপনি তাহাদের সেই পুণ্যধামেই গমন করুনু। পঞ্চম মন্ত্রের অর্থ এই যে, যে সকল বুদ্ধিমান ব্যক্তি সহজ প্রকার 'গকর্থ্ের দৃষ্টান্ত দেখাইয়া গিয়াছেন, বাহাদের পুণ্য- প্রভাবে সুধ্যদেব রক্ষিত হইতেছেন, ফাহারা তপস্যা হইতে উৎপন্ন হইয়া! কেবল তপস্তাই করিয়াছেন, হে কৃতান্ত, এই প্রেতাস্থা। যেন তীহাদের নিকটেই গমন করেন, ইহাই আমার এঁকান্তির প্রার্থনা । পূর্বে এই মন্ত্রগ্ুলি শ্শানে শবকে চিতায় আরোহণ করাইবার সময় প্রেতাত্মার স্বর্গ- বাসকামনায় পঠিত হইত । অধুনা অন্যান্য মন্ত্র পঠিত হয়। পিপলস সার্পরাজ্ঞী। খগ্থেদের দশম মণ্ডলের ১৮৯ সুক্তুটি সার্পরাজ্ঞী কর্তৃক সংকলিত । এই সৃক্তে ৩টি মন্ত্র মাছে। দ্বিতীয় মন্ত্রের (৫৭ ) অর্থ 'এই ধরে, সূর্যযদেবের অভ্যান্তরভাগে অত্যুজ্ছল প্রতা যেন বিচরণ করিতেছে । | এই প্রভা যেন তীহার প্রাণের মধ্য হইতে নির্গত হইয়া আসিতেছে'। এই সূর্য্যদেব দেখিতে ক্ষুদ্র হইলেও বৃহত্তম হইয়৷ আকাশমগুটুল পরিব্যাপ্ত হইয়! রহিয়াছেন। 'তৃতীয় মন্ত্রের অথ এই ঘে, এই সুধ্যদ্দেব কেমন উজ্জ্বল- রূপে শোভমান হইয়াছেন। এই সুর্যযদেবের উদ্দেশে এই স্তব হইতেছে । আহা ! সুধ্যদেব কেমন স্বীয় কিরণমালায় বিভূষিত হুইয়া আছেন । পাপা পাস্ীিসিপিপিীপিলকজ অদ্কা। শ্রদ্ধা-নান্সী ব্রঙ্গবাদিনী আর্য্যমহিলা খণেদের পাঁচটি মন্ত্র সংকলন করিয়াছেন । যজ্ঞ দান প্রভৃতি সশুকার্যের মহিম! উহাতে উল্লিখিত আছে । | লোপামুদ্রা। ধগ্েদের, প্রথম মগুলের ১৭৯ সৃক্ত লোপামুদ্রা-নাম্মী আর্ধ্য-্হিলা কর্তৃক সংকলিত । প্রথম মান্ত্রের অর্থ £__ লোপামুদ্রা 'পতিকে বলিতেছেন, হে স্বামিন, আমি বনুবতুসর' অবধি রাত্রিদিন ক্রমাগত আপন্তার সেখা করিয়া ক্রাস্ত, শ্রান্ত ও জরাজীর্ণ হইয়া পড়িয়াছে। , দেহের অঙ্গ- ৫৮ ) প্রত্যঙ্গ সকল বাদ্ধক্য নিবন্ধন শিথিল ও শ্বীর্ণ হইয়া 'পড়িয়াছে। তথাপি আপনার সেবায় অদ্যাপি রত আছি। কখনও আলস্য প্রকাশ করি নাই। আপনার সেবাকেই পরম ধর্মী ও পরম তপস্য। বলিয়া জঞ্ঞান' করি। কারণ, স্্রক্জাতির পতিই একমাত্র গতি। পতিসেবাই তাহার একমাত্র ধর্ম। আমার প্রতি আপনার যেন যথেন্ট অনুগ্রহ থাকে, ইহাই আমার এঁকান্তিক প্রার্থনা । শশ্বতী। আসঙ্গ-নামক রাজার মহিষীর নাম শশ্বতী। তীহার পিতার নাম মহধি অঙ্গিরাঃ। শশতী বেদাদি শান্ে অসাধারণ পণ্ডিতা ছিলেন। খগ্বেদের অষ্টম মণ্ডলের প্রথম সুক্তের' ৩৪ মন্দ্রটি শশ্বহী কর্তৃক সংকলিত। মহারাজ আসঙ্গ একদা দেবশ[পে নপুংসকত্ব প্রাপ্ত হইয়!- ছিলেন। তাহার সাধ্বী পতিব্রতা পতী শশ্বতী স্বামীর ঈদৃশী ছুর্দশা দেখিয়া অতিশয় ছুঃখিত হইয়া স্বামীর ছুর্দশা- মোচনার্৫ঘ উগ্রতপস্তা করিয়াছিলেন । তাহার এই উগ্র- তপঃপ্রভাবে মহারাজ আসঙ্গ এই দুর্দশা হইতে নিষ্কৃতি লাভ করিয়াছিলেন। অনন্তর শশ্বতী গ্রীত হইয়া স্বামীকে স্তব করিবার জন্য মন্ত্র রচনা করিয়াছিলেন । (৬ (৫৯ ) রোমশী ॥ খর্েদের প্রথম মণ্ডলের ১২৬ সৃক্তের সপ্তম মন্ত্রটি রোমশ।-নানী শিক্ষিতা আর্ধ্য-মহিল! কর্তৃক সংকলিত। রোমশার গাত্র রোমাবলী-সমাচ্ছন্ন ছিল বলিয়! তীহার' পনি তাহাকে উপহান করিতেন ও স্বণা করিতেন । রোমশা তজ্জন্য দুঃখিতা ও লজ্জিতা হইয়! স্বামীকে বলিয়া- ছিলেন যে, হে স্বামিন্‌, আমার গাত্রে বেশী লোম থাকিলেও, আমার স্ত্রীজনোচিত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কোন অংশে হানি ঘটে নাই। আমি পুর্ণাবয়ব|! আমি বিকলাঙ্গী নহি।' বধ্িমতী। খগেদের ১১৬ সৃক্তের ত্রয়োদশ মন্ত্রে দেখিতে পাওয়। যায় যে, বধ্রিমতী-নান্দী শিক্ষিতা আর্ধ/-মহিলা অস্বিনী- কুমারদ্বয়কে স্তব করিয়াছিলেন । শিষ্য যেমন গুরুর কথা শ্রবণ “করে, অস্বিনীকুমারদ্বয়ও তব্রূপ বঞরিমতীর আহ্বান শ্রবগ্ করিয়াছিলেন | ৃ ধাথেদের প্রথম মণ্ডলের ১৩১ সৃক্তে দেখিতে পাওয়া যায় যে, পাপদেষী, যাজ্ঞিক ও তাহার পত্বী একত্র সম্মিলিত হইয়৷ বহু গোধনপ্রাপ্তিকামনায় ইন্দ্রের উদ্দেশে অগ্নিতে আহতি প্রদান করিতেছেন। খগেদের চতুর্থ মগুলের ২৪ ( ৬০ ) সুক্তের অষ্টম মন্ত্রে দেখিতে পাওয়া যায় যে, ভারতের গাধ্যগণ খন অনার্ধ্যজাতির সহিত তুমুল সংগ্রামে ব্যাপৃত থাকিতেন, তখন তাহাদের ধন্মপত্বীগণ যজ্ঞশালায় বসিয়! নিজেরাই হোম করিতেন । কালের বিচিত্র পরিবর্তন বশতঃ যখন পতি ও পত্তী উভয়েই সংস্কত-জ্ঞান-বিহীন, মুর্খ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও বিষয়াঁসক্ত হইয়া পড়িল, তখন পুরোহিত দ্বারা ধন্-কম্মানুষ্ঠানের সূচনা আরব্ধ হইতে লাগিল। তাঁর পর যখন পরিবর্তনশীল কালের ছুজ্জে় প্রভাবে ধন্মের ও বিদ্যাশিক্ষার অবনতি হইতে লাগিল, তখন পুরোহিতগণও মুর্খ ও বিষয়ভোগাসক্ত হইয়া পড়িল। তখন যজ্ঞ্াদি ক্রিয়াকলাপ ক্রমে ক্রমে দেশ হইতে সমূলে উন্মলিত হইতে লাগিল । খখেদের চতুর্থ মণ্ডলের ৪২ সুক্কে দেখিতে পাওয়া যায় যে. পুরুকুৎসের পত্রী অগ্নিতে ত্বৃতান্থতি প্রদান করিয়৷ স্থললিত স্তবে ইন ও বরুণকে প্রীত করিয়াছিলেন । তিনি ইন্দ্র ও বরুণের কুপায় অর্ধদেব ত্রসদস্থ্ুকে প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। রাজা দুর্গহের পুত্র পুরুকু্ুস শত্রু কর্তৃক কারাবরুদ্ধ হইলে পর, রাজার অভাবে রাজ্য অরাজক ও বিদ্্রোহপুর্ণ হইয়া উদ্ভিবে, এই ভাবিয়া রাজমহিষী স্বয়ং বেদমন্ত্র উচ্চারণ ুরববক সপ্তুষিগণের পুজা করিয়াছিলেন । সপ্তধিগণ প্রীত হইয়া এঁ রাজার প্রাসাদে উপস্থিত হইয়াছিলেন। তীহারা রাজমহিষীর পৃজায় অতিশয় গ্রীত হইয়! ত্রাহাকে বলিয়া- ( ৬১) ছিলেন, হে রাজমহিষি, আপনি ইন্দ্র ও বরুণের প্রীতির জন্য যন্ত্ত করুন। অনন্তর রাজমহিষী যজ্ঞ করিয়া অর্ধ- দেব ত্রসদস্থ্যকে প্রাপ্ত হইস্ছিলেন। রাজার অভাবে রাজ্য অরাজক এবং বিদ্রোহ ও অশান্তিপুর্ণ হইবে, এই ভাবিয়৷ তৎকালের রাজমহি বীরা ধর্ম-কন্ম্মানুষ্ঠানে ব্যাপৃতা থার্কিতেন। ধর্ত্ানুষ্ঠানপ্রভাবে রাজো শান্তি সংস্থাপিত হইত। তাহারা এইরূপ দুঃসময়ে শোকে, তাপে ও ভয়ে বিহবল! হইয়৷ রাত্রিদিন রোদন করিতেন না এবং প্রজা- বর্গের হিতচিন্তায় বিরত হইয়া রাজ্য রসাতলে দিতেন না । তাহারা এই বুঝিতেন যে, রাজ্যের মঙ্গল ও শান্তি রাজা ' ও রা'ছন্তীর ধর্ম্াবুদ্ধির উপরে নির্ভর করে এবং তাহাদেরই ধন্মানুষ্ঠানে শৈথিলা বশতঃ রাজ্যের অশান্তি ও অমঙ্গল ঘটিয়া থাকে । | ভারতের আধ্য-মহিলাদিগের ধর্ম্মানুষ্টান-কথা খণ্েদেও স্থান পাইয়াছিল। ইহা একবার ভাবিলেও ভারতের মৃতপ্রায় ধন্মভাব পুনরুজ্জীবিত হইয়া উঠে। খথেদের পঞ্চম মণ্ডলের ৩* সৃক্কের নবম মন্ত্রে দৃষ্ট হয় যে, পূর্বব- কালে মহিলাগণ যুদ্ধে সৈনিক-কার্ধ্যও করিতেন। নমুচির সহিত*্ইন্ড্রের যখন যুদ্ধ হইয়াছিল, তখন ইন্দ্র বলিয়া- ছিলেন, নমুচির স্ত্রীসেনা আমার কি করিবে? কিছুই করিতে পারিবে না! । নমুচি স্বীয় স্ত্রীসনাকে " অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত করিয়া যুদ্ধ করাইত। ইন্দ্র তাহার ছুইটি স্ত্রী ৯১ ( ৬২) সৈশ্যাধ্যক্ষকে কারাঁবরুদ্ধ করিয়া তাহার সহিত যুদ্ধ করিয়াছিলেন । খথেদের ৪৩ সুক্তে দেখিতে পাঁওয়৷ যায় যে, ধার্দিক দম্পতী সদা ধর্ম্কর্ষ্মের অনুষ্ঠান বশতঃ র্রান্ত হইয়া পড়িয়াছেন, কিন্তু তথাপি উভয়ে মিলিয়া প্রচুর ঘ্ৃত দ্বারা হোম করিতেছেন এবং দেবগণের নিকটে প্রার্থনা করিতেছেন, হে দেবগণ, আপনাদিগকে আহ্বান করিয়া আমরা কৃতার্থ হই । আপনারা আমাদের উপর কদাপি কুপিত হইবেন না। আমাদের অপরাধ ক্ষমা করিবেন। বগ্বেদের পঞ্চম মণ্ডলের ৬১ সূক্তে দেখিতে পাওয়া যায় যে, রাক্ত ভরতের মহিষী রাজী শশীয়সী দেবতাদিগের আরাধনা, জপ, হোম, পুজা এবং দরানাদি সশুকার্ষ্যে সদা রত থাকিতেন। তিনি পুণ্যকার্য্যের বলে চিরযৌবনা হইয়া- ছিলেন। ট্রাহার অসাধারণ দয়া-দাক্ষিণা ছিল। তিনি রোগার্ত, ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত ও দীনহীন জনগণের প্রতি সদাই কৃপাবর্ষণ করিতেন। খেদের ষষ্ট মণ্ডলের ৬৮ সৃক্তের চতুর্থ মন্ত্র অর্থ এই যে, হে ইন্দ্র ও বরুণ, মর্ভলোকে নরনারীগণ তোমাদ্দিগকে সদা পুজ|! করেশ। তোমরাও তাহাদিগকে সদা রক্ষা করিও । তোমরা মহান্। এই মন্ত্রপাঠে ইহাই অবগত হওয়া যায় যে, পুরুষের ম্যায় স্্রীলোকেরও বৈদ্দিক মন্ত্র উচ্টারণ পূর্বক ইন্দ্র ও বরুণের পৃজা-হোমাদি -করিবার অধিকার আছে। লাট্যায়ন শতসুত্র-নামক গ্রন্থের প্রধম প্রপাঠকের ষষ্ঠ কণ্িকায় ( ৬৩ ) “পত্রী চ” এই সূত্রে ইহাই অবগত হওয়! যায় যে, পতির স্যায় পত়ীও সামগান করিবে । যাহারা বলেন, স্্ীলোকের বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণে অধিকার নাই, তাহারা যদি গোভিল- গৃহথসূত্রনামক গ্রন্থের দ্বিতীয় প্রপাঠকের দ্বিতীয় খণ্ডের ৫ হইতে ১০ সুত্র পর্যন্ত *দেখেন, তাহা হইলেই তাহারা বুঝি€ত পারিবেন যে, বিবাহের কুশপ্ডিকার সময়ে নব- বধূকে কয়েকটি বৈদিক মন্ত্র পাঠ করিতে হয়। যে পাত্রের সৃহিত বিবাহ হইতেছে, তাহার সহিত ভবিষ্যতে কিরূপ ব্যবহার করিতে হইবে, তাহার প্রতি কি" কি কর্তব্য হইবে, তাহার গৃহে কিরূপ আচারে চিরজীবম থাকিতে হইবে, তাহার আত্মীয়বর্গের সহিত কিরূপ ব্যবহার করিতে হইবে ইত্যাদি কথা ও প্রতিজ্ঞ! এ সকল মন্ত্রে উল্লিখিত আছে। অধুনা সে সকল মন্ত্র পুরোহিত মহাশয়ই উচ্চারণ করিয়া থাকেন। নরুবধূ উচ্চারণ করে না। নব-বধূর নিজের কর্তব্য নিজে করে না, বুঝে না, স্থৃতরাং ভবিস্ততে উহ! পালন করিবে কিরূপে ? নব- বধুর ভ্রাতাকে নব-বধুরু হস্তে এক অর্তীলি লাঙ্গ ( খৈ) প্রদান করিতে হয়, এ অঞ্জীলির ভেদ না হয়, এইরূপ সাবধানে নব-বধূকে একটি মন্ত্র পাঠ করিয়া এ এক অঞ্জলি লাজ (খৈ) অগ্নিতে আন্ুতি দিতে হয়। মন্ত্রের অর্থ এই যে, 'এই নারী এক অগ্রলি লাজ (খৈ) দ্লুইয়া এই মন্ত্র গাঠ পূর্ববক অগ্সিতে আছুতি প্রদ্থান করিতেছে এনং ( ৬৪ ) এই প্রার্থনা করিতেছে, আমার পতি দীর্ঘায়ুঃ হউ্ন্। শত- বর্ষ পরমায়ুঃ লাভ করুন। আমার দেবর, ভান্ত্বুর এবং তাহাদের পিতৃব্য প্রভৃতি জ্ঞাতিদিগের শ্রীবৃদ্ধি হউক, তাহাদের সকল বিষয়ে উন্নতি হউক্‌। নব-বধূ এক্ষণে স্বামীর সগোত্রা হইয়াছেন বলিয়া স্বামীর আত্মীয়-জ্ঞাতিগণ তীহারই আত্মীয়-জ্ঞতিগণ হইয়া দাড়াইয়াছে, এই শিক্ষা বৈদিকযুগে কুশপ্ডিকার সময়ে বধর হৃদয়ে নিহিত হইত। বধৃও পত্গুছে গিয়া পতির জ্ঞাতিবর্গের উন্নতি কামন। করিত, পতির ভ্রাতাও 'পিতৃব্যাদি স্বজনের মধ্যে বিবাদ ঘটাইবার মূল-কারণ হইত না। তাহার দোষে “ভাই ভাই ঠাই ঠাই” হইত না “জ্ঞাতি-বিবাদ” বলিয়া একটা পদার্থ বৈদিকযুগে অনুভূত হইত না। স্ৃতরাং গুহে সদা শান্তি বিরাজ করিত। তখন “স্মার্ত”যুগ বা “সংহিতা”যুগগ আরন্ধ হয় নাই। স্থৃতরাং জ্ঞাতি-বিবাদ-ভপ্তনের নিমিত্ত বা জ্াতিদিগের স্বন্ত নির্ধারণের জন্য দায়ভাগ প্রভৃতি স্মৃতিশান্ত্র নির্মিত হয় নাই। কালের “কুটিল গতি” অনুসারে যখন ধর্মমভাব ক্রমে শিথিল হইতে লাগিল, বৈদিক যুগের অবসান হইতে লাগিল, তখন সেই যুগের অনুরূপ কর্তৃব্যপালনার্থ, খষি- গণ স্মৃতিশান্ত্র রচনা করিয়! বৈদিকধর্্মহীন জনগণের অশেষ উপকারে প্রবৃত্ত হইলেন। গোভিল খর যে সময়ে “গৃহাসূত্র”নায়ক গ্রন্থ রচনা করিয়/ছিলেন, দে সময়ে ( ৬৫ ) স্্ীশিক্ষার কিঞ্িত হ্রাসাবস্থা ঘটিয়াছিল। কারণ, বিবাহ- সময়ে নব-বধূকে বৈদিক মন্ত্রের অর্থ বুঝাইবার জন্য মন্ত্রে অর্থজ্ একটি বৈদিক ব্রাহ্মণের উল্লেখ পগৃহাসুত্রে” দেখিতে পাওয়া যায়। পুরোহিত মহাশয় স্বয়ং একটি মন্ত্র পাঠ করিয়া নব-বধূকে উহ্নাঁর অর্থ বুঝাইয়া দিতেন। এই মন্ত্রের অর্থ এই যে, এই কন্যা পিতা, মাতা, ভ্রাতা প্রসৃতিকে ত্যাগ করিয়া পতিগৃহে আগমন করিতেছে এবং পতি- বিষয়ক উপদেশ, গ্রহণ করিতেছে । হে কন্যে, আমর! তোমার সহিত একত্র হইয়া ও জলধারার ম্যায় বলবান, বেগবান্‌ ও পরস্পর অভিন্নভাবে স্থিত হইয়া তোমার শত্রু বর্গকে উত্পীড়িত করিব। , গোভিল খধির “গৃহাসুত্র”-রচনার সময়ে মন্ত্রের অর্থভ্ একজন ব্রাহ্মণ নব-বধূকে মনতার্থ বুঝাইয়া দিতেন। এক্ষণে পুরোহিত যখন নিজেই বৈদিক মন্ত্রের অর্থ বুঝেন না, তখন অপরকে বুঝাইবেন কিরূপে ? ইংরাজ, জন্্মন্‌, ফ্ঞ্চ প্রভৃতি পাশ্চাতা জাতির বিবাহ-সময়ে তীহাদের নিজ নিজ ভাষায় অনুদ্দিত' বাইবেল'নামক ধর্্ম-পুস্তকের যে সকল বিবাহ-মন্ত্র পঠিত হয়, তাহা বর ও বধু বুঝিতে পাকে। পুরোহিত ঈহাশয় কি বলিতেছেন এবং তাহার! ছুই জন ( বর ও বধু) কীদৃশ ধর্থা-কর্ম্ের অনুষ্ঠানের জন্য ব্রতী হইয়াছে, তাহা তাহার! বুঝিতে ,পারেএ সুতরাং তাহারা ছুই জন বিবাহকালে মনোযোগ, ভক্তি, প্রেম ও ( ৬৬ ) আইলাদের সহিত এ সকল দাম্পতা-বন্ধন-মন্ত্র পাঠ করিয়া থাকে । কিন্তু প্রাচীনতম সুসভ্যভূমি তারতবর্ষের হিন্দু- জাতির বিবাহ-সময়ে যে সকল বৈদিক মন্ত্র পঠিত হয়, তাহার অর্থ নাজানেন পুরোহিত, না "জানেন বর, না জানেন বধূ এবং না জানেন কগ্যা-সম্প্রদাতা পিতা !!! “কি যে সাপের মন্ত্র পড়া হয়” আর কিবা যে তাহার অর্থ, কেই বা তাহার “খোজ-খবর” রাখে ? ইদানীং এই অধপতিত হতভাগ্য ভারতবর্ষে হিন্দুধন্মের বিঞ্লাৰ- সময়ে বিবাহ এবং ব্রত-পুজাদি পবিত্র ধন্-কম্ যে কিরূপ পণ্ড হইতেছে, তাহ! ভাবিলে বিস্মিত হইতে হয়। সমস্তই ধেন একটা “ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ” হইয়া ঈাড়াইয়াছে 1! যে কার্য করা হইল, তাহার “মাথামুণ্ড" কিছুই বুঝা হইল না। অথচ, তিল, তুলসী, তার, গঙ্গাজল স্পর্শ করিয়া অগ্নি ও ৬শালগ্রামশিলার সম্মুখে প্রতিজ্ঞ- বাক্য উচ্চারিত হইল, কিন্তু তাহার অর্থ-বোধ হইল না। স্মতরাং ভবিষ্যুকালে এ মন্ত্রের উপদেশ অনুসারে কোন কার্ধা করাও হয়না এবং এ উচ্চারিত প্রতিজ্ঞাও রক্ষা কর! হয় না। এঁবূপে উচ্চারিত প্রতিজ্ঞা রক্ষা করিতে না পারিলে যে কিরূপ ভয়ঙ্কর মহাপাপপঙ্কে নিমগ্ন হইতে হয়, তাহা একবার ত্বাবিলেও স্তন্তিত হইতে হয়। সনাতন হিন্দু- ধর্মের মূলভিততি অত্যন্ত সূ, সেই জন্য ইহা বু শতাব্দী ( ৬৭ ) হইতে নানাবিধ অত্যাচারগ্রস্ত হইয়াও এখনও সমূলে' উন্মুলিত হয় নাই এবং কোন কালে যে ইহা সমূলে উন্ম,লিত হইয়া যাইবে, তাহা বোধ হয় না। কারণ, ইহার নাম “সনাতন তীর ৮ দৃঢ়তম বিশ্বাস, জান ও ভক্তি- রূপ উপাদানে ইহার ঘুঁলভিত্তি গঠিত হইয়াছে । যাব, লোকের স্থৃদৃঢ় তক্তি-বিশ্বাস থাকিবে, তাব€ ইহার সমূলে উন্মমলন হইবে না। তবে জ্ঞানাতাবে ইহার যে ঘোর, অবনতি ঘটিয়াছে ও পরেও ঘটিবে, তাহা অবশ্য স্বীকার্য্য। পুরোহিত মূর্খ হওয়াতেই ভারতে ধন্মের ঘোর বিগ্লুব ঘটিয়াছে। তিনি নিজেই বৈদিক মন্ত্রের অর্থ বুঝ! তো দুরের কথা, বৈদিক মন্ত্র সম্যক্রূপে উচ্চারণ করিতেও জানেন না ও পারেন না। স্থৃত্রাং পরকে আর কিরূপে উচ্চারণ করাইবেন ? এক্ষণে যে কোন প্রকারে পঙ্গীকে “রাধাকৃষ্$” নাম উচ্চারণ করাইতে পারিলেই সমস্ত গোল, মিটিয়া যায়। “গোলে. হরিবোল, দিয়ে” কোন প্রকারে দায় হইতে নিষ্কৃতি পাইলেই এবং দক্ষিণাটি আদায় করিতে পাঁরিলেই পুরোহিত মহাশয় নিশ্চিন্ত হয়েন। বিবাহকালে, “সপ্তপদীগমন”-সময়ে বরকে একটি মন্ত্র পাঠ “করিতে হয়। তাহার অর্থ এই যে, হে বধু, তুমি চিরকালের জন্য আমার সহচারিণী হও, আমি যেন চির- কাল তোমার সৌহার্দ্য ভোগ করি। * তোমার সহিত, সুদুঢ়্ূপে সংস্থাপিত এই সৌছার্দা যেন বিচ্ছেদকারিণী (৬৮ ) নারীরা ( “ঘর-ভাঙানীরা” ) বিচ্ছিন্ন করিতে নু! পারে। আমাদের হিতৈষিণী ভদ্রমহিলারা সহুপদেশ-প্রদানাদি- দ্বারা আমাদের এই নৃতন লৌহৃদ্য ক্রমে বদ্ধিত করিতে থাকুন। এই মন্ত্র দ্বার ইহা! বুঝা যাইতেছে যে, কোন গৃহ-বিচ্ছেদকারিণী নারীর কুটবুদ্ধির দোষে পরে গৃছে অশান্তিঅনল যেন প্রন্বলিত না হয় এবং তদ্বিষয়ে*বধূ যেন এখন হইতেই সতর্ক থাকেন, ইহা ইঙ্গিত করিয়া বধূকে বুঝাইবার জন্য পুরাকালে বর, এই মন্ত্রটি পাঠ করিয়া দেবতার নিকটে প্রার্থনা করিতেন । ৃ “গোভিল-গৃহসুত্রে”র দ্বিতীয় প্রপাঠকের প্রথম খণ্ডের পঞ্চদশ সূত্রে লিখিত্ব আছে যে, বর ও বধ এক- সঙ্গে একটি মন্ত্র পাঠ ,করিবে। তাহার শেষ ভাগের অর্থ এই যে, সছুপদেশদায়িনী ভদ্র-মহিলারা আমাদের উভয়ের ছুইটি হৃদয়কে একটি হৃদয় করিয়। দিন। উক্ত গ্রন্থে লিখিত আছে যে, নব-ৰধূ একটি মন্ত্র পাঠ করিবে । তাহার অর্থ এই যে, হে প্রুবতারা, তুমি স্থিরপ্রকৃতি- সম্পন্না। সেই জন্য তুমি প্রুব নীমে বিখ্যাতা। আমি যেন পতিকুলে তোমার ন্যায় স্থিরপ্রকৃতি .হইয়া৷ বাস করি। অর্থাৎ পতিকুল পরিত্যার্গ করিয়া যেন আমাকে এ জীবনে অন্যত্র কুত্রাপি বাস করিতে না হয়। যদি কদাচিত পতির মহিত বিবাদ করিয়া কোন নারী পতিগৃহ ত্যাগ করে 'এবং* অস্থাত্র বাস করে, তাহা হইলে সে (৬৯) পাতকিনী হইবে। কারণ, বিবাহকালে সে এই মন্ত্র উচ্চারণ করিয়৷ যে প্রতিজ্ঞা করিয়াছে, পরে সে এ প্রতিজ্ঞ! লঙ্ঘন করিয়া থাকে । উক্ত গ্রন্থে লিখিত আছে যে, অনন্তর পতি বধূকে “ফ্রবাদেটাঃ” ইত্যাদি মন্ত্র পাঠ করাইবে। ইহার অর্থ এই যে, হে ঈশ্বর, স্বর্গলোক যেমন স্থির ও চিরস্থায়ী, পৃথিবী যেমন স্থির ও অচলা, পর্ববত সকল যেমন স্থির ও অচল, আমিও তন্রপ পতিকুলে যেন স্থিরা ও অচলা হইয়া আজীবন বাস করিতে পারি। এই মন্ত্র পাঠ করিয়া বধূ, “আমার এই গোত্র ও এই নাম, আমি তোমাকে অভিবাদন করিতেছি” এই বলিয়া পত্তির পাদগ্রহণ করিবে । এই মন্ত্র দ্বারা এই বুঝিতে হইবে যে, বধূ যেন পতিগৃহ ত্যাগ করিয়া পিত্রালয়ে, মাতুলালয়ে কিম্বা অন্য কোন আত্মীয় বা মিত্রের গৃহে সর্বদা উত্সব, আমোদ-প্রমোদ উপলক্ষে যাইবার জন্য মঞ্চলা না হয়েন। সর্ববদ! গৃহে থাকিয়া, গৃহকর্ম্নে লিপ্ত হইয়া শ্বশুর, শব, পতিপুক্রাদির প্রতি কর্তব্যপালনে নিযুক্ত থাকাই বধুর একমাত্র মুখ্যু কার্য । 'এতদ্যতীত অন্য সকল গৌণ কার্য্য। কারণ, বিবাহকালে পাত্রীকে আর একটি মন্ত্র পাঠ করিতে হয়।* তাহার অর্থ এই যে, আমাদের রক্ষাকর্তা পরমেশ্বর আমাদের জন্য তাদৃশ উত্তম পথ নির্দিষ করিয়া দিন, যে কল্যাণকর বিল্লুশৃন্য পথ অবলম্বন করিলে আমি, পতিকুলে কর্তব্য কার্ধ্য সকল অনায়াসে নির্ববুহ করিতে পারি। 88] এই মন্ত্র দ্বারা ইহাই বুঝাইতেছে যে, পতিকুলে সর্বদা কর্তব্য কর্মে লিপ্ত থাকাই পত্বীর একমাত্র মুখ্য কার্ধ্য। কুটুম্বমিত্রাদির গৃহে নিমন্ত্ররক্ষা প্রভৃতি কার্ধ্য গৌণ কার্ধ্য। নিমন্ত্রণরক্ষা করায় দোষ দেওয়া হইতেছে-না। নিমন্ত্রণ রক্ষার ব্যপদেশে তথায় দীর্ঘ সমর অতিবাহিত করিয়া গুহকৃতো অবহেলা করাই শাস্ত্রনিষিদ্ধ। গৃহকৃত্যে অবহেলা করিয়া পরগৃহে উৎসব-আমোদে মত্ত হইতে নিষেধ করাই শাস্ত্রের তাশপর্ধযার্থ। _ পুর্বকালে বর ও বধূই যে কেবল বিবাহকালে বৈদিক মন্ত্র পাঠ করিত, তাহা নহে, কিন্তু বর বিবাহান্তে যখন কর্ণীরখ-নামক রথে বধুকে আরোহণ করাইয়া নিজ গুহে আনয়ন করিত, তখন কুলশীলদম্পন্ন। পতিপুক্রবতী মহিলারা “ইহ গাবঃ” ইত্যাদি মন্ত্র পাঠ করিতে করিতে বধুকে এ রথ হইাতে নামাইতেন। এই মন্ত্রটির অর্থ এই যে, এই বধূ ও বরের গৃহে ধেমু ও ঘোটকের সংখ্যা বন্ধিত হউক। রাশি রাশি ছুদ্ধ ঘৃত-নবনীতাদ্ি প্রদানের জন্য বহুসংখ্যক ধেনু রক্ষিত হউক এবং গাড়ী টানিবার জন্য ও পৃষ্ঠে মানুষ বহিবার জন্য বুসংখ্যক ঘোটক রক্ষিত হউক। এই গৃহে উত্তম পু্র-পৌত্রাদি জন্মগ্রহণ করুক। যে দেবতার অনুগ্রহে সহত্র মুদ্রা দক্ষিণাদানের উপযুক্ত যন্ত্র সকল সম্পাদিত হুইতে পারে, সেই সূর্যয- 'দেবতা এই গুহে সর্বদা অনুগ্রহ বর্ণ করুন। পতি ( 5১ ) নিজ গৃহে আসিয়! হোম করিবার সময় “ইহ ধৃতি” ইত্যাদি মন্ত্র পাঠ করিবে। এই মন্ত্রের অর্থ এই যে, হে বধু, এই গুহে তুমি স্থিরমতি হইয়া আনন্দের সহিত কালযাপন করিও। আমীতে তোমার অচলা মতি হউক। আমার আত্মীয়গণের সহিত তোমার মনের মিলন হউক । আমার প্রতি তোমার আসক্তি হউক। আমার সহিত *তুমি আনন্দের সহিত কালযাপন কর। বর্তমান সময়ের নব-বধূ এইরূপ মন্ত্রের অর্থ বুঝিতে পারে না বলিয়া ভবিষ্যতে তাহার সহিত তাহার পতির ও পতির জ্ঞাতিদিগের মনের প্রায় মিলন হয় না। স্বতরাং তাহার পতির চরণে তাহার * অচলা ভক্তি হইবে কিরূপ ? সেপতির সহিত পতিকুলে আনন্দে কালযাপন করিবে কিরূপে? সে যদি বুঝিত যে, সে বিবাহুকালে পবিত্র হোমাগ্রি ও ৬শালগ্রামশিলার সম্মুখে ভবিষ্যতে পতির চরণে আচল মতি রাখিবার জঙ্য বেদমন্ত্র কর্তৃক আদিষ্ট হইয়াছে, তাহা হইলে সে ভবিষ্যতে বৈদিক শাসনবাক্য চিরজীবন আনিয়া চলিত। যদি গে বৈদিক মন্ত্রের অর্থ বুঝিতে পারত, তাহা হইলে ভবিস্তৃতে পতিচরণে তাহার, ূঢরন্তি ও অচল! মতি থাকিত। কারণ, নারীজাতি সাধারণতঃই ধর্মভীরু । নারীজাতি যদি বুঝিতে পারে যে, তাহার প্রতি যে উপদেশ ও আদেশ, হইয়াছে, তাহ) র্-সম্গক্ত, উহা ধর্-কর্থের অনুষ্ঠানের, সহিত সম্বন্ধ, ( ৭২ ) এইরূপ বুঝিতে পারিলে ধর্মভীরু নারীজাতি এরূপ আদেশ উপদেশ কখনই উল্লঙ্বন করিবে না। কারণ, সাধারণতঃ নারীজাতির এই ধারণা যে, ধর্ম্ম-সম্পৃক্ত কোন বিষয় উল্লগ্ঘন করিলে মহাপাপ হয়। পূর্ব্বকালে বিবাহের পর বর, বধূকে লইয়া স্বগৃহে আগমন করিলে কুলশীলসম্পন্ন পতিপু্রুবতী পুরস্ত্ীরা সুমধুর উচ্ৈঃ্বীরে বেদমন্ত্র পাঠ করিয়া তাহাদের কল্যাণ-কামনা করিতেন। পুরস্ত্রীগণ সুমধুর উচ্গৈঃম্বরে বেদমন্ত্র পাঠ করিতেন, এ কথা শুনিয়া এক্ষণে অনেকে বিশ্মিত হইবেন। এক্ষণে মধুর উচ্চৈত্বেরে শুভ বৈদিক-ন্ত্র পাঠের পরিবর্তে “হুলুহুল” ধবনিমাতর পর্য্যবসিত হইয়া রহিয়াছে। কালে তাহা বিলুপ্ত হইয়া গেলে প্রাচীন রীতির এইরূপ আর কোন চিহৃই থাকিবে না। বিবাহের পর পতিগৃহে আসিয়৷ নারী গৃহিণীপদবাচ্য হয়েন। শাস্ত্রে লিখিত আছে যে, ইফ্টকা, চূর্ণ, প্রস্তর, রা ও লৌহাদি উপাদানে নির্মিত গৃহ গৃহই নহে, হা গৃহ শব্দের গৌণ অর্থ। * গৃহিণীই 'গৃহ শবের মুখা অর্থ, গৃহিণীই গৃহের দেবতা। গৃহিণীই গৃহকর্ট্ের প্রধান উপযোগিনী। পত়ীর জগ্যই গৃহের প্রয়োজন। শান্তর বলিতেছেন, গৃহের মুলদেবতারূপিণী সেই পত্রী যদি পতিয় পদাক্ক অনু্রণ করেন এবং পতির বশবর্ডিনী হয়েন, তাহা, হইলে গৃহস্থাশ্রম তুল্য মহাম্থখকর স্থান ( 5৩ ) ত্রিভুবনে আর কুত্রাপি নাই। এই জন্য অন্যান্য আশ্রম হইতে গৃহস্থাশুমের শ্রেষ্ঠতা শাস্ত্রে কীর্ঠিত হইয়াছে। অন্যান্য আশ্রম গৃহস্থাশ্রমের সাহায্য প্রার্থনা করে বলিয়৷ ইহা অন্যান্য আশ্রমের আতশ্রয়স্বরূপ। যিনি গৃহ শব্দের মুখ্য অর্থ, সেই গৃহিনী *্ঘদি- গৃহের ধর্ম্মকর্্ণা অনুষ্ঠানে অধিকারিণী না হয়েন, তাহা হইলে “সন্জ্রীক হইয়া ধর্ম আচরণ করিবে” এই শান্ত্রবাক্য ব্যর্থ হইয়া পড়িবে । কালের অবোধ্য প্রভাবে সনাতন আর্্য-ধর্মের অনুষ্ঠানাদি পরিবর্তিত হইয়া গিয়াছে। নতুবা এক্ষণে পুরুষগণ যে" সকল শ্রাদ্ধহোম-পুজাদি ধণ্মানুষ্ঠান করিয়া থাকেন, পুর্বকালে নারীগণও তত্রপ, অনুষ্ঠান করিতেন কাল- প্রভাবে সমস্তুই পরিবর্তিত হইয়াছে। জগতের সৃষ্টি- স্থিতি-সংহারকারী ব্রহ্মা বিষু মহেশ্বরও কালে লয় প্রাপ্ত হয়েন। ন্বর্গের অমরাবতী হইতেও ভশ্রষ্ঠা যছুপতি শ্রীকৃষ্ণের মথুরাপুরী ও শ্রীরামচন্দ্রের অযোধ্যানগরীই যখন কালপ্রভাবে শ্রীভ্রফী. হইয়া গিয়াছে, তখন স্ত্রীলোকের বেদপাঠ, হোমু, শ্রাদ্ধ, তর্পণ, দেব-দেবীগণের পূজ। প্রভৃতি গৃহস্থ-ধর্দমের অনুষ্ঠান যে কালপ্রতাবে বিলুপ্ত হইয়া যাইবে+ইহা, আর আশ্চর্যের বিষয় কি? রি (৭৪ ) মৈত্রেরী। | বৃহদারণ্যক উপনিষদের দ্বিতীয় অধ্যায়ের চতুর্থ ব্রাঙ্মণের প্রথম মন্ত্রে দেখিতে পাওয়া যায় যে, একদা মহবি যাজ্বন্থ্য বৈরাগ্যবশতঃ গৃহশ্বীশ্রম পরিত্যাগ পূর্ববক সন্ন্যাসাশ্রমগ্রহণে ইচ্ছুক হইয়! স্বীয় প্রিয়তম! ভাঁয়্যা মৈত্রেয়ীকে বলিয়াছিলেন, মৈত্রেয়ি, আমি সম্যাস- আশ্রম গ্রহণ করিতে ইচ্ছুক হইয়াছি। অতএব তোমার অনুমতি প্রার্থনা করিতেছি । পত্রী বিদ্যমান থাকিতে পতির সন্্যাস-আশ্রম-গ্রহণে ইচ্ছা হইলে পতিকে পত়ীর অনুমতি লইতে হয়। পতুী বিদ্যমান থাকিতে তীহার অনুমতি না লইয়া গৃহত্যাগ পুর্ববক পতির সন্স্যাসগ্রহণ শান্তর ও যুক্তিসঙ্গত. নহে। আমি সন্যাসধন্ম গ্রহণ করিলে পাছে তোমার ও তোমার সপতী কাত্যায়নীর সাংসারিক কোন কষ্ট উপস্থিত হয়, সেই জন্য অগ্রে তোঁমাদিগকে সমভাবে আমার সম্পত্তি ভাগ করিয়া দিয়া পরে সঙ্স্যাসী হইব। আমি তোমাদিগকে ষে সম্পত্তি দিয়! যাই তাহাতে তোমাদের জল্-বন্ত্ের বন্য কোন কট হইবে না। মহুধি বাজজবন্্য একজম ব্রাঙ্গাণ-পপ্ডিত হইলেও তীহার সম্পত্তি বড় কম ছিল না। তিনি, বিপুল সম্পত্তির অধিকারী ছিলেন। মিথিলাধিপতি মহারাজ জনকের-কঠিন,কঠিন শাস্্ীয় প্রশ্নের সহুত্তর-্দানের জন্য মহধি যাজ্ঞবন্ক্য মহারাজের নিকট হইতে অনেকবার সহস্র (৭৫ ) ধেনু এবং বহু সহত্র “ভরি” স্থবর্ণ লাভ ফরিয়াছিতলিন। এই সহত্র ধেনুর ছুই দুইটি শৃঙ্গ' দশ “তরি” পরিমিত স্ববর্ণে ভূষিত করিয়া মহারাজ মহধিকে কছবার দান করিয়াছিলেন। *এক সহস্র ধেনুর প্রত্যেক শুজে দশ ভরি পরিমিত স্বর্ণ থাকিঠে ছুই সহত্ত্র শৃঙ্গে ঘিংশতি সহত্র ভরি*স্থবর্ণছিল। এইরূপ বিংশতি সহ ভরি স্ৃবুর্ণ ভূষিত-শৃগযুক্ত ধেনু তিনি অনেকবার পাইয়াছিলেন। সুতরাং ব্রাক্মণ-পগ্ডিত বলিলে সাধারণতঃ অনেক লোক যেমন দরিদ্র বলিয়া বুঝে, তিনি সেইক্প দরিদ্র ছিলেন না। তিনি অনেক আধুনিক খগগ্রস্ত উপাধিলোলুপ ভারতীয় রাজা মহারাজ অপেক্ষা! অর্থবুান, সুখী, নিশ্চিন্ত" ও সন্ধায়ী ছিলেন । মহষি যাজ্জবন্্য সৎকার্য্যে যেন্ধপ ব্যয় করিতেন, তাহ! শ্রবণ করিলে অনেক আধুনিক আত্মাভিমানী উচ্চ-উপাধি- ধারী ভূম্বামী ও ধনী বিস্মিত হইবেন। মহধ্ধির আশ্রমে বনু সহজ শিষ্য অন্নবন্ত্র পাইয়া নানাশান্্র অধ্যয়ন করিত । ধাহার গৃহে নিত্যনৈমিত্তিক যজ্ঞানুষ্ঠানে কছ সহজ অণ পরিমিত ঘ্বৃতু অগ্নিসা হইত, ধাহার আশ্রমে অসংখ্য অতিথি পর্য্যাপ্ত পরিমাণে ঘৃত, দধি, দুগ্ধ, ক্ষীর প্রাপ্ত হইত, তিনি দরিদ্র ব্রাক্মণ-পঞ্চিত হইতে পারেন না। যে খষি, মাত্র দশ 'হত্র ছাত্রকে জমমন্ত্র দিয়! গৃহে রাখিয়া! আঅধাদ্মম করাইভেন, তিনি “কুলপতি” আখ্যা, প্রাপ্ত হইতেম। ( +৬ ) যালজ্জবন্থ্য প্রভৃতি মহধিগণ কুলপতি মহধিগণ অপেক্ষাও বড় ছিলেন। মহামুনি বাসের যষ্টিসহত্র ছাত্র ছিল। তিনি তাহাদিগকে দুই বেল! অন্নব্যঞ্জন, ঘুত, দধি, ভুগ্ধ, ক্টীর ভোজন করাইয়া স্বগুহে রাখিয়া অধ্যয়ন করাইতেন। প্রতিদিন যষ্টিসহশ্র ছাত্রকে দুই বেলা এরূপে ভোজন করান যে কিরূপ মহাব্যাপার, তাহা একবার "মনে করিলে কেন! বিস্মিত হয় ? পূর্ববকালের রাজধি জনকাদির হ্যায় মহাদ্দাতা প্রকৃত রাজা মহারাজ তাহাদিগকে প্রভূত ধন দান করিয়া সাহাষ্য করিতেন। তাই মহধিগণ এত অধিক ব্যয় করিতে পারিতেন। তাহারা ক্রিয়াবান ছিলেন । * সতক্রিয়ানুষ্ঠানের জন্য তাহাদের ধনাভাব হইত না। তাহারা কাহারও নিকটে যাক্ক্। করিতেন না। তাহার! শ্রাদ্ধ করিবার সময় যে একটি মন্ত্র পাঠ করিতেন, সেই মন্ত্রের অনুয।য়ী কাধ্যও করিতেন । সেই মন্ত্রের অর্থ এই যে, আমাদের গুঁহে প্রভৃত অন্ন হউক্‌। আমরা যেন বন্ধ অতিথিকে লাভ করিয়া ভোজন করাইতে পারি। আমাদের নিকটে লোক সকল আসিয়া যাচ্জ্া করুক। আমর! যেন ঈশ্বরের কৃপায় কাহারও নিকটে গিয়া কোন বিষয় কদাঁপি যাচ্। নাকরি। যে" মহধিগণ এই 'সকল শান্দ্রবাক্য প্রচার করিয়াছেন, তাহারা কি সর্ববদ! যাচ্ছ।- কারী দরিদ্র ভিক্ষুক ব্রাহ্মণ হইতে পারেন ? কখনই না। তাহারা মৃহান্‌,ও (তেজন্বী ছিলেন। তাহাদের সন্তান ও 6 7) শিষ্যুবর্গ আচার, বিনয়, বিদ্যা ও প্রতিষ্ঠবিহীন হওয়াতেই তেজোবিহীন দরিদ্র হইয়া পড়িয়াছে। সেই জন্যই আধুনিক “বড়লোক”দিগের নিকটে ভিক্ষুক বলিয়া গণ্য হইতেছে। যাহীরা পূর্বে ভৃত্য ছিল, কালপ্রভাবে তাহারা প্রভূ হইয়া ফীঁড়াইয়াছে। আর খফাঁহারা প্রভু ছিলেন, তাহাদের সন্তানগণ আজ তাহাদের ভৃত্য হইয়৷ পড়িয়া- ছেন। ইহা কালের কুটিল! বিচিত্রা গতি !! মহঙ্ি বাজ্ঞবন্ধ্য নানাশ্বান্ত্রে মহাপপ্ডিত ছিলেন। তিনি তাহার প্রিয়তমা পতী মৈত্রেয়ীকে অত্যন্ত ভালবামিতের্ন। মৈত্রেম়ীকে বিবাহ করিবার পর হইতেই তিনি তীহাঁকে বহু আধ্যাত্মিক তত্বশান্ত্র শিক্ষা দিতে আরস্ত করেন। পূর্বকালে পতি বিবাহের পর পত্ীকে গৃহে আনয়ন করিয়াই শান্ত্রশিক্ষা দিতে আরস্ত করিতেন। পত্তির নিকটে পত্তীর অধ্যয়নের ষবেরূপ সুবিধা ঘটে, এরপ স্ত্ুবিধা আর কাহারও নিকটে ঘটে না। মৈত্রেী মুক্তিতত্ব-শান্ত্রে অসাধারণ বিদুষী ছিলেন। তীহার শান্তর বুঝিবার ও বিচার করিবার প্রণালী অতি উত্তম ছিল। তিনি কোন বিষয় যতক্ষণ উত্তমরূপে না বুঝিতেন, ততক্ষণ কিছুতেই বিরত হইতেন না, কিন্বা “হ'” দিয়া “সায়” দিতেন না। শীন্দরচর্চা় পতি ও পতী সাই রত থাকিতেন। গৃহকর্, নিতে. জন্য, আমে লোকের অভাব ছিল না। ৃ ॥ অধ্যয়ন ও (৭৮ ) অধ্যাপনে তাহাদের কোনরূপ বিদ্ধ উপস্থিত হইত না। একদিন মহধি যাজ্জবন্থ্যের হঠাৎ সংসারে বৈরাগ্য উপস্থিত হওয়ায় তিনি গৃহত্যাগ করিয়া সন্ন্যাসী হইতে ইচ্ছুক হইয়া- ছিলেন। বেদও বলিয়া থাকেন যে, “যে দিনে যে মুহূর্তে সংসারে সহসা বৈরাগ্য উপস্থিত হইবে, সেই মুহুর্তেই সন্ন্যাস গ্রহণ করিবে |” তাই সে দিন মহষি বাজ্ঞবন্কোর পুর্ণ বৈরাগ্য উদ্দিত হইয়াছিল বলিয়া সেই দিনই তিনি মৈত্রেয়ীর নিকটে তাহার সন্ন্যাস-গ্রহণের ্রস্তার উথথাপিত করিয়াছিলেন এবং প্রস্তাবানুযায়ী কার্ধ্য করিতে সচে্উ হইয়াছিলেন। তিনি তাহার সম্পত্তি ভাগ করিয়া মৈত্রেয়ী ও কাত্যায়নীকে সমভাবে প্রদান করিবেন এবং পরে গৃহত্যাগ করিয়া সন্ন্যাসী হইবেন, এই কথা শুনিয়া মহাপপ্ডিতা মৈত্রেয়ী তাহাকে বলিলেন ৪-- “হে প্রিয়তম স্বামিন্, বিবিধ ধনরত্বাদি-পুর্ণ সসাগরা সমগ্র পৃথিবীকে লাভ করিলেও আমার অভীষ্টসিদ্ধি হইবে না। আমি যদি সমগ্র পৃথিবীরও অধীশ্বরী হইতাম, তথাপিও আমার মহাভিলাষ পূর্ণ হইত না। আমি আগনার গো- থবর্ণ-গৃহ-ক্ষেত্রা্দি ধন লইয়া কি করিব? লক্ষ'লঙ্ষ মুদ্রা ব্যয়ে অশ্বমেধাদদি যজ্ঞ করিয়! তজ্জনিত পুণ্যবলে স্বর্গে গমন করিলেও আমার অভীষ্ট সিদ্ধ হইবে না। কারণ, সেই পুণ্যের ক্ষয় হইলেই পুনরায় মর্তলোকে পতন হইয়! থাকে । সুতরাং আমার অভীষ্ট সিদ্ধ হইবে কিরূপে ? (৭৯ ) আমি অমর হইতে চাই। আমি অম্ৃতত্বপ্রার্থিনী নারী। আমি নির্ববাণমুক্তির অভিলাধিণী। পৃথিবীলোক, অন্তরীক্ষ- লোক বা জ্যোতির্লোক এবং স্বর্গলোকেও আমার অভিলাষ পূর্ণ হইবে না। আমি সত্যলোক, জ্ঞান- লোক, আনন্দলোক বা অমৃতলোকে যাইতে ইচ্ছুক। সকল লোকের উপরে এই লোক। এই মহালোককে আশ্রয় করিয়াই অন্যান লোক থাকে । লক্ষ লক্ষ মুদ্রা- বায়ে ইহা লব্ধ হয়*না। এই লোক প্রাপ্ত হইলে মানুষ, আর এই মর্ভলোকে ফিরিয়া আইসে না। নশ্বর রত, সুবর্ণ, গো, গৃহ, শস্য, ক্ষেত্র ও যানবাহনাদি বস্তু উপভোগ করিবার জন্য পুনরায় লালয়িত হয় না। নুতরাং হে ভগবন্‌ স্বামিন, আমি আপনার নশ্বর স্থৃবর্ণ, রত, ক্ষৌমবন্র, গো, গৃহ ও শম্যক্ষেত্রাদি বস্তু লইয়া কি করিব? এই সমস্ত বস্তব আমাকে অস্বতলোকে লইয়া যাইতে পারিবে না। এই সমস্ত বস্তুর উপভোগে আসক্ত থাকিলে অমর হইতে পারিব না। অপার অম্বৃত-সাগরে বিলীন হইতে পারি না। *আপনার এই সমস্ত ধন লাভ করিয়া কিন্বা ধনব্যয়সাধ্য "অশ্বমেধযজ্্ত করিয়া অস্ৃতত্ব লাভ করিতে পারিব'কি ?” যাজ্জবন্ক্য বলিলেন, “না, এই বিশাল পৃথিবী- সাম্রাজ্য লাভ করিলেও মুক্তি লাভ করিয়া অমর হইতে পারিবে না। এমন কি, অশ্বমেধযজ্ঞ করিয়া স্বর্গে গমন করিলেও, মুক্তি লাভ করিতে পারিধে না'। তবে এই $১:8৪৮..1 সকল নশ্বর ধন লাভ করিয়া এইমাত্র ফল হুইকে যে, পু, কলব্র, ভূত্য, অট্রালিকা, স্বর্ণ, রৌপ্য, রত্ব, শস্যাক্ষেত্র, নানাবিধ যান, হস্তিঘোটকাদি বাহন সমুহ, উত্তমোত্তম ঘত- হুগ্ধ-্ীরাদি-বস্ত-প্রদায়িনী বু ধেনু এবং অন্যান্য বহুবিধ স্থখোপকরণ পদার্থ সকল উপভোগ করিয়া ষেমন ধনবান্‌ ব্যক্তির জীবনযাত্রা সুখে স্বচ্ছন্দ নির্ববাহিত হয়, তদ্রপ তোমারও জীবনযাত্রা সুখে স্বচ্ছন্ৰে নির্ববাহিত হইবে, এই- মাত্র সামান্য লাভ। নতুবা বিশেষ একট! কিছু নৃতন অপুর্ব ফললাভ হইবে না। দরিদ্র কিম্বা মধ্যমবিস্ত ব্যক্তির জীবনযাত্রা অপেক্ষা তোমার জীবনযাত্রা অধিকতর সখস্থচ্ছন্দভাবে নির্ববাহিত হইবে। এইমাত্র বিশেষ এইমাত্র লাভ। নতুবা মরণান্তে দরিদ্র ও মধ্যমবিভ্ত ব্যক্তির যে দশা হইবে, তোমারও সেই দশা! হইবে । তাহা- দিগকেও পুনরায় জন্মিতে হইবে এৰং পুনরায় মরিতে হইবে, তোমাকেও পুনরায় জন্মিতে হইবে এবং পুনরায় মরিতে হইবে । এই জঙ্ম-মরণ-প্রবন্ধ একেবারে ঘুচিবে না। দরিদ্র ও মধ্যমবিত্ত ব্যক্তির সুখস্থচ্ছন্দতায় যেরূপ দুঃখ-সম্পর্ক আছে, তজপ ধনবান্‌ ব্যক্তির সুখন্বচ্ছন্দতাও হুঃখসম্পূক্ত | তবে যাহার! দারিজ্রয-ছুঃখ-সস্ভারে প্রগীড়িত, তাহাদের জীবনযাত্র! অপেক্ষা তোমার জীবনযাত্রা উৎকৃষ্টরূপে নির্ববাহিত হইবে। এইমাত্র তোমার লাভ হইবে। নতুঝ! তাহাতে মুক্তিপ্রাপ্তির কিছুমাত্র আশ! নাই।” (৮১) সাধ বিদুধী মৈত্রেয়ী পতি মহধি যাজ্জবন্ধ্যের এই প্রকার বাক্য সকল শ্রবণ করিয়৷ বলিলেন, “হে প্রিয়তম স্বামিন্, যে সকল বস্তু দ্বারা আমার মোক্ষলাভ হইবে না, আমি অমর হইতে পারিব না, ক্রমাগত জন্ম-মরণ-চক্রে সন্বদ্ধ হইয়। ঘূর্ণিত হইতি থাকিব, কোন কালেই এই চক্রের নিকট হইতে অব্যাহতি লাভ করিতে পারিবু না, তাঁদুশ বিষয় সকল লইয়া আমি কি করিব? আমার অভীষ্ট ত তাহাতে সিদ্ধ হইবে না। অতএব প্রিয়তম, আপনি যাহা ভাল বলিয়া বুঝেন, তাহাই আমাকে উপদেশ করুন। যে উপায় অবলম্বন করিলে, যে বস্তু পাই'লে মুক্তিলাভ করিতে পারি, পরমাত্মা পরমেশ্ীরে বিলীন হইতে পারি, জন্ম-মরণ-চক্র ছিন্ন-ভিন্ন করিতে পারি, সেই উপায় আমাকে বলিয়া দিন।” বিদ্ুষী প্রিয়তমা পততী মৈত্রেয়ীর ঈদৃশ মহাসন্তোষজনক বাক্য শ্রবণ করিয়া মহধি যাজভ্বন্ষ্য মহাগ্রীত হইলেন এবং প্রিয়বা্দিনী প্রিয়াকে বলিলেন, “হে মৈত্রেয়ি, তুমি ইতঃপুর্বব হইতেই যেমন আম্মুর প্রিয়কারিণী ও প্রিয়বাদিনী হইয়। প্রিয়া নামের সার্থকতা! সম্পাদন করিয়াছ, তন্রপ এক্ষণেও আমর চিত্তবৃত্তির অনুকূলা হইয়। স্থমধুর বচনবিষ্যাসে আমার অমীম আনন্দবদ্ধন করিয়াছ। আমি তোমার মনের অভিপ্রায় শুনিয়৷ অতিশয় আনন্দিত হইলাম । অতএব নিকটে এস, বস, আমি তোম়ার অভীষ্ট ও পুষ্ট (৮২ ) বিষয় স্থুস্পষ্ট ব্যাখ্যা করিয়! তোমাকে বুঝাইয়া দিতেছি । আমি যাহা বলিতেছি, তাহা একাগ্রচিত্তে শ্রবণ কর। এই নশ্বর জগতে পত্রী পতির অভিলাষসিদ্ধির জন্য পতিকে ভালবাসে না, কিন্তু নিজের অভিলাষ ' পুর্ণ করিবার জন্যই পতিকে ভালবাসিয়া থাকে । যে পতি, যে পত্ীর সকল কামনা পুর্ণ করিতে পারে না, সে পত্ী সে পির উপরে তত সন্তুষ্ট থাকে না এবং সেই জন্যই সংসারে দাম্পত্য-কলহ উৎপন্ন হয়। পতি পত়্ীর কামনা সকল পুর্ণ করিবার জন্যই এ সংসারে পত্তীকে ভালবাসে না, কিন্তু নিজ আত্মার বাসনা পরিতৃপ্ত করিবার জন্যই পত়্ীকে ভালবাসিয়া থাকে। অর্থাৎ.পত্ভী রত্বালঙ্কারে ভূষিত হইয়া যে আনন্দ অনুভব করেন, নিঃস্বার্থভাবে সেই আনন্দ উত্পাদন করিবার জন্যই যে, পতি পত্তীকে ভাল- বালেন, তাহা নহে, কিন্তু এ প্রকার অলঙ্কার পাইয়া আনন্দিত হইলেই পত্রী পতিকে অপেক্ষাকৃত বেশী ভাল- বাঁসবেন, এই আশায় নিজের এই উদ্দেশ সিদ্ধ করিবার জন্যই, আত্মার এইরূপ তৃপ্তিসাধনের জন্যই পৃতি পত্বীকে এ সংসারে ভালবাসিয়া থাকে । পুজ্রের অভিলাষ পূর্ণ করিবার জন্যই কেবল পিতা পুক্রকে ভালবাসেন না, কেন্তু জীবিত অবস্থায় পুজ্ের সেবা ও পুজ্রের বশঃ-শ্রবণ-কামনায় এবং মরণের পর বংশরক্ষা ও জলপিগাদি কামনায় পিতা পুজ্রকে ভালবাসেন, সযত্বে প্রতিপালন করেন, ( ৮৩ ) সৎশিক্ষ! দেন এবং সতপথে পরিচালিত করেন। ভৃত্য অর্থসঞ্চয়, পুর্ববক স্বদেশে গিয়া: শস্যলাতার্থে ভূমিখণ্ড ক্রয় করুক, স্ত্ীপুজািপালনে সমর্থ হউক, উত্তম অবস্থা- পন্ন হউক, এইরূপ ইচ্ছা করিয়া নিঃম্বার্থভাবে এ জগতে কোন প্রভু কোন ভূঁত্কে ভালবাসে না, অন্ন-বন্ত্র ও কেতন দিয়া রাখে না, কিন্তু নিজের গৃহকর্ম্ম-সম্পাদননের নিমিত্ত এবং নিজের ও পরিবারবর্গের স্থুখশান্তির নিমিত্তই ভৃত্যকে ভ।লবামিয়! থাকে । কার্য্যসমর্থ ঘোটক ঘাসাদি বস্তু তক্ষণ করিয়া নিজের অভিলাষ পূর্ণ করুক, এইরপ নিস্বার্থভাবে কেহ কোন কার্ধযসমর্থ ঘোটককে কোন কাধ্য না করাইয়া ভালবাসিয়৷ স্বগৃহে প্রতিপালন করে না কিম্বা ঘোটকসেবায় নিযুক্ত ভূত্যন্বারা সাধারণের দুর্লভ অঙ্গমর্দনাদি সেবা করায় না, কোন প্রভু তজ্জন্য ব্যয়ভার বহন করে না, কিন্তু ঘোটক: প্রস্ভুকে বহন করিয়া কিছ্থা প্রভুর গাড়ী টানিয়া প্রভুর আত্মার তৃষ্তিসাধন করিবে ৰলিয়াই প্রভু ঘোটককে ভালবাসিয়া থাকে । এ জগতে লোক বাহ! যাহা ভালবাসে, নিঃম্থার্ঘভাবে তাহাদের কামনা! পুর্ণ করিবার জস্যই তাহাদিগকে ভাল” বাষে না, কিন্া নিজের আত্মার অভিলাষ, পূর্ণ করিধার জন্তই: তাহাদিগকে ভালকাসিয়া থাকে । এন ছি, যে বরন সাধু মহাকা- সদা রা গরোপকারে (৮৪) পরিতৃপ্তি হয় বলিয়া কর্তব্য অনুষ্ঠিত হইলে তাহাদের সান্তোয় উৎপন্ন হইবে বলিয়া তাহারা পরোপকারত্রতে দীক্ষিত হইয়া থাকেন। যে দিকেই যাও না কেন, দেখিতে পাইবে যে, আত্মার তৃপ্তিই গ্াকমাত্র চরম তৃপ্তি। এ জগতে কেহ আত্মাকে অতৃপ্ত রাখিতে ইচ্ছ। করে না। আত্মাকে পরিতৃপ্ত করিবার সামথ্য না থাকিলেও আত্মা অতৃপ্ত থাকুক, এই প্রকার কামনা কাহারও হয় না। অতএব আত্মাই সর্বাপেক্ষা প্রিয়তম পদার্থ। এই আত্মাই অতি প্রিয় বস্তু বলিয়া অন্যান্য পদার্থ প্রিয় বলিয়া বোধ হয়। অতএব হে প্রিয়তমে 'ৈত্রেয়ি, এই প্রিয়তম আত্াকে দর্শন করা, গুরু ও বেদান্ত হইতে আত্মতত্ববিষয়ক মহোপদেশবাকা শ্রবণ করা এবং শ্রবণান্তর ইহার বিরুদ্ধ কুতর্কজাল ছিন্ন- তির করিয়৷ সৎ ও অনুকূল তর্কদবারা স্থিরসিদ্ধান্ত করা উচিত। গুরূপদিষ্ট ও বেদবান্ত-উপনিষড কর্তৃক প্রদর্শিত এই আত্মতত্ব দৃঢ়রূপে স্থিরীকৃত ও সিদ্ধান্তিত হইলে পর একাগ্রচিন্তে নিষ্কামভাবে ইহার ধ্যান করিতে হয়। আত্ম- বিষয়ক দর্শন, শ্রাবণ, মনন ও ধ্যান স্ুসম্পাদিত হইলে পর' সাধকের ভেদদৃষ্টি বিলুপ্ত হইয়া যাঁয়। সকলের প্রতি সমদৃষ্টি আসিয়া উপস্থিত হয়। লোকের আত্মজ্ঞান যতক্ষণ স্থুসিদ্ধ, না হয়, ততক্ষণ ভেদদৃষ্টি বা দৈতভাক. থাকে। হে প্রিয়তমে, সমদৃষ্টি জন্মিলে ইনি ব্রাক্ষণ, ইনি (৮৫) ক্ষত্রিয় ইনি বৈশ্ব, ইনি শুত্র এইকূপ জাতিভেদজ্ঞান থাকে না। তখন ইহা পৃথিবীলোক, ইহা জ্যোতির্লোক, তাহার উপরে স্বর্গলোক এইরূপ লোকতেদজ্ঞান থাকে না। তখন সেই স্বর্গলোকে উর্বশী, মেনকা প্রভৃতি অনিববচনীয়া সুন্দরী বর্গনারী, অমৃতের হুদ, নন্দনকানন ও ফল্পবৃক্ষ প্রভৃতি পদার্থে ভেদদৃষ্টি থাকে না। তখন মনুষ্য, যক্ষ, গন্ধর্বব, কিন্নর প্রভৃতি লোকে পার্থক্যজ্ঞান বিলুপ্ত হইয়া যায়, তখন সমস্তই আত্মময় হইয়া যায়। আত্বময় বলিয়া বোধ হয়। তখন একমাত্র জ্ঞানময়' আনন্দময় নিত্য আত্মার অস্তিত্ব ব্যতিরেকে অন্য বন্তুর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব অনুভূত হয় না। তখন সর্ববব্যাগী, সর্ববজ, সর্শক্তিসম্পন্ন, পরমাত্মা পরমেশ্বর হইতে ভিন্ন কোন জাগতিক নশ্বর বস্তই বস্তৃত্বর্ূপে লক্ষিত হয় না। তখন এই নশ্বর মায়ীময় কল্লিত মিথ্যাভৃত ভূমগুলের স্বত্ অস্তিত্ব অনুভূত হয় না। পরমাত্মার অস্তিত্বেই ইহার অস্তিত্বের অবভাদ হয় মাত্র। নতুবা বাস্তবিক ইহার কোন স্বতন্ত্র অস্তিত্বই নাই। যেমন আর্দ্র কাষ্ঠের অগ্নি প্রজুলিত হইলে তাহা হইতে ধুম ও স্ফ,লিক্স-পদার্ঘ পৃথক্‌ পৃথকৃরূপে বিনির্গত হয়” তত্্রপ, অয়ি প্রিয়তমে মত্রেয়ি, মহামহিম নিত্যপুদ্ধ' নিত্যজানময় নিত্যমুক্ত এক ও অদ্বিতীয় পরমাত্মা পরমেশ্বর হইতে অযন্রদাধ্য নিংশ্বাস- প্রশ্বাসক্ররিয়ার গ্যায় খাথেন, যজ্ুরবেবদ, সামাবেদ, অথর্ববেদ, ॥ ৮৬) ইতিহাস, পুরাণ, শ্লোক, সূত্র, ব্যাখ্যা এবং ত্বনুব্যাখ্যা প্রভৃতি বিনির্গত: হইয়াছে । নিঃশ্বাসপ্রশ্বীসক্রিয়া যেমন অনায়াসে সম্পন্ন হয়, তন্িমিত্ত প্রাণিগণকে যেমন স্বতন্ত্র চেষ্টা করিতে হয় না, তদ্রপ খখেদাদি 'শান্্রসমূহ এবং আকাশ, বাঁয়ু, অগ্নি, জল, পৃথিবী, 'মনুষ্য, পণ্ড, পক্ষী, কীট, পতঙ্গ প্রভৃতি উৎপন্ন হইয়াছে । ইহা তীহার অযত্ন প্রসূত কাধ্য । এতন্নিমিত্ত তাহাকে কোনরূপ ক্লেশ বা আয়াস বা যত্ব করিতে হয় নাই। তিনি বিজ্ঞানঘন, তাহার বস্তৃতঃ ভিতর-বাহির না! থাকিলেও লৌকিক বোধার্থ বলিতে হইবে যে, তাহার ভিতরেও বিজ্ঞান, বাহিরেও বিজ্ঞান। মিশ্রিখণ্ড বা লবণশিলা যেমন ভিতরে ও বাহিরে সকল অংশেই মিষ্ট বা লবণময়, তক্রপ আত্মাও বিজ্ঞান- ঘন অর্থাৎ বিজ্ঞানেরই একটি সর্ববব্যাপী জমাট পদার্থ । বিজ্ঞনময় ও নাঁমরূপবর্জিত। জাগতিক বস্তুর ন্যায় তিনি নামরূপযুক্ত নহেন। যেমন সৈম্ধাব-শিলাখণ্ডের অগ্র-পশ্চৎ তিতর-বাহির সকল ভাগই লবণ-রসময়, যেমন তষার- খণ্ডের সকল ভাগই শীতল, তত্রপ আত্মাও বিজ্ঞানময় বা বিজ্ঞানঘন পদার্থ। মৈত্রেয়ী যাজ্ঞবহ্থ্যের এই সকল সারগর্ভ অুতময় উপদেশবাক্য শ্রবণে প্রবোধ শ্প্রাপ্ত হইয়া পুনর্ববার জিজ্ঞাসা করিলেন, “ছে প্রিয়তম প্রভো ৷ আপনার উপদ্বেশের এই অংশটুকুই আমি ' বুঝিতে পারিলাম'ন! |. এরু পরমাত্া,পরমেশ্বর বা ব্রন্দে স্তগত্ব, ( ৮৭ ) নিগুণত্ব, স্থষ্টিকর্তৃত্ব ও উদ্াসীনত্ব, সক্রিয়ত্ব ও নিক্ছিয়ত প্রভৃতি বিরুদ্ধধন্দ সকল এক পদার্থে কি প্রকারে সমাবেশিত হইতে পারে? আপনি পরমেশ্বরকে নিত্যমুক্ত পুরুষ বলিয়াছেন, কিন্তু যিনি মুক্তপুরুষ, তাহাতে ইচ্ছাদি কোন গুণই তো থাকিঠত পারে না । যাহার ইচ্ছা, চেষ্টা, বসব, ক্রিয়। প্রভৃতি সমস্ত পদার্থ লুপ্ত হইয়াছে, তিনিই মুক্তপুরুষ। পরমেশ্বর যখন বিশ্বপদার্থ স্ষ্টি করিয়াছেন, তখন নিশ্চয়ই "তাহার ইচ্ছা আছে, চেষ্টা আছে, ক্রিয়া আছে। ইচ্ছা, চেষ্টা এবং ক্রিয়া বিনা কখনই কুত্রাি কেহ কোন বস্তু নিন্মাণ করিতে পারে না। যিনি জগৎ- ষ্টা, তিনি উদ্দাসীনই বা কিরূপে হইতে পাঁরেন ? যিনি সগ্ুণ, তিনি নিগুণই বা কিরূপে হইতে পারেন ? কারণ, ইহারা পরস্পর বিরুদ্ধধন্্। আলোক ও অন্ধকারের ন্যায় অত্যন্ত বিরুদ্ধন্বভাবাপন্ন। উষ্ণত্ব ও শীতলত্বরূপ বিরুদ্ধধন্ম যেমন অগ্রিতে থাকিতে পারে না, তত্রপ নিগুণত্ব ও সগ্ুণত্বও একপদার্থে থাকিতে পারে না। আপনি একবার খত্মাকে বিজ্ঞানময় নামে অভিহিত করিয়াছেন। পুনশ্চ তাহাকেই আবার নামরূপরহিত বলিগ্মা বিশেধিত করিতেছেন। যিনি নামরহিত, তিনি ফোন নাম দ্বারা কোন প্রকারেই'বিশেষিত হইতে পারেন না। 'অগ্রি যেমন উ্ত্ব ও শীততবরূপ বিরুদ্ধ ধর্মের আত্রয় হইতে পারে না; তজপ এক আত্মাও, বিরুদ্ধ (৮৮ ) ধর্মবিশিষ্ট হইতে পারেন না । এই এক অদ্বিতীয় পরমাত্বা কি প্রকারে পরস্পর বিরুদ্ধ ধন্মের আশ্রয় হইতে পারেন? হে প্রিয়তম স্বামিন্, আপনি অনুগ্রহ পূর্বক আমার এই সন্দেহ ও ভ্রান্তি দূর করিয়া দিন।” * মহধি যাজ্জবন্ধয মৈত্রেয়ীর এই কথা শুনিয়া বল্লিলেন, “অয়ি প্রিয়তমে, আমি সন্দেহভ্রান্তিজনক কোন কথাই বলি নাই, আমি সকল কথাই সত্য বলিয়াছি। নামরূপবর্ভিত পরমা ত্ব(কে বিজ্ঞানময় বা বিজ্ঞানঘন পদে অভিহিত করাতে তুমি যে বিরুদ্ধ ধন্মের আবেশ হইতেছে বলিয়া আশঙ্কা করিতেছ, তাহা বুথ! আশঙ্ক।। কারণ, আমি এক পদার্থের উপরে কখনও বিরুদ্ধ ধন্ম্ের সমাবেশ করি নাই। তুমি নিজেই এক পদার্থে বিরুদ্ধ ধন্মের সমাবেশ বুঝিয়া স্বয়ং ভ্রান্তি- জালে পতিত হইয়াছ। তোমাকে এইবার উত্তমরূপে বুঝাইয়া দিতেছি। মনোযোগ দিয়া শুন। অভ্ভ্ঞান বা অবিদ্যা বা মায়া ঝ৷ ভ্রান্তি নিবন্ধন যখন আত্মা দেহ ও ইন্দ্রিয়াদির সহিত সম্বদ্ধ হইয়া নিজের সতস্বরূপতা, জ্ঞান- স্বরূপতা ও আনন্দস্বরূপতা ভুলিয়া গিয়] শরীর ও ইন্ড্িয়াদির সহিত একীভাবাপন্ন হইয়া যান এবং শরীরের ও ইন্দরিয়া্দির ধর্দরকে নিজের ধন্দ বলিয়া মনে ক্রেন, তখন তিনি জীবাত্মা বলিয়া অভিহিত হয়েন। তখন তিনি নিজেকে শ্রীরম্বরূপ ও ইন্দ্রিয়াদিন্বরূপ বলিয়া বোধ করেন। প্রবল মুঁয়া বা অবিদ্যা বা অজ্ঞান বা ভ্রান্তি- (৮৯ ) পদাষই এটুরূপ বোধের মূল কারণ এবং সেই জম্যাই এই আত্মা তখন নিজেকে আমি স্থূল, আমি কৃশ, আমি গৌর, আমি কৃষ্ণ) আমি অন্ধ, আমি বধির, আমি মুক, আমি পঙ্গু এইরূপ মনে করে। স্থুলত্ব, কৃশত্ব, কৃষ্ণত্ব ও গৌরত্বাদি পদার্থ শরীরের ধশ্ম এবং অন্ধত্ব, বধিরত্ব, মুকত্ব ও পঙ্গৃত্বাদি ইন্দিয়গণের ধন্ন। আত্মা, প্রবল অজ্ঞানবশতঃ শরীর ও ইন্জ্রিয়াদির সহিত এক হইয়া যায় বলিয়া তখন শরীরের ধর্ম ও ইন্দ্িয়ের ধর্মকে নিজেতে বৃথা আরোপিত করিয়া লয়। বস্তুতঃ আত্মা শরীর বা ইন্ড্রিয়স্বরূপ নয়। আত্মা সংস্বরূপ, জ্ঞান-স্বরূপ, আনন্দস্বরূপ। স্থুলত্াদি শরারধম্ম এবং অন্ধত্াদি ইন্দ্রিয়ধন্ম, বাস্তবিক পক্ষে তাহাতে থাকে না। যে যাহার ধর্ম, সে তাহাতেই থাকে । জড়ের ধন জড়েতে থাকে এবং শরীরের ধর্ম শরীরে থাকে । জম্মজন্মার্ডিজিত অভ্ঞানবশতঃ চেতন, নিজেকে জড় বলিয়া মনে করে এবং জড়ের ধর্মকে নিজের ধন্ম বলিয়া মনে করে। যেমন চক্ষু রোগবশতঃ গীত হইয়া ঠেলে মানুষ, শুভ্রবর্ণ শঙ্খকেও পীতরূপ দেখে, যেমন সে দূরত্বাদি হেতু বা নেত্রের কোন দোষ হেতু “ঝিনুক্'কে রৌপ্যখণ্ড বলিয়া মনে করে, যেমন অন্ধকার ও অসাবধানতাবশতঃ মানুষ, পথে পতিত রজ্জবকে সর্প মনে করিয়! ভ্রান্ত হয়, তত্রপ মনুষ্য, জন্মঙ্ন্সার্জিত প্রবল অজ্জানের প্রভাবে বখন বিমোহিত হয়, তখন তাহার ( ৯৪ ) আত্মা, জীবাতা। বলিয়া অভিহিত হয়। তগ্নন সেষঈ জীবাতবা জড়ের অধীন হইয়! গিয়া! নিজের প্রকৃতম্বরূপ ভুলিয়া যায় এবং জড়ের ধর্মমগুলি নিজেতে আরোপিত করিয়া লয় মাত্র। জড়ের ধন্ম তাহাতে বস্তুতঃ সংলগ্ন হইয়া যায় না। যাবংকাল পর্য্যন্ত আত্মার প্রকৃত স্বরূপের বোধ হয় না, যতক্ষণ বিজ্ঞান বা ব্রঙ্গবিদ্যার উদ্দ্রল আলোক উদিত না হয়, তাবশকাঁল পর্যন্ত 'এই অজ্ঞানরূপ অন্ধকার হৃদয়গহবর হইতে বিদুরিত হয় না। তাবগকাল পর্যান্ত ভ্রান্তি-সাগর-স্বরূপ এই সংসারে মানুষকে জন্মিতে হইবে ও মরিতে হইবে । ব্রহ্মবিজ্ঞানের পূর্ণ উজ্জ্বল আলোক উদ্দিত হইলেই মানুষের হৃদয়-গ্রন্থির ভেদ ও সকল সন্দেহের ছেদ হইয়া যায় এবং সকল কর্মের ক্ষয় হইয়া যায়। তখন মানুষের ছুঃখময় জীবাত্মা, বিজ্ঞান ও আনন্দের অপার মহাসমুদ্রন্বরূপ, নিত্যগুদ্ধ, এক, অদ্ধিতীয়, চৈতন্যময়, সর্বব্যাপী, সর্ববশক্তি, পরমাতু। পরব্রহ্ম পরমেশ্বরে বিলীন হইয়া যাইবে। তখন ক্ষুদ্র পুষ্করিণীর জল বা নদীর জল সাগর্জলে মিশিয়। যাইবে | এই জীবাত্মার সহিত পরমাত্মার একীভাব হওয়া বা জীবাতা! পরমাতন(তে বিলীন হইয়া এক হওয়াই মোক্ষ বা কৈবল্য। আত্মা! একই পদার্থ। জাবাত! বলিয়৷ স্বতন্ত্র একট! পদার্থ নাই। এই আত্মাই মায়ার সহিত সন্বদ্ধ. হইলেই সগুণ হইয়া জগত স্থ্টি করেন! ( ৯১ ) কাড়ে সহিত সম্বদ্ধ হুইয়! নিজের প্রকৃত নিগুণ বা তুরীফ রূপতা ভুলিয়া গিয়া মায়া-সম্বদ্ধ হইয়া সৃষ্টিকার্ষ্যে রত হইয়া পড়েন। যখন স্ৃষ্টিকার্য্ে বিরত হয়েন, তখন স্বন্বরূপে অবাস্থত হয়েন। নিজের প্রকৃতস্বরূপে অবস্থিত হইলেই পুর্ণ ৰা তুরীয় বলিয়া কথিত হয়েন, ইহাই আধার নিগুণাবস্থা। এই পরমাত্মা এক অদ্ধিতীয় পদার্থ । অজ্ভ্বানবশতঃ মানুষ দুই বলিয়া মনে করে । তীহার অস্তিত্বই বাস্তব জড়ের অস্তিত্ব ব্যবহারিক ও কল্লনা- মাত্র। মানুষ মুক্ত হইলেই সেই তুরীয় পদার্থে লীন হইয়া যায়। উহাতে বিলীন হইলে মানুষ আর জন্মে*না ও মরে না। নশ্বর কল্পনাময় ,ভূমগ্ডল তখন আত্মময় বলিয়া বোধ হয়। তখন অন্য জড় বস্তুর বস্তৃত্বই অনুভূত হয় না। ধনরতুগৃহাদি জড়পদার্থের সত্তা ব্যবহারিক সত্বামাত্র। ইহাদের পারমার্থিক সত্তা নাই। এক অদ্বিতীয় পরমাতা পরমেশ্বরই পরম সৎপদার্থ। ব্রহ্মাবিদ্যার উজ্দ্বল আলোক উদ্দিত হইলে ভেদবুদ্ধি বিনষ্ট হইয়া যায়। তখন আত্মা নিজের প্রকুতম্বরূপে অবস্থিত হয়েন। যতকাল মানব- হৃদয় অজ্ঞ্ানু-মন্ধকারে আচ্ছন্ন থাকে, ততকাল ভিন্ন ভিন্ন নাম ৪ ভিন্ন ভিন্ন আফতির স্বতন্ত্র স্বতন্্ অস্তিত্ব অগ্ুভৃত হয়। যেমন জলাধার বিনষ্ট হইলে ন্্রসূর্যযাদির প্রতিবিষ্বমাত্র বিনষ্ট হয়, কিন্ত চন্দ্সূরযযাদির বিনাশ হয় না, তক্রুপ শরীর ও ইন্দ্রিয়প জ্সাবরণ বা "উপাধি, ( ৯২ ) বিনষ্ট হইলে বিজ্ঞানস্বপ আনন্দম্বরপ নিতাম্বকপ আত্মার বিনাশ হয় না। নশ্বর ভৌতিক আবরণ বিনষ্ট হইলে পরমাত্মা হইতে অভিন্ন জীবাত্মাও বিনষ্ট হয় না, কেবলমাত্র তাহার জৈবভাবটি অপস্থত হইয়া ষায়। পরমাত্ববিজ্ঞানই সর্বব-শ্রেয়ন্কর।' এই পরমাতু-বিজ্ঞান ব্যতিরেকে অজ্ঞান, কুসংস্কার, ভ্রম ও সন্দেহ এবং নানাবিধ অকথ্য ছুঃখস্বরূপ নক্রকুস্তীরগনে পরিব্যাপ্ত, ছুস্তর সংসারসাগর উত্তীর্ণ হইবার অন্য কোন্ন উপায়ই নাই। পরমাত-বিজ্ঞানের উজ্জ্বল আলোক উদ্দিত হইলে ইনি ভ্রাতা, এটি জ্বেয় এবং ইহ! জ্ঞান, এই রূপ ত্রিত্বভাব থাকে ন। তখন এই ত্রিত্বভাব , একমাত্র নিত্যজ্ঞানস্বরূপে পর্যাবসিত হইয়া যায়। তখন ইনি নমস্ত, আমি নমস্কার- কর্ত! এবং ইহা নমস্কার, এইরূপ ত্রিত্ভাব থাকে না। তখন আমি ভ্রষ্টা, ইনি দৃশ্ট এবং ইহা দর্শনপদার্থ, এইবপ ত্রিত্বভাৰ থাকিবে না। তখন সমস্তই এক বলিয়া বোধ হইবে । যেমন অগ্নি দ্বারা অগ্নি দগ্ধ হয় না, যেমন প্রদীপ দ্বারা প্রদীপ প্রকাশিত হয় না, তজ্রপ জ্ঞানস্বরূপ প্রকাশন্বরূপ আত্মা, অন্য জ্ঞন দ্বারা প্রকাশিত হয়েন না। যে পদার্থ স্বপ্রকাশ বা স্বয়ং প্রকাশস্বরূপ, ন্তাহা' অন্ত প্রকাশের সাহাধ্যে প্রকাশিত হয় না। সূর্যকে প্রকাশিত করিবার জন্য অন্য সূর্ধ্যের প্রয়োজনই হয় না। অফ়্ি প্রিয়তমে, মৈত্রেয়ি, যিনি নিখিল ব্রহ্মাণ্ডের বিজ্ঞাতী) (৯৩ ) বা প্রকাশয়িতা, যিনি মানুষের বাক্য ও মনের অতীত, যখন মানুষ তৎস্বরূপ হইয়া যাইবে, যখন মানুষ মুক্ত হইয়া যাইবে, তখন তাহাকে কি উপায়ে জানিৰে ? তখন তাহার জ্ঞাতা অস্ত আর কেহ থাকে না। তখন একমাত্র নিত্য সর্ববব্যাপী সর্বশক্তি জ্ঞানময় মুক্ত পরমাত্মা বিদ্যমান থাকেন । মানুষ, জ্ঞান-বৈরাগা প্রভাবে মুক্ত হইয়। গেলে_- পরমেশ্বরে লীন হইয়া গেলে আর সে ভীষণছুঃখপ্রদ জন্মমরণচক্রে পুনুরায় ঘূর্ণিত হয় না। তখন তাহার এই চক্রঘূর্ণনদুঃখের আত্যন্তিক অবসান হয়।” মহষি যাজ্ভবন্ধ্যের এইরূপ অমূল্য উপদেশ প্রাপ্ত হইয়া সাধ্ধী মৈত্রেয়ী অত্যন্ত গ্রীতা হইলেন। পত্তির উপর্দেশ প্রভাবে পতীর জ্ঞান ও বৈরাগ্য উদিত হইল এবং সংসারে আসক্তি লুপ্ত হইয়া গেল। এইরূপে তিনি স্বামীর সহিত মুক্তির পথ অবলম্বন” করিয়াছিলেন । আমাদের যে ভারতে যে সময়ে স্বামী স্ত্রীকে ঈদৃক্রূপে সক্ষম পরমাততত্ব সহজভাবে উপদেশ করিতেন, আমাদের সে ভারতের সে দ্দিন চলিয়। গিয়াছে । পুনরায় যেন সেইন্প দিন আমরা দেখিতে পাই, ইহাই জ্ঞানময় পরমেশ্বরসমীপে আমাদের আস্তরিক প্রার্থ্। এক্ষণে ভারতে অনেকেই বুঝিতে পারিয়াছেন যে, স্ত্রীলোক লেখাপড়া শিখিলেই বিধবা হয় না, কিন্তু মৈত্রেয়ীর ন্যায় চিরজীবন সধবা থাকিয়া, স্বামীর সহিত মুক্তিপথাৰলম্দিনী হইতে পারে । ( ৯৪ ) গাগী। ূর্ববকালে এই পুণ্যভূমি ভারতবর্ষে এক মহাপণ্ডিত আধ্ধ্য-মহিলা জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। তাহার নাম গার্ী। ভাহার পিতার নাম মহধি বর, | সেই জন্য গার্গীর অপর নাম বাচরুবী। গার্গী বেদবেদান্ত ডগ্লীনিষদাদি শাস্ত্রে অসাধারণ বিদ্ধী ছিলেন বলিয়া তৎ- কালের মহধিগণ তীহাকে ব্রহ্গবাদিনী এই উপাধি দিয়াছিলেন। তিনি মহুধি যাঁজ্ভবন্থেরের ন্যায় মহাজ্ঞানী ব্যক্তির সহিত তর্কবিতর্ক করিতেও ভয় পাইতেন না। একদা মহষি যান্ড্ববৃন্ধ্যের সহিত তর্ক করিবার সময় গাগী বেরূপ অকুতোভয়তা, অসীম সাহস ও প্রতিভার পরিচয় দিয়াছিলেন, তাহা শুনিলে বিস্মিত হইতে হয়। শুনিতে পাওয়া যায়, মহধি যালজ্ভ্বন্থ্যের সহিত যখন তীহা'র শান্্র- বিচার হইয়াছিল, তখন তিনি যুবতী ছিলেন মাত্র । তখন তাঁহার বেশি বয়ঃক্রম হয় নাই। অল্প বয়সেই তিনি বেদান্ত, উপনিধৎ প্রভৃতি শান্ত্রপাঠ শেষ করিয়াছিলেন। তিনি যখন যে বিষয় লইয়া তর্কে প্রবৃত্ত ভইতেন, তখন সে বিষয়ে যতক্ষণ স্তুমীমাংসা ও স্থপিদ্ধান্ত না হইত, ততক্ষণ তিনি কোন ক্রমেই তাহ! ন| বুঝিয়া ছাড়িয়া দিতেন না। তীহার শান্জ্রীয় বিচরপ্রণালী অবলোকন করিয়া বড় বড়, খষিরাও স্তম্ভিত হইয়া যাইতেন। তিনি মহধিগণের সহিত, ঘোর তর্ক করিতেন বটে, কিন্তু কোন (৯৫ ) মহধির মর্যাদার হানি করিতেন না। তীহাদিগকে যথাবিধি প্রণাম করিতেন। বাহার যেরূপ প্রাপ্য সম্মান, তাহাকে সে সম্মান দিতে তিনি কখনই ত্রুটি করিতেন না । রৃহদারণ্যক উপনিষদের তৃতীয় অধ্যায়ের ষ্টব্রাহ্মণনামক অধ্যায়ে দেখিতে পাওয়! যায় যে, একদা ব্রচ্মবাদিনী গার্গী, মহর্ষি যাভ্ভ্বন্ধ্যকে জিজ্ঞাস! করিয়াছিলেন, “হে মহর্ষে, উপনিষ বলেন, সমস্ত পৃথিবী জলের উপরে প্রতিষিত। কারণ, পৃথিবী খনন; করিলেই যখন জল দেখিতে পাওয়া যায়, তখন স্ৃতরাং পৃথিবী জলের উপরেই নিঃসন্দেহে প্রতিঠিত। জল হইতেই পৃথিবী উৎপন্ন হইয়াছে! অতএব জলই পৃথিবীর উপাদ্োন-কারণ। কিন্ত্বী মহষে, এই জল কাহার উপরে ওতপ্রোতভাবে অবস্থিত ? অনুগ্রহ করিয়। বলিবেন কি ?? মহধি বলিলেন, '“জল, বায়ুর উপরে ওতপ্রোতিভাবে অবস্থিত। কারণ, বায়ুই জলের উপাদান-কারণ।” গার্গী পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন, বায়ু কাহার উপরে ওতপ্রোতভাবে অবস্থিত ? মহষি বলিলেন, “্রাযুঞ্জস্তীক্ষে (আকাশে ) ওতপ্রোতভাকে অবস্থিত 1৮ , ৪, গার্গী।* অন্তরীক্ষ কাহার উপরে অবস্থিত ? মহষি। অন্তযীক্ষলোক গন্ধরর্বলোকে অবস্থিত। গার্গী। ইন্ধরর্বলোক কোথায় অবস্থিত ? , মহবি-। . গন্করর্বলোক জাদিত্যলোকে অস্ত |. ( ৯৬ ) গাগী। আদিত্যলোক কাহার উপরে ওতপ্রোতভাবে অবস্থিত ? মহষি। আদিত্যলোক চন্দ্রলোকের উপরে অবস্থিত । গার্গী। চন্দ্রলোক কাহার উপরে অবস্থিত ? মহপ্ি। চন্দ্রলোক নক্ষত্রলোকের উপরে অবস্থিত। গা্গী। নক্ষত্রলোক কাহার উপরে অবস্থিত ? মহধি। নক্ষত্রলোক ইন্দ্রলোকের উপরে অবস্থিত । গার্গী। ইন্দ্রলোক কোথায় অবস্থিত ? মহধি। ইন্দ্রলোক প্রজাপতিলোকের উপরে প্রতিষ্ঠিত । গার্গী। প্রজাপতি লোক কাহার উপরে প্রতিষ্ঠিত? মহষি। প্রজাপতিলোক ব্রক্মণলাকের উপরে প্রতিষ্ঠিত । গার্গী। ব্রহ্মলোক কাহার উপরে প্রতিষ্ঠিত? মহধি বলিলেন, “গার্গি! আর জিজ্ঞাস! করিও না। তুমি তোমার প্রশ্নের সীমা অতিক্রম করিয়া যাইতেছ। প্রশ্নের রীতি" অতিক্রম করিও না। শি ব্যক্তিদিগের সদাচারপরম্পরাক্রমে প্রশ্ন করিবার যে একটি নীতি নিরূপিত আছে, তদনুসারে প্রশ্ন কর। তুমি যে লোকের কথা জিত্ঞাস| করিতেছ, সেই ব্রক্মলোক-_-সেই সত্যলোক কাহারও উপরে প্রতিষ্ঠিত নহে। নিখিল ব্রহ্মাগুই তাহার উপরে প্রতিষ্ঠিত ও আশ্রিত। সেই ব্রঙ্গই সকল লোকের আশ্রয়দাতা। সেই ব্রহ্মলোককে ' আশ্রয় রুরিয়াই সকল লোক অবস্থিতি করে। আত্মজ্ঞানগম্য (৯৭ ) এবং উপনিষত্প্রমাণবোধ্য পদার্থকে কেবলমাত্র অমুমান- প্রমাণ দ্বারা বুঝা যায় না। অনুমান সেখানে পৌছিতেই পারে না । এই জন্য গীতায় ইহাকে “প্রত্যক্ষাবগ্ম” বলিয়া বর্ণনা করা হইয়াছে। ইহা অনুমানগম্য পদার্থ নয়। সেই ব্রহ্মলোক আনুমানিক প্রশ্মোত্তরের বিষয় নহে। অধ্যয়ন-অধ্যাপনাদি মহাতপশ্যাবলে মানুষ যদি নিজে তত্বজ্ঞানলাভ করিতে পারে, তাহা হইলে. সেই ব্যক্তিরই সূন্মমতম দুর্বেবাধয ব্রহ্মতত্বের প্রত্যক্ষ জ্ঞান হইতে পারে। কেবলমাত্র বাক্য দ্বারা তাহাকে বুঝান যায় না। তিনি সাধারণ বাক্য ও মনের অতীত । মহধির এইরূপ কথা শুনিয়া গার্গী সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসায় বিরত হইলেন এবং মহধিকে প্রণাম করিয়া স্বস্থানে প্রস্থান করিলেন। বৃহদারণ্যক উপনিষদের তৃতীয় অধ্যায়ের অষ্টম ব্রাঙ্মণে দেখিতে পাওয়া যায় যে, একদা ব্রক্মবাদিনী গার্গী মহবি যাভ্ভ্ধবন্ধ্যের নিকটে উপস্থিত হইয়া দেখিলেন, বেদান্ত, উপনিষৎ প্রভৃতি শাস্ত্রে মহাপগ্ডিত মহধিগণে পরিবেষ্টিত হইয়। মহত্ব যাজ্ৰবন্থ্য উপবিষ্ট আছেন। গার্গা তথায় উপস্থিত হইয়াই যথাবিধি সম্মান প্রদর্শনপূর্ববক মহধিগগণকে নিবেদন করিলেন, শহে পৃজ্যবিভ্ঞ মহধিগণ, আপনারা অনুগ্রহ পূর্ববক আমার সবিনয় নিবেদন শ্রবণ করুন। আপনার যদি কৃপাপূর্ববক আমাকে অনুমূতি করেন, তাহা হইলে আমি মহর্ষি বাজ্ঞবন্থ্যকে ছুইটি, প্রশ্ন করি। মহত্রি (৯৮ ) যাজ্জবন্থ্য যদি এ প্রশ্ন ছুইটির সছুত্তর প্রদান করিতে পারেন, তাহা হইলে' আপনারা নিশ্চয়ই জানিবেন যে, আপনাদিগের মধ্যে এমন কেহই নাই, যিনি মহধি যাজ্- বন্ধ্যকে শাস্্রবিচারে পরাজিত করিতে পারেন।” গাগীর এই কথা শুনিয়া মহধি যাজবন্ধ্য এবং অন্যান্য মহধিগণ গাগীকে “ন্বচ্ছন্দে জিজ্ঞাস! কর” এই অনুমতি প্রদান করিলেন। গার্গী বলিলেন, “হে মহধে, আমি আপনাকে দুইটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতেছি ।” নিজের প্রশ্ন ছুইটি বে বড়ই কঠিন, তাহা জানাইবার জন্য গার্গা দুইটি দৃষ্টান্ত দ্বার প্রশ্ন দুইটির কঠিনতা প্রথমতঃ বর্ণনা করিতে লাগিলেন । তিনি বলিঢলন, “হে মহর্ষে, এই ভূমগ্ডুলে অসীমশশরষ্যবীরধ্য সম্পন্ন ভীমপরাক্রম বারাণসীর মহারাজ এবং দৌর্দগু- প্রতাপশালী বীরশিরোমণি বিদেহদেশাধিপতি মহারাজ জনক, উভয়ে শীঘ্রসংহারক তীক্ষুবাণ লইয়া যেমন রণ- ক্ষেত্রে উপস্থিত হইয়াছিলেন, তদ্রপ আমিও তাদৃশ তীক্ষবাণম্বরূপ ছুইটি প্রম্ন লইয়া আপনার নিকটে উপস্থিত হইয়াছি।” মহধি যাঁজ্বন্ধ্য বলিলেন, “তোমার যাহা ইচ্ছা হয়, তাহা জিজ্ঞাসা করিতে পার” অনন্তর গার্গী জিজ্ঞাস! করিলেন, “হে মহর্ষে; এই ব্রঙ্গাণ্ডের উদ্ধ- দেশস্থিত ম্বর্গলোক, অধোদেশস্থিত মর্ত্যলোক এবং স্বর্গ ও মর্ত্যের মধ্যস্থিত অন্তরীক্ষলোকের মধ্যে যে দকল নশ্বর পদার্থ, অতীত বর্তমান ও তবিষ্যৎ কালের সহিত ( ৯৯ ) সম্বদ্ধ হইয়) যে সূত্রেতে একীন্তাবে অবস্থিত, সেই সু্রটি ওতপ্রোতভাবে কোথায় অবস্থিত ?; মহধি বলিলেন, “গার্গি, তুমি যাহা জিজ্ঞ।সা করিতেছ, তাহার উত্তর দিতেছি । মনোষোগ দিয়া শ্রবণ কর। এই ব্রহ্মাণ্ডের উদ্ধলোক স্বর্গে, মধ্যলোক অন্তরীক্ষে এবং অধোঁবন্তী মর্তলোকে যে সকল নশ্বর পদার্থ, ভূত-ভবিষ্যুৎ ও বর্তমান কালের সহিত সম্বদ্ধ হইয়া অবস্থিত আছে, উহাদের সমগ্রির নাম সুত্র। পৃথিবী যেমন জলের উপরে ওতপ্রোতভাবে অবস্থিত, তদ্রপ সেই অভিব্যক্তসুত্র পদার্থ ত্রিকালেই অনভিব্যক্ত আকাশে ওতপ্রোতভাবে অবস্থিত।” গার্গী এই উত্তর শ্রবণ করিয়া! বলিলেন যে, “হে মহর্ষে, যেহেতু, আপনি আমার কঠিন দুর্বিবজ্ঞেয় প্রশ্নের ছুর্বিবজ্ছেয় উত্তর দিতে পারিয়াছেন, সেই হেতু আমি আপনাকে প্রধীম করিলাম। অন্যান্য ব্রাহ্ষণ-পগ্ডিতগণ, মদুক্ত সূত্র-পদার্থটি কি? তাহাই সম্যক্বূপে বুঝিতে পারেন না, আর আগ্রনি প্রশ্ন শুনিবামাত্র ততক্ষণা এই সূত্রের আশ্রম্বুটিকে পর্যন্ত অবগত হইয়া যখন প্রশ্নের প্রকৃত উত্তর প্রদান করিলেন, তখন আমি আপনাকে প্রণাম না! করিয়া থাকিতে পারিলাম না। প্রথম প্রশ্নের সছুত্তর পাইয়া আমি আপনাকে প্রণাম করিলাম । এক্ষণে দ্বিতীয় প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করিতেছি। মনোযোগ দিয়া শ্রবণ করুম” (১৯৯) মহধি বলিলেন, “তুমি স্বচ্ছন্দে জিজ্ঞাসা কুর।” গার্গী জিজ্ঞাসা 'ফরিলেন, “হে মহর্ষে, স্বর্গলোক, অন্তরীক্ষলোক ও মর্ত্যলোকে যে যে নশ্বর পদার্থ অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎকালের সহিত সম্বদ্ধ হইয়! আছে, সেই পদার্থের সমষ্রিকে শাস্ত্রে সূত্র কহে। আপনি বলিয়াছেন, বস্তুসমস্টিস্বরূপ সেই সুত্র, অব্যাকৃত ও অনভিব্যক্ত আকাশে ওতপ্রোতভাবে অবস্থিত। এক্ষণে জিজ্ঞাস্য এই যে, সেই অনভিব্যস্ত আকাশের আশ্রয়টি কে? সেই আকাশ 'কাহার উপরে প্রতিষ্ঠিত? মহধি এই কঠিন প্রশ্নের উদ্ভম উত্তর দিতে পারিবেন না, এইরূপ মনে করিয়া গার্গী পুনরায় এই প্রশ্নটি আবৃত্তি করিলেন। মহষি আগ্রে প্রশ্নটিই উত্তমরূপে বুঝিয়া লউন, ভার পর উত্তর দিতে যেন চেষ্ট। করেন, এই অভিপ্রায়ে গার্গী প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করিয়াছিলেন । মহধি গা্গীর এই অভিপ্রায় বুঝিতে কারা কিন্তু তখন তদ্বিষয়ে কোন কথা ন! কহিয়া মহধি তৎক্ষণাৎ এ প্রশ্নের উত্তর দিতে আরন্ত করিলেন। তিনি বলিলেন, “হে গার্গি! প্রাচীন ব্রাহ্মণগণ বলেন, তিনিই এই অনভি- ব্যক্ত আকাশের আশ্রয়__্বাহার 'কোনকালেই ক্ষরণ বা ক্ষয় নাই বলিয়া যিনি অক্ষর বা অবিনাশী পরমেশ্বর, ধাহাকে প্রাচীন ্রা্মণগণ পরমাত্মা৷ পরমেশ্বর প্রস্তুতি নামে অভিহিত করেন।, ইহা প্রাচীন ব্রহ্মজ্ঞ ব্রাহ্মণদিগের ( ১৯১ ) কথা। শ্ত্রহা আমার মনঃকল্লিত কথা নয়। আমি কখনই কল্পিত বা অসত্য কথা বলি না। তুমি যে প্রশ্নটি দুইবার আবৃত্তি করিয়াছ, ইহাতে এই মনে হয় যে, আমি যেন ্রশ্নটিই আদৌ* উত্তমরূপে বুঝিতে পারি নাই। আমি তোমার প্রশ্ন উত্তমরূপে বুঝিতে পারিয়াছিলাম। প্রশ্নটি একবার আবৃত্তি করিলেই যথেষ্ট হইত । দুইবার আব্রত্তি করিবার কোন প্রয়োজনই ছিল না ।% গার্গী বলিলেন্ব, “আচ্ছা বেশ, বুঝিলাম যে, পরমাত্া পরমেশ্বরই সেই অনভিব্যস্ত আকাশের আশ্রয়। কিন্তু সেই পরমাত্মা! বা পরমেশ্বর কি প্রকার পদার্থ ? বিষদভাবে তাহার কিঞ্চিত স্বরূপ বর্ণন! রুরিয়া বুঝাইয়! দিন 1” মহধি বলিলেন, “সেই পরাতপর পরমপুরুষ পরমেশ্বর পর্রন্ম স্থলও নহেন: সুন্সনও নহেন, হুম্বও নহেন, দীর্ঘও নহেন, লোহিতও নহেন, পীতও নহেন, শুভ্রও নহেন, কৃষ্ণও নহেন, তৈল-দ্বৃতাদির হ্যায় স্লেহ-পদার্থও নহেন। তিনি ছয়াও নহেন, অন্ধকারও নহেন, বায়ুও নহেন, আকাশও নহেন, তিনিৎকোন বিষয়ে আসক্ত নহেন, তিনি রস নহেন, গন্ধ নহেন, , রূপ নহেন, শব্দ নহেন ও স্পর্শও নহেন। তিনি* নেত্ররহিত, কর্ণ রহিত, বাগিন্দ্রিয-রহিত, তেজো- রহিত, প্রাণ-রহিত, মুখ-রহিত, হস্ত-রহিত, পদ-রহিত, রূপ-রহিত, রস-রহিত, গন্ধ-রহিত, স্পর্শ-রহছিত। তিনি ছিদ্র-রহিত, ব্যবধান-রহিত, অস্তর-রৃহিত, বাহ্া-রহিত, ( ১০২) আদি-রহিত এবং অন্ত-রহিত। তিনি কিছুই ভুগ্ষণ করেন না বা বিনাশ করেন না এবং তীহাকেও কেহ ভক্ষণ করিতে পারে না বাবিনাশ করিতে পারে না। তিনি এক অর্থা স্বসজাতীয় দ্বিতীয়-রহিতগ যেমন মনুষ্য জাতির মধ্যে যাদব ছাড়! অন্য একটি মনুষ্য মাধব আছে, তদ্রুপ ব্রদ্মের সজাতি অন্য একটি ব্রহ্ম নাই। তিনি অদ্বিতীয় অর্থাৎ স্ববিজাতীয় অপর-রহিত। যেমন মনুষ্য- জাতি হইতে ভিন্নজাতীয় কুকুরাদি জৃন্তু আছে, তদ্রুপ ' বর্গ হইতে ভিন্ন বিজাতীয় স্বতন্ত্র কোন বস্তুই নাই। সমস্ত বস্তই তাহার অংশ। তাহা হইতে উৎপন্ন। তিনিই সমস্ত বস্তর উপাদান ও নিমিত্তকারণ। তাহার অস্তিত্ব ছাড়া স্বতন্ত্র কোন বস্তুর অস্তিত্ব নাই। অন্য বস্ত্র অস্তিত্ব মায়াময় ও কল্পিতমাত্র। উহা বাস্তব নহে। তিনি সত্যন্বরূপ, বিজ্ঞানস্বরূপ, আনন্দস্বরূপ। হে গার্গি! পরম-পুরুষ সর্ববশক্তিশালী পরমেশ্বর প্রাণীদিগের . মহোপকা রার্থ সূর্য ও চন্দ্রকে সৃষ্টি করিয়াছেন । তীহার কঠোর শাসনে পরিচালিত সূর্ধ্য ও চন্দ্র তাহার কঠোর শাসনভয়ে যেন কম্পান্বিত-কলেবর হইয়া আলোক- প্রদানাদি স্বস্ব নিরূপিত কার্য * করিতেছে। তাহারা নিয়মিত দেশে নিয়মিত কালে উদয়-অস্ত-বৃদ্ধিলয়াদি কার্ধ্যে নিয়মিতন্লূপে ব্যাপৃত রহিয়াছে । হেগার্গি! সেই অবিনাশী পরমেশ্বর স্তৃশীদনের বশবর্তী হইয়া স্বর্গলোক, ( ১০৩ ) জ্যোতির্লোক ও এই পৃথিবী স্থুনিয়মে রক্ষিত হইতেছে। তিনি যদি এই তিন লোককে ধরিয়া না রাখিতেন, তাহা হইলে অতি গুরু-ভারাক্রান্ত এই তিন লোক রসাতলে বিলীন হইয়া ধাইত এবং হঠাৎ জ্যোতির্লোক এই মর্ত- লোকে পতিত হইত । : হে গার্গি! তাহারই প্রকৃষ্ট শাঁসন- গুণে ভূত, ভবিষ্ুৎ ও বর্তনান বস্তু সমূহের বয়ঃক্রমনিন্নপক মাস, বগসর, দিবা, রাত্রি ও মুহূর্ত প্রভৃতি মহাকালের অংশগুলি যথানিয়মে গাতায়াত করিতেছে । যেমন কোন প্রভুর আজ্ঞাপালক ভূত্যবর্গ সাবধানে প্রভুর আয়-ব্যয়ের সংখ্যা গণনা করে, তন্রপ মহাকালের অংশভূত এই বগুসর, মাস, খত, দিবারাত্রি, দণ্ড, পিল ও মুহূর্ত প্রভৃতি খণ্ডকাল সকল, বিশ্বপ্রভূ পরমেশ্বরের বিশ্বের সৃষ্টি স্থিতি ও গ্রলয়ের সংখ্যা গণন! করিয়া থাকে । হে গার্গি, সেই অবিনাশী পরমেশ্বরের ' উৎকৃষ্ট শাসনগুণে হিমালয়াদি পর্ববত হইতে উৎপন্ন! পুর্ববদিক্গামিনী গঙ্গা প্রসৃতি নদী এবং পশ্চিমদিক্গামী দিন্ধু প্রভৃতি নদ যথানিয়মে প্রবাহিত হইতেছে ।* হে গার্গি! বহুরেেশে অর্থোপার্জন করিয়া পুণ্যবান্‌ জ্ঞানী দাতারা যে গোস্বর্ণ-রত্বাদি ধনদান করেন এবঙ সাধুগণ যে এ*দকল দাতাদিগের প্রশংসা করিয়! থাকেন, তাহা ও সেই অবিনাশী পরমেশ্বরেরই শাপনমহিম!। সাধুজন: প্রশংসিত দানাদি সৎকার্য্যের ফুল পরলোকে লব্ধ হইয়া! থাকে । পরমেশ্বর জর্ববপ্রাণীরৎ সর্বপ্রকার কর্ণ্মের ( ১০৪.) স্ববিচার করিয়া, যাহার যেমন কর্ম, তাহাকে ঠিকতদমুরূপ ফল প্রদান করেন। পরমেশ্বরই দাতার দানজনিত ফলের ংযোজয়িতা। পরমেশ্বরই সেই দাতাকে তাহার দান- জনিত ফলভোগ করাইয়৷ থাকেন। হৈ গার্গি সেই পরমেশ্বরেরই উৎকৃষ্ট শাসনগুণে দেবতাগণ, স্ব স্ব তৃপ্ডির জন্য, অন্যান্য বন্ধু উত্তমোত্তম বস্তু সংগ্রহের সামর্থ্য সত্তেও, যজ্ঞকর্তার প্রদত্ত ঘ্বত, ফল, চরু, পিষ্টক প্রভৃতি বস্তু ভক্ষণের জন্যই আশান্বিত হইয়া থাকেন। সেই পরমে- শ্বরেরই শাসনবলে মহানুতব পিতলোক পুনভ্র-পৌত্রাদির প্রদেয় শ্রাদ্ধান্ন মাত্র ভোজনের নিমিত্ত পুক্র-পৌত্রাদির মুখাপেক্ষ। ' করিয়া থাকেন।, হে গার্গি! সেই সর্বব- কম্মফলদাতা! স্ববিচারক সর্বশক্তি সর্বব্যাপী সর্বজ্ঞ পরমেশ্বরের মহিমা না বুঝিয়া, না শুনিয়া, যাহা কিছু জপ-হোম-পাঠাদি পুণ্যক্্ম অনুষ্ঠিত হয়, তাহার ফল বিনশ্বর। উক্তৃবিধ কর্ম্দ-অনুষ্ঠায়ী লোক সকল স্ব স্ব কর্্মফল- তোগের পর ভীষণ নক্র-কুম্তীরাদি তুল্য ছুংখ-শোক-পুর্ণ এই সংসার-দাগরে পুনরায় পতিত হয়েন। কিন্তু উপনিষত্-বেদান্ত-বেদা, মঙ্গলময়, আনন্দময়, বিভ্ঞানময়, পরমাত্মা পরমেশ্বরের মহিমা! জানিয়৷ শুনিয়া ও ধ্যান করিয়া সেই জ্ঞান্ত, ধ্যান ও সমাধির বলে তাহাতে একবার আত্যন্তিকরূপে লীন্ন হইতে পারিলে আর ভীষণ জন্ম-মরণ- (১০৫) চক্রে ঘূর্ণিত হইতে হয় না। যাহার জীবাত্মার সহিত পরমাত্মার একাজ্ঞান সংসাধিত হয়, সে ব্যক্তি আর এই নশ্বর লোকে ফিরিয়া আইসে না। সেব্যক্তি অপার অমৃত আনন্দ-সা্ারে নিমগ্ন হইয়া অমৃত আনন্দের সহিত মিলিয়! যায়। সেব্যক্তি তখন ব্রহ্ধলোক প্রাপ্ত হয়। সে'আর এ জগতে ফিরিয়া আইসে না। এই জীবের সহিত পরমাত্বা পরমেশ্বরের এক্জ্ঞানই সমস্ত উপনিষত- বেদান্ত শাস্ত্রের প্রধান লক্ষা, প্রধান প্রতিপাদ্য সার বস্তু । পরমেশ্বরের তত্বশ্রবণ, পরমেশ্বরের তত্বমনন, পরমেশ্বরত ত্র জন, পরমেশ্বরতত্বধ্যান, পরমেশ্বরতত্ত্ে মমাধি ব্যতিরেকে মুক্ত হইবার অন্য কোন উপায়ই নাই। তীস্বাকে জান! ব্যতীত, তাহার আশ্রয় গ্রহণ ব্যতীত, তাহাতে বিলীন হওয়া ব্যতীত মুক্ত হইবার আর অন্য কোন উপায়ই নাই। হে গর্গি! সেই অবিনাশী পরমেশ্বরকে না জানিয়! যে ব্যক্তি এই মর্ত্যলোক হইতে চলিয়া যায়, সে ব্যক্তি বড়ই দীন, হীন, ক্ষুত্র ও ছুর্ভাগ্যগ্রস্ত। আর যে ব্যক্তি তাহার মহিম! জানিয়া এই মর্ত্যলোক হইতে চলিয়া যায়, সেই ব্যক্তিই ব্রাহ্মণ, অর্থাঙ ব্রহ্মপরায়ণ। হে গার্গি! সেই অবিনাশী পরমেশ্বর সকল বস্তু দেখিতে পাইতেছেন, কিন্তু তাঁহাকে কেহ দেখিতে পায় না। তিনি সকল বিষয় জানিতে পারেন, কিন্তু ভীহাকে সকলে জানিতে পারে না। স্তিনি সকল পদার্থের ভ্রষটা, মন্তা, শ্রোতা ও বিজ্ঞাতা। সেই ( ১০৬) এক অদ্বিতীয় পরমেশ্বরে আকাশাদি নিখিল্ব্রন্ষাণ্ডই অবস্থিত 1৮ ৃ্‌ গার্সী মহধি যাঁজ্ভবন্ক্যের এই প্রকার মহাসন্তোষজনক উত্তর শ্রবণ করিয়া মহধি যা্বন্ক্ের নিকটে উপবিষ্ট অন্যান্য মহধিদিগকে বলিলেন, “হে পুজনীয় ব্রাহ্মণগণ, আপনারা পরমতন্তরভভ মহষি যাঁজ্ভবক্ধ্যের নিকটে অদ্য এই অমুল্য উপদেশ গ্রহণ করিয়া তাহার নিকটে খণী হইয়া- ছেন। এই খণ-পরিশোধের জন্য আপনার! যদি এক্ষণে তাহার শ্রীচরণকমলে স্ব স্ব মস্তক অর্পণ করেন, তাহা হইলেই সেই মহাঁখণের কিঞ্চিন্মাত্র খণ পরিশোধ করা হইল, ইহাই বুঝিয়া আশ্বস্ত হইতে পারিবেন । নতুবা আশ্বাসপ্রাপ্তির অন্য কোন উপায় নাই। এই মহাখণ হইতে মুক্ত হইবার অন্য কোন উপায় নাই। আর ইহাকে শান্্রবিচারে জয় করা তো বনু দুরের কথা। ইহাকে শাক্সুবিচারে জয় করিব, এইরূপ কথাও আপনারা মনে ভাবিবেন না। কারণ, আপনাদের মধ্যে ঈদৃশ জ্ঞানী কেহই নাই, যিনি মহষি যাজ্ভবন্ধ্যকে জয় করিতে সাহসী হইতে পারেন। কারণ, আমি পুর্বের্বই বলিয়াছি যে, যদি মহধি যাল্ভবন্ক্য আমার এই কঠিন" প্রশ্নের প্রকৃত উত্তর দিতে পারেন, তাহা হইলে আপনার! কেহই ইহাকে পরাস্ত করিতে পারিবেন না” এই কথা বলিয়৷ ব্রদ্মবাদিনী তেজস্থিনী গার্গী নির্ত্ত হইলেন। ( ১০৭ ) যে দ্রেশে ভ্ঞানিগণ-চুড়ামণি মৃহষি যাজ্ভবন্থ্যের নিকট কোন একটি মহিল! দার্শনিক প্রশ্ন করিবার সময় শাস্ত্র- জানের উপর নির্ভর করিয়া অকুতোভয়ে মহাসাহসের সহিত বলিতে পাঁরিতেন যে, প্রবল-প্রতাপান্বিত বারাণসী- রাজ ও বিদেহরাজ জনকের স্থৃতীক্ষ বাণের ন্যায় দুইটি কঠিন প্রশ্ন লইয়া আপনার নিকটে উপস্থিত হইয়াছি, "যে দেশের একটি মহিলার কঠিন দার্শনিক প্রশ্ন শ্রবণ করিয়! মহাপ্রভাব মহধিগঞ্ণও বিস্মিত হইয়াছিলেন, সেই দেশের, স্্রশিক্ষা যেরূপ চরম সীমায় উপনীত হইয়াছিল, পৃথিবীর কোন খণ্ডেও সেরূপ হয় নাই। কারণ, বিদ্যাশিক্ষার মধ্যে অধ্যাত্ব-বিদ্যাশিক্ষাই উচ্চশিক্ষা । ভগবান্‌ শ্রীকৃষ্ণও গীতায় বলিয়াছেন যে, আমি পর্বববিদ্যার মধ্যে শ্রেষ্ঠতম উচ্চতম অধ্যাত্মবিদ্যাম্বরূপ। ভারতের মহিলাই পৃথিবীর মধ্যে সকল জাতি অপেক্ষা এই বিদ্যায় উচ্চশিক্ষিত ছিলেন। অতি প্রাচীনকালে বৈদিক যুগেও কাশীধামের উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায়। কাশীর স্থায় পুরাতন মহানগরী পৃথেবীমধ্যে কুত্রাপিও ছিল না। বৌদ্ধদিগের গ্রন্থেও ইহা ,দৃ্ট হয় যে, কাশী নগরীতে ঈদৃশ ধনী বণিকের বাস ছিল যে, ষীহার বাঁটাতে ৫০০ শত পরি- চারিকা ও তাহাদের পতিরাও এক সঙ্গে কার্ধ্য করিত। কাশীতে পূর্বে যেরূপ বলবান্‌ লোক দ্বেখিতে পাওয়৷ যাইত, অধুনা সেরূপ বলবান্‌ সাহসী লোক দৃষ্ট হয় না। ( ১০৮ ) ভঙ্ষ্যপেয় দ্রব্যের দিন, দিন মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙঙ্গ বলী ও সাহসীর সংখ্যাও দিন দিন কমিয়া যাইতেছে । “কাশীধাম- সম্ভৃত বীরপ্রবরের তীক্ষ বাণের ম্যায় আমার এই প্রশ্ন” গার্গীর এইরূপ কথাতেই বুঝা যাইতেছে যে, পূর্বে কাশী বীরবত্তায় গৌরবিণী ছিল। বৈদিক যুগের শিক্ষিতা.মাতা | বৈদিক যুগে পুক্রকন্যাদিগের ধর্ম্জীবন সংগঠনার্থ মাতাকে স্ুুশিক্ষা লাভ করিতে হইত। পুক্র-কন্যাদিগের হৃদয়-ক্ষেত্রে ধর্শিক্ষার বীজ বপন করিবার জন্যই মাতার শিক্ষার প্রয়োজন হইত। তখনকার লোকের এই সংস্কার ছিল যে, মাত! স্তরশিক্ষিতা না হইলে পুক্রকন্যাদিগের শিক্ষা সম্পন্ন হইতে পারে না। পুভ্রকন্যাগণ মাতার নিকটে শিক্ষালাভ করিবার যেরূপ স্থুযোগ পায়, অপরের নিকটে তাদৃশ সুযোগ পাইতে পারে না। বাল্যকালে ধন্মজীবন যেরূপ স্থন্দররূপে, সহজভাবে এবং দৃঢ়রূপে গঠিত হইতে পারে, যৌবনে কিন্বা বার্ঘক্যে তঙ্প গঠিত হইতে পারে না। বংশদগুকে অপক্ক অবস্থায় যেরূপ নমনশীল করা যাইতে পারে, পন্ধ অবস্থায় তত্রপ করিতে পারা যায় না। বাল্যকালে সরল, বিশাল, পবিত্র- স্বভাবরূপ উত্তম" ভিত্তি যেমন স্থদৃঢ়রূপে গঠিত হইতে ( ৯০৯ ) পারে, ফৌবনে কিন্থা বার্ধক্যে তু্রূপ গঠিত হইতে পারে না। বাল্যাবস্থায় এরূপ ভিত্তির উপরে স্থাপিত ধন্মভাব স্থায়ী হইতে পারে । শান বলেন, প্ধর্মই একমাত্র চির- স্থায়ী পদার্থ । ্্ ছাড়! সমস্তুই অসার ও বিনশ্বর বস্ত্ব। ধ্মাই মানুষের একমাত্র বন্ধু । মানুষ মরিয়া গেলে সকল বস্তু পড়িয়া থাকে । কিছুই তাহার সঙ্গে ঘায় না। শরীর পুড়িয়া ভন্মে পরিণত হয়। একমাত্র ধর্মই তাহার সঙ্গে যায়।” বাল্যকাল সুশিক্ষিতা মাতার নিকটে শিক্ষালাভ, করিলেই ঈদৃশ অবিনশ্শর পরমবন্ধুস্বরূপ ধর্মকে লভ করিতে পারা যায়। , বৈদিকযুগে ধশ্মশিক্ষাদশন-বিষয়ে মাতারই প্রাধান্য লক্ষিত হয়। ইহা আধুনিক স্ত্রীশিক্ষা-গ্রবর্তিক আড়ম্বর- পটু নব্য বক্তাদিগের কথা নয়, ইহা প্রাচীনতম সভ্যদেশ ভারতবর্ষের প্রাচীনতম জ্ঞান-শান্ত্ু উপনিষদের কথা । বৃহদারণ্যকউপনিষদের” চতুর্থ অধ্যায়ের প্রথম ব্রা্মণে দেখিতে পাওয়া যায় যে, একদা মহধি যাজ্বন্ধ্য মহারাজ জনককে যে সকল উপদেশ দিয়াছিলেন, তন্মধ্যে শিক্ষিতা জননীর প্রাধান্য বিঘোষিত হইয়াছে। একদা মহারাজ, জনক 'পগ্ডিতমগ্ডলী-স্ুশোভিত রাজসভায় উপবিষ্ট ছিলেন। এঘতু সময়ে মহধি যাজ্ঞবন্ধ্য তথায় সহসা উপস্থিত ৯৯ উর মহারাজ মহবিকে সমাগত দেখিয়া যথাবিধি সম্মান-প্রদানের পর জিজ্ঞাস করিলেন, -“মছর্ষে, ( ১১০ ) আপনি কি পুনরায় ন্বর্ণমণ্ডিত-শুঙ্গযুক্ত গোঁধন লাভ করিবার জন্য এখানে আসিয়াছেন ? কিন্বা আমার সুক্ষ দুর্বেবাধ্য দুরুত্তর প্রশ্ন সকল শুনিবার জন্য এখানে আসিয়াছেন ?* মহধি বলিলেন, “মহারাজ, আমি উভয়ের জন্যই আসিয়াছি। স্বর্ণমণ্ডিতশু্গযুক্ত সহস্র ধেনু গ্রহণ এবং মহারাজার কঠিন প্রশ্নশ্রবণ করিবার জন্য এখানে আসিয়াছি।” ইতঃপুর্বেৰ অনেকবার মহারাজ জনকের কন্ঠিন প্রশ্নের সুত্তর-দানের জন্য, মহধি যাজ্ভবন্ধ্য মহারাজের নিকট হইতে বিংশতি ভরি-পরিমিত স্বর্ণে মণ্ডিত শৃজদ্বয়যুক্ত সহজ ধেনু লাভ করিয়াছিলৈন। প্রত্যেক বারে মহবি বিংশতি সহত্র ভরি উত্তম স্বর্ণ এবং সহত্র হৃষ্টপুষ্ট হস্তি- তুল্য বৃহৎ ধেনু পারিতোষিকম্বরূপ প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। তাই মহারাজ জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, হে মহর্ষে, আবার সেইরূপ স্বর্ণ ও ধেনু লাভ করিতে আসিয়াছেন কি? জনকের রাজসভায় যাল্জ্রবন্ক্ের আগমনটি তে। বড় সহজ আগমন নয়। তিনি রাজসভায় আসিলেই মহারাজের প্রশ্ন- জিন্ভাসা, আর তাহার উত্তর দিতে পারিলেই সঙ্গে সঙ্গে তাহার অদ্ভুত পারিতোধিকলাভ ! অনেকের এই ভ্রান্ত সংস্কার আছে যে, প্রাচীনকালে স্বর্ণের অধিক মূল্য থাকিলেও, ধেনুর মুল্য কম ছিল। কেহ কেহ বলেন, ধেনুর মুল্যই ছিল না। ধেনু অনেক জম্মিত এবং ০4 গোবধ ছিল না বলিয়। বিনাদুল্যেই ধনু পাওয়া যাইত। বিনামূল্যে তগকালে ধেনু পাওয়৷ গেলে শাস্ত্রে শ্রাদ্ধের সময় “চন্দন-ধেনু” ও “ধেনু-মুল্যের” জন্য স্বর্ণরজতাদির ব্যবস্থা লিপিবদ্ধ হইত, না। অধুনা ধশ্মবিপ্লব-যুগে ধেনু-দানরূপ পুণ্যকন্মে ধেমু-মূলযের পরিমাণ দেখিয়া প্রাচীনকালের ধেনু-মূল্য নিদ্ধীরণ করা ঠিক নধ়। কারণ, প্রয়াগে একবার কুন্ত-মেলার সময় বেশীঘাটে সান করিতে শিয়া দেখা গেল, ঘাটের পাগ্ারা, একটিমাত্র পয়সা লইয়া মুর্খ যাত্রীদিগকে বনু সহতবার একটিমাত্র ধেনুর পুচ্ছ ধরাইয়া, গোদান করাইতেছে। চন্দ্র-সুধ্য-গ্রহণ কিম্বা কোন শুভযোগ উপস্থিত হইলে পুণ্য-নদীতীরে পাণগারা এইরূপে অজ্ঞ লোকদিগকে এক পয়সা লইয়া গোদান করাইয়৷ থাকে। যে কালে এক পয়সায় একটি বৃহতী ধেনু পাওয়৷ যায় এবং বু সহত্বার তাহার উৎসর্গ সম্পন্ন হইতে পারে, সেই কাল বে, ধর্ম্মাবিগ্নুবের যুগ, তাহা বলাই বান্ল্য। মহ যাজজবন্ধ্যকে ধদি প্রত্যেক প্রশ্নের জন্য সহ হস্তিতুল্য বুহত ধেন্ু এবং বিংশতি সহস্র ভরি উত্তম স্বর্ণ দিতে হয়, তাহা হইলে রাজ-কোষাগার শুন্য হইয়া পড়িবে, এইরূপ মুনে করিয়া মহারাজ জনক কৌতুকচ্ছলে মহধিকে ভ্টাহার পুনরাগমনের কারণ জিজ্ঞাস! করেন নাই। মহধির পুনরাগমনে মহারাজ কিঞ্চিম্মাত্রও অসন্তষ্ট হয়েন নাই। 68১7 যদি মহারাজ অসন্ুষ্টই হইতেন, তাহা হইলে মহষির আগমনের অভিপ্রায় জ্ঞাত হইয়া তাহাকে পুনরায় প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতে উদ্যত হইতেন না । তকালের রাজারা দান করিয়া সর্বস্বান্ত হওয়াও গৌরবের বিষয় বলিয়! মনে করিতেন। তাহারা উপযুক্ত পাত্রকে পুরস্কার দানে সম্মানিত করিতে কিম্বা তাহার অভিলাষ পুরণ করিতে কখনও ত্রুটি করিতেন না। একদা মহারাজ রঘু বিশ্বজিত নামক যজ্ঞ করিয়া সর্বস্বান্ত হইয়াছিলেন এবং মৃৎপাত্রে ভোজন করিতেছিলেন। তাহার খন ঈদৃশী ঘোর দুর্দশা ঘটিয়াছিল, তখন বরতন্ত মুনির ছাত্র কৌতস গুরুদক্ষিণা- প্রার্থী হইয়৷ মহারাজের সমীপে উপাস্থত হইয়াছিলেন। কৌতস, মহারাজ রঘুর দুর্দশা অবলোকন করিয়া বলিলেন, “মহারাজ, আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাহি ন|। কারণ, চাতকপক্ষীও শরকালের জলশূন্য মেঘকে জল দাও+ বলিয়। উত্পীড়িত করে না। আমি মানুষ হইয়া আপনাকে এ অবস্থায় কিরূপে কষ্ট দিব? আমি স্থানান্তর হইতে গুরু-দক্ষিণ! সংগ্রহ করিতে চলিলাম ।”' এই বলিয়া কৌত্স গমনোম্মুখ হইলে মহারাজ রঘু তীহাকে বলিলেন, “আপনি স্থানান্তরে যাইবেন না। আমার নিকটে বিফল- মনোরথ হইয়া স্থানান্তরে গেলে এ জগতে আমার, একটি কলঙ্ক থাকিয়া যাইবে । আপনি বিদ্বান ব্রাঙ্ষণ। সুতরাং আমার পবিত্র যঙ্ঞশালাই আপনার থাকিবার উপযুক্ত (585) স্থান। তথায় দুই দিন মাত্র বাস, করুন। এই সময়ের মধ্যেই আমি আপনার প্রার্থিত চতুর্দশ কোটি স্ুবর্ণ-ুদ্রা রূপ গুরুদক্ষিণ। যে কোন স্থান হইতে সংগ্রহ করিয়া আপনাকে দিব ।” এট বলিয়া মহারাজ রঘু, কুৰেরের অলকাপুরী অভিমুখে যুদ্ধযাত্রার আয়োজন করিতে লাগিলেন । অস্ত্রশন্ত্রাদি দ্বারা রথ সজ্জিত করা হইল। ুদ্ধযাত্রার পূর্ববরাত্রে শান্ত্রনিয়মানুসারে মহারাজ সেই রথে শয়ন করিয়া রহিলেন। কিন্তু পরদিন প্রতাষে, কোষাগারের অধ্যক্ষ মহারাজ-সমীপে উপস্থিত হইয়! নিবেদুন করিল, “মহারাজ, অদ্য প্রাতঃকালে কোষাগারের দ্বার উদ্ঘাটন করিয়া দেখিলাম, *কোষাগার স্তববর্ণ-সম্ভারে পুর্ণ হইয়া রহিয়াছে ।” মহারাজ রঘু, এই সম্বাদ শ্রবণ করিয়া কৌতুসকে বলিলেন, “হে বিদ্বন্‌ ব্রাহ্মণ, আপনাকে এই কোষাগারস্থিত সমস্ত ম্ববর্ণই গ্রহণ করিতে হইবে ।» কৌত্স বলিলেন, “মহারাজ, আমি চতুর্দশ কোটির অধিক এক কপর্দীকও গ্রহণ করিব না।” মহারাজ বলিলেন, প্যখন আপনার জন্যই এই স্থুবর্ণরাশি কুবের কর্তৃক গোপনে প্রেরিত হইয়াছে, তখনু আমি চতুর্দশ কোটি বাদে অবশিষ্ট সর্ণমুদ্রাগুলি কেন লইব? আপনাকে সমস্তই গ্রহণ করিতে হইবে । দাতা, কোষাগারের সমন্ত সুবর্ণ দান করিতে উদ্যত এবং গ্রহীত! ব্রাহ্মণ, শ্রয়োজনাতিরিত স্বর্ণ গ্রহণ করিতে কোন প্রকারেই স্বীকার করিতেছেন ( ১১৪ ) না। এইবূপ বিচিত্র ব্যাপার অবলোকন করিয়া অযোধ্যা নগরীর অধিবাসিগণ বিস্মিত হইয়াছিল এবং দাতা ও গ্রহীতার অত্যন্ত প্রশংসা করিয়াছিল। মহারাজ রথঘু, কৌতসের প্রার্থিত চতুর্দশ কোটি স্বর্ণমুদ্রা, উঠ ও ঘোটকীর পৃষ্ঠে স্থাপিত করাইয়া বরতন্তর মুনির আশ্রমে প্রেরণ করিয়াছিলেন। তৎকালে খষিদিগের আশ্রমে এরূপ পর্ববতসম স্বর্ণরাশি পড়িয়া থাকিত। অন্য কেহ উহ: স্পর্শ করিত না। এই জন্য এরূপ পবিত্র যুগের বহু সহজ বনু পরে গ্রীক এতিহাসিক পগ্ডিত ম্যাগাস্থিনিস্‌ ভারতীয় লোকের নিস্পৃহতা, পবিত্রতা, সত্যবাদিতা ও চৌর্যাদি দৌষ- বিভীনতা অবলোকন করিয়া এই বর্ণনা করিয়াছেন যে, ভারতের পথে জঙ্গলে বত্র তত্র স্ুবর্ণরাশি পড়িয়া থাকিলেও কেহ স্পর্শ করিত না। চোর ব৷ অসতী কাহাকে বলে, এ দেশের লোক তাহা জানিত না । গ্রীকদিগের এ দেশে আসিবার বহু সহত্্ বর্ষ পূর্বেব দেশের সামাজিক অবস্থা ও দেশীয় লৌকের মন যে কতদূর উন্নত, উত্তম ও পবিত্র ছিল এবং দেশের লোক যে কতদূর স্ুদভা 'ছিল, তাহ! কালিদাসের রঘুবংশাদি কাব্যে ও নাটকে সর্ববদাই দৃষ্ট হয়। | কালিদাস রঘুবংশে লিখিয়াছেন, রঘুর পিতার রাজতর- সময়ে চৌর্য্য কথাটি শাস্ত্রে ( অভিধানে )ই নিবদ্ধ ছিল, ইহা কার্যযতঃ দৃষ্ট হইত না। কেহ কেহ পূর্ব্বোক্ত ( ১১৫) কৌতসের' উপাখ্যানটিকে কবির ,কল্লিত অসত্য বলিয়া যদ্দি মনে করেন, তাহা হইলে এ স্থলে স্পষ্টরূপে ও নির্ভয়ে ইহা বলা যাইতে পারে যে. তিনি সংস্কৃত, বঙ্গ ও ইংরাজি প্রভৃতি গ্রন্থ-প্রণেতা ক্রেন কবির কোন কাবোর প্রকৃত উদ্দেশ্য বুঝিতেই পারেন না। কারণ, এ সকল কৰিগণ, যখন কোন এক ব্যক্তির বিষয় অবলম্বন করিয়৷ গ্রন্থ রটনা করিয়াছেন, তখন সেই বাক্তি, যে সময়ে ও যে দেশে উদ্দিত হইয়াছিলেন; সেই সময়ের ও সেই দেশের লোক-, চিত্র ও সমাজচিত্র নিপুণহার সহিত অঙ্গিত করিতে চেষ্টা করিয়াছেন । স্মতরাং সেই ব্যক্তির নাম হলধরূবা জলধর ছিল কি না? তীহার কন্যার নাম দ্রবময়ী বা জগদশ্থা ছিল কিনা? সেই দেশের সেই সময়ের অমুকনাম্নী কোন নারী সামবেদের অমুক অধ্যায় পর্য্যন্ত পাঠ করিয়াছিলেন কিনা? রাজা হলধর সত্য সতাই চতুর্দশ কোটি স্থুবর্ণ মুদ্রা কড়ায় গণ্ডায় হিসাব করিয়া নিধিরাম-নামক ছাত্রকে দিয়াছিলেন কি না, ইত্যাদি কথার সত্যতা-নির্ঘারণের জন্য ধাহারা আহার-নিদ্রা ,বাদ দিয়া তর্ক করিতে বসেন, তাহাদের পক্ষে কাব্য-নাটকাদি গ্রস্থপাঠ বিড়ম্বনা মাত্র । কোন মহাকবির গ্রন্থপাঠ করিয়া কিম্বা বৃহদারণ্যক উপনিষদের যাজ্জবন্ধ্য-জনকের কথা পাঠ করিয়া এই- টুকুই দেখিতে হইবে যে, তশুকালে' সেই স্থানে মনেই ( ১১৬৩ ) রাজার রাজত্বসময়ে কোন ব্রাহ্মণ-পঞ্ডিত সুন্গম দর্শন- শান্প্রের উত্তম উত্তর দিতে পারিলেই তিনি সেই দেশের রাজা এবং অন্যান্য ভূম্বামিগণের নিকট হইতে আশা- তিরিক্ত পারিতোধষিক এবং অত্যধিক ভক্তি, শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রাপ্ত হইতেন। "তা, জনকই দ্রিউন, আর যাক্ছবন্ধ্াই লউন, কিনব! হলধরই দিউন্‌, বা জলধরই লউন, ইহাতে শান্ত্র-প্রামাণ্যের অণুমাত্র ক্ষতি-বৃদ্ধি হয় না। লৌকিক ইতিহাস-রচনায় নাম ধাম প্রভৃতির নির্দেশের অণুমাত্র পার্থকা হইলে অবশ্য অনেক ক্ষতি হয় বটে। কিন্তু ইতিহাস ছাড় অন্য গ্রন্থ সম্বন্ধে স্বতন্ত্র কর্থা। মহারাজ জনক, মহষি যাজ্জবঙ্ষকে অনেকবার বন্তুধন দান করিয়াছিলেন । ততকালের খধিগণ এই প্রকার বস্তু ধন লাভ করিতেন বলিয়াই ষষ্টি সহক্র ছাত্রকে ছুইবেলা অন্ন দিয়া নানাশান্্র পড়াইতে পারিতেন এবং মহাব্যয়সাধা বড় বড় যজ্ঞ সম্পাদন করিতে পারিতেন, এইরূপ কথা জনসাধারণকে বুঝাইবার জন্যই বৃহদারণাক উপনিষদে যাজ্বক্ক্যের এই অদ্ভুত পারিতোধিকপ্রাপ্তির কথা স্থান * পাইয়াছে। মহ কেবল মাত্র পারিতোধিক-লাভের জগ্যাই জনকের রাজসভায় সর্বদা উপস্থিত হইতেন না। কারণ, তাহার নিজের আশ্রমে" ছাত্র-অধ্যাপন ও তপোনুষ্ঠানাদি কার্যে তাহাকে সর্ববদা ব্যাপৃত থাকিতে হইত। সেই জন্য বখন ( ১১৭ ) তিনি কিঞি অনকাশ পাইতেন,,সেই সময়ে জনকের রাজমভায় উপস্থিত হইতেন। তিনি মহারাজ জনকের কোন উপকার ন| করিয়া তাহার নিকট হইতে এক কপর্দকও গ্রহণ করিতেন না। কারণ, বৃহদারণ্যক উপনিষদের চতুর্থ অধ্যায়ের প্রথম ব্রালগণের দ্বিতীয় মন্দ দেখিতে পাওয়া যায় যে, একদা জনক জিত্বা-নামক কোন একটি আচার্যের নিকটে শ্রুত উপদেশগুলি মহষি যাজ্জবন্ধ্যকে শুনাইতেছিলেন। শুনাইতে শুনাইতে প্রসঙ্গ-, ক্রমে প্রজ্ঞতা-নামক পদার্থের কথা উঠিল। প্রজ্ঞা পদার্থটি উত্তমরূপে বুঝাইয়া দিবার জন্য জন্ক, মহষি যাজ্ভবন্থ্যের নিকটে প্রার্থনা! করিলেন। মহষি উত্তমরূপে উহা জনককে বুঝাইয়া দিলে জনক অতিশয় উপকৃত হইয়। মহষিকে, হস্তিতুল্য সহ বৃহৎ বৃষ দক্ষিণ! দিতে ইচ্ছুক হইয়াছিলেন। কিন্তু যাজ্্বঙ্ক্য বলিলেন, না, আমি উহা গ্রহণ করিতে পারি না। কারণ, আমার পিতা আমাকে এই উপদেশ করিয়াছেন যে, শিষ্যুকে সম্পূর্ণরূপে 'জ্ঞান-দানে ক্কৃতার্থ না করিয়া শিল্তের নিকট হইতে কিঞ্চিন্মাত্র গ্রহণ করিও না। পিতার এ কথা আমি সম্পূর্ণ রূপে অনুমোদন করি ও পালন করি । মহুধি প্রসঙ্গক্রমে মাত্র একটি বিষয় জনককে বুঝাইয় দিয়াছিলেন বলিয়া হস্তিতুল্য সহজ বৃষদক্ষিণ! প্রত্যাখ্যান করিয়াছিলেন । জনক, অন্যান্য গুরুর নিকটে কিকি উপদেশ প্রাপ্ত (১১৮) হইয়াছিলেন, তাহাই এ ক্ষেত্রে তিনি যাজভ্বন্ধ্যকে শুনাইতে- ছিলেন এবং প্রসঙ্গক্রমে এ মকল উপদেশের মধ্যে যাহা ্তনি উত্তমরূপে বুঝিতে পারেন নাই, তাহাই মহধিকে জিজ্ঞাসা করিাতেছিলেন। শ্ুৃতুরাং প্রসঙ্গাগত অপর আচাধ্যের কথা বুঝাইয়া দিতেছিলেন এবং স্বয়ং প্রধানতঃ কোন তন্ত্র উপদেশ করিতেছিলেন না বলিয়া মহষি, জনকের এই পারিতোধিক গ্রহণ করেন নাই। জনক _আচাধা জিত্বার নিকটে যে উপদেশটি শ্রাবণ করিয়াছিলেন, তাহা মহষি যাডবস্কে এইবূপে শুনাইতেছিলেন ৫ “শিলিনের পুভ্র জিত্বা-নামক আচাধ্য আমাকে এই উপদেশ দিয়াছিলেন যে, ঝ্রগ্দেবতাই ব্রহ্ম। তাহার এ কথ মিথা। হইতে পারে না। কারণ, কোন মাতৃমান্‌ পিতৃমান আচাধ্যবান্‌ ব্যক্তি, যেমন সত্য,কথা কহিয়া থাকেন, আচাধ্য জিত্বাও আমাকে তজ্রপ সত্াকথাই বলিয়াছেন। আচাধ্য জিত্বা, মাতৃমান্‌ পিতৃমান্‌ ও আচাধ্য- বান্‌ মহাপুরুষ । সুতরাং ঈদুশ মহাত্মা কখনই .মিথা কথ! কহিতে পারেন না। শৈশবে স্বয়ং মাত ধাহার সৃশিক্ষাদাত্রী ছিলেন, তদনন্তুর যাহার কর্তব্য-পরায়ণ পিতা, ধাহাকে শিক্ষা দিয়াছিলেন, তৎপরে উপ্পনয়ন- ংস্কার হইতে আর্ত করিয়া সমাবর্তুনকাল পধ্যন্ত যাহার সদাচার-সম্পন্ন আচার্য গুরু, ধাহাকে চারিবেদ, বেদাল, ও দর্শনাদি নানাশাস্জর অধ্যয়ন করাইয়াছিলেন, ঈদৃক্‌ ত্রিবিধ- প্রণ্য-সম্পন্ন মহামুভষ মহাতার! যাহ! যাহ! বলেন, তাহা অতি সত্য। তাহা কখনই মিথ্যা হইতে পারে না। ধর্মারতা প্রশংসনীয়া স্থশিক্ষিতা মাতা শৈশবে যাহার ধন্ম- জীবন সংগঠনে অতিশয় যত্রুব্তী ছিলেন, বাহার স্থৃশিক্ষিত ধান্মিক পিতা মীহার চরিত্রনিম্নানে এবং লৌকিক- নাতিশিক্ষাদানে স্থনিপুণ ছিলেন, এবং ধীহার ব্রহ্মতর্বোপ- দেষ্টা আচার্য্য গুরু ব্রহ্মতন্ত সম্বন্ধে ধাহাকে দ্বাদশ বর্মকাল বহু সহুপদেশ প্রদান করিয়াছিলেন, তিনি নিশ্চয়ই অতি, প্রশংসনীয় মহাত্মা। ঈদৃশ মহাত্বার কথ! কখনই মিথ্যা হইতে পারে না। বৃহদারণাক উপনিষদের চতুর্ধু অধ্যায়ের প্রথম ব্রাহ্মণের কতিপয় মন্ত্রে পুক্রকন্যাকে শৈশবে শিক্ষা প্রদান করা বিষয়ে মাতারই সর্বনপ্রাধান্য দৃষ্ট হয়। সর্বব- প্রথমে মাতার কথা, তার পর ক্রমে পিতা ও আচার্ষ্যের কথা উল্লিখিত হইয়াছে । এই অধ্যায়ের এই ব্রাহ্মণে এই দেখিতে পাওয়া যায় যে, যে কয়েকজন আচার্য মহাত্মা মহারাজ জনককে ব্রহ্গতত্ব সম্বন্ধে উপদেশ দিয়া- ছিলেন, তাহাদের প্রত্যেকেই মাতৃমান্‌ পিতৃমান্‌ ও আচাধ্যবান্‌ এই তিনটি বিশেষণে বিশেষিত হইয়াছেন । স্মতরাঁং ব্রহ্মতত্ব-বিদ্যার্থাকে শৈশবে যে, মাতৃমান্‌ হইতে হয়, ইহ] স্প্$ই বুঝা যাইতেছে । “ধর্ম ও নীতিশান্ত্রে সুশিক্ষিতা প্রশংসনীয়! মাতা ষাহার আছে,» এইরূপ 'প্রশস্ত অর্থে মাতৃশব্দের উত্তর “মতুপ্‌” প্রত্যয়যোগে (১২ ) মাতৃমান্‌ এই পদ সিদ্ধ হইয়াছে । প্রশস্তা অর্থাৎ শিক্ষা- দানে সমর্থা, ধর্দম ও নীতিশাস্ত্রে স্বশিক্ষিতা, ধর্ম্মনীতি- পরায়ণা মাতার নিকটে শৈশবে শিক্ষা না করিলে শিক্ষার নুলভিত্তি সুগঠিত হয় না। শৈশবে মাতার নিকটে নির্ভয়ে স্বচ্ছন্দ শিক্ষালাভ করিবার যেমন স্বিধা হয়, তন্রপ পিতা বা গুরু মহাশয়ের নিকটে শিক্ষালাভের সুবিধা হয়, না। কিন্তু সেই মাতা যদি স্বয়ং স্ৃশিক্ষিতা না হয়েন, তাহা হইলে তিনি পুক্রকন্তাদিগকে আর কি স্ৃশিক্ষা দিবেন? বৈদিকযুগে পুক্রকন্যাদ্দিগকে স্ুুশিক্ষা দিবার, জন্যই মাতা স্শিক্ষিতা হইতেন। ধর্্ানুষ্ঠান ও আত্মতত- চর্চার অবনতির সঙ্গে সঙ্গে এই প্রাচীন স্বরীতি বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে। বৈদিকযুগের পর, পৌরাণিক যুগেও পুজকন্যার্দিগকে শিক্ষা দিবার জন্যা মাতাকে উত্তমরূপে শিক্ষালাত করিতে হইত। তাহার দৃষ্টান্ত মদালসা। মদালসা। গন্ধর্বরাজবংশে মদালসা-নান্ী এক রাজকন্যা জন্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন। তিনি অতিশয় রূপবতী, গুণবত্তী ও ভ্বানবতী ছিলেন। তাহার পিতার নাম বিশ্বাবন্থু । খতধ্বজ-নামক এক মহাবল-প্রতাপশালী রাজার সহিত ( ১২১ ) মদালদার বিবাহ হইয়াছিল। রাজা খতধবজ এই রূপবতী, গুণবতী ও সুশিক্ষিত রমণীকে লাভ করিয়া আপনাকে মহাসৌভাগ্যবান্‌ বলিয়া মনে করিতেন। কালক্রমে মদালসার গর্ভে বিক্রান্ত, স্থবাহু, শক্রমর্দন ও অলর্ক নামে চারিটি পুক্র-সন্তান জন্মগ্রহণ করিয়াছিল। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুক্র শৈশবে মাতার নিকটে বিদ্যাশিক্ষ। রুরিয়া- ছিল। মাতা অতি বত্রের সহিত তাহাদিগকে প্রথমপান্য কতিপয় পুস্তক অধ্যয়ন করাইয়া পরে ব্যাকরণ ও সাহিতা অধায়ন করাইয়াছিলেন। ব্যাকরণ ও সাহিত্য পাঠ সমাপ্ত হইলে তিনি তাহাদিগকে মাত্বতত্ব-শান্ত্র শিখাইতে আরম্ত করিয়াছিলেন। একদা তীঙ্তার জোষ্ঠ পুজ্র বিক্রাস্ত, রোদন করিতে করিতে তীহার নিকটে আসিয়া বলিল, “মাতঃ কয়েকটি বালক আমার সহিত খেলিতে খেলিতে আমাকে প্রহার করিয়াছে এবং কটুবাক্য বলিয়াছে। অতএব আপনি বাৰাকে বলিয়া শীত্ব ইহার প্রতিকার করুন। আমি রাজপুত্র । অতএব সামাগ্ত বালকদিগের এইরূপ দুর্ব্যবহার আমার পক্ষে অসহা।” মদ্দালসা জোষ্ঠ পুজের ঈদৃশ অভিযোগ শ্রবণ করিয়া তাহাকে এই বলিয়া. সান্তবনা'দিতে আরম্ত করিলেন ৫-- “হে বহস, তুমি বৃথা ক্রোধ ও ছুঃখ প্রকাশ করিও না। কারণ, তোমার আত্মা সদা শুদ্ধ, সদা আনন্দ ও জ্ঞান- স্বরূপ।. যিনি সদা 'সসন্দ ও ভ্ঞানন্বরূপ, তাহার ৯১ ( ১২২ ) নিরানন্দ হওয়: উচিত নয় এবং অভ্ঞ্ানাচ্ছন্ন হওয়াও উচিত নয়। আনন্দই তোমার আত্মার স্বভাব। স্বভাবকে পরিত্যাগ করিয়া কোন বস্তুই পৃথকৃভাবে থাকে না! অগ্নির স্বভাব উঞ্ণতা। উষ্ণতাকে পরিত্যাগ করিয়া অগ্নি কৃত্রাপি স্বতন্ূভাবে থাকিতে পারে না। আনন্দন্বরূপ আত্মার নিরাননদ হওয়া উচিত নয়। আত্মার নিশ্মল প্রকাশ, যখন অবিদ্য! বা মায়া বা অজ্ঞান ব| ভ্রান্তিরূপ আবরণে আচ্ছন্ন হইয়া পড়ে, তখম মানুষ নিজেকে নিরানন্দ বলিয়ী মনে করে। বস্তুতঃ নিরানন্দ হওয়া মানুষের পক্ষে উচিত নয়। কারণ, মানুষের আত্বা সদ! আনন্স্বরূপ! যেমন মেঘরূল আবরণে আচ্ছন্ন হইলে এত বড় প্রকাশশীল ব্যাপী সূর্যাদে অপ্রকাশশীল হইয়া পড়েন বলিয়া বোধ হয়, তদ্রপ প্রকাশশীল, চেতন, সর্ধ্বব্যাগী, আনন্দশ্বরূপ আত্মাও, অজ্ঞান বঠ'মায়ারূপ . জাবরণে আচ্ছন্ন হইয়া পড়িলে, অপ্রকাশশীল জড়ম্বরূপ' ক্ষুত্র ব৷ পরিচ্ছিন্নস্বরূপ এবং এ হইয়া পড়েন বলিয়া মানুষ মনে করে। বস্ত্রতঃ আতু।, নিয়ানন্দন্বরূপ নহেন। তিনি নিতাজদ্বান ও রঃ না আননদনবপ । অজ্ঞানরূপ আবরণ অপগত হইলে, আত্মা সবস্বরূপে যতক্ষণ অবশ্থিত না হয়েন, ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষ, অজ্ঞান বশতঃ আত্মাতে নামের ও রূপের কল্পনা করিয়া থাকে। বস্ততঃ নিরাকার আত্মার নামও নাই, রূপ থাঝাকারও নাই। তুমি মনে ( ১১৩ ) করিতেছ যে, আমার বিক্রান্ত এই নাম, আমি রাজপুজ, আামার এই উপাধি, আমি গৌর এবং স্কুল, কিন্তু এই সমস্তই মনঃকল্পিত মাত্র। তোমার আত্মা গৌরও নহেন, স্থলও নহেন। উহার নামও নাই, উপাধিও নাই । গৌর ত্ব-স্ুলত্বাদি শরীরধর্্মী সকল তীহাতে কল্লিত হয় মাত্র, তাহাতে বস্ততঃ উহারা নাই। এ সকল জড় ধর্ম, ভাহাতেই থাকে, এইরূপ জ্ঞানই ভ্রমতন্কান সেই কটুভাষা বালকের আত্ম!ও ছুষ্ট নয়, দরিদ্র নয় এবং কুশও নয়। আত্মাতে দরিদ্রত্ব, দুষ্টত্ব ও কৃশহ্‌ কল্পিত মাত্র। রাজন, পু্রন্থ এবং কিক্রান্ত এই নামবত্তা কল্পিত মাত্র | অতএব রাজপুন্র বলিয়া তোমার অভিমান রা ভ্রম মাত্র। তোমার মত শিক্ষিত বালকের পক্ষে এইরূপ বুথ! অভিমান, কর। শোভা পায় না। তোমার দৃশ্যমান এই শরীর, পৃথিবী জল তেজ বায় এবং আকাশ এই পঞ্চভূতের বিকার মাত্র । তোমার আত্মা দেহস্বরূপ নয়। তোমার আত্ম। দেহ হইতে পৃথক পদার্থ । বাল্য- যৌবন-বাদ্ধীক্যাদি বশতঃ. দেহের তিন তির্নরূপ পরিণাম ঘটিলে আত্মার কোনরূপ পরিগাম ঘটে না। আত্ম! অপরিণামী অবিনাশী | জড়দেহ, ভক্মীকৃত বা মৃত্তিকাময় হইয়! গেলেও চেতন সাত তশ্মীকৃত বা মৃত্তিকীময় হইয়! যায় না। আত্মা যেমন এক, তেমন একই থাকেন। আত্মা যি একরূপ না হয়েন, তাহা ছইলে 'বালাকাবে (১২৪ ) দুষ্ট কোন একটি পদার্থকে যৌবনকালে স্মরণ করা যাইতে পারে না। কারণ, তোমার বাল্যকালের আত্মা, যৌবন- কালের শরীরের শ্যায় ভিন্নরূপ হইয়া যাওয়ায় একরূপ ন হওয়ার, একের দৃষ্ট বস্তুকে, অনয হইয়া তিনি কিরূপে স্মরণ করিবেন ? স্মরণ করিতেই পাবেন না। রামের দৃষ্ট বস্ক শ্যাম স্মরণ করিতে পারে না। “ঘ আত্ম। বালাকালে এ বস্তুটিকে দেখিয়াছিলেন, সে আত্মাটি যৌবনকালে নাই । নুতন শরীরাবয়বের ন্যায় নৃতন একটি আত! জন্মিয়াছে। স্বৃতরাং যে নাই, সে পূর্ববদৃষ্ট বস্তুকে দেখিবে কিবূপে ? অথচ একই রাম বালাকালের দুষ্ট বস্ককে যৌবনকালে স্মরণ র্লরিয়া থাকে । একই শ্যাম শৈশবে দৃষ্ট একটি বস্তুকে যৌবনে স্মরণ করিয়া থাকে । স্ততরাং ইহ। দ্বার৷ এই বুঝিতে হইবে যে, শরীরের অবয়বের বৃদ্ধি ও অপচয়ের ন্যায় আত্মার বৃদ্ধি' বা অপচয় হয় না। আত্ম। একই পদার্থ । সেইজন্যই উহার পূর্ব বস্তুর স্মরণ সম্তবিতে পারে | নতুবা অসম্ভব হইত। হে বৎস, এক্ষণে বুঝিলে যে, আত্ম অবিকারী পদার্থ। অতএব সেই কটুভাষী দুষ্ট বালকের দুষ্টভাষণে তোমার আত্মার কোন ক্ষতিই হয় নাই এবং উহারা" তোমাকে সামান্তরূপে প্রহার করিয়াছে মাত্র, ইহাতে তোমার আত্মার অণুমাত্র ক্ষতি হয় নাই ।* এমন কি, যদি তাহারা তোমাকে অতিশয় প্রহার করিয়৷ তোমার শরীরকে ক্ষতবিক্ষত করিয়! দিত, (১২৫ ), তাহা হইলেও তোমার আত্মার বিন্দুমাত্র ক্ষতি হইত না। কারণ, তোমার শরার ক্ষতবিক্ষত 'হইলে আত্ম! ক্ষতবিক্ষত হইতে পারে না। এমন কি, যুদ্ধে তোমার শরীর আস্তরশত্্ দ্বারা ছিন্নভিন্ন *ও দগ্ধ হইয়! বিনষ্ট হইয়া গেলেও আত্মা ছিন্নভিন্ন ও দগ্ধ হইয়া বিনষ্ট হয়েন না। খাদ্যপেয় বস্তুর অভাবে শরীরের হাস হইলে আত্মার হ্রাস হয় না। সুতরাং এ দুষ্ট বালকের আঘাতে তোমার শরীর আহত হইয়াছে মাত্র, আত্ম! আহমুর হয় নাই বা কোনরূপ বিকৃত হয় নাই। স্তএব (তোমার দুঃখ প্রকাশ করা বা অভিমান করা বৃথা শ' মানন্দস্বরূপ পরমাত্মা পরমেশ্বরের তত্ব শিক্ষা কার। শারারিক ও মানসিক শোকদুঃখরাশি বিনষ্ট হইয়া যাইবে ।” মদালসার এইরূপ পুর্নেবাক্ত উপদেশ শ্রবণ করিয়া তদীয় জোষ্ঠ পুক্র বিক্রান্তের তত্বজ্ঞান জন্মিয়াছিল। তিনি বালকোচিত দুঃখ এবং রাজপুজ্োচিত অভিমান পরিত্যাগ করিয়া বাল্যকালেই বৈরাগযপথ অবলম্বন করিয়াছিলেন । অগ্রাজের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিয় স্তবান্থ ও শক্রমর্দনও, বাল্াযকালেই বৈরাগ্যব্রত অবলম্বন করিয়াছিলেন রাজ! খতধ্বজ, পত্বী মদা্সসার শিক্ষাদানগুণে তিন পুক্রই সন্যাসী হইল, ইহা দেখিয়া! ভাবিতে লাগিলেন যে, তাহার তিনটি 'পুই লল্ন্যাসী হইল, অতএব তীহার মৃত্যুর পর তাঙ্চার এই রাজ্য কে রক্ষা! করিবে ? রাজার অভাবে রাজ্য ( ১২৬ ) অরাজক ও বিদ্রোহপূর্ণ হইয়! পড়িলে প্রজাবর্গের কষ্ট কে নিবারণ করিবে ? রাক্জ্যমধ্যে কে শান্তি স্থাপিত করিবে ? এক্ষণে উপায় কি? এক্ষণে একমাত্র কনিষ্ঠ পুভ্র অলর্কই একমাত্র মাশা-ভরসার স্থল। অলর্ককে "সংসারে আবদ্ধ করিয়া রাখিতে পারিলেই রাজের ভাবী মঙ্গল সাধিত হইতে পারে । এইরূপ চিন্তা করিতে করিতে রাজা খাতধবন্ত, পত্ভীর নিকটে উপস্থিত হইলেন এবং করুণ- স্বরে এই ব্লিয়৷ প্রার্থনা করিতে লাগিলেন, “হে প্রিয়তমে নদালসে, তোমার শিক্ষাদানপ্রভাবে তিন পুজ্রেরই সংসারে বেরাগ্য জন্মিল। এক্ষণে চতুর্থ পুক্র অলর্কের€ যদি এরূপণ্দশা ঘটে, তাহা হইলে আমার অবদানে কে রাজা পালন করিবে ? রাজার অভা'বে রাজা বিদ্রোহপুর্ণ হইয়। রসাতলে ধাইবে । প্রজাগণের ধন-প্রাণ-মান রক্ষা করা কঠিন হইয়া উঠিবে। প্রজাদিগের 'তয়ঙ্কর কষ্ট উপস্থিত হইবে। অতএব তুমি, চতুর্থ পুজটিকে আর এরূপ শিক্ষা দিও না। তাহাঁকে আর সন্যাসী করিও না । আমি বৃদ্ধাবস্থায় তাহার হস্তে রাজ্যভার হ্যন্ত করিয়া নিশ্চিন্থমনে কেবল পরমেশ্বরের আরাধনায় রত থাকিতে ইচ্ছা করি। ইছাতে তুমি ব্যাঘাত উৎপাদন করিও,ন1।: আত্মতক শিক্ষা! দেওয়া অতি উত্তম কার্য্য। সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই, কিন্তু সেই শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে অলর্ককে রাজনীতিশাস্্ব শিক্ষ] দিও। তাহা হইলেই এই পুক্রুটি ( ১২৭ ) রাজগ্ুণে বিভূষিত হইয়া প্রজ্জাপালনরূপ রাজধন্্ম রক্ষা করিতে সমর্থ হইবে 1৮ মদালসা রাজার এই কথা শুনিয়া বলিলেন, “মহারাজ, আপনি যাহ! বলিলেন, তাহাই করিব। যাহাতে আর আপনাকে পরে আক্ষেপ করিতে না হয়, তদ্বিষয়ে মনোযোগিনী "হইলাম জানিবেন। আপনার আজ্ঞানুমারে আমি অলর্ককে রাজনীতি শিক্ষাই দিব, কিন্তু পারমার্থিক শিক্ষাপ্রদান একেবারে বাদ দিব না। পারমার্থিকতত্ব শিক্ষা দিলে পরমেশ্বরে ভক্তি ও বিশ্বাস জন্মিবে। পরমেশ্বরে ভক্তি ও বিশ্বীসরূপ ভিত্তির উপরে রাজনীতিশিক্ষা বা রাজনীতিচর্চা স্ুপ্রতিষ্টিত হইলে, উক্ত শিক্ষার পরিণাম শোচুনীয় হয় না। পরমেশ্বর সর্ববকার্ষ্েই মনুষ্যের একমাত্র মাশ্রয়। তিনিই একমাত্র শান্তিদাতা । যদি কোন কষননী, পুলের হিতকামনা করেন, তাহা হইলে তিনি যেন সর্বাগ্রে পুক্রকে পরমেশ্বরে ভক্তি- মান হইতে শিক্ষা দেন এবং পরমেশ্বরের মহিমা বুঝাইতে চেষ্টা করেন। পরমেশ্বরের প্রতি দৃঢ়া ভক্তি জন্মিলে রাজা প্রজারঞ্নে সমর্থ হয়েন। মহারাজ, আপনার উপদেশ আমার শিরোধার্ধ্য । আমি অদ্য হইতে অলর্ককে রাজনীতিশান্ত্র শিক্ষা দিব।” অনন্তর, অলর্ক যৌবন- অবস্থা প্রাপ্ত হইলে মদালসা তীহাকে নিন্মলিখিত রাজ- নীতি উপদেশ সকল প্রদান করিয়াছিলেন হ-_ “হে বৎস অলর্ক, তুমি ঈদৃক্‌ উত্তমরূপে রাজ্যশানন (১২৮ ) করিবে, যাহাতে রাজ্যের কোন ব্যক্তিই তোমার নিন্দ। না করে এবং তোমার বিপক্ষ না হয়। স্ুবিবেচনা 'এবং স্পরামর্শ পূর্বক রাজ্যশাসন করিলে রাজা সর্ববজনপ্রিয় হয়েন। প্রজার মনে কষ্ট দেওয়াই রাঙ্জার পাপ। যিনি প্রজার চিত্তরঞ্জন করিতে পারেন, তিনিই প্রকৃত রাজা । তুমি রাজা হইয়া কখনও প্রজাস্বত্ব লোপ করিও না। যে রাজ্য প্রজা অসন্থুষ্ট হইয়া রাজার নিন্দা করে, তাহাকে পাপরাজ্য কহে! প্রজা, রাজা বা রাজপুরুষ কর্তৃক ক্রমাগত উত্পীড়িত ইইলেই বিদ্রোহী হইয়া উঠে। বিদ্রোহী হওয়া প্রজার পক্ষে মহাঁপাপ। কারণ, মন্ু বলিয়াছেন, “রাজ? নররূপিণী মাননীয় মহতী দেবতা ৮ ঈশ্বরের নিন্দ। করিলে যেমন মহাপাপ হয়, তজ্রপ রাজার নিন্ম! করিলেও মহাপাপ হয়। রাজা বালক হইলেও, এবং যে কোন জাতীয় ও যে কোন ধন্মাবলন্দী হইলেও, তিনি প্রজাসাধারণের মান্য । প্রজ' যাহাতে নিন্দা করিতে ন! পারে, তদ্িষয়ে দৃষ্টি রাখা রাজার একান্ত কর্তব্য। প্রজার ধর্মে রাজার হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। বরং প্রজাগণ যাহাতে নির্বিবদ্ধে স্ব স্ব ধন্ম প্রতিপালন করিতে পারে, তদ্ধিষয্জে রাজার আনুকূল্য করা উচিত। তোমার প্রজাগণ তোমার নিকটে কোন প্রকার অভাবের বা কফির অভিযোগ আনয়ন করিবার পূর্বেবই এ অভাব ও কষ্টের ষথাশক্তি প্রতিকার করিও । প্রজার; ( ১২৯ ) স্থখন্বচ্ছন্দতাই রাজোর স্বদৃ় মূলভিত্তি। ইহারই উপরে রাজা স্বপ্রতিষ্ঠিত থাকে । প্রজার হিতচিন্তায় সদা রত থাকিও। তাহা হইলেই প্রজাগণ তোমার প্রতি খুব সন্তষ্ট থাকিবে? পরস্ীচিন্তাকে কদাপি মনের মধ্যে স্থান দিও না। মিত্র ও সভাদদগণের চটুবাক্যে কদাপি বিমোহিত হইও না। সন্ধি, বিগ্রহ, যান, আমন, দ্বৈধ এবং আশ্রয় এই ছয়টি বিষয় উত্তমকূপে শিক্ষা করিয়া যখন যেখানে যেরূপ বিধেয়, তখন সেখানে সেইরূপ কাধ্য করিবে। প্রভুশক্তি, উতসাহশক্তি ও নত্রক্তিসম্পন্ন হইও। প্রভৃশক্তি ব্যাহত গাকিলে রাজপুরুষদিগের দোষে রাঁজকার্ে বিশৃঙ্খল! উপস্থিত হয় না, রাজ্যে শান্তির ব্যাঘাত ঘটে না, এবং রাজপুরুষদিগের যথেচ্ছা- চারিতা লোপ পায়। রাজার মন্ত্রিগণ সুদক্ষ হইলে রাজ। তাহাদের হস্তে রাজ্যভার অর্পণ করিয়৷ কিয়খকালের জন্য নিশ্চিন্তমনে বিদেশ ভ্রমণ ও মুগয়ায় গমন করিতে পারেন, ব। পররাজ্য আক্রমণে ব্যাপৃত থাকিতে পারেন। রাজার উতসাহশক্তি অব্যাহত থাকিলে রাজ্যে নানা হিতকর কার্ধ্য অনুষ্ঠিত হইয়া থাকে ও যুদ্ধে বিজয়লাভাদি সুসিদ্ধ হয়। হত্তী, অশ্ব, রথ ও পদাতি এই চারিটি সেনাঙ্গকে নদ! পরিপুষ্ট করিয়া রাখিও। যখন কোন দেশ জয় করিবার 'জন্ যুদ্ধধাত্রা করিবে, তখন মৌল, ভূত্য, সুহাত, শ্রেণী, দ্বিষৎ ও আটবিক এই ষট*্প্রকার বল সংগ্রহ ১৩০ ) করিও। বংশপরম্পরায় রাজসেবায় নিযুক্ত রাজার চিরভক্ত সৈন্যের নাম মৌলবল। রাজার বৃত্তিভোগী সেন্যের নাম ভৃতাবল। যুদ্ধকালে গ্রাম হইতে সমাহাত নিদ্দিষ্টকাল যাব রাজার প্রয়োজনসিদ্ধির নিমিত্ত স্থায়ী শিল্িপ্রায় সৈন্যের নাম শ্রেণীবল। যুদ্ধকালে রাজার সাহাব্যার্থ সমাগত মিত্ররাজ-সৈন্যের নাম ম্ৃহৃদ্বল। উৎকোচ ও ভেদনীতি প্রভৃতি উপায় দ্বারা শক্রপক্ষ হইতে স্বপক্ষে আনীত সৈন্যের নাম 'দ্বিষদ্বল। গিরি- কান্তার-বন-সঙ্কটাদি-্থান-পরিজ্ঞানে কুশল, সর্ববত্র গমনা- গমনক্ষম, আরণ্যচর সৈন্যের নাম আটবিকবল। ভৃত্যদিগকে স্নেহাস্পদ বন্ধুগ্ুণের ন্যায় আদর করিও । মিত্রদিগকে আত্বীয়-বান্ধবগণের ন্যায় সমাদর করিও । মন্্রিগণ এবং অন্তান্য উচ্চপদ্স্থিত রাজকীয় কন্মচারি- বর্গের উপরে রাজকার্যযভার সমর্পণ করিয়া কখনও নিশ্চিন্তমনে ভোগবিলাসে রত হইও না। গোপনে সর্ববদ| তাহাদের কার্যাবলী নিরীক্ষণ করিও । নিজের নুথস্বচ্ছন্দতা-বর্ধনের জন্ঠ প্রজার রুধিরসম অর্থ শোষণ করিও না। শরণাগত ব্যক্তিকে যে কোন প্রকারে রক্ষা করিও। মহানিষ্টকারী ছুম্নতি শত্র- গণকে সমূলে উন্মীলিত করিবার জন্য ভেদ, দণ্ড, সাম ও দান এই চারি প্রকার উপায্ধের মধ্যে ষে কোন একটি- দ্বারা কিম্বা সমগ্র'চারিটি উপায়দ্বার! স্বীয়কার্ধয সাধন ( ১৩১ ) করিবে। কিন্তু সহসা যুদ্ধ বাধাইও না, ধাহার যেন্ূুপ মানমর্ধ্যাদা, তাহাকে সেইরূপ মানমর্যাদ! দিও । মাঁনী- ব্যক্তির মানহানি বা মর্যযাদাভঙ্গ করিও না। ভঙ্গ করিলে কালে মহাবিপন্ু হইবে। গুণীর গুণের সমাদর করিও । মধ্যে মধ্যে যজজ্র-অনুষ্ঠটান করিয়া বেদবিগু বিদ্বান ব্রাঙ্মণগণকে অভ্যর্থনা করিও এবং তাহাদিগকে উপযুক্ত দক্ষিণাদানে তৃপ্ত করিও । কারণ, তীহারা তপ্ত হইয়া নিশ্চিন্তমনে বৈদিক শাস্ত্রচচ্চায় এবং বৈদিক- র্্ানুষ্ঠানে নিযুক্ত থাকিলে বৈদিকধর্্ম রক্ষিত হইবে। উহ্থা লুপ্ত হইবে না। দুাতিক্রীড়া, পানদোষ, দিঝানিড্রা রি ইন্দিয়গণের লি জন্য অত্যধিক ভোগাস্ি, পরনিন্দা, কুসংসর্গ ও ব্যভিচার প্রভৃতি নিন্দনীয় কার্ধ্য পরিত্যাগ করিও ॥ লোভ ও মোহকে বিশেষরপে ত্যাগ করিও | রাজাবিষয়ক অতি গুপ্ত মন্ত্রণা যেন ষট্কর্ণে প্রবেশ না করে। অর্থাৎ তুমি ও তোমার প্রধান মন্ত্রী এই দুইজনের চারি কর্ণেই মাত্র যেন উহা প্রবিষ$ঁ হইয়া স্থির থাকে । অতি বিশ্বস্ত প্রধান গুপ্তচরদ্বারা নিজের' প্রজাবর্গের ও পররাজ্োর অবস্থা অবগত হইবে । কোন মন্ত্রী বা প্রধান মন্ত্রী বা সৈগ্যাধ্যক্ষ বা কতিপয় প্রজা, তোমার বিরুদ্ধে ভয়ানক ষড়যন্ত্র বা মহাপরাধজনক কোন দুষণীয কার্য্য করিলে তুমি উহা! সবিশেষ অবগত হইয়া তাহাদিগকে উপযুক্ত ্ণ্ড দিবে। ( ১৩২ ) প্রজারা যদি তোমার প্রতি অনুরক্ত থাকে, তাহা হইলে তাঁহারা কখনই রাজদ্রোহী বা বিদ্রোহী হইবে না, ইহা! নিশ্চয়ই জানিও। তাহারা যাহাতে সদা অনুরক্ত থাকে, তদ্বিষয়ে সা সবিশেষ মানোযোগী হইও। সামন্ত- রাজ ও মিত্ররাজগণের স্বত্ব ও সন্ধি অক্ষু্ রাখিয়া! তাহাদিগের কার্য্যাবলীর প্রতি দৃষ্টি রাখিবার জন্য তীহা- দিগের রাজধানীতে রাজনীতিস্পপ্ডিত নিজের একটি মন্ত্রীকে নিযুক্ত করিয়া রাখিও। যাহাদিগকে অন্তরের সহিত বিশ্বাস করা উচিত নয় বলিয়! মনে করিবে, তাহার! যেন তোমার এই আন্তরিক অবিশ্বীসের কোন প্রকার বাহ চিহ্ন দেখিয়া কোনরূপে ,তোমার এই অধিশ্বাস-ভাব বুঝিতে না পারে। মিষ্টভাষী হইও। কোকিলের মধুর বাণী অনুকরণ করিও । মধুকরের নিকট হইতে পরিশ্রম পূর্বক সারবস্ত্র-সংগ্রহকার্যা শিক্ষা করিও। মগের নিকট হইতে সাবধানতা এবং ক্ষিপ্রকারিতা শিক্ষা করিও । কাকের নিকট হইতে গুপ্তমন্ত্রণারক্ষা শিক্ষা করিও। পিপীলিকার নিকট হইতে সঞ্চয়কার্য্য শিক্ষা! করিও | সূর্ধ্যদেব, বর্ষাকালে শতগুণ বারিধারা-বর্ষণের জন্যই যেমন গ্রীক্ষকালে পুক্রিণী, নদী ও সমুদ্র হইতে জলশোষণ করেন, তত্রপ তুমিও শতগুণ উপকার- বর্ষণের জন্তই . প্রজাগণের নিকট হইতে করশুক্ষ প্রভৃতি অর্থ গ্রহণ করিও। কোন ব্যক্তি প্রিয়ই ( ১৩৩ ) হউক বা অপ্রিয়ই হউক, সে শান্ত্রমতে দগুনীয় হইলেই তাহাকে সমুচিত দণ্ড দিও। পবন যেমন অদুশ্যভাবে সর্বত্র গমন করে, তত্রপ, তুমিও, চ্মবেশ অবলম্বন করিয়া অপরিজ্ঞাতরূপে প্রজাগণের আভ্যান্তরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করিও। শারীরিক ক্লেশকে ক্লেশ বলিয়া গণ্া করিও না) রাজ! ক্লেশ- সহনশক্তি অবলম্বন না করিলে যুদ্ধাদি কার্ষ্য ব্যাপৃত হইতে পারে না। “যুদ্ধে ব্যাপূত হইয়া অসাধারণ শক্তি. প্রদর্শন ন| করিলে বীরপদবাচ্য হইতে পারে না, রাজার বীরপদবাচ্য ওয়া ডচিত। বাল্যকাল হইতে রাজা দ্ধ-কৌশল শিক্ষা কিয়া স্থুনিপুণ যোদ্ধ। হইলে সেম্যাধাক্ষের দোষে যুদ্ধে পরাজয় ঘটে না। হে বৎস, তুমি যুদ্ধ-বিদ্যায় বিশেষ পারদর্শী হইতে চেষ্টা করিও। যুদ্ধে স্থুনিপুণ হইও। প্রজা-প্রতিপালনে প্রজার অভাব পুরণ ও প্রজান্খসম্বদ্ধনের নিমিত্ত ক্লেশসহন করাই রাজার ধর্দম। রাজা বদি এই ধর্ম প্রতিপালন ন! ক্রিয়া কেবল শরীর-শোভা এবং বসন-ভূঁষণের উজ্জ্বলতা! দেখাইবার জন্যই সিংহাসনে আরূঢ় হয়েন, তাহা হইলে তাদৃশ রাজা কখনই 'প্র্ঞারগ্ক বা প্রজাপ্রিয় হইতে পারেন না। তীহার রাজ্যে রুত্রদণ্ডনীতি প্রবর্তিত হইলেও পূর্ণ্নপে শাস্তি স্থাপিত হয় লা। রুদ্রদণ্ডের ভয়ে তশুকালে প্রজাগণের মধ কোন কোন, রা ১২ ( ১2৪ বাহিরে বিদ্রোহভাব প্রকাশিত না হইলেও অন্তরে বিদ্রোহবহ্ছি প্রধূমিত হইয়া বহুকাল অবস্থিতি করে। স্বিধা পাইলেই প্রজ্বলিত হইয়া উঠে। তখন সেই দাবানলভুল্য বিদ্রোহাগ্রি নির্ববাপিত “করিতে রাজাকে অনেক কষ্ট ভোগ করিতে হয়। সেইজন্য বলিতেছি, হে বৃতস, তুমি সার্থক রাজপদবাচা হইও। প্রজার চিত্তরঞ্জক”ই 'রাজা, এই পদের প্রকৃত অর্থ স্তরাং প্রজার চিন্তরঞ্জক হইয়াই তুমি তোমার “রাজ।” এই উপাধিটিকে সার্থক করিও । যখন দেখিবে যে, যুদ্ধনা করিলে আর কোন উপায়ই নাই, তখনই যুদ্ধ করিবে। নতুবা সর্বদা যুদ্ধের. পক্ষপাতী হইও না, কারণ, যুদ্ধে প্রভূত ব্যয় হয় এবং বহু নরশোণিত ক্ষয় হয়। যুদ্ধে প্রড়ৃত বায় করিয়া রাজকোষ শুন্য করা এবং পৃথিবীতে নররক্তের নদী প্রবাহিত করিয়া পাপের মার বৃদ্ধি করা কোন প্রকারেই উচিত নয়।” শান্তিপক্ষপাতিনী মদালসা, ইত্যাদ্দিরূপে কণিষ্ঠপুক্র অলর্ককে প্রতিদিন নানাবিধ রাজনীতি উপদেশপ্রদান ও নানা বিষয়ে স্শিক্ষিত করিয়া কয়েক বর্ষের মধ্যে তাহাকে রাজ হইবার উপযুক্ত বাক্তি করিয়। দিলেন। তখন রাজ! খতধবজ বুঝিলেন যে, তাহার পত্রী মদালসা কেবলমাত্র মুক্তিশান্ত্েই সুপগ্ডিতা নহেন, কিন্ত্ত তিনি রাঙ্গনীতিশান্সেও অদাধারণ বিছুষী। তীহাত্রই : শিক্ষা প্রদানের গুণে কনিষ্ঠ পুত্র (১৩৫) হাল ধাজপদে অভিষিক্ত হইবার উপযুক্ত হইয়াছে। এইরূপে রাজ! খতধবজ অলর্ককে 'রাজপদে অভিষিক্ত করিবার উপযুক্ত স্থির করির! শুভদিনে ও গ্টতক্ষাণে তাহাকে যথাবিধির্সংহাসনে বসাইলেন এবং তাহার হস্তে রাজাভার অর্পন করিলেন। আনন্তর তিনি কোলাহল- পুরণ গৃহস্থাশ্রম পরিত্যাগ করিয়া বুদ্ধবয়সে একা গ্রচিত্তে পরমেশ্বরের উপাসন। করিবার জন্য রাজ্জী মদালসার সহিত শান্তিপূর্ণ তপোবনে বাস করিতে উদ্যোগী হইলেন । মদালস! তপোবনে গমন করিবার পুর্বেব অলর্ককে একটি প্রশস্ত অঙ্গুরীয়ক দান করিয়া বলিলেন, “বু, যখন তোমার করেশ অহ হইয়া উঠিবে, যখন তুমি শক্রু কর্তক"প্রগীড়িত ইয়া ঘোর মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করিবে এবং যখন কোন কারণবশতঃ তোমার ধৈর্য্য, স্থ্র্যা ও গাস্তীর্ধ্য বিনষ্ট হইবে, তখন এই প্রশস্ত অঙ্গুরীয়কে যাহা লিখিত আছে, তাহ। পাঠ করিবে।” কনিষ্ঠ পুত্র মলর্ককে এই কথা বলিয়া শান্তিপক্ষপাতিনী মহাপণ্ডিতা মদাঁলসা রাজ! খতধ্বজের সহিত তপোবনে গমন করিলেন। তার পর রাজা অলর্ক, মাতৃদত্ত রাজনীতি-উপদেশ অনুসারে দোর্দ গু প্রতাপের সহিত রাজত্ব করিতে লাগিলেন । তাহার প্রশংলা সর্বত্র ব্যাপ্ত হইয়া পড়িল। প্রজাগণ সর্বদা সর্ববজ্র তাহার সচ্চরিত্রের ও রাজ্যশাদন-শক্তির মহিম!, কীর্তন করিতে লাগিল। লকলেই তীহার রাজ্যকে, রামরাঞ্য বলিয়া ( ১৩১ ) কাত্তন করিতে লাগিল । ছুঃখ কাহাকে বলে, এ রাজ্যের প্রজারা তাহ! জানিত না। রাজা অলর্কের এইরূপ প্রশংসাবাদে তাহার জোষ্ঠ ভ্রাতা স্বাহ বৈরাগ্য-ধন্মন বিস্বৃত হইয়া তাহার প্রতি অতিশয় ঈর্ষান্বিত হইয়া উঠিলেন এবং তীহাকে বিপন্ন "করিয়া তাহার রাজা আত্মসাত করিবার জন্ত তাহার পরম শক্র বারাণসী-রাজের সহিত ষড়যন্ত্র করিতে লাগিলেন। বারাণপী-রাভ, রাজনীতি-নিয়মানুসারে রাজা অলর্কের নিকটে দূত প্রেরণ “করিয়া তাহাকে জানাইলেন যে, রাজকুমার স্থবাু আপনার জ্যেষ্ঠ ভাতা । তিনি এক্ষণে রাজ্যাভিলাধী। প্রাচান ভারতীয় 'রাজনীতিশান্ত্র অনুনারে তিনিই * রাজোর অধিকারী। অতএব আপনি তাহার হান্তে আপনার রাজা- ভার সমর্পণ করিবেন। নতুবা আপনার বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ব-ঘোষণ! করিবেন। আমি তাহাকে সাহায্য করিব। রাজা অলর্ক, দূতমুখে বারাণসীরাজের কথা শুনিয়া দূতকে বলিলেন,--আমার পিতা ও মাতা আমাকে উপযুক্ত বিবেচনা করিয়া আমাকে রাজ্য প্রদান করিয়াছেন। অতএব আমি কেবলমাত্র বারাণসীরাজের কথায় ভীত হইয়া আমার জ্যেষ্ঠের হস্তে রাজা; সমর্পণ করিব না। তিনি যেমন যুদ্ধের কথা বলিয়াছেন, আমিও তত্রপ বলিতেছি যে, আমিও বিনা যুদ্ধে আমার রাজ্য কাহাকেও প্রদান করিব না | আমি নিজ দুত পাঠাইয়া এ কথা ( ১৩৭ ) বারাণসীরাজকে ' জানাইতে অপমান বোধ করি। অতএব আমি তীাহারই দূত দ্বারা ত্রাহাকে এই কথা জানাইলাম । বারাণসীরাজের দূত এই কথা গুনিয়। বারাণসীতে ফিরিয়া আমিল এবং খাথালময়ে রাজসভায় উপস্থিত হইয়া রাজা অলর্কের কথা বারাণসীরাজকে জানাইল। বারাণসী- রাজ সেই কথা শুনিয়।৷ অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইলেন। যুদ্ধ আনিবাধ্য হইয়া উঠিল। তুমুল যুদ্ধ আরন্ধ হইল। বারাণসীরাজের অধিক-সংখ্যক ভীষণ সৈন্য ও যুদ্ধোপ- করণ থাকায় রাজা অলর্ক পেই যুদ্ধে পরাজিত হইয়া সিংহাসনচাত হইলেন। এই বিপদের সময় তীহার মাতৃদত্ত সেই অঙ্গুরীয়কের কুথা মনে পড়িল। 'তিনি সেই অঙ্গুরায়কে লিখিত এই কথাগুলি পাঠ করিতে লাগিলেন “মুঢ় সংসারাসক্ত মনুষ্যগণের সংসর্গ সর্ববতোভাবে পরিতাজ্য। সাধুসঙ্গ করাই বিধেয়। সাংসারিক কামন| দূর করাই শ্রেয়ঃ। মুক্তিপথে অগ্রমর হওয়াই উচিত। মুক্তিই বিষাদ-রোগের' একমাত্র মহৌষধ ।” রাজ৷ অলর্ক, মাতৃদত্ত অঙ্গুরীয়কে লিখিত এই কথাগুলি পাঠ করিয়া রাজ্যচুতি'জনিত শোক সম্বরণ করিতে বত্বুবান্‌ হইলেন। তিনি বুদ্ধিমান ছিলেন। তিনি তাহার জোষ্ঠ ভ্রাতা স্থৃবান্থর ম্ঘায় বকধার্ট্মিক ছিলেন না। বাহুর বৈরাগ্য জলবুদ্ধ দের তুল্য ক্ষণিক হইয়াছিল। তীহার যদি (১৩৮ ) দৃ-বৈরাগ্যই জন্মিত, তাহা হইলে তিনি ভ্রাতার নিকট হইতে মাৃপিতৃদত্ত রাষ্জা অবৈধ উপায়ে কাড়িয়া লইতেন ন| এবং পুনরায় অনিত্য সাংসারিক স্ুখভোগের নিমিত্ত লালায়িত হইতেন না। প্রকৃত বৈরাগ্য *জন্মিলে জ্ঞানী- ব্যক্তি পুনরায় ভোগবিলাসপঙ্কে মগ্ন হইতে ইচ্ছা করেন না। জ্ভ্কান না জন্মিলে বৈরাগ্য জন্মে না। অলর্ক বিপদে পড়িয়া কন্টভোগ করিয়াছিলেন । তাই তাহার জান জন্মিয়াছিল এবং সেই কারণে তাহার রাজ্যচুতির পর ছুঃখশোকপুর্ণ অনিত্য রাজ্যসম্পদের প্রতি তাহার প্রকৃত (বরাগ্য জন্মিয়াছিল। বিপদে পড়িয়া কষ্ট ভোগ করিলে প্রেরূপ শিক্ষালাভ করা যায়, দেখিয়া শুনিয়া ব পড়িয়া ঠিক সেরূপ শিক্ষালাভ করিতে পারা যায় না! মাতার স্রপদেশ শ্রবণ করিয়া স্বাহুর ক্ষণিক বেরাগা জন্মিয়াছিল, কিন্তু তত্তজ্ঞান উৎপন্ন হয় নাই । স্ত্রতরাং প্রকৃত স্থায়ী বৈরাগ্যও উৎপন্ন হয় নাই। তাহার তত্বঙ্ঞান ও প্রকৃত বৈরাগ্য জন্মিলে তিনি প্রথমে উপেক্ষিত রাজোর পুনঃপ্রাপ্তিলালসায় বারাণসীরাজের দ্বারে শরণাপন্ন হইতেন না। অলর্কের অঙ্গুরীরয়কে ধাহা লিখিত ছিল, তাহার সারমন্্ন এই থে, রাজ্য আজ আছে কাল নাই, কাল থাকে তো পরশ্ব থাকে না। ঈদৃশ অস্থায়ী রাজ্যের ভোগ-প্রত্যাশায় মত্ত হওয়া উদ্ভানী ও বীতরাগ ব্যক্তির পক্ষে বিড়ম্বনামাত্র | ( ১৩৯) সুলভা। একদ! মহারাজ জনকের রাজর্সভায় স্থলভানান্না এক ্রক্মচারিণী রাজকন্তা উপস্থিত হইয়াছিলেন। মহারাজ জনক তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনি কে?” স্থলভা বলিলেন,--“আমি এক রাজকন্যা । একটি উচ্চ রাজকুলে জন্মগ্রহণ করিয়াছি। আমার নাম স্বলভা। আমি ব্রহ্মচর্য/-ব্রত-সমাপ্তির পর বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হইয়া" দ্বিতীয় গৃহ্স্থাশ্রমধর্ম্ম প্রাতিপালন করিতে ইচ্ছুক হইয়াছিলাম। কিন্তু আমার উপযুক্ত বিদ্বান, বুদ্ধিমান্‌ এবং অন্যান্য নানাসদৃগুণে বিভুধিত পাত্র পাও গেল না বলিয়া আমি বিবাহ করি নাই। আজীবন বরক্ষচর্ধাব্রত অবলম্বন করিতে বাধ্য হইয়াছি। নির্ববাণ-মুঞ্তিলাভের জন্য একাকিনী মুনিধম্মা প্রতিপালন করিতেছি ।” এই চিরব্রন্গচারিণী' স্থুলভা, তত্বজ্ঞান-শান্ত্রে অসাধারণ বিদুষী ছিলেন। মহারাজ জনক স্বয়ং একজন জীবন্মুক্ত মহা- পুরুষ ছিলেন। মহামুনি ব্যাসের পুজ আজন্ম তত্বজ্ঞানা মহাত্ব। শুকদেব পর্যন্ত জনকের নিকটে শিক্ষালাভ করিয়া নিজেকে কৃতার্থ ও ধন্য মনে. করিয়াছিলেন। ইহার রাজমভ। সর্বদা যাজ্ঞবন্ক্য প্রভৃতি মহামনাঃ আধ্্য-মহযিগণ কর্তৃক অলঙ্কত থাকিত। সেখানে সাধারণ পল্পবগ্রাহী “ভবঘুরে” লোৰ পাণ্ডিত্য দেখাইতে স্হলী হইত না। কোন শাস্ত্রে অসাধারণ পাণগ্তিত্য না থাকিলে সে সভায়, ( ৯৪ ) কেহ প্রবেশাধিকার পাইত না। ঈদৃশী সভায় ঈদৃশ জ্ঞানী মহারাজের সহিত পুর্বেবাক্তরূপে স্পষ্ট কথায় মনোভাব বান্ত করিয়া আলাপ কর৷ একটি স্ত্রীলোকের পক্ষে বড় সহজ ব্যাপার নয়। স্থলভা, মহারাজ জনককেও 'মুক্তিতত্ব সম্বন্ধে অনেক অনুল্য উপদেশ দিয়াছিলেন। ধন্য ধন্য আমাদের সেই শিক্ষার আকর হ্বপভ্য প্রাচীন ভারতবষ ! যে ভারত- ববের একটি মহিল! তাদৃশী সভায় ঈদৃশু জীবন্মুক্ত মহাতা। মহারাজ জনককেও জ্ঞান-গরিম। প্রদর্শন করিয়া বিস্মিত করিয়াছিলেন, ঈদৃশ উন্নত ভারত অধুনা গতসব্বন্য ও দৃতপ্রায় হহলেও ধন্য ও প্রশংসার্থ। তৎকাণে স্ত্রীলোক, উপযুক্ত পাত্র না পাইলে বিবাহহ করিত না। কিন্তু আজীবন ব্রহ্মচধ্যব্রত অবলম্বন করিয়া সত্যন্বরূপ, জ্ঞান- স্ববপ ও আনন্দন্বরূপ পরমেশরে বিলীন হওয়াই শ্রেয়- স্বর বলিয়া মনে করিত। যে কোন প্রকার একটা তির সহিত পরিণয়সুত্রে আবদ্ধ হইয়৷ রাত্রিদিন কলহে শরীর ক্ষয় করিত না এবং নিজের মনের অশান্তি নিজে বন্ধিত করিত না, দশগণ্ড সন্তান প্রনব করিয়! ভূভার বন্ধন করিত না, দারিদ্র্যের মাত্র বুদ্ধি করিয়। বিব্রত হইত না, কন্যার বিবাহের ব্যয়-ভাবনায় অস্থির হইত না! এবং কন্যার শ্বশুরাল্য়ের গঞ্জনার কথা শুনিয়া নরক-ন্ত্রণা ভোগ করিত না।. পৌরাণিক যুগের পর বৌদ্ধ-যুগেও, [.58৯:.7 নরনারীগণ, এই সকল সাংসারিক ক্রেশ বুঝিতে পারিয়। গাহস্থাধর্ম-প্রতিপালনে অনাস্থা প্রীদর্শন করিত এবং দলে দলে সন্ন্যাস গ্রহণ করিত । বৌদ্ধযুগে সন্নযাীর সংখা এত বাড়িয়৷ গিল্রাছিল যে, এ বদ্ধিত সংখ্যা শুনিলে বিস্মিত হইতে হয়। এক একটি আশ্রমে বা বিদ্যালরে বন্ত সহজ জ্ীলোক বাস করিত। এত অধিকপলংখাক স্াীলোকের বাসের জন্য বুহৎ বুহৎ অট্টালিকা নিশ্ধি হইত।1 কাশীর স[রনাথের একটি মহিলা-বিদ্যালয়ে দশ সহত্র বৌদ্ধ-মহিলা বাস করিত । ইহাদের অশন, বসন ও পুস্তক সকল তাতকালিক বৌদ্ধ রাজার এবং কুবের তুলা বণিকৃগণই* প্রধান করিতেন। সন্গালীর সংখ্যা "অতাধিক বৃদ্ধি পাওয়াতে সন্ন্যাসি-সমাজে নানাবিধ দৌষ প্রবেশ করিতে লাগিল এবং ক্রমশঃ বৌদ্ধযুগের শেষ ভাগে বৌদ্ধগণ বুদ্ধদেবের উপদেশ-বাঁক্যের ভিন্ন ভিন্নরূপ অর্থ বুঝিয়া এই ধর্মের নানাবিধ শাখার সুষ্টি করিতে লাগিল । বৌদ্ধ-সমাজে এইরূপ বিপ্লব উপস্থিত হইয়া ভারতের অগ্যান্য ধর্্-সমাজের প্রভূত অনিষটনাধন করিতে লাগিল। বৌদ্ধযুগের শেষভাগে এইরূপ ধর্মাবিপ্নীবে ঘখন ভারতবৰ জর্ভরিত হইয়াছিল,* তখন পরমেশ্বরের দদিচ্ছায় শ্রুতি-্মুৃতি-প্রতিপাদিত সনাতন সত্য আর্ধ্য-ধর্মের পুনঃ প্রতিষ্ঠার 'জন্য এবং ব্রাহ্মণ, ক্রয়, বৈশ্ব ও শুদ্র এই চারিবর্ণের ও ব্রহ্মচারী, গৃহী, বান প্রস্থ :ও ভিক্ষু বা যতির (১৪২ ) চারিটি আশ্রমের পুনর্ববিভাগের নিমিন্ত শিবাবতার মহাত্মা শঙ্করাচার্ধ্য জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন । সেই ধর্্মাবিপ্র বযুগে চারি বর্ণের ও চারি আশ্রমের মহা প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি হইয়াছিল বলিয়া ঈশ্বরের সদিচ্ছারূপ "ম্বভাবের নিয়ম অনুসারেই বর্ণ ও আশ্রম-ধর্ম্ের পুনঃ প্রচলন-যুগ আবার আরদ্ধ হইল। সামাজিক প্রথা-প্রচলন এই নিয়ামেই এইরূপেই আরদ্ধ হয়। নতিবা এইরুপ বুঝা ঠিক নয় যে, ব্রাহ্গণ-পঞ্চিতগণ একদিন হঠাত একটি সভ| করিয়া কয়েকটি সংস্কিত শ্লোক রচনা পূর্বক উচ্চৈঃস্বরে এই প্রচার করিয়া দিলেন যে, কলা হইতে আমাদের বাবস্থা হন্ুলারে দেশের লোক জাতিভেদ ও আশ্রম্মভেদ যেন আবশ্য ভাবশ্য মানে! গার তার ঠিক পরদিন হইতেই অমনি জাতিভেদ ও আশ্রমভেদ-প্রথা গ্রচলিত হইতে লাগিল। এইরূপে বর্ণীশ্রম-বিভাগের প্রথা কখনও প্রবর্তিত হয় নাই এবং হইতেও পারে না। অবস্থানু- সারেই ব্যবস্থা প্রচলিত হইয়াছে এবং হইয়া থাকে । স্মৃতিযুগ বা সংহিতা-যুগও এইরূপেই আরব্ধ হইয়াছিল। বৈদিক-যুগের শেষভাগে যজ্দের বাপদেশে ( অছিলায় ) উদর-পুরণার্থ অসংখ্য গোহত্যা করী হইত। দেশে কুষ্ট- ব্যাধির মাত্র! ও দুগ্ধাভাবের ভীষণ চিন্তা! বাড়িতে লাগিল । দেশে গোহত্যা প্রথা রহিত করিবার মহা প্রয়ৌজনীয়ত। উপলব্ধ হইতে লাগিল। তখন খষিগণ কর্তৃক শান্ত (১৪৩ ) প্রণীত হইতে লাগিল এবং পূর্বেবাক্ত সামাজিক নিয়মানু- পারে বৈদ্দিক-যুগের গোহতা-প্রথা ক্লেমশঃ তিরোহিত, হইয়াঠিল। শবরী। ভট্টি-কাব্যের ষষ্ট সর্গে লিখিত আছে যে, একদা! দশরথ-পুক্র রাম্বন্দ্র যখন সীতাবিরহে অধীর হইয়া সাতার অস্থেষণার্থ বনমধ্যে ইতস্ততঃ পর্যটন করিতে- ছিলেন, সেই স্ময়ে তিনি ও তাহার ভ্রাতা লক্খমণ চিরত্রক্মঠারিপী মহাপণ্ডিত! যোগিনীত্রেষ্ঠা "শ্রমণা-নান্দী সিদ্ধ শবরীর আশ্রমে প্রবেশ করিয়াছিলেন। ওহাকে দর্শন করিয়। তাহারা অত্যন্ত প্রীত হইয়াছিলেন। তাহাকে দর্শন করিয়৷ তাহাদের সমস্ত শ্রাস্তি-ক্লাস্তি দুর হইল। তীহাদের এইরূপ বোধ হইল, যেন তাহার! দুই ভ্রাতা দিব্য “জুড়ীগাড়ীতে” 'আরোহণ করিয়া সেই আশ্রমে উপস্থিত হইয়াছেন। পদব্রজে অরণ্য-ভ্রমণের মহাকরেশ মুহূর্তমধ্যে তাহারা ভুলিয়া গেলেন। শবরী স্থবিখ্যাতা৷ পৰিত্র' পুষ্য। তারার স্কায় পৰিভ্রচরিত্রা ও মঙ্গলময়ী ছিলেন । তিনি বন্ধল পরিধান করিত্েন। পুরুষ-সঈন্ন্যাসীর গ্যায় তাহার কটিদেশ ঝুষ্নির্নিত, কটিবন্ধে আবদ্ধ ছিল।. কঠোর যোগাত্যাসে ভাহার দেহ প্ীণ 7286...) হইয়া গিয়াছিল। তিনি পুরুষ-ব্রক্মসারীর ন্যায় পলাশ- দণ্ড ধারণ করিতেন। স্ৃগচর্্োপরি উপবেশন করিতেন । খলতা-কুটিলতাদি দোষে তীহার চিত্ত কখনও বিকৃত হয় নাই। তীহার চিত্ত ও চরিত্র অতি নির্মল ছিল। তিনি সাধ্বী ও সরলা ছিলেন। তিনি দেব- পক্ষপাতিনী, আনন্দিত! ও সর্বদা ধণ্মকন্ম্মে রতা ছিলেন। যে সকল ফল ও মূল ভক্ষণ করিলে ইন্দ্রিয়ের ব চিত্তের বিকার জন্মে, তাদৃশ ফলমুল তিনি কখনও ভক্ষণ করিতেন না। তিনি দুগ্ধ ও সান্বিক ফলমুলমাত্র আহার করিতেন। তিনি অশেষ-শান্ত্রপারদর্শিনী ছিলেন। শরীরামচন্দ্র ঈদৃশী যোগিনা পণ্ডিতা শবরীকে দেখিয়া তাহার নিকটে উপবেশন করিলেন এবং কিয়গ্ক্ষণ পরে তাহাকে নিন্ললিখিত প্রশ্নগুলি জিজ্ঞামা করিতে আরম্ত করিলেন £-- 35 & “আপনি অমাবস্য। তিথিতে পিভৃলোকের তৃপ্তির জন্ত উত্তমোত্তম স্ুত্যাত্ু ফলাদি দ্রব্য দ্বারা পার্ববণশ্রাদ্ধ করিয়া, থাকেন কি? আপনি কি ইন্দ্রাদি দেবগণের শ্রীতির নিমিত্ত অগ্রনিতে ঘ্বৃতাছতি প্রদান করেন? আপনি কি যজ্ঞে ব্রাঙ্গণগণের সহিত মিলিত হইয়া সোমলতাকে নমস্কার করেন ? গ্রাতঃসন্ধ্যা ও সায়ংসন্ধ্যা-বন্দনের সময় আপনি কি থাবধি আচমন করেন ? অগ্নিহোত্রী ব্রাহ্মণ দিগের সহিত আপনি ফি আধ্যাত্মিক-তত্ব-কথার আলাপ (১৪৫ ) করেন? তপস্যাচরণে কোন কব্লেশ বোধ করেন কি? যমের ভয় পরিত্যাগ করিয়াছেন কি ?” শবরী এই সকল প্রশ্ন শুনিয়া উত্তর দিলেন, “হে ভগবন্‌, তপস্তানুষ্ঠান-বিধয়ে আপনি রুপাপুরববক যাহা যাহা জিজ্ঞাসা করিলেন, সেই সকল যথাশক্তি নির্ববাহ করিতেছি । এ সকল বিষয়ে কোন বিঘ্ন উপস্থিত হয় নাই। সকলই কুশল জানিবেন। তপোনুষ্ঠানে ক্লেশ বোধ করি না। যমের তয় পরিত্যাগ করিয়াছি ।” ভ্টিকাব্যের শবরীর বর্ণনা দেখিয়া বোধ হইতেছে যে, পূর্ববকালে পুরুষের ম্যায় ক্্রীলোকও পলাশ-দ্ড ধারণ করিত, মুগ্তনির্মিত কটি বন্ধ ধারণ করিতে পারিত, অমারস্যাদি পুণ্য-তিথিতে পার্বরণ- শ্রাদ্ধ করিতে পারিত, মৃগচন্মে উপবেশন করিতে পারিত, মন্ত্রোচ্চারণ পুর্ববক হোম করিতে পারিত, জ্ঞানী সচ্চরিত্র ্রাহ্মণ-পঞ্চিতগণের সহিত দর্শন-শান্্ব আলোচনা বা আলাপ করিতে পারিত, যোগাভ্যাস করিতে পারিত, যমের ভয় পরিত্যাগ করিয়া মোক্ষপথে যাইবার অধি- কারিণী হইতে পারিত এবং নিজ তপঃপ্রভাবে বা নিজের গুণে পরমেশ্বরের অবতার ক্রীরামচন্দ্রেরও অন্বেষণীয়া, মানত! ও আদরণীয়। হইতে পাঁরিত। পূর্ববকালে স্ত্রীলোক নিজেই হোম. করিত, পুজা করিত ও তর্পপাদি ক্রিয়া করিত। ।পুরোহিত মহাশয়ের আগমন-প্রতীক্ষায় থাকিয়া অফালে অপ্রশন্ত ক্ষণে ধর্্মানুষ্ঠীন করিয়া উহা পণ্ড করিত না। ১৩ ( ১৪৬ ) কোন কোন পুরোহিত মহাশয় আড়াই দগুমাত্র স্থায়িনী কোন একটি শুভ তিথিতে ছাপ্পান্ন জন যজমানের বাটীতে লক্গণীপুজা সারিয়! থাকেন বলিয়া, পাছে এরূপ একজন পুরোহিত এর্ূপে অসময়ে অবিধি পূর্বক পুজা করিয়া ধন্মুকণ্ম পণ্ড করেন, এই ভয়ে পুর্ববকালের শিক্ষিত৷ ভারতীয় আধ্য-মহিলার যথাসময়ে পঞ্জিক'নিদ্িষ্ট শুভ- ক্ষণে নিজেরাই ধর্ম্নকম্মা অনুষ্ঠান করিতেন। তীহার৷ এই শান্্রবাক্য মানিতেন যে, “অকালে লক্ষ-কোটি হোম কর। অপেক্ষা প্রকৃত কালে শুভমুহূর্তে একটিমাত্র আন্ৃতি প্রদান করাও ভাল।. পুরোহিতকে দক্ষিণা দিতে হইবে, এই ভয়ে তীহারা সর্বদা ,পুরোহিতকে ডাঁকিতেন না, নিজেরাই হোম-পুজাদি ক্রিয়। করিতেন, এইরূপ বিবেচন! কর! ঠিক নয়। কারণ, দরিদ্র বা মধ্যমবিত্ত লোক সকল পুরোহিতকে ন! ডাকিলে এইরূপ বিবেচনা অনেকে করিতে পারিতেন বটে, কিন্তু সম্রাটের প্রাসাদে সম্রাজ্ভীর দক্ষিণ দিবার ভয় হইবে কেন? তাহার কি অর্থের অভাব ছিল ? না, বদান্যতার অভাব ছিল? তিনি নিজেই পুজা-হোমাদি করিতেন। সর্বদা পুরোহিতকে ডাক৷ হইত না। বিবাহ-উপনয়নাদি প্রধান প্রধান ক্রিয়ার সময়, পুরোহিতকে ডাকা হইত । রামায়ণের অযোধ্যাকাণ্ডের বিংশতিতম অধ্যায়ের ১৫ প্লোকে দেখিতে পাওয়! যায় যে, সম্রাট দশরথের পত্রী সম্রাজ্ঞী কৌশল্যা পট্টবস্ত্র পরিধান ( ১৪৭ ) করিয়া হৃষ্টচিন্তে বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণ পূর্বক হোম করিয়া- 'ছিলেন। আঁত্রেয়া। যে সামবেদের স্মধুর গানে আকৃষ্ট হইয়। খধিগণের তপোবনে সিংহ, ব্যাত্, সর্প প্রভৃতি ভীষণ জীব, হরিণ- শশকাদি শান্তম্বভাঙ জন্তুর প্রতি স্বাভাবিক আজন্ম শক্রভাব ত্যাগ করিত এবং এক তপোবনে স্বজাতির ন্যায় পরস্পর গ্রীতিসূত্রে আবদ্ধ ও সম্মিলিত হইয়! একত্র বাস করিত, সেই সামবেদেরৎ চিরশান্তিকর ্রমধুর গান, পুর্ববকালের ভারত-মহিলাগণও মহাযত্ু ও পরিশ্রামের সহিত শিক্ষ। করিতেন এবং উহাতে প্রগাঢ় পাণ্ডিত্য লাভ করিতেন। সামবেদ অধ্যয়নের জন্য টাহাদের ছা'ত্রী- জীবনের কঠোর সহিষু্তা, কঠিন প্রতিজ্ঞা এবং অসাধারণ অধ্যবদায়ের বৃত্তান্ত পাঠ করিলে ইহা বুঝিতে পারা যায় বে, তাহাদের উচ্চশিক্ষার শতাংশের এক অংশও আধুনিক নরনারীগণ অদ্যাপি লাভ করিতে পারেন নাই । অধুনা স্কুল-কলেজের ছীত্রগণ যেমন কোন স্থলে পাঠের অস্থুবিধ। হইলে প্টু।ন্মফর্‌ সার্টিফিকেট” লইয়া অন্ত্র পড়িতে যায়, তজ্রপ পূর্ববকালেও কোন খধষির আশ্রমে পাঠের বিদ্ব বা অসুবিধা উপস্থিত হইলে খধষির অনুমতি (১৪৮ ) লইয়া ছাত্রীরা অন্থত্র পড়িতে যাইতেন। মহাকবি তবভূতি- প্রণীত উত্তরচরিতনামক নাটকের দ্বিতীয় অস্কে দেখিতে পাওয়া যায় ষে, মহব্ি বালীকির ছাত্রী আপ্রেয়ীকে বাসন্তী জিজ্ঞাস! করিতেছেন__“আর্ষো আন্রেযি, কি জন্য আপনি এই দণ্ুডকারণ্যে মহষি অগস্ত্যের আশ্রমে আগমন করিয়া- ছেন? এত পরিশ্রম করিয়া, এতদূর পর্যটন করিয়া অ(পনার এখানে আিবার উদ্দেশ্য কি?” আত্রেয়ী বলিলেন, ৭গুনিয়াছি, এই দগুকারণ্যে আগস্ত্-গ্রমুখ মহধিগণ বাদ করেন। তীহারা সুমধুর উচ্ৈঃস্থরে গীয়মান সামবেদের পারদর্শী আচার্্য। তাহাদের নিকটে সাম ও অন্থাগ্ বেদ, বেদান্ত ও উপনিষদাদি শাক সমূহ অধায়ন করিবার জন্য মহষি বাল্ীকির আশ্রম হইতে পর্যটন করিতে করিতে এখানে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছি।” বাসন্তী জিজ্ঞাস] করিলেন, “কেন? যখন অন্যান্য মহামতি মুনিগণ সেই প্রাচীন বেদাচাধ্য মহষি বাল্মীকির নিকটে স্বচ্ছন্দে এ সকল শাস্ত্র অধ্যয়ন করিয়া মহালন্তোষলাভ করিতেছেন এবং তাহার সেবায় আনন্দ অনুভব করিতেছেন, তখন আপনি তাদৃশ স্থান পরিত্যাগ করিয়া এই স্বৃদুরবস্তী দগুকারণ্য প্রদেশে আপিয়া দীর্ঘকাল নাবশ অধ্যয়নার্থ প্রয়াসিনী হইয়াছ কেন ?” আত্রেয়ী বতিলেন, “তথায় অধ্যয়নের মহাবিদ্ব উপস্থিত হইয়াছে, তজ্জন্য এখানে আসিতে বাধ্য হইয়াছি।” বামন্তা (১৪৯ ) জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি প্রকার বিদ্বু ?” আত্রেয়ী বলিলেন-_ “কোন এক ব্যক্তি মহধি বালীকির আশ্রমে দুইটি শিশুকে কোথা হইতে আনিয়া রাখিয়া গিয়াছে । তাহার! দুইটি অতি অলবয়স্ক শিশু । তাহারা সবেমাত্র মাতার স্তনদুগ্ধ- পানের অভ্যাস পরিত্যাগ করিয়াছে । এ শিশু ঢুইটিকে দেখিলেই কেবলমাত্র খধিদের কেন, জগতের সমস্ত প্রাণীরই হৃদয়ে ন্েহ-তরঙ্গ উচ্ছদলিত হইয়! উঠে। সকলেই তাহাদিগন্কে ভালবাসিতে ইচ্ছা করে ।” বাসন্তী জিজ্ঞাসা করিলেন, তাহাদের নাম দুইটি আপনার মনে আছে কি?" আত্রেয়ী বলিলেন, “যে ব্যক্তি উহাদিগকে আশ্রমে রাখিয়া গিয়াছেন,*তিনি উহাদের কুশ ও লব এই দুইটি নাম ও উহাদের অদ্ভুত প্রভাব প্রকাশ করিয়া গিয়াছেন।” বাসন্তী জিজ্ঞাসা করিলেন, “কিরূপ প্রভাব ?” আত্রেয়ী বলিলেন---উহারা দুই ভাই জন্মকাল হইতেই জুম্তকনামক অস্ট্রবিদ্যায় আশ্চর্য্যরূপে অভ্যন্ত। এই ভন্তকনামক অন্ুটিও একটি অদ্ভুত অন্ত্র। একটি মন্ত্র উচ্চারণ করিয়া এই তন্ত্র প্রয়োগ করিলে উহা বিপক্ষীয় সৈন্তগণের উপরে পতিত হইয়া উহার্দিগকে অচেতন ও নিস্পন্দ করিয়া ফেলে? তখন অতি সহজেই তাহাদিগকে নিহত করিয়া যুদ্ধে অনায়াসে জয়লাভ করিতে পারা যায় এবং অন্য একটি মন্ত্র পাঠ করিলেই এ.অন্ত্রটি প্রয়োগ- কারীর নিকটে আবার ফিরিয়া আইসে।” বাসন্তী (১৫০ ) বলিলেন--“ইহা তো, বড়ই আশ্চর্য ব্যাপার! ইহা মহা- আশ্চর্যজনক সংবাদ! আত্রেয়ী বলিলেন,--“মহধি বাল্মীকি এই শিশু দুইটির জম্মকালে নিজেই উহাদের ধাত্রীর কন্ঠ সম্পাদন করিয়াছেন এবং তথ্কাল হইতে উহাদ্িগকে মহাযত্তের সহিত প্রতিপালন করিয়া আসিতেছেন। তিনি উহাদের চুড়াক্ম-সংস্কার সম্পাদন করিয়া তিনটি বেদ বাতিরেকে নানাবিদ্যা শিখাইয়াছেন। তত্পরে একাদশ বর্ম বয়সে উহাদের ক্ষভ্রিয়োচিত বিধি অনু্ারে উপনয়ন- সংস্কার সম্পাদন করিয়া উহাদিগকে খক্‌, য্জুঃ ও সাম এই তিনটি বেদ অধ্যয়ন করাইয়াছেন। এই শিশু ছুইটির বৃদ্ধি ও মেধা এতই প্রখর যে, তাহাদের সহিত একসঙ্গে অধায়ন করা আমার পক্ষে নিতান্তই অসম্ভব হইয়া উঠিয়াছে। সেই জন্য আমি মহধি বালীকির আশ্রমে বৃথা অময় নষ্ট না করিয়া এই দূরবর্তী দণ্ডকারণ্যে অধ্যয়নার্থ আসিতে বাধ্য হইয়াছি |” আত্রেয়ীর অধ্যয়নেচ্ছ' এতই প্রবল যে, বালীকির আশ্রমে সেই ছাত্র দুইটির সঙ্গে একত্র অধায়ন কর! অসম্ভব হওয়াতে তিনি, ভীষণ বন্াজন্তুসমাকীর্ণ দুর্গম অরণ্যানী, গিরিপথ, দুষ্পার নদনদী এবং নানাদেশ অতিক্রম করিয়া স্থদুরবর্তী দণ্ডকারণো মহথ্ি অগন্ত্যের নিকটে বেদ-বেদাস্তাদিশাস্ত্র অধ্যয়নকরিবার জন্য একাকিনী"আগমন করিয়াছিলেন । তণুকালে দণ্ডকারণ্যে নিগমান্তবিদ্যাপারদর্শী অগস্ত্য- ( ১৫১ ) প্রমুখ বনুসংখ্যক মহধি বাস করিতেন । মহধি অগস্ত্যের অনেক শিষ্য ছিল। তিনি তাহাদিগকে অন্নবন্ত্র প্রদান করিয়া নিজ গৃহ অধ্যয়ন করাইতেন। এখানে সিংহ- বাত্ারি ভীষণ জন্ত্ব স্ল এবং মৃগ-শশকাদি শান্তন্বভাব পশ্ুডগণ মহষির ও তীহার শিশ্যবর্গের স্থমধুর সাম-গান- শ্রবণে মুগ্ধ হইয়া পড়িত এবং তীহাদের শমদমাদি ভাব অনুকরণ করিয়া পরস্পর বৈরিভাব পরিত্যাগ করিত। এখানে নগরের কোলাহল এবং হিংসা, দ্বেষ প্রভৃতি অপবিত্র ভাব প্রবেশ করিতেই পারিত না। দগুকা বুণ্য এই সকল অপবিত্র ভাব তাড়াইবার দণ্স্বরূপ হইয়া বিরাজ করিত এবং সর্বদা খধিগণের হৃদয়ে শান্তিরস বর্ষণ করিত। এখানে খিগৃণ স্মধুর উচ্চৈঃস্বরে সামগান করিয়া সর্বব- মঙ্ঈলবিধাতা পরমেশরের উপাঁপনা করিতেন। এখানে ্রন্মতত্বশিক্ষারূপ সর্বশ্রেষ্ঠ উচ্চতম শিক্ষা প্রদত্ত হইত। পরমাত্ৃতত্বশিক্ষা হইতে উচ্চশিক্ষা, এ জগতে আর কি হইতে পারে? কোন শিক্ষাই হইতে পারে না। আত্রেয়ী, প্রভৃতি ভারতীয় প্রাচীন আর্ধ্য-মহিলারা আত্মতত্ব-বিজ্ঞান পরিত্যাগ করিয়া জড়তব-বিজ্ঞান শিখিবার জন্য যত্ববততী হইতেন না। যে বিজ্ঞান আয়ত্ত হইলে সর্বববিজ্ঞান আয়ত্ত হয়, তাদশ বিজ্ঞান-শিক্ষার্থ গুরুতর ক্রেশ হ্বীকার করিতেও কুষ্টিত হইতেন না। একন্থানে অধ্যয়নের অস্থুবিধ! হইলে স্থানান্তরে গিয়াও অধায়ন করিতেন। পথক্লেশকে (১৫২ ) তুচ্ছ জান করিতেন । তীহারা যে বস্তুকে সত্য বলিয়া মনে করিতেন, প্রাণান্তেও তাহা! ত্যাগ করিতেন না'। ইহাই বুঝাইবার নিমিত্ত মহাকবি ভবভূতি তকালের ছাত্রী- জীবনের এই চিত্রটি নিজের উত্তুর-চরিতনাটকে অঙ্কিত করিয়াছেন। অগন্ত্য ও তীহার পতী প্রাতঃস্মরণীয! পবিভ্রচরিত্রা আদর্শপতিত্রতা বিদ্বুধী লোপামুদ্রা, ছাত্র ও ছাত্রীদিগকে এই পরমাত্মতন্ত্ব শিক্ষা দিতেন । কামন্দকী। মহাকবি ভবভূতি-প্রণীত মালতীমাধবনামক নাটকে কামন্দকীর কথা পড়িয়া এই বোধ হয় যে, বৌদ্ধযুগের ভারতীয় আধ্য-মহিলার! মনু, অত্রি, বিষুও, হারীত, যাজ্জ- বন্ধ, উশনাঃ, অঙ্গিরাঃ এবং অন্যান্য মহধিগণ-প্রণীত মূল স্মৃতিশান্ত্র সকল যত্ু সহকারে অধ্যয়ন করিতেন এবং স্মৃতির এ সকল প্রাচীন মূলগগ্রন্থে তীহারা মহাবিদুষী ছিলেন। তাহারা আধুনিক স্মার্ত পণ্ডিতদিগের ন্যায় রঘুনন্দন- প্রভৃতির সংকলিতত-স্মৃতিগ্রস্থান্র অধ্যয়ন করিয়া স্মার্ত বলিয়া পরিচিত হইতে ইচ্ছা করিতেন না, তাহারা আধুনিক' স্মার্তদিগের ম্যায় স্মৃতির সংগ্রহ-গরম্থ মাত্র পাঠ করিয়া স্মৃত্তিশান্্পাঠ শেষ করিতেন না, কিন্তু (১৫৩ ) মহত্বিগণ-প্রণীত স্মৃতির প্রাচীন মুলগ্রন্থ সকল যথাবিধি পাঠ করিতেন, অভ্যাস করিয়! স্মৃতিপটে অঙ্কিত করিয়া রাখিতেন এবং প্রমাণ দেখাইবার প্রয়োজন উপস্থিত হইলে ততক্ষণার্ মহধি-বচন উদ্ধৃত করিয়া বলিতে পারিতেন। শ্মুতিশান্ত্রে তাহাদের ঈদৃশ পাণ্ডিত্য দেখিয়া ইহা নিশ্চয়ই বুঝিতে পারা যায় বে, তাহারা স্মৃতিশান্ অধ্যয়নের পুর্বে ব্যাকরণ, অভিধান, সাহিত্য ও অলঙ্কার- প্রভৃতি শান্সও অক্গ্য উত্তমরূপে অধ্যয়ন করিতেন । এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। কারণ, ব্যাকরণ-সাহিত্যাদি শান্তর উত্তমরূপে অধ্যয়ন না করিয়া সর্বপ্রথম কেহ কোন দেশে স্মুর্তিশান্ত্র পড়িতে আরক্তু করে না এবং করা উচিতও নয়। বিবাহকালে “শুভদৃষ্টির” সময় বর ও বধূর কর্তৃব্যতা সম্বন্ধে কামন্দকী যাহা! উপদেশ করিয়াছেন, সেই উপদেশ- বাক্য তীহার নিজের মনঃকল্লিত নয়, কিন্তু তিনি মহুষি অঙ্গিরার বাক্য প্রমাণস্বরূপে উদ্ধৃত করিয়াই এ উপদেশ প্রদান করিয়াছেন। পূর্ববকালের বিদ্বান ও বিদ্ষীরা উপদেশ দিবার সময় পুজ্যপাদ মহুধিগণের কিন্বা প্রাচীন প্রামাণিক শিষট গ্রন্থকারের বচন প্রমাণরূপে উদ্ধৃত করিয়া বলিতেন, কিন্ত আধুনিক পল্লবগ্রাহী গ্রস্থকারের ন্যায় কেবল স্বীয় মন্তব্যে গ্রন্থকলেবর পুর্ণ করিতেন না। কামন্দকী বলিয়াছেন, বিবাহকালে “শুভদৃষ্টির” সময় বর ও বধু যদি পরস্পরের প্রতি বাকা, মন ও চক্ষু দ্বারা প্রগাঢ় ( ১৫৪) অনুরাগ প্রদর্শন করে, তাহা হইলে তাহাদের ভবিষ্যৎ মহানৌভাগ্য সূচিত হইয়া খাকে। মহধি অঙ্গিরাঃ বলিয়াছেন যে, বধূ বাক্য, মন ও চক্ষু দ্বারা বরের প্রতি অনুরাগ প্রদর্শন করেন, তিনিই ভবিষ্যতে অতিশয় সৌভাগ্যবতী ও সমুদ্ধিশালিনী হয়েন। বৌদ্ধঘুগে নরনারীর একত্র অধ্যয়ন | বৌদ্ধযুগে নরনারীগণ এক বিদ্যালয়ে বাস করিয়া একত্রে বসিয়া এক গুরুর নিকটে শাস্ত্র অধায়ন করিতেন। মালতীমাধবে দেখিতে পাওয়। যায় ঘে, কামন্দকী লবঙ্গিকাকে সম্বোধন করিয়া বলিতেছেন--“ময়ি প্রিয়লখি লবঙ্গিকে, তুমি কি জান না? তোমার কি মনে পড়িতেছে না যে, পাঠাবস্থায় আমর সকলে একত্র মিলিত হইয়া, একত্র বসিয়া ধখন এক গুরুর নিকটে অধ্যয়ন করিতাম, সেই সময়ে নানাদিক্-দেশ হইতে আগত চাত্রগণের সহিত আমাদের সাহচর্য হইত। তাহারা আমাদের সহপাঠী হইত | সেই সময়ে আমাদের সহপাঠি-ছাত্রগণের মধ্যে ভুরিবন্থ ও দেবরাতনামক ছুইটি ছাত্র আমাদের প্রিয়সখী সৌদামিনীর সমক্ষে পরস্পর এইরূপ প্রতিজ্ঞা করিয়াছিল ষে, ভবিষ্যতে তাহার! ছুই জন একের পুজ্রের সহিত (১৫৫) অপরের কন্যার বিবাহ দিবে? তোমার কি ইহ! মনে, পড়িতেছে না ?” কামন্দকীর এইরূপ প্রশ্ন দ্বারা ইহা স্পট বুঝা যাইতেছে যে, বৌদ্ধযুগে ছাত্র ও ছাত্রীগণ এক আশ্রমে বাস করিয়া একত্র বসিয়া এক গুরুর নিকটে অধ্যয়ন করিত। পুর্ববকালে ভারতের লোকের যেরূপ কঠোর ব্রহ্গচর্যা, প্রকৃত ভ্রাতৃভাব, সত্যবাদিতা, কর্তৃবা- জ্তান ও ধন্মত্ান ছিল, অধুনা কালধশ্ম-প্রভাবে লোকের এ নকল গুণ ভ্রমশঃ না থাকায় এরূপ অধায়নরীতি ক্রমশঃ বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে । বৌদ্ধযুগে নারীগণ যে কেবলমাত্র ব্যাকরণ, সাহিত্য ও স্মৃতিশান্ত্র পাঠ করিয়া ছাত্রীজীবনের কাধ্য শেষ করিতেন, তাহা নহে, তাহারা বৈদিক ও পৌরাণিক যুগের মহিলাগণের ন্যায় মুক্তিতত্ব- শান্্রও যথাবিধি অধ্যয়ন করিতেন । মালতীমাধবে দেখিতে পাওয়া যায়, মালতী বলিতেছেন যে, আমি সম্প্রতি কি. উপায়ে মরণ ও নির্ববাণমোক্ষের পার্থক্য অবগত হইব ? মালতীর এই উক্তি হইতে এই বুঝিতে পারা যায় যে, তিনি মরণ ও নির্ববাণের পার্থক্য অবগতির নিমিত্ত উত্- কণ্টিতা হইয়াছিলেন। তিনি ইহা বুঝিতে পারিয়াছিলেন, মরণ ও নির্ববাণমুক্তি এক পদার্থ নয়। মরণ ও নির্ববাণ- মুক্তি এক পদার্থ হইলে তাহাদের পার্থক্য অবগতির জন্য তাহার চিত্ত ব্যগ্র হইত না এবং উহাদের, পার্থক্য-ানের জন্য ইচ্ছাও তীহার হৃদয়ে উদিত হইত না। মরণ ও, (১৫৬ ) নির্বাণমুক্তি এক পদার্থ নয় বলিয়াই মালতী স্বতন্ত্ররূপে এই দুই বস্তুকে জানিবার জন্য আগ্রহবতী হইয়াছিলেন। পিপিপি পপ সৌদবমিনী। কামন্দবীর একটি ছাত্রী ছিল, তাহার নাম সৌদামিনী। সৌদামিনী প্রথমে বৌদ্ধধন্মীবলম্থিনী ছিলেন। তাঁর পর কামন্দকীর অধ্যাপনা-প্রভাবে তিনি সনাতন হিন্দুধর্ম অবলম্বন করেন এবং নানাবিধ তন্ত্র অধ্যয়ন করিয়া তাহাতে ঘথেষ্ট পাণ্ডিত্য লাভ করেন। তিনি মন্ত্র জপ, পুক্তা ও হোমাদ্দি করিতেন এবং কামন্দকী ও অন্যান্ত গুরুর নিকটে যোগশান্ত্র অধ্যয়ন ও যোগমাধন! শিক্ষা করিয়া অলৌকিক সিদ্ধিলাভ করিয়াছিলেন। ইদানীং ভিন্ন ভিন্ন ধ্মাবলম্বীদিগের মধ্যে যেমন বিবাদ-বিসংবাদ দেখিতে পাওয়া যায়, বৌদ্ধযুগে হিন্দু ও বৌদ্ধদিগের মধ্যে সেরূপ বিবাদ-বিসংবাদ ঘটিত না। বৌদ্ধ-মহিলারাও হিন্দুদিগের প্রাচীন মূল স্বৃতি-গ্রন্থাদি অধ্যয়ন করিতেন এবং প্রয়োজন উপস্থিত হইলে হিন্দুদিগের এ সন্কল গ্রন্থ হইতে প্রমাণ- বাক্য উদ্ধৃত করিয়া নিজ বাক্যের প্রামাণ্য সংস্থাপন করিতেন। | | ( ১৫৭ ) | শুরু] । বৌদ্ধযুগে ভারতীয় বৌদ্ধ-মহিলাগণ শিক্ষা-দীক্ষা লাভ করিয়া নারী-জীবনের চরম উতকর্ষসাধন করিতেন। কপিলবাস্ত নগঠে কোন একটি কোটিপতি ধনবান্‌ বৌদ্ধ বেশ্ের শুর্লানামী একটি রূপবতী ও গুণবতী কন্ঠা ছিলেন। শুরা যখন বিবাহযোগা বয়ঃ প্রাপ্ত হইলেন, তখন তীহার রূপের ও গুণের কথা শুনিয়া নানাদিগ্দেশীয় নরপতিগণ তাহার পাণিগ্রহথার্থ অধীর হইয়া পড়িলেন। কারণ, একে গুক্লার অনির্ববচনীয় সৌন্দর্য্য এবং নানাসদৃপ্তণ ছিল, তাহাতে আবার তিনি বিপুলএশররধ্যশালী পিতার একমাত্র উত্তরাধিকারিণী ছিলেন। সুতরাং তাহাকে বিবাহ করিলে কেবলমাত্র যে অনুপমা সুন্দরীর দেবতুর্লভ সৌন্দর্যের উপভোগ হইবে, তাহা নহে, কিন্তু পরে প্রভূত সম্পত্তিও লব্ধ হইবে, এই আশায় অনেকেই তীহাকে বিবাহ করিবার জন্য উন্মত্তপ্রায় হইয়া উঠিলেন। কিন্ত্বু ইত:পূর্বে শুর্লার কর্ণে বৈরাগা ও নির্ববাণতত্বের কথা প্রবিষ্ট হওয়াতে তিনি অতুলম্থখসস্তোগ-স্পৃহা পরিত্যাগ করিয়! বৌদ্ধশাক্ত-চচ্চায় এবং নির্ববাণমুক্তিলাধনায় জীবন অতি- বাহিত করিতে ইচ্ছুক হইয়াছিলেন। স্তৃতরাং তিনি ন মতেই বিবাহ করিতে ইচ্ছুক হইলেন না। তিদি' বৌদ্ধশান্র অধ্যয়ন ও যোগাভ্যাস করিতে আরস্ত করিলেন। কয়েক বৎসর যাবত বৌদ্ধ-ধর্সের বহত্রস্থ অধায়দ এবং ( ১৫৮ কঠোর যোগাত্যাস করিয়া তিনি প্রভূত জ্ঞান ও শক্তি লাভ করিয়াছিলেন। তিনি'ন্ত্রীলোক হইয়াও মহামতি জ্ঞানি- পুরুষদিগের অরনামক উচ্চ উপাঁধি লাভ করিয়াছিলেন! যে সকল রাজকুমার তাহাকে বিবাহ করিবেন বলিয়! প্রতিজ্ঞ! করিয়াছিলেন, শুরার গভীরগবেষণাপূর্ণ উপদেশ গুনিয়া তাহাদের মোহনিদ্রাভঙ্গ হইল। নির্ববাণমুক্তি- শাস্ত্রে তাহার অগাধ বুৎপন্তি দেখিয়া হিন্দু ব্রান্মণ-প্চিত- গণও চকিত হইয়া যাইতেন। অধ্যয়ন, অধ্যাপন, সৎ কাষো দান ও যোগসাধনাদিকার্য্যে সদা রত থাকিয়া শুরু নির্ববাণমুক্তিপথ অবলম্বন করিয়াছিলেন। তিনি বিবাহার্থী* রাজকুমারগণের প্রার্থনা প্রত্যাখ্যংন করিয়: আজীবন কুমারীব্রত ধারণ করিয়াছিলেন। তিনি প্রভৃত সম্পত্তির অধিকারিণী হইয়াছিলেন বলিয়া নানাবিধ সৎ" কারো প্রচুর ব্যয় করিতেন। তিনি বহুসংখ্যক ছাত্রীর বাসোপযোগী একাধিক সুবুহত মঠ নিন্মাণ করাইয়া- ছিলেন। এ সকল ছাত্রীর খাদ্যবন্ত্রবযয়-নির্ববাহের জন্য এবং অন্যান্য সৎকার্ষের অনুষ্ঠানের নিমিত্ত তিনি তাহার সমস্ত সম্পত্তি দান করিয়াছিলেন । ( ১৫৯ ) সোমা শ্রাবস্তী নগরীতে একটি ব্রাহ্মণ বাম করিতেন। সাহার সোমানান্নী একটি কন্যা ছিল। তগুকালের প্রথানুসারে এ ্রাঙ্মণ *সোমাকে পঞ্চমবর্ষ বয়সে শিক্ষা দিতে আরম্ভ করিলেন । সোমা লিখিতে পড়িতে আরম্ত করিল। সোমার বুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি অতান্ত প্রথরা দেখিয়া এ ত্রাঞ্ষণ সময়ে সময়ে মহাবিশ্মিত হইতেন। সোমা ' একবার যাহা শুনিতেন, তাহা আর কখনই ভুলিতেন না। তিনি যেরূপ পাঠ বুঝিতেন, পল্লীর কোন্‌ বালিকাই তদ্রপ বুঝিতে পারিত না। তিনি (োড়শবর্ম বয়সের মধ্যে সহজ সহশ্র-ংখ্যক বৌদ্ধ-গাথা আয়ন্ত করিয়াছিলেন। তাহার ন্যায় মেধাবিনী বালিকা সমগ্র বৌদ্ধসমাজে ততকালে দৃষ্ট হইত না। সোমার ইতিহাস প্র/ালোচন৷ করিয়৷ ইহা বুঝিতে পারা যায় যে, ততকালে আনেক ব্রাহ্মণনরনারীও বৌদ্ধধন্ম গ্রহণ করিতেন। সোমার সম্বন্ধে এইরূপ কখিত আছে যে, তিনি পুর্ববজদ্মে কশ্যপের আঙ্ঞায় ও উপদেশে সাংসারিক অনিত্য স্ুখতভোগ- স্পৃহা পরিত্যাগ পুর্বক আজীবন “বৌদ্ধধর্ম-চর্চায় কালাতিপাত করিয়াছিলেন। পূর্ববজন্মের এই সংস্কার বশতঃ এই জন্মে ঈদৃক্‌ অল্পবয়সে এতাদৃশ অসাধারণ দ্ঞানলাভ করিতে সমর্থা হইয়াছিলেন।' পুর্বব-জন্মের সংস্কার ব্যতিরেকে ঈদৃশ অল্পবয়সে এতাঁদুশ শক্তি কোন-: ( ১৬৩০৩ ) মতেই লাভ করিতে পারা যায় না। পুর্ববজন্ম না মানিয়া কেবল যদি এই কথা বলা যায় যে, ঈশ্বর কূপ! করিয়া এ বালিকাকে ঈদৃশ অল্পবয়সেই এতাদৃশ জ্ঞান দিয়াছিলেন বলিয়াই এ বালিকা তাদৃশী জ্ঞানবর্তী হইতে পারিয়াছিল। এইরূপ সিদ্ধান্ত করিলে ঈশ্বরে পক্ষপাতিতা-দোষ আসিয়া পড়ে। কারণ, ঈশ্বর একজনকে যদি জ্ঞান দেন ও অন্য-জনকে যদি জ্ঞান না দেন, তাহা হইলে “তাহার সর্নবজীবে দয়া, সর্ববজীবের প্রতি সযতাভাব” ইত্যাদি সমস্ত আস্তিক শান্ত্রেরে কথায় দোষ আাগিয়া পড়ে। স্থতরাং নির্দোষ তর্কের দায়ে পড়িয়া ইহ! অবশ্যই সকলকে স্বীকার করিতে হইবে যে, ঈশ্বর যাহার যেন কমন ও মতি দেখেন, তাহার তত্রপ জন্ম, তন্রপ শরীর, তন্রপ বুদ্ধি ও ঙন্রপ এশ্বধ্য।দি-বিধান করিয়া প্রকৃত মহাবিচারকের কাধ্য সম্পাদন করেন। যদি বলা যায় যে, “ঈশ্বর বা পূর্ববজন্ম-সংস্কার মানিবার প্রয়োজন নাই। এত অগ্ল- বয়সে অত অধিক জ্ঞান, এই একমাত্র জন্মেই আপন! আপনি হঠাৎ স্বাভাবিকরূপে কোন কোন বালিকার হৃদয়- মধ্যে উদিত হইয়া থকে । তজ্জগ্ত ই সকল বালিকা এত অল্পবয়সেই জ্ঞানবতী হইয়! থাকে” এইরূপ কথাও বল! যাইতে পারে না। কারণ, তাহা হইলে একটি বালিক! অত অল্পবয়সে কেন ঈদৃশী জ্ঞানবতী হয়? আর অন্য বালিক! বৃদ্ধাবস্থায় উপনীত হইয়াও তাৃশী জ্ঞান- ( ১৬১) বতী হয় না কেন? স্তবশীলার যেমন হৃদয় আছে, শরীর আছে, অধ্যয়নবিধি আছে এবং সেও যেমন পরিশ্রম করে, সরলারও তাহা তাহা আছে এবং সেও তজ্রপ পরিশ্রম করে। স্বশীলা যেমন একটি শিক্ষিত ভদ্রবংশীয় ভদ্রলোকের কন্যা, সরলাও তদ্রুপ । ম্থতরাং স্থশীলার হৃদয়ে যেমন স্বাভাবিকরূপে আপনা আপনি ভান জন্মে, সরলার হৃদয়ে তদ্ধপ জ্ঞান জন্মে না কেন? সে যেরূপ ফল পায়, সরলা তত্রূপ পায় না কেন? “স্বভাবত;) আপনা আপনি হইয়! থাকে», এইবুপ বলিলে একজনের বেল৷ একরূপ স্বভাব, অন্ত জনের বেলা অন্তরূপ স্বতাব হইতে পারে নাঁ। কারণ, আতর, জন্কু প্রভৃতি ফল উৎপাদন করা গ্রীত্মকালের স্বভাব এবং কপি, কড়াইশু'টি প্রভৃতি উৎপাদন কর! শীতকালের স্বভাব। ভিন্ন ভিন্ন খতুর এই তিন্ন ভিন্ন স্বভাব । এক্ষণে যদি এইরূপ বলা হয় ষে, “যে কোন জিনিস আপন! আপনি যে কোন স্থানে যে কোন সময়ে হঠাশ উৎপন্ন হইয়া পড়ে” তাহা হইলে গ্রীক্ষকালে কাশীতে যখন “ল্যাংড়া” আত্ম উৎপন্ন হয়, মেই সময়ে কাশীতে কপি- কড়াইশু'টি উৎপন্ন হয়*ন! কেন ? অতএব মানিতে হষ্টবে যে, ফোন বন্তুই যেখানে সেখানে হঠাৎ আপনা আপনি উৎপন্ন হয় না; কিন্তু নির্দিউ কোন কারণ বশতঃই উৎপঙ্ হইয়া থাকে। পরমেশ্বরই মানুষের (১৬২) ংস্কার এবং স্কৃতি ও ছুদ্ধতিরূপ কারণ অনুসারে কোন ব্যক্তিকে বিদ্বান করেন, কোন ব্যক্তিকে মুর্খ করেন, কোন লোককে ধনী করেন, কোন লোককে দরিদ্র করেন। যাহার প্রতি যেমন স্থবিচার করা উচিত, তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে সুন্মনাতিসূন্মরূপে তাহার প্রতি সেইরূপ স্থবিচার করেন। যাহাকে যাহা দেওয়া উচিত, তাহাকে তাহা! দেন। কার্যা-কারণ-ভাব ব্যতিরেকে কোন বস্তুই কুত্রাপি আপনা আপনি হইতে পারে না। পরমেশ্বর কখনই পক্ষপাতী হইতে পারেন না। তিনি রামের প্রতি পদয় এবং শ্বামের প্রতি নির্দয়, এইরূপ মনে করিলে তাহাকে 'দোষ দেওয়া হয়। , তাহাকে দোষ দেওয়া মহা- পাপ। তিনি মহাবিচারকের মহাবিচারক। টেপ স্পিকপপপসপ কুবলয়!। ভগবান্‌ গৌতম-বুদ্ধদেব সদয় হইয়া মহিলাদিগকেও নির্ববাণমুক্তি-শান্ত্রে পারদর্শিনী করিয়া দ্রিতেন। একদা “গিরিবস্থাসঙ্গম”নামক মেলায় মহাভোজ উপলক্ষে নানা- দ্িগ্দেশ হইতে কৌদ্ধ-নরনারীগণ “নদীলোতের ন্যায় দলে দলে শ্রাবন্তী নগরীতে আসিয়াছিল। তন্মধ্যে কুবলয়া- নামী একটি রূপবতী ও যুবতী নারীও দক্ষিণাপথ হইতে আসিয়াছিলেন। *তিনি উক্ত নগরীতে আসিয়া কয়েকটি ( ১৬৩ ) লোককে আলাপক্রমে মহাদর্পের সহিত জিজ্ঞাস! করিলেন, «এ নগরীতে আমার রূপের ও সুগঠিত মোহিনী মূত্তির আকর্ষণ অতিক্রম করিতে পারে, এমন পুরুষ কে আছে ?”” একজন উত্তর দিল, “গোৌতম-বুদ্ধদেব-নামক এক মহাপুরুষ আছেন। তিনি এক্ষণে জেতবন-নামক আশ্রমে বাস করিতেছেন |” কুবলয়া এই কথা শুনিয়া মহাভোজে যোগদান না করিয়া তৎক্ষণাৎ সেই অদ্ভুত পুরুষকে দেখিবার জন্য জেতবন অভিমুখে যাত্র/ করিলেন এবং যথাসময়ে জেতবনস্থ আশ্রমে উপস্থিত হইলেন। তিনি ভগবান্‌ বুদ্ধদেকের সম্মুখে উপস্থিত হইয়া স্বীয় সৌন্দর্য্যের প্রভাব বিস্তার করিতে লাগিলেন। নানাবিধ হাবভাব প্রদর্শন করিয়া মোহিনী ও আকর্ষণী শক্তির পরিচয় দিতে লাগিলেন। কিন্ত্ত ভগবান্‌ বুদ্ধদেব কুবলয়ার মনোগত অভিপ্রায় বুঝিতে পারিয়া তাহার রূপলাবণ্য ও যৌবনের গর্বব খর্ব করিবার জন্য তাহার প্রতি একবার দৃষ্টিপাত করিলেন। ভগবানের সেই দৃষ্টিপাতের অলৌকিক ও অদ্ভুত প্রভাবে কুবলয়ার অনুপম বূপ, যৌবন ও লাবণ্য সহস! বিনষ্ট হইয়! গেল। যুবতী সুন্দরী কুবলয়া দহসা অশীতিবর্ষীয়৷ কগ্কালসা'র। বিকটরূপ| বৃদ্ধার আকৃতি প্রাপ্ত হইলেন। তখন তিনি মহাভীত হইয়া পড়িলেন এবং তৎক্ষণাৎ বুদ্ধদেবের চরণারবিন্দে সাঙ্গ প্রণিপাত পূর্ববক স্বীয় মহাপরাধের জন্য ক্ষম! ভিক্ষা রূরিতে লাগিলেন। ( ১৬৪ ) যখন তাহার হৃদয় ভীষণ অমুতাপে জর্জরিত হইল, তখন তাহার মহাপাপের সমুচিত প্রায়শ্চিত্ত হইতে লাগিল। অতিশয় অনুতাপে খন তাহার পাপ ক্ষালিত হইতে লাগিল এবং তাহার চিত্ত শান্তিপঢখের জন্য উতস্থৃক হইয়া পড়িল, তখন বুদ্ধদেব তাহার তত্রপ অবস্থা বুঝিতে পারিয়া তাহার প্রতি সদয় হইলেন এবং তাহার অপরাধের জন্য তাহাকে ক্ষমা করিলেন। তাহার কৃপায় কুবলয়ার হৃদয়ে বৈরাগাভাব উদিত হইল। * কুবলয়া ধর্দ্পথ অবলম্বন করিলেন। এইরূপ কথিত আছে যে, ভগবান বুদ্ধদেব সদয় হইয়া স্বয়ং তাহার শিক্ষার ভর গ্রহণ করিয়াছিলেন । ভগবানের ঈদৃশী দয়া দেখিয়া তাহার প্রিয়তম শিষ্য আনন্দ কুবলয়ার পূর্রবজন্মের স্বকৃতির বু প্রশংসা করিয়াছিলেন। কারণ, সাধারণ শিষ্যবর্গের শিক্ষাদানাদি কারধ্যভার আনন্দ প্রভৃতি প্রধান প্রধান শিষ্যদিগের উপরেই ন্যস্ত থাকিত। বুদ্ধদেব কেবল প্রধান প্রধান শিষ্যুদিগকেই শিক্ষা দিতেন; কিন্তু কুবলয়ার পুর্ববজন্মের এতই পুণাবল ছিল যে, সে স্বয়ং ভগবান্‌ বুদ্ধের নিকটে শিক্ষা ও দীক্ষা গ্রহণ করিবার মহাঁসৌভাগ্য লাভ করিতে সমর্থ হইয়াছিল। আনন্দ প্রভৃতি শিষ্গণ একদ! তগবান্কে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, 'ভগবন্, কুবলয়ার পূর্ববজন্মে এমন কি স্থকৃতি ছিল যে, সে তণ্প্রভাকে ( ১৬৫ ) আপনার পাদপঘ্কের নিকটে শিক্ষা পাইতে পারে ভগবান্‌ বলিলেন, “একদা বারাণসী-রাজের পুক্র কাশীম্মন্দর বৈরাগা অবলম্বন করিয়! হিমালয়ের এক নিভৃত নিকুপ্ঠে বসিয়া তপস্তা! করিতেছি লেন। এমন সময়ে একটি পরম সুন্দরী যুবতী মহিলা তথায় দৈধাশ উপস্থিত হইয়। দেখিল যে. একটি রাজস্রীসম্পন্ন যুব! পুরুষ যোগাননে বসিয়া ধ্যান করিতেছেন। তাহাকে “দখিবামাত্র এ স্থন্দরী যুবতী তাহার" প্রেমাকাঙিক্ষণী হইয়া উন্মত্ত হইয়া পড়িল এবং তাহার ধ্যানভর্গ করিবার জন্য নানাবিধ উপায় অবলম্বন করিতে লাগিল। কিন্তু যখন দেখিল যে, এ আমান যুব যোগী তাহার অবলম্বিত উপায়ে বিচলিত হইল না, তখন সে অত্যান্ত মর্মাহত হইয়! পড়িল এবং অবশেষে সে স্থান পরিত্যাগ করিয়া তাহার গন্তব্য স্থানে চলিয়। গেল। যাইবার সময় পথে তাহার মনে পূর্বের্বাস্ত ঘটনাটি মুহুমুহ্ুঃ আন্দোলিত হইতে লাগিল এবং অবশেষে তাহার স্বীয় রূপ-যৌবনে অতিশয় ধিক্কার জম্মিল। যখন তাহার মনে ধিক্কার জম্মিল, তখন তাহার মনে বৈরাগ্যভাব উদ্দিত হইল। অবশেষে মে কশ্যপের শিশুর গ্রহণ করিয়। নির্ববাণতত্বের আলোচন্পয় রত হইল । যখন তাহার স্ৃত হইল, তখন পূর্ণ-সাধনার অভাবে সে নির্ববাণমুক্তি পাইল না; সুতরাং তাহাকে পুনরায় জম্মিতে হুইল। পূর্বব- জন্মের সেই নারীই এই জন্মের কুর্লয়া। পূর্ববাম্মের ( ১৬৪ ) বৈরাগ্যভাব ও বৌদ্ধধন্ম-শান্ত্রের আলোচনারূপ স্থৃকৃতির প্রভাবে ৫ জন্মে বৌদ্ধ-ধর্্মশান্্ আলোচনায় এবং বৈরাগো তাহার মতি হইয়াছে এবং আমার নিকটে শিক্ষা পাইবার অধিকারিণী হইয়াছে। এ জন্মেও যদি ইহার যোগসাধনা পুর্ণ না হয়, তাহা হইলে ইহাকে পুনরায় জন্মিতে হইবে। জ্ান-সাধনা পূর্ণ হইলে নিজেই নিজের নৈর্ববাণমুক্তি প্রাপ্ত হইবে কাশীসুন্দরী। বৌদ্ধযুগে ব্রঙ্গদত্ত-নামক, বারাণলী-রাজের কাশী-, স্ুন্দরী-নান্নী একটি ধর্মাশীল। কন্য। ছিলেন। মহারাজ ব্রহ্মদত্ত বৌদ্ধধন্ম(বলল্লী ছিলেন। " তিনি মহারাজনন্দিণী কাশীন্থন্দরীকে বালাকালে উত্তমরূপে শিক্ষা প্রদান করিয়াছিলেন। কুমারী কাশীসুন্দরী বাল্যপাঠ্য পুস্তক, সকল সমাপ্ত করিয়া বৌদ্ধ-ধর্সাাস্ত্র পড়িতে আরম্ত করিয়া- ছিলেন। তিনি অল্লবয়সে উক্ত ধর্মের অনেক : গ্রন্থ অধ্যয়ন করিয়াছিলেন । তিনি যখন বিবাহযোগ্য বয় প্রাপ্ত হইলেন, তখন নানাদিগৃদেশের রাজকুমারগণ তাহার পাণিঞ্হণার্থ অধীর হইয়া পড়েন। কারণ, কাশী- স্বন্দরী অপূর্ব হুন্দরী ও ধর্ম্মনীতিশাস্ত্রে মহাশিক্ষিতা ছিজেন। ঈদৃশী রূপ-গুণবতী রাঁজকুমারীকে' বিবাহ ( ১৯৬৭ ) করিবার জন্য কোন্‌ রাজকুমার না ইচ্ছুক হয়েন ? তাহারা তাহাকে বিবাহ করিবার জন্য প্রার্থনা জানাইলে তিনি উহ প্রত্যাখ্যান করিয়৷ চির-কুমারীত্রত ধারণপুর্ববক যোগ- স|ধনা ও শাস্তালোচনায় জীবন উৎসর্গ করিতে ইচ্ছা! প্রকাশ করিলেন। রাজকুমারগণ প্রত্যাখ্যাত হইয়া স্ব স্ব দেশে ফিরিয়! গেলেন বটে, “কিন্তু তাহাকে বিবাহ করিবার স্বল্প তীহারা ত্যাগ করিলেন না। তাহারা তাহাকে আয়র্ত করিবার জন্য অনুকূল অবসর অস্বেষণ করিতে লাগিলেন। : একদ। ভগবান্‌ কশ্ূপ যখন খধিপত্তননামক স্থানে কিছুদিন বাস করিতে আসিয়াছিলেন, সেই সময রাজনন্দিনী" কাশীস্কন্দরী তীহার নিকটে: বৌদ্ধ শিক্ষা- লাভের জন্য অতিশয় প্রার্থনা করিতে লাগিলেন। ভগবান্‌ কশ্যপ সদয় হইয়া তীঙার প্রার্থনায় সম্মত হইলেন এবং তাহাকে শিক্ষা দিতে আরস্ত করিলেন। রাজকুমারগণ এই সংবাদ অবগত হইয়া কশ্যপের আশ্রমে আগমন, করিলেন এবং রাজকুমারীকেবৈলপূর্ববক তথা হইতে ধরিয়া লইয়া! 'যাইতে চেষ্টা করিলেন। ভঙ্গবান্‌ কশ্বুপ রাজ- কুমারগণের এইরূপ চেষ্টা দেখিয়া কাশীু্দরীকে বলিলেন, ৭ কি বিবাহ করিতে ক যা রং (১৬৮) ব্রত অবলম্বন করিয়া আপনার নিকটে জাজীবন ধর্মাশান্ অধ্যয়ন করিব, এইরূপ ইচ্ছুক হইয়াছি।” ভগবান্‌ কশ্যপ বলিলেন, “তাহা হইলে কিন্তু উহ্বারা তোমাকে বলপুর্ববক এ স্থান হইতে ধরিয়া! লইয়! যাইবে এবং যদি তুমি না যাও, তাহা হইলে উহ্ারা আমার আশ্রমের শান্তিভঙ্গ করিবে ।” কাশীনুন্দরী বলিলেন, “ভগবন্, আপনি নিশ্চিন্ত হউন । আপনার এই শান্তিপূর্ণ আশ্রমের অণুমাত্র শান্তিভজগ হইবে না। আপনার আশীর্ববাঁদ-প্রভাবে উহা'রা আমাকে স্পর্শই করিতে পারিবে না। এই দেখুন, আপনার কৃপায় আমি আকাশমার্গে উত্থিত হইলাম” এই বলিয়া মহারাজ- কুমারী কাশীস্ুন্দরী যোগসাধন'-প্রভাবে আকাশে উঠিতে লাগিলেন ; অনেক উচ্চে উঠিয়া নিজের অদ্ভুত অদ্ভুত শক্তির পরিচয় দিতে লাগিলেন । রাজকুমারগণ এইরূপ অভূতপূর্ব অদ্ভুত মহাবিস্ময়- জনক ব্যাপার অবলোকন করিয়া স্তম্তিত হইয়া পড়িলেন এবং তীহাকে মহাযোগিনী ও অন্ভুত-শক্তিশালিনী সিদ্ধ মহিলা মনে করিয়া তাহার! তীহাকে প্রণাম করিতে লাগিলেন এবং নিঙ্জ নিজ অপরাধ ক্ষমা করিবার জন্য পুনঃপুন: করধোড়ে প্রার্থনা করিতৈ লাগিলেন । অনন্তর তাহারা তাহাকে অত্যুচ্চ আকাশমার্গে ধোগাসনে উপবিষ্টী 'ও ধ্যাননিমন্ত্র- দেখিয়া অভিশাপভয়ে আর তাঁহাকে উদ্বেজিত না করিয়া সফলে হতাশ-হাদয়ে ও বিশ্ব ( ১৬৯ ) বিস্ফারিতনেত্রে স্বস্ব স্থানে প্রস্থান করিলেন। পরে ভগবান্‌ কাশ্যপ কাশীস্বন্দরীকে আহ্বান করিবামাত্র তিনি আকাশ হইতে অবতীর্ণ হইলেন এবং ভগবানের চরণার- বিন্দে প্রণাম করিলেন |, ভগবান্‌ কাশ্যপ তাহাকে জিজ্ঞাস করিলেন, “তুমি কাহার নিকটে যোগসাধনা শিক্ষা করিয়। আকাশে উঠিবার শক্তি লীভ করিয়াছ ? আমি ত তোমাকে এরূপ শিক্ষা! দান করি নাই। তুমি অল্পিনমান্র আমার নিকটে ধর্্ম-শিক্ষা* করিতেছ।” কাশীনুন্দরী বলিলেন, “আমি আপনার নিকটে শিক্ষার্থে আসিবার পূর্বে মহাত্মা কণকের নিকটে যোগসাধন! শিক্ষা করিয়াছিলাম। সেই শিক্ষার প্রভাবে আকাশে উঠিতে শিখিয়াছিলাম। কিন্তু হে ভগবন্, আপনার নিকট যে তত্বজ্ঞান শিক্ষা করিতে আসিয়াছি, উহা উক্ত যোগসাধনা-শিক্ষ। অপেক্ষা অনেক উচ্চশিক্ষা । পূর্ববকালে ক্ষক্রিয়গণ কোন সুন্দরী পাত্রীকে বলপুর্ববক কাড়িয়া লইবার জন্য পরস্পর যুদ্ধ করিতেন। কোন স্বয়ংবর-সভায় বা কোন স্থানে কোন ক্ষত্তিয়-রাজ: কন্ঠা কোন ক্ষত্রিয-রাজকুমারের গলে যখন বিবাহমাল. অর্গণ করিতেন এবং ' যথাবিধি বিবাহের পরে, ধন শশুরালয়ে যাইতেন, সেই সময়ে পথে তাহাকে বু বর্ধক অপহরণ করিবার .জন্থা রাজকুমারগণ - পরস্পর. বৃ করিতেন। হার সৈশ্তবল বেশী থাকিত, ডিনিই বিষাহিতা নারীকে ধরিয়া স্বয়াজো লইয়া বাইন কছ ৯৫ ( টা বা তাহাকে প্রধানা মহিষী করিতেন, কেহ বা অপ্রধানা মহিষী করিতেন । কোন কোন এইরূপ. বিবাহিতা! নারী শগুরালয়ে আমিবার সময়ে পথে এইরূপ বিপদে পড়িয়া আত্মহত্যা করিয়৷ নিজের সতীত্ব বজায় রাখিতেন। দিল্লীর সববশেষ হিন্দু সম্রাট পূর্থীরাজের সময় পর্যান্ কষপ্িয় দিগের এতরূপ বীভৎসকাণ্ড মধ্যে মধো দেশের শান্তি- তঙ্গ করিত। পূর্থীরাজের পর হইতেই ইসা দেশ হইতে উতিয়া যায়।” ক্ষেমা | একদা ভগবান্‌ বুদ্ধদেব শ্রাবন্তী নগরীতে বাস. করিতেছিলেন। সেই সময়ে প্রসেনজিৎ ও ব্রহ্গাদত্ত- নামক দুইটি প্রতাপশালী রাজার মধ্যে একটি বিবাদ ঘটিয়াছিল। এই বিবাদউপলক্ষে যখন যুদ্ধ অনিবার্ধ্য হইয়া উঠিল, তখন রাজা প্রসেনজিতের একটি কন্যা ও রাজা ব্রহ্ষাদত্তের একটি পুজ্র ভূমিষ্ঠ হুইয়াছিল। তখন রাজা প্রসেনজিও রাজা ব্রল্মদত্ডের নিকটে এই প্রস্তাব করিলেন যে, যদি তিনি ভবিষ্যতে নিজের এই পুজ্রের সহিত তাহার এই কন্যার বিবাহ দেন, তাহা হইলে তিনি এই যুদ্ধে ক্ষান্ত হইয়৷ সৌহার্দ্য সংস্থাপন করিতে পারেন । রাঙা ব্রহ্মদত্ত এই-প্রস্তাবে সম্মতি দিলেন। এই প্রস্তাব, ( ১৭১ ) অনুসারে যুদ্ধ থামিল। এই সময় হইতে তাহাদের মধ্যে মিত্রতা-চিহ্ুস্বরূপ পরম্পর উপটৌকন আদান-প্রদানাদি কার্য চলিতে লাগিল। রাজ! প্রসেনজিত নিজের কন্যার নাম রার্িলেন) কমা । এই কন্ঠা বিপৎকালে জন্মিয়া ক্ষেম অর্থা মঙ্গল বিধান করিয়াছিল বলিয়া তিনি কন্য॥াকে ক্ষেমা এই নাম প্রদান করিয়াছিলেন। ক্ষেমা শৈশবকাল হইতেই অতিশয় সুশীলা ও ধর্মনানিষ্ঠা ছিলেন এবং লিখনপঠনে অত্যন্ত আসক্ত! ছিলেন। তাহার ম্ছু- স্বভাব, স্ুবুদ্ধি ও স্থুমেধা দেখিয়া তাহার পিতা তাহাকে বাল্যকালে মতি যত্রের সহিত শিক্ষ। দিতে লাগিলেন! কতিপয় বণর পরে ক্ষেমা যখন বিবাহযোগা বয়ঃগ্রাপ্ত হইলেন, তখন তিনি স্বীয় মনোভাব প্রকাশ করিলেন যে, তিনি জীবনে কখনও বিবাহ করিবেন না। আজীবন কুমারাব্রত অবলম্বন করিয়া বুদ্ধদেবের চরণপঙ্কজে মনঃ সম্মিবেশিত করিবেন ও বৌদ্ধ-ধর্মমশাস্ত্রচচ্চায় কলাতিপাত করিবেন । রাজ৷ প্রসেনজিৎ কন্যার ঈদৃশী প্রতিভা শ্রবণ করিয়া বড়ই ভীত হইলেন। কারণ, তিনি রাজা ব্রন্মদত্তের, পুত্রের সহিত ক্ষেমার বিবাহ দিবেন বলিয়৷ পুর্বে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইয়াছেন ।* এক্ষণে তিনি যদি ক্ষেমার বিবাহ না দেন, তাহা হইলে তাহাকে রাজা ব্রহ্মদত্তের কোপে পড়িতে হইবে । আবার যুদ্ধ বাঁধিবে। যুদ্ধ বাধিলেই অহান্‌ অর্থবায়, মনের অশান্তি, প্রজার, অমঙ্গল ও কষ্ট । ( ১৭২ ) স্বতরাং রাজ! প্রসেনজিত এই সকল ভাবিয়া অতান্ত বাঁকুল হইলেন। ছিনি রাজা ব্রহ্ষমদত্তকে লিখিলেন যে, তিনি যেন তাহার পুজ্রের বিবাহের জন্য অতি শীঘ্র শীঘ্ব আয়োজন করেন। বরপক্ষ অতিশীঘ্ব আয়োজন করিলেই যেন কেন প্রকারেণ, অন্ততঃ বলপূর্ববক ক্ষেমার নিবাহটা সম্পন্ন হইতে পারে, এই আশায় রাজা প্রসেনজিত ক্ষেমার শীঘ্র বিবাহের আয়োজন করিতে লাগিলেন ক্ষেমা, পিতার এই অভিপ্রায় গোপনে অবগত হইয়া জেতবনে ভগবান্‌, বুদ্ধদেবের নিকটে পলায়ন করিলেন। ভগবান্‌ বুদ্ধদেব ক্ষেমকে উপদেশ-দানের যৌগাপাত্রী বিবেচনা করিয়া স্বয়ং তীহাকে শিক্ষা দিতে আরম্ভ করিলেন। ভগবানের অনির্ববচনায় পরম ন্তুন্দর উপদেশ-রীতির প্রভাবে ক্ষেমা অতি অল্পদিনের মধ্যেই বৌদ্ধধন্মের উচ্চশ্রেণীস্থ বিজ্ঞ ছাত্রীগণের মধ্যে পরিগণনীয়া হইলেন এবং যোগ-সাধনায় অলৌকিক সিদ্ধিলাভ করিলেন। তাহার পিতা এতদিন যাব ভারতের বনু স্থানে অন্বেষণ করিয়া বখন কন্যার কোন সন্ধান পাইলেন না, তখন অগত্যা ছুঃখিত-চিত্তে দিনযাপন করিতে লাগিলেন। পরে তিনিণ সন্ধান পাইলেন ষে, তাহার কন্য! ভগবান্‌ বুদ্ধদেবের নিকটে জেতবনস্থ আশ্রমে শিক্ষালাত করিতেছেন। রাজা প্রমেনজিতৎ তৎক্ষণাৎ ক্ষেমাকে এ আশ্রম হইতে ধরিয়া আনিবার জন্য নিজের (5 আত্মীয়গণকে পাঠাইলেন। তাঁহারা জেতবনে উপস্থিত হইয়া ক্ষেমাফে বলপুর্ব্ক গৃহে ধরিয়া লইয়। গেলেন। তখন রাজা প্রসেনজিশ কন্যার শীঘ্ব বিবাহের আয়োজন করিতে লাগিলেন । ক্রুমে বিবাহের দিন উপস্থিত হইল । গভদিনে শুভক্ষণে পুরোহিত মহাশয় বিবাহ-মন্ত্র উচ্চারণ করিতে আরম্ভ করিলেন। ক্ষেমার পিতা ক্ষেমার হস্ত ধরিয়া যেই বরের হস্তে অর্পণ করিতে উদ্যত হইলেন, এমন' সময়ে “আলিপানাস-চিত্রিত মঙ্গলপীঠে উপবিষ্টা ক্ষেমা এ গীঠেসমেত ধীরে ধীরে আকাশমার্গে উঠিতে লাগিলেন । আকাশে উথ্বিত হইয়া নানাবিধ বিস্ময়কর ব্যাপার প্রদর্শন করিতে লাগিলেন। এই 'অন্ভুতকাণ্ড দেখিয়া বিবাহ-সভাস্থ সকলে অবাক ও স্ত্তিত হইয়া গেল। অনন্তর সকলের সবিনয় প্রার্থনায় তিনি আকাশ হইতে অবতীর্ণ হইলেন। সকলেই তাহাকে মহাযোগিনী সিদ্ধা মহিলা মনে করিয়! প্রণাম করিতে লাগিল। পুনরায় তাহার বিবাহের কথ! উত্থাপন করিতে কেহ সাহসী হইল না। বিবাহ স্থগিত হইল। ক্ষেমা এক্ষণে পিতার অনুমতি গ্রহণ করিয়া নির্র্বাণমুক্তিপথে অগ্রসর হইবার জন্য উপযুক্ত সাধনায় নিযুক্ত হইলেন। ভগবান্‌ বুদ্ধদেব বলিতেন, “ক্ষেমা যোগশিক্ষা-প্রভাবে আকাশে উত্থান" শক্তির (শিক্ষা অপেক্ষা অধিকতর প্রশংসনীয় শিক্ষা লাভ করিয়াছিল৮। | ( ১৭৪ ) প্রভব। | শ্রাবন্তী নগরীতে কোন এক ধনবান্‌ বণিকের প্রভবা- নানী একটি যুবতী কন্যা ছিলেন। কণ্যাটির পাণিগ্রহণার্থ নগরার মন্ত্রান্ত লোক সকল এব? অন্যান্য দেশের রাজ- কুমারগণ লালায়িত হইয়৷ পড়েন। কারণ, 'প্রভবা একে রূপনতী, গুণবত্তী ও যুবতী, তায় আবার বিপুলধনশালী পিতার একমাত্র উত্তরাধিকারিণী। এইরূপ পাত্রী পাইলে, অনেকেই বিবাহ করিতে ইচ্ছুক হয়। 'পাত্রগণ, প্রভবার পিতার নিকটে বিবাহ-প্রস্তাব প্রেরণ করিলেন। কিন্তু গ্রভবা, তাহাদের প্রস্তাব অগ্রাহ্য করিয়া ভগবান্‌ বুদ্ধ- দেবের মিকটে আজীবন নির্ববাণ-মোক্ষশান্ত্র” অধ্যয়নাথ ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন এবং পিতার অনুমতি লইয়া ভগবানের নিকটে গমন করিলেন। ভগবানের নিকটে. কয়েক বতসর অধ্যয়ন করিয়া প্রভবা মহাপ্রভাবা হইয়া উঠ্টিলেন। ক্রমে তিনি বৌদ্ধ-জ্ঞানীদিগের অর্হু-নামক উচ্চ পদবী লাভ করিলেন। বৌদ্ধ-গ্রস্থে লিখিত আছে যে. এক জন্মেই কেহ তত্বজ্ঞানশাস্ত্রে উচ্চ শিক্ষা লাভ করিতে পারে নাই। প্রভবা এই জম্মেই যে ঈদৃশী উচ্চ- শিক্ষিতা হইয়াছিলেন, ইহার কারণ এই যে, পূর্ববজন্মে তাহার জ্ঞান ও বৈরাগ্যভাব প্রবল ছিল, তাই, তিনি সেই সংস্কারবলে এই কম্মে অল্লকালমধ্যে শিক্ষায় উন্নতি লাভ করিতে পারিয়াছিলেন। পূর্ববজন্মে প্রভবা বন্ধুমনামক ( ১৭৫ ) রাজার প্রধানা মহিষী হইয়া প্রভূত শিক্ষা পাইয়াছিলেন, তাই, তিনি এ জন্মে নির্নবাণ-মুক্তিশান্্ের শিক্ষযিত্রী হইতে পারিয়াছিলেন | পাশপাশি সুপ্রিয়! । বৌদ্ধযুগে অনাথপিগুদ-নামক কোন এক ব্যক্তির স্প্রিয়া-নান্না এক* কন্যা ছিলেন। স্মৃপ্রিয়ার বালা-বৃত্তান্থ আবণ করিলে বিস্মিত হইতে হয়। স্প্রিয়ার জন্মের সাত বসর পরে একদিন একটি জ্ঞানী বৌদ্ধ পরির্রাঞ্তক আনাথপিগুদের বাটীতে ভিন্লুঃ করিতে আসিয়াছিলেন। তিনি তথায় আসিয়া বৌদ্ধধন্ম সম্বন্ধে অনেক সারবান্‌ উপদেশ দিয়াছিলেন। সপ্তমবর্ষীয়া বালিকা স্প্রিয়া এ সকল উপদেশ শুনিয়া সেই বয়সে বৌদ্ধ-সন্ন্যাসিনী হইবার জন্য পিতার অনুমতি প্রার্থনা করিলেন। সংসারে বৈরাগা- ভাব উপস্থিত না হইলে কেহ সন্যাসধর্্ম বা ত্যাগধর্ম অবলম্বন করে না। তাহার পিতা কন্যার এই অভূতপূর্বব আগ্রহ দেখিয়া অত্যন্ত বিশ্মিত হইলেন। সুপ্রিয়া সন্ন্যাসিনী হইয়া জ্ঞানোপার্জজনের জন্য অতিশয় আগ্রহ প্রকাশ করিতে লাগিলেন। তাহার পিতা, তাহার এই সঙ্কল্প ত্যাগ করাইতে যথেষ্ট চেষ্টা করিলেন, কিন্তু কোন- মতেই তিনি নিজ সঙ্ল্প ত্যাগ করিলেন 'না। অগত্যা তিনি ( ১৭৬ ) অনুমতি-প্রদ'নে বাধ্য হইলেন। স্বুপ্রিয়া সপ্তমবর্ষ বয়সে সন্ন্যাসিনী হইলেন । গৌতমী তাহাকে বৌদ্ধধর্থ্মে দীক্ষিত করিয়াছিলেন । বৈরাগ্যধন্নী অবলম্বন করিয়া তিনি বৌদ্ধশান্ত্র অধ্যয়ন করিতে আর্ত করিলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে যোগসাধন শিক্ষা করিতে লাগিলেন। কতিপয় বর্ষ পরে স্িনি অস-নামক উচ্চ পদবী লাভ করিয়াছিলেন । স্প্রিরা তত্বজ্ঞানবতী বলিয়া যন্রপ প্রশংসা লাভ করিয়া- ছিলেন, তন্রপ ছুর্ভিক্ষক্রিষ্ট রুগ্ন বিপন্ন দীনগণের ক্লেশ নিবারণ করিতেন বলিয়া তিনি অতি যশম্িনী হইয়াছিলেন । তাহার পহিত্র কান্তি সর্ববত্র পরিব্যাণ্ত হইয়াছিল। একদা দেশমধ্যে' মহাছুর্ভিক্ষ হইয়াছিল। দুভ্তিক্ষক্রিষ্ট ক্ষুধার্ত নরনারীগণকে মৃত্যুমুখ হইতে রক্ষা করিবার জন্য তিনি দ্বারে ছারে ভিক্ষা! করিয়াছিলেন এবং অনেক লোককে অন্ন দিয় বাচাইয়াছিলেন । এই ঘটনার তিন মাস পরে যখন ভগবান্‌ বুদ্ধদেব বহুশিষ্য সহ শ্রাবস্তী নগরী হইতে রাজগৃহ-নামক স্থানে আমিতেছিলেন, সেই সময়ে তিনি পথে আসিতে আসিতে এক নিবিড় অরণ্যান্ীর মধ্যে আলিয়া পড়েন। তথায়, কোনরূপ খাদাদ্রব্য .পাইবার কৌন সম্ভাবনা ছিল না। স্বপ্রিয়৷ কোন প্রকারে জানিতে পারিলেন যে, ভগবানের শিশ্যবর্গ খাদ্যাভাবে অরণ্যানীমধ্যে মহাকষ্টে পতিত হইয়াছেন । এই'সংবাদ অবগত হইয়া তিনি তশুজণা ( ১৭৭ ) তথায় গমন করিলেন, তীহাদের অবস্থা নিরীক্ষণ করিলেন এবং তত্ক্ষণা নিজের ভিক্ষাপাত্র ধাহির করিয়া নগরাভি- মুখে প্রস্থান করিলেন ॥। নগরে আসিয়া একপাত্র অন্ন ভিক্ষ! করিয়া পুনরায় এ অরণো গমন করিলেন । তথায় গিয়া যোগবলে একপাত্র অন্নে বুদ্ধদেবের সহত্র সহত্র শিষ্তকে পরিতোষের সহিত ভোজন করাইয়া পরিতৃপ্ত করিলেন। তৎপরে তাহার যোগবলে তাহার ভিক্ষাপাত্র অমৃতপ্পসে পুর্ণ হহুপে তিনি দকলকে এ অমুৃতরস পান করাইলেন। এ অমৃতরস পান করিয়া সকলে কয়েক- দিন পর্য্যন্ত ক্ষুধা অনুভব করে নাই। অনাথপিগুদের কন্তা স্প্রিয়া ফেগবলে এইরূপ অদ্ভুত শক্তিলাভের *জন্য এবং অতি অল্পবয়সে “ভিক্ষুণী” 'হইয়। জ্ঞানার্জন ও পরোপ- কারের জন্য বৌদ্ধ-জগতে চিরস্মরণীয়৷ হইয়াছিলেন। একদা ভগবানের প্রধান শিষ্য আনন্দ ভগবান্‌ বুদ্ধদেবকে জিজ্ঞাস! করিয়াছিলেন, “ভগবন্‌, সুপ্রিয়া এত অল্পবয়সে অরহৎ-পদবী লাভ করিল কিরূপে % ভগবান্‌ বুদ্ধদেব বলিলেন, “একদা ভগবান্‌ কাশ্বপ যখন কাশীতে অবস্থিতি করিতেছিলেন সেই সময়ে বারাণসী-নগরীস্থ কোন এক বণিকের একটি পরিচারিকা প্রভুর জন্ক উত্তম সুমিষ্ট পিক লইয়া পথে যাইতেছিল। সেই সময়ে ভগবান্‌ কাশ্প এক গৃহস্থের বাটীতে ভিক্ষা করিতে ফাইতেছিলেন। এ পরিচারিকা তাহাকে চিনিত। সে তাহাকে দেখিরামাত্র হস্তস্থিত এ ( ১৭৮ ) পিষ্টক তাহাকে প্রদান করিয়াছিল। ভগবান্‌ কাশ্মপ তাহার প্রতি সন্তুষ্ট হইয়া তাহাকে বৌদ্ধধর্ম দীক্ষিত করিয়াছিলেন এবং অনেক শিক্ষা দিয়াছিলেন। সে তাহার নিকটে দীক্ষিত ও শিক্ষিত হইয়া উ্জান ও বৈরাগ্য- বলে নির্বাণ-পথের দিকে অনেকট! অগ্রসর হইয়াছিল । পুর্ববন্মের সেই পরিচারিকাই এই জন্মের স্থৃপ্রিয়া। পূর্বজন্মের সংস্কার-প্রভাবে এই জন্মে এড অল্লবয়সে সুপ্রিয়া জ্ঞানবতী ও বৈরাগ্যবতী হইয়াঞ্ছে। কুঝ্সাবতী | বৌদ্ধযুগে উত্পলবতী নগরাতে রুল্ম।বতী-নাম্পী একটি দয়াবতা, ধনবতী ও জ্ঞ্কানবতা বৌদ্ধ-মহিলা বাস করিতেন । নগরীতে অন্নবন্ত্রভাবে কেহ কষ্ট পাইলে বা রোগে, শোকে ও মহাবিপদে পড়িয়া কেহ যাতনা ভোগ করিলে তিনি সবিশেষ অনুসন্ধানে তাহা অবগত হইয়া এ ক্ষুধার্ত, শোকার্ত, রুগ্ন ও মহাবিপন্ন ব্যক্তিকে যথাশক্তি সাহাযা করিতেন। তীহার প্রতিবেশী ও প্রতিবেশিনীদিগের মধ্যে কেহ বিপদে পতিত হইয়াছে কি না, তাহা অবগত হইবার জন্য তিনি সদ! গোপনে অনুসন্ধান করিতেন এবং সেই বিপদ হইতে তাহাকে উদ্ধার করিতেন। তাহার অসীম দয়ার কথা ,গুনিলে গাত্র রোমাঞ্চিত হইয়া উঠে ( ১৭৯ ) এবং বিম্ময়সাগরে নিমগ্ন হইতে হয়। একদা দেশমধ্যে মহাদুভভিক্ষ, উপস্থিত হইয়াছিল।' খাদ্য-বস্তুর অভাবে নগর ও উপনগরের তরুলতা, পত্র, পুষ্প, এমন কি, তৃণ প্যান্ত উদ্চিদ-পদীর্থ সকল ক্ষুধার্ত নরনারীগণের উদরসাৎ হইয়া গিয়াছিল। দুভিক্ষক্লিষ্ট নরনারীগণের শীর্ণ স্বুত- দেহসমুহ ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত হওয়াতে এবং ক্রমাগত কষধার্ত প্রাণিগণের আর্তনাদ উত্থিত হওয়ায় নগরটি বিরাট শ্বাশামরূপে প্রতীয়মান হইয়াছিল । দয়াবতী রুক্সাবতী একদিন নগরীতে বিচরণ করিতে করিতে দেখিতে পাইলেন যে, একটি ক্ষুধার্ত! কন্কালসার! নারী খাদ্যাভাবে অনগ্ঠোপায় হইয়া তাহার ,সদ্যোজাত শিশুর" সজীবদেহ ভক্ষণ করিতে উদ্যোগ করিতেছে !! রুক্পাবতী এই ভয়ানক অমানুষিক অস্বাভাবিক বীভতসকাণ্ড দেখিয়া স্তম্ভিত হইয়া পড়িলেন। কিন্তু ইহাতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় না হইয়া এ নর-পিশাচীকে বলিলেন, “অয়ি ক্ষুধার্তে নারি, ক্ষান্ত হও! ক্ষান্ত হও ! তখন সেই ক্ষুধার্তা নারী বলিল, “তবে কি খাব? দেশে ক্ষেত্রের তৃণ পধ্যস্ত পদার্থ লোকের উদরসাত্ড হইয়া গিয়াছে । তবে এক্ষণে কি খাই ?” কুল্পাবতী বলিলেন, ক্ষান্ত হও। তোমার এই সদ্যোজাত শিশুকে ভক্ষণ করিও না। আমি গৃহ হইতে তোমার জন্য খাদ্য-বস্ত আনিয়া শীগ্রই তোমাকে দিব | তুমি তোমার নিজের ছেলেকে নিজে খাইও না। ক্ষান্ত হও।, (১৮০ ) বুদ্ধিমতী রুল্সাবতী তাহাকে এইরূপ আশ্বাস দিয়া তাহাকে আপাততঃ এই অস্বাভাবিক ভীষণকাণ্ড হইতে নিবুস্ত করিলেন। সেও কিঞ্চি খাদ্য পাইবে, এই কথা শুনিয়া কথঞ্চিত আশ্বস্ত হইল। কিন্ত পরক্ষণে রুক্সাবতীর, এই এক ভাবনা! উপস্থিত হইল যে, যদি তিনি খাদা আনয়নের জন্য গুহে গমন করেন, তাহা হইলে দেই অবসরে এই ক্ষুধার্তা নারী ক্ষুধাগ্রির জ্বালায় অস্মির হইয়া যদি তাহার শিশুটিকে খাইয়৷ ফেলে, তাহা হইলে এ শিশুর প্রাণরক্ষা কর! হয় না। তাহার প্রাণরক্ষার্থ তিনি যে উপায় উদ্ভাবন করিলেন, তাহা ব্যর্থ হইয়া যাইবে এবং যদি শিশুটির প্রাণরক্ষার্থ তিনি তাহার মাতার ক্রোড়, হইতে তাহাকে বলপুর্ববক কাড়িয়া লইয়া ত্বরায় গুহে প্রস্থান করেন, তাহা হইলে এঁ ক্ষুধার্তা নারী খাদ্য- বিয়োজন-জনিত শোকে, তাপে ও ক্ষুধানল-জ্বালায় অস্থির হইয়া মরিয়া যাইবে। স্ত্বতরাং এ স্থান পরিত্যাগ করিয়া যাওয়াও কোন প্রকারেই সঙ্গত নহে। শিশুকে রক্ষা করিতে গেলে প্রসূতির প্রাণরক্ষা করা হয় না, আর প্রসূতির প্রাণরক্ষার্থ গৃহে খাদ্য আমিতে গেলে সেই অবসরে প্রসূতি শিশুটিকে ভক্ষণ করিয়া ফেলিবে, এইরূপ বিবেচনা করিয়া তিনি «ন যো ন তস্ট্ৌ” অবস্থায় মহা- সঙ্ধটেই পড়িলেন। কিন্ত এই উভগ্-সঙ্কট হইতে নিষ্কৃতি লাভার্থ তাহাকে বেশীক্ষণ ভাবিতে হয় নাই। তিনি শীত (১৮১) কর্তব্য স্থির করিয়া ফেলিলেন ৷ দৈব-ছুর্ববপাকে পড়িয়! জননী নিজের সন্তানের রক্ত-মীংস দ্বারা জঠরানল নির্ববাপিত করিলে এ জগতে স্বাভাবিক নিয়ম উল্লঙ্ঘনের একটা নৃত্তন দৃ্টীন্ত-কল্ঙ্ক থাকিয়। যাইবে, এইরূপ বিবেচন! করিয়া রুক্সাবতী স্থ্যা, ধৈর্য্য ও গান্তীর্্য সহকারে এক- খানি স্থৃতীক্ষ শাণিত ছুরিকা বস্তের ভিতর হইতে বাহির করিলেন এবং তদ্দারা নিজের মাংসল স্তনদ্ধয় কর্তন করিয়া সম্তানৈর রক্ত-মাঃসলোলুপা এ ক্ষুধার্তা নারীকে প্রদান করিলেন। এ নরপিশাচীও ভৈরব-নৃত্যের সহিত হস্ত প্রসারিত করিয়া এ কর্তিত মাংসল স্তনদ্বয় ভক্ষণ করিতিত লাগিল। "সেই স্থযোগে অদ্ভুত-দানশীলা রুল্লাবতী সেই সদ্যোজাত শিশুটিকে ক্রোড়ে লইয়া! তথা হইতে শীঘ্র প্রস্থান করিলেন। তাহার বক্ষঃস্থল হইতে প্রবাহিত 'রুধিরধারা উত্পলবতী নগরীর রাজমার্গ রঞ্জিত করিয়া ফেলিল। তাহার কীণ্তিগাথ। স্থবর্ণাক্ষরে পালি ভাষায় লিপিবদ্ধ হইল। তাহার জয়গানে সমগ্র দেশ মুখরিত হইল। তাহার এই অদ্ভুত দানশক্তির কথা শুনিয়া তাহার পদধূলি লইবার জন্য নগ্ররীর নরনারীগণ দলে দলে তাহার বাটীতে আসিতে লাগিলি। তাহার বাটা প্রতিদিন জনতা- পূর্ণ হইতে লাগিল দেখিয়া তিনি বড়ই রিরক্ত হইতে লাগিলেন এবং নিজের প্রশংস! নিজে শ্রবণ কর! দস্তজনক মহাপাপ এইরূপ বিবেচন! করিয়া ড্রিনি এই পাপ হইতে ১৬ ( ১৮২ ) নিষ্কৃতি-লাভার্থ লোকালয় পরিত্যাগ পুর্ববক বিজন বনে বাস করিতে প্রস্থান করিলেন। তথায় তিনি ফল-মুলমাত্র আহার করিয়৷ নির্ববাণমুক্তিপথে অগ্রসর হইবার জন্য বৌদ্ধশাস্্-চর্চায় মনোনিবেশ ক্রিয়াছিলেন। কতিপয় জ্ঞানপিপাস্ত্র তপস্থিনী নারী তথায় তীহার নিকটে বৌদ্ধ- শাস্ত্র শিক্ষা করিয়া জীবনের চরম উতুকর্ষ সাঁধনকরিয়া- ছিলেন। মালিনী । বৌদ্ধযুগে ভারতবর্ষের উচ্চ মন্্রান্ত-বংশের মহিলাগণ স্বস্ব উচ্চ অট্রালিকায় অতুল এঁশ্র্্য ও মহাম্থখ-সম্তভোগ পরিত্যাগ করিয়া নির্ববাণমুক্তিপথে অগ্রসর হইবার জন্য বৈরাগ্যা-ব্রত অবলম্বন করিতেন এবং অধ্যয়ন অধ্যাগ্রনাদি তপস্ঠায় সদ! রত থাকিয়া মঠে বাদ করিতেন। তীহারা দিগন্তব্যাগী যশ£সৌরভে মত্ত হইবার জন্য কোন কার্ধযা- ক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইতেন না। তীহারা যশের প্রত্যাশাই করিতেন না। তীহারা দক্ষিণ-হস্ত দ্বারা ধখন কাহাকে, কিছু দান করিতেন, তখন তাদের বামহস্ত উহা! জানিতেই পারিত না। তীহারা কামনাশূন্য হইয়া লোক- হিতত্রতে দীক্ষিত হইতেন। তাঁহাদের অঙীম অধ্যবসায় সুচিত করিবার জন্তই যেন বোধ হয় যে, “মন্ত্রের সাধন: ( ১৮৩) কিম্বা শরীর-পাতন,” এই মহাবাক্যটি কবিমুখ হইতে নিঃস্ত হইয়াছিল। “চন্তীগতে চণ্ড ও মুণ্ডনামক শস্তাস্থরের দুইটি দূতের নিকটে হিমাচলশোভিনী ভগবতী দুর্গার মুখ হইতে * উচ্চার্রিত প্রতিজ্ঞার ম্যায় তাহাদের দুঢু প্রতিজ্ঞা ছিল। তাহারা এ জগতে যে বস্তুকে সভা বলিয়া বুঝিতেন, সুষ্য পশ্চিমদিকে উদিত হইলেও, তাহা পরিত্যাগ করিতেন না। তাহাদের সৎসাহসের নিকটে ভীমপরাক্রম বীরপুরুষগণকেও পরাজয় স্বীকার করিতে হইত। সংস্কৃত অভিধান-গ্রন্থপ্রণেতারা কেন যে, নারী- সাত্রকে “অবলা” শব্দের পর্য্যায়ে অন্তর্গত করিয়াছেন, তাহার কারণ তীাহারাই বুঝিতেন। কারণ, 'মানসবল, সাহসবল, বুদ্ধিবল, ধন্মবল ও চরিত্রবলে বলীয়লী ভারতীয় মাধ্য-মহিলাদ্দিগকে “অবলা” শব্দে অভিহিত করা কোন প্রকারেই সঙ্গত বলিয়া! বোধ হয় না। তারত-ললন। দেহবলেও যেরূপ বলীয়সী ছিলেন, তাহ। রাণী দুর্গাৰতী প্রভৃতি ক্ষজিয়! বীর-রমণীর বীরত্ব শ্রুবণে যথেষ্ট অবগত হওয়া যায়। অধুনা ধাহারা কোন কোন মহিলার বক্তৃতা শক্তি দেখিয় বিশ্মিত হয়েন, তাহারা রাজনন্দিনী মালিনীর নিম্নলিখিত বৃত্তান্ত পাঠ করিলেই বুঝিতে পারিবেন বে, প্রাচীন ভারতের কুল-মহিলারা কোন এক শান্দ্রের কেবল অনুবাদ মাত্র পাঠ করিয়া সেই শান্দ্রের অনুবাদ প্রকাশ করিতেন ন! এবং ণবাহব1”” লইবার- প্রত্যাশায় এবং, (১৮৪ ) “চাদা” আদায়ের চেষ্টায় বক্তৃতা-জাল বিস্তার করিয়া অজ্ঞ ধনিগণকে মতস্তের ন্যায় আকর্ষণ করিতেন না। নিজের এহিক স্থখ-স্বচ্ছন্দতালাভ এবং নিজের অভীফ- পুরণের জন পরের দেশে পর্যাটন কেরিতেন না। তাহার অগ্রে স্বদেশের লোকের পারলৌকিক মঙ্গলসাধনার্থ যত্ুৰতী হইতেন। তাহারা স্বার্থসাধনোদেশে অন্য দেশীয় লোকের অন্ঞ্ত। দর্শনে কাতরতার ভান দেখাইয়া মায়াবিনী ডাকিনীর হ্যায় অশ্রু বিপঙ্জন করিতেন না। মায়াবিনী ডাকিনী (ডাইনী ) যেমন কোন একটি শিশুর মনে বিশ্বান উৎপাদনের নিমিত্ত এ শিশুর ক্রন্দন শুনিয়া কাতরত| দেখায় এবং তাহার প্রতি সমবেদন! প্রদর্শনের জন্য নিজেও ছলপুর্ণ ক্রন্দন করিতে করিতে অশ্রুপাত করে, প্রাচীন ভারতীয় আধ্য শিক্ষিতমহিলারা তত্রপ করিতেন না। তীহারা ভারতীয় জান ও কন্ম-শাস্্ে ব্ৃতা দিবার পুর্বে সর্বাগ্রে নেত্রম্বরূপ সংস্কত ব্যাকরণ বথাৰিধি পাঠ করিতেন । তৎপরে কতিপয় সংস্কৃত সাহিত্য- গ্রন্থ পাঠ করিতেন। সংস্কৃতে ব্যুৎপন্ন হইয়া আগ্রে মূল- গ্রন্থসকল যথাবিধি পাঠ করিতেন, পশ্চাণ সংগ্রহ-গ্রন্থ ও আলোচনা করিতেন এবং এ সমস্ত” গ্রন্থের সরল ব্যাখা প্রচার করিয়া জনসমাজের প্রকৃত কল্যাণ সাধনকরিতেন। তাহাদের পাণ্ডিত্যপূর্ণ ব্যাখ্যান শুনিয়া লোকসকল অনির্ববচনীয় আনন্দ, অনুতব করিত, মুগ্ধ হইত ও প্রকৃত- ( ১৮৫ রূপে উপকৃত হইত । তীহারা যে ধন্দের উপদেশ দিতেন, সেই ধর্মের শাস্বীয় ভাষা আয়ত্ত করিতেন। পালি ও 'সংস্কৃত ভাষায় পাপ্ডিতালাভ করিয়া পশ্চা বৌদ্ধধর্ম বিষয়ে বতুতা করিতেন ॥ যে দেশীয় লোকের নিকটে যে ধন্ঠ প্রচার করিতে হয়, অগ্রে তদ্দেশীয় ভাষা শিক্ষা করাই উচিত। আরবদেশে গিয়া আরবীয় লোকের নিকটে গ্রীক ভাষায় আরবীয় ধর্মশাস্ত্র প্রচার করা অত্যন্ত উপহাস- জনক*। তাহারা অর্থ-সংগ্রহের নিমিত্ত পরদেশ পর্যটন করিতেন না। সতকার্যের জন্য অর্থের প্রয়োজন উপস্থিত হইলে নিজেরাই অর্থ দান করিতেন । সংকার্যোর জন্য তাহাদের অর্থের অভাব হইত না । অন্যের নিকটে অর্থ- সাহাষালিপ্ন। তীহাদের হৃদয়ে স্থান পাইত না। তীহার! এক একটি লক্ষপতি এবং কোটি-পতির কন্যা ছিলেন। তাহাদের মধ্যে একটি মাত্র মহিলার বৃত্তান্ত এস্থলে বিবৃত হইতেছে £-- ার্দ্বিসহত্র বর্ষ পূর্বে বৌদ্ধযুগে বারাণসী নগরীতে কৃকী-নামক এক রাজা ছিলেন। মহারাজ কৃকী সনাতন বৈদিকধন্মাবলম্বী ছিলেন। তিনি বারাণমীর স্বাধীন হিন্দু রাজা ছিলেন। ণ্তাহার প্রজারঞ্জনমহিমায় বারাণমী- রাজ্য অতিশয় সমৃদ্ধিশালী হইয়া উঠিয়াছিল। বারাণসী- রাজ কৃকীর মালিনীনান্দী এক কন্যা! ছিলেন। মহারাজ কন্তাকে তশ্কালোচিত শিক্ষা প্রদান করিয়াছিলেন । (0১৮৯) তিনি সভাসদ ব্রাহ্গণ-পপ্ডিতগণের আদেশ ও উপদেশ অনুসারে বৈদিক ধর্ন্মকীর্য্য এবং প্রজাপালনাদি রাজকার্ধা স্চারুবরূপে নির্বাহ করিতেন। রাজনন্দিনী মালিনী, িনদুধরর্মীবলম্বী পিতার ক্যা হইয়াও, গোপনে বৌদ্ধশান্্ অধায়ন করিতেন এবং বৌদ্ধধর্ম তাহার প্রগাট শ্রদ্ধা ভক্তি ছিল। তিনি বৌদ্ধ-সন্ন্যাসীদিগকে অতিশয় শ্রদ্ধা ও সন্মান করিতেন । তিনি গোপনে বৌদ্ধশান্্র অধ্যয়ন করিয়৷ অসাধারণ বিদ্ধী হইয়াছিলেন।, কিন্তু নিম্নলিখিত ঘটনার পুর্বে ইহা কেহই জানিতে পারে নাই। সকলেই নিত যে, তিনি কেবল বেদাদি হিন্দুশান্ত্রেই যথেষ্ট জভ্কানলাভ 'করিয়াছেন। একদিন কতিপয় বৌসন্নযাসীকে রাজ প্রাসাদে ভোজনার্থ নিমন্ত্রণ করিয়াছিলেন । সন্গ্যাসীর মধ্যান্ছে প্রাসাদের সিংহদ্বারে সমাগত হইলে দৌবারিক তাহাকে তীহার্দের আগমনবার্তী নিবেদন করিল। তিনি সন্নাসীদিগকে প্রাসাদ মধো আনয়ন করাইয়া ও যথাবিধি অভার্থনা করিয়া তাহাদিগকে উত্তমরূপে ভোজন করাইয়!- ছিলেন এবং তীহাদের পুস্তক-বন্ধনের জঙ্য তাহাদিগকে নানাবর্ণ ক্ষৌমবন্ত্রথগুসকল প্রদান করিয়াছিলেন তাহারা মালিনীর আদর, অভ্যর্থনা ও সগ্ুকারে অতিশয় প্রীত হইয়া স্ব স্ব স্থানে প্রস্থান করিলে এই বৌদ্ধনন্ন্যাসী- দিগের তোজনবার্তা ক্রমে ক্রমে মহারাজ কৃকীর কর্ণ- গোচর হইল। মহারাজের উপদেশক ব্রাহ্মণপণ্ডিতগণ (১৮৭ ) মহারাজকে বলিতে লাগিলেন, “মহারাজ, আপনি সনাতন- বৈদিকধর্ম্মাবলম্বী। আপনার কণ্ঠা মালিনীকে আপনি বৈদিকধন্্ম শিক্ষা দিয়াছেন। মালিনী কিন্ত্ত স্বধর্ম্ম অতিক্রম করিয়া অনুধন্্মা বলম্বীদিগকে আপনার বিন! অনুমতিতে নিমন্ত্রণ করিয়া প্রাসাদমধ্যে ভোজন করাইযা- ছেন। ইহা অত্যন্ত অন্যায় ও গহিত কার্য হইয়াছে। যদি বৌদ্ধধর্ম্ে তীহার আস্থা হইয়া থাকে কিন্বা বৌদ্ধ- সন্নাসীদিগকে ভজন করাইবার ইচ্ছ! হইয়া থাকে, তাহ হইলে তাহাদের মঠে খাদাত্রব্য প্রেরণ করিলেই ভাল হইত । আপনার অনুমতি না লইয়া আপনার প্রাসান্দ- মধ্যে বসাছয়া তাহাদিগকে ভোজন করান রাঁজনন্দিনীর উচিত কার্য হয় নাই। পিতার অনুমতি বিনা যে কন্য স্বেচ্ছামত কোন কাধ্য করে, শান্দ্রে তাহাকে অবাধ্য! কহে। রাজনন্দিনী যখন অবিবাহিতা, তখন তিনি পিতার অধীন। পিতার আদেশ লইয়৷ সকল কার্ষ্য করাই তাহার উচিত। ভিনি হিন্দু রাজার কন্যা। সুতরাং বৌদ্ধদিগের সহিত তাহার এত বন্ধুতা করা ভাল নয়। কারণ, বৌদ্ধদিগের সাম্রাজ্যবর্ধনলালস! যেরূপ দ্বিন দিন বৃদ্ধি পাইতেছে, তাহাতে খ্মামাদের এই আশঙ্কা হইতেছে যে, আপনার কন্যা যদি তাহাদের সহিত মিলিত হয়, তাহা হইলে আপনার এই স্বাধীন বারাণসীরাজ্য হয়তো! অচিরে বিধ্বস্ত হইতে পারে । অতএব ঈদৃ্টী অবাধ্যা কন্যাকে (১৮৮) বারাণনীরাজ্য হইতে শীঘ্র নির্বাসিত করাই শ্রেয়ঃকল্ল । নতুবা! মহারাজ, ঘোর বিপত্তি ঘটিবার সম্তাবন| ৮ মহারাজ কৃকী এইবূপ স্বীয় সভাসদ উপদেশক ব্রাহ্মণপপ্ডিতদিগের মন্ত্রণ। শুনিয়া ষড় যন্ত্রচক্তে ঘর্ণিত হইতে লাগিলেন । অবশেষে তিনি রাজানাশভয়ে কন্যাকে নির্বাসিত করাই শ্রেয়ঃকল্প বলিয়! স্থির করিলেন । তিনি কন্যাকে চিরনির্বামনের আদেশ প্রদান করিলেন । মালিনী চির-নির্বাসনের আদেশ শ্রবণ ফরিয়। কিঞ্চিন্যাত্রও ভীত হইলেন না, বরং মহাহর্ষের সহিত মির্বাসনে সম্মতি প্রকাশ করিলেন। কিন্তু পিতাকে বলিলেন,"'পিতঃ, আমি রাজকন্যা, রাজ প্রাসাদেই মহান্ুখ- স্চ্ছন্দে আজন্ম লালিত-পালিত হইয়াছি। সুতরাং নির্ববাসনে প্রস্তৃত হইবার জন্য সাত দিন সময় প্রাথন। করিতেছি ।৮ মহারাজ কুকীও উক্ত প্রার্থনায় সম্মত হইলেন। তিনি মনে করিলেন, এই সাত দিনের মধ্যে এই কন্যার দ্বারা আমার বারাণসীরাজ্যের অনিষ্ট ঘটিবার কোন সম্ভাবনা নাই। পাছে কোন বৌদ্ধ-সন্ন্যাসীর সহিত মালিনীর পত্রের আদান-প্রদান চলে, এই আশঙ্কায় প্রাসাদস্থ ভূত্যবর্গ ও দৌবারিকগণের উপর তীক্ষদৃষ্ট রাখিবার জন্টা কঠোর আদেশ প্রচার করিলেন এবং মালিনীর নির্ববাসনের উপযোগী দ্রব্যসস্তার-সংগ্রহের জন্য মালিনীর অভিলাষ্‌ জানিতে চাহিলেন। মালিনী বলিলেন, (১৮৯ ) “আমি নির্বাসনের উপষোগী কোন বস্তুই চাহি না । আমি এই সাতদ্দিন বক্তৃতা করিতে চাহি। আপনি অনুগ্রহ- পূর্বক সাতদিন আমার বক্তৃতা শুনিয়া যদি আমাকে নির্বাসিত করেন, তাহা হইলে আমি কৃতার্থ হইয়া নির্বাসিত হইব। নির্্বাপিত হইবার সময় সঙ্গে একটি কপর্দকও লইব না।” মহারাজ বলিলেন, বক্তৃতা শুনিতে কোন আপনি নাই । তিনি এই মনে করিলেন যে, সাত- দেন পঁরে কন্যা যখন নির্ববাসিতই হইবে, তখন যত ইচ্ছ। তত বক্তৃতা করুক না কেন? বক্তৃতা শুনিতে আপত্তি কি? এই মনে করিয়া তিনি ব্তৃতা করিতে আদেশ দিলেন। *এই ফোড়বধবয়স্কা রাজকুমারী এফ সপ্তাহ কালের মধ্যে তাহার অন্ভুঁত বক্তৃতাশক্তির প্রভাবে রাজ, রাজী, ভ্রাতা, ভগিনী, অন্যান্য আত্মীয়বর্গ, মন্ত্রিগণ, ব্রাহ্মণ- পগ্ডিতমগুলী, ভট্টসেনানামক রাজসৈন্য, এবং বারাণসী নগরীর প্রায় দশসহজ্স অধিবাসীকে বৌদ্ধধন্্ম গ্রহণ করাইয়াছিলেন। বৌদ্ধশান্ত্রে তাহার অগাধ বু[পত্তি দেখিয়া ব্রাঙ্গণ-পণ্ডিতগণও বিম্মিত হইয়া গিয়াছিলেন। এতাবগুকাল পর্যন্ত তাহার বক্তৃতাশক্তি, বিচারশক্তি, বিশ্লেষণশক্তি ও বুঝাইবার শক্তি ভ্মাচ্ছাদিত বহ্ছির স্যায় হদয়মধ্যেই লুক্কাফ়িত ছিল। তাহার এই লুকায়িত শক্তিরূপ' অগ্নি এই ঘটনারূপ পবন-হিল্লোলে দন্দীপিত হইয়া দেশব্যাপিনী উজ্জ্বলশিখা বিস্তার, পূর্বক পৌরজান- ( ১৯০ ) পদবর্গের অজ্ঞানতিমিররাশি অপলারিত করিয়াছিল। যে সকল ব্রাহ্ষণপণ্ডিত তাহার বিরুদ্ধে পূর্বে যড়যন্ করিয়াছিলেন, পরে তীহারা শাঁহার “অহিংস! পরমধর্্ম,» এই বৌদ্ধশান্্রীয় উপদেশের স্ুবিস্তৃত" ব্যাথ্য। শ্রবণে যঙ্ছে পশুহিংসার অনিষ্টকারিতা উপলব্ধি করিয়া গো মেধাদিযজ্ঞানুষ্ঠনে বিরত হইয়াছিলেন এবং ভীহার উপদেশ অনুসারে বৌদ্ধধন্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন । এইরূপে তিনি সপ্তাহকালমধ্যে নিজের বক্তৃতাশক্তি প্রভাবে * এত- গুলি লোককে বৌদ্ধধন্ধব গ্রহণ করাইয়া পিতাকে বলিলেন, পপিত2, একসপ্তাহ কাল অতীত হইয়াছে । এইবার আমাকে নির্বাসিত করুন। কারণ, আপনি মনে করিয়া- ছিলেন যে, আমি আপনার প্রাসাদের কণ্টক বা আবর্জনা- স্রূপ। আপনার বারাণলীরাজোর শান্তিতঙ্গকারিণী এবং স্বাধীনতানাশিনী। কিন্ত্ব পিতঃ, আমি শপথ করিয়া বালতে পারি যে, আমি কোন দোষই করি নাই। সংসার- ত্যাগী নির্ববাণপথের পথিক জ্ঞানী বৌদ্ধ-সন্ন্যাসীদিগকে প্রামাদমধ্যে ভোজন করাইলে কোন মহাপাপ হয় না। পিতৃ-আজ্ঞ৷ সদ! পালনীয় । আপনি আমাকে এক সপ্তাহ পরে নির্বাসিত করিবেন বলিয়াছিলেন। এক সপ্তাহ অদ্য অতীত হইল । আমি আপনার আজ্ঞাপালনে প্রস্তত। আমাকে নির্বাসিত করুন, আমিও, আর, এই কোলাহল- পুর্ণ ছুঃখশোকময় নিত্য স্থখের আবরণে আচ্ছাদিত ( ১৯৯১ ) নগরীতে বাস করিতে চাহি না। নাগরিক জীবন ও নাগত্ধিক হদঘ্, ছল, কপটভা এবং দ্বৈধভাবে সদাই কলুষিত । এতাদৃশ স্থানে আমি জীবন-যাপন করিতে চাহি না। এখানৈ ভিত্ববরে এক ভাব, বাহিরে অন্য ভাব। এখানে ধন্মালোচনা একটা মহাবিডম্বনা মাত্র। এখানে, ইহা একটা লৌকিক আচার মাত্র। নগরীর কোলাহল হইতে দুরে অপস্থত হইয়া শান্তিপূর্ণ নির্জন বনে তপস্যা করিব'। এইবার * আমাকে নির্বাসিত করুন। আমি আপনার বারাণসীরাজ্যের শাস্তিভঙ্গ করিব না। . আপনি, স্বখস্বচ্ছন্দে রাজা শাসন করুন। বৌদ্ধ-সম্াটের সহিত ষড়যন্ত্র করিয়া আপনার স্বুধীন রাজা বিধ্বস্ত করিবার ইচ্ছা আমার হৃদয়ে কখনই উদ্দিত হয় নাই এবং কস্মিন্‌- কালেও উদিত হইবে না। আমি জ্ঞানী বৌদ্ধ-সন্ন্যাসী- দ্রিগকে নিমন্ত্রণ করিয়া ভোজন করাইয়াছিলাম মাত্র। জ্ঞানী ত্যাগী সন্ন্যাসীরা রাজনীতিক আন্দোলনে যোগদান করেন না এবং ইহাতে তীহাদের যোগদান কর! উচিতও নয়। কারণ, ইহা গৃহীর কর্ম্ম। ইহ] ত্যাগী জল্সযাসীর কন্ম নয় ও ধর্ম নয়। যে'জক্সালী রাজনীতিক আন্দোলনে যোগ দেয়, বাঞঙ্জনীতি-ঠচ্চায় সহ! আমোদ অনুভব করে এবং রাজবিজ্রোহের পক্ষপাতী হয়, সে মহাপাপী, ভণ্ড বা পট সঙ্লী্দী। তাদৃশ সঙ্্যাসীকে রাজ্য হইতে নির্বাসিত করাই বুদ্ধিমান্‌ বাজার অবশ্ট কর্ঘব্য কর্ম্ম। ন1 করিলে ( ১৯২ ) রাজাকে বিপন্ন হইতে হয়। এই জন্য যুদ্ধের সময় ঈন্ন্যাসিবেশী লোকের উপর তীক্ষৃষ্টি রাখিতে হয়। ইহা প্রাচীন ভারতীয় রাজনীতি-শান্ত্রের কথা । আমি সন্ন্যাসীদিগকে তোজন করাইয়াছি বলিয়া আপনার রাজ- সভাস্থ পণ্ডিতগণ ও আপনি আমার প্রতি ক্রুদ্ধ হইয়া- ছিলেন এবং আমার নির্ববাসনের আদেশ দিয়াছিলেন । অতএব আপনাকে প্রণাম করিলাম ও পিতৃবাক্য-পালনার্থ রাজবাটা হইতে বনে বাস করিতে চলিলাম 1” এই ৰলিয়া রাজনন্দিনী মালিনী গমনোদাতা হইলে মহারাজ কৃকী অশ্রপূর্ণনয়নে গদগদকণ্ে বলিলেন, “মা, তুমি যাইও না। তুমি আমাদের গুরুত্বরূপা! তুমি এই এক সপ্তাহকাল আমাদিগকে অমূল্য ধন্মোপদেশ দিয়া আমাদের হাদয়ে ফে উজ্জ্বলতম জ্ঞানালোক প্রস্ালিত করিয়াছ, তাহার প্রভায় আমাদের হৃদয়ের অজ্ঞান-অন্ধকাররাশি বিনষ্ট হইয়াছে । আমি, তোমার মাতা, তোমার ভ্রাতৃভগিনীগণ, রাজবাটীর অন্যান্য সমস্ত লোক, রাজসৈহ্য, দশসহত্র নগরবাদী, এমন কি, চতুর্বেবেদ ও বেদাঙ্গপারদর্শী সভাপগ্ডিত ব্রাহ্মণগণ পর্যন্ত তোমার ধন্মোপদেশ শুনিয়া বৌদ্ধধন্্নী অবলম্বন করিয়াছেন। তাহারা সকলেই: তোমার নিকটে খণী হইয়াছেন । তুমি কাশী হইতে অন্যত্র কোথায় যদি যাও, তাহা হইলে তাহারা কাহার গিকটে সেই খণ পরিশোধ করিবেন ? তুমি ভ্তাহা্দের নেত্রী, তাহাদিগকে বিশুদ্ধ ধর্ম ( ১৯৩ ) পথ দেখাইয়া দিয়াছ। তুমি তীহাদিগকে পরিতাগ করিয়া যাইলে তাহারা আ্োতস্বতী' নদীতে কর্ণধার-বিহীন নৌকারোহিগণের ন্যায় বিষম সঙ্কটে পড়িবেন। আমি তোমার পিতা । *পিতৃঝুক্য-পালন করাই ধার্মিক কন্যার অবশ্য কর্তব্য কন্্ম। আমি তোমাকে বানে যাইতে নিষেধ করিতেছি । তুমি যাইও না। আমার কথার সম্মান রাখিও। ভুমি যদি কোলাহলপুর্ণ রাজবাটীতে কিন্বা নগরীর মধ্যে কো্ায়ও থাকিতে না চাও, তাহা হইলে কাশীর রাজধানী-প্রান্তে উপনগরে সারনাথনামক বৌদ্ধ তীর্থক্ষেত্রে বাস করিয়া বৌদ্ধ নরনারীগণের কল্যাণ সাধন কর। তুমি নিবিড় বনে বাস,করিলে নরনারীর ক্ষি উপকার হইবে ? নরনারীগণের উপকারার্থ ভগবান বুদ্ধদেব নগর হইতে নগরান্তরে গ্রাম হইতে গ্রামান্তরে অক্লান্ততাবে অনবরত উপদ্দেশ দিতে দিতে বিচরণ করিতেন। তিনি যদি সমস্ত জীবন কেবল নিবিড় অরণ্যমধো অতিবাহিত করিতেন, তাহা হইলে এত নরনারী পরিব্রাণ পাইত না। ভারতের এত উপকার হইত না। এতদিনে ভারত শ্মশান কিম্বা দস্্যভূমিতে পরিণত হইত। চিতআগ্লি-তপ্ত শশ্মানে শৃগাল কুক্ুরসকল ঘেমন ম্বতদেহ-মাংস ভঙ্গণ করিয়া বীভৎসকাণ্ড অতিনয় করে, তন্রপ পশুমাংসলোলুপ যাড্তিকগণ হোমাগ্ি-তপ্ত যডক্ষেত্রে পশুক্ুলের- যদ করিয়া! পশুর রক্তনদীর.জআোতে ভারতুবর্মঈীবিত করিত ৬৭ রঃ (১৯৪ ) ভারতে পশুকুলের মহাপ্রলয় উপস্থিত হইত । সারনাথ- তীর্থ বা সবগদাব কার্শীর নগরী হইতে দূরবর্তী নহে। নিকটেই অবস্থিত। সংসারাসক্ত মুড নরনারীগণের কোলাহলে উহা মুখরিত নয়। ই্রুস্থান সদাই শান্তিপূর্ণ । তথায় ত্যাগী বৌদ্ধ যোগীরা তপন্তা করেন। তথায় বৌদ্ধ নারীকুলের কল্যাণ-সাধনার্থ একটি বৃহৎ বিদ্যালয় সংস্থাপন করিয়া তুমি বৌদ্ধধন্ম শিক্ষাদান কর। এ বিদ্যালয় স্থাপন করিতে এবং তাহার স্থায়িত্ব-স্ম্পাদনে যত ব্যয় হইবে, আমি সেই বায়ভার বহন করিব। তুমি নারীরূপে যখন জন্মগ্রহণ করিয়াছ, তখন নারীকুলের ভিতসাধনার্থ জীবন সমর্পণকরাই তোমার এক্ষণে একমাত্র কার্ধ্য। অতএব তোমার জীবনের অনেক কর্তব্য অবশিষ রহিয়াছে । এইরূপ অবস্থায় বনে গিয়া বাস করিলে জগতের কোন উপকার হইবে না। তুমি গোপনে বৌদ্ধধর্ম আলোচনা করিয়া যে, এত শক্তি এত বিদ্যা ও এত বৈরাগ্যভাব অর্জন করিয়াছ, তাহা আমি পূর্বের জানিতে পারি নাই। সেইজন্য আমি তোমাকে রাজসভার পণ্ডিত- গণের উপদেশবশবর্তী হইয়া নির্বধাসনের আদেশ দিয়া- ছিলাম। তজ্জন্য মা, তুমি হুঃখিত হইও না। পিতার প্রতি ক্রুদ্ধ হইও না। তোমাকে বেশী বলাই বাহুল্যমাত্র । তুমি আমাদিগকে *সতপথে পরিচালিত কর। নগরীর €( ১৯৫ ) নিকটেই শান্তিপূর্ণ স্থানে সারনাথে বাদ কর। গ্ত্র কুত্রাপি যাইও না। মহারাজ কৃকীর এই আদেশ শুনিয়া সুশীলা পিতৃ-আজ্ঞামুবন্তিনী মালিনী “তথাস্ত” বলিয়া পিতৃ-আজ্ঞ। শিরোধার্ধ্যধকরিলেন। সারনাথে দশ সহস্র বৌদ্ধ-মহিলার বাসোপযোগী এক বৃহ বিদ্যালয় স্থাপিত হইল । মহারাজ কৃকী দশ সহস্র বৌদ্ধ-মহিলার অন্নবন্ত্রের সংস্থান করিলেন। মালিনী পিতৃ-প্রাসাদ পরিত্যাগ করিয়া সেই মঠে ছাত্রীদিগের অভিভাবিকা হইয়া বাস করিতে লাগিলেন এবং অধ্যয়ন অধ্যাপন ধশ্মপ্রচার ও দানাদি সতকার্ো সদা ব্যাপৃত থাকিয়া নারীসমাজের অসীম কল্যাণ সাধন করিতে লাগিলেন মহারাজ .কৃকীও, কন্যার সকার্যে আনুকুল্য করিতে লাগিলেন । জগতে নারী- জীবনের অনেক উৎকর্ষ সাধিত হইতে লাগিল। কাশীর উপনগরস্থ সারনাথনামক স্থানে বৌদ্ধদিগের প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত হইতে লাগিল। নানাদিগ্দেশ হইতে জুশিক্ষা- প্রার্থিনী বৌদ্ধ-মহিলারা উক্ত মঠে সমাগত হইয়া নির্বাণ মুক্তি শাস্ত্রে জ্ঞানলাভ করিতে লাগিলেন। কাশীর সারনাথ বা মৃগদাব, বৌদ্ধ-মহিলা বিদ্যালয়ের কেন্দ্র স্থানে পরিণত হইল। সারনীথের সমৃদ্ধি দিন দ্দিন বাড়িতে লাগিল। কালের করাল কুক্ষিতে উহ! বিলীন হইয়া গেলেও, আড়াই হাজার বশুসর পূর্ব্বের বুছত বৃহত অট্টালিকার দর্পণতুল্য স্থদৃশ্য প্রস্তরখগুরূপ অংশগুলি (১৯৬ ) অদ্যাপি নৃতনবণু প্রতীয়মান হইয়া থাকে এবং প্রাচীন স্সভ্য ভারতের স্থপতি-বিদ্যার অমূল্য উজ্জ্বল নিদর্শন প্রদর্শন করিতেছে। “হার রাজ্যে র্ধ্য অন্তমিত হয়েন না” সেই বৃটিশসিংহ ভারত-সগ্ান্টর ভূতপূর্বব মহাপ্রতাপ প্রতিনিধি বিদ্বান লর্ড কর্জন মহোদয়ের কৃপায় সারনাথের এ প্রাচীন অবশিষ্ট গৌরব এক্ষণে দর্শকের আনন্দ-বদ্ধন করিতেছে । লর্ড কজ্জন মহোদয়ের আদেশে বনু অর্থ ব্যয়ে ভূগর্ভে প্রোথিত এ সকল অট্রালিকার অংশগুলি উত্তোলিত হইতেছে, নৃতন রাজকীয় বৃহ অট্রালিকায় সুরক্ষিত হইতেছে, এবং আড়াই হাজার বৎসর পূর্বে ভারতীয় স্সভাতা ও ভারতীয় স্থাপতা-কৌশল "বিঘোধিত হইতেছে | সংঘমিত্র। | ভারত-সম্রাট অশোক সা্রাজ্যলাভের পূর্বেব পিতার আদেশে উজ্জয়িনী নগরীতে বান করিতে বাধ্য হইয়া- ছিলেন। তাহার পিতা তাহাকে ভালবাদিতেন ন। বলিয়৷ তদানীন্তন ভারত-রাজধানী পাটন! "মহানগরী হইতে বন্ু- দূরে অবস্থিত উজ্জয়িনী নগরীর শাসন ভার প্রদান করিয়। তাহাকে উজ্জয়িনীতে প্রেরণ করিয়াছিলেন। ইহ] আড়াই হাজার বগুসর পূর্বেবের ঘটন1। অশোক উজ্জয়িনীর রাজ- ( ১৯৭ কার্ধ্য উত্তমরূপে নির্লাহ করিতেন । তিনি শ্রেষী-উপাধি- ধারী এক গুজরাট বণিকের দেবীনান্ধী কন্যাকে বিবাহ করিয়াছিলেন। দেবা পরমা সুন্দরী স্ুশীলা গুণবতী মহিলা ছিলেন । “দেবী, ধ্রাজবংশসম্ভৃতা না হইলেও তাহার রূপে গুণে ও শীলতায় আরুষ্ট হইয়া রাজপুত্র ও ভাবী সমতা অশোক তাহার পাণিগ্রহণ করিয়া স্থখে কালষাপন করিতে লাগিলেন । তীহার এই বিবাহ-বার্তী তিনি মগধস্ব ভারত-রাজধান পাটলীপুত্রে পিতাকে বিজ্ঞাপিত করিলেন না। দেবর সহিত স্খে কালযাপন করিয়া উজ্জয়িনী-রাজা শাসন করিতে লাগিলেন। কালক্রমে তাহার মখেন্দ্রনামক এক পুজ ও সংঘমিত্রানামী এক কনা জন্মিল। ইহার কিছুদিন পরে যখন তিনি সম্রাট হইয়া রাজধানী পাটনায় আগমন করেন, সেই সময়ে প্রথমতঃ পুক্র ও কন্মাকে উজ্জধ়িনীতেই রাখিয়! আসিয়া- ছিলেন, পরে তাহাদিগকে পাটনায় আনয়ন করিয়াছিলেন । রাজধানীতে আনয়ন করিয়া তাহাদিগকে উত্তমরূপে ধন্ম ও নীতি শিক্ষা দিতে লাগিলেন । ধন্ম ও নীতিশিক্ষা- প্রভাবে তীহারা পরমধার্থ্িক ও স্থুনীতিপরায়ণ হইয়। উঠঠিলেন। সম্রাট অশোক লংঘমিত্রাকে সমস্ত বৌদ্ধগাথা অভ্যাস করাইয়াছিলেন । তীহার স্বভাব এতই বিনয়নভ্র ছিল ও উহার ব্যবহার এতই সরল ছিল যে, তিনি সমআাট- কন্যা হইলেও, মঠের ভিক্ষুণী-উপাধিধারিণী সামান্য বৌদ্ধ (১৯৮ ) সন্ন্যা্িনীর ম্যায় সর্বসাধারণের নিকটে প্রতীয়মান হইতেন। ভ্রাতা ও ভগিনী উভয়েই সমভাবাপন্ন ছিলেন । তীহার! সকলেরই ভক্তি শ্রদ্ধা সন্মান ও গ্রীতিভাজন হইয়াছিলেন। অহঙ্কীর কাহাটক বলে তাহা তীহার! জানিতেন না। তাহারা সর্বদাই লিখনপঠনকার্য্ে নিযুক্ত থাকিতেন। সম্রাট অশোক বৌদ্ধধর্ম-প্রচারার্থ চুরাশি-হাজার বিহার বা অতি প্রশস্ত প্রাঙ্গনসমন্থিত উদ্যান- মধ্যবর্তী বৃহ বৌদ্ধ মঠ নিন্ীণকরাইয়াছিলেন।' এক একটি বিহারে বছুসহত্র বৌদ্ধ সন্ন্যাসী বাস করিয়া ধর প্রচার করিতেন। তাহাদের অন্নবস্তর-ব্যয়ও সআাট স্বয়ংই নির্ববাহ করিতেন। রোমরাজো যেমন ধর্মগুরু পোপের প্রাধান্য শ্রুত হইয়া থাকে, সম্রাট অশোকের সময়ে ভারতে প্রধানতম বৌদ্ধ ভিক্ষুর তদ্্রপ প্রাধান্য ছিল। সম্রাট স্বয়ং তাহার চরণে প্রণত হইতেন এবং তাহার আদেশ শিরোধার্ধ্য করিতেন। অন্যান্য ভিক্ষু বা বৌদ্ধ সন্াসী- দিগকেও তিনি যথেষ্ট সম্মান করিতেন। সঞআাট অশোক বৌদ্ধধর্মের পুষ্টিসাধনে দশ কোটি টাকা ব্যয় করিয়া- ছিলেন। তিনি ছুরাশি হাজার বৌদ্ধবিহার-নির্মাণের আদেশ দিয়াছিলেন। ইহাতে “তাহার প্রভূত অর্থব্য় হইয়াছিল। যেদিন তিনি শ্ুনিলেন যে, চুরাশি হাজার বিহারের নির্দ্মাণকার্ধ্য সমাপ্ত হইয়াছে সেই দিন তিনি আনন্দসাগরে মগ্ন হইয়া সর্ববন্ধ এই ঘোষণাবাণী প্রচার (১৯৯ ) করিতে আদেশ দিলেন যে, “অদ্য হইতে সপ্তাহকাল পর্ধাস্ত তীহার সমগ্রসাআজ্যমধ্যে প্রতি যোজন অন্তর স্থানে *মহাদানমহোত্সব” হইবে । এই “মহাদান- মহোত্সব” উপলক্ষে তীহার গাজাবর্গকে রাজ্যের সকল স্থান পুষ্প মাল্য ও পল্লবাদি দ্বারা স্থুশোভিত ও স্থমজ্জিত করিতে হইবে এবং যাহার যেমন সামর্থ্য, তাহাকে তদন্ুদারে চুরাশি হাজার বিহারের ভিক্ষুসমূহকে ভিক্ষা দিতে হইবে। রজনীতে দীপাবল দ্বারা রাজ্যের সমগ্র স্থান আলোকিত করিতে হইবে । স্থমধুর গীত বাদ্য দ্বারা সকলের হৃদয়ে অসীম আনন্দ উৎপাদন করিতে হইবে । এই এক সপ্তাহ সকলকেই সংযত ও অবহিত চিত্তে ভগবান "বুদ্ধদেবের অমৃতময় অমূল্য ধর্মমোপদেশ শ্রবণ করিতে হইবে। সপ্তম দিবসে সত্তা স্বয়ং পাত্র, মিত্র, মন্ত্রিগণ ও রাজোচিত শোভাযাত্রা সহ রাজধানীর প্রধান রাজমার্গে বহির্গত হইবেন। এ দিবস সমস্ত বিহারের ভিক্ষুসমূহকে বিশেষরূপে ভিক্ষাদানে সন্মানিত করিতে হইবে । এই- রূপে সপ্তম দিবসের কার্য্য শেষ হইলে “মহাদানমহ্থোৎ- সবের” অনুষ্ঠান সমাপ্ত হইবে ।” সম্রাটের এই আদেশ- বাণী শ্রুধণ করিয়! সকলেই যথাশক্তি স্য স্ব গৃহ স্মসভ্জিত ও টান করিতে লাগিল। ). সন্জাটের প্রাসাদ, রাজপথ ৪৩ ) ফেলিল। প্রধান প্রধান বিহারের প্রধান প্রধান জ্ঞানি- ভিক্ষুগণ পাটন। রাজধানীতে মহাসম্মানের সহিত নিমন্ত্রিত হইয়া আগমন করিলেন। সপ্তম দ্রিবসে সম্রাট অনির্ববচ- নীয় মহাশোভাযাত্র। সহ রাজধানীরঃপ্রধান রাজপথে বহির্গত হইলেন। গ্রজাবর্গ মহাহর্ষের সহিত সম্রাটের জয়ধ্বনি করিতে লাগিল। সকলেই আনন্দে মহাউৎফুল্ল হইল। যেখানে মহাঁদানমহোৌৎসব উপলক্ষে স্থসজ্জিত মহামগ্ডপ নির্শিত হইয়াছিল, স়াটের শোভাষাত্র! সেই দিকে চলিল। তথার উপস্থিত হইয়া সম্রাট মহামগ্ডপমধ্যে স্বর্ণসিংহাসনে উপবিষ্ট হইলেন। রাজ্যের প্রধান প্রধান সামন্ত ও মাননীয় প্রজাবর্গ তাহার দংহাসনের সম্মুখে উপস্থিত হইয়া প্রাচীন স্ুসভ্য ভারতীয় রীতি অনুসারে সম্টকে অভিবাদন করিলেন এবং স্ব স্ব নির্দিষ্ট স্থানে উপবেশন করিলেন। সভা এক অপূর্ব অবর্ণনীয় শোভা ধারণ করিল। এমন সময়ে মহামনীষী মৌদ্‌গলীর পুক্র তিস্ত- নামক প্রধানতম সর্ববমান্য মহাবিদ্বান মহাস্থবির ভিক্ষু তথায় আসিয়৷ উপস্থিত হইলেন। তিনি তথায় উপস্থিত হইবামাত্র সম্রাট সিংহাসন হইতে উখিত হইলেন । রাজ- সভাস্থ সকলেই উথিত হইল। “সআআাট, তিষ্যের চরণ- যুগলোপরি রাজমুকুটশোভিত মন্তুক অর্পণ করিলেন । তিষ্তের পদধূলি লইয়া তিষ্তের জগ নিদ্দিউ আসনে তিষ্ুকে বসাইলেষ এবং সিংহাসনের নিম্মে তিস্বের ( ২০১ ) নিকটস্থ একটি সাধারণ আসনে স্বয়ং উপবিষ্ট হইলেন। সেই দিন সহ সহস্র ভিক্ষু ও ভিক্ষুণী সেই রাজসভায় উপস্থিত হইয়াছিলেন। ধর্ন্মানুষ্ঠান ও বিদ্যোপার্জজন অনুসারে যাহার ধৈমন পদ, তিনি তদনুসারে সম্মান প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। ভিক্ষু ও ভিক্ষুণীদকল সম্রাটের প্রতি মহাপ্রসন্ন হইয়া সম্্টকে আশীর্বাদ করিতে লাগিলেন । তাহাদিগের আশীব্বাদ-প্রভাবে' সম্লাট সেই দিন অলৌকিক দিব্যশক্তি লাভ করিয়াছিলেন। সেই দিব্যশক্তির সাহাষে) তিনি বিভিন্ন স্থানস্থিত সুসজ্জিত চুরাশি হাজার ধর্্মভবন মুহূর্তমধ্যে দেখিতে পাইলেন। তখন সম্মার্, ঘ অর্থাৎ*ভিক্ষু ভিক্ষুণীসন্প্ুদায়কে জিজ্ঞাসা "করিলেন, “ভগবান বুদ্ধদৈবের ধন্মসেবীদিগের মধ্যে কাহার দান অর্ববশ্রেষ্ঠ ?” সংঘ উত্তর দিলেন, “হে সত্তর, ভগবান বুদ্ধদেবের লীলাকালেও আপনার মত দানশীল কেহই ছিলেন না।” সম্রাট সমবেত ভিক্ষু ভিক্ষুণীদিগের এই প্রশংসাবাণী শুনিয়া পুনর্বধার জিজ্ঞাসা! করিলেন, এই প্রকার দান করিয়া কোন ব্যক্তি কি বৌদ্ধ ধর্ের প্রকৃত বন্ধু হইতে পারে ?” সংঘের প্রধান নেত! মহাস্থবিরভিত্ বলিলেন, “যিনি পুর বাপ্কণ্াকে ধর্ন্ার্থে উতনর্গ করিয়া ৃ ন্‌ তিনিই ভগবান বুদ্ধদেবের ধর্তের প্রধান ও প্রকৃত পরি- পোষক।” ছে সম্ঞাট, আপনার তি পরমা এই, ধর্মের যে পরম! হিতৈতথী,. এ বিঘং বিষয়ে কাচুয়াত্র লনোহ লাই.” ( ২০২ ) ততকালে সেই মহামগুপমধ্যে সম্রাটের পুক্র মহেন্দ্র এবং কন্যা সংঘমিত্রা উপস্থিত ছিলেন । বিংশতিবর্ষবয়ন্ক যুবক মহেন্দ্র উত্তমন্বভাব তীক্ষবুদ্ধি ধর্টে নিষ্ঠা এবং নানাবিদ্যায় পারদর্শিতা দেখিয়া সম্রাট তাহাকেই সাআাজোর উপযুক্ত উত্তরাধিকারী স্থির করিয়া সদা আনন্দ অনুভব করিতেন। কিন্তু বৌদ্ধধন্মাচারধ্য মহাস্থবির তিষ্যের এই কথা শ্রবণ করিয়া তিনি ভাবীসআ্রাট পুন্রের মায়া. ত্যাগ করিলেন। অফ্টাদশবর্ষবয়স্কা যুবতী সংঘমিত্রাও সেই স্থানে বসিয়াছিলেন । সম্রাট, মহেন্দ্র ও সংঘমিত্রার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া বলিলেন, ভিক্ষু গ্রহণ করিতে তোমাদের ইচ্ছা আছে কি 2. আদর্শবৌদ্ধ মহাস্থবিরগণ ভিক্ষুধর্্মকে .অতিশয় পবিত্র ব্রত বলিয়া কীর্তন করিয়াছেন । এই মহাব্রত, শ্রহণ করিতে তোমাদের কোন আপত্তি আছে কি? পিতার এই কথা শুনিয়া তাহারা বলিলেন, “পিতৃদেব, আপনার অনুমতি হইলে আঁমরা দুইজন এই মুহূর্তেই ভিক্ষুধন্্ অবলম্বন করিয়া জীবন সার্থক করিতে প্রস্তুত আছি।”” সম্রাট অশোক এই, কথা শুনিয়! মহাস্থবির তিষ্যও উপস্থিত সংঘকে মহাহর্ষের* সহিত সম্বোধন করিয়৷ বলিলেন, “অদ্য আমি ভগবান বুদ্ধদেকেন্স পুণ্যতম ধরা প্রচারাথ আমার পরমস্সেহাস্পদ পুজ্র ও কন্যাকে উৎসর্গ করিলাম। সভাশ্থ-সমস্ত লোক সদাগরা পৃথিবীর সমাটের (২৩). এই প্রকার অভূতপূর্ব অশ্রঃতপূর্বব মহাবিদ্ময়জনক ত্যাগ্নের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখিয়া৷ 4সআটের জয় হউক, সম্রাট দীর্ঘজীবী হউন,” এই কথায় মহাহ্যকোলাহুলে দিগন্ত পুরিত কাঁরিল।* সম্রাটের উপর স্বুগস্ধপুষ্পবৃষ্ট হইতে লাগিল। সকলেই সম্াটকে ধন্য ধন্য বলিতে লাগিল।. সম্রাট, কুতীগ্ুলিপুটে মহাস্থবির তিষ্যকে মহেন্দ্রের শিক্ষার ভার গ্রহণের জন্য প্রার্থনা করিলেন। তিম্য মহিন্দ্রকে বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা দিতে সম্মত হইলেন এবং মহেন্দ্রকে ভিক্ষুধর্শে দীক্ষিত করিবার জন্য স্থবির মহাদেবকে আদেশ করিলেন । সম্রাট-কুমারী সংঘমিত্রাকে' শিক্ষণ দিবার 'জগ্য, ভিক্ষুণী ধর্্নপালী আঁদিষফ হইলেন ও তাহাকে বৌদ্ধধার্মে দীক্ষা দিবার জন্য ভিক্ষুণী আয়ুঃপালী উপদিষ্ট হইলেন। ইনার পর ইতিহাসবিখ্যাত “মহাদান”- কার্ধ্য আরবধ হইল। সম্রাট অশোক, পৌরাণিক দাতা- কর্ণের ন্ায় ভিক্ষু ও ভিক্ষুণী স্থবির, মহাস্থবির, অর্থ প্রভৃতি ধন্ধোপাধিধারী বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ও সন্যাসিনীদিগকে প্রভৃত প্রণামী দক্ষিণ! দিতে লাগিলেন। সভাস্থ গৃহস্থ ব্ক্তিগণের মধ্যে যাহার যেমন শক্তি, তিনি তদনুমাে দান করিতে লাগিলেন ছ এইরূপে মহাানমহোহসক বিধি সম্পন্ন হইল, ইহার পর সভাভঙ্গ হইল। নকলে নব সব ্থানে প্রস্থান করিলেন। পরদিন হইতে লা ুং ভক্ষণ ধর্মপালীর নিকটে'উদ্শ্রেবীর বৌ ( ২০৪ ) করিতে আরম্ভ করিলেন। কারণ, তিনি ইতঃপূর্ব্বেই বৌদ্ধধর্মের সাধারণপাঠ্য অন্যান্য বনুত্রস্থই শিক্ষকের নিকটে অধ্যয়ন করিয়াছিলেন। সুতরাং সেই সমস্ত পুস্তকের পুনঃপঠনের আর প্রয়োজন হইল না। তিক্ষুণী আয়ুঃপালী তাহাকে বৌদ্ধধর্ম দীক্ষিত করিয়া ধর্মের সুক্মমতত্ব ও সাধনাপদ্ধতিসকল শিখাইতে লাগিলেন । ভিক্ষদংঘে (দলে) প্রবেশের নাম “উপসম্পদা” । মহেন্দ্র প্রাসাদ পরিত্যাগ পূর্ববক 'মহাস্থবির [তিত্বের উপসম্পদা-মন্দিরে দীক্ষিত হইয়া! তথায় বাস করিতে লাগিলেন। মহেন্্র তথায় তিন বসর কাল তিষ্কের নিকটে: অধ্যয়ন ' করিয়া “অর্থৎ”উপাধি লাভ করিয়াছিলেন কিন্তু মহাআশ্চযোর বিষয় এই যে, সংঘমিত্রা ইহ! অপেক্ষা অতি অল্পকাঁলের মধ্য শান্তশিক্ষ। ও লাধনায় উন্নতি লাভ করিয়া অর্হৎ-উপাধি পাইয়াছিলেন। ইহাতেই বুঝা বায় যে, স্ত্রীলোক ধর্মশান্ত্র ও ধন্মসাধনায় উত্তক্রূপে শিক্ষা পাইলে পুরুষ অপেক্ষা "অনেক উন্নত হইতে পারে । ধর্মে স্ত্রীলোকের বিশ্বাস ও ভক্তি যত দৃট হয়, পুরুষের তক্রপ হয় না। ব্রত-উপবাসাদি ধর্্ানুষ্ঠানে দ্বীলোবের যতদুর আগ্রহ দৃষ্ট হইয়া 1 থাকেপুরুষের তন্রপ আগ্রহ দেখা যায় না।' স্ত্রীলোক ধার্মিকের জাতি। এহেন, স্্রীজাতি যদি ধম্মশিঙ্গশাবিহীন হয় তাহা হইলে দশে রাজ্যন্রংদ সসমাজধবংস প্রকৃতপুকষনি্ববংশ যয ২০৫ ) হইয়া উঠে! সংঘমিত্রা! অর্তৎউপাধি লাভ করিয়। সকলের পূজনীয়া হইয়াছিলেন। তিনি যে মঠে বাস করিতেন, তথায় অনেক ভিক্ষুণী বাস করিতেন। সকলেই অধ্যয়ন ও ধর্মমদাধনায় রত থাকিতেন। ধর্্মানিষ্ঠ ছাত্র বা ছাত্রীগণ ্রহ্মচ্ধ্য অবলম্বন করিয়! যেখানে রাত্রিদিন অধ্যয়ন করেন এবং ৰাম করেন, তাহাকেই মঠ কহে। প্রত্যেক বৌদ্ধ- মঠের ব্যয় সম্ট্‌ নির্বাহ করিতেন। স:ঘমিত্রা যেখানে থাকিছেন, তথায় তাহাকে দর্শন করিবার জন্য এবং তাঁহার নিকটে ধন্মোপদেশ লইবার জন্তা ধাশ্মিক গৃহস্থ নরনারীগণ দাল দলে আগমন করিতেন। সংঘমিত্রার যশ সর্ববস্র বাপ্ত হইয়' পড়িল। তিনি সম্রটের কন্ু। হইয়। ভিক্ষুণী- ধন্ম অবলম্বন করায় অনেক ধনিকুলের ললনাগণ তাহার দৃষ্টান্ত অল্মলরণ করিয়াছিলেন । তাহারা শোক-ছুঃখ- পরিপূর্ণ নানাচিন্তাগ্রস্ত গৃহস্থজীবন যাপন করা অপেক্ষা ইন্দ্রিয় সংমপূর্ববক ত্যাগধর্ম্ন-পালনকে মহাশ্রেয়স্কর বলিয়া বিবেচনা করিতে লাগিলেন এবং তদমুদারে দলে দলে ভিক্ষুণী-আশ্রমে আসিয়৷ ভিক্ষুণীধন্ম অবলম্বন করিতে লাগিলেন এবং শাস্ত্র অধ্যয়ন ও ধন্ম-প্রচারাদি দ্বারা নিজের নারীকুচুলর কল্যাণ উ্লাধন করিতে লাগিলেন শিক্ষিত ধর্্নিষ্া নারীর দ্বারাই নারীকুলের কল্যাণ সাধিত হওয়াই উদ্ভিত.। নারীর শিক্ষা্দীক্ষা কার্ষ্যে নারীরই প্রাধান্য খাড়া ইট বৌদ্ধযুগে ও পৌরাণিক: যুগে ( ২৯৬) তাহাই ছিল। অধুনা! কালধন্ম অনুসারে উহা লুপ্ত হইয়াছে । এইবূপে ' অশোকের সময়ে ভারতে বৌদ্ধ- ধর্মের প্রচার যখন পূর্ণমাত্রায় চলিতেছিল, সেই সময়ে মহাস্থবির তিষ্যের আদেশক্রমে' সিংহলদেশে বৌদ্ধধর্ম প্রচারার্থ সংঘমিত্রা ও মহেন্দ্র সম্রাট্ুকর্তৃক তথায় প্রেরিত হইলেন। সিংহলে যাইবার সময় মহেন্দ্র ও সংঘমিত্র তাহাদের মাতৃদেবী দেবীর চরণ-দর্শনার্থ উজ্জয়িনীর অন্তর্গত বিদিশগিরি বা চৈত্যগিরিনামক স্থানে গমন করিলেন। এ স্থান বর্তমান “ভিল্সার” নিকটবর্তী । উথায় গমন করিয়া তাহার মাতার চরণকমলে প্রণাম করিলেন। দেবী, পুভ্র ও কন্তার বৌদ্ধপরিব্রাজকের হরিদ্রাবর্ণরঞ্জিত বেশ ও কমনীয় সৌম্য তেজোময় আকৃতি অবলোকন করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “সম্রাট কি তোমা- দ্রিগকে রাজ্যতোগে বঞ্চিত করিয়া সম্ম্যাসধর্ম্ম-গ্রহণে বাধ্য করিয়াছেন ? তীহারা বলিলেন, “না, মা, আমাদের এই ভিক্ষুধন্্ম গ্রহণের পূর্বে পিতা আমাদের অভিলাষ জানিতে চাহিয়াছিলেন। পরে আমরা তাহার অনুমতি লইয়৷ নিজ নিজ ইচ্ছায় এই ধর্ম গ্রহণ করিয়াছি । অতএব মা, তিনি বলপুর্ববক আমাদিগকে এই ধর্ম গ্রহণ করাইয়াছেন, এইরূপ মনে করিবেন না।” মহেন্দ্র ও সংঘমিত্রায় সঙ্গে অনেক ভিক্ষু ও ভিক্ষুণী আলিয়াছিলেন। তীহাদের সৌদ্য আকৃতি ও সন্্যাসিবেশ দেখিয়া ধার মনে বড়ই আনন ( ২৭ হইয়াছিল। অনেক দিনের পর দেবী, পুক্র ও কন্যার মুখ নিরীক্ষণ করিয়া অত্যন্ত আহলাদিত হইলেন। তিনি: পুক্র, কন্যা ও তাহাদের অনুগামীদিগের প্রতি মহাসমাদ্দর ও মহাযত্্ প্রদর্শন ক্রিয়া বলিলেন, “তোমরা ভিক্ষু- সম্প্রদায়স্থ। গৃহস্থ লোকালয়ে থাকিতে তোমাদের অন্থৃবিধা, ংকোচ ও কষ্ট বোধহইবে। অতএব নগরের প্রান্ততাগ- স্থিত চৈত্যবিহারনামক প্রকাণ্ড বৌদ্ধমঠই তোমাদের থাকিবাঁর উপযুক্ত স্থান। তথায় বাম করিলে তোমাদের কোন কষ্ট হইবে না। আমি তোমাদের জন্য তথায় খাদ্যদ্রব্যাদ্ি প্রেরণ করিতেছি । তোমরা তথায় চল ।* এই কথা বলিয়া দেবী তীহাদিগকে স্বয়ং তথায় রাখিয়া আমিলেন। তাহাদের জন্য নানাবিধ খাদ্যন্্ব্য প্রেরণ করিলেন। পুক্স ও কন্যা তিক্ষু ও ভিক্ষুণী হইয়া বন্ছু- দিবস পর্য্যন্ত রাজভোগ্য খাদ্যদ্রবা ভক্ষণ করিতে পায় নাই, এই ভাবিয়া তাহাদের জন্য ও তাহাদের অন্গমীদিগের জন্য তিনি নানাবিধ পবিত্র ন্ুখাদা স্বহস্তে প্রস্তত রী উক্ত বিহারে প্রেরণ করিলেন । নানাবিধ বহুমূল্য সুখাদ্য দ্রব্য-তক্ষণে ও, ূ্ববকালে সন্ন্যাপীদিগের অত্যন্ত মংযম ছিল বলিয়! তাহারা প্রথমতঃ এ মকল উত্তমোত্তম দেবভোগ্য রাজভোগ্য খাদদযব্রব্য দর্শন করিয়া এপ দ্রব্য ভক্ষণ করিতে কাহারও আপত্তি সাছে কি না, তাহ! জানিবার্‌ নিমিত পরস্পর. পরস্পরের ( ২০৮ প্রতি দৃষ্টিপাত করিতে লাগিলেন । শেষে এই সিদ্ধান্ত হইল যে, মাত ত্রিভুবনে সর্ববাপেক্ষ! প্রধান গুর, সর্ববাপেক্ষা মাননীয়া, পিতৃ অপেক্ষাও মাননীয়া। অতএব তিনি যখন এই সকল খাদ্যদ্রর্য স্বয়ং প্রস্তুত করিয়া পাঠাইয়াছেন, তখন উহা অবশ্য গ্রাহা ও অবশ্য খাদা, এইরূপ বিবেচনা করিয়া তাহারা এ সকল বস্তু ভক্ষণ করিয়াছিলেন। তাহারা উজ্জয়িনীতে কয়েক দিন মাত্র থাকিয়া ভগবান্‌ বুদ্ধদেবের অস্ুতময় * 8 করিয়াছিলেন । দেবী স্বয়ং পুজ্রের মুখ হইতে এ সকল উপদেশ শ্রবণ করিয়া নিজেকে কৃতার্থ বোধ করিয়া ছিলেন। তাহারা উজ্জয়িনীতে এক মাপের কিঞ্চিত অধিক কাল বান করিয়! সিংহলদীপে গমন করিলেন জোষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে তাহারা সিংহলদ্বীপের মিশ্র-নামক পর্বতে উপস্থিত হইলেন। সেই দিন সিংহলদ্বীপের রাজ। দেবপ্রিয়তিষ্য চারি হাজার অনুচরের সহিত ম্বগয! করিবার জন্য তথায় উপস্থিত হইয়াছিলেন । রাজার অনুচরগণ একটু দূরে আসিতেছিল। এই স্থযোগে মহেন্দ্র রাজাকে একাকী পাইয়া তাহার নিকটে উপস্থিত হইলেন এবং রাজার নাম ধরিয়া "ডাকিলেন, "ওহে তিষ্য, কোথায় যাইতেছ ? এইরূপে রাজার নাম ধরিয়া ডাকাতে রাজা বিস্মিত ও স্তম্তিত হইয়৷ ধ্রাড়াইলেন এবং মহেন্দ্রের পরিচয়-জিজ্ঞাহ্ব হইয়! মহাওংস্্ক্যের সহিত মহেন্দ্রের (১০৯ প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন । কারণ, তিনি সিংহুলের সম্রাটু। তাহার নাঁম ধরিয়া! ডাকে, এমন লৌক তাহার পিতা মাতা ছাড়া সিংহলে আর কেহই ছিল না। হরিদ্রাবর্ণবেশধারী অপরিচিত একটি*সামান্ু লোক এই নির্জন অরণ্যে তাহার নাম ধরিয়' আহ্বান করিল, নির্ভয়ে তাহার সম্মুখে দাড়াইয়া রহিল, অথচ তিনি তাহাকে চিনিতে পারিলেন না। এ লোকটা কে? রাজা এইরূপ চিন্ত। করিতে লাগিলেন। রাঞজাকে এইরূপ *বিতর্কান্বিত দেখিয়া মহেন্দ্র বলিলেন, 'মাপনার বিস্ময়ের বা ভয়ের কোন কারণ নাই। আমি একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু । আমি ভারতবর্ষ হইতে আসিয়াছিণ সিংহলে শৌদ্ধধন্্ন প্রচার করিবার জন্য আমি, আমার ভগিনী ও কতিপয় ভিক্ষু ও ভিক্ষুণী সহ দিংহলে আসিয়াছি।” মহেক্দ্রের এই কথা শুনিয়া রাজার বিস্ময় « ওৎম্বকা আপাততঃ কথঞ্চিৎ নিবৃত্ত হইল। সেই সময়ে রাজার ও মহেন্দ্রের সঙ্গিগণলকল তথায় আসিয়া পড়িল। রাজ! ও তাহার লোকসকল মহেন্দ্রের, সংঘ- মিত্রার ও অন্যান্য ভিক্ষু ও তিক্ষুণীদিগের সৌমা অথচ তেজঃপুগ্রময় আকৃতি ও হরিদ্রাবর্ণ বেশ অবলোকন করিয়া আহলাদিত হইলেন এবং মহেন্দ্রকে জিড্জাসা করিলেন, “ইহারা কে? মহেন্দ্র বলিলেন, 'ইঁহারাও আপনার রাজ্যে বৌদ্ধধন্মা প্রচার করিবার জন্য আমার সহিত এখানে আসিয়াছেন।' রাজার ওৎ্নুক্য ক্রয়ে বাড়িতে লাগিল। (৯৯০) তিনি পুনরায় মহেন্দ্রকে জিজ্ঞাস! করিলেন, “আপনাদের ভারতে এই প্রকার বেশধারী লোক কতগুলি আছেন ?” মহেন্দ্র বলিলেন, “এই প্রকার বেশধারী লোকে ভারত সমাচ্ছন্ন ও সমুজ্ত্ল। পৃথিবীতে 'বৌদ্ধের সংখ্যার সীমা নাই । অন্যান্য ধন্মাবলম্বী হইতে বৌদ্ধের সংখা অনেক বেশী। গৃহস্থাশ্রমীর সংখ্যার দিন দিন হাস হইতেছে। সী ও পুক্রকন্টাদির আধি-ব্যাধি ও মৃত্যুর ভাবনায় আর লোক জর্জরিত হইতে চাহিতেছে না । " সকলেই ইন্ডিয়- সংযমপূর্ববক তিক্ষুধন্্মী বা সাংসারিক বাসনার ত্যাগধন্ম অবলম্বন করিতেছে! ইচ্ছা করিয়া নিজের চরণে নিজে কুঠারাঘাত করিতে ভারতীয় লোক সকল আর"বড় ইচ্ছুক হইতেছে না। তারতের বনুসংখ্যক লোক ছুঃখকে সাদরে গৃহে আহ্বান করিয়া ইচ্ছাপুর্বক স্বয়ং উৎপীড়িত হইতে চাহিতেছে না। তাহার! ছুশ্ছেদ্য বন্ধানে দৃঢ়রূপে বদ্ধ হইবার জন্য দারপরি গ্রহ পূর্বক গৃহস্থাশ্রমী হইতে ইচ্ছুক হইতেছে না। কিন্তু ভগবান্‌ বুদ্ধদেবের অমূল্য উপদেশ সকল অলোচনা করিয়া ও তদনুয।য়ি-কার্য্য করিয়া সর্ধব- হুঃখবিনাশক নির্ববাণ-মুক্তিপথ অবলম্বন করিতেছে ।”” মহেন্দ্রের এইরূপ কথাগুলির সারবত্তা হৃদয়ঙ্গম করিয়। রাজা! অতিশয় সন্ত হইলেন। তাহাদের হৃদয়ে অপূর্বধ ভক্তিভাব উদিত হইল। তিনি মহে্দ্রকে দৈবপ্রেরিত 185 ১ মহাপুরুষ ও নিংহলের মহোপকারক বিবেচনা করিয়া ভস্যস্থিত ধনুর্ববাণ দুরে নিক্ষেপ করিলেন এবং ততক্ষণাশ মছেন্দ্রের চরণকমলে প্রণাম করিলেন। তখন মহেন্দ্র বলিলেন, "মামরা মহাস্থবির তিষ্য ও ভারতের সমু অশোকের আদেশ অনুসারে এখানে আপনার নিকটে আসয়াছি। আজ এদেশে উপনীত হইবামাত্র দৈবক্রমে' বিনা আয়ামে আপনার সহিত সাক্ষাৎকার হইল। ইহা একটা মহান্লক্ষণ। ইহার দ্বারা আমাদের ভবিষ্যুতে কার্ধাসিদ্ধি সুচিত হইতেছে ।” মহেন্দ্র, সংঘমিত্রা ও তাহাদের সঙ্গিসঙ্গিনীগণ ভারত-সম্রাট অশোকের আদেশে সিংহলে মাসিয়াছেন* শুনিয়। সিংহলব্লাজ দেবপ্রিয়তিষ্য অতিশয় সাদর, সম্মান ও অভ্যর্থনাপুর্ববক তীহাদিগকে প্রথমতঃ া্াটাতে লইয়া গেলেন। তথায় নানাপ্রকার লোকের নতি কোলাহলে তাহাদের শান্তিভঙ্গ হইবে, এইরূপ বিবেচনা করিয়া রাজা প্রথমতঃ একটি শান্তিপূর্ণ নির্জন সুন্দর উদ্যানে তাহাদিগকে অবস্থিত করাইলেন। তাহার! তথায় আপাততঃ অবস্থিতি করিতে লাগিলেন । তীহাদের আগমনবার্থী। রাজ্যে সর্বত্র প্রচারিত হইয়া পড়িল। সিংহলের নরনারীগণ উ্াহাদিগকে দেখিবার নিমিত্ত ও তাহাদের অমূল্য উপদেশ শুনিবার জন্য তথায় দলে দলে উপস্থিত হইতে লাগিল । সংঘমিত্রার মধুর ধর্দ্োপদেশ নিয়া নারীগণেক চিত্ত আকৃষ্ট ও 'মুখ্ধী হইতে লাগিল । ( ২১২ সংঘমিত্রা একে রূপবতী রাজকন্যা, তাহে আবার তিনি স্রশীলা সরলহৃদয়া। ইন্্রিয়সংযম প্রভৃতি ধর্মম অবলম্বনে তাহার স্বাস্থ্য উত্তমরূপে সংরক্ষিত হওয়ায় তাহার আকৃতির উজ্জ্বলতা, কমনীয়তা, সিগ্বীতা ও পবিত্রতা! দিন দিন বুদ্ধি পাইয়া লোকের ভক্তি শ্রদ্ধা আকধণ করিতে লাগিল। মহেন্দ্রের ও সংঘমিত্রার ধর্ম্োপদেশ গুনিবার জন্য ধণ্মপিপাস্্ নরনারীগণ দলে দলে উক্ত উদ্যানে শাসিতে লাগিল । তাহাদের সংখ্যা দিন*দিন বুদ্ধি পাওয়ায় সিংহলেশ্বর এঁ উদ্যানটিকে অপর্ষযাপ্ত বিবেচনা করিয়া মিংহলের স্রপ্রসিদ্ধ মহামেঘনামক বৃহন্তুর উদ্যান তীহা- দিগকে প্রদান করিলেন। তাহারা তাহাদের সঙ্গিস্িনীগণ সহ উক্ত স্রপ্রশস্ত উদ্যানে বাস করিয়। ধশ্ম প্রচারকরিতে লাগিলেম। তীহাদের ধশ্মপ্রচার-প্রভাবে সিংহলের প্রত্যেক নগরে ও গ্রামে বৌদ্ধবিহারদকল প্রতিষ্ঠিত হইতে লাগিল। সিংহলের নরনারীগণ বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করিয়া ভিক্ষু ও ভিক্ষুণীব্রত অবলম্বন করিতে লাগিলেন এবং সেই সকল বিহারে বাস করিতে লাগিলেন। সিংহলরাজনন্দিনী অনুলা ও তীহার পাঁচশত সখী 'ঘমিত্রার নিকটে বৌদ্ধধর্ম্নে দীক্ষিত হইয়! ভিক্ষুণীব্রত ধারণ করিলেন এবং রাজপ্রাসাদ পরিত্যাগপূর্ববক মহামেঘনামক উদ্যানে আদিয়! বাস করিতে লাগিলেন । রাজকুমারী অনুলা ও তাহার সখীগণ তিক্ষুণীব্রত অবলম্বন ২১৩ করায় রাজোর উচ্চসন্ত্রাস্তবংশীয় নারীগণ নশ্বর পার্থিব স্থখের অভিলাষ পরিত্যাগ করিয়া! দুলে দলে ভিঙ্ষুণীব্রত অবলম্বন করিতে লাগিলেন ৷ সংঘমিত্রা সিংহলে এই ভিক্ষুণী-সম্প্রদায়* সৃষ্টি করিয়া তাহার পুষ্টিসাধনার্থ 'রাত্রি- দিন অব্রান্তভাবে পরিশ্রম করিতে লাগিলেন । কিছু- দিনের মধোই তাহার পরিশ্রম সফল হইল । সিংহলে বৌদ্ধধর্ম স্থপ্রতিষ্ঠিত হইল ও উহা ভিগ্ষু- ভিক্ষুণীগণে সমাচ্ছন্ন হইয়া পড়িল। ক্ষণিকপার্ধিবস্ুখ লালসায় মন্ত ব্যক্তিগণ নির্ববাণ-পথের পথিক হইতে লাগিল। রাজ্যে ধর্ম ও স্থনীতি প্রসারিত হইতে লাগিল” । মানব-জীবনের সফলতা ও উকৃষ্টতা সাধিত হইতে লাগিল। সিংহলাধিপতি ধর্ম ও নীতির প্রসারার্থ আন্তরিক চেষ্ট! ও আনুকূল্য করিতে লাগিলেন । একদা রাজা ও তাহার কন্যা অনুলা, সংঘমিত্রার নিকটে তক্তিপর্ববক প্রার্থনা করিলেন, “অয়ি পুজ্যতমে ধর্ম্মনেত্রি, যে পবিভ্রতম ত্রিভূবন প্রসিদ্ধ বোধিবৃক্ষের স্নিগ্ধ ঘন পল্লবের স্তশীতভল ছায়ায় বসিয়া! ভগবান্‌ বুদ্ধদেব কোটি কোটি সূষ্যের প্রকাশ অপেক্ষা উজ্দ্বলতম দিব্যজ্ঞানালোক প্রাপ্ত হইয়া বুদ্ধত্ লাভ করিয়াছিলেন *এবং তও্প্রভাবে নির্ববাণমুক্তি পাইয়াছিলেন, আপনি অনুগ্রহপূর্ববক আপনাদের ভারতের গয়াধামের দেই পবিভ্রতম মঙ্গলময় মহাপৃজ্য বোধিবৃক্ষের একটি মাত্র শাখা ভারত হইতে সিংহলে আনাইলে ( ২১৪ ) সিংহলের মহাকল্যাণ সাধিত হয়। সিংহল ধন্য, পনিত্র ও সার্থক হয়। এ শাখা! দিংহলে আমিলে উহা বিধি- পুর্ববক মহাসমারোহের সহিত দিংহলের এক পবিত্র স্থানে রোপিত হইবে । আপনার কূপ! হুইলেই" এই সগুকার্াটি অনায়াসে স্ুুসাধিত হইতে পারে ।” সংঘমিত্র। বোধিবৃক্ষের একটি শাখা ভারত হইতে দিংহলে আনয়ন করিলে উহা মহাসমারোহের সহিত যথাবিধি রোপিত হইয়াছিল । সংঘমিত্রার অসীম অধ্যবসায়, কঠোর .পরিশ্রীম ও গহতী চেষ্টায় দিংহলের মহিলাকুলের ধরন্মানীতিশিক্ষ। ও দাক্ষ। উতকর্ষের পরাকাষ্ঠ। লাভ করিয়াছিল । তিনি সম্রাট নন্দিনী হইয়া, সামান্য ভিক্ষুণীবেশ ধারণ করিয়া, ভীষণ সমুদ্রপথ অতিক্রম করিয়া, বিদেশে গিয়া, বিদেশীয় রাজার রাজ্যে ধণ্মরাজা সংস্থাপন করিয়াছিলেন। পৃথিবীর সমস্ত ইতিহাসে এরূপ দৃষ্টান্ত বিরল। শ্ত্রীঞজাতির মধ্যে ঈদৃশী অদ্ভুতশক্তিশালিনী মহিলা ভারতবর্ষ ছাড়! কুত্রাপি উৎপন্ন হয় নাই। পুধিবীর সমস্ত ইতিহাস তন্ন তন্ন করিয়া পাঠ করিলেও সংঘমিত্রার ন্যায় কোন একটি মহিলার নাম দৃষ্ট হইবে না ও শ্রুত হইবে না। ( ২১৫ ) উভয়ভারতী। পুজ্যপাদ মহাত্মা! প্রীশঙ্করাচার্য্য বৌদ্ধ কাপালিক দিশম্বর প্রভৃতি বেদবিরোধী ঈশ্বরের অস্তিত্ব-অস্বীকারক নাস্তিকসন্প্রদায়ের মত'খণগুনকরিয়া «এক নিত্য ব্রহ্মই সহা এবং এই বিনশ্বর জগত মিথ্যা মায়াময়,” এই “আদ্বৈতবাদ* ভারতের সর্ববত্র সংস্থাপন করিবার জন্য যখন দিথিজয়ে বহির্গত হইয়াছিলেন, দেই সময়ে ভট্ুপাদাচার্যয- নামক' এক মহাপগ্ডিত প্রয়াগে অতিশয় প্রতিষ্ঠাশালী হইয়া উঠিয়াছিলেন। তাহাকে ব্রহ্ম তত্বসন্থন্ধে কিঞ্চিৎ উপদেশ দিবার জন্য মহাতা। শ্রীণস্করাচার্যা সেই সময়ে প্রয়াগে গিয়াছিলেন। তিনি প্রয়াগধামে আসিয়া এ পণ্তের বাটীতে উপস্থিত হইলেন। ভট্্রপাদাচার্য্য তগবান্‌ শ্রীশঙ্করাচার্্যকে দেখিবামাত্র সাষটাঙ্গ প্রণিপাত- পূর্বক নিবেদন করিলেন, 'প্রভো, অদ্য আপনার শ্ত্রীচরণ- পদ্ম দর্শনে আমার জীবন সফল ও ধন্য হইল । যেস্থানে আপনার শ্রীচরণধুলি পড়ে, সে স্থান মহাতীর্ঘরূপে পরিণত হয়। অদ্য এখানে আপনার আগমনে প্রয়াগধামের তীর্থনামও সার্থক হইল।” ভগবান্‌ শ্রীশঙ্করাচা্ধ্য এই পপ্তিতটিকে জতিশয় ভালবাদিতেন। সেইজন্য তাহার প্রতি লদয় হইয়! ভীহার বাঁটীতে উপস্থিত হইয়াছিলেন। সাহার কাটাতে ছুই চারি দিন অবস্থ্িতি করিয়া ও তাহাকে উপদেশফানে কৃতার্থ করিয়া জীমাচার্থাপূজ্যপাদ মণ্ডন- ( ২১৬ ) মিশ্রনামক এক মহাপগ্ডতকে পরাজয় করিবার জন্য প্রয়াগ হইতে মাহিত্মতী নগরীতে গমন করিয়াছিলেন। মাহিক্মতী তগ্কালে অতিশয় সমৃদ্ধিশালিনী নগরী চিল। স্থদৃশ্যা হ্থশোভিতা গগনস্ঠর্শিনী অষ্টরালিকারাজি, স্রপ্রশস্ত পরিষ্কীত রাজপথসকল, মনোহারিণী বিপণি্রেণী, সুপরিচ্ছদশোভিত নাগরিক নরনারীগণ এবং স্ত্রম্য উদ্যান সমূহ, মাহিক্ম্রী নগরীর অনুপম সৌন্দর্য বিস্তার করিয়াছিল। আচাধাপুজাপাদ ঈদৃশী নগরী দর্শন করিয়া নতিশয় আহল[দিত হইয়াছিলেন। তিনি তথায় নিকটস্থ একটি ম্তরমা উদ্যানমধ্যে প্রবেশ করিয়া কিয়গুক্ষণ বিশ্রাম করিবার জন্য এ উদ্যানস্থ স্বক্সিগ্ধ, স্বশীতল ও ঘনচছায়াযুক্ত একটি ৃক্ষবেদিকায় উপবেশন করিলেন। এ উদ্যানের নিম্দেশে রেবানদী-প্রবাহ দেখিয়া তিনি আনন্দিত হইলেন। রেবানদীতে প্রস্ফুটিত সুরভি পদ্স- সকল ভাদিতেছিল। বায়ু, রেবার তরঙ্গসংস্পর্শে স্বুশীতল হইয়৷ এবং এ পল্মবাজির দিব্য স্গন্ধ বহন করিয়া আচার্য্য পৃজ্যপাদের সেবা করিতে লাগিল। তথায় কিয়্ক্ষণ বিশ্রাম করিয়। তিনি রেবানদীর তীরে অবতীর্ণ হইলেন এবং প্রাতঃন্নান ও ব্রহ্মোপাসনাদি কৃতা সমাপ্ত করিয়া মধ্যাহ্ন- কালে মগ্ডনমিশ্রের গৃহাভিমুখে চলিলেন। পথে যাইতে ষাইতে কয়েকটি সুসজ্জিত দাসীকে দেখিতে পাইলেন। তাহারা . মগুনমিশ্রের দাসী। তাহারা নদীতীর হইতে ১১৯৭ ) জল আনয়নের জন্য স্বর্ণ কলস লইয়! নদীতীরে যাইতে- ছিল। তিনি তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, মগ্ডন- মিশ্রের বাড়ী কোথায় ? তাহারা বলিল, “বেদ নিত্য স্বতঃ প্রমাণ শান্তর? নাঃ অন্ত প্রমাণের উপর নির্ভরশীল শান্তর %” এই কথা৷ যে গৃহের দ্বারদেশে স্বর্ণ পিপ্তারস্থ পক্ষিগণ উচ্চারণ করিতেছে, উবাই মগুনমিশ্রের গৃহ জানিবেন। এই কথা বলিয়া দাসীগণ পুনরায় বলিতে লাগিল,” “কর্ম্মাই স্খছুঃখরূপ ফল দ্রান করে? না, সর্বব্ঞ্ সর্ববশক্তিমান্‌ বিচারক পরমেশ্বরই স্থখদুঃখরূপ ফল দান করেন?” এই কথ যে গৃহের ছারদেশে স্বণ্ণপিপ্ীরস্থ পক্ষিগণ উচ্চারণ করিতেছ্ছে, উহাই মগ্ডনমিশ্রের গৃহ জানিবেন। দাসীগণ আবার বলিতে লাগিল, «এই বিশ্বসংসার নিত্য কি অনিত্য ? এই কথা যে গৃহের দ্বারদেশে স্ব্- পিঞ্তরস্থ পক্ষিগণ উচ্চারণ করিতেছে, উহাই মগ্ডনমিশ্রের গৃহ জানিবেন।” আচাধ্য পৃজ্যপাদ দাসীগণের এই প্রকার বচনসকল শুনিয়া ক্রমে মণ্ডনমিশ্রের গৃহে উপস্থিত হইলেন এবং গৃহটি দেখিয়া বুঝিলেন যে, মগ্ডন একজন সামান্য দরিদ্র ব্রাক্ষণ-পণ্ডিত নহেন। তাহার উচ্চ অট্টালিকার ছাদের উপরে বৃহৎ পতাকা পবনহিল্লোলে পপৎ শবে কম্পিত হইতেছে। বহিদ্দ্ণারে ভীমকায় সুসজ্জিত গৌবারিকগণ বিয়া আছে । প্রহরবাদাধ্যনির জন্য বৃহত ঘড়ী ঝুলিডেছে। প্রুহরাবসান-জাপক তাতৎকালিক ১৯ (২১৮) ঘটামন্ত্র রক্ষিত হইয়াছে। উজ্দ্বলবেশভূষাধারী রাজা মহারাজ ও ধনী নাগরিকগণ মগ্ডনের সহিত সাক্ষাংলাভার্থ ও ব্যবস্থা-গ্রহণার্থ আগমন করিয়া নিরূপিত স্থানে অপেক্ষা করিতেছেন। তাহাদের হস্তী, তশ্ব ও 'রথ প্রভৃতি যান- বাহন সকল শ্রেণীবদ্ধভাবে একদিকে অবস্থিত রহিয়াছে । গৃহ-সংলগ্ন বিদ্যামন্দিরে বুসংখ্যক নানাদেশীয় ছাত্র নানাবিধ শাস্্ অধায়ন করিতেছে । প্রায় প্রতিদিনই যঙ্জানুষ্ঠান বশতঃ মগ্ডনের ভবনটি স্র্বদা উত্সবে পূর্ণ থাকিত। আচার্য পুজাপাদ এইরূপ ভবনের তোরণে উপস্থিত হইয়া একটি দৌবারিককে বলিলেন, “মগুন পণ্ডিত কোথায় ? তিনি যেখানে আছেন, তথায় আমাকে লইয়া চল।” দৌবারিক তাহার অপূর্ণ মুখমগুলজ্যোতিঃ, সৌম্যমুত্তি এবং গৈরিক বসন অবলোকন করিয়া বুঝিতে পারিল যে, ইনি এক মহাত্মা সন্ন্যাসী। দৌবারিক ততক্ষণ তাহাকে মগ্ডনমিশ্রের নিকটে লইয়া গেল। তিনি মণ্ডনমিশ্রের নিকটে উপস্থিত হইয়া দেখিলেন, মণ্ডন পিতৃশ্রাদ্ধোপলক্ষে সমাগত গুরু ও পুরোহিতের চরণ প্রক্ষালন করিতেছেন। তাহাদের পদপ্রক্ষালনের পর মগ্ডন, শ্রাদ্ধ করিবার জন্য" আসনোপরি উপবিষ্ট হইয়া আচার্য্য পৃজ্যপাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন। শিখা-যজ্ঞোপবীতশৃস্য মুগ্ডতমন্তক গৈরিকবসন-পরিধায়ী ব্যক্তিকে দেখিয়া, তিনি একটু অমস্তুষট হইলেন এবং ( ২১৯ ) বলিলেন, “শ্রাদ্ধ কালে শিখা-সূত্রহীন মুণ্ডিত-মন্তক গৈরিক- বসন-পরিধায়ী লোককে দর্শন করিতে নাই।” মগ্ন কুপিত হইয়। এইরূপ রূঢ়বাক্য বলিলেও আচার্ধা পুজা- পাদের ক্রোধোদয় হইল না। তিনি মগুনের ক্রোধ- বর্ধনের ইচ্ছায় কৌতুক ও বচন-চাতুর্ষ্যর সহিত উত্তর দ্রিতে লাগলেন। পরে বিবেচনা করিলেন যে, এই প্রকারে মণ্ডনের কুসংস্কার অপশ্থত হইবে না। অনিত্য- ফলপ্র সকাম যদি কর্মের অনুষ্ঠানে মুগ্ধ কুসংস্কারাচ্ছক্ মগুনের হৃদয়ে এইরূপ আলাপে জ্ঞানালোক বিকীণ হইবে না। সুতরাং তাদুণী আলাপরীতি পরিত্যাগ করিয়া অনিতাফলগ্রন সকাম কর্মানুষ্টানের ব্যর্থতা প্রতি- পাদনের জগ্ত নিম্নলিখিত বৈদিক প্রমাণগুলি প্রদর্শন করিতে লাগিলেন £-- | তিনি বলিলেন, “বেদের মতে “যে দ্রিবসেই সংসারে বৈরাগ্য উদ্দিত হুইবে, সেই দিবসেই সম্ন্যাসধন্্মী অবলম্বন করিবে ।১ বেদ আরও বলেন যে, '্রহ্ষধ্য-অবস্থা কিম্বা গুহস্থাবস্থ! কিন্বা বানপ্রস্থ অবস্থা হইতে সঙ্প্যাস গ্রহণ করিয়। এক অদ্বিতীয় ব্রন্মের তত্ব শ্রবণ করিবে)" বেদ আরও বলেন যে, “হাম, শ্রাদ্ধ, তর্পণ ও জড়বস্তর পৃজা- রূপ কর্ম দ্বারা মুক্তিলাভ হয় না। পুভ্র পিগুদান করিলেও পিতার মুক্তিলাভ হয় না, প্রেতাত্মার তৃপ্তঙাভ হয় মাত্র। কোটি কোটি স্বর্ণমুদ্রা, গৃহ,ডূমি ও জলাশয় ( ক্২০ প্রভৃতি দান করিলেও মুক্তিলাভ হয় না। মরণান্তে পুনর্ববার ছুঃখময় শরার ধারণ করিয়া পূর্ববজন্মকৃত দানাদি সতকাধ্যের ফলভোগ হয় মাত্র, মুক্তিলাত হয় ন। | পুনরায় শরীর পরিগ্রহ করিলে শারীরিক ও মানসিক দুঃখসকল অবশ্যন্তাবী। হোমাদি কর্্ানুষ্ঠান, পুজ্রোৎপাদন ও ধনদানাদি দ্বারা মুক্তিলাভ হয় না, কিন্তু অভ্ঞ্কান-অন্ধকার- রাশি অপসারিত করিয়া তত্বজ্কানের আলোক লাভ করিলে মুক্তিলাভ হয়। উপনিষদৃ-বেদান্ত-বার্য-শ্রুবণে এধং সেই সকল শ্রুত বাক্যের পুনঃপুনঃ আলোচনা ও বিচার “করিলে মনের সন্দেহ সকল দুরীভূত হয়। জন্দেহ দূরীভূত হইলেই চিত্তের একাগ্রতা জন্মে। চিত্তের একগ্রত।৷ জন্মিলেই ধ্যান, ধারণ! ও সমাধি নিষ্পম্ন হয়। নির্বিবপ্রভাবে সমাধি-মবস্থা স্থিতিশীল হইলেই পরমেশ্খরে বিলীন হইতে পারা যায়। পরমেশ্বরে একেবারে বিলীন হইতে পারিলে পুনরায় আর জন্মগ্রহণ করিতে হয় না ও পুনরায় আর মৃত্যুন্ত্রণা ভোগ করিতে হয় না। নিতা- জ্ঞান ও নিত্য আনন্দের সমুদ্রম্বূপ পরমেশ্বরে একবার বিলীন হইতে পারিলেই মানুষ তন্রপ হইয়া যায়। মানুষ মুক্ত হইয়া যায়। জ্ঞান ব্যতিরেকে অজ্ঞানের নাশ হয় ন|। অন্ঞানের নাশ না হইলে মুক্তিলাভ হইতেই পারে না। জ্ঞানাোলোক উদ্দিত হইলেই অঞ্ঞানান্ধকার বিনষ্ট হয়। জ্ঞান-শান্ত্রের আদলাচন! ও বিচার ব্যতিরেকে অজ্ঞানের ( ২২৯ ) নাশ হইতে পারে না। ভ্রান্তি, সন্দেহ ও. কুসংস্কারাদি- রূপ অজ্ঞান বিনষ্ট ন! হইলে চিত্তীশুদ্ধি হইতে পারে না। উপনিষদ্-বেদীস্ত-বাক্যের শ্রবণ, মনন ও ইন্জ্রিয়সং্যমাদি করিলেই চিত্তশুদ্ধি হয় নতুবা সহস্র সহত্র মণ ঘ্ৃত শগ্িতে নিক্ষেপ করিলে এবং পশুহত্যা করিয়া পশুর রক্ত ও চর্বি দ্বারা যজ্ঞভূমি প্লাবিত করিলে এবং পশুমাংসে দর পূরণ করিলে কম্মিন্কালেও মুক্তিলাভ হইবে না? বেদ 'আরও বলিতেছেন যে, “যে সকল খষি ধন ও পুজ্রদি- কামনায় যক্ঞঞকর্্ম ছানুষ্ঠান করিয়াছেন, তাহারা পুনরায় মৃত্টুমুখেই পতিত হইয়াছেন, মৃত্্য-মন্ত্রণাই ভোগ করিয়াছেন, তাহারা পুনরায় জন্মিয়াছেন, পুনরায় মরিয়া- চেন, মুক্তিলাভ করিতে পারেন নাই'। হে মগ্ডন পণ্ডিত, আমি মস্তক মুগুন করিয়া গৈরিক বঙ্গন পরিধান করায় আপনি যে মামার প্রতি বিরক্তি- ভাব প্রকাশ করিলেন, ইহাতেই বেশ বুঝা যাইতেছে ঘে, আপনি কর্্মকাণ্ত-শান্্রই পড়িয়াছেন এবং কর্শাকাণ্ড লইয়াই মত্ত। বেদের জ্ঞানকাণ্ডের কোন সংবাদ রাখেন ন'। আমি নিজের ইচ্ছায় বা নিজের শাস্ত্র অনুসারে এইরূপ বেশ ধারণ ক্করি নাই। বেদের বচন. অনুসারে এইরূপ বেশ ধারণ করিয়াছি। বেদ কি বলিতেছেন, শ্রবণ করুন। “পরিব্রাজক সম্ন্যাসী গৈরিক বসন পরিধান করিবে ও মস্তক মুগ্ডন করিবে । দারধীরিগ্রহ করিবে না?। ( ২২২ হে মণ্ডন পণ্ডিত, আমি শিখ! ও যজ্জঞোপবীত ত্যাগ করিয়া সঙ্স্যাসী হইয়াছি বলিয়। আপনি রুট হইয়াছেন; কিন্তু বেদ বলিয়াছেন যে, সন্ন্যাসী হইলে শিখা ও যজ্ঞ্রোপবীতের তার বহন করিবে না। অতএব শিখা' ও যজ্ঞোপবীত ধারণ করিলে কেবল আমারই যে ভার বোধ হইবে, তাহ! নহে, কিন্তু বেদেকেও ভারগ্রস্ত করা হইবে। সেই জন্যই আমি শিখ! ও যজ্জঞোপবীত ধারণ করি না। আমি বেদের জ্ঞানকাণ্ডের মোক্ষ-প্রতিপাদক অমূল্য উপদেশগুলি শিরোধার্যা করিয়া থাকি। হে মগ্ন পণ্ডিত, আমি মীপনার মত কষ্টদায়ক কর্ম্-বন্ধনে বদ্ধ হইতে ইচ্ছা করি না। আপনার ন্যায় হোমাদি কর্ম্ানুষ্ঠানে সন্ত হইয়া বক্ষ তন্বে সমাধি লইতে পরাজ্ুখ হই না। যাহার! ব্রহ্মত্ে লমাধিলাভে অনিচ্ছুক হয় এবং অবহেলা করে, তাহাদের জন্ম-মরণ-প্রবাহ কখনই নিরুদ্ধ হইবে না। তাহারা কখনই মুক্তিলাভ করিতে পারিবে না। এই জন্যই ভগবাঁন্‌ শ্রীকৃ্ণ শ্রীমন্তগব্দগীতার দ্বিতীয়াধ্যায়ে বলিয়াছেন যে, "যাহারা হোমাদি-কর্ধ্মানুষ্ঠায়ী পণ্তিতগণের হোমাদি কন্মের উপদেশ-বাক্য শ্রবণ করিয়া মুগ্ধ হয়, তাহাদের বিষয়লিপ্ত বুদ্ধি ব্রহ্মদমাধির উপধুন্ত নহে। তাহারা স্থদৃশ্য লোহিত “মাকাল' ফলের ম্যায় বা সুন্দর পুঙ্প- গুচ্ছে স্থশোভিত বিষ-লতার ন্যায় উল্ত পগ্চিতগণের শাঁপাততঃ শ্রুতি-মধুর প্রলোভন-বাকা সকল শ্রবণ করিয়া ( ২২৩ যুদ্ধ হইয়া পড়ে এবং পরে ক্রমাগত জন্ম-মরণ-চক্রে ঘূর্ণিত হইয়! অকথ্য যন্ত্রণ। ভোগ করিতে থাকে । তাহারা কামাত্বা। অর্থাৎ ভোগ্য বিষয়-কামনায় তাহাদের চিত্ত সদাই কলুঘিত। তাহারা স্বর্গপর। অর্থা তাহারা এই কামনা করে যে, আমরা অশ্বমেধাদি যজ্ঞ করিয়া স্বর্গে যাইব, স্বর্গে গিয়৷ ইন্দ্রের অমরাবতী-পুরীস্থিত বৈজয়ন্ত- নামক প্রাসাদে ইন্দ্রসভায় উর্বশী, মেনকা, রম্তা প্রভৃতি অপ্পরাঁর মনোহর মৃত্য দেখিয়া স্থুখী হইব, স্বর্গের নন্দন- কাঁননের পাঁচটি কল্পবৃক্ষের দিব্য সুমিষ্ট ফল খাইয়া সখী হইব, অস্বুতহদের তমৃত পান করিয়া স্তবখী হইব, ইত্যার্দি ইত্যাদিরূপ 'ন্বর্গম্বখ কামনায় অন্ধ হইয়া পড়ে, কিন্ত তাহারা ইহা বুঝিতে পারে না যে, বেদের মতে পুণ্যক্ষয় হইলে স্বর্গলোক হইতে পুনরায় মর্ত্যলোকে পতিত হইতে হইবে। পুরাণের মতেও তারকান্থর প্রভৃতি দৈত্যগণ তপস্তা-প্রভাবে স্বর্গের অধিপতি হইলে স্বর্গের দেবগণকে ভাড়াইয়। দেয়। দেবগণ স্বর্গ হইতে বিতাড়িত হইয়া ইতস্ততঃ পর্যটন করিয়া মহার্লেশ ভোগ করেন। একবার ব্রহ্মার নিকটে, একবার বিষুর শিকটে, একবার শিবের নিকটে গিয়া প্রতীকার শ্রীর্থন। করেন। আবার রাবণের মত ব্যক্তির 'পাল্লায়' পড়িয়া যম এবং ইন্ত্রকেও অতি নীচ শ্রেণীর দাসত্ব করিতে হইয়াছে । এই ত ্বর্গের সুখ । স্ব্গবাসী ব্যক্তিরা বলে, স্বর্গ ছাড়া অগ্য কোন প্রাপ্তব্য ( ২২৪ ) স্খলোকই নাই। কিন্তু তাহারা জানে না যে, দুর্গের উপরে মহর্লোক, তাহার উপরে জনলোঁক, তাহার উপরে হপোলোক, তাহার উপরে সতালোক ঝা ব্র্ধলোক বা শম্বতলোকরূপ সর্বেবোচ্চ একটি লোক আছে। সেই লোকে রাবণাদ্দি নীচ পামর দৈত্যের উপদ্রব নাই। সে লোকে একবর যাইতে পাঁরিলে আর পনের ভয় থাকে না। সেলোক প্রাপ্ত হইলে হথা হইতে পুনরায় কে ফিরিয়া আসে না। যাহার! স্বর্গ পরায়ণ, তাহাদিগকে স্বর্গে যাইবার জন্য ষঙ্গার্থ বেদি নির্মাণ করিতে হয়, অগ্নি স্থাপন করিতে হয়, ঘ্বত, চকু ও পিষ্টকাদি ড্রুবা নিবেদন করিতে হয় এবং মহাযজ্জ্ের অনেক মঙ্গ-যজ্ছের অনুষ্ঠান করিতে হয় । এই সমস্ত ব্যাপার করিয়া স্বর্গীয় এই্বরধাভোগের জন্য যাহারা লালায়িত হয়, এরূপ ভোগেচ্ছা যাহাদের চিত্ত অপহরণ করে, তাদুশ ব্যক্তিদিগের বুদ্ধি ব্রন্মদমাধির উপযুক্ত নহে। তাহাদের বৃদ্ধি ব্রঙ্গাদমাধির পথে পৌছিতেই পারে না। াহাদের সে পথে যাইবার অধিকারই নাই ।* ভগবান শ্রীশঙ্করাচার্য্যের এইরূপ শাস্ত্-প্রমাণযুক্ত কথাগুলি শুনিয়া মগ্ডনমিশ্র মনে করিলেন, এ ব্যক্তি দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করিয়া উদর পুরণ করিবার জগ গৈরিক বসন ও .মস্তকমুগ্ডনরূপ বেশ ধারণ করেন নাই। ইনি একজন মহাবিদ্ধান্‌ ও প্রকৃত তি, এইরূপ বোধ হইতেছে । ( ২২৫ ) অদ্য ইনি যখন আমার বাটীতে অতিথিরূপে আমিয়াছেন, তখন ইহার প্রতি আাতিথ্য-প্রদর্শন করাই উচিত । ইহার প্রতি এঁরূপে অবজ্ঞা-ভাব প্রকাশ করা! আমার মত লোকের পক্ষে জনুচিত, কার্য হইয়াছে । উত্তম জাতির গুহে নীচজাতীয় কোন বাক্তিও অতিথি হইলে তাহার প্রতি যঘোচিত আতিথ্য-প্রদর্শন করিতে হয়। আর ইনি যখন একজন আমাদের ধর্মের মতে ভিক্ষু-নামক চতুর্থ আশ্রমী, তখন অদ্য আমার পিতৃশ্রাদ্ধদিবসে ইহাকে ভিক্ষা দান করিলে, ইহার প্রতি উত্তমরূপে আতিথ্য প্রদর্শন করিলে আমার কর্তব্যকণ্মী সম্পাদন করা হইন্ভুব এবং পুণচও হইবে। আজ আমার মহাসৌভাগ্য যে, এইরূপ একজন বিদ্বান্‌ সন্ন্যাপী বিন! নিমন্ত্রণে আমার বাটীতে স্বয়ং .আসিয়৷ উপস্থিত হইয়াছেন। ইহ| আমি পুর্বে বুঝিতে পারি নাই বলিয়া আমার যথেষ্ট ক্রটি হইয়াছে। আর সে বিষয়ের জন্য এক্ষণে চিন্তা করিয়া কি হইবে? গতম্ত শোচনা নান্তি যাহা হইয়া গিয়াছে) তাহার জন্য এক্ষণে অনুশোচনা করিয়! কি হইবে ? তাহার প্রতীকারের চেষ্টাই করা উচিত। এইরূপ মনে করিয়া মগ্ডনমিশ্র তাহার অপরাধের জন ভগবান্‌ শ্রীশঙ্করাচার্ষোর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা] করিলেন এবং, সেই শ্রাদ্ধ-দিবসে তাহার বাটাতে অনুগ্রহ পূর্ববক ভিক্ষা-গ্রহণের জন্য ভগবানকে মহাঁসমাদর ও শ্রদ্ধার সহিতু নিমন্ত্রণ করিলেন । ( ২২৬ 0) কিন্তু ভগবান্‌ শ্রীশঙ্করাচাধ্য বলিলেন, “আমি অন্ন-ব প্রীনাদি ভিক্ষার জন্য আপনার' বাটীতে আমি নাই। আরম তর্ক- ভিক্ষার জন্য আপনার নিকটে আসিয়াছি। আমি ভারতের সর্বত্র অদ্বৈতবাদ-সংস্থাপনার্থ , পর্যটন করিতেছি মাহিম্মতী নগরীতে অদ্বৈতবাদ-সংস্থাপনার্থ আগমন করিয়াছি। এখানে আসিয়৷ শুনিলাম, আপনি এক- জন হোমাদি-কর্ম্ানুষ্ঠায়ী পঞ্চিত। হোমাদি-কর্মমানুষ্ঠান ত্যাগ করাইয়া আপনাকে সন্নামী করিব এবং 'পরে আপনার দ্বারা অন্বৈতবাদ প্রচার করাইব। জগতের লোক যাহাতে মুক্তির পথে আমিতে পারে, আপনার দ্বারা তাহার উপায় করাইব। শুনিয়াছি, আপনি অন্বৈতবাদের পক্ষপাতী নহেন। ব্রক্মততব-প্রচারক সন্ন্যাসীদিগকে আপনি অবজ্ঞা করেন। সেই জন্য মাপনার মত লোককে অনৈতবাদ মানাইতে পারিলে জগতের একট! ভাল কাধ্য কর! হয়, এইরূপ ধিবেচনা৷ করিয়া আপনার বাটাতে আদিয়াছি। আপনি তর্ক ব্যতিরেকে সহজে অদ্বৈতবাদ মানিবেন না, হোমাদি-কর্মমনুষ্ঠান ত্যাগ করিয়া সন্ন্যাসা হইয়া মুক্তির পথে আগিবেন না, ইহা আমি বুঝিতে পারিয়াছি। সেই জন্তই বলিতেষ্ছি“যে, আমি অন্নব্যগ্জীন ভিক্ষার জন্য আপনার বাটাতে আসি নাই; কিন্তু আমি তর্ক-ভিক্ষার জন্য আপনার বাঁটাতে আমিয়াছি। অতএব আমাদের দুই জনের মধ্যে ধিনি ধাহার নিকটে তর্কে পরাস্ত ( ২২৭ ) হইবেন, তিনি তীহার শিষ্য হইবেন, এইরূপ প্রতিজ্ঞ করিয়া আমাকে তর্ক-ভিক্ষ। দান “করুন। আমি দেখিতেছি যে, আপনি কামনাযুক্ত-যজ্ঞকর্ম্মে সদাই ব্রতী । উপনিষত্ ও বেদান্ত-প্রতিপাদিত নিষণমধন্ননে আপনার তত আস্থ। নাই। সেই জন্য আপনার ম্যায় কামনা-কলুষিত বেদান্ত-বিরোধী ভছ্ান।দ্ধ ব্যক্তির জ্কাননেত্র উদ্মীলিত করিয়া দিবার জন্য এবং বেদান্ত ও উপন্ষদের পথকে নিষ্বণ্টক করিবার জন্য ইচ্ছুক হুইয়াছি। *অতএব আপনি কাম্য-কর্ম্মা বিসর্জন করিয়া বেদান্ত-সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন কিম্বা বিচার করুন, কিম্বা “পরাজিত হইলাম” এই কথ! বলুন।. বিচারে আমি যদি পরাজিত হই, তাহা! হইলে আমি আপনার ন্যায় গৃহী হইয়া গুত্রবন্্র পরিধান করিব এবং আপনি যদি পরাস্ত হয়েন, তাহ। হইলে আপনাকে আমার মত সন্ন্যাপী হইতে হুইবে ও গৈরিক বসন পরিধান করিতে হইবে, বিচারের পূর্বেব এইরূপ প্রত্তিজ্ঞ। কর! হউক। আর বিচার যদি না করেন তাহা! হইলে বলুন ঘে, “আমি পরাজিত হইলাম? |% ভগবান্‌ শ্রীশঙ্করাচার্যের এইরূপ কথা শুনিয়া মগুডন- মিশ্র বলিলেন যে, “ধিচার ব্যতিরেকে 'আমি পরাঙ্গিত হইলাম” এ কথা আমার মুখ হইতে কখনই নির্গত হইবে না। আমিও বভুদিন 'হুইতেই এই ইচ্ছা! করিতে- ছিলাম যে, যদি কোন বেদান্তী আমার ভবনে কখন (২২৮) উপস্থিত হয়েন, তাহা হইলে তাহার সহিত যেন আমার উত্তমরূপে একটি শাস্ত্রীয় বিচার হয়। আমার মনে অনেক সময় এইরূপ একটা কৌতুহল জন্মিয়া থাকে দা ভাগ্যবশতঃ আপনি আমার বাটাতে আসায় সেই কৌতুহলটি চরিতার্থ হইবে, এইরূপ মনে হইতেছে ।” এই বলিয়া মণ্ডনমিশ্রা তুষ্ঠীন্তাব অবলম্বন করিলে মণ্ডনের পুরোহিত ও গুরু বলিলেন, “মগুন, ইনি একজন ভপ্ত সন্ন্যাসী নহেন। ইনি বেদান্ত-সুত্রের ভাষ্যকার ॥ ইনি শঙ্করের অবতার শঙ্করাচারধ্য। উনি সাধারণ লোক নহেন।” | মণ্ডন, আচাধ্য পুজ্যপাদের এইরূপ পরিচয় পাইয়া আশ্চর্ধ্যান্বিত হইয়। বলিলেন, “জগদিখ্যাত যাঁতরাক শ্ত্রীমান্‌ শঙ্ক'রাচার্য্য অদ্য আমার পর্ণকুটীরে উপস্থিত! আজ আমি ধনা ও কৃতাথথ হইলাম। আজ আমার মহা.সীভ।গ্যের দিন। আজ স্তপ্রভাত। ঈদৃশ মহামান্য আত'থর সমাগম হওয়া পূর্ববজন্মের মহান্বক্কৃতির ফল। কিন্তু আমি সবিনয় নিবেদন করিতেছি যে, আমি অদ্য 'এই হ্লণ পিতৃশ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করিয়াছি । অদ্য জামি বড়ই ব্যন্ত। আদ্ধোপলক্ষে অনেক লোককে নিমন্ত্রণ করিয়াছি। শরদ্ধান্তে তাহাদিগকে ভোজন কঁরাইতে হইাবে। আজ আর মোটেই সষয় পাইব না। কল্য আমাদের বিচার হইবে। তবে একটা বিষয় এইক্ষণেই স্থির হইয়। যাউক্‌। জামাদের এ বিচারে মধ্যস্থ হইবে কে?” (২২৯ ) মণ্ডন স্থীয় গুরু ও পুরোহিতকে বলিলেন, “আপনারাই এই বিচারে মধ্যস্থ হউন।” তীহাঁরা বলিলেন, “গুন, আমাদিগের প্রতি তোমার প্রগাঢ় ভক্তি শ্রদ্ধা আছ, ইন! সত্য; কিন্ত্রী আমাদের ইচ্ছা যে, তোমার ধর্মপত্ী ধরাশুলে মানবীরূপে অবতীর্ণা শ্রীসরস্বতী দেবতা শ্রীমতী উভয়ভ!রতী দেবী এই বিচারে মধ্যস্থা হউন।” তাহারা এইকপ অনুমতি করাতে তাহাই ধার্য হইল। ভগবান্‌ শ্রীশঙ্কীরাচাধ্য মগ্ডনকে বলিলেন, “কল্য প্রাতঃকালে বিচারাথ আপনার বাটাতে আমিব”। এই কথা বলিয়া তিনি গমনোদ্যত হইলে মগুন তাহাকে বলিলেন, “ছে বতিরাজ, অদ্য শ্রাদ্ধবাসরে আপনি আমার গৃহে ভিক্ষা গ্রহণ না করিলে আমার অকল্যাণ হইবে। আমি অতিশয় ছুঃখিত হইব” । ভগবান বলিলেন, “আপনি শ্রাদ্ধ করুন। এ সময়ে মুগ্ডিতমস্তক শিখাসূত্রহীন গৈরিক- বসনপরিধায়ীর সহিত বেশীক্ষণ কথ! কহিয়! শ্রাদ্ধ পণ্ড করা আপনার মত লোকের উচিত নয়। শ্রাদ্ধ করুন। শ্রাঙ্ধকাল যেন অতীত না হয়। আমি অন্নব্যঞীনের ভিক্ষুক নহি। আমি জ্ঞানভিক্ষু এবং আপনার সহিত বিচারের তিক্ষুক। আনি কল্য প্রাতঃকালে আপনার বাটীতে বিচারভিক্ষা করিতে আসিব”? ॥। ঞই কথ! বলিয়া তিনি রেবানদীতীরস্থিত সেই কাননের অভিমুখে প্রস্থান করিলেন । তথায় আসিয়া তিনি পত্পাদাচারধ্য প্রতি ৬ 281 প্রধান প্রধান শিষ্যদিগকে সেই দিনের প্রাতঃকালের ঘটনাবলী বিবৃত করিয়! মাধ্যান্নিক স্নান ব্রদ্ষমোপাসনা ও ভোজন সমাপ্ত করিলেন। পরদিন প্রত্যুষে প্রাতঃস্মানাদি- কৃত্য সমাপ্ত করিয়া ও পদ্গ্রীদাচাধ্য প্রভৃতি প্রধান প্রধান শিষ্যবর্গে পরিবুত হইয়া বিচারার্থ মণ্ডনমিশ্রের ভবনে উপস্থিত হইলেন । তথায় উপস্থিত হইয়া দেখিলেন, মগ্ডনমিশ্রের অতি প্রশস্ত গৃহপ্রাঙ্গনে এক মহতী সভার অধিবেশন হইয়াছে। মাহিত্যতী নগরীর প্রধান ' প্রধান ব্যক্তিনকল বিচার-শ্ররণার্থ উপস্থিত হইয়াছেন । ভগবান 'শ্রীশঙ্করাচার্য্ের মহাবিখ্যাত নাম শ্রবণ করিয়া তাহাকে মাত্র দেগ্রিবার জন্য দুরস্থ নগর ও গ্রামের লোকসকল নদীত্রোতের ন্যায় মগ্ডনের গৃহাতিমুখে আসিতে লাগিল । মহাপ্রশত্ত প্রাঙ্গনে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ভিতরে বাহিরে য়ে যেখানে পারিল সে সেখানে আতিক দাড়াইল। মগুনের ভবনে এত বড় জনতা হইলেও উহার কোলাহলে ভার শাস্তিভঙ্গ হয় নাই। কারণ, তথায় ভগবান. শ্রীশঙ্করাচার্যের মত মহাত্মার পদধূলি' পড়ায় সকলে ধীর স্থির ও তক্তিতাবে ফীড়াইয়াছিল। মুর্খ নীচ ইতর লোক কৌতুক দেখিবার জন্য তথায় জনতা! বৃদ্ধি করিতে সমর্থ হয় নাই৷" কারণ, মণ্ডনমিশ্রা খুব বড়লোক ছিলেন। .. তাহার, গ্হে শান্তিরক্ষার্থ বু স্ৃুসভ্জ্রিত ( ২৩৯ ) তীমকায় মহাবল রক্ষিবর্গ নিযুক্ত ছিল। সুতরাং তাদশ জনতায় সভায় শান্তিভঙ্গের কোন' সম্তাবিনা ছিল না। তগবান শ্রীশঙ্করাচার্যা সভায় উপস্থিত হইবা মাত্র সকলে সসম্ত্রমে উথ্থিত হইয়া * তাহাকে যথাবিধি অভ্যর্থনা করিলেন। পতিভক্তিপরায়ণ৷ মুক্তিমতী বিদ্যা শ্রীমতী উভয়ভারতী দেবী বিচারে মধ্যস্থতা-গ্রহণার্থ সভামধ্যে বিরাজমানা ছিলেন। তাহার স্বপ্রশস্ত আকর্ণ নয়ন- যুগল হইতে যেন এর্রদ্যাজ্যোতিঃ বিনির্গত হইতেছিল। তখন তাহাকে দেখিয়। সকলেরই এই মনে হইতেছিল যে, ভগবতী শ্রীসরস্বতী দেবতা যেন মানবী মুক্তি 'ধারণ করিয়া" প্ররাতলে অবতীর্ণ হইয়াছেন ]. অনেকে উহাকে সাক্ষাৎ সরস্বতী মনে করিয়া ভক্তি করিত। এই জন্য তাহার “সরস্বতী” বলিয়া অপর একটি নাম আছে। সকলেরই সহিত তিনি স্ৃমিষ্টভাষিণী ছিলেন বলিয়া তাহার “সরস- বাণী” বলিয়া আরও একটি নাম আছে। এই নামেই তিনি বিহারপ্রদেশে অধিক বিখ্যাতা ছিলেন। তিনি বিহারের বিখ্যাত শোণনদের তীরপসমীপে একটি ব্রাক্ষণ- পণ্ডিত-বংশে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। ' তাহার পিতার নাম বিষুমিত্র। শৈশবে তাহার বুদ্ধি প্রা্য্য ও প্রতিভা অবলোকনে বিস্মিত হইয়া তাহার পিতা তাহাকে বিশেষ মনোযোগের সহিত শিক্ষা! দিতে আরম্ত-করিয়াছিলেন | সনিলে মহাবিস্ময় জম্ম, তিনি যোড়শবর্ষষ্বরঃক্রমের মধ্যে € ২৩২ ) খক্‌ যজুঃ সাম ও অথর্ব এই চারিবেদ, শিক্ষা! কল্প বাকরণ নিরুন্ত উন্দঃ ও জ্যোতিষ এই ছয়টি বেদা্, ন্যায় বৈশেধিক সাংখা পাচগ্জীল বেদান্ত ও মীমাংসা এই ছয় দর্শন, ধর্দশান্ধ্, পুরাণ, কাবা, নাটক অলঙ্কার ও ইঠিহাসাদি নানাশা'স্ত্র অসাধারণ বুণুপন্তি লাভ করিয়াছিলেন । লোকে এই সামন্য বয়সে এইরূপ অস্ভুঠ বিদ্যাবন্ দর্শনে বাস্ম* হইয়া তাহাকে সরস্বতার অবতার মনে করিত এবং তাহাকে পুঞ্জা করিত। অভিমান অহঙ্কার দর্প এই শব্দগুলির সহিত তিনি শাস্ত্র পড়িবার সময়ে পারচিত হইয়াগিলেন মাত্র । কিন্তু কখন৪ তাহাদিগকে নিজের মনের উপর প্রত্ুত্ব করিবার জন্য মাশ্র় দান করেন নাই। তিন সকলের সহিত অতি উত্তম সুমধুর ব্যবহার করিতেন বলিয়' সরমবাণী এই মাখ্যা প্রাপ্ত হইয়াছিলেন । তীহার সরস হুমধুর ঝণী শ্র“ণ করিয়! পাষাণব কঠোরচিত্ত দ্রব হ্যা যাইভ। [তান কোন কারণ বশতঃ কখন কুদ্ধ হইলেও রূঢ় অপ্রিয় বাকা প্রয়োগ করিতেন না। বিদ্যা- শিক্ষ' কবি:ল যে সকল সদৃপগ্ডণ উত্পন্ন হওয়। উচিত, মেই মকল সদৃণ্ুণে ঠিনি ভূষিতা ছিলেন। প্রাচীনকালে ভারতীয় পত। ও মাতা স্বীয় কুমারী কন্যাকে ধন্্ন ও নীতি শাস্ত্রে স্থুশক্ষা দিয়া কন্ার উপযুক্ত বিদ্বান রূপবান গুণব'ন ও সম্পাত্বমান ও একটি পাত্রের হস্তে কন্যাকে সমর্পন করিতেন॥ উভ্তয়তারতীকে যতদূর উচ্চশিক্ষা (২৩৩ ) দিতে হয়, তুদ্ধিয়ে তিনি অণুমাত্র ত্রুটি করেন নাই। কন্যার শিক্ষাসবাপ্তির পর তাদৃশ একটি পাত্রের মনুসন্ধানাথ 1"ঝুধমত্তর ঘটক নিযুক্ত করিলেন। ঘটক বধ অনুসন্ধা. * পর একদিন একটি স্থুপাত্রের সম্বাদ আনয়ন কাঁরল এন বিষুঃমিত্রকে বলিল, মহ'শয়, রাঁজগুহ- নামক স্থানে ঠিমানত্রনামক পঞ্ডিতের পুজ মগুনমিশ্রনামক একটি বিদ্ধান ও রূপগুণসম্পন্তিমান পাত্র আছেন। তিনি্বেদাধাংন, (হাম, অতিথিসেবা ও অধ্যাপনাদি সৎ- কারো সদাই নাপুত থাকেন। তাহাকে দেখিলেই বোধ হয় যেন ভিপি চতুম্মুখ ব্রহ্মার অবতার। তিনি বি” রূপবান বলিয়া বিশ্বরূপ নামে পরিচিত । ঘটকের নিকটে ঈদৃশ উত্তম পাত্রের সম্বাদ পাইয়া বিষু- মিত্র স্বীয় পত্ব7€ ইহা জানাইবার জন্য অন্তঃপুরে, গমন করিলেন ' তাহান বুদ্ধিমতী পত্ী এই শুভ আনন্নসম্থাদ নিয়া উভয়ভারীর শুভবিবাহ স্থির করিবার জন্য রাজ- গৃহে পাত্রের পিতার নিকটে ঘটক প্রেরণ করিতে বলিজেন। উভয়ভারতী ঈদৃশ উত্তম পাত্রের সম্বাদ গ্টনিয়া হৃদয়ে এক অপুর্ব আইল|দ অনুভব করিলেন। তাহার পিতা মাহা এমন কি, তাহার কোন প্রিয়সধীও তীহার এট অ'হলাদের কোন বাহাচিহন দেখিতে ন৷ পাইয়া তাহার এই আন্তরিক আহ্লাদ অনুমান করিতে পারেন নাই। কারণ, তিনি অতিশয় লঙ্জাশীল! ছিলেন। ( ২৩৪ প্রগল্ভতা কাহাকে বলে তিনি জানিতেন না। শিক্ষা- সমাপ্তির পর তাহার হৃদয়ে বিবাহেচ্ছা উদিত হইলেও এতাবতকাল পর্য্যন্ত তাহার কোন প্রিয়সখীও তাহা কোন প্রকারেই জানিতে পারে নাই। তিনি এই জানিতেন যে, তাহার বিবাহের জন্য তাহা অপেক্ষা তাহার পিতা মাতার ভাবনা অনেক বেশী। তাহারা যেরূপ স্থির করিবেন 'তাঁহাই হইবে । এ বিষয়ে তাহার নিজের কোন অধিকার থাকা উচিত নয়। তিনি এই বুঝিতেন যে, তাহারা যে পাত্রকে মনোনীত করিবেন সেই পাত্রের সহিতই তাহার রিবাহ হইবে। তাহার মাতা, তাহার পিতা বিধুঃমিত্রের নিকটে সর্ববদাই বলিতেন, “আহা বাছা আমার কেবল লেখা পড়াই শিখিয়াছে। স্বাধীনতা কাহাকে বলে তাহা মোটেই শিখে নাই” । উভয় ভারতী বাল্যকালে ভারতীয় সংস্কৃত নীতিশান্ত্র অধ্যয়ন করিবার সময় এইরূপ শিক্ষ। পাইয়াছিলেন যে, দন্ত্রীলোক কৌমারে পিতার অধীন হইবে, যৌবনে পতির অধীন হইবে এবং বুদ্ধাবস্থায় পুত্রের রক্ষণাবেক্ষণে থাকিবে । ভ্ত্রীলোক কোন কালেই স্বাধীনতা পাইতে পারে না।” এইরূপ উত্তম শিক্ষার প্রভাকে তিনি স্ত্রীজনোচিত লভ্ভাশীলতা-গুগে ভূষিত হইতে পারিয়া- ছিলেন। এইরূপ উত্তম শিক্ষা যাহার] পায় না, তাহারাই স্বাধীনচেতাঃ প্রগল্ভা ও উচ্ছঙ্খল! হইয়া দাড়ায় এবং সংসারে অশান্তি উত্পাদন করে। উভয় ভারতীর পিতা; ( ২৩৫ ) _রাজগৃহনামক স্থানে পাত্রের পিতা হিমমিত্রের নিকটে ঘটক পাঠাইলেন। হিমমিত্র ঘটকের নিকট পাত্রীর রূপ- গুণের প্রশংসা শ্রবণ করিয়া এই বিবাহে সম্মতি জ্ঞাপন করিলেন । বিষুর্নমত্র ঘুটকের নিকটে পাত্রের পিতার সম্মতি অবগত হইয়া অতিশয় আনন্দিত হইলেন এবং পরদিন ভাবী জামাতাকে “পাকাদেখার” আশীর্বাদ করিবার জন্য হিমমিত্রের গৃহে গমন করিলেন। ঝিষুঃমিত্র ভাবী-জামাতার সুন্দর স্তুবুদ্ধিব্গ্ীক মুখ, দীর্ঘ ললাট, প্রশস্ত নয়নযুগল, আজানুলন্বিত বাহু, বিপুল রক্ষ-স্থল এবং উল্স্বল গৌরবর্ণ অবলোকন করিয়া অত্যন্ত আহলাদিত হইলেন | তিনি হিমমিত্রের নিকটে তাহার সবিশেষ কুল পরিচয় অবগত হইয়া ধান্য দুরবব। ও স্বর্ণ মুদ্রা দিয়! ভাবী জামাতাকে আশীর্বাদ করিলেন এবং হিমমিত্রও পাত্রীকে আশীর্বাদ করিবার ক্রন্য শুভদিনে বিফুমিত্রের গৃহে উপস্থিত হইয়া পাত্রীকে যথারীতি আশীর্বাদ করিলেন। বিবাহের শুভদিন স্থির করিবার কথা উথাপিত হইল। বিষুমিত্র বলিলেন, আমার কন্যা ফলিত ও গণিত জ্যোতিষ শাস্ত্রে অসাধারণ বিছ্বধী। অতএব আমার ইচ্ছ| যে, উভয়ভারতী নিজেই নিজের বিবাহের শুভদিন গণনা করেন। হিমমিত্র এই প্রস্তাব শুনিয়া অতিশয় আহলাদের সহিত ইহাতে সম্মতি দিলেন। তদমুসারে উভয়ভারতী নিজের এই শুভবিবাহের লগ্ন নিজেই ( ২৩৬ ) গণনা করিতে মারস্ত করিলেন। তিনি উত্তমরূপে গণনা করিরা বিবাহের শুক্তলগ্ন স্থির করিলেন। লগ্নপত্র খানি একটি বৃদ্ধ ব্রাঙ্গণের হস্তে ভাবী শ্বশুরমহাশয়ের নিকটে পাঠাইয়া দিলেন। ইহার পর উত্তয় পক্ষে বিবাহের আয়োজন হইতে লাগিল। অনন্তর নিদ্দিষট শুভ'দনে মগ্ডননিশ্র বরোচিত বেখভুধায় ভূত হইয়া শিনকায় আরোহণ করিয়া আজমীর ও খিত্র প্রভৃতি বরধাতিগণে পরিবৃত হইয়া বিবিধ মনোরম বাদা এবং বধ্যাত্রাশোভাবদ্দক হস্তী ঘোটক ও উদ্টুগভৃতি সহ ব্ষুমিত্রের গৃহে উপস্থিত হইলেন । বিষুমিত্র মহা- সমাদরপূর্ববক পাত্র, পাত্রের পিতা এবং বরযাত্রী দগকে ন্থাবিধি অভ্যর্থনা করিয়া স্বীয় ভবনে প্রবেশ করাইলেন এবং পাত্রকে রত্রখচিত কারুকারধ্যন্ুশোটিত বহুমুলা বরাপনে উপবেশ করাইয়া বলিতে লাগিলেন, “অদ্য আম মামার কন্যা উভয়ভারতী, এবং আমার গৃহে যাহা কিছু আছে, সেই সকল বন্তুই তোমার জানিবে। তোমার সায় সতপাত্রের আগমনে মামার গৃছ পবিত্র হইল । অদ্য আমি সকলের নিকটে আদরীয় হইলাম» । বিছু্িত্ তাবীজামাভাকে তাণুকালিক রীতি অনুসারে এহরূপে অপ্যায়িত করিয়া বরযাত্রীদিগেয় সম্মুখে কুতাগ্তলিপুটে দাঢ়াইয়। রহিলেন। সেই সমযে বহুণুলয অস্কারে ডুষিতা ও উজ্জ্বল পটবন্ত্রে আচ্ছাদিত উভয়ভারতী (২৩৭ ) অন্তপুরমধ্যে পতিপুত্রবতী পুরঙ্কীগণে পরিবেষ্টিত হইয়! বসিয়াছলেন। পাঙপুত্রবতী সৌভাগ্যশালিনী পুরস্তীর৷ তাহাকে বেষ্টন কাঁরয়া* বৈবাহিক মাঙগল্যদ্রব্মকল রচন! করিতেছিলেন। এমন সময়ে বুদ্ধ পুরোহিত মহাশয় অন্তঃপুরে গিয়া পাত্রীকে জিজ্ঞ।সা করিলেন, (ববাহ- লাগ্নের বিলম্ব কত”? উভয়ভারভী তাহাকে দেখিব। মাত্র *সসন্ত্রম উ্খত হইয়া তাহাকে এণাম কারয়া বলিলেন, “পুজ্যতম পুরোহিতমহাশয়, লগ্ন উপাস্থত হইয়াছে” । পুরোহিত মহাশয় “তথাস্ত” ঝালয়। বহির্বাটীতে , আদিলেন এবং শুভলগ্ন উপাস্থত হইয়াছে এই কথা খিঞ্ুমিত্রকে নিবেদন করিলেন। বুম বিবাহসভাত্থ সকলের অনুম।ত লইয়া পাত্রে শপ্তঃপুরে লইয়। গে.লন। তথায় পুঞ্জাগুহে মঙ্গল চপ্রন্থশোভিত পীঠে বরকে বসাইলেন। কন্যাপক্ষীয় চ114ট পুরুষ উভয়ঙারভাকে একটি ন্্মিত্রত চতুষো ফুঞ্ত পাঠে বসাইয়। সম্প্র নস্থানে বহন করিয়া অনিল এবং তথায় এ গীঠ স্থাপন করিল। পুরোহিতমহাণয় বর ও কন্যাকে বিবাহমন্ত্র পাঠ করাইতে আরন্ত করিলেন । বিষ্মন্তর ৬ শালগ্রামশিল৷ ও অগ্নিকে সাক্ষা করিয়া মগ্ডনের হস্তে উভয়ভারতীকে সমর্পণ করিলেন । লেই সময়ে শষ প্রস্ততি মঙ্গলবাদ্যধ্নিতে দিগন্ত পূরিত হইল । ( ২৩৮ ) পতিপুত্রবতী সৌভাগ্যশালিনী পুরস্ত্ীরা “হুলুন্থলু” ধ্বনি করিতে লাগিলেন এবং বিবাহকালোচিত “্্রীাচার”- সকল যথাবিধি অনুষ্ঠান করিলেন । সেই: সময় সামবেদ- গাতা ত্রাঙ্গণগণ সুমধুর সামবেদগ'নে সকলকে মোহিভ করিতে লাগিলেন। সকলেই এইরূপ বিবাহ দর্শন করিয়া আনন্দে উৎফুল্ল হইয়া উঠিল । তত্রত্য নরনারী- গণ বলিতে লাগিলেন, “স্থনিদ্মীল জ্যোতস্সা। মেঘশুন্য শরচন্দ্রের স্থিত সঙ্গতা হইয়া যেমন অপুর্ব শোভা পায় এবং ধরাতলে ম্বতীণণ। গঙ্গা, সাগরের সহিত মিলিতা হইয়া যেমন স্থশোভিতা হয়েন, তত্রপ পৃথিবীতে মানবীরূপে অবতীর্ণ সরম্বতী, উতয়ভারতী মগ্ডনমিশ্রের সহিত অদ্য সঙ্গতা হইয়। অপুর্ব শোভা ধারণ করিয়াছেন” । এইরূপে মগ্ডনমিশ্রের সহিত উভয়ভারতীর বিবাহ সম্পন্ন হইল। বিবাহের পর পুত্র ও পুত্রবধূকে লইয়া হিমমিত্র স্বজনগণের সহিত ্বগৃহাভিমুখে প্রস্থান করিলেন। মগ্ডন রাজগৃহস্তিত পৈত্রিকভবনে কিছুকাল বাস করিয়া পরে রেবানদীতীরস্থ মাহিত্মতী নগরীতে এক উচ্চ বৃহ অট্রালিক1 নির্মাণ করাইয়া তথায় মহা- স্থখে সন্ত্রীক বাসকরিতে লাগিলেম এবং এই গুঁছেই ভগবান্‌ শ্রীশঙ্করাচা্য তাহাকে একাত্মবাদ বা একেশ্বর- বাদ বা অদ্বৈতবাদ গ্রহণ করাইবার জন্য বা বেদান্তমত মানাইবার নিমিত্ত, বিচার করিতে আপিয়াছিলেন। ( ২৩৯ 7 এবং এই ইতিহাসপ্রসিদ্ধ বিচারে মহাবিহ্্ধী উভয়ভারতী মধ্যস্থা হইয়াছিলেন। এই বিখ্যাত বিচারের প্রারস্তে তগবান্‌ শ্রীশঙ্করা চাষ স্বকীয় নির্দোষ বেদীস্তমত সংস্থাপন করিবার জন্য সর্বাগ্রে বলিলেন, “বেদ বলিতেছেন এক, অদ্বিতীয়, নিতা চেতন, আনন্দন্সরূপ, অনাদি, অনম্ত, বিশ্বের জ্রষ্টা পালফিতা ও লয়ের আধার, ব্রহ্ম! অর্থাৎ সর্বব্যাপী সর্ববনিয়ন্ত। পরমেশ্বরই একমাত্র সত্যপদার্থ। বে এঁই আত্মতন্ত জ্বানিতে পারে, সেই ব্যক্তিই বিদ্বান বা ব| জ্ঞানী। সেই ব্যক্তিই এই শোকদুঃখপুণ সংসার- সাগর উত্তীর্ণ হইতে পারে। যে ব্যক্তির পূর্ণবরন্মজ্ঞান উদ্দিত হয়* সেই ব্যক্তিই ব্রঙ্দে লীন হইতে বা মুক্ত হইতে পারে। যিনি মুক্তিলাত করেন, তিনি আর এই ছুঃখময় মন্তালোকে পুনরায় জন্ম গ্রহণ করেন না। তিনি আর ইহলোকে ফিরিয়া আইসেন না। তিনি অপার অবিনশ্বর আনন্দসাগরে মগ্ন হইয়া আনন্দসাগর- স্বরূপ হইয়া বান্‌। যেমন স্ৃত্তিকাপিণ্ড হইতে ঘট, কলস, “হাঁড়ী,” ও “সরা” প্রভৃতি পদার্থ উৎপন্ন হইয়া ভিন্ন ভিন্ন নামে ও ভিন্ন ভিন্ন রূপে পৃথক্‌ পৃথক্‌ পদার্থ বলিয়া প্রতীয়মান হয়, কিন্তু বস্তুতঃ উহারা মৃত্তিকা ভিন্ন অন্য কোন বন্তবই নয়, উহারা সৃত্তিকাতত্বকে অতিক্রম করে না, উহারা মৃত্তিকা হইতে উৎপন্ন হইয়! মৃত্তিকায় আশ্রিত হইয়! সৃত্তিকাতেই লীন হইয়া যায় এরং স্মৃক্িকায় লীন ( ২৪০ ) হইয়া! গেলে উহ্থীরা যেমন স্ব স্ব নামবিহীন হয়, অর্থাৎ বিনষ্ট হইয়। যায়, কিন্তু তাহাদের উপাদান কারণ মৃত্তিকা হখন বিনষ্ট হয় না, কিন্তু সত।রূপে প্রতীয়মান হয়, উহা হখনও সত বা! বিদ/মান থাকে, তত্রপ চন্দ্র সূর্যা পৃথিবী সমুদ্র পর্সবত অগ্নি ও বায়ু প্রভৃতি পদার্থ পরমেশ্বরের ইচ্ছায় পরমেশ্বর হইতে উৎপন্ন হইয়া পরমেশ্বরেই বিলীন হইয়। মায়, এবং তীহাতে বিলীন হইলে তাহারা স্বম্ব নাম ও আকারবিহীন হয় বা বিনষ্ট হইয়া যায়, কিন্তু তাহাদের উপাদান ও নিমিত্তকারণম্বরূপ পরমেশ্বর বিনষ্ট হয়েন না। তিনি যেমন আছেন তেমনই সর্ববসময়ে সত্যারূপে বিদ্যমান থাকেন। কিন্বা যেমন স্তবর্ণপিপু 'হইতে হার বলয়াদি অলঙ্কার উৎপন্ন হইয়া ভিন্ন ভিন্ন নাম ও আকার ধারণ করে, পরে এ সমস্ত অলঙ্কার খণ্ড খণ্ড হইয়া ভাডিয়৷ গেলে স্বন্ব নাম ও আকৃতিবিহীন হইয়া পড়ে, এবং পরে তাগ্সিসংযোগে গলিত হইয়া স্থুবর্ণপিণ্ডেই পরিণত হয়, তখন হার বলয়াদির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হইলেও স্থবর্ণপিপ্ডের শস্তিত্ব ক্লিপ হয় না, কিন্তু স্বর্ণ পিগ্ড তখন সত্য বা সত" রূপে বিদ্যমান থাকে, তত্রপ, পরমেশ্বরের ইচ্ছায় পরমেশ্বর হইতে চন্দ্র সূর্ধা সমুদ্র ও পর্বতাদি পদার্থ উৎপন্ন হুইয় পরমেশ্বরেই আশ্রিত হয় এবং প্রলয়কালে স্বস্ব নাম ও আকৃতিবিহীন হুইয়। পরমেশ্বরেই বিলীন হুইয়৷ যায়। নাহার! পরমেশ্বরে বিলীন হইয়া গেলে পরমেশ্বর সত্যরূপে ১২8৯7) সদা বিদ্যমান থাকেন। তিনি কুত্রাপি বিলীন হয়েন না বিনষ্ট হয়েন না। তিনি একমাত্র পরম অহপদার্থন ভাহ। হইতে উৎপন্ন পদার্থপকল ব্যবহারিক" : ;সগমাত্র । পারমার্থিক সৎ নহে । উহার! বিনশ্বর, এই এক চেতন পরমাত্মা, দেহ ও ইন্ড্রিয়গণের সহিত সন্ধদ্ধ' হইলে জীবাতা। নামে অভিহিত হয়। এ জীবাত্া! পরমাত্া! হইতে 'নিিজিকে পৃথক মনে করিয়া দেহ ও ইন্দ্রিয়গণের সহিত/অভিরোধ- রূপ অজ্ঞান বা ভ্রান্তি বশতঃ আমি গৌর, * আমি কুক, আমি স্থুল, আমি কৃশ, আমি ব্রাহ্মণ, আমি ক্ষতি, আজি অন্ধ, আমি বধির, আমি স্ত্খী,আমি ছুঃখী, আমি রাম, আমি শ্যাম, আমি দেব, আমি বক্ষ, এবং আঙ্গি কিন্তু ইত্যাদি মিথ্যা. মরুমরীচিকালম স্তখছুঃখাদিবোধসাগৰে নিমগ্ন হইয়া পড়ে। কিন্তু উপনিষণ্ড ও বেদান্ত : বাকা শুবণ ও বিচারাদি দ্বারা চিত্ত বিশুদ্ধ হইলে ত্টন্তাল 'উদ্দিত হইলে জীবাত্া পরমাত্বার সহিত এক. হৃইয়া...খবায়। তখন পরমাত্মা ছাড়া জীবাত্মার স্বতন্ত্র একটা.;অস্তিত্বের বোধ হয় না।. স্ুলত্ব কৃশত্ব গৌরত্ব ক্ষতত্থাদিং শরীরের ধর্ম (অন্ধত্ব বধিরত্াদি, ইন্দ্রিয়ের ধর্ম্ম। উহারাঃগরমাত্মার ধর্ম নয়, পরমাত্ঠা.হইজে জীবাত্মা ' পৃথক: একটি, স্বতন্ ' পদার্থ য়, পরমাত্মা চেতন: ও..আনন্স্বরূপা। শোক- ছঃখাদি নর ধর নয়। তরাং কেন জমি বৃথা শ্লোক- ্ুঞুধর, অরীন হইব । -আমি খাঁহা হইতে উৎ়, বীহাতে ২১ 8২... আশ্রিত এবং ধাহাতে বিলীন হইব, তিনি অস্ত মানন্দ- সাগরন্বরূপ, স্ঙরাঁং ভ্রাতিবশত্ঃই আমি শোকদুঃখে অধার হইয়া পড়ি। শোকদুঃখে অধীর হওয়া আমার পক্ষে কোন প্রকারেই উচিত নয়, ইত্যাদিরূপ বিচারদ্বারা তত্বজ্ভানের উজ্দ্বলআলোক উদিত হইলে সেই তত্বত্কান- বলে জীব আনার মহিত পরমাত্মার এক্যজ্ঞান সাধিত হয়। জী4ও ব্রহ্ম এক্জ্ঞান শ্তুসিদ্ধ হইলে এই শোকছুঃখ- ভ্ান্ুময় সংসারসাগর হইতে উত্তীর্ণ, হইতে পার! যায়। তখন ব্রচ্মে লীন হইয়! ব্রন্মময় হইতে পারা যায়, তখন মানবের কৈবল্যপ্রাপ্তি হয়। তখন মানবের জন্মমরণ- চক্রের ঘৃণন শেষ হইয়া যায়। তখন মানৰ সেই ব্রন্ম- লোক ব| সত্যলোক হইতে আর ফিরিয়া আইসে না, যতকাল পর্য্যন্ত এইতত্বজ্ঞান উদ্দিত না হয়, তাবশুকাল পর্যন্ত মানব শান্তচিত্তে সেই ব্রঙ্ষেরই উপাসনা! করিবে । “তজ্জলান্‌ শান্ত উপাসীত” । (বেদ) সর্ববশক্তিসম্পন্ন ব্রক্ষ হইতেই এই ক্ুগণ্ড উৎপন্ন হইয়াছে এই জগৎ ব্রন্মেই আঙ্মিত এবং পরে ব্রন্ষেই লীন হইবে। অতএৰ সেই ব্রচ্গকে শান্ত হইয়া উপাসনা করিবে । তীঙ্থাকে এইন্সপে উপাসনা করিলেই তাহাতে বিলীন হইতে পার! যায়। নতুবা তাহার সৃষ্ট সূর্যা চন্দ্র অশ্মি বায়ু ও বরুণ প্রসভৃভি দেবভাগণকে সহত্র সহশ্রবার পূজা করিলে তীঙ্াতে বিলীন হইয়া তগ্ময় হইতে পার! যায় না। হঞান (২৪৩ ) ও ভক্তি ব্যতিরেকে তাহাকে পাওয়া যায় না। জ্ঞানযুক্ত ভক্তিই তাহাকে পাইবার একমাত্র উঁপায়। বেদ বলেন, “যাগাদিধর্ম্মানুষ্ঠান দ্বারা তাহাকে পাওয়! যায় না। তিনি তাদৃশ ধর্ন্মের ফল হইতে স্নগ্ত্র স্থিত অর্থাৎ অতিদরবর্তী, অধন্মও তাহাকে কোন কালেই স্পর্শই করিতে পারে ন|। তিনি ধন অধন্ম পুণ্য অপুণ্য কৃত ও অকৃত কর্মের ফল হইতে অতিদূরবর্তী”। অশ্বমেধযজ্ঞ্ধ করিলে কিছু- দিন স্বর্ঈভোগই হয় মাত্র, কিন্তু তাহাকে পাওয়৷ যায় না। তিনি কাহারও পুণা ও স্থষ্টি করেন না, বা পাপ ও স্থগ্রি করেন না। মানুষ নিজের ধন্ন ও অধন্ন পুণ্য ও পাপ নিজেই হু্টি করে এবং নিজের অজঞনে আবৃত হইয়া নিজেই দুঃখ পায়। পরমেশ্বরকে কোন বিষয়ে দায়ী করা ঠিক নয়। ভুমি অশ্বমেধ যন্ত্র কর, তাহার ফল তুমিই পাইবে । অশ্বমেধ যন্ত্ করিয়া স্বর্গে গমন করিলে পুনরায় মর্ডের মহাকষ্ট তোমাকে ভোগ করি€েই হইবে। সেইজন্য মোক্ষলাভেচ্ছু সাধুগণ, ব্রন্মে লীন হইয়। ব্রহ্ষনয় হইতে চাহেন, কিন্তু স্বর্গ আকাওক্ষ। করেন না। কারণ, যে ব্যক্তি উত্তম রাজমার্গে গমন করিতে ইচ্ছুক হয়, সে নিজের পদে নিজে কুঠারাঘাত করে না, কিম্বা কণ্টকাকীর্ণ পথে যাইবার জগ্ ব্যগ্র হয় না| অঙএব অনিতা স্বর্গ- (লোকের কামনা পরিত্যাগ করিয়! সর্বেবাপরিস্থ মতালোক বা ব্রহ্মলোকপ্রাপ্তির জন্য বিশেষরূপে চেষ্টা কর! উচিত। ( ২৪৪ ) সেই অক্ষয়লোক' পাইতে হইলে ব্রহ্মবিষয়ক উপদেশবাক্য- অধাযন শ্রবণ বিচার ও পরে উহাতে সমাধি করিতে হয়।' বেদ বলিয়াছেন, “যে ব্যক্তি প্রশংসনীয় আ্াচার্যোর নিকটে বেদান্ত-ও উপনিষণ্ড অধ্যয়ন করিয়াছেন, তিনিই ব্রহ্মকে' জানিতে পারেন | এই পরমাত্মা পরমেশ্বরের কোন- কালেই বিনাশ নাই” | স্বর্গে গমন করিতে হইলে যজ্ঞ কারতে হয়, যজ্ঞে পশুহত্যা করিতে হয়। পশগুহত্যাজনিত সেই পাপ স্বর্গে গিয়াও, ভোগ .করিতে হয়। এতত্্যতীত খন কোন দুষ্ট দৈত্য দানব তপঃপ্রভাবে অত্যন্ত শক্তি শলী! হইয়া উঠে, তখন তৎকর্তৃক: স্বর্গ-আক্রমণ, গলে অদ্ধচন্র প্রদীনপুর্ববক স্বর্গ হইতে দেবগণের নিষ্কাশন, সগৃভ্রষ্ট দেবগণের দারুণঅপমানসহন ও ইতস্ততঃ পান, অবশ্যস্তাবী হইয়। পড়ে। কিন্তু স্বর্গ হইতে চতুপ্তন উচ্চে অবস্থিত সত্যলোক বা ব্রহ্মলোকে দুষ্টদৈত্য- দানবের উপদ্রবের ভয় নাই। সেখানে নীচ পামর ত্য দানব গমন করিতে পারে না । সেখানে গমন করিতে রা বা. তন্ময় হইতে হইলে অনিত্যফলের কামনা পরি- ত্যাগ.করিতে হয়। এ সত্যলোক অবিনাশী বিশ্বপতির বিশ্বরাজ্যের সর্বপ্রধান এবং অক্ষয় রাজধানী । উহাতে বিশ্বের অবিনাশী সম্রাট পূর্ণরূপে বিরাজমান থাকেন। এ অক্ষয় রাজধানীতে -ষাইতে হইলে উপনিষত্রূপ উচ্চ তোরণের মধ্য দিয়া যাইতে হয়। অতএব হে মগ্ুনমিশ্র ২ (২৪৫ ) মহাশয়, অত্যুচ্চ উপনিষগ্রূপ তোরণের উপরে প্রতিষ্ঠিত, মহাধিব্যাসের সুত্রগ্রথিত বেদান্তবাক্যমালার পবিত্র মধুর সৌরত গ্রহণ করুন। যজ্জীয় পশুর চর্বির দুর্গন্ধের মায়! পরিত্যাগ করুন শুনিয়াছি, আপনার এই পততী শ্রীমতী উভয়ভারতীদেবী মহতীপপ্ডিতা। ইনি আপনার পর্রী হইলেও আপনা অপেক্ষাও মহতীপগ্ডিতা, সেইজন্যাই আমি ইহাকে এই বিচারে মধ্যস্থা মানিয়াছি। আমি যে কথাগুলি বলিলামঃ তাহা আমার স্বকপোলকল্পিত কথা বা উপনিষণ্ড ও বেদান্তাদিপ্রমাণযুক্ত কথা, তাহা ইনি সত্যের অনুরোধে অবশ্যই বলিবেন। এ বিষয়ে আমার ভাণুমাত্র সন্দেহ নাই। এক্ষণে আপনি আপনার হোমাদি ক্রিয়া- কলাপের পারমার্থিকতা সংস্থাপন করুন। মগ্ডনমিশ্র ভগ্নবান্‌ শ্রীশঙ্করাচার্ষ্ের এই কথা শুনিয়া হোমাদি ক্রিয়া" কলাপের পারমার্থিকতা সংস্থাপন করিতে আরম্ত করিলেন। মগ্ডন বলিলেন, আপনার বেদান্তমত আকার করিতে গেলে ণ্যতদিন বাঁচিবে ততদিন হোমানুষ্টান করিবে” এইরূপ বেদবাক্য অপ্রামাণিক হইয়া পড়ে। এতদ্ব্যতীত হোমাদিকন্ম ত্যাগ করিয়া ঘি আপনার বেদান্তে উক্ত ব্রন্মোপাদন! করিতে হয়, "তাহা হইলে হোমাদি কর্মের শান্তর পূর্ববমীমাংসাদর্শন ব্যর্থ ও অপ্রামাণিক হইয়। পড়ে । সেইজন্য বলিতেছি যে, যজ্জোপবীত গ্রহণের পর হইতে আরম্ভ করিয়া মৃত্যুকাল ( ২৪৬ ) পরাস্ত প্রতিদিন তিনবার হোমকরাই উচিত। হোম করিলেই জীবের মুক্তিলাভ হইবে । ভগবান শ্রীশঙ্করা- চার্যা বলিলেন, হোম করিলেই মুক্তিলাভ হয়, একথা কোন প্রামাণিক শাস্ত্রের কথা নয়। আপিনি হোমাদি কর্্ম-প্রতি- পাদক মীমাংসাদর্শনের মতানুদারে চলেন। মীমাংসাদর্শন জগতের স্্টিস্থিতি প্রলয়কারী নিত্য সর্ববর্যাপী সর্বশক্তি এক ঈশ্বরের অস্তিত্বম্থীকার বিষয়ে ও আত্মতত্ব বা মুক্তিতত্ব সম্বন্ধে বেশি কিছু বলেন, নাই। মীমাংসা- দর্শন বলেন, মন্ত্রই দেবতাম্বরূপ। দেবতাস্বরূপ মন্ত্র পাঠ করিয়া অগ্নিতে ঘ্বৃতাতি প্রদান করিলে, পরে তাহার ফল লব্ধ হইয়া থাকে। মীমাংসাদর্শন যজ্ঞানুষ্টানের বিচার ও সিদ্ধান্তে পুর্ণ। উহাতে আত্মাতত ব| মুক্তি- তত্বের সবিশেষ বিচার নাই। যে শাসন জগতের পালয়িতা সংহর্তা এক ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিষয়ে বেশি কিছু বলেন নাই, সে শান্্ের ছ্বারা ত্যাগী মুমুক্ষু ব্যক্তির কোন উপকার সাধিত হয় না । সে শাস্ত্রের মত এই যে, যজ্ঞকর, জন্মান্তরে তাহার ফল পাইবে। যাহার! কল্মাম্তর কামনা! করে, পুনঃ পুনঃ জন্মমরণ-দুঃখে জর্জরিত হইতে চাহে, তাহারা "যে কিরূপ ছুঃখতোগী কঠোরজীব, তাহাও কি আবার বলিয়া বুঝাইতে হইবে? মগ্ডুন বলিলেন, হঙ্জানুষ্ঠানের পারমার্থিকতা না থাকিলে যজ্ঞামুষ্ঠানবাদী মীমাংসাদর্শনপ্রণেতা মহষি জৈমিনির ( ২৪৭ ) মত কি ত'হালে ভূল? ত্বগবান শ্রীশঙ্করাচার্যা বলিলেন মহধি জৈমিনি জগঠ্ের উপকারার্থ এই শাস্ত্র রচনাকরিয়া- ছিলেন। লোক অন্ভতানশতঃ মহস্বির অভিপ্রায় বুঝিতে না পারিয়া তাহার বাক্যে সন্দিহান হইয়া পড়ে। মহষি জৈমিনি প্রথমতঃ ব্রহ্ম হন্তশান্ত্র রচনার জন্য ইচ্ছুক হইয়া ছিলেন। কিন্তু পরে তিনি দেখিলেন যে, এই নশ্বর জগতের অধিকাংশ লোকই এশরধা-ভোগে আসক্ত চিত্ত, | শুভ ইদৃষ্টের বল না! থাকিলে ইহজন্মে বা পরজন্মে মানবের ইশ স্থখভোগ ঘটে না। পুণা কর্মমানুষ্ঠান ব্যতীত শুভাদৃষ্ট জন্মে না। স্থৃতরাং তিনি এঁশর্ষ-ক্ুখভোগেচ্ছু জনগ'ণর প্রতি কুপাপরবশ হইয়া নিজের মীমাংসাদর্শনে পুণা কর্ধা- সমূহ ও তাহার ফলগুল নিরূপণ করয়াছেন। এক অদ্বিতীয় নিরাকার মঙগলময় সর্বশক্তিমান পরমেশ্বরের উপাসনায় এবং নির্ববাণ-মোক্ষলাতে সাধারণের মতি গতি নাই ও অধিকারও নাই। ইহা দেখিয়! তিনি সুন্মন ব্রহ্ম- তান্বের শান্ত্রচনায় আর প্রয়াপী হইলেন না । নতুবা তিনি যে, পরমাতনপাদ্দে মোটেই আস্থাবান নহ্থেন, এ কথা কোন- মতেই স্বীকার করা যাইতে পারে না। কারণ, পরমা বাদে তাহার যদি আস্থা না থাকিত, তাহা হইলে তিমি এই বেদবাক্যের সাহাধা অবলম্বন করিতেন না। যরা-. “ব্রাঙ্গণগণ, বেদবচন, যন, দাঁন ও তপস্যানুষ্ঠান হারা সেই আত্মাকে অর্থাৎ পরমাত্মাকে জান্বিতে ইচ্ছা করেন”। 11২৪৮ ) এই বেদবাক্যদ্বারা ইহা উত্তম রূপে বুঝা যাইতেছে যে, আত্মজ্ঞানই মুক্তিলাভের এক মাত্র উপায়। এই বেদবাক্যে যদিও যত ও দানের কথার উল্লেখ আছে বটে, কিন্তু শেষে “তপসা” এই পদটি থাকাতে পাপনাশক তপস্যা! দ্বারা ব্রাক্ষণগণ আত্মাকে জানিতে ইচ্ছ৷ করেন, এইরূপ অর্থই এই বেদবাক্য হইতে বুঝা যাইতেছে । সেই পাপনাশক তপস্যা কি? তাহা শুনুন। নিত্য ও অনিতা পদার্থের প্রকৃতরূপে পার্থক্যন্ঞান, এহির্ক স্বখ- ভোগে ঝা মৃত্যুর পর পুনরায় এই পার্থিব স্থখভোগ ব! স্বগন্ুখভোগে বিরাগ, অন্তরিন্দ্রিয়ও বাহ ইন্ড্রিয়ের দমন, ্রহ্মচধ্যপালন, শীতোষ্চাদিসহিধুতা, আচার্ধেচর উপাসনা, দেহ ও চিত্তের পবিভ্রতাসম্পাদন, ধৈর্ধ্যাবলম্বন, জন্ম মৃত্যু জরা এবং ব্যাধিতে সদ! দোদৃষ্ি, স্ত্রীপুত্রাদিতে অনাসক্তি, পরমেশ্বরে অব্যভিচারিণী ভক্তি, সুখ ও ছুঃখ, মান ও অপমান, লাভ ও ক্ষতি, জয় ও পরাজয় এবং স্থখ্যাতি ও নিন্দায় সমভাব, নির্ভীন স্থানে বাস, যদৃচ্ছা- লাভ-সন্ভোষ, বুথাবাক্য বা মিথ্যাৰাক্য মুখহইতে নির্গত হইয়া পড়িবে, এই ভয়ে মৌনাবলম্বন, সর্বদপ্রাণীতে দয়াও অবিদ্বেষ, সর্ববপ্রাণীর সহিত *মিত্রতাভাব, নির্মমতা নিরহঙ্কারতা, ক্ষমা, সর্বদা সন্তোষ, স্থিরবুদ্ধিতা, পরমেশ্বরে চিত্ত সমর্পণ এবং তত্বজ্ঞানাভ্যাস, ইত্যাদিরূপা পাপনাশিনী অন্ঞাননাশিনী বা অবিদ্যানাশিনী তপস্ার অনুষ্ঠানই ( ২৪৯ ) মুক্তির কারণ, ইহাই এই. বেদবচনের তাতপর্য্যার্থ। বেদের জ্ঞানকাণ্ড উপনিষদের অম্তময় উপদেশ যাহারা না! পায়, তাহারা আনন্দময় মঙ্গলময় পরমেশ্বরের মহিমা বুঝিতে পারে না। তাঁহারা «সেই সর্ববশক্তিসম্পন্ন পরমেশ্বরের মহিম! না বুঝিয়! তাহার স্ষ্ট সূর্ধা চন্দ্র অগ্নি বরুণ ও বারু প্রভৃতি দেবতার শক্তিদর্শনে মুগ্ধ হইয়া তাহাদের পুজার নিমিত্ত কেবল ঘ্বৃতাদি দ্রব্য ক্ষয়করে মাত্র। জ্কান- শাস্ত্রের বা মুক্তিশাস্ত্রের কোন অনুসন্ধান রাখে না। অজ্ঞ মনুষ্যগণ সর্ব্বশক্তিসম্পন্ন পিতাকে ছাড়িয়া দিয়া অল্লশক্তিবিশিষ্ট পুত্রদিগকে লইয়াই আত্মহারা হইয়া পড়ে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলিয়াছেন, “আমিই এই জগতের পিতা । যেব্যক্তি আমাকে দুর্ববা তুলসী বিশ্বপত্র প্রভৃতি পত্র, পল্প মালতী যৃথিকা সেফালী বেলা ও চামেলী প্রভৃতি উত্তম উত্তম সুগন্ধি পুষ্প, আত্ম প্রভৃতি উত্তম ফল, এবং গঙ্গ! প্রভৃতি পুণ্য নদীর নিম্ল জল ভক্তির সহিত আমাকে প্রদান করে, আমি ভক্তের ভক্তির উপহার সেই সকল বস্তু গ্রহণ করিয়া থাকি”। যিনি এ নকল বস্তু স্থষ্টি করিয়াছেন, তাহার প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখাইবার জন্য তাহাকে সেই সকল বস্তু অগ্রে দান করিয়া পশ্চাৎ ভোগ করাই মানুষের পক্ষে ন্যায়সঙ্গত কার্য্য। সেই জন্যই গীতায় ইহা উক্ত হইয়াছে যে, “তুমি যাহ! কিছু মতকার্যা করিতেছ, যাহা কিছু ভোজন কর, যাহা কিছু (২৫০ অগ্নিতে অর্পণ করিয়। থাক, যাহ! কিছু দান কর এবং যাহ। কিছু হপশ্যা কর, ততসমস্তই আমাতে অর্পণ করিও”; যদি যত করিতে হয়, তাহ! হইলে ভগবানের নামশ্যভন কর, সম্ীর্তন-যজ্ঞ কর, তগবদিষয়ক " পাঠযজ্ঞ কর, আবণ শভদ্ত কবর, মনন-ঘজ্ঞ কর, এবং ভগবানের উদ্দেশে জগতের হিনবজ্ঞজ কর) এই জন্যই গীভায় ভগবান বলিয়াছেন যে, “যে সকল ব্যক্তি আানাতেই চিন ও প্রাণ সমর্পন করিয়াছে, মামার কথা লইয়াই পরম্পব কথোপ কথন করে, মন্য লোককে আমার তন্ত্র বুঝাইতে চেস্ট' কবে, আমার বিমই দন্ননা আলোচনা করে, তাহাতেই মহানম্তাঘ মধুর কব, তাহাতেই রত হয়, “আমাতেত সত যুক্ত এবং আমার ধ্যানেই সনদা বিমগ্র ভয়, তাহান্গাই মানার প্রকুগ ভক্ত এবং তাহাদিগতকেই আমি জ্তানুবাণ ও ভণভ্ততমাগ গ্দান করি, 'এপং তাহারাও দেই দ্ভান ও ভক্ত বাগবলে আমাকে প্রাপ্ত হয়” ভগবান শরীক ঝর এই কষ'তেই বুঝ, যাইতেছে যে, জ্বাল ও ভাক্তযোগহ তাকে পাইবার প্রকৃত উপায়। তান ও ভক্রযোগ বাতঠিবেকে কেবল শ্বাস প্রশ্থান টানিয়। যোগ কারলে কন্ব মগ্সতে শতসহআ্ মণ ঘ্বৃত ঢালিলে ভগণান পরমেম্রের চরণকমল-মধুপান কখনও ভাগো ঘটবে না। অহএব হে মণ্ডনপণ্তিত, জ্ঞান ও ভদ্ভি- যোগ শিক্ষায় মন সমর্পন কর। চিন্তশ্রদ্ধির কাধ্য কর. (২৫১ তাবে তো চিত্তশদ্ধি হইবে। চিত্ত অন্তরের বস্ত্র । বাহ কাধ্যদ্বার। অন্তঃপদাথের শুদ্ধি হইবে কিরপে? মন্তঃ- সাধনা ব্যতিরেকে অন্তঃপদাথের সম্যক সিদ্ধ হইতে পারে না। চিত্তের কাব্য না করিয়া চিত্তশ্র দ্ধর জন্য কবল মাত্র হোম করিলে কম্মিনকালেও চিত্তশ্বাদ্ধ হইবে ন;; হোমকরা যে একেবারে উচিত নয়, একথা আমি বলিতেছি না। কারণ, বণ ও আশ্রমধন্মরক্ষার জন্য গুহস্থাশ্রমরূপ দ্বিতীয় আশ্রমে [কিয়া ব্রান্ধণকে নিত্য হাম করিতে হয়। ক্দেপাঠ, হোম, অতিথিসেবা, তথ ও পুত: এই পাঁচটি ক্রিয়ার নাম ব্রহ্মধজ্ঞ। ব্রাঙ্মণকে প্রতিদিন ত্রহ্মযতত্ করিতে হয়, এবং সঙ্গ স-ঙ্গ উপনিষৎ এপ ঈশ্বরের অস্তিত্ব গ্রতপাদক দর্শনাঁদ জ্ঞানশাস্্রের মালোচনা করিতে হয়। ব্রহ্মতেজের কামনা ব্যতিরিক্ত সন্ত বৈযাঁয়ক কামনা ত্যাগ করিতে হয়। নিক্ষাম যতত্ত করাই উচিত। নিক্ষামযজ্ঞে মোক্ষ-লাভ হয়। নিক্কাম- নদ করিলেই চিত্তশুদ্ধি হয়। নতুবা গো মহিষ ও গাগের রক্তে যজ্ঞভূমি প্লবিত করিয়া চিত্তের স্কি সম্পাদন করিলে চিন্তপুদ্ধি হইতে পারে না। যঙ্জে পশুর রক্ত মাংস ও* চর্বির দুর্গন্ধ চিত্তশুদ্ধি হওয়া আসম্ভব। জ্ঞান ও ভক্তির সাধনায় চিত্বশদ্ধি হইবে। চিত্তশুদ্ধি হইলেই চিত্তস্থ সন্দেহসমূহ দূরীভূত হইবে। কামনার সহিত হ'দয়ের গ্রন্থি ছিন্ন হইলেই সন্দেহ-জাল। ( ২৫২ ) ছিন্ন ভিন্ন হইবে । পরে কর্ম্মরাশির ক্ষয় হইবে। কর্মের ক্ষয় হইলেই পরাশুপর পরমেশ্বরের সহিত সাক্ষাৎকার হইবে ।.. তাহাকে কেবল মাত্র উপনিষদ্াক্য দ্বারা জানিতে পারা যায়। বেদের প্রকৃত অর্থ ঝহারা বুবিতে পারে না, তাহার! তাহাকে কোন প্রকারেই জানিতে পারে না। জ্ভান- শান্্র চর্চা না করিলে কেবল বাহ্থ ক্রিয়াকলাপের অনুষ্ঠান করিলে তাহাকে পাওয়া যায় না। এইরূপে সাতদিন বিচার হইয়াছিল। সেই কঠিন দার্শনিক বিচার. অনৈকে বুঝিতে পারিবেন না বলিয়া এবং গ্রন্থের কলেবর অতান্ত বিস্তৃত হইয়া পড়িবে বলিয়া উহা৷ এস্থলে উদ্ধত হইল না। সাতদিন বিচারের. পর মণ্ডনমিশ্র, ভগরান শ্রীখঙ্করাচার্যের পুর্বেবাক্ত শেষ সিদ্ধান্ত শ্রবণ করিয়া উভয়ভারতীয় প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন। সেই. সময় ভগবান শ্রীশঙ্করাচার্য) :ঞ উভয়ভারতীকে জিজ্ঞাসা করিলেন) আমার এই শেষ সিদ্ধান্ত শুনিয়া আপনার কিরূপ বোধ হইতেছে? আপনি 'মধাস্থ ? স্ৃতরাং ধর্ম্মতঃ বলিবেন, আমি যাহা. বলিয়াছি হা ঠিক কিনা”? উভয়তারতী বলিলেন, “হে যতিরাজ, এমাপনি.যে.দকল শ্রুতি স্মৃতি প্রমাণ প্রদর্শন করিয়াছেন (তাহ! আপনার স্বকপোলকল্লির্ত, প্রমাণ নণ্হ্‌।'. উহা আরতি ও. প্রধান স্মৃতিশান্্রের কথা ।: সভ্যকথা ঘলিতে গেলে: ইহা বশ্থাই বলিতে হইবে: বে, জ্ঞান শান্ট্রের চর্চা রাতির়েকে আনন্বরূপ পরমাঙ্জ: পরমেশ্বরে, রিলীন হইতে, ( ২৫৩ না পারিলে জন্মমরণচক্রে ঘূর্ণনের অকথ্য ক্লেশ হইতে নিষ্কৃতিলাভ অসম্ভব। বিষয়-কামনা ত্যাগ না করিলে মুক্তিলাত অসন্তব। হোম করা ফষে একেবারে উচিত নয়, একথা! আর্মি বলি না এবং আপনিও সে কথা স্বীকার করিয়াছেন। আমি শুনিয়াছি, আপনি বর্ণীশ্রমধন্নের পুনঃপ্রতিষ্ঠ। এবং সত্যস্বরূপ জ্ঞানস্বরূপ আনন্দম্বরূপ এক শদ্বিতীয় ব্রন্ষের অস্তিত্ব-মত-সংস্থাপনের জন্য দিগ্বিজয়ে হির্গত হইয়াছেন বৌদ্ধধন্ধের এই শেষাবস্থায় বর্ণাশ্রম- ধন্মের মহাবিপ্রব ঘটিয়াছে। বুদ্ধদেবের উপদেশের নানা প্রকার অর্থ বুঝিয়া অনেক লোক এই ধর্মের নানা উপধর্থ্ম স্থ্টি করিয়াছেন এবং সেইজন্য পাপনদীর প্রবল আত বছদেশে পরিব্যাপ্ত হইয় পড়িয়াছে। ঈদৃণ দুর্দিনে এক অদ্বিতীয় পরমেশ্বরের অস্তিত্ব প্রচার এবং বর্ণাশ্রমধর্ম্নের পুনঃ প্রতিষ্ঠ। অস্তান্ত প্রয়োজনীয় হইয়াছে । মামার স্বামী মামাংসাদর্শনের মতানুষায়ী। মীমাংসা. দর্শনের মতে মন্ত্রই দেবতান্বরূপ। মন্ত্র উচ্চারণপূর্ববক বগ্সিতে আন্তি প্রদানকরিলে ন্বর্গকামী ব্যক্তি স্বর্গ পায়, পুত্রকামী ব্যক্তি পুত্র পায়, ধনকামী ব্যক্তি ধন পায়। কিন্তু ধনপুত্র!দি লাভ “করিয়া জন্ম-মৃত্যুর দায় হুইতে একেবারে নিষ্কৃতিলাত করিতে পারা যায় না। এমন কি, জন্বমেধ্যজ্ঞ করিয়া স্বর্গে গেলেও পুণ্য ক্ষীণ হইলে পুনরায় মর্ভ্যলোকে পতিত হইয়! রুষ্ট পাইতে. হয়. ২ (২৫৪ ) মামাংসাদর্শন বজ্ঞানুষ্ঠানের বিচার লইয্াই ব্যস্ত সৎ চি ও আনন্দস্বরূপ এবং জগতের অ্রষ্টী পালয়িতা এক পরমেশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করে না। স্তুতরাং উহা য্ানুষ্ঠানের শান্ত বলিয়া শ্আস্তিকশান্ত্র হইয়াও, কতকটা নাস্তিকশান্ত্রের ম্যায় মত প্রতিপাদন করে। মীমাংসাদর্শন, মন বুদ্ধি চিত্ত বা শরীর হইতে আত্মা একটি পৃথক পদার্থ, এইরূপ মত স্বীকার করে বলিয়! উহা! বৌদ্ধ ও চার্ববাক্‌ প্রভৃতি নাস্তিক-শান্ধ হইতে পৃথক হইয়া সনাতন বৈদিকধণ্্ন অনুযায়ি-শাস্্রের মধ্যে গণ্য হইয়াছে । মীমাংসাদর্শন বলেন, “এই জগতের শ্রষ্টা পালয়িতা ও সংহর্ভা পরমেশ্বরনামক স্বতন্ত্র এক অদ্বিতীয় দেবতা কেহ নাই। সমস্ত প্রাণীই নিজ নিজ শুভ অশুভ কর্মম- অনুসারে শুভ অশুভ ফল প্রাপ্ত হয়। বেদের রচয়িতা কেহ নাই। ইহা পরমেশ্বরের নিঃশ্বাস হইতে উৎপন্ন ভয় নাই। বৈদিক শব নিত্য । ইহার রচনাও নিত্য। ইহার প্রামাণ্য স্বতঃসিছ্ধ। এই জগহ"প্রবাহের আদি নাই অন্তও নাই। যেমন বীজ হইতে অস্কুর উৎপন্ন হয়, আবার অস্কুর হইতে বীজের উৎপত্তি হয়, তত্রপ প্রাণীর কন হইতেই পুনরায় কন জন্মিয়া থাকে । আবার সেই কর্ম হইতে কর্ণের উৎপত্তি হয় । মগ্ভই দেবতা । এই দেবভারাই যজ্চে নিষেদিত ঘস্্্কল এ্রহণকরেন। ্রহ্ধা' বিধুঃ প্রভৃতি দেবতারা নিজ নিষ্ধ কর্দদা অনুসারে (২৫৫ ) স্ব স্ব পদ প্রাপ্ত হইয়া থাকেন ও, এই চরাচরস্বরূপ এই জগতে স্ব স্ব কর্মফল উপভোগ করিয়া থাফেন”। বিছ্বল্মোদতরজিণী | পঞ্চমতরঙা | ২৭ পত্র।% বর্ণাশ্রমধর্মা-রক্ষাী জগ্য উহা, অত্যন্ত উপযোগী হইলেও উহ। মুক্তিপব-প্রদর্ণন করিতে নিতরাং অক্ষম । মুক্তিই পরমপুরুষার্থ। অতএব হে যতিরাজ, আপনার তিস্মৃতিপ্রমাণযুক্ত এই বেদান্তমত যে, অত্যন্ত নির্দোষ, সাহা বলাই বানুল্য। মানুষের ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রথম আশ্রম | এই আশ্রমে বেদবেদাঙগাদি অধ্যয়ন করিয়। গুহস্থাশ্রাম কূপ দ্বিতীয় আশ্রমে প্রবেশ করিতে হুয়। গৃহস্থাশ্রীমে বিবাহ করিয়। বেদপাঠ, হোম, অতিথিসেবা, তর্গণ ও পৃজাদি এই আশ্রমোচিত ধন্ম প্রতিপালন করিতে হয়। পরে “অথ প্রভুনাদিষ্টো মীমাংসকঃ স্বমতমাহ £-- দেবোনকশ্চিন্ভুবনগ্তকর্তা, ভর্তা ন হর্ভাপি চ কশ্টিদাস্তে। কন্ধানুকপানি শুভাশু চাঁণি, প্রাপ্মোতি সর্কোপিজন; ফলানি ॥ বেদন্তকর্তা নচ ফণ্চিদাস্তে নিত্যাহিশক্ধার্চনান্ নিত্যা । প্রামাণ্যমশ্মিন্‌ স্বতএব সিদ্ধমূ, অনাদিসিদ্ধেঃ পরতঃকথাতৎ | আদ্যন্তপুন্তেহত্র জগথ্প্রবাহে ক্রিয়াভবেৎকম্মরতএব অর্বা। কম্মাণি পুংসাংভবতিক্রিয়াতো বীজান্ুস্তায়তরা ন দোযঃ। ্ াগাদিকারয্যাহথতিভাগভাজো! মতা্বকা দেবগণানিরুক্তাঃ। বাদয়ঃ কাধ্যবশেন ভোগং, বা রা টা / বিধবপ্নোষতরজগিজী! পঞগন্তর্গ। হধপত্র। ] ( ২৫৬ ) বাদ্ধক্য উপস্থিত হইলে পুত্রের উপরে এই আশ্রমের ধর্মমরক্ষার ভার অর্পণ করিয়া স্ত্রীর সহিত বনে--তপোবনে প্রস্থান করিতে হয় এবং মুনির ন্যায় তথায় বানপ্রস্থধন্ম প্রতিপালন করিতে হয় । এই বানপ্রস্থ-আ শ্রমই মানুষের তৃতীয় আশ্রম। তথায় সন্ত্রীক ফল মুল আহার করিয়া আরণ্যকশাস্্--_-উপনিষৎশান্ত্র আলোচনা করিতে হয়, তদনুষায়ী কাধ্য করিতে হয়, আচরণ করিতে হয়। এই শান্্রমালোচনা ও সেই শাস্ত্রোন্ত নিয়ম-প্রতিপালনরূপ উপায় দ্বারা বুদ্ধি স্ুমার্জজিত হইলে ভিক্ষু বা যতির আশ্রমগ্রহণে অধিকার জন্মে। ইহা মানবের চতুর্থ আশ্রম । এই আশ্রমের ধণ্ম প্রতিপালন করিলে মানুষের অজ্ভান-অন্ধকারক্ূপ আবরণ তিরোহিত হয়, জীব ও ব্রক্গের তেদবোধ তিরোহিত্ত হইতে আরম্ত করে। উহাদের এঁক্যন্ভানের উদয় হইতে আরম্ত হয় এনং পরে এ জান সাধনার বলে নিত্যমুক্তম্বরূপ পরমাত্মায় লীন হইতে পার! যায়--নিজের যধার্থম্বরূপে অবস্থিত হইতে পার! যায়। এরূপে অবস্থিত হইলেই মানুষ মুক্ত হইয়া যায়। আর দে জন্মগ্রহণ করে না, আর সে মরে না। মানুষ যদি কেবল গৃহস্থাশ্রমে থাঁকিয়া নিত্য হোমই করিতে থাকে, তাহা হইলে আমাদের সনাতন ধর্শান্ত্ে বানপ্রস্থ ও যতি-মাশ্রমের ব্যবস্থা হইল কেন ? ভারত বর্ষে গৃহস্থাশ্রমই ফ্দি একমাত্র. আশ্রম হইত, তাহা [২৫৭ ) হইলে শাসক বানপগ্রস্থ ও যতি-আশ্রমের ব্যবস্থ! করিৰার. কোন প্রায়গ্নই ছিল না। খধিগণ- কেবল মান্তর গুহস্থাশ্রমের বাবস্থ। প্রণয়নকরিলেই পারিতেন ৷ লোকের হিতের জন 1।রি প্রকাক্জ আশ্রমের চারিপ্রকার ভিন্ন ভিন্ন ধণ্ম উল্ত হংয়াছে। পুর্ববকালে সাঙান্য গৃহস্থের কথা তো দুরের কথা, স্বয়ং সআ্রাট্‌ পর্ধীস্ত বাঞ্ধকো - গৃহস্থ শ্রমের মায়া ত্যাগ এরিয়। সম্ত্রাজ্ীর সহিত বনে--তপোঁবনে মুনির "ম্যায় গানকরিতেন। সম্রাট দিলীপ নিজের পুক্র রঘুর হস্ত ৬রতসাঞজজাজ্যের ভার সমর্পণকরিয়া সম্রাজ্ঞী স্দক্ষিণার সাঠৃত বলে গিয়া বানপ্রস্থধন্মী অবলম্বনকরিয়া- ছিলেন। ব'প্রস্থধঙ্মী পালনকরিয়া চিনশুদ্ধ সম্পাদন করিতে হয়। পরে াশ্রমত্রয়ের কর্ম ত্যাগকরিয়৷ শিখাধজ্ঞোপব।ত|দি ত্যাগ করিয়া যতিধন্ত্ন অবলম্ঘন করিতে হয়। বেদ লেন, “যাহার প্রথম ব্রক্ষচর্ধ্যাশ্রমেই বৈরাগ্য জন্মে, সে ব.ক্ত গৃহস্থাশ্রমাদি গ্রহণ না করিয়া একে. বারে ত্যাগধর্্ী বা বতিধর্্ম অবলম্বনকরিতে পারে” । স্তরাং গ্ুংস্থাশ্রম গ্রহণকরিয়া মৃত্যাকাল পর্যন্ত হোমই করিত হইবে, এরূপ একটা নিয়ম থাকিলেও সকলের পাণ্চ উহা চলিতে পারে না, এবং শান্সেরও এরূপ অন্ভতায় নয়। কারণ, বেদ বলিয়াছেন, “যখনই, যে আশ্রমে মান্ুধের বৈরাগা জন্মিবে। তখনই মানুষ ত্যাগ্রধন্ম অব্লঙ্ম করি রাজ, জ্ঞানযুক্ত হ তং ৮] 31 ৮ ) রি ৮ রা এ ০০ ঠা” % এ (২৫৮ ) তক্তিই ঈশ্বরকে পাইকার প্রধান উপায়, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। ' অতএব আপনার কথাই সত্য। আপনার একটি ক্থাও অসার নহে। আপনার কথার যুক্তিমত্তা-দর্শনে আমি অত্যন্ত গ্রীন হইয়াছি। আপনায় নুযুক্তিপুর্ণ বিচার শুনিয়া আমি অতিশয়. সন্ত ইইয়াছি। এ বিচারে আপনারই জয় হইয়াছে” । শ্রীমতী উভয়- ভারতীর মুখপন্ম হইতে এই শেষ.কথাটি নিংস্যত হইবামাত্র চতুদ্দিক্‌ ভইতে ভগবান্‌ শ্রীশঙ্করণচাধ্যের উপর পুপ্পবৃষ্টি হইতে লাগিল । পাঠক ও পাঠিকাগণের পাছে ধৈর্্য- টাতি হয়, এই বিবেচনায় উভযের কঠোর দার্শনিক বিচার এস্ঘলে স্ববিস্তৃতভাবে বর্ণিত হইল না। অন্যান্য লোক- দিগের দার্শনিকবিচারসময়ে যেরূপ কোলাহল হয়, সগর্বব বাকা উচ্চারিত হয় এবং বাগাড়প্বর ও বিশৃঙ্খলা ঘটে, এই বিচারে সেরূপ ব্যাপার হয় নাই। সাতদিবস এই বিচার হইয়াছিল। প্রত্যেকদিন প্রাতঃকালে বিচার আরব্ধ হইয়। মধ্যাহ্নকালে থামিত। প্রথমদিন বিচার" শেষে সভাভঙ্গ হইলে ভগবান্‌ শ্ত্রীশঙ্করাচার্ধ্য স্বস্থানে সশিষ্য গমনোদ্যত হইলে মগ্ডনমিশ্র স্বগুহে তাহাদিগকে ভোজনকরাইবার জন্য অতিশয় “আগ্রহ প্রকাশকরিয়া- ভিলেন, কিন্তু: ভগবান্‌ শ্ীশঙ্করাচার্য্য প্রথমতঃ তাহার বাটাতে ভোজনকরিতে অনিচ্ছা প্রকাশরুরিয়াছিলেন। পরে, উভয়ভারতীর. সনির্ববন্ধ অনুরোধে তিনি ভোজন ( 5১৫৯ করিতে স্বীকারকরিয়াছিলেন। তিনি ঈদুশী বিদুষী সাধবী-মহিলার প্রার্থনা প্রত্যাখ্যানকরিতে পারেন নাই। শেষদিনের. বিচারে তগবান্‌ শ্রীশঙ্করাচার্ধা বেদবাক্যের প্রকৃতঅর্থ-ব্যাখ্যাক্জ্প কুষ্ঠীর দ্বারা মণ্ডনমিশ্রের কোমল- কমলতুল্য যুক্তিগুলিকে, . খণ্ড খণ্ড "করিয়া কাটিয়া কেলিলেন। .. কদলীবুক্ষ যেরূপ প্রবল বাতাত্থারা আহত হইয়! ধ্বংস প্রাপ্ত হয়, তত্রপ, মগুনের হোমাদিকম্ের সমর্থক অপ্রবল *অগার, প্রমাণগুলি প্রীশঙ্করাচার্যোর উপনিষণ্ ও বেদান্তের প্রমাণ ও যুক্তির দ্বারা ব্যাহত হইয়া [বধবস্ত হইয়াভিল। মগ্ন, বিচারে পরাজিত হইয়া পত্তী উভযুভারন্রীর মুখের দিকে দৃঠিপাত করিলেন । উভয়- ভারতী বলিলেন, দপুজ্যতম ম্বামিন্‌, মহাত্। শঙ্কাচার্য্যই এ বিচারে জয়ী হইয়াছেন, ইহাষ্ট আমার মত”। তখন মগ্ডন বলিলেন, “আমিও ইহা উত্তমরূপে বুঝিতে পারিয়াছি এবং আমি পরাজিত হইয়াছি, এ কথা আমি স্বীকার করিতেছি”। এই বলিয়া তিনি ভগবান্‌ শ্রীশঙ্করা চার্য্ের চরণকমলোপরি সাফীঙ্গ প্রণিপাতপুর্ধবক নিবেদন করিয়া বলিলেন, “প্রভো, আমি এক্ষণে আপনাকে চিনিতে পারিলাম। আপনি অঙ্জ ও বিষয়তভোগমুগ্ধ নরনারীগণকে উদ্ধার করিবার জন্য মানবদেহ ধারণ করিয়াছেন । এক অদ্বিতীয় পরম্ষেশ্বরের মহিমা বুঝাইবার অই ধরাতলে' ্রাঙ্মাগকুলে জন্মিয়াছেন। আপনি-মর্ভীয়ুলাঁকে ( ২৬০ আবিভ্‌ ত না হইলে ধক্‌ য্জুঃ ও সাম, এই তিন বেদের মস্তকম্মরূপ তিনটি বাক, নাস্তিক এবং বৌদ্ধদিগের গ্রলাপ- বাক্যরূপ অন্ধকূপে পতিত হইয়া এতদিনে লয় প্রাঞ্চ হইত। এই তিনটি বাক্য বথা৮-“আত্মা বা ইদম্‌ এক এব অগ্র আসীৎ।১। ব্রহ্ম বা ইদম্‌ অগ্র আসীৎ।২। একমেবাদ্বিতীয়ম্” ৩। আপনি বেদের রক্ষকরূপে ধরাতলে অবতীর্ণ না হইলে উহারা এতদিনে বেদের চরণ তগ্ন করিয়া দ্িত। আমি এতদিন, পর্যন্ত মোহ ও সপ্াবস্থায় ছিলাম। অদ্য জাগরিত হইলাম । আপনি 'সামাকে ক্ষমা করুন । আমার প্রতি প্রসন্ন হউন । আপনার শ্ীচরণকমলের মধুপানে আমার আসক্তি হউক। আপনার ন্লীচরণকমলে তক্তিই আমার কল্পবুক্ষ। আপনার শ্ীচরণ- কমলবন্দনাই আমার নন্দনকানন | আপনার গুণস্ত্রতিই আমার মন্দাকিনী। আপনার শ্রীচরণসমীপে বাসই আমার স্বর্গবাদ। অতএব আমি, স্ত্রীপুত্রাদি ও গৃহধন- বত্বাদি এবং গুহস্থাশ্রমোচিত হোমাদিকম্্ী পরিত্যাগ করিয়া আপনার চরণকমলের শরণ লইলাঘ। শরণাগত- বাক্তিকে রক্ষা করুন। আমাকে উদ্ধারকরুন। আমাকে অনুগ্রহপর্ববক যতিধর্মে দীক্ষিত কক” । মগ্ডন এইরূপ যতিধর্্ন-গ্রহণের ইচ্ছ! প্রকাশ করিলে ভগবান্‌ শ্রীশন্করা- ারধ্য. উ্যয়ভারতীর প্রতি দৃষ্টিপাত কর্ধিলেন। উভয়- তারতী বলিলেন, “হে যতিরাজ, আমি আপনার মনোগভ (২৬১৯ ভাব বুঝিতে পারিয়াছি। আমার স্বামী আমাকে পরিত্যাগ করিয়া সন্ন্যাী হইলে আমার মনে ছুঃখ হইতে পারে! কারণ, স্ত্রী বর্তমান থাকিতে পতি সম্ন্যালী হইতে ইচ্ছুক হইলে স্ত্রীর অনুমতি লইণ্ডে হয়। নতুবা সন্ত্রীক বানপ্রস্থ ধন্ম অবলম্বন করিতে হয়। আমার স্বামীর সন্যাসধশ্ম- গ্রহণ বিষয়ে আমার কোন আপত্তি আছে কি না, তাহ। তাবগত হইবার জন্য আপনি আমারপ্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া- ছেন। আমার স্বামী সন্ন্যাসধন্মম-গ্রণে ইচ্ছুক হইয়াছেন দেখিয়া আমি মণুমাত্র ছুঃখিত হইনাই। কারণ, প্রথমতঃ ইনি আপনার সহিত বিচারে পরাজিত হওয়ায় নিন্ত প্রতিজ্ঞানুসারে এক্ষণে সন্নাসুধশ্্ম গ্রহণ করিতে বাধ্য। দ্বিতীরতঃ, এই জন্মে আমার অনৃষে যাহা যাহা ঘটবে, তাহা আমি শৈশরে এক মহাত্মার নিকটে গুনিয়াছিলাম। একদা বাল্যকালে আমি আমাদের বাটীতে আমার জননীর নিকটে বসিয়াছিলাম। এমন সময়ে জটাশ্মশ্রধারী, গৌরিকবসনপরিধায়ী, সূষ্্যসদূশ তেজন্বী, দীর্ঘললাট, বিশালনেত্র, ,এক ্রদ্ষচারী মহাত্বা আমাদের বাটাতে উপস্থিত হইয়াছিলেন। . আমার মাতা! তাহাকে যথোচিত ঝভ্যর্থনা করিয়া আসন: প্রদান করিলেন এবং তথ পরি বমিতে বলিলেন। এই মহাত্মা আসনে বঘিয়া আমারপ্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপকরিয়া ক্ষণকাল নিস্তব্ধ হইয়া রহিলেন। . আমার মাতা ভবিষ্যতে আমার জীবনে কি (২৬২ ) কি ঘটনা ঘটবে, তাহা তাহাকে জিজ্ঞাস! করিলেন । তিনি যাহা যাহ! বলিয়াছিলেন, সেই সমস্ত ঘটনাই আমার জীবনে ঘটয়াছে। বাঠা কিছু অবশিষ্ট আছে, তাহাও অবশ্যই ঘটবে। ভিনি বলিয়াছিলেন; এক মহাত্মা যতিপ্রবরের সহিত আমার স্বামীর তুমুল শাস্ত্রীয় বিচার হইবে। সেই বিচারে আমার স্বামা পরা্িত হইবেন এবং সেই পরাজয়ে তাহার জঙ্ঞাননেত্র উন্মীলিত হইবে এবং পরে তিনি গৃহস্থাশ্রম পরেত্যাগকরিয়া সন্ন্যাসধর্থা অবলম্বনকরিবেন। এবং ভক্তবমল সেই যতিরাজ তীহাকে যতিধর্ট দীক্ষিত করিবেন? । এই কথা বলিয়াই দেই মহাস্ম। আমাদের গৃহ 'হইতে সহসা চলিয়াগেলেন। আমার মাতা তাহাকে ভোজনকরাইবার জন্য যখেষ্ট চেষ্টাকরিয়াছিলেন, কিন্তু ঠিনি আর কোন কথা ন! কহিয়া প্রস্থানকরিলেন। তাহার মেই কথানুগারে এক্ষণে আমি দেখিতেছি যে, আমার স্বামী আপনার শিহ্য হইতে বাধ্য । উক্ত মহাপ্রভাব মহাত্মার কথা কখনই মিথ্যা হইবে না। তিনি যাহা যাহা বলিয়াছিলেন, তাহ! ঠিক ঠিক সমস্তই ঘটিয়াছে। এ ঘটনাটিও অবশ্যই ঘটবে” । উয়ভারতীর এই কথা শেষ হইলে মণ্ডনের নয়নযুগল, হইতে আনন্দাশ্রুবর্ষন হইতে লাগিল। তিনি পুষ্প মালা ও চন্দন দ্বারা ভগবান শ্রীশঙ্করাচার্যের চরণফমল পুজাকরিয়। বলিতে লাগিলেন, “হে প্রভো, আমার শরীর জমায় গৃচ ( ২৬৩) এবং আমার গৃহে বাহা কিছু আছে, সমন্তই আপনার শ্রীচরণে মদর্গণকরিলাম”। অনন্তর উ্তয়ভারতী, আচার্ধা প্রভৃতকে বলিতে লাগিলেন, «হে ভগবন্‌ যতিরাজ, আপনি পর্বববিদ্যার অধীশ্বর। পাপী তাপী ও অন্দর্নগণের উদ্ধারার্থ ও পরিত্রাণার্থ এইযুগে অবতীর্ণ হইয়াছেন । মামার স্বামী আদা পরিত্রাণলাভের আশা-আলোক প্রাপ্ত হইলেন এবং আমিও প্রাপ্ত হইলাম | আপনি আমার স্বামীকে কৃপাপূর্ববক বতিধান্মা দীক্ষিত করুন। এবং মামিও এই কোলাহলপূর্ণ লোকালয় পরিত্যাগপুর্ববক নির্জন শান্তিপূর্ণ তপোবনে পরমেশ্বরের আরাধনায় শিষুক্ত হইতে ইচ্ছাকরিতেছি”। ভগবান ্রীশক্করাচার্য্য বলিলেন, “হে দেবি, আপনি বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী সাক্ষাৎ সরস্বতী । জড়সদূশ অজ্ঞগণের হিতার্থে এই যুগে মানবীরূপে ধরাতলে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন। আপনি লোকালয়ে না থাকিলে কিরূপে লোকহিতসাধন হইবে? সকলেই যদ্দি লোকালয় ত্যাগকরিয়। নির্জন তপোবনে গমন করে, তাহ! হইলে অজ্ঞ পাগী তাগীদিগকে পার- লৌফিকশান্ত্রজ্ঞান বিতরণকরিয়া কে. উদ্ধার করিবে? এখনও আপনার, লোকহিতসাধনরূপ কর্তব্য অবশিষ্ট আছে. : এখনও উহার শেষ হয় নাই। আমি বহুস্থালে। বু মঞ্ঠ. নিল্মাগকরাইয়ছি। তন্মাধ্যে. টারিটিত মঠই (৬ ২৬৪ ) পুরীধামে এবং বদরিকাশ্রমে চারিটি : মঠ স্থাপন করিয়াছি। শঙ্গেরী-মঠই সর্বপ্রধান। আমার ইচ্ছা আপনি এ শৃঙ্গেরীমঠে বেদান্ত ও উপনিষদাদি শাস্ত্রে সু্মতাতপ্যাবিশিউ অমূলা উপদেশসকল মুমুক্ষু জন- গণের নিকটে প্রচারকরিয়! ও তথায় সর্ববসাধারণ-কর্তৃক পুজিত হইয়। মঠের অধিষ্ঠাত্রী দেবতারূপে বিরাজমানা হউন। অদ্য হইতে আপনার নামানুসারে শৃঙ্গে রীমঠ “জারদাপীঠ, এই নামে অভিহিভ হুউক। আপনি ভারতী, সরসবাণী, সারদা । অতএব আপনার নামানু- সারেই শৃঙ্গেরীমঠকে অদ্াা আমি “সারদাপীঠ৮” এই মাখ্যা প্রাদানকরিলাম” ৷ উভয়ভারতী এই-কথ! শুনিয়া বলিলেন, “হে যতিরাজ, আপনার যদি এইরূপ অভিপ্রায় হইয়া থাকে, তাহ! হইলে মামি তথায় যাইতে স্বীকৃতা হইলাম” । অনন্তর মগুনমিশ্র, দক্ষিণাগ্রি, গাহপত্য ও আহবনীয়লামক তিনটি অশ্ি এবং সাংসারিকবাসন। বিসর্জনদিলেন। আচার্যযপুজাপাদ, অধ্যাত্বিক আধি- ভৌতিক ও আধিদৈবিকনামক ত্রিতাপের বিনাশক ''তব্বমপি' এই বৈদিক মন্ত্র মগ্ডনমিশ্রের কর্ণে প্রদান করিয়৷ ও তাহার অর্থ বুঝাইয়াদিয়া তাহাকে মন্ন্যাসধশ্টে দীক্ষিত করিলেন। .এই মন্ত্রের. অর্থ এই যে, অগ্নিহইতে যেমন স্ফুলিক্ উৎপন্ন: হয়, তন্রপ তুমি;সেই সর্বব্যাপী সর্বশক্তি সর্বজ্ঞ -পরমাত্বা গীরমেশ্বর হইতে উৎপন্ন হইয়াছ। (২৬৫) অতএব তুমি তীহারই অংশ। তীহাহইতে অভিন্ন। তুমি দেহ ও ইন্জ্রিয়াদির সহিত যুক্ত হইয়া জীবনামে অভিহিত হইয়াছ এবং নিজকে ক্ষুদ্র বলিয়৷ মনেকর। সেই ভূমা অর্থাৎ সর্বব্যাপী পরমা হইতে নিজকে অন্ভ্তানবশতঃ পৃথক্‌ বলিয়া মনে কর। ভূমা পরমাত্মা ব্রাহ্মণ নয়, ক্ষত্রিয় নয়, বৈশ্য নয়, শূত্র নয়, দেহ নয়, ইন্দ্রিয় নয়, স্থুল নয়, কূশ নয়, গৌর নয় এবং কৃষ্ণ নয়। পরমাত্মা স্বচ্ছদপণস্বরূপ। *নিতাম্বরূপ, জ্ঞানস্বরূপ ও আনন্দ স্বরূপ । তখন তিনিই তুমি এবং তুমিই তিনি। তখন তাহাতে ও তোমাতে কোন ভেদ থাকিবে না। কণ্ছে হার বিদ্যমান থাকিতেও যেমন কোন ব্যক্তি ভ্রান্তিবশতঃ আমার হার কোথায় গেল ? আমার হার কে চুরি করিল? আমার হার কে লইল? এই বলিয়া ইতস্ততঃ অনুসন্ধান করিয়া থাকে এবং এ হার ন| পাইয়৷ কষ্ট অনুভব করে, পরে কোন হিতৈষা ব্যক্তি এ ভ্রান্ত ব্যক্তির গলেই তাহার সেই হার দেখাইয়া দিলে এ ভ্রান্ত ব্যক্তি, “আঃ আমার হার পাইলাম," এই বলিয়! স্থখ মল্পভব করে, তন্রপ জীব, বিষয়বাসনামুগ্ধ ভ্রান্ত ও আত্মহারা হইয়৷ নিজের পরমাত- স্বরূপত। বিস্যৃত হইয়। বৃধা কষ্ট অনুভব করিলে কোন বেদান্তবিৎ আচার্য পরহিতেষী মহাত্মা কর্তৃক প্রবোধিত হইয়। নিজের ষথার্থরূপতা উপলব্ধি করিতে পারে এবং উপলব্ধি করিয়া, অপার আনন্দপাগরের ও “প্রজ্ঞা-* ৬০) ( ২৬৬ ) সাগরের সমান হইয়া যায়” | মগুনমিশ্র শ্রীশঙ্করাচার্য্যের নিকট হইতে এই বৈদিক মহামন্ত্রের সারার্থ শ্রবণ করিয়া বলিলেন, “হে যতিরাজ, আপনার অমূল্য অমৃতময় উপদেশ- শ্রবণে আমার হৃদয়ে জ্ঞানালোকু উদিত হইল ও. আমার অজ্ঞান-অন্ধকাররাশি অপস্থত হইল। অদ্য আমার জন্ম সফল হইল। তপস্যা সফল হইল” । মগুনমিশ্র সন্নাসধন্ন গ্রহণকরিয়া স্রেশ্বরাচার্ধ্য এই নাম গ্রহণ করিলেন এবং গৃহস্থাশ্রমের মগ্ডনমিশ্রু এই নাম পরিত্যাগ করিলেন। পরে তিনি নর্ম্মদানদীতীরে একটি শান্তিপূর্ণ আশ্রম নিন্মাণ করাইয়া মুক্তিপথে অগ্রসর হইবার নিমিত্ত তথায় উপনিষত ও বেদাস্তাদিশান্্র আলোচনা করিতে লাগিলেন। তাহার পত্রী “শ্রীমতী উভয়ভারতী দেবীও আচারযযপৃজ্যপাদের পূর্বেবাক্ত উপদেশ অনুসারে বেদান্ত ও উপনিষদাদি জ্ঞানশাস্ত্রের প্রচার দ্বারা জগতের কল্যাণ- লাধনার্থ দাক্ষিণদেশে শৃ্গেরীমঠে গমন করিলেন? ভগবান শরীশঙ্করাচার্ধ্য মহারাষ্ট্র প্রভৃতি দেশে বেদান্তমত-প্রচারার্থ শিল্তুগণসমভিব্যাহারে বহির্গত হইলেন। তিনি মহারাষ্ট প্রভৃতি দেশে অদ্বৈতমত প্রচারকরিয়৷ সহস্র সহত্র লোকের হৃদয়ে এক পরমেশ্বর অন্তিত্ব-বিশ্বাস স্থাপন করিয়া শ্রীশৈলনামক 'পর্ববতে গমন করিলেন। ০০১১১ ( ২৬৭ ) লীলাবতী। প্রাচীনকালে ভারতীয় আধ্যমহিলারা যে, কেবলমাত্র ব্যাকরণ, সাহিত্য, পুরাণ, ধর্ম্শান্ত্র, বেদ বেদান্ত ও অন্যান্ত বর্শনশান্ত্র অধ্যয়ন ও অধ্যাপনকরিতেন তাহা নহে, কিন্তু অতি সুক্মম দুর্ববাধা কঠিন জ্যোতিষশান্ত্রেও খ্রন্থরচনা পর্যন্ত মহাকঠিন ব্যাপার সম্পাদনকরিতে পারিতেন। ভারতে, ইতিহাসসংরক্ষণবিষয়ে ভারতীয় পণ্চিতদিগের অবহেলা-বাহুল্য বশতঃ এ সকল বিদছুষী মহিলার ইতিবৃত্ত পাওয়া ছুর্ঘট হইয়াছে। লীলাবতী সংস্কতপদ্যে জ্যোতিষশাস্ত রচনাকরিয়! সভ্যজগতের শিক্ষাভিমানী পুরুষসম্প্রদায়কে বিস্ময়সাগরে * নিমগ্রকরিয়া , গিয়াছেন। ন্যায় সাংখা, পাতঞ্জল, বেদান্ত, মীমাংসা! ও বৈশেষিক, - এই ছয়টি দর্শন ও অন্যান্য শান্তর পরস্পরের সহিত পরস্পরের মতভেদ নিবন্ধন বিবাদ-বিদম্বাদে.পরিপুর্ণ। বেদান্ত সাংখ্যেরমত খগুন করে, ম্যায় বেদান্তের মত খণ্ডন করে, এইরূপে অন্যান্য সকল শান্্রই পরস্পরের মত খণগ্ডনকরিয়া স্ব স্ব মতের প্রাধান্ত সংস্থাপনকরিয়াথাকে। “নানা মুনির নানা মত” । ধীহার বোধশক্তি বিচারশক্তি রঠনাশক্তি যত উচ্চ লীমা লাভকরিয়াঁছে, তিনি.তাহাই ব্যক্ত করিতে সবিশেষ চেষ্টা করিয়াছেন। স্ৃতরাং কোন্‌ মতটি যে, প্রক্কত এবং নির্দোষ, তাহা সিদ্ধান্তকরা স্বল্লাযুঃ স্বশ্পবুদ্ধি আধুনিক জনগণের শক্তির অতীত। অবশ্য দর্শনশান্ত্রের (২৬৮ ) মধ্যে বেদান্তমত যে, সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, নির্দোষ ও মহা- সন্তোষজনক, তাদ্বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। কারণ, ইহা ঈশ্বরনিঃশ্বান হইতে উৎপন্ন উপনিষৎশান্ত্ররূপ মহাদৃ় ভিত্তির উপরে স্থুপ্রতিষ্ঠিত | যাহারা ঈদৃশ পবিত্র বেদান্ত" মত খগুডনকরিতে পারে, তাহার! স্বর্গের নন্দনকাননের কল্পবৃক্ষের শাখা ছেদনকরিতে পারে। জ্যোতিষশাস্ লইয়া কেবল মাত্র বুথা বাদ প্রতিবাদ করিলে চলিবে না। কারণ, জ্যোতিষশান্ত্র বিচারকরিয়া প্রান্যক্ষ নির্দোধ কল প্রদর্শনকরিতে হয়। যিনি গণনা করিয়া প্রতাক্ষ নির্দোষ ফল দেখাইতে পারিবেন তাহার কথাই সকলে মানিবে। সেই গণনা ঠিক হইল কি না, চন্দ্র ও সূর্য্য তাহার সাক্ষ্য প্রদান করিবে। মানুষ তাহার সাক্ষী হইতে পারে না। যিনি অতিসুন্ষম কঠিন স্ফ্টগণনা করিয়া চন্দরগ্রহণ বা সূধ্যগ্রহণের ঠিক সময় নির্দেশ করিতে পারিবেন, তাহার কথাই আপামর সাধারণ শিরোধারধ্য করিবে । সুতরাং জ্যেতিষশাস্ত্রের প্রামাণ্যসংস্থাপনবিষয়ে স্বয়ং চন্দ্র ও ও সূর্য্য সাক্ষ্য প্রদানকরিয়া৷ থাকেন । অতীতকালে যাহা ঘটিয়াছে বা ভবিষ্যাতে যাহা ঘটিবে, তাহা বর্তমান কালে গণনাকরিয়। ঠিক ঠিক বলিয়। দিতে হইবে । বুথা তর্ক ব1বিবাদ করিলে চলিবে না। দ্রষ্টা বিবাদ শুনিবে না। সত্য সত্য ফল দেখিয়া লইবে। সত্য ফল দেখাইতে হইলে সূক্ষ্ম কঠিন গণনা জানা চাই । এই সুক্ষ দুর্বেরাধ্য ( ৯৯৯) জ্যোতিষশান্ত্রে লীলাবতীনান্্ী ভারতীয় আধ্যমহিলা সংস্কৃত- পদ্য রচনাকরিতে পারিতেন। জ্োতিষে পদ্যরচনা ঘে, কিরূপ কঠিন ব্যাপার, তাহা পৃথিবীর সমগ্র জাতিই বুঝিতে পারেন। শান্ত্ররষ্টন[বিষয়ে অন্যাদেশে যাহা অতান্ত অসম্ভব, ভারতে তাহা সম্ভব। ভারতে অভিধানশাস্ত্- পর্যান্ত পদো রচিত। ভারত-মহিলার জ্যোতিষে সংস্কৃত- পদারচনা এক অদ্ভুত ব্যাপার । ১০৩৬ শকাব্দে সহ্য- পর্বতের নিকটবত,বিজ্ঞল্বিড়নামক গ্রামে ভাস্করাচার্য্য- নামক এক ভাক্করতুল্য মহাপ্রভাব পণ্ডিত জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। তিনি জ্যোতিষশান্ত্রে মহাপগ্ডিত চিলেন। তিনি এই শাস্ত্রে অনেক উত্কুষ্ট গ্রন্থ রচনা করিয়াছেন। তাহার পর়ীর নাম শ্রীমতী লীলাবতী দেবী । প্রাচীনকালের এই একটি সুন্দর রীতি দেখিতে পাওয়া যায় যে, পতি বিদ্বান হইলেই পত়ীও বিদছুষী হইতেন। লীলাবতী দেবী জ্যোতিষে অদ্ভুত পপণ্ডিতা চিলেন। ভাস্করাচার্ধ্য লীলাবতীকে যখন প্রগাটপ্রেম- ব্প্জক শব্দে সন্বোধনপুর্ববক জ্যোতিষ-শান্ট্রে কোন একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসাকরিতেন, তখন লীলাবতী পদ্যে এ প্রশ্নের উত্তর দিতেন। তখন ্াক্করাচার্্ের হৃদয়ে যেকি এক অপুর্ব অগাধ আনন্দসাগর উছ্বেলিত হইত, তাহা বর্ণনাতীত। পত্ীরপ্রতি এই প্রগাঢ় প্রেমের স্মৃতিচিহ্নকে চিরস্থায়ী করিবার জন্য ভাস্করাচার্য্য তাহার একটি গ্রম্থকে (২৭ ) পত্রীর পবিত্র নামে অভিহিত করিয়াছিলেন । সেই গ্রন্থের' নাম লীলাবতী। গহারাষ্ট্রদেশে নাসিকের নিকটবস্তী একটি স্থানে ভাউদাজী বৈদারাজনামক একটি পণ্ডিত একটি তাত্রফলক পাইয়াছিলেন। তাহাতে কয়েকটি শ্লোক লিখিত আছে । সেই শ্লোকগুলির অর্থ এই যে, “শাগ্ডিল্যগেত্রে ত্রিবিক্রমনামক এক মহাপপ্ডিত জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন । তিনি নানাশান্ত্রে মহাপপ্তিত ছিলেন বলিয়া “কবি- চক্রবর্তী” এই উপাধি লাভ করিয়া, ছিলেন। "উহার পুত্রের নাম ভাক্ষরভট্ | গুণগ্রাহী ভোজরাজ ভাস্কর- ভটের অসাধারণপণ্ডিত্যদর্শনে বিমুগ্ধ হইয়া ইহাকে “বিদ্যাপতি” এই উপাধি প্রদান করিয়াছিলেন । ভাস্কর- ভট্টের পুত্রের নাম গোবিন্দপঞ্চিত। ইনি জ্যোতিষশান্তে অদ্দিতীয় পণ্ডিত ছিলেন বলিয়া “সর্বজ্ঞ” এই উপাধি লাভ করিয়াছিলেন। গোবিন্দসর্ববজ্জের পুত্রের নাম প্রভাকর। ইনি ও অত্যন্ত প্রভাবশালী পণ্ডিত ছিলেন । প্রভাকরপগ্ডিতের পুত্রের নাম মনোরথ পণ্ডিত। ইনি সঙ্জনগণের পূর্ণমনোরথস্বরূপ ছিলেন । মনোরথ পগ্ডিতের পুত্রের নাম মহেশ্বরাচার্ধয ৷ মহেশ্বরাচার্য্যের পুত্রের নাম ভাক্করাচা্য | ইহার ন্যায় অদ্বিতীয় জ্যোতির্বিবিত অদ্যাপি কুত্রাপি জন্মগ্রহণ করে নাই। ইনি পগ্ডিতকুলচুড়ামণি সর্বববিদ্যাবিশারদ ছিলেন বলিয়া “কবীশ্বরঃ এই উপাধি লাভ করিয়াঝিলেন। ভাসম্করাচার্ধ্যকবীশ্বরের শিষ্ুগণের ( ২৭১ ) সহিত শাস্ত্রীয় বিচারে এ জগতে কোন ব্যক্তি জয়ী হইতে পারে নাই। তাহার কীন্তি"বিশ্বব্যাপিনী । তাহার পুত্রের নাম লঙ্গমীধর আচার্য । লক্ষমীধর আচার্ষ্ের পুত্র চঙ্গদেব আচার্য । অনেকেই অন্ভ্রাতবশতঃ লীলাবতীকে ভাক্ষরাচাধ্যের কন্যা বলিয়া মনে করেন। এমনকি, কেহ কেহ স্ব স্ব রচিত পুস্তকেও এ কথা লিপিবদ্ধ করিয়াছেন। ইহা যে সম্পূর্ণ ভ্রম, তাহাতে আর কোন সন্দেহ নাই । লীলাবতী গ্রন্থখানি আদ্যোপান্ত পাঠ না করাই এই ভ্রান্তির কারণ। সম্পর্ণরূপে লীলা- বতী গ্রন্থথানি পাঠ করিলে অনেকের এইরূপ ভান্তি জন্মিত না ।, লীলাবতী যে, ভাস্করাচীধ্যের পত্রী, তাহা নিম্নলিখিত প্রমাণদ্বারা স্থিরীকৃত হইতেছে £-_লীলাবতীগ্রন্থে “সখে নবান1ঞ্চ” ইত্যাদি শ্লোকে ভাস্করাচার্ধ্য পত্বী লীলাবতীকে “সুখে” বলিয়া সম্বোধন করিয়াছেন। ভারতবর্ষীয় লোক কন্যাকে সখে বলিয়া সন্বোধন করে না। লীলাবতীগ্রন্থে “বালে বালকুরজলোলনয়নে” ইত্যাদি শ্রোকে ভাস্করাচাধ্য পত্ভীকে “হে বালে, হে বালকুরঙ- লোলনয়নে, লীলাবতি£, এইব্ূপ সম্বোধন করিয়া প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিয়াছেন । পতীকে এইরূপে সন্োধন করিতে পারা যায়। কন্যাকে কেহ “হে মুগনয়নে, হে মত্ত, চকোরাক্ষি”, ইত্যাদিরপে সম্বোধন করে না। কেহ €( ২৭২ ) কেহ বলেন, এই শ্রশোকে এই সন্োধনে “বাল!” শব্দের অর্থ বালিকা ।* সুতরাং ভাস্করাচার্ধ্য স্বীয় কন্যা লীলাবতীকে হে বালে, হে বালিকে এই বলিয়া সন্বোধন করিয়াছেন। এইরূপ ধারণা যে, ভমসম্কুল, ইহা নিঃশক্কোচে বলা যাইতে পারে । কারণ, সংস্কতসাহিত্যে বালা শব্দের অর্থ কেবল মাত্র যে, ক্ষুদ্র বালিকা, তাহা নহে, কিন্ত কোমলাঙ্গী নবযৌবনা তরুণী বা যুবতীও বালা শব্দের অর্থ। মহাকবি কালিদাসের রঘুবংশের ফষ্ঠসর্গে বর্ণিত ইন্দ্রমতী-্য়ম্বরসভায় নৃপতিগণ বখন স্ব স্ব আসনে উপবিষ্ট ছিলেন, সেই সময়ে ভোজরাজের অন্তঃপুর- রক্ষিকা, রাজগণের বংশচরিত্রাভিজ্ঞা, ইতিহামপঞ্চিতা, মহাবিদুষী স্থনন্দা, ইন্দুমতীকে কলিঙ্গরাজসমীপে আনয়ন করিয়া কলিঙ্গরাজের বংশ ও চরিত্রের পরিচয় দিবার সময় ইন্দুমতীকে বালশব্দে বিশেষিত করিয়াছেন। সেম্থলে বালাশঝের অথ ক্ষুদ্র বালিকাণ্ড নহে কন্যা নহে। কারণ, তৎকালে বালিকার বরের জন্য স্বয়ম্বরসভার তাধিবেশন হইত না। তগুকালে ক্ষত্রিয়রাজকন্যা বয়ঃ- প্রাপ্তা হইলেই স্বয়ম্বরসভায় নিজের ইচ্ছামত বর বাছিয়া লইতেন। যর্দিকেহ বলেন যে,ইন্দুমতী বালা, অর্থাৎ বালিকাই ছিলেন, তাহাঁও হইতে পারে না। কারণ, এঁ সর্গের অন্য একটি শ্লোকে স্থনন্দা ইন্দুমতীকে বলিতেছেন, “হে সুন্দরি তুমি তোমার যৌবনস্তী। ভোগ কর”। এইরূপ ( ২৭৩ ) বহু সন্কৃতশ্রোকে নবযৌবনা বা যুবতী অর্থে বালা শব্দের প্রয়োগ দৃষ্ট হয়। যথা-_“হে কমঈনয়নে, হে দীর্ঘনয়নে বালে, আমার প্রতি পুনর্ববার দৃষ্টিপাত কর। অর্থাৎ পতি, ক্রুদ্ধা যুবতী পত্রীরে সম্বোধন করিয়া বলিতেছেন, “হে প্রিয়তমে, আমার প্রতি ক্রোধ পরিত্যাগ করিয়া পুনর্ববার দৃষ্টিপাত কর” । এই শ্লোকে বালা শব্দের তর্থ যুবতী স্ত্রী। সংস্কৃহসাহিত্যে যুবতী অর্থে বালা শব্দের প্রয়োগ ভূরি ভুরি দু হইয়া থাকে । সুতরাং “বালে” “বালমৃগনয়নে” এইরূপ পদ দেখিয়া লীলাবতী;ক ভাস্করাচাধ্যের কন্যা বলিয়া স্থির করা কখনই সঙ্গত নয়। ভ্ান্তসংস্কার, বশতঃ ধিনি ষাহাই বলুনা কেন, তাহাতে কোন ক্ষতি নাই, তাহাতে সঁত্যির মর্ধাদার অণুমাত্র ক্ষতি হইবে না। কারণ, লীলাবতীগ্রন্থের “অলিকুলদল” ইত্যাদি শ্লোকে ভাস্করাচাধ্য লীলাবতীকে হে “কান্তে” বলিয় সম্বোধন করিয়াছেন। তিনি বলিলেন, “হে কাস্তে, তাহা হইলে সমস্ত ভ্রমরের সংখ্যা কত হইল বল” ? ইহাই হইল এই শ্লোকের নিদ্বষ্টার্থ। ধাহারা লীলাবতীকে ভাস্করাচার্য্ের কন্তা বলিয়! মনে করেন, এই শ্লোকদ্ারা তাহাদের জ্ঞানদেত্র উন্টীলিত হউক। এ জগতে কোন দেশে কোন জাতি কন্যাকে “কান্ত” বলিয়া সম্বোধন করে না। কান্তা শব্দের অর্থ পত্তী। হারা লীলাবততী গ্রন্থ সম্পূর্ণরূপে পাঠ করেন নাই কিম্বা মোটেই পাঠ করেন ( ২৭৪ ) নাই, তাহারাই লীলাবস্তীকে ভাস্করাচার্ধোর কন্যা বলিয়া মনে করেন এবং স্ব স্ব পুস্তকেও এ কথা লিপিবদ্ধ করিতে অবাধে অন্যায়রূপে সাহামী হয়েন। অধুনা এইরূপ ভ্রমোতপাদক পুস্তকের লেখকগণ ধশস্বী হইবার উচ্চাশা হৃদয়ে পোষণ করিয়া এতিহাসিক তন্বের মুলে গনবরত কুঠারাঘাত করিতেছেন এবং সাহিত্যপুষ্টির ব্যাপদেশে সাহিত্যের মহাআঅনিষ্ট সাধনকরিতেছেন। লীলাবতী- গ্রন্থের প্রায় প্রত্যেক শ্লোকেই ভাঙ্করাচারধা, প্রিয়তমা পত্রী লীলাবতীকে আন্তরিক প্রেমব্যগ্রক নানাবিধ স্থললিত পর্দে সম্বোধন করিয়া প্রশ্ন করিয়াছেন এবং লীলাবতীদেৰী ও, পদো উহার উত্তর দিয়াছেন। লীলাবতী বাল্যক'ল হইতেই লেখাপড়ায় অত্যন্ত মনোযোগিনী ছিলেন। তীহার বুদ্ধি ও মেধা অতি প্রথরা ছিল। স্তৃতীক্ষুবুদ্ধি না থাকিলে জ্যেতিষে বুপত্তি জন্মে না। তিনি বুদ্ধিমতী নুশিক্ষিতা ও স্থুশীলা স্ত্রী ছিলেন বলিয়া তীহার স্বামী তাহাকে প্রাণাপেক্ষাও ভাল বাদিতেন। তাহার বিবাহের পর তাহার স্বামী তাহাকে জ্যোতিষশান্ত্র শিক্ষা দিতে আরন্ত করিয়াছিলেন । বিবাহের পূর্বের তিনি পিত্রালয়ে ব্যাকরণ ও সাহিত্য অধায়নকরিয়াছিলেন। তিনি পতির অত্যন্ত অনুগত! ছিলেন। সাধবী স্ত্রীর পমস্ত লক্ষণই তাহাতে বিদ্যমান ছিল। তিনি সর্বব্দা সর্ব প্রকারে পতির মনো- রঞ্জন করিতেন। কঠিন জ্যোতিষশান্ত্রের আলোচনাই (248) তাহাদের দুইজনের জীবনের একমাত্র ব্রত ও লক্ষ্য ছিল। ভাস্করাচার্ধ্য যখন জ্যেতিষশান্ত্রে কোন একটি কঠিন গণনা করিতে বসিতেন* কিন্বা সেই গণনা করিতে করিতে মধো মধ্যে যখন শান্ত্রচিন্তায় মগ্র হইতেন, সেই সময়ে লীলাবতী দেবা তাহার নিকটে উপস্থিত হইয়া স্বীয় অসাধারণ বোধশক্তি ও বিচারশক্তি দ্বারা স্বামীর গণনায় সাহায্য করিল্তেন। লীলারতীর বুদ্ধির প্রথরতা-দর্শনে ভাস্করাচার্যা আনন্দে পুলকিত হইতেন। আবার লীলাবতী যখন কোন একটি কঠিন গণনায় নিবিষ্টচিত্তা হইতেন, তখন ভাক্রাচার্যয পত্রীর তাদৃশ মনোনিবেশ দেখিয়া অন্য কার্ধ্য পরিত্যাগপূর্ববক তীহার নিকটে গিয়া বসিতেন এবং তাহার গণনাকার্ষ্যে সাহায্য করিতেন | স্বামী ও স্ত্রী একত্র বসিয়া এইরূপে শান্তর আলোচন। করিলে যেরূপ বিশুদ্ধ আনন্দ অনুভূত হয়, তাহা বর্ণনাতীত। স্ত্রী যদি ংসারিক কার্য শেষ করিয়া অবশিষ্ট সময় এইরূপে পতির সহিত শান্ট্চঙ্চায় মনোনিবেশ করেন, তাহা হইলে সংসার ব্বর্গধাম হইয়া উঠে। আর ধীহারা আলক্তে পরনিন্দায় 'ও পরচর্চঞয় অবশিষ্ট সময় অতিবাহিত করেন, তাহারা সর্বদাই দম্পতীকলহে ও মহথাঅশান্তিতে দুঃখভোগ, করেন। প্রাচীন ভারতে স্বামী স্ত্রীকে ুশিক্ষিত। করিতেন বলিয়া মর্াধামে বাস করিয়াও, বর্গ. চি. ৪85. স্ুখ অনুভব করিতেন! পুর্ববকালে ভারতবর্ষে পতি ও পত্ীর এইরূপ একত্র শাস্্রচ্চার কথা পাঠ করিলে কোন সহ্দয় জ্ঞানী বাক্তির হৃদয়ে অসীম আনন্দ উৎপন্ন না হয় % অভ্র অভিমানী কুসংস্কারাচ্ছিন্ন কপট ভীরু পামরের আনন্দবোধ হয়না। কারণ, সে ব্যক্তি 'ধই মনে করে যে, তাহার স্ত্রী যদি তাহা অপেক্ষা বেশি শিক্ষিতা হইয়া পড়ে, তাহা হইলে তাহার অপমান হইবে। কিন্তু সে ব্যক্তি ইহা বুঝিতে পারে না যে, প্রকৃতরূপে স্থৃশিক্ষিতা নারী, পতি মুর্খ বা দরিদ্র বা কুরূপ হইলেও পতিকে কদাপি তপমান বা অবজ্ঞাকরিতে পারে না। স্থশিক্ষার এমনই গু৭। সে কালে পতি মহধি যাজ্বন্ধ্য, পত্রী মৈত্রেয়ীকে দার্শনিক তত্ব শিক্ষ। দিতেন। পতি মহামুনি অগস্ত্য, পত্রী লোপামুদ্্রাকে পতিব্রতাধন্দ্ব ও নীতিশান্ত্র শিক্ষা দিতেন। পতি মহধিবশিষ্ঠ পত্বী অরুন্ধতীকে অধ্যাত্বিক তত্বশান্ত্র শিক্ষা দিতেন। অরুদ্ধতীদেবী রন্ধন- শাস্ত্রে এবং রন্ধনকার্যোও বিলক্ষণ দক্ষা ছিলেন । পতিমহধি কশ্যপ যেরূপ বিদ্বান ছিলেন, তাহার পত্বী অদিতিও তত্রপ বিদুধী ছিলেন। পিতা মহষি বচর, পুত্রী গার্গীকে জ্ঞান- বিজ্ঞান শান্তর শিক্ষা দিতেন। এমন কি, দেবতাদিগের মধ্যেও স্বামী, স্ত্রীকে শিক্ষা দিতেন। মহাদেবও পার্ববতীকে শিক্ষা দিতেন। তনতরশান্ত্ে দেখিতে পা ওয়া যায় যে, পার্বতী কোন একটা সৃক্ষমতত্ব বিষয়ে ম্াদেবকে প্রশ্ন (২৭৭ ) জিজ্ঞাসা করিতেছেন এবং মহাদেব তীহাকে সেই বিষয় উত্তমরূপে বুঝাইয়৷ দিয়া তাহার সন্দেহ নিরাসকরিতে- . ছেন। পার্বতী, মহাদেবের নিকটে এইরূপে মুশিক্ষা পাইয়া আনান্দ পুলকিত হইতেছেন। দেবতারাও স্থশিক্ষাকে অতি প্রয়োজনীয় বলিয়া মনে করেন। পূর্বব- কালে ভারতের নরনারী স্থৃশিক্ষাকে অতি প্রয়োজনীয় পদার্থ বলিয়া মনে করিতেন, আর একালের পতি পিতা ও ভ্রাতৃগণ, পত্তী রুন্থা ও ভগিনীদিগকে “থিয়েটারী টপ্পা”, “খেঁউড়,,৮ কুক্চিকর নাটক, “নভেল্‌” এবং এঠিহাদিক- কথাবিহীন “বাজেগল্প” পুস্তক পড়াইবার জন্য অধীর হইয়া পড়েন। ইহাতে হিন্দুদমাজের যে ভঙয়ঙ্গব অনিষ্ট হইতেছে, তাহা তাহার! এঁকবারও ভাবিয়া দেখেন না। ইহা! বড়ই ঘ্বণা ও লজ্জার কগা। যে শিক্ষা দ্বারা এহিক ও পারত্রিক মঙ্গল শ্ুদাধিত হয়, সেই শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা। ধীহারা বলেন, স্ত্রীলোকের বুদ্ধি কম, স্ত্রীলোক জ্ঞানবিজ্ঞানশান্্র বুঝিতে পারে না, তীহার৷ পূর্বেধাক্ত ম্িলাদিগের বৃত্থান্তগুল পাঠ করিলেই বুঝিতে পারিবেন ষে, স্ত্রীলোক পুরুষ অপেক্ষা কোন বিষয়েই নান নহে। স্ীলোক রাজনীতিশ্মন্ত্রে এবং যুদ্ধবিদ্যাতেও যে, নিপুণতা লাভ করিতে পারে, তাহার দৃষ্টান্ত অস্দেশ অপেক্ষা ভারতবর্ষেই বহুল পরিমাণে দৃষ্ট হইয়া গাকে। ষীঙ্থারা স্ত্রীলোককে উত্তমরূপে স্ুশিক্ষা দিতে জানেন ন! ও ২ (২৭৮ ) পারেন না, এবং স্ববশে রাখিতে জানেন না ও পারেন না, এবং স্্রীলোককে, অবাধ উচ্ছঙ্খল স্বাধীনতা প্রদান করেন, বিলাসের চরমমাত্রা শিক্ষা দেন, ধর্মশিক্ষায় বিবর্জিত করেন, ভারতের প্রাচীন স্থুনীতি ও স্তুরীতি শিক্ষা দেন না, নারীদিগকে আলস্তের মানবীমুদ্তিরূপে পরিণত করেন, বাহারা মনে করেন, স্্রীলোক কেবল মাত্র পুরুষের এঁহিক সুখতোগলিপ্লা চরিতার্থ করিবার জন্য, গণ্ডা গণ্ড। পুত্র কন্য! উৎপাদনের জন্য, রীধিবার জন্া, বাসন মাজিবার জন্, তাস খেলিবার জন্য, ভ্রাতৃবিচ্ছেদ ঘটাইবার জন্য এবং কলহিনী বা “পাড়া কুঁছুলী” হইবার জন্যই জন্মিয়া থাকে, তাহারা স্ত্রীশিক্ষা এবং স্ত্রীলোকের অধিকার বিষয়ে ্রান্তিপুর্ণ ধারণা পোষণ করেন। অন্য দেশের স্ত্রীশিক্ষার সহিত ভারতের স্ত্রীশিক্ষার তুলনাই হইতে পারে না। ভারতে স্ত্রীজাতিকে শিক্ষা দিতে হইলে প্রাচীন ধর্ম্াশাস্্র- প্রণেতৃগণের মতানুসারে স্ত্রীজাতিকে সর্বপ্রথম ব্যাকরণ আধ্যয়ন কবাইতে হয়, পরে ধণ্ম ও নীতিশান্ত্র শিক্ষা দিতে, হয়। স্ট্রীজীবনে কিকি কর্তব্য, তাহা যে সকল গ্রন্থে বিবৃত আছে, সেই সকল গ্রস্থ অধ্যয়ন করাইতে হয়। কেবলমাত্র অর্থকরীবিদ্যা শিখাইট উুলই ভারতে স্ত্রীশিক্ষা সম্পূর্ণ হয় না।. পুরুষ অর্থকরীবিদ্যা শিখিয়! সাংসারিক বায় মিরববীহ “করিবে; 'অর্থপঞ্চয় করিবে 'এবং : ধা এ'অর্থ'ায় করিবে। পক্চান্তুরে, শ্রীজাতি শীহস্থা্রা ( ২৭৯ ) কন্মে মনোনিবেশ করিবে এবং অবসর পাইলেই পুভ্র- কন্যাদিগকে শিক্ষা দিবার জন্য ধর্মশীস্ত্র ও. নীতিঙ্বানত, অধ্যয়ন করিবে। যে সকল স্ত্রীলোকের কোন প্রতি: পালক বা অভিভাবক* নাই, ধীহাদের অবস্থা মন্দ, যাহারা পতিপুক্রবিহীন, তীহারা গৃহাত্যন্তরে ধন্মগথে থাকিয়া অন্যবৃত্তি অবলম্বন না করিয়া শিল্পকর্ম দ্বারা. গ্রাসাচ্ছাদন নির্ববাহকরিতে পারেন, তাহাদের গুঁহের বাহিরে যাইবার * কোন প্রয়োজনই নাই। খীহীরা. মৌভাগ্যবতী নারী, খীহাদের যথেষ্ট দাঁসদাসী আছে,। ধাহাদের সাংসারিক অবস্থা খুব ভাল, তাহার! তাম্ুল: চর্ববণে, সমস্তদিন শয়নে, নিন্ম উপবেশনে, অলঙ্কারের সমালোচনায়, পরগ্রানি, পরচর্চচায় ও আল্ান্তে অমূল্য সময়.. বৃথা ন্ট না করিয়া, যে ভাষা অধ্যয়ন করিলে প্রচুর অর্থ উপার্জিত হয় না .কিন্তু যথেষ্ট ধর্ম্মজ্ঞান উপার্জিজাত। হয়, তাদৃশ পবিত্র দেবতাষ! “মৃতভাষা” সংস্কৃতভাষাটি যদি তীহারা আলোচনা করেন; তাহা হইলে স্ংস্কৃত- ভাষার প্সৃতভাষা” এই নাম ও অপবাদটি ঘুচিয়া যায়। সংস্কৃতভাষ! পুনরুজ্জীবিত হইয়া উঠে. ভারতীয় ভত্রমহিলাকে বাহিরে গিয়া অর্োপার্জন করিতে হয় না। অর্থোপার্জনের জন্য তারচ্তর ভন্ত্রমহিলা জন্মগ্রহণ ক্টরুন না। স্ৃতরাং পুরুষকে গৃহস্থ শ্রমের আধুনিক নানাবিধ: বযয়-নির্ববাহার্থ, অর্থকরী বিদ্যা পিখিতে হইবে |. কিছ ( ২৮৯ ) স্ত্রীলোকের শিল্পবিদ্য। ছাড়। অন্য অর্থকরী বিদ্য। শিখিবার কোন প্রয়োজন নাই। সাংসারিক ব্য়-নির্ববাহের জদ্চ পুরুষ উকীল হইতে পারে, হাকিম হইতে পারে, ডাক্তার হইতে পারে, কণ্টক্টুর হইতে পারে, মহাজন হইতে পারে, জমিদার হইতে পারে, সওদাগর হইতে পারে, ইঞ্জিনিয়ার হইতে পারে, অফিসের কেরাণী, বিদ্যালয়ের মাষ্টার এবং পণ্ডিত প্রভৃতি হইতে পারে, কিন্তু ভারতের গৃহদেবতা লজ্জাশীলা কুলমহিলা গৃহমধ্যে থাকিয়া' গৃহকৃত্যে মনো- যোগিনী হইয়া ষদি মৃতপ্রায় সংস্কৃত ভাষাটি শিক্ষা করেন, তাহা হইলে এই দেবভাধঘা সুরক্ষিত হইতে পারে। এই “মৃতভাষা”কে পুনরুড্জীবিতা করিবার জন্য পুরুষ অপেক্ষা স্্রীলোকেরই সংস্কৃত শিক্ষাকর! অতি প্রয়োজনীয় হইয় উঠিয়াছে। বিদ্যাশিক্ষ, অর্থোপার্জজনের উপায় নহে, বিদ্যা শিক্ষা ধন্দ্রজীবন-সংগঠনের একমাত্র উপায়। বিদ্য।শিক্ষাই যদি অর্থোপার্জনের একমাত্র উপায় হইত, তাহ! হইলে শিবাজীরাও, একছত্রপতি মহা প্রবল মহারাজ হইতে পারিতেন না। তিনি নিজের নামটা পর্যান্ত লিখিতে পারিতেন নু ॥ কিন্তু তিনি দিল্ল।শ্বর দোর্দগুপ্রতাগী সআট আরং নীবের নিকট হইতেও “ঠৌধ্‌* আদায় করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। শান্তি $ বিশুদ্ধ আনন্দের সহিত জীবনযা ত্রা-শির্ব্বাহের জন্য বিদ্যাশিক্ষ। স্বামী ও স্ত্রীর এক- মাত্র অবলম্বনম্বরূপ হওয়াই উচিত। যাহ! অর্থোপার্জজনের (২৮১ ) ভাষা নয়, সেই সংস্কতভাষাকে রক্ষাকরাই তাহাদের উচিত। যীহাদের স্নান-ভোজন, কবরীবন্ধন, অঙগসৌম্টব- সম্পাদন, সদাশয়ন ও সদানিদ্! ছাড়া অন্য কোন কার্য্যই নাই, তাহার। যদি এক্স কার্ষ্যে সর্বক্ষণ অতিবাহিত না করিয়া অন্ততঃ সন্ভানগণকে শিক্ষা দিবার জন্য--তাহা- দিগকে ধাশ্মিক ও নীতিমান করিবার জন্য তাহার যদি ংস্কৃত ধ্মশান্ ও নীতিশাস্ত্র আলোচন| করেন, তাহা হইলে ভারতের যথেষ্ট মঙ্গল সাধিত হইতে পারে। পুরুষকে কেবলমাত্র সংস্কতভাষ| শিক্ষা করিলেই চলিবে না। কারণ, সংস্কৃতবিদ্য। অর্থকরী নহে । অর্থকরী বিদ্যা না শিখিলে ব্তৃমানযুগে* পুরুষের সাংসারিক অভাৰ ঘুচিবে না। অর্থকরী বিদ্যা শিখিতে হইলেই তাহাতে সবিশেষ মনোযোগী হইতে হইবে । অর্থকরীবিদ্যার উন্নতি জন্য বিশেষ মনোযোগ দিলেই সংস্কতশিক্ষার অবনতি ঘটিবেই | মেই জন্য সংস্কৃতবিদ্যা দিন দিন ক্গীণ হইয়া পড়িতেছে। অন্য দেশীয় লোক ইহাকে “মৃততভাষা” এই নাম দিয়াছে । কোন কোন স্থুবিজ্ঞ সুচিকিত্সক বলেন, ইহা এখনও মরে নাই, তবে মুমুধু বটে (৪ গৃহমধ্য্থা ভারহমহিলার চেষ্টীক্প মৃতসঞ্জীবনী ওধধ প্রয়োগ করিলে ইহা বাচিতে পারে।* ভাক্ষরাচাধ্যের মত বিদ্বান ও কর্তব্যজ্ঞানবান অলাধারণ জ্যোতির্ব্বি পতি অধুন! প্রশ্তত না হইলেও, এবং লীলাবতীর ম্যায় জ্যোতিষ- ( ২৮২ ) শাস্ত্রে মহাবিদুষী মহিলা এ যুগে না হইতে পারিলেও আপাততঃ তত ক্ষতি নাই, কিন্তু বর্তমানযুগে-_বিলাসের- ষুগে_ ধর্ম্মনীতির শিথিলতার যুগে স্ত্রীজাতি যদি অন্ততঃ সংস্কৃত-রামায়ণ ও মহাভা'রতাদিস্ভারতীয় পবিত্র গ্রন্থগুলি না পড়েন এবং ধর্নমশান্ত্-ও নীতিশান্ত্র শিক্ষা না করেন এবং অপত্যগণকে ধান্মিক এবং নীতিমান না করেন, তাহা হইলে ভবিষ্যতে ভারতের প্রাচীনতম মহাগৌরবের নহাক্ষতি হইবে। শ্পাশেপপীশাপপাপপীপসসপিপিা বৈজয়ন্তীদেবী | ফরিদপুর জেলার অন্তর্গত কোটালীপাড়া গ্রামে 'শীনকগোত্রে কুষ্ণনাথ সার্ববভৌমনামক এক মহাপণ্ডিত জন্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন। তিনি একজন প্রধান কৰি ছিলেন। তাহার রচিত সংস্কৃত শ্লোকগুলি মহাকবি কালিদাসের' শ্লোকের ন্যায় সরল মধুর ও হৃদয়গ্রাহী । তীহার আনন্দ- সতিকানামক কাব্য কোটালীপাড়ার শৌনকবংশের খ্যাতি ও গৌরব বৃুদ্ধিকরিয়াছে। ১৫৭৪ শকাব্দে এই কাব্যখানি রচিত হইয়াছিল। কৃষ্ণনাথ সার্ববভৌমের পতীর নাম ্ীন্তী বৈজয়ন্তী দেবী।* বৈজয়ন্তী দেরী অসাধারণ পণ্ডিতা ছিলেন । তিনি ব্যাকরণ সাহিত!, অলঙ্কার, পুরাণ, র্শান্তর ও ন্যায়াদি দর্শনশান্ড্রে অদ্ভিতীয়া বিহুষী ছিলেন। (২৮৩) তাহার পতির ন্যায় ত্াহারও অসাধারণ কবিত্বশক্তি ছিল। তীহার পতির আনন্দলতিকানামক পূর্বেবাক্ত গ্রান্তের অদ্ধাংশ তিনিই রচনা করিয়াছিলেন। উক্ত গ্রন্থে লিখিত আছে যে, ক্রুঞ্চনাথ দর্ববভৌম স্ত্রীর পহিত মিলিত হইয়া আনন্দলতিকা রচনাকরিয়াছিলেন। স্ত্রীর কবিতাগুলি অনুপ্রাসাদি অলঙ্কারে এবং ওজঃ প্রাসাদ ও মাধুধ্যগুণে সমলঙ্কত এবং গতী রঅর্থযুক্ত। স্ত্রীলোক যে, এবপ উত্তম সংস্কতকবিতা লিখিতে পারে, তাহা আধুনিক নরনারীগণ শ্রবণ করির' ইহাকে অদ্ভুত উপন্যাসবার্তা মনে করিতে পারেন, কিন্তু তাহারা গুনিয়৷ বিস্মিত হইবেন যেঃ পূর্ববকালে এইরূপ সরম্বতীরূপিণী মহিলা গৃহে গুহে জন্মগ্রহণ করিতেন। তাহাদের ইতিহাস.অভাবে তারতীয় স্ত্রীশিক্ষা বিষয়ে লোকের হৃদয়ে নানাবিধ কুসংস্কার বদ্ধমূল হইয়া গিয়াছে। দগ্ধভাগ্য ভারতে জীবনচরিত লেখার রীতি বিলুপ্ত হওয়াতেই এবং আলম্ভ গদাস্ ও শৈথিল্যের মাত্রাটা অতিশয় বৃদ্ধি পাওয়াতেই ভূঁতপূর্বব স্থুজলা সফল শস্বাশ্যামল! ভারতভূমির ইতিহাস- ক্ষেত্রটি অনুর্ববর হইয়া পড়িরাছে। সপ্তদশ খৃষ্টানদের প্রথমভাগে পদ্মানদীতীন্স্থ ধানুকাগ্রামে রুষণাতেয়গোত্রে ময়ুরভট্রবংশে বৈজয়ন্তী জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। তীহার পিতা একক্ষন নি চিলি ব্রাহ্মণ জি ছিলেন + নি না ক ন ২৮৪ ) চাত্রকে অল্প বস্ত্র দিয়া স্বগৃহে অধ্যয়ন করাইতেন। তিনি যখন ছাত্রদিগকে পড়াইতেন, তখন বৈজয্তী প্রতিদিনই তাহার অধ্যাপন! শুনিবাঁর জন্য আগ্রহপূর্ববক তাহার নিকটে গিয়। বসিতেন এবং বিশেষরূপে “মনোযোগ দিয়া তাহার অধ্যাপনা শুনিতেন। তখন তাহার বয়ঃক্রম পঞ্চম বশসর মাত্র। ঈদৃশ অল্প বয়সে বৈজয়ুন্তীর অসাধারগ মেধা বা স্মৃতিশক্তির কথা শুনিলে বিম্মিত হইতে হয়। হাহার পিতা যখন ছাত্রদ্দিগকে পড়াইতেন, তখন বৈজয়ন্তী মাহা যাহা শুনিতেন, পরদিন সে সমস্ত কথা অবিকল বলিতে পারিতেন। তাহার পিতা তাহার ঈদৃশ শিক্ষানু- রাগ ও এইরূপ অন্তুত স্মৃতিশক্তি দেখিয়! তাহাকে সর্বদ- প্রথম তদেশীয় প্রথানুসারে কলাপ ব্যাকরণ পড়াইতে আরম্ত করেন। তিনি চারি বগুসরের মধ্যেই এ ব্যাকরণ, আমরকোষনামক অভিধান, গণ, ভর্রিকাব্য কিরাতার্জনীয়, শিশুপালৰধ এবং নৈষধচরিত প্রভৃতি কাব্যের পাঠ শেষ করেন। তিনি কাবাপাঠ মাত্রে পরিতৃপ্ত না হইয়! পিতার নিকটে সর্ববশান্ত্রের বোধক ন্যায়শান্্র অধ্যয়ন করিতে আরম্ত করেন। সংস্কৃত ন্যায়শাস্্র এমনই কঠিন জিনিষ যে, শাস্ত্রে বলে একক্ষণ ্যায়চিন্তা বাদ দিলে লোক তার্কিক হুইতে পারে না। সর্ববদ| চিন্তা না করিলে ন্যায়- বিদ্যাদেবী স্ব প্রসন্না হয়েন না। বৈজয়ন্তী বিবাহের পর' পিতৃগৃহে অবস্থানকালে গৃহকর্মমে সর্ববদা ব্যাপৃত থাকিয়া (১৮৫ ) সর্বক্ষণ ন্যায়বিদযাদেবীকে হৃদয়ে আরাধনা করিতেন! তাহার ঈদৃশী কঠোর মধ্যয়নরূপ তপন্যায় সন্তষ্ট হইয়া স্যায়বিদযাদেবা উহার প্রতি সুপ্রদন্ন। হইয়াছিলেন। তিনি স্যায়শাস্ত্রে অসাধারণ এউঁবদুধী হইয়াছিলেন। তাহার পিতা তাহাকে ধনে মানে জ্ঞানে কুলে শীলে শ্রেষ্ঠ বিখ্যাত এক যোগ্য পাত্রেই অর্পণকরিয়াছিলেন। কিন্তু দুঃখেরবিষয় এই যে, বৈজয়ন্তী বিদ্যাবিনয়বতী হইলেও রূপবর্তী ছিলেন নঃ বলিয়া এবং স্বামীর বংশমর্ধ্যাদা অপেক্ষা তাহার পিতার বংশমধ্যাদার কিঞ্গননতা ছিল বলিয়। রূপাভিল[ধা ও আভিঙ্জাত্যাভিমানা পতির মনের মত দ্ত্রী হইতে পারেন নাই। সেই জন্ট বিবাহের পর তাহার পতি তাহাকে কোটালীপাড়ায় স্বগৃহে একবার মাত্র লইয়৷ গিয়। পরে তীহার পিত্রালয়ে ধানুকা- গ্রামে তীহ্বাকে পাঠাইয়৷ দিয়াছিলেন। আর তাহাকে স্বগৃহে লইয়া যান নাই। বৈজয়ন্তী পিত্রালয়েই বাম করিতে লাগিলেন। তিনি যৌখনের কিছুকাল পতিবিরহজনিত কষ্টে অতিবাহিত করিয়া ছিলেন। কিন্তু এইরূপ মনের অশান্তির সময়ে বুখা সময় নষ্ট না করিয়া পিতার নিক্ষটে কঠোর ন্যায়শান্ত্র অধ্যয়ন করিতেন। | | এ এইরূপ কয়েক বরের পর একদা তিনি পতিবিরহে কাত্তর! হুইয়া পৃতির মনস্তপ্টির জম্থ অনুষ্ট,প্ড্ন্দে একটি ( ২৮৬ ) সংস্কৃতশ্লোক্চ রচনা করিয়া পতির নিকট প্রেরণ করিয়! ছিলেন। শ্লোকটি পাঠ করিলেই তাহার অস্বাধারণ কবিহ্ব- শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। শ্লেকটির অর্থ এই. যে, হে স্বামিন, আমার কষ্টের কথা আর কি জানাইব? সামান্য মশারির অভাবে দুর্জয় মশকগণ রাত্রে আমাকে অত্যন্ত নির্দয়ভাবে দংশন করিয়া থাকে । তাহার! প্রচুর ধুম ও ব্যজনবায়ুর দ্বারা নিবারিত হয় না। তাহারা সায়ং- কাল হইতে আরন্ত করিয়া সমস্ত রাত্রি আমাকে অতিশয় কষ্ট দিয়াথাকে। এই শ্লোকের ভাবার্থ এই যে, আমি আপনার বিরহে বৈরাগাভাৰ অবলম্বন করিয়াছি। শযা। উপধান (বালিশ) ও মশারি প্রভৃতি শয়নের উপকরণ বস্তপসকল তাগ করিয়াছি। আপনার সেবায় সমর্পিত এই মদীয় শরীর, দুর্বিবিনীত ছুর্দম্য ক্ষুত্র নীচাশয় নররক্ত- পিপান্থ মশকগণ কর্তৃক রাত্রে অন্যায়রূপে আক্রান্ত হইতেছে । তাহারা কোনরূপ শাসন মানিতেছে। না। অন্যের অধিকৃত বস্তুকে অন্যায়ূপে অধিকার করিয়া তাহারা চৌর তক্করের ন্থায় আচরণ করিতেছে । আমার শরীর আপনার বস্তু । ইহাতে অন্যের কোনমাত্র অধিকার থাকা উচিত নয়। ইহা অন্ত কর্তক অধিকৃত হইলে' মিন আপমান কলঙ্ক ও নি রি আপনার (পি পাশাপাশি পপপিসপীপি্ পাপা ৯... টিটি জিতধমসমূা ভিতবাজনবায়বে " ন্শকায় ময়া কার সারমারভ্য দীয়তে |, এমপি পাপ পপ ও পিন লা 1 (২৮৭ ) এই অপমানও কলঙ্ক দূর করিবার জন্য বদ্ধপরিকর হউন । নতুবা আপনার এ কলঙ্ক ঘুচিবে না। আপনার অপমান ও কলম্ক কি আপনার অসহ্য বলিয়া! বোধ হয় না? মানীর মানের নাশ সহাকরা উচিত নয়। আন্তের বস্তু আক্রমণ- কারী তক্করবুত্তি মশকের উপদ্রব হইতে আমাকে রক্ষা করুন। আপনি আমাকে গ্রহণ করিলেই আমি বৈরাগ্য- ভাব ত্যাগ করিব। রাত্রে মশারি ব্যবহার করিব । তাহা হইলেই মশকগণ জার আমাকে কষ্ট দিতে পারিবে না, ইহাই হইল এই শ্রেকের ভাবার্থ। এই শ্লোকে “হায়” “মশকায়,” “কায়ঃ” “সায়” “ও দীয়'রূপ শব্দের সাম্য থাকাতে অনুপ্রাদ অস্কার ও চমত্কার গৃঢ়ভাব অন্তুনিহিত থাকায় বৈজয়ন্ত্ীর উত্তম কবিত্বশক্তির বিলক্ষণ পরিচয় পাওয়া যায়। এই শ্লোক ছাড়৷ নানাবিধ হৃললিত -ছন্দে।- বন্ধে রচিত অনেকগুলি হৃদয়গ্রাহী সরস শ্লোক তিনি স্বামীর নিকটে প্রেরণকরিয়াছিলেন।. কৃষ্ণনাথ সার্ববভৌম এই সকল শ্লোক পাঠ করিয়া পত্বীর অগাধ পাগ্ডিত্য ও প্রগাঢ় স্বামিভক্তি এবং অভিশয় কেশসহনশক্তি অবগত হইলেন এবং অবশেষে নিজের অন্তিমান ও স্ত্রীর প্রতি উপেক্ষাভাব পরিত্যাগ কঞ্ধিতে বাধ্য হইলেন। তিনি প্রথমতঃ পত্রী-প্রেরিত এ সকল গ্লোকের উত্তর দিবেন বলিয়া স্থির করিলেন, কিন্তু বহুদিন পর্যন্ত পীর. প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করিয়াছেন বলিয়ু প্রথতঃ-কারর সম্ভাষণ জানাইতে একটু (২৮৮7 লজ্জা বোধ করিলেন, পরে তাহার প্রেমতরঙ্গিণী, তীহার অভিমানরূপ বালুকাময় তীরের বাধ ভগ্ন করিয়া উচ্ছবাসিত হইয়া পড়িল। তিনি আদরপ্রেমসুচক সম্বোধন করিয়া পত্তীর নিকটে একখানি প্রেমপন্জ্রিকা লিখিয়। পাঠাইলেন। বৈজয়ন্তী কু্ণচনাথের এই সম্ভীবনী ভামৃতময়ী প্রেমপত্রী পাইয়! পতির সহিত মিলনের আশায় অতান্ত আনন্দিত হইলেন। তাহার বিরহানল কথঞ্চিৎ নির্নবাপিত হইল । তিনি সৌজন্য ধৈর্যা ও ব্যঙ্গসসূচক «একটি শ্লোকঞ% রচনা করিয়া পুনরায় পতির নিকটে পাঠাইয়া দ্ীলেন। শ্লোকটির অর্থ এই যে) হে মধুকর, নাগকেসর চম্পক লব পদ্ম মল্লিকা বৃথিকা প্রভৃতি উত্তম উত্তম স্তহস হ্থুরভি মধুপূর্ণ পৃষ্পের মধুপানে আসক্ত থাকাই তোমার স্বা হাবিক রীতি। এই সকল উত্তম উত্তম পুষ্পের মধুপান-সম্তাবনা থাকিতেও মস্ত যে, তুমি এই সামান্য কুন্দ কুঁড়চি ও আকন্দ প্রস্তুতি অন্থরভি অমধুর পুস্পের মধুপানে অভিলাষী হইয়া, ইহাতে তোমার উত্তমবংশে জন্ম ও হৃদয়ের মহত্বই প্রকটিত হইয়াছে । এই শ্লোকের ভাবার্থ এইযে, হে প্রিয়তম স্বামিন, আমি মনে করিয়াছিলাম যে, আমি 2 72-52225-2- নিত মাতঙ্গযুখিরসিকণ্ত মধুত্রতন্ত। ষৎ কুন্দবৃন্দকুটজেব্পি পক্ষপাতঃ সন্বংশজশ্ত মহতে। হি মহত্ব মেতং ( ২৮৯ ) সুরূপ! নহি, ম্বলগ্তা নহি, হুগঠনা নহি, স্শিক্ষিতা নহি ও স্ুরসিকা নহি, সেইজন্য আপনি বোধহয়, পুনরায় একটি রূপগুণবতী স্বলস্কৃত' স্বরমিকা পত্বী গ্রহণ করিয়াছেন । কিন্তু আঞজজ আপনি * আমার প্রতি সদয় হওয়াতে আমি ইহা বেশ বুঝিতে পারিতেছি যে, আপনি এরূপ কাধ্য করেন নাই এবং আপনার হৃদয় অতি মহ উত্তমবংশে যিনি জন্মগ্রহণ করেন তিনিই মহাশয়- লোক'। তাহাদের হৃদয়ের মহত্ব এইরূপেই ব্যক্ত হইয়। থাকে । সামান্য লোকের প্রতি সদয় হওয়৷ তাহাদের মহত্বেরই পরিচয় । নৈজয়ন্্রীর এই কবিঠাটি পাঠ করিয়। কুষ্ণনাথ, সংস্কৃত সাহাতো পত্ধার জদ্জানের পরিমাণটা বুঝিতে পারিয়া আনন্দে পুলকিত হইলেন এবং বুঝিতে পারিলেন যে, ঈদৃশী স্থপপ্ডিতা স্থরসিকা স্বাবনীতা পতিপ্রাণা স্ত্রী শেতাঙ্গী না হইলেও রত্ালঙ্কারভূষিতা বনুশ্েতাঙ্গী সপেক্ষা অধিকতম আদর ও প্রেমের পাত্রী। ইঈদৃশ। সর্ববগুণান্থি তা সাপবা স্ত্রীর প্রতি তিনি এতাবুকাল পর্য্যন্ত উপেক্ষাভাব প্রদর্শন করিয়া অত্যন্ত অন্যায় কার্ধ্য করিয়া- ছেন, এইরূপ ভাবিয়া কিয়তক্ষণ অনুতাপ করিতে লাগি লেন। পরে তিনি এই শ্লোকের উত্তরম্বরূপ একটি শ্লোকঃ রচন! করিয়া পত্ঠীর | নিকটে পাঠাইযা দিলেন। এই পপ পাপী পপ পপ পপি পতাপিপসপীপী শিশির ৩ যামিনীবিরঙূন মানস: ত্যক্তকুটালিত ভুরিভূরুহঃ। ০2 পেষ্পী পাত পপ পট পপ ৫ ( ২৯) শ্লোকটির অর্থ এই যে, পল্সিনী, প্রাতঃকালে সূর্য্য উদ্দিত হইলেই ্রস্ক্টিত হইয়৷ শোভ। পায়, কিন্ত্র সায়ংকালে সূষ্য অনস্তমিত হইলেই মুদ্রিত হইয়া যায়। এইরূপে পন্সিনী মুদিত হইয়াগেলে ভ্রমরের মধুপানে বড়ই বাঘাত ঘটে। পুনরায় পরদিন সূর্য্য উদ্দিত হইলে পদ্মিনী যখন প্রস্ক,টিত হয়, তখন ভ্রমরের ভাগ্যে আবার মধুপান ঘটে। ভ্রমর রাত্রিকালে পদ্িনীবিয়োগে বড়ই কাতর হয়। ভ্রমর পদ্দিনীকেই যে, সর্ববাপেক্ষা বেশি ভালবাসে, তাহার চিহু এইযে, সে প্রাতঃকালে সূর্যোদয়ের পর শত শত প্রন্ফ,টিত পুষ্প ত্যাগ করিয়া সরোবরে শোভমানা পল্মিনীর অভিমুখেই ধাবিত হইয়া থাকে এবং পদ্মিনীর, বিন্দু বিন্দু মধুপানেই আশক্ত হইয়া থাকে । নানাবিধ পুষ্প সন্ত্বেও পন্মিনীছডড়া ভ্রমরের গত্যন্তুর নাই । এই শ্লোকের ভাবার্থ এই যে, হে প্রিয়ে, তুমিই আমার পদ্মিনী। তুমিই আমার একমাত্র গতি, একমাত্র আশ্রয় । তুমিছাড়। এ জগতে, অন্য কেহ আমার আশ্রয়ণীয় হইতে পারে না। আমিও তোমার বিয়োগে কাতর হইয়া ঘোর কালরাব্তিম্বর্ূপ এতাৰশুকাল কষ্টে যাপন করিতে ছিলাম। এক্ষণে সেই ঘোর বিয়োগ-নিশার অবসান হইবে। হে প্রিয়তমে, এক্ষণে তুমিই আমার একমাত্র অবলম্বন, ইহা নিশ্চয় . বিশ্ুবিনুমকরদলোলুপঃ পদ্মিনীং মধুপ এব ষাচতে ॥ ( ২৯১ ) জানিও। কৃষ্ণচনাথের এই কবিতাটি,পাঠ করিয়। বৈজয়ন্তী বুঝিতে পারিলেন যে, এতদিনের পর এইবার নিশ্চয়ই তাহার দুর্ভাগ্য-নিশার অবসান হইবে এবং তীহার সৌভাগ্য-সূর্যা উদ্দিত হইবে । এইবার পতির সহিত ত্রাহার সম্মিলন হইবে। ইহার পর কুষ্ণজনাথ, শ্বশুরের নিমন্ত্রণ- পত্র ও আহবান ব্যতিরেকেই হটাগ একদিন শগুরালয়ে গিয়া উপস্থিত হইলেন। তাহার শ্বপ্তর তাহাকে এইরূপে সমাগত দেখিয়া আনন্দে আত্মহারা হইলেন। পরদিন কৃষ্ণনাথ শ্বশুরালয় হইতে বৈজয়ন্তীকে স্বগুহে লইয়া আমিলেন। বহুদিন পরে সতী পতির সম্তাষণে ও সমাদরে ধন্য হইলেন এবং পতিগ্হের সম্রাজ্ঞী হইয়া তথায় সাম্রাজ্য ভোগকরিতে লাগিলেন । কুষ্চনাথ কেবলমাত্র ব্রাহ্মণ পণ্ডিত ছিলেন না। তিনি কোটালীপাড়া একজন জমিদার ছিলেন। এইজন্য তাহার সার্ববভৌম এই ব্রাহ্মণপণ্ডিতীয় উপাধি ছাড়া বঙ্গের নবাব কর্তৃক প্রদত্ত চৌধুরী এই উপাধিও ছিল। স্তৃতরাং তাহার আর্থিক অবস্থা অতি উত্তম ছিল। গৃহে যথেষ্ট দাসদাসা ছিল। তাহার ণ্চমগুকার! অন্নচিন্তা” না থাকায় তিনি অনুদধিগ্ন মনে শান্তচিত্ে শান্্চিন্তায় ও পরমেশ্বরের আরাধনায় যথেষ্ট সময় অতিবাহিত করিতে পারিতেন। বৈজয়ন্তী দেবী ঈদৃশ স্বামি-গৃহে আসিয়া দেখিলেন যে, তীহাকে সংগাক্ে কোন কার্ধাই করিতে হইবে ন1। সংসারে হর ও কোন বিষয়েরই অভাব নাই। কোন বিষয়ের জন্য তাবন| নাই। অতএব তীহার জীবনের একমাত্র ব্রত প্রাণের একমাত্র লক্ষ্য সেই শান্জ্রালোচনায় কোন ব্যাধাতই ঘটিবে না। তিনি স্তবথ-স্বচ্ছন্দে সরম্বভীর প্রকৃত আরাধনার জন্য যথেষ্ট সময় পাইবেন। তিনি স্বামি-গৃহের এইরূপ উত্তম অবশ্থা দেখিয়া সম্পূর্ণরূপে সংস্গত দর্শনশাস্্রের পাঠ শেষ করিতে ইচ্ছুক হইলেন । ন্যায় সাংখ্য পাতগ্জল বেদান্ত মীমাংস! ও বৈশেষিক এই ছুয়টিকে দর্শনশান্ কহে। দর্শনশান্ত্রপাঠে সুন্মন বুদ্ধি ও অনুদধিগ্রচিত্তে কঠোর চিন্তার প্রয়োজন। পিতৃগুহে বৈজয়ন্ত্রীকে অনেক কার্ধ্য করিতে হইত। পিতার আর্থিক অবস্থা তত ভাল ছিল না। স্বৃতরাং তাহার দাসদাসী ছিল না। বৈজযুন্তীকে রহ্ধনাদি সমস্ত কার্যযই করিতে হইত। এইরূপ অবশ্থাতেও তিনি শান্ত্রঅধ্যয়নে বিরহা হয়েন নাই। কারণ, একটি প্রাচীন কথা আছে যে, “যে রীধে, মেকি চুল বাঁধে না? যাহার যে কার্যে ইচ্ছ। মাছে, সে, সে কাধা করিতে কোন বাধাই মানে না। তবে কার্যে প্রবলা ইচ্ছাটা থাকা চাই। “ইচ্ছা থাকিলেই উপায় আপনি আসিয়া উপস্থিত হয়।” বৈজয়ন্তরী পিতৃগৃহে শ্যায়দর্শন অধ্যয়ন করিতেন বটে, কিন্তু নান। বাধা আসিয়! উপস্থিত হইত। তিনি এ নকল বাঁধ মামুন আর নাই মানুন, তাহাতে বাধা কিন্তু তাহার সম্মুখে উপস্থিত হইতে ছাড়িত ( ২৯৩ ). না। স্বামিগ্ুছে তাহার শাস্ত্রঅধ্যয়নে কোন বাধার আশঙ্কা ছিল না। স্থৃতরাং তিনি স্বচ্ছন্দে বিদ্বান স্বামীর নিকটে সমগ্র দর্শনশাস্ত্র শধায়ন করিতে আরম্ভ করিলেন। পুর্বে পিতার নিকটে ্চায়শান্ত্র অধ্যয়ন করাতে স্বামীর নিকটে অন্যান্য দর্শনের অধায়নের সময় বৈজয়ন্তরীকে বেশী কষ্টভোগ করিতে হয় নাই। অন্যান্ত দর্শনের জ্ঞানের জন্য ন্যায়শান্্রঅধায়ন প্রথমতঃ অতীব প্রয়োজনীয় । যায়শীন্ত্র অধ্যয়ন ন॥ করিলে অন্যান্য দর্শন উত্তমরূপে বুঝা যায় না। ন্যায়শাস্ত্র শিক্ষা করিলে অন্যান্য শাস্ত্রের যুক্তি তর্ক দোষ গুণ ও সিদ্ধান্ত উত্তমরূপে বুঝিতে পারা যায়। বৈজয়ন্থী পূর্বে পিত্রালয়ে শ্যায়শান্ত্র পড়িয়াছিলেন বলিয়া মন্যান্য দর্শন গুলি তিনি সহজেই বুঝিতে পারিয়াছিলেন। একদিন সায়ংকালে কৃষ্ণনাথ সায়ংসন্ধ্যাবন্দনাদি সমাপ্ত করিয়া “আনন্দলতিকার” শ্লোক রচনাকরিতে আরম্ত করেন। শ্লোক রচনাকরিতে করিতে অনেক রাত্রি হইয়া পড়িল। বৈজয়ন্তী দেখিলেন, তখনও তীহার লেখনী চলিতেছে । বৈজয়ন্তী তাহার নিকটে আসিয়! বলিলেন, এতরাত্রি পর্যান্ত বসিয়া কি বর্ণনা করিতেছেন ? কৃষ্ণনাথ বলিলেন, এতক্ষণে একটি নায়িকার বরন! প্রায় শেষ করিলাম। বৈজয়ন্তী হাসিয়! বলিলেন, সামান্য একটা মেয়ে মানুষের রূপ বর্ণনায় কি এত সময় লাগে? দেখুন, আমি এক শ্লোকে আপনার. এই নায়িকার সম্পূর্ণ বর্ণনা (২৯৪ ) শেষ করিয়া দিতেছি । এই বলিয়! তিনি অতি অল্প সময়ের মধ্যে একটি 'উতকৃ আদিরস-ঘটিত শ্লোক রচনা করিয়। দিলেন। সেই শ্লোকটি কোন কোন পাঠক ও. পাঠিকার রুচিকর না হইতে 'পারে, এই বিবেচনায় উক্ত শ্লোকটি এস্থলে উদ্ধত হইল না 'ঘবং তাহার অর্থও লিখিত হইল না। সংস্কৃতশ্লোক-রচনার সময় অনেকেই অনেক সময়ে সদা অপ্রচলিত শব্দ এবং সমাসুক্ত বড় বড় কঠিন শব্দ ব্যবস্থার করেন, "কিন্তু ধাহারা ম্বাভাৰিকশক্তিসম্পন্ন উচ্চ শ্রেণীর কবি, তাহার! সরল মধুর স্বললিত উত্তমভাবার্থযুক্ত মনোহারী শ্লোক রচনাকরিতে পারেন । রচনার সময়ে তীহাদিগকে বেশীক্ষণ ভাবিতে হয় না, কিন্বা মুহূমুছঃ অভিধান গ্রন্থ খুলিতে হয় না। তীহারা লোকের গ্রীতি-উৎপাদনের জন্য কবিতা রচনা করেন, শ্রোতা বা পাঠকের মাথায় “দা” লাগাইবার জন্য শ্লোকরচনা করেন না। বৈজয়ন্তার কবিতাগুলি যেমন শ্রুতি মধুর তেমনই আবার চমকারভাবার্থযুক্ত। . তাহার কবিতা প্রায়ই অনুপ্রাস অলঙ্কারে অলঙ্কৃত। বৈজয়ন্তী পূর্বে পিতৃগুহে যখন৷ স্বামি-বিরহ-যাতনায় অশান্তি ভোগ করিতেন, সেই সময়ে তিনি শান্তিলাভের জন্য পরমেশ্বরের আরাধনায় নিমগ্জ হইতেন। অন্তান্ত স্ত্রীলোকের ম্যায় পরের নিকটে বিরহ- কেশ ব্যক্ত করিয়া মনের ক্ষীণতার পরিচয় দিতেন না । ( ২৯৫) তিনি সেই অশান্তির সময়ে শান্তিলাভার্থ পিতার নিকটে দীক্ষা গ্রহণকরিয়াছিলেন। দীক্ষা-গ্রহণের পর তিনি সংস্কৃতে স্বীয় ইষ্ট দেবতার অনেকগুলি স্তব রচনা করিয়া- ছিলেন। সেই স্তবাবলী-রচনায় তাহার অসাধারণ কবিত্ব- শক্তির পরিচয় পাওয়ী যায়। এতন্তিন্ন তাহার অনেক কবিত| কোটালীপাড়ায় অনেকের কর্ণেই অবস্থিতি করিত। বৈজয়ন্তী এইরূপ উত্তম উত্তম সংস্কিত কবিতা) রচনা গ্করিয়া স্বামীর অসীম আনন্দ উত্পাদন করিতেন। দর্শনশাস্ত্রে তাহার বিচার-প্রণালী দেখিয়া তাহার স্বামী বিশ্মিত হইতেন। তীহার স্বামী প্রায়ই বলিতেন “প্রিয়ে, আমার বুদ্ধি ্লপেক্ষা তোমার বুদ্ধি অতি সৃক্মন” । বৈজয়ন্তী স্বামীর এইরূপ কথা শুনিয়া লজ্জা ও বিনয়তারে অধো- বদন হইয়া পড়িতেন ও বলিতেন, “হে প্রিয়তম, আপনি আমার শিক্ষক, আমার স্বামী । সৃতরাং আমার পরম, পৃ্নীয় ব্যক্তি । অতএব আপনি এরূপ কথ! শুনাইয়া আমাকে কেন অপরাধিনী করিতেছেন? আপনি আমাকে অত্যন্ত ভালবাসেন, সেই জন্য আপনি আমার নকল বস্তই ভাল বলিয়৷ দেখেন। ইহা আপনার অসীম দয়ার পরিচয়”। কৃষ্ণনাথ ও বৈজয়ন্তী *এইরূপে পবিত্র আমোদে উভয়ে একত্র শান্্রালাচনা করিতেন, কবিতা রচনা করিতেন, পারিবারিক ও বৈষয়িক কার্ধে এবং অস্তান্য বিষয়ে পরামর্শ করিতেন, এবং যথাসময়ে একত্র বসিয়! ২৯৩) পরমেশ্বরের আরাধনা করিতেন । কৃষ্ণনাথ সন্ত্রীক ধর্ম কার্য অনুষ্ঠান করিতেন। তীহার গৃহে “বারমাসে তের পার্বণ” অনুষ্ঠিত হইত । বৈজয়ন্তী দক্ষতার সহিত এই সকল কাধ্যে স্বামীর সহায়তা করিতেন। কৃষ্ণনাথের শার্থিক অবস্থা ভাল ছিল বলিয়া তাহার গৃহে সর্ববদাই উত্সবাদি উপলক্ষে নিমন্ত্রিত ও বন্ধু অনিম্ন্ত্রত অতিথির সমাগম হইত । বৈজয়ন্ত্ীর প্রশংসনীয় আতিথ্য-সৎকারে অতিথিগণ প্রাণ খুলিয়া আশীর্বাদ ক্রিত। তীহারা লোককে দান করিয়া ও ভোজন করাইয়া অতিশয় আনন্দ অন্মভব করিতেন । এইরূপ পরমানন্দে তাহারা গাহস্থ্য- জীবনলীলা শেষ করিয়াছিলেন । বৈজরন্তীর ও কুঞ্ণচনাথের মৃত্যুর পর তাহাদের শ্রাছ্ধে যেরূপ দান ও মহাভোজের অনুষ্টান হইয়াছিল, তাহা শুনিলে বিস্মিত হইতে হয়, মিষ্টান্ন দধি ও ক্ষীর রাখিবার স্থান সংকুলন না হওয়ায় মিষ্টান্ন দধি ও ক্ষীরের হুদ প্রস্তুত হইমাছিল। লুচি কচুরী প্রভৃতি ভাঙ্জিবার জন্য স্বতেরও হুদ নির্মিত হইয়াছিল। “দীয়তাং ও ভুজ্যতাং” এই রবে দিম্মগুল পরিব্যাপ্ত হইয়াছিল। শ্রাদ্ধের পর মাসাবধি এইরূপ মহাব্যাপার চলিয়াছিল। ( ২৯৭ ) প্রিয়ন্বদ1। প্রায় তিন শত বগুসর পূর্বেব ফরিদপুর জেলার অন্তর্গত কোটালিপাড়া গ্রামে প্রিয়ন্ঘদানান্দমী এক প্রতিতাশালিনী ব্রাঙ্গণমহিলা জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন । তাহার পিতার নাম শিবরাম সার্্বভৌম। ইনি শৌনক- গোত্র-সন্ভৃত হরিহর তর্কপঞ্চাননের পৌত্র। শিবরাম সান্বিভৌম নানাশাস্ত্রে মনাধারণ পঞ্ডিত ছিলেন। তাহার পাণ্ডিত্যখ্যাতি ভারতের বহু স্থানে পরিব্যাপ্ত হওয়ায় নানাদেশ হইতে ছাত্রগণ তকালে তাহার নিকটে অধায়ন করিতে আদিত। ঠিনি সেই সকল ছাত্রকে অন্নবন্ত্র দান করিয়া স্ব গৃহে অধ্যয়ন করাইতেন। তাহার একটি পুত ছিল। পুত্রের নাম মুকুন্দরাম চক্রবর্তী। প্রিযন্বদা প্রথমে জম্মিয়াছিলেন বলিয়! শিবরাম প্রিয়ম্বদাকে অতিশয় নেহ ও মাদর করিতেন । শিবরাম. যখন টোলে ছাত্র- দিগকে পড়াইতেন, তখন বালিকা প্রিয়ন্থদা তাহার নিকটে বসিয়া পাঠ শুনিতেন। শৈশবে প্রিয়ম্থদার স্মৃতিশক্তি অতিশয় প্রথরা ছিল।. তিনি দিবসে যে সকল পাঠ শুনিতেন, রাত্রে পিতার নিকটে সেই সকল পাঠ অবিকল বলিতে পারিতেন। তীহার পিতা তাহার ঈদৃশী অদ্ভুত স্মরণশক্তি দেখিয়া অত্যন্ত বিস্মিত ও আনন্দিত হইতেন। কিন্তু তখনও তিনি কন্যাকে শান্তর শিক্ষা দিতে মনোযোগী হয়েন নাই। কারণ, তাহার এই ধারণ! ছিল যে, গৃহকৃত্য- ( ২৯৮ ) শিক্ষাই ভ্রীলোকের চরম শিক্ষা। স্ত্রীজাতিকে শান্তর শিক্ষা দেওয়া উচিত নয়। শান্্শিক্ষায় স্ত্রীলোকের কোন অধিকার নাই। ভারতে অনেকেরই এইরূপ ভ্রান্তিপূর্ণ ধারণার কথা শুনিতে পাওয়। যায়। একদিন শিবরাম হেমাদ্রিগ্রন্থের একটি শ্লোক অন্বেষণ করিতে করিতে দুইটি শ্লোক দেখিতে পাইলেন । শ্লোক দুইটির অর্থ এই যে, কুমারী কন্যাকে ধন্ম ও নীতিশান্্ শিক্ষা দিবে। যে কন্যা ধন্ম ও নীতিশান্স্রে বিদ্যালাভ করে, সেই কন্তাই পিতৃকুল ও শ্বশুর কুলের কল্যাণদায়িনী হইতে পারে। কন্যা, ধন্ধমু ও নীতিশান্ত্রে যখন স্শিক্ষিতা হইবে, তখন তাহাকে এক সতুকুলোপ্তব স্রশীল বিদ্বান বরের করে সমর্পণ করিবে । যে কন্যা ভাবীপতির মর্য্যাদ] কিরূপে রক্ষা করিতে হয়, ও পতিকে কিরূপে সেবা করিতে হয়, তদ্বিষয়ে উপদেশপূর্ণ শান্ত্র শিক্ষা করে নাই, পিতা, ঈদৃশী অশিক্ষিতা কন্ঠার বিবাহ যেন কখনও না দেন। শিবরাম, ধন্মশান্ত্রে এইরূপ শাসনবাক্য লিখিত আছে দেখিয়া তাহার পুর্ব ভ্রান্তসংস্কীর ত্যাগ করিলেন এবং একটি গুভদিন দেখিয়! কন্যার বিদ্যারস্ত করাইলেন। প্রিয়ন্বদার অক্ষর পরিচয়ের পর শিবরাম তাহাকে কলাপব্যাকরণ পড়াইতে আরম্ত করিলেন। সুন্গা বুদ্ধি ও অসাধারণ 'মেধার প্রভাবে প্রিয়ন্বদা অল্পদিনের মধ্যেই বাকরণে ব্যুৎপত্তি লাভ করিলেন। তীহার ঈদৃশী 'উন্নতি দেখিয়া ( ২৭৯৯ ) তাহার পিতার উৎসাহ বাড়িতে লাগিল। শিবরাম বিশেষ যত্র ও মনোবোগের সহিত কন্যাকে অধ্যয়ন করাইতে লাগিলেন। তিনি ব্যাকরণ-সমাপ্তির পর প্রিয়ন্মদাকে সাহিত্য পড়াইতে আরন্ত করিলেন। অল্পকাল মধ্যে প্রিয়ন্থদ। সমগ্র সাহিত্যশান্ত্রে ব্যুৎ্পত্তি লাভ করিলেন। বঙ্গদেশের পঞ্চিতগণ নানাশান্ত্রে অগাধ বু[ৃত্পত্তি লাভ করিয়া মহামহোপাধ্যায় উপাধি লাভ করিতে পারেন, কিন্তু *তাহারা সংস্কতভাষায় বিশুদ্ধভাবে অনর্গল কথা কহিতে পারেন না। কিন্তু তিন শত বৎসর পূর্বের বালিকা প্রিয়ন্বদা স্বীয় মাতৃভাষা বঙ্গভাষার ন্যায় সংস্কৃতভাষায় অতি সহজে, অনর্গলভাবে কথা কহিতে পারিতেন। প্রিয়ন্বদার এইবূপ সংক্কতকথনশক্তি দেখিয়া তাহার পিতা শিবরাম এবং শিবরামের টোলের ছাত্রগণ বিশ্মিত হইতেন। তৎকালে মুদ্রাযন্ত্রের আবিষ্কার না হওয়ায় গাত্রগণ ন্বহস্তে পাঠ্য পুস্তক লিখিয়া পাঠ করিত। প্রিয়ম্বদাও, স্বীয় পাঠ্য পুস্তক স্বহস্তে লিখিয়৷ পড়িয়া- ছিলেন। পাঠ্য পুস্তক লিখিতে লিখিতে তাঁহার হস্তাক্ষর উৎকৃষ্ট হইয়া দীড়াইয়াছিল। তীহার হস্তাক্ষর দেখিলে সত্রীলোকের হস্তাক্ষর বলিয়া কাহার৪ বোধ হইত না। তিনি স্বহস্তে অনেক পুস্তক লিখিয়াছিলেন। সাহিত্য- পাঠের সঙ্গে সঙ্গে তিনি গ্লোকরচনা করিতে অভ্যাল করিয়াছিলেন। নানাশান্ত্ে বি্যালাত করিতে পারিলেও, ( ৩৯) অনেকে শ্লোক রচনা করিতে পারেন না। শাস্ত্র বলেন যে, এ জগতে প্রথমতঃ মনুষ্যজন্মই দুর্লত। পূর্ববজন্মের মনুষ্যোচিত স্বভাব ও সংস্কার-বলে ইহ জন্মে মনুষ্যত্ুলাভ হয়। মন্ুয্যরূপে জন্মগ্রহণ করিলেও সকলেই বিদ্যালাভ করিতে পারে না। পরর্বব জন্মের স্থৃকৃতি ও সংস্কার বাতিরেকে ইহজন্মে বিদ্যালাভ হয় না। মানুষ বিদ্বান হইলেও কপি হইতে পারে না। অভিধানে নিরন্তর শব্দ- অন্বেষণ এব: পদযোজনার জন্য কঠোর মানসিক চেষ্টা দারা শ্লোক রচনাকরিতে অভ্যাস করাও কঠিন ব্যাপার । কারণ, সকলেই এইরূপ চেষ্ট। ও পরিশ্রামের সহিত রচনাভ।াস করিতে সমর্থ হয় না। অতি কষ্টে কোনরূপে কৰি হইতে পারিলেও শীঘ্র উত্তম রচনা-শক্তি লাভ করা অতান্ত কঠিন। পূর্নজন্মের অভ্যাস-সংস্কার এবং ঈশ্বরানু গ্রহ ব্যতিরেকে এ শক্তি কেহ লাভকরিতে পারে ন।। প্রিয়ম্বদর এরূপ শক্তি ছিল। স্থুতরাং তিন অতি অল্প সময়ের মধ্যে উত্কৃষ্ট শ্লোক রচনাকরিতে পারিতেন। তাহার পিত৷ তাহার ঈদৃশী রচনাশক্তি দেখিয়া একদিন বলিলেন, মা,তুমি আমাদের কুলদেবতা শ্রীঃগোবিন্দ- দেবের বর্ণনা করিয়া একটি শ্লোক আমাকে গুনাও । প্রিয়ম্বদা তগ্ঞ্ষণা একটি সরল প্রাঞ্জন শ্লোক রচন! ১ ্ কালিনদীপুলিনেযু কেলিকলনং কলোছিদৈত্যস্িং | গোপালীভিরভিষ্টতং ব্রজবধূনেত্রোৎপলৈরষ্িতম্‌। করিয়া পিতাকে গশুনাইলেন। এই শ্লেকটির অর্থ এই যে, যে শ্রীকৃষ্ণ বাল্যকালে যমুনাতটে নানাবিধ ক্রীড়া করিয়া- ছিলেন, কংসাদি দৈত্যগণকে নিহত করিয়াছেন, যিনি গোগী দ্িগের নয়নরূপ পল্স দ্বারা অঙ্চিত হয়েন, (অর্থাত যাহাকে গোগীগণ নিনিমেষ নয়নে অবলোকন করিয়া চক্ষুকে সফল করিয়াছেন ) খাহার চূড়া ময়ুরপুচ্ছ দ্বারা সমলম্কুত, সেই শ্যামবর্ণ মনোহর ব্রজন্ুন্দর ভব্ভয়হারী ত্রিভঙ্গমুত্তি শ্রীগোবিন্দদেবকে *আমি ভজনাকরি। কন্যার রচিত এই প্রাঞ্জল মধুর শ্লোক শ্রবণ করিয়া ভক্ত ভাবুক পিতার নয়নযুগল হইতে আনন্দাুধারা নির্গত হইতে লাগিল । তিনি বলিলেন, “মা, আমি পুর্বজন্মের বন্ত পুণের বলে তোমাকে পাইয়াছি । মা, তুমি সরম্বতীর অবতার আমার পুর্ববজন্মের কঠোর তপস্যায় সন্তু হইয়া তুমি মানবীরূপে আমার গুহে জন্মগ্রহণ করিয়াছ। তোমার এইরূপ প্রাঞ্জল শ্লোক গুনিয়া আজ আমি ধন্য ও কৃতার্থ হইলাম” । শীঘ্র শ্লোক রচনার শক্তি ছাড়া প্রিয়ন্বদার আর একটি ঈশ্বরদত্ত শক্তি ছিল। তিনি অতি স্মধুর স্বরে সঙ্গীতবিশারদ *ওস্তাদে”্র গানের মত তাল মান লয় যুক্ত অতি চমণ্কার "গান গাইতে পারিতেন। €্কহ তাহাকে এইরূপ সঙ্গীত বিদ্যায় শিক্ষাদান করে নাই। শে পিপল পপি পপপপাপীসপাপিপিপীপাীা পি পপ একক পপাপাতিপশিপীসসপলাপাপা শিপ বহালক্কৃতমন্তকং মুললিতৈরগ িতদজজে, : গোবিলদং ঝুক্ঞদরং ভবহরং বং বংশীধরং মল । সতত [ও . ( ৩৭২ ) অথচ তিনি উত্তমরূপে ৭গস্তাদী” গান গাইতে পারিতেন। তাহার এই আন্ভুত শক্তি দেখিয়া মনেকে উহাকে সরম্ব গর অবতার বলিয়। মনে করিত এবং শ্রান্তুরিক ভক্তি শ্রদ্ধা করিত। শিবরাম প্রিয়ন্বনাকে ধর্মাশান্ত্র ও নীঠিশান্্র এবং অন্যান্য শান্ধে স্থশিক্ষিত করিয়া তাহার বিবাহের জন্য একটি উপযুক্ত স্পাত্র আন্বংণ করিতে লাগলেন । তিনি বঙ্গদেশে কুস্তাপি মনের মত পাত্র তনুসন্ধান করিয়া পাইলেন না। অবশষে পাত্র-আন্বেষণার্থ কাশীধামে গমন করিলেন। তিনি কাশীধামে পৌছয়া এবটি মাঠ আশ্রয় লইলেন। কাশীতে তীর্থকৃত্য সমাপ্ত করিয়া উদযুক্ত পাত্র অনুসন্ধানকরিতে লাগিলেন। উপযুক্ত পাত্র সংগ্রহ করিয়া স্বদেশ অভমুখ যাত্রা করিবেন, এই অনিতপ্রায়ে তিনি কাশীতে কিছুকাল বাদ করিতে ইচ্ছুক হইলেন। শীঘ পাত্র না পাওয়ায় তাহাকে সঙ্কল্পিত সময় অপেক্ষা বেশী সময় কাশীতে অতিবাহিত করিতে হইয়াডিল। এই সময়ের মধ্যে তিনি কাশীতে মীমাংসাদর্শন অধায়ন করিয়া- ছিলেন। তিনি যে মঠে মীমাংসা অধ্যয়ন করিতেন, সেই মঠে হটাত একদিন তেজঃপুষ্জীময় এক ব্রাহ্মণ যুবক মাসিয়া উপস্থিত হইল। এই যুবকের নাম রঘুনাথ মিশ্র । রঘুনাথের সহিত শিবরামের শান্ত্রালাপ হইয়াছিল। তাহার সহিত শান্ত্রালাপে শিবরাম অত্যন্ত ল্লীত হুইয়াছিলেন। ( ৩০৩ ) শিবরাম. স্বীয় অধ্যাপক মহাশয় ও অন্যান্য প্রামাণিক লোকের নিকটে রঘুনাথের কুলশীলাদির সবিশেষ পরিচয় লইয়া প্রিয়ম্বদার সহিত তীহার বিবাহের প্রস্তাব করিলেন। রঘুনাথ হিন্দুস্থানী হইয়া বাঙ্গালীর মেয়েকে বিবাহ করিতে প্রথমতঃ একটু ইতস্তত্ঃ করিতে লাগিলেন। কিন্ত পশ্চাৎ যখন তিনি শুনিলেন যে, শিবরাম “্পাশ্চাতা বৈদিক” ত্রাক্মাণ, অর্থাৎ তাহার পূর্বপুরুষ বহুকাল পূর্বে পশ্চিমদেশ হইতে "বঙ্গদেশে গিয়া বাম করায় “পাম্চাতা বৈদিক আখ্যা প্রাপ্ত হইয়াছেন, তখন হিনি এ বিবাহে আপত্তি না করিয়া সম্মতি জ্ঞাপন করিলেন। শিবরাম রঘুনাথ মিশ্রাকে অতি যতর, সহিত স্বদেশে সগ্রে করিয়া লইয়া আাপিলেন। তাহাকে গুহে আনিয়া শ্রিয়ন্ষদার নিকটে ত'হার সহিত বিবাহের প্রস্তাব উত্থাপন করিলেন । প্রিয়ন্বদ। এই প্রস্তাব শুনিয়া লজ্জ(বনত মুখী হইলেন, কিন্তু অন্তরে এক অপুর্ব আনন্দ অনুভব. করিলেন। রঘুনাথ প্রিয়ন্বদার রূপে ও গুণে অত্যন্ত আকৃষ্ট হইয়! পড়িলেন। শিবরাম একটি শুভদিনে শুভমুহৃন্ভে কন্যাকে পণ্ডিত প্রবর রঘুনলাথ মিশ্রের করে সমর্পণ করিলেন। শিবরাম সান- ভৌম একদিকে যেমন শাস্ত্রজ্ঞানের অগাধসমুদ্র স্বরূপ ছিলেন, তব্রূপ অন্যদিকে প্রভূত ধন ও প্রচুর ভূসম্পত্তির অধিকারী ছিলেন । তিনি ব্রাহ্মণ পঞ্িিত হইলেও একজন বিশিসম্পত্তিণালী জমিদার ছিলেন। জমিদারী ছাড়া ( ৩১৪ ) তাহার নগদ সম্পত্তিও যথেষ্ট ছিল। তাহার গুহে প্রভূত পরিমাণে স্বর্ণ ও রৌপা সঞ্চিত ছিল। তিনি কন্। ও জামাতার ভরণ-পোষণের জন্য তাহার “মাঝ বাড়ী” নামক গ্রামখানি তাহাদিগকে প্রদান করিয়া- ছিলেন। তাহার কন্তার ও জামাতার অন্তঃকরণ খুব উদার ও সরল ছিল। তীহারা লোভী ছিলেন না । তাহারা লোভকে ঘ্বণা করিতেন । হারা উক্ত বৃহৎ ভূলম্পত্তি প্রাপ্ত হইয়৷ শিবরামকে বলিলেন, “আমরা এত বড় গ্রাম লইয়া কি করিব? বেশী ভূসম্পৃন্তিলইলে তাহার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমাদিগকে সদা বাপুত থাকিতে হইবে। ভূদম্পন্ত রক্ষণকার্যো সদা ব্যাপৃত থাকিলে আমাদের শাস্ত্র্চার ব্যাঘাত ঘটিবে। অঠঙএব ভোজন ও আচ্ছাদনের জন্য কিঞ্চিৎ মাত্র ভূমিখণ্ড পাইলেই আমাদের যথেষ্ট লাভ হইবে । অন্নচিন্তার জন্য শান্্র- চ্চায় আর ব্যাঘাত ঘটিবে না। নিশ্চিন্ত মনে দুইজনে শান্্ালোচনায় জীবনযাত্রা! নির্বাহ করিতে পারিব।” এইরূপ কথা বলিয়া তাহারা উক্ত বুহৎ ভূসস্পত্তি-গ্রহণে অনিচ্ছা প্রকাশ করায় শিবরাম উক্ত ভূঙম্পত্তর কিয়দংশ তাহাদিগকে প্রদান করিয়াছিলেন । | যে যুগে শ্বশুর একট! টা দিতে উদ্াাত ভয়ে উহ্থা টি না, সেই বুকে সঃ।যুগ বলিলেও (৩৬৫ অতাক্তি হয় ন!। উহা! কলিযুগ হইলেও তখন কলির প্রভাব তাদুশ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় নাই। অধুনা ভারত- বর্ষের সর্বস্থানেই প্রায় সর্বব সমাজেই কন্যার বিবাহ- বায়ের ভাবনায় পিতাকে অস্থির হইতে হয়। কন্টাদায় হইতে উদ্ধার লাভের জন্য কোন কোন পিতাকে সর্বিন্বান্ত হইতে হয়। এমন কি, যিনি অতি সামান্য মাত্র বিদ্যা উপাঞ্ভন করিয়া মাসিক ১৫২ টাকা বেতনে একট “সওদাগরী আফষে'' “কেরাণীগিরি” করেন, তীহার বিবাহের সময় তীহ্ার পিতা, কন্যার পিতার নিকটে ৩০০০২ ঠিন হাজার টাকার একখানি লম্বা ফর্দ ফেলিয়। দেন !! পাচ্ব্ের পিতার বাসের জন্য দুর্গম প্লী গ্রামে হয়ত একখানি মাত্র জীর্ণ পর্ণ কুটার আছে, এবং তিনি হয়ত গ্রামের অন্য লোকের ম্যালেরিয়া ও গলিত পর্ণ-পৃর্ণ দুর্গন্ধ “ডোবার” মত একটি ক্ষুদ্র পুক্ষরিণীতে স্নান করেন, উক্তরূপ পুজ্রর বিবাহে আকাঙিক্ষিত মুদ্রা ও দান-সামগ্রী গুলি রাখিবার জন্য তীহার পর্ণকুটীরে তিলাদ্ধ মাত্র স্থান নাই, অত টাকা রাখিবার জঙ্ত লোহার সিন্দুকের কথা তো দূরের কথা, তাহার একটা ক্ষুদ্র দেবদারু কাষ্ঠের সিন্দুক পর্যাস্ত নাই, কিন্তু তথাপি তিনি পুজ্ের বিবাহে মাকাজিঙ্ত বস্তসমূহের দীর্ঘ ফর্দখানি কন্যার পিতার হস্তে দান করিতে সঙ্কোচ' ও লজ্জা বৌধ করেন না।: জাবার যে সকল পাত্র ছুই তিনটা বা তিন-চারিটা “পাস্” করিয়াছেন অবং ( ৩*৬) গবণ্মেন্ট কাধ্যালয়ে কর্ম করেন, তীহাদের পিতা কন্যার, পিতার গলকর্তনের নিমিত্ত একা গ্রচিত্তে সদা খড়গ শাণিত করেন এবং তাহার “বাস্তভিটায় ঘুঘু চরাইবার জন্য” মহাযত্বপুর্ববক ঘুঘু-পক্ষী পুষিয়া থাকেন। ইহা অতি লজ্জা ও পরিতাপের বিষয় হইয়! ঠাড়াইয়াছে। প্রিয়ন্থদার স্বামী পণ্ডিত রঘুনাথমিশ্র শ্বশুরের নিকট হইতে “মাঝ বাড়ী” গ্রামের কিঞ্চিৎ অংশ গ্রহণ করিয়া তথায় বাস কারবার জন্য একটি উত্তম বাটা নিন্মীগ করাইলেন 'এবং এ য্কিঞ্চিৎ ভূমিখণ্ড হইতে উৎপন্ন শস্যের আয় হইতে স্বীয়, সাংস'রিক ব্যয় নির্বাহ করিয়া পরমন্ুখে সন্ত্রীক শান্ত- চর্চায় কালাতিপাত করিতে লাগিলেন । প্রিয়ম্বাদা যখন “মাববাড়ীতে” আসিয়া বাঁ করিতে লাগিলেন, তখন তাহার সাংসারিক কার্যে উহাকে সাহায্য করিবার জন্য অন্য কেহুই ছিল না। সুতরাং তাহাকে নিজহস্তেই সমস্ত গৃহকাধ্য সম্পাদনকরিতে হইত। এরুপ অবস্থাতে ও, তিনি স্বামীর সহিত শান্্রচ্চায় বিরত! হয়েন নাই। : রধুনাথমিশ্র কাশীধাম হইতে আলিবার সময় “রঘুনাথ- চক্র” ও “শ্রীধরচক্র”নামক দুইটি শালগ্রাম-শিল। আনিয়াছিলেন। শ্ররিয্বদ গ্রত্যহ তাহাদের পুক্জার আয়োজন করিয়া দিতেন। রথুনাথ স্বয়ং পুজা করিতেন । “রিক্ত শুন! যায় যে, প্রিয়ন্দ! প্রতিদিনই পুজার সমফে -একটি নূতন সংস্কৃত শ্লোক রচনা করিয়া উক্ত বিগ্রহদ্ধয়কে (.৩০৭ ) নমস্কার করিতেন । এইরূপে তাহারা একত্র বসিয়া এক সঙ্গে ভগবানের আরাধনা করিতেন “সন্ত্রীক হইয়া ধর্ম, অনুষ্টান করিতে হয়” এই শান্-রাক্য তাহারা বন্ুপূর্ববক পালন করিতেন। রঘুনাথমিশ্রা নানাদিগ্দেশ হইতে আগত বহু ছাত্রকে খাদ্বস্ত্র দান করিয়া ও স্বগৃহে রাখিয়া নানাশান্ত্র অধ্যয়ন করাইতেন। প্রিয়ন্দা এ সকল ছাত্রের ভোজনের জন্য দুই্ুবলা হ্ুহস্তে প্লাক করিতেন । তিনি প্রতিদিন ছাত্র- গণকে উত্তমরূপে ভোজন করাইয়া স্বামীকে ভোজন করাইতেন। ন্বামীর আহারের পর স্বামীর ভোজন-পাত্রে তাহার প্রসাদ ভক্ষণকরিতেন। প্রিয়ন্বদা প্রত্যহ অতি প্রত্যুষে শষ্য ত্যাগকরিঙ্েন। প্রত্যহ গৃহ-মার্ভন, গোময়- মিশ্রিত জলঘ্বারা গৃহের সর্ববত্র সিঞ্চন, মৃত্তিকা-মিশ্রিত গোময় দ্বারা পাকগুহে চূল্লী প্রভৃতি-সংলেপন, শৌচ, স্নান, পুজার আয়োজন, সন্ধ্যাবন্দন, পুজা, ৬/নারায়ণ'নমস্কারের দৈনিক নৃতন সংস্কৃত শ্লোক-রচনা, রন্ধন, পরিবেশন, এবং সাহার নিজের তোজনে দিবা আড়াই প্রহর কাল অতীত হুইত। ভোজনাস্তে কিয়ত্ক্ষণ বিশ্রাম করিয়া তিনি পুস্তক লিখিতে বসিতেন।. তাহার হস্তলিধিত “শ্যামারহস্য” নামক একখানি তন্গ্রন্থ তাহার বংশধর- গণের নিকটে অন্যাপি বিরাজমান আছে। ভীহার স্বামী, কাশী-হইতে আসিবার সময় সংস্কৃত: অক্ষরে লিখিত-অনেক (৩৮৮) পুস্তক আনিয়াছিলেন। প্রিয়ম্বদা প্রতিদিন বঙ্গাক্ষরে সেই পুস্তকগুলির অনুলিপি গ্রহণ করিতেন। তিনি শনুনিষিদ্ধ দিনগুলি, বদ দিয়া স্বামীর স্মীপে দর্শনশাস্ত অধ্যয়ন করিতেন। পত্রয়োদশী তিথিতে বৈশে'ষক দর্শন এবং পাণিনি ব্যাকরণ অধায়ন করিতে নাই;” ইত্যাদি শাস্ত্রবিধি গুলি মানিয়া চলিঙেন। অধুল আ.নকে এইরূপ বিধিগুলি মানেন না। প্রিফম্বদা বাঙ্গাণী ছিলেন এবং তাহার স্বামী পশ্চিমদেশীয় লোক ছিলেন। উভয়ের ভাষ! পরস্পর ভিন্ন হইলেও উভয়ের পরস্পর কথোপকথন বিষয়ে তাহাদিগকে বেশী দিন অন্বিধা ভোগ করিতে হয় নাই। কারণ, রঘুনাথ অতিশয় বুদ্ধিমান লোক ছিলেন। তিনি অল্পদনের মধ্যেই বঙ্গভাষা সম্পূর্ণরূপে আয়ত্ত করিয়াছিলেন । প্রিয়ন্বদার অসাধরণ স্বামিভক্তি ছিল। স্বামীর বাকাকে ঠিনি বেদবাকোর ন্যায় মান্য করিতেন। তিনি মদালস। উপাখ্যানের দার্শনিক টীকা এবং মহা- ভারতের মোক্ষধর্ম্নের একখ|নি স্ুৃবিস্তৃত টীকা প্রণয়ণ করিয়াছিলেন। তিনি অন্যান্য বহু পুস্তকের টাকা প্রণয়ণ করিয়াছিলেন, কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, তালপত্রে লিখিত এ সকল পুস্তক তাহার ঘংশধরগণের যত্বীভাবে নষ্ট হইয়া গিয়াছে । একদা বত অনুসন্ধানে একটি মাত্র পত্র পাওয়! গিয়াছিল, কিন্ত্বু এ পত্রটির অক্ষরগুলি এতই অস্পষ্ট হইয়া গিয়াছিল যে, উহা! কোন রূপেই পড়িতে ( ৩০৯ ) পারা গেল না। বনুকষ্টে কয়েকটিমাত্র অক্ষর পড়িতে পারা গিয়াছিল। এ অক্ষর গুলির অর্থ এই যে, হে স্বামিন্, আপনার পিতার কুপারলেই মামি স্ত্রীলোক হইয়াও এই পুস্তকের টীকা নিশ্মাণ করিতে সমর্থ হইলাম। পূর্বববঙ্গে ও পশ্চিমবঙ্গে এইরূপ অনেক শিক্ষিতমহিলা জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন । জননচরিত-লিখনের প্রথা অন্মন্দেশে বিলুপ্ত হওয়াতেই ভারতের শিক্ষিতমহিলা- দিগের সংখ্যা মির্ণয়করা দুরহ হইয়া পড়িয়াছে। প্রিয়ন্দার অনেকগুলি পুত্র-কন্যা ন্মিয়াছিল। তাহাদের লালন-পালন এবং গৃহকৃত্য-সম্পাদদন তাহার অনেক সময় অতিবাহিত হইলেও তিনি শান্তু্টীয় কখনও বিরত হয়েন নাই। তিনি পুত্র-কন্াদিগের শিক্ষার ভার স্বয়ং গ্রহণ করিয়াছিলেন । সেইজন্ত' তাহার সম্তানগণ বিদ্বান ও ধার্মিক হইতে পারিয়াছিলেন। মাতার নিকটে শিক্ষা পাইলে সন্তানগণের ধর্মজীবন এবং নৈতিকজীবন যেরূপ দৃঢ়ভাবে সংগঠিত হয়, অন্যের নিকটে শিক্ষা পাইলে তন্্রপ হয় না। মাতার নিকটে শিক্ষালাভ করিবার যেরূপ ্ৃবিধা হয়, অন্যের নিকটে তত্রপ স্ৃবিধা ঘটে না। ( ৩১২) নিরূপিত আছে। একদ: রাজা রাজবল্লত “অগ্নিষ্টোম””- নামক যজ্ঞ অনুষ্ঠানে ইচ্ছুক হইয়া বারাণসী নগরীতে রামগতি সেনের নিকটে একখানি পত্র প্রেবণ করিয়া- শিলেন। রামগতি মেই সময়ে বারাণসীন্ে ব'স করিতে- ছিলেন। কাশীর জগদিখ্যাত প্রধান প্রধান পণ্ডিতের নিকট হইতে “অগ্লিষ্টোম” যজ্্ের অনুষ্ঠান পদ্ধতি এবং হোমকুণ্চের ও প্র প্রভৃতি পাত্রের প্রতিকৃতি জুংখ্রীহ করিয়া রাজনগরে বাজার নিকটে পাঠাইবার জন্য রাজা, রামগতিকে এ পত্রে বিশেষভাবে প্রার্থনা করিয়াছিলেন । কিন্তু সে সময়ে কাশতে রামগতি স্বয়ং একটি যজ্ঞের অনুষ্ঠানে দাক্ষত ও ব্যাপূত ছিলেন। সে'সময়ে কাশীর পর্চিতগণের নিকটে গনন করিয়া “আগ্লিষ্টোম?? যজ্ঞের পদ্ধতি সংগ্রহ করিবার অবকাশ তাহার মোটেই ছিল না। অথচ রাজ! পত্র লিখিয়াছেন, শীঘ্রই তাহার উত্তর প্রেরণ, করা উচিত। এ অবস্থায় কি কর্তবা, এই চিন্তায় তিনি নিমগ্ন হইলেন। আনন্দময়ী পিতাকে চিন্তান্বিত দেখিয়া চিন্তার কারণ জিন্ভ্তাসা করিলেন । চিন্তার কারণ অবগত হইয়া তিনি পিতাকে বলিলেন, “হে পিতৃদেব, এই বিষয়ের জন্যমাপনাকে কাশীর পঞ্িতদিগেক্রু৫নিকটে যাইতে হইবে না। আমি স্বয়ংই উহা উত্তমরূপে লিখিয়৷ রাজার নিকটে প্রেরণ করিভেছি”। এই বলিয়া তিনি স্য়ংই বঠিফটোম” 'যঞজ সম্বন্ধে সমস্ত জ্ঞাতব্য বিষয় পুংখাস্ট খর়পে লিখিয়া 8 5. 1 রাজা রাজবল্লভের নিকটে পাঠাইয়া দিয়াছিলেন। রাজা উক্ত যন্ড্রপদ্ধতির উত্তম লিখন-প্রণালী দেখিয়া! বুঝিলেন যে, ইহা কাশীর কোন উত্তম পণ্ডিত কর্তৃকই লিখিত হইয়াছে । ইহ আনন্দময়ী কর্তৃক লিখিত হইয়াছে, তাহার এইরূপ ধারণাই জন্মিল না। তিনি অসন্দিগ্ধচি্তে এ পদ্ধতি অনুসারে রাজনগরে 'অগ্নিষ্টোম” য্ত্ত সম্পাদন করিয়াছিলেন। কাশীতে অবস্থিতি সময়ে আনন্দময়ী পরমহঃস মহাত্মা ও প্দগ্তীদিগের নিকটে বেদান্ত, উপনিষণ, সাংখা, পাতগ্ুল, ও মীমাংসাদর্শন অধ্যয়ন করিয়া- ছিলেন। ইতঃপুবেব সাহিত্য ও অলঙ্কার পাঠের পর রাজনগরেই *্যয় ও বৈশেষিকদর্শন অধ্যয়ন করিয়া- ছিলেন। তিনি কৃষ্ণদেব বিদ্যাবাগীশের নিকটে কলাপ- ব্যাকরণের কবিরাঞ্জী ও পঞ্জী প্রভৃতি কঠিন টীকাপুস্তক সকল এবং শ্রব্দখণ্ডের অনেক গ্রন্থ পাঠকরিয়াছিলেন । ষাহারা কেবলমাত্র বড় বৈয়াকরণ ব! শাব্দিক হইতে ইচ্ছা করেন, তাহারাই কলাপব্যাকরণ শেষ করিয়া এই সকল গ্রন্থ পাঠ করেন। আনন্দময়ী স্ত্রীলোক হুইয়াও এই সকল বিষয় অধায়ন করিয়াছিলেন। তিনি বঙ্গভাষায় উত্তম পদ্য রচন!করিতে স্পারিতেন। তাহার কবিতা সরল ও সুমধুর । অন্যান্য কবিদিগের মত তাহার যশোলিপ্দা ছিল না বলিয়া তাহার কবিতার শেষে নিজ নামের ভিতা দেখিতে পাঁওয়ু! যায় না। তাহার “হরিলীলা”র বর্ণন বর্ণ ৪ অতি মধুর। তাহার কবিতা শব্দালস্কারে সবিশেষ অমতস্কীত। উহ্াতে তাহার প্রগট পাণ্ডিত্য পরিলক্ষিত হয়। আনন্দময়ী মধুখভাষিণী বিশীতা এবং সববদ। লোকহিতে রতা চিলেন। সেন্হাটি, পয়গ্রাম, মুন্ঘর ও গপ্ন প্রভৃতি স্থানে অদ্যাপি আনন্দমীর নদ্যাখ্যাতি শুনিতে পারা ঘায়। আনন্দময়ী চিকি€সা-পা“সায়া অশ্থষ্ঠ জাতির (বৈদোর ) কন্যা ছিলন | হিলি ত্াঙ্ষণ দুঠিত। না হইয়া সংস্কতভাষ য় "উচ্চশ্রেণীর শি ক্ষত ছিলেন। পুরবপঙ্গ ও পাশ্চনণঞ্গে এইরূপ আনেক উচ্চ- শিক্ষতা মাহলা ছিলন। তাহাত্রে ইতিহাস আহাবে বঙ্গায় নারাগণের শিক্ষ। বিষয় অনেকের জান্তিপুণ ধারণা দোখতে গাওয়া যায় । হধুনা বনু পরিশ্রমে কযেকটি শাক্ষ'মহিলার ইিবুস্ত দ্ধ হওয়ায় ও সাধারণের নিকটে প্রকাশিত হণ্য়ায় অনেকের কুসংস্কার দুরাভুঠ হইবে, এইরাপ আশা করা যায়। রাণী চুর্গাবতী। ত'রতবর্ষ এক অদ্ভুত মহান্‌ অসাধারণ সভাদেশ। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে পুরুষ মহাপগ্িত হইয়াছে, রাজ- নীতি-বিশারদ হইয়াছে, মহ্থাযোদ্ধা হইয়াছে, বিখ্যাত ধর্ম প্রচারক হইয়াছে, মহাকবি হইয়াছে, জ্োতিষী ( ৩১৯৫ ) হইয়াছে, দার্শানক হইয়াছে, সমাজজ-সংস্কারক হইয়াছে, এবং প্রভুশক্তি উত্সাহশক্তি ও মন্ত্রশক্তি-সম্পন্ন রাজা হইয়া'ছ, স্থপ্রসিদ্ধ রাজমন্ত্রী হইয়াছে, কিন্তু সেই সকল দেশের স্ত্রীলোক সেই সকল দেশের উত্তবিধি পুরুষদিগের মত হইতে পারেন নাই। যদিও হয়! থাকেন, তাহ। হইলে ছুই একটি মাত্র হহয়াছেন। দেশী হয় নাই। কিন্তু ভাবঞ্জের অনেক মহিলা প্রাীন যুগেও, দর্শন, জ্যোতিষ এবং রা'জনাতি প্রভ্ুতি মহাকঠিন শান্স্রেণ মহাপগ্ডিতা হহয়াছেন, যুগ্ধবিদায় অসাধারণ নৈপুণ্য লাভ করিয়াছেন, রানাতশান্ত্ে মহাপঞ্িত মহামন্ত্রাকেপ্ত শিক্ষা দিতে সঃর্থ। হইতাছ্েন, দিংহল, চীন, জাপান ও হববত প্রভৃতি এাহক।লিক মহাদুর্গম দেশে গমন কবিয়। ধন্ম এ্রচার ক'এয়া/ছন, পিংহাসনে বসিয়া পুরুষ বাজাও ন্যায় প্রজার [বচারাকর কাষা কারয়'ছেন, দেদ্দগুপ্রহাপে রাজত্ব কিরাছেন এবং শক্রগণকে ভয় প্রদর্শ,ন কম্পিত করিয়া- চেন। ভারতমহিলা কষ্ট পুশুলিকার ন্যায় সিংহাসনে বদিধা £কনলমাত্র সিংহাসনের শোতানদ্ধন করেন নাই। কিহ্ছা মাক্ষীগোপালের মত কেনলমাত্র মন্্িগণ-পরিচালিত রা.জার অধিষ্ঠালী হইছে ইচ্ছা করেন নাই । ভারত-. মহিলা যু'দ্ধর সময় যুদ্ধ করিবার জন্য অশ্বে বা গজে অ'রোহণ করিয়া যুদ্ধ'ক্ষত্রে স্বয়ং অবতীর্ণ হইয়াছেন । এমন কি, মাত্র তিন চারিশত বর্ষ পৃর্বেবও ভারতমহিলা ( ৩১৬) “জগদীশ্বর” উপাধি-ভূষিত দিল্লীশ্বর মহাপ্রতাপ সম্রাট আকবর সাহের অন্যাযা অধিকারের বিরুদ্ধে স্বয়ং যুদ্ধ করিতেও ভীতা হয়েন নাই । যে সময়ে প্রবল প্রতাপান্থিত মোগলসআ্াট আকবর সাহের বিজয় পতাকা হিমালয়ের উচ্চশু্গ হইতে বঙ্গোপসাগরের প্রান্ত পর্য্যন্ত স্থানে পপ শন্দে উডডীয়মান হইত, সেই সময়ে মধ্যভারতের গটামণুলা- নামক একটি ক্ষু্দ রাজা স্বাধীনতার ক্ষুদ্রজ্যোতিঃ বিকীরণ করিয়া সকলের হাদয়কে বিস্ময়রমে আপ্র,ত করিয়াছিল। যে সময়ে ভারতের প্রতাপশালী রাজন্যবর্গ আক্বর সাহের প্রথর দোর্দও প্রতাপ নীরবে সময করিতেছিলেন, যে সময়ে আকবর সাহ ব্যাশ এবং ধেন্ুকে 'এক জলাশয়ে সমকালে জলপান করাইতেন, সেই সময়ে একটি ভারতমহিলা স্বায় ক্ষুদ্র রাজোর স্বাধীনতা রক্ষাকরিয়া৷ অপতানির্বিবিশেষে প্রজাপালন করিতেছিলেন, এই কথা একবার মনে ভাবিলেও কৌতুহলে ও আনন্দে শরীর রোমাঞ্চিত হইয়া উঠেন! কি? ররাজ্জী দুর্গাবতী রোটা ও মহোবার অধিপতি চন্দেলবংশীয় শালিবাহননামক রাজার ছুহিতা ছিলেন। যৌবন সমাগমে তাহার অসীম সৌন্দর্য ও গুণের কথা যখন সর্বত্র বিস্তৃত হইতে লাগিল, তখন তাহার পিতা তাহাকে রাজপুতানার কোন উচ্চকুলোতপন্ন । প্রতাপশালী কোন বীর রাজার অস্কলক্ষমণী করিবার জন্য চেষ্ট। করিয়া- ছিলেন। কিন্তু গঢামগুলার রাজা দলপতি সাহ দুর্গাবতীর ( ৩১৭ ) কূপ-গুণের প্রশংসা শুনিয়। তাহাকে বিবাহ 'করিবার জন্য - কৃতসংকল্প হইলেন এবং চন্দেলরাজের নিকটে স্বীয় মনোরথ অভিবাক্ত করিলেন। চন্দেলরাজের বংশ- মযাঁদা অপেক্ষ! দলপতি সাহের বংশ মর্ধাদ| অনেকাংশে নান হওয়ায় চন্দেলরাজ প্রথমতঃ দলপতি সাহের প্রস্তাব গ্ান্থ করিলেন না। দলপতি সাহ ইহা বুঝিতে পারিয়া চন্দেলরাজের নিকটে দু প্রেরণকরিয়া তাহাকে জানাইলেন যে, 'তিনি যদি এই বিবাহ-প্রস্তাঁৰ অগ্রাহা করেন বা অন্য কোন রাজার সহিত উহার কন্যার বিবাহ দেন, তাহা হইলে তাহার বিরুদ্ধে যুদ্ধাঘ।ষণা। করা হইবে এবং দলপতি সাহ অবিলম্ে তাহার রাজ্য আক্রমণ করিয়া তাহার ধ্বংসলাধন করিবেন। চন্দেলরাজের বংশমর্ষযাদ। উচ্চ হইলেও তিনি দলপতি সাহের ন্যায় ধনবলে ও লোক- বলে বলীয়ান ছিলেন না। অগত্যা তিনি নুানতা স্বীকার করিয়া দলপতির প্রস্তাবে সম্মত হইলেন। শুতদিনে প্ঠভক্ষণে দলপতি সাহের সহিত শ্রীমতী দুর্গাবতীর বিবাহ" কৃতা সম্পন্ন হইল। ছুর্গাবতী যথা সময়ে পতিগৃহে আগমন করিয়া স্বামীর দহিত স্থুখে কালযাপন করিতে লাগিলেন। দুই বতসর পরে তাহার একটি - সুলক্ষণধুক্ত পুজ ভূমিষ্ঠ হইল। একটি পুঞ্জ জন্মগ্রহণ করায় রাজ্যমধ্যে সর্বত্র কয়েকদিন মহামানন্দৌহসব চলিতে লাগিল। রাজা ও রাণী*পরমন্তখে রাজ্য-স্থখভোগ করিতে লাগিলেন। ( ৩১৮ কিন্তু দেব প্রতিকূল হইয়! তাহাদের সেই অনিববচনীয় সুখে বাধা জম্মাইল। রাজ! দলপতি সাহ হটাৎ মৃত্যুমুখে পতিত হইলেন। রাজ্যমধ্যে হাহাকার পড়িয়া গেল। সকলেই শোকসাগরে নিমগ্ন হইলেন। নির্দিষ্ট দিনে রাজার শ্রাদ্ধাদি ক্রিয়া সম্পন্ন হইলে পর রাজ্ছী দুর্গাবতী স্বামিশোকে অতান্ত কাতরা হইলেও কর্তব্পালনে পরাত্ধুখী না হইয়া একটি শুভদ্িনে সিংহাসনে অধিরূটা হইলেন, এবং স্বয়ংই রাজা-পালন কন্ম্ে নিযুক্ত হইলেন। ঘাহারা রাজার শোকে অধীর হইয়াছিল, তাহারা রাণীর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিয়া ধৈর্য্য ধারণ করিল। রাণী গীতায় শ্রীকুষ্কোপদিষ্ট ভ্তান লাভকরিয়াছিলেন বলিয়া শোক ংবরণ করিতে চেষ্টা করিতে লাগিলেন। ঈশ্বরের চরণে মতি রাখিয়া ফলাকাঙক্ষাবর্জনপূর্ববক মাত্র কর্তব্য কর্ম্মের অনুষ্ঠানে রত রহিলেন। সকলেই ঈশ্বরের নিকটে রাক্কুমারের প্চতকামনা করিতে লাগিল। রাজকুমার বীরনারায়ণ সাহের বয়ঃক্রম তখন পাঁচ বুসর মাত্র। রাণী দুর্গাবন্তী পুত্রের ঈদৃশ অল্প বয়সেই পুত্রকে অশ্বারোহণ ও অন্ত্রচালনা প্রভৃতি কার্যে স্থুশিক্ষা দিবার ব্যবস্থা করালেন। রাজ্যমধ্যে সর্বত্র সকল বিষয়ে স্থবাবস্থা করিতে লাগিলেন। প্রঙ্গাবর্গ তাহার স্বৃবাবস্থা- নৈপুণ্য অবলোকন করিয়া বুঝিতে পারিল যে, রাজার ক্সভাঁবে রাগী ক্নাক্তকার্যয-পরিচালনে স্বদক্ষ। ৷ প্রজাবেরি ( ৩১৯) মহাসস্তোষ বিধানকরিয়া রাণী কয়েক বসর যাবৎ নির্ব্িত্বে রাজকার্ধ্য পরিচালন করিতে লাগিলেন । তিনি: রাজকাধ্যে যখন কিঞ্চিৎ অবসর পাইতেন, তখন মুগয়ায় বহির্গত হইতেন। ব্যাঘ্রাদি ভীষণ জন্তুর শীকারে তাহার নিপুণতা ইতিহাসপ্রসিদ্ধ। অশ্থগজপরিচালন! ও ধনুর্বিবদযা প্রভৃতিতে তিনি অসাধারণ নৈপুণ্য লাভকরিয়াছিলেন। এই স্ময় সম আকবর সাহের মহাপ্রতাপ সর্বত্র পরিব্যাপ্ত হইয়া 'পড়িয়হিল। কিন্তু তিনি বা তাহার পূর্বববন্তী কোন মুসলমান সমআটই গঢ়ামগুলা-রাজোর স্বাধীনতা-হরণের অভিলাষকেও মনে স্থান দিতে সাহসী হয়েন নাই। কারণ, এই রাজ্যের চতুদ্দিকেই মহা- নিবিড় জঙ্গল ছিল । এবং ইহা বনুসংখ্যক ছুর্ভেদ্য দুর্গ দ্বারা বেছিত ছিল। ইহার গোগুজাতীয় অধিবাসিগণ অসীম দসাহমী ঘোর কম্টসহিষু ও প্রবলপরাক্রমী ছিল। স্বদেশের স্বাধীনতা-রক্ষা ইহাদের ইফ্টমন্ত্র ছিল। ইহারা এই মন্ত্রের পরম জাপক ছিল। ইহাদের ভয়ে দিল্লীর কোন সম্রাটই ইহাদের রাজ্য আক্রমণকরিতে লাহসী হয়েন নাই। ন্ুৃতরাং মুসলমানদিগের প্রথমভারত- আক্রমণ-সময় হইতে রাণী ছুর্গাবতীর রাজত্বকাল পর্ধ্যন্ত ইহার স্বাধীনতা কক্ষু্ ছিল। রাণীর রাজ্য অতি বিস্তৃত ছিল। মালবদেশে গঢ়া ও মগুলানামক ছুইটি যতন স্থান আছে + ষগুলা একটি জেলা । ইহা জব্বলপুরের চু 451 দক্ষিণে প্রায় ৬ মাইল দুরে অবস্থিত এবং গঢ়ানামক একটি গ্রাম বর্তমান জববলপুর সহর হইতে ৪ মাইল দুরে পশ্চিম দিকে অবস্থিত। এই স্থানে রাণী ছুর্গাবতীর মদ্নমহলনামক একটি ছুর্গ আছে। এই ছুর্গটি একটি পাহাড়ের উপরে অবস্থিত হওয়ায় বন্তদুর হইতে ইহ দৃষ্টিগোচর হইয়। থাকে । মদনমহল হইতে ৪ মাইল দুরে পূর্বদিকে কটঙ্গানামক একটি পাহাড় আছে।, সেই পাহাড়ের উপর আর একটি দুর্গ ছিল। এই পাহাড়ের নামানুসারে ইতিহাস-লেখক ইলিয়টু সাহেব নিজের ইতিহাসে রাণী দুর্গাবতীর রাজ্যকে গট়াকটঙ্ক এই নামে মভিহিত করিয়াছেন। অনেক, অনুসন্ধানের পর জানা গেল যে, কটহ্ক নামে তথায় কোন স্থান নাই। কটঙ্গানামক পাহাড়ের অস্তিত্ব মাত্রই অবগত হওয়! যায়। ইংরাজ এতিহাসিকগণের বর্ণ-সংযোজনার বিকৃতি দোষ অনুকরণ করিলে মনেক সময়ে সত্যের আবিষ্কার করা মহাকঠিন হইয়া পড়ে। রাণী ছুর্গাবভীর রাজা জববলপুর অঞ্চলে “গঢ়ামগ্ডলা” এই নামেই অদ্যাপি সমধিক প্রসিদ্ধ আছে। গঢ়া ও মগ্ুডলা ছুইটি ন্বতশ্্র স্থান। এই দুইটি নাম যুক্ত হইয়া রাণীর রাজ্যের নাম হইয়াছে গঢ়ামগ্ডলা। এই রাজ্য তগুকালে বলুসংখাক অভেদ্য উচ্চ দুর্গ ও প্রাচীর দ্বারা বেট্িত ছিল। কোন বিদেশীয় রাজা সহসা এই রাজো প্রবেশ করিতে পারিত না। ইহা শ্ুজল সুফল ও ( ৩২১ ) শস্তশ্যামল ছিল। ইহা অতি সমুদ্ধিশালী রাজ্য ছিল। এই রাজ্যে সন্তর হাজার (৭০০০০) ধনজীনপূর্ণ গ্রামের অস্তিত্ব শ্রুত হওয়! যায়। তগকালে গঢ। একটি সমৃদ্ধিশালিনী নগরী ছিল। সম্প্রতি ইহা একটি ক্ষুত্র গ্রামে পরিণত হইয়াছে । যেখানে চৌড়াগঢ়নামক দুর্গ ছিল, তথায় রাজধানী ছিল। রাজ-পরিবার এ তুর্গমধ্যে বাস করিতেন । রাজোর প্রজাগণকে যুদ্ধবিদ্যা শিখিতে হইত। প্রজাবর্গ পরিশ্রমী ক্লেশসহিষু) দুকায় ও যুদ্ধনিপুণ ছিল। সেইজন্য এই রাজ্য অতি প্রাচীনকাল হইতে আকবরের রাজহ্থের প্রারস্তকাল পধ্যন্ত মুসলমানগণ অধিকার করিতে পারন নাই এবং ইহা দিল্লীর সহিত সংযুক্ত হয় নাই । রাণী, ঘন- ব্মতিপূর্ণ তেইস হাজার প্রধান প্রধান গ্রাম সাক্ষাৎ সম্বন্ধ স্বীয় তত্বাবধানে রাখিতেন এবং অবশিষ্ট বন সহমত গ্রাম তহার অধীনস্থ প্রধান প্রধান সর্দারগণের তত্বাবধানে থাকিত। | গুজরাটের স্থলতানবাহাছুর যখন রাইসীন্‌ দুর্গ জয় করিতে আনিয়াছিলেন সেই সময়ে, রাণী দুর্গাবতীর শ্বশুর রাজা আমন্দাস তীহাকে যথেষ্ট সাহাধ্য করিয়াছিলেন । সেই জন্য স্বলতানবাহাছুর সন্তরষ্ট হইয়া তাহাকে বহুধন উচ্চসন্মান ও সংগ্রামসাহ এই উপাধি প্রদ্দান করিয়া- ছিলেন। রাজা আমন্দাসের পুত্রই দলপতি সাহ। ইনিই, ধনজন-প্রভারে উচ্চশ্রেণীর ক্ষত্রিয্ন রাজা শালিবাহনের ( ৩৬২২ ) কন্যা! রাণী দুর্গানতীকে বিবাহ করিয়ীছিলেন। রাজা শালিবাহন ছুরধস্থায় পতিহ হওয়াতেই তিনি বাধা হয়া জাাংশে নিকুষ্ট রাজা দলপতি সহের করে স্বীয় কন্যা দুর্গার তীকে সমর্পণ কারয়াছিলেন। রাণী দুর্গার শী অসাম ন্যা স্নন্দরা ছিলেন এবং একট স্ত্রশিক্ষিতা রাজী হহপার উপযে।গী সদ্‌গুণর/শিতে পিভৃষিঠ। ছিলেন। দলপতি সাহ |সংহাসনে অ'বুট হহয়া সাত বসব মাত্র বাজ কখিয়া মৃত্ামুখে পতিত হহয়ািলেন। তাহার মুাব পব রাণী প্রত ই [সংহাদনে আধরঢ হয়া রাজত্ব কিয়া ডা.লন। অধরনামন্ধ এচ বুকস স্রহর কাংস্থ রাণী দুর্গ পশীর মন্রিহ লাভ ক'রযা রাঙগাপাগন কম্মে রণ (ক সংভাযা কঠন মাও্র। রাণা মন্ত্রার উপদেশ গ্রস্ণ কারন বটে, |কন্থু নিলে ঘা ভাল বুঝিতেন তাহাই কাবা তন মন্ত্রার উপদেশের উপর একান্ট শির্ভর ক্যা রাজ কাযা চালাহতেন ন 1 মে মধো অধারর মন্ত্রণায় তত দোষ (দগাহযা দিতিন | অধর বাজনাতিশাস্ছে «পাও বুদ্ধামনা দশনে পম সময়ে স্ম্তিত হইহয় যাইতিন। আধ ভাল মন্ত্রা হই.লও ভ'প যোদ্ধ। ছিলেন ন। । যুদ্ধ পং ক্লান্ত মন্ত্রণার সমব রাণীর মঠই প্রবল থাকিত। রাণী বাজকা্ষা কিঞ্চৎ অনসর পাইলেই বনে মবগযা করিতে যাইন্নে। সন বিভাগের প্রধান প্রধান ভীমমুস্তি ও ভীমবল মৃগয়!- নিপুণ ব্যক্তি যে সকল তীধণ বৃহৎ ব্াস্র ভল্লুগা্দি জন্তু-ক ৃ্‌ ৩.৩) মুগথাকালে কখনও বধ করিতে পারে নাই, বাণী ছুর্গ'নতী সেহ সঞ্ল দুর্দিমা ভীষণ বন্ট স্'ক মুহৃর্তমধা বধ ক'রতে , পারতেন । তাহার লক্ষ) বকখ*ন্ ভ্রষ্ট ১হত না, উহা সদাই হাহাৎ গন্ধ দারা বন্ধ হয় মু?মুখে পাতি হইত । তিনি নগর।? ভব বুজস্ক মুগয়া-&দ* হইতে রাজ ধ শীতে আনয়ন কাতাতন। নিহত কুহু তুহ ঝাদ্রাদ ভীষণ ভশ্ুর শরীর ভিহর হইতে রক্ত শস্য মা'সাদ বাহর করিয়া শদঠ.। (খড়) পুবিয়া রাখ, হঈত। উ্ার। ভীপহবহ প্রচারমান হইয়া রাঙজবাটার স্থান বিশোঘর শোভা শ্দ্ধন করিত এবং বাণীর মবখযা-নৈপুণা সূচিত কারত! সা পা.কর* এইরূপ মৃগধা নিপুণহা পুথবীর কু্জাপি কেহ শুনে নাই । কেবলমাত্র ভাতের মহিলাজাতিরই এইকপ নিপুণতা ভ্রু হহযা থাকে । রাণী ছুগাবতী যেমন মুগয়ায় হৃনিপুণ। ও স্তরশিক্ষিতা ছিলেন, তুন্রপ যুদ্ধ বদ'য়ও, তাহার অসাধাণ্ণ নিপুণন্তা ছিল। ঠিনি যুদ্ধ ব্যায় মহাশিক্ষিত। চিগেন। পারসীক ও ইংরাজি ইতিহাসে তাহার সাহস, নিভীকতা, রাজকার্য্য-দক্ষতা, বিচারশক্তি এবং বিচক্ষণহার যথেষ্ট প্রশংসা দেখিতে পাওয়া যায়। তিনি “অন্যান্ত বৈদেশিক স্বাধীন নরপতি- গণের সহিত রাজনীতিক সম্বগ্ধ স্থাপন করিয়া! রাজনীতি- কুশলহার যথেষ্ট পরিচয় প্রদান করিতেন। সম্রাট" আকবর সাহ কর্তৃক মালবদ্শে বিজিত হইলে পর স্ুজা- ( ৩২৪ ) ওল্খা এই দেশের শাসকরূপে নিযুক্ত হইয়াছিলেন। তাহার পুত্রের নাম বাজবাহাদুর। এই বাজ বাহাদুর একজন ছুর্দম্য যোদ্ধা ছিলেন। ইহার সহিত রাণী দুর্গাবতীর বনুবার যুদ্ধ হইয়াছিল। প্রতোক যুদ্ধেই বাজ, বাহাদুর রাণী কর্তৃক পরাজিত হইয়াছিলেন। ইনি রাণীকে অত্যন্ত ভয় করিতেন। যখন মালবের মিয়ান্‌ পাঠানগণ তাহাদের শক্র বাজ বাহাছুরকে উৎখাত করিয়া ইব্রাহিম্খানামক এক ব্যক্তিকে মালবের অধিপতি করিবার চেষ্টা করিয়াছিল, এবং যুদ্ধে ইব্রাহিম্‌ খাকে সাহাযা করিবার জন্য ছুর্ভেদ্য সৈম্যবাহ রচনা করিয়াছিল, তখন ইব্রািমর্থ। তাহাদের পহিত যোগদান করিয়া যুদ্ধ ক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইয়াছিকেন। সেই সময়ে রাণী দুর্গাবতী ইব্রাহিম খাঁর সাহায্যার্থ স্বীয় প্রভূত সৈন্য সহ তথায় আগমনপুর্বক সেই যুদ্ধে যোগদান করিয়াছিলেন। বাজবাহাছুর যুদ্ধক্ষেত্রে রাণীকে এইরূপে সমাগত দেখিয়া যুদ্ধ-জয়ের আশা পরিত্যাগকরিয়াছিলেন এবং নিজেব পরাজয় অবশ্যস্তাবী মনে ক্ষরিয়া মহাভীত হইয়াছিলেন। পরে তিনি রাণীর চরণতলে পতিত হইয়া এই যুদ্ধে যোগ- দান হইতে বিরত হইবার জন্য রাণীকে সামুনয় প্রার্থনা করিয়াছিলেন । বাজ বাহাদুরের মত উ্তপ্রকৃতির লোকও, রাণীকে এতই ভয় করিতেন। . খোয়াজাআবৃহুলমঞ্জিব- :খানামক এক ব্যক্তি সস্তা আরুরর ' সাছের বড়ই ( ৩২৫) প্রিয়পাত্র ছিলেন। তিনি দেওয়ানী বিভাগে একটি উচ্চকর্্রে নিযুক্ত ছিলেন মান্র। কিন্ত তিনি স্বীয় কর্ম দক্ষতাগুণে সম্রাটের সন্তোষ উত্পাদন করায় দেওয়ানি বিভাগ হইতে যুদ্ধকার্যা-বিভাগে সেনানায়ক-পদে সম্রাট কর্তৃক নিযুক্ত হইয়াছিলেন। তিনি সাম্রাজ্য-বদ্ধন বিষয়ে কয়েকটি প্রশংসাজনক উচ্চ রাজকার্ধ্য সম্পাদন করায় সম্রাটের নিকট হইতে “আস্ফ খ।” এই উপাধি এবং মালবদৈশান্তর্গত কারানামক প্রাদেশ “জাইগির” রূপে প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। তিনি মালবের অন্তর্গত পান্নানামক স্বাধীন রাজ্য হাধিকার করিকার জন্ সম্রাট কর্তৃক আদিষ্ট হইয়া পান্না- রাজকে পরাজিত করিয়াছিলেন । পান্ারাজ্য দিল্লীর অধীনতা-পাশে বদ্ধ হইলে পর, রাণী দ্বর্গাবতীর রাজ্যে তাহার দৃষ্টি পড়িল। রাণী সে সময়ে দোর্দগু প্রতাপে স্বীয় রাজকাধধ্য নির্ববাহকরিতেছিলেন। আসফু খা, রাণীর এই মহাপ্রতাপ বিলক্ষণ অবগত ছিলেন। মেই জন্য তিনি সহদা একটা অশুভ পরিণামের কার্ধ্য না করিয়া রাণীর রাজ্যে প্রবেশের জন্য ছিদ্রানুসন্ধান করিতে লাগিলেন। রাণী, আসফ্থার এই ছিত্রানুসন্ধান বিষয়ে প্রথমতঃ কোন লক্গাই করেন নাই । কারণ, তিনি সম্রাট আকবর সাহকে অপুযাত্র, ভয় করিতেন না স্জাটের কোন লোক ফে হার রাজ্যে প্রবেশের জন্য ছিজ্ান্ু ন্ধান টহ ( ৩২৬) করিতেছে, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ তাহার হৃদয়ে স্থান পাইত না। তিনি অত্যন্ত গর্ব্বিতা ও স্বাধীনতা-প্রিয়া ছিলেন। তিনি তাহার অদম্য সাহসের উপর নির্ভর করিয়। স্বীয় রাজ্য পালনকরিতেন। তিনি এই পর্যন্ত জানিতেন যে, পান্নারাজ্যের মধ্যে সম্রাট মাকবরের আমফ- গা নামক একজন কর্মচারী বাস করিয়া থাকে মাত্র 1. সে বাক্তি তীহার কোন অনিষ্ট ই করিতে সমর্থ নহে। হৃতরা*- হাহার কার্ধো রাণী প্রথমতঃ জক্ষেপই করেন 'নাই। স্লচতুর আসফ্‌ খা কিন্তু রাণীর রাজ্যে প্রবেশের উপায়- পথ পরিক্কত করিবার জন্য রাণীর সহিত প্রথমতঃ সখা- সম্বন্ধ স্থাপনকরিয়া রাণীর বিশ্বাসপাত্র হইবার জন্য অনেক প্রকার চেষ্টা করিতে লাগিলেন। আসফ, খা রাণীর বাজামধ্যে প্রবেশ ও নির্গমের উত্তম উপায়-নিদ্ধীরণের নিমিত্ত সুদক্ষ গুপ্তচর এবং পণাত্রব্য-বিক্রয়ের ব্যপদেশে বনিকগণকে প্রেরণকরিতে লাগিলেন। যখন তিনি এইরূপ উপায়ে রাণীর রাজ্যমধ্যে প্রবেশ ও নির্গমের পথ, রাণীর সৈন্য-সামন্ত অস্ত্রশস্ত্র ও দুর্গপরিখাদির বিবরণ, এবং কোষাগারে সঞ্চিত অতুল ধনরত্বাদির সম্বাদ অবগত হইলেন, তখন তিনি রাণীর রাঞ্জ জয়করিবার নিজ উপায়-উদ্ভাবনে ব্যস্ত হইয়া পড়িলেন। রাণীর রাজ্যের সীমান্তের পরই তীহা'র জাইগিরের সীম! আরন্ধ হইয়া- দ্বিল। তিনি প্রথমে রাণীর রাজ্যের সীমান্ত প্রদেশের ( ৩২৭) গ্রামশ্থ প্রজাবর্গের ধন-শস্তাদি লুণ্টনকরিতে আরম করিলেন। এতাবগুকাল পর্য্যন্ত তিনি দিল্লী রাজধানীতে সগ্রাটু আকবর সাহকে রাণীর রাজ্য জয়করা সম্বন্ধে কোন বিষয়ই নিবেদন করেন নাই। কেবল নিজের ইচ্ছানু- সারেই এই সকল কাধ্য করিতেছিলেন। এক্ষণে তিনি রাণীকে পরাজয়করিবার জন্য স্বীয় লিপি-চাতুর্যো নানা- প্রক্কারে সম্াটকে প্ররোচিত করিতে লাগিলেন । সম্রাট, বার বাঁর এইরূপে গ্ররোচিত হইয়া স্বীয় সাআজরাজা-বিস্তারের লোভ সন্বরণকরিতে না পারিয়া অবশেষে রাণীর রাজোর, ধ্বংসের জন্য দিল্লী হইতে মালবদেশে প্রভূত সৈন্য-সামন্ত প্রেরণকরিলেন। রাণী এতাবগকাল পধ্যন্ত এ সকল বিষয় কিছুই অবগত ছিলেন না। ভিনি নিজের প্রবল- শক্তি ও সাহসের উপর নির্ভর করিয়৷ অকুতোভয়ে নিজরাজ্য প্রতিপালনকরিতেন, কোন বিষয়ে ভ্রক্ষেপ করিতেন না। তাহার এই বিশ্বাম ছিল যে, তিনি ঘতকাল জীবিত থাকিবেন, ততকাল তীহার রাজা জয়করিতে পারে, বর্তমান কালে এমন লোক কেহই নাই। রাণীর এইরূপ গর্বব, সাহস, উপেক্ষাভাব এবং স্বশক্তির উপরে একান্ত নির্ভরশীলতাই তাহার রাজ্য- ধ্বংসের কারণ হইয়াছিল। তাহার কোন দৌষই ছিল না, কেবল এই টুকুই মাত্র দোষ ছিল। তিনি হটাৎ সগ্থাদ পাইলেনু ঘে, সম্রাট আকবরের বহুসংখ্যক ..সৈস্ ( ৩২৮ ) দামুদানামক তাহার অন্যতম নগরীতে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে । সে সময়ে তাহার নিকটে বিশ হাজার অশ্বারোহী সৈন্য ছিল। কিন্তু, যে সময়ে তিনি হটাৎ শক্রপক্ষীয় সৈম্- সমাগম-বার্ত। শ্রবণ করিয়াছিলেন, সে সময়ে তাহার পাঁচ- শত মাত্র সৈশ্য যুদ্ধার্থে সড্জিত ছিল। তীহার প্রধান মন্ত্রী অধরকায়স্থের উপরে তাহার রাজ্যের সমস্ত ভার অর্পিত ছিল। অধর তাহার নিকটে উপস্থিত হুইয়৷ কৃতাগ্তলিপুটে হটাগড মোগলসৈম্যের সমা গম-বার্ত! নিবেদন করিলে তিনি বলিলেন, অধর, তোমার অদুরদর্শিতা ও নির্ববদ্ধিতা- দোষেই এইরূপ ঘটনা ঘটিল। তুমি যদি রাজ্যের সকল বিষয়ে সম্ক্‌ অনুসন্ধান রাখিতে, তাহাহইলে হটাঁৎ এইরূপ বিপত্তি ঘটিত না। যাহাই হউক, এক্ষণে চিন্তা বা পরামর্শ করিবার অবসর নাই। বহুকাল পধ্যন্ত আমার এই রাজ্য আমি স্বয়ং শাসনকরিয়া আমিতেছিলাম । কেবলমাত্র কয়েক বশর যাব তোমার হস্তে ইহার সমস্ত ভার অর্পন করিয়া আমি তুর্বহ ভারের লাঘব-জনিত কিঞ্চিৎ বিশ্রাম- স্থখ অনুভব করিতেছিলাম। আমি যখন রাজ্যের সকল বিভাগের সমস্ত ভার স্বহস্তে ািাছিলাম, তখন এবূপ কলঙ্কজনক কোন ঘটনাই ঘটে নাই। এক্ষণে তোমার দোষেই আমার এইরূপ বিপত্তি ও অপমান ঘটিল। আজ যদি স্ট আকবর স্বয়ং আমার সম্মুখে আনিয়া উপস্থিত ( ৩২৯ ) হইতেন, তাহ! হইলে আমি. তাহাকে যেরূপ বলা উচিত তাহা বলিতাম। কিন্তু এক্ষণে তাহা বল! নিপ্রুয়োজন। এক্ষণে যুদ্ধ করা ছাড়া আমাদের অন্য কোন উপায়ই নাই । আমরা ক্ষত্রিয়জাতি। যুদ্ধই কষত্রিয়জাতির মানরক্ষার একমাত্র উপায় । ক্ষভ্রিয়রমণী যুদ্ধে ভয় পায় ন:। শত্রুপক্ষায় সৈন্যের সম্মুখীন হওয়া আমাদের নিত্তা- নৈমিত্তিক কর্ম । উহাতে আমর! ভীত হই না। ভয় কাহাদকে বুল তান্তা আমি জানিই না। এই কথা বলিয়: রাণী ছুর্গাৰত- সআাট-সৈন্যের গতি-বিধি লক্ষা করিবার জন্য চারিদিকে চ'রিটি অভিযানের আদেশ প্রদান করিলেন । কতিপয় সন্য ও প্রধান মন্ত্রী অধর কায়স্থ তীহার সঙ্গে রহিল। কালে ভারপ্তে রাজোর প্রধান মন্ত্রীকেও যুদ্ধ করিতে হই | মন্ত্রীর কেবলমাত্র মন্ত্রণানৈপুণ্য থাকিলেই চলিত না। এই সময়ে এক গুপ্তচর রাণীর নিকটে সহসা উপস্থিত হইয়া বলিল ষে, আসফ, খা বহু সৈম্ত সহ ড্রুত- বেগে দামুদ' পর্যন্ত আসিয়াই থামিয়া গিয়াছেন। আর বেশী দূরে অগ্রসর হইতেছেন না। তথায় বিলম্ব করিতে- ছেন। বহু অনুসন্ধানেও তাহার এই বিলম্বের কারণ বুঝিতে পার! গেল না রাণী এই কথা শুনিয়াই এই স্বযোগে বহুসংখ্যক সৈন্য সংগ্রহকরিতে সচেষ্ট হইলেন। তিনি এই অল্প সময়ের মধ্যে চারি হাজার অতিরিক্ত সৈঙ্ জংগ্রহকরিলেন । তীহার পারিষ্দবর্গ তাহাকে বলিলেন ( ৩০ ) যে, আপাততঃ যে পরিমিত সৈন্য সংগৃহীত হইয়াছে, দ্বারা শত্রুপক্ষের সহিত যুদ্ধ আরন্তকরা যাইতে পারে। এতদ্পেক্ষ। আরও অধিক সৈম্ত সংগ্রহেরও ব্যবস্থা করা হইয়াছে। যতক্ষণ পর্যান্ত উহারা আাপিয়া উপস্থিত না হয়, ততক্ষণ পর্য্যন্ত একটি স্থপুপ্ত নিরাপদ স্থানে অবস্থিতি করাই এক্ষণে আপনার পক্ষে উচিত। রাণী এইরূপ মন্ত্রণায় সম্মত হইলেন এবং এক নিবিড় অরণ্যানীর মধ্যে কতিপয় সৈন্য সহ প্রবেশ করিলেন। তীহার রাজ্যস্থ মিনিড় অরণ্যানীর মধোও তাহার অনেক দুর্ভেদা গুপ্ত সুদৃঢ় ছুর্গ ছিল। তিনি এরূপ একটা দুর্গের মধ্যে অবস্থিতি করিতে লাগিলেন এবং শত্রুপক্ষের গতি-বিধির অনুসন্ধান লইঙে লাগিলেন। আমসফখা। অনেক অনুসন্ধান করিয়। যখন রাণীর গতি-বিধির কোন সন্ধানই পাইলেন না, তখন তিনি, নিবিড় জঙ্গলের মধ্যে রাণীর অনুসন্ধান করা বৃথা, এইব্ূপ ভাবিয়া রাণীর রাজধানী গঢ়া ও তন্নিকটবর্তা গ্রাম নগরাদি আক্রমণ ও লুণ্টন করিবার জদ্য তদভিমুখে ধাবিত হইলেন। রাণী এতাবগুকাল পর্যন্ত জঙ্গলমধ্যে অবশ্থিতি করিয়া পূর্ববাপেক্ষা পাঁচ হাজার অতিরিক্ত সৈম্য সংগ্রহ করিয়াছিলেন । আসফখ গা অভিমুখে যাইতেছে, এই সম্াদ পাইবামাত্র রাণী জঙ্গল হইতে বাহির হইয়া াসফ. খীর গতিরোধের জন্য সসৈম্যে গটাভিমুখে ধাবিত ( ৩১১ ) হইলেন। গটায় আমিবার সময় তিনি স্বীয় সৈন্যের মধাভাগে হস্তিপৃষ্ঠে আরূ হইয়া সৈম্গণকে সময়োপ- যোগী জাতীয় সঙ্গীত ও উচ্ৈঃস্বরে উপদেশ দারা যুদ্ধার্থ উত্তেজিত করিতে করিতে মাসিয়াছিলেন। তীহার উত্তেজক বাক্য শ্রীবণকরিয়া সৈম্যদিগের সাহস চহ্গুণ বন্ধিত হইতে লাগিল। পথে উভয় পক্ষীয় সৈম্যের পরস্পর সাক্ষাঙুকার ঘটিল। এবং উভয় পক্ষে ভীষণ যুদ্ধ "আারদ্ধ হইল রাণী এই ভীষণ যুদ্ধে জয়লানচ করিয়াছিলেন। তিন শত মোগলসৈম্য এই যুদ্ধে নিহত হইয়াছিল এবং বন্ুসংখ্যক মোগলসৈম্য অত্যান্ত আহত হইয়াছিল ।, রাণীর অতি মল্পসংখ্যক মাত্র সৈম্য হত ও মাহত হইয়াছিল। মোগলসৈম্য রাণীর সৈন্যের ভীষণ আক্রমণ সহা করিতে না পারিয়! রণক্ষেত্র পরিত্যাগ করিয়। এবং ইতস্তরত্তঃ বিক্ষিপ্ত হইয়া প্রাণভয়ে পলায়ন করিতে লাগিল। রাণী ও তীহার সৈন্যগণ এঁ পলায়মান মোগল সৈম্যদিগকে আক্রমণ করিবার জন্য তাহাদের পশ্চা ধাবিত হইলেন। বন্থুদূর অমুনরণ করিয়! তাহাদিগকে আক্রমণ করিলেন। কতকগুলি সৈন্যকে নিহত করিলেন এবং কতিপয় আহত প্রধান প্রধান সেনানীকে বন্দী করিয়া গঢ়ায় আনয়ন করিলেন। আসফ খা প্রাথভয়ে যে কোনদিকে পলায়ন করিলেন, তাহার [কোন সন্ধানই পাওয়া গেল ন]। আসফার এই পরাজযবার্থা দিল্লীতে ( ৩৩২ ) সঞ্রাটু আকবরের নিকটে যথা সময়ে পৌছিল। সম্সাট- একটি হিন্দু বিধবার এইরূপ অসাধারণ পরাক্রম এবং অদৃষপূর্বব ও অস্রুতপূর্বব রণনৈপুণ্য শ্রবণকরিয়া বিস্ময়সাগরে মগ্ন হইলেন এবং তাহার ইন্দ্রসভাভুল্য দরবারে যে সকল “পাঁচ হাজারী” ও “দশ হাজারী”-._ পঞ্চসহঅসৈন্নায়ক এবং দরশসহতঅসৈন্ানায়ক আমীর ওমরাহগণ বসিয়াছিলেন, তাহাদিগকে সম্বোধনকরিয়া বলিতে লাগিলেন “আপনারা হিন্দুশাস্ত্র ছাড়া! কোনশ্শান্ত্ে স্্রীলোকের এইরূপ বীরত্বের কথা পাঠ করিয়াছেন কি? আমীর ও ওমরাহগণ বলিলেন “না, খোদাবন্দ, আমারা! কখনই এমন অদ্ভুতবার্তা শ্রবণকরি নাই 1” ,কোন কেন নানাসংবাদজ্ঞ সভাসদ বলিলেন, খোদাবন্দ, “গুন! গিয়াছে যে, হিন্দুদের খগ্বেদে লিখিত আছে যে, ইন্দ্রসেনানান্সী রমণী ঘোটকে আরোহণ করিয়া শত্রুপক্ষের সহিত যুদ্ধ করিয়াছিল এবং তাহাদের “চণ্তী”তে লিখিত আছে যে, হৈমবতীনান্ী এক রমণী অস্ট নায়িকার সহিত সশ্মিলিত হইয়া চগ্ু-মুণ্ড রক্তবীজ ও শুস্ত-নিশুস্ত প্রভৃতি ভীষণ অস্ত্ুরগণের সহিত যুদ্ধ করিয়! তাহাদিগকে নিহত করিয়াছিলেন। কিন্তু উহা! প্রাচীন যুগের কথা। উহা কেহ বিশ্বাস করে, কেহ বা বিশ্বাস করে না। কিন্ত হিন্দু- দিগের এই কলিষুগে স্ত্রীলোকের এইরূপ যুদ্ধজয়কাছিনী কোন দেশে কখনও কেহ শুনে নীই। ইহা বড়ই ( ৩৩০ ) বিশ্ময়জনক কথ! !” সআরট আকবর ও তাহার পারিষদগণ এইরূপে রাণী ছুর্গাবতীর বছ প্রশংসা করিতে লাগিলেন । রাণীর প্রশংসায় সমস্ত দরবারগৃহ প্রতিধ্বনিত হইতে লাগিল। আমফ খার পরাজয়'জনিত অপমানের কথা ক্ষণকালের জন্তু সকলেই যেন ভূলিয়৷ গেলেন। সকলেই আকবর সাহ-কৃত রাণীর প্রশংসায় যোগদান করিলেন । ভারতমহিলার এইরূপ বীরত্বের প্রশংসায় আকবরের যায় ব্োর্দগু প্রতাপ সম্রাটের দরবার মুখরিত হইয়াছিল, ইহ। একবার মনে করিলে কোন্‌ হিন্দু না আনন্দে পুলকিত হয়েন? আসফখা পরাজিত হইয়া দিল্লীতে সম্রাট্‌-সমীপে এই যুদ্ধের বিবরণ লিখিয়া পাঠাইলেন 'এবং পুনরায় রাণীর রাজ্য আক্রমণকরিবার জন্য অধিকসংখ্য ক সৈন্যের সাহায্য প্রার্থনা করিলেন। সম্তরাট্‌, মানকখ!কে লিখিলেন__“আবছুলমঞ্জিদ্‌, কয়েকটি যুদ্ধ তোমার শৌধা- বীর্য/-দর্শনে সন্তষ হইয়া আমি তোমাকে “আমফ, খ।” এই উচ্চ উপাধি ও মালবদেশে জাইগির প্রদান করিয়া ছিলাম। তুমি যখন এ হিন্দু বিধধার রাজ্য আক্রমণ করিবার জন্য আমার নিকট অনুমতি প্রার্থন! করিয়াছিলে, তখন আমি মনে করিয়ছিলাম যে, তোমার মত লোকের পক্ষে সামান্য হিন্দু বিধবার ক্ষুপ্র রাজ্য আক্রমণকর! অতি সহজ ব্যাপার। তাই আমি তখন তোমাকে অনুমতি প্রদান করিয়াছিলাম। কিন্তু তখন তুমি এ হিন্দু বিধবার ( ৩৩৪ ) পরাক্রম সম্বন্ধে বিস্তৃত বিবরণ প্রদান কর নাই। আমি যদি তখন ইহা জানিতে পারিতাম যে, এ মহিলা সামান্য অবলা নয়, কিন্তু এ মহিলা, বাজ, বাহাদুরের মত দুর্দান্ত লোককেও ভীত চকিত করিয়া ম্ববশে রাখিতে পারে, তাহা হইলে আমি বিশেষ বিবেচনা করিয়া তাহার রাজা- আক্রমণের নিমিত্ত তোমাকে অনুমতি দিতাম এবং আরও অধিকসংখ্যক নিপুণতর সৈন্য প্রেরণ করিতাম। যাহ হউক, যাহা হইবার তাহা হইয়াছে । €একটা হিন্দু বিধবার সহিত যুদ্ধ করিতে গিয়া আনফখা-পরিচালিত সম্রাট- সৈন্য পরাজিত হইয়াছে, একথ! আমার ইতিহাস-লেখকগণ তাহাদের ইতিহাসে লিখিবেই লিখিবে। তাহার স্ব ন্ব- প্রণীত ইতিহাসের একটা অধ্যায়ে আমার এই পরাজয়- কলঙ্ক চিত্রিত করিবে ইহা নিশ্চয় জানিও |” সম্রাট, আসফার নিকটে পূর্ববাপেক্ষা চতুপ্ডণ অধিক সমরকুশল সৈন্ত ও যুদ্ষোপকরণ পাঠাইবার জন্য আদেশ প্রদান করিলেন। সম্াট-সৈম্ত যথা সময়ে দিল্লী হইতে আসফ. খার' নিকটে গিয়া পৌছিল। আসফ খাঁ এই সকল দৈন্যের অধিনায়ক হইয়৷ পুনরায় বিজয়ের জন্য গট়া অভিমুখে অগ্রসর হইলেন। লম্রাট-সৈম্য প্রবল নদী- প্রবাহের ন্যায় গঢায় আসিয়া উপশ্থিত হইল। রাণী দুর্গাবতী সম্রাটের এত অধিকসংখ্যক সৈন্যের সমাগমেও, ভীত বা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হইলেন না । ,নিজের সর্দার- ( ৩৩৫ ) গণকে জাহবান করিয়া এত অধিকসংখাক সম্রাট-সৈন্তের সহিত কিরূপ কৌশলে যুদ্ধ করিলে কৃতকার্ধ্য হইতে পারা যাইবে, তদ্ধিষয়ে তাহাদিগকে নান' উপদেশ প্রদান করিলেন । যিনি যতসংখাক সৈন্যের অধিনায়ক ছিলেন, তাহাকে তদ্রুপ সৈন্যের অধিনায়কতা করিতে আদেশ দিলেন। সকলেই যুদ্ধার্থ প্রস্তুত হইল। পূর্বে একবার সমাট-সৈম্যকে পরাজিত করিয়া রাণী ও তাহার সর্দারগণ সকলেই বিজয়মদ্ে মত্ত, উৎফুল্লহৃদয়, এবং নির্ভীক হইয়াছিলেন। রাণীর ত্রয়োদশব্ীয় একমাত্র পুক্র কুমার বীরনারায়ণ সাহ বালক হইলেও, যুদ্ধার্থ প্রস্তুত হইলেন। সকলেই যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হইলেন। রাণী দুর্গাবতী স্বীয় প্রিয় হস্তীর পৃষ্ঠে আরূঢ হইয়া ভগবতী তীমা চামুগ্ডার ন্যায় শত্রপক্ষীয় (সৈন্যের ধ্বংসের জন্য রণক্ষেত্রে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। উভয় পক্ষে ঘোরতর যুদ্ধ বাধিল। রাণী, যুদ্ধোন্নাদক সাহদ-উদ্দীপক কর্তব্যবুদ্ধির উত্তেজক স্বদেশের জাতীয়সঙ্গীত উচ্চৈঃস্বরে গাইয়া স্বীয় সৈন্য ও সেনানীগণকে যুদ্ধার্থে অধিকতর প্রোৎসাহিত করিতে লাগিলেন। ত্রয়োদশবর্ষীয় বালক কুমার বীরনা'রায়ণের যুদ্ধকৌশল অবলোকন করিয়া মোগলসৈম্য সকল স্তস্তিত হইতে লাগিল।: তাহারা এই. বালকের ভূয়সী প্রশংসা না করিয়া থাকিতে পারিল না। সমস্তদিন উভয়পক্ষে তুমুল দুদ্ধ চলিল। উভয় পক্ষে জয়-পরাজয় নিদ্ধীরণকর। কঠিন হইয়া পড়িল। যখন সায়ংকাল উপস্থিত হইল, তখন রাণী প্রধান প্রধান কতিপয় সেনানী সর্দারকে তীহার নিকটে আসিবার জন্য যুদ্ধদময়োচিত ইঙ্গিত করিলেন। তাহারা রাণীর নিকটে উপস্থিত হইলে রাণী সে সময়ের কর্তব্য সম্বন্দে তাহাদের মত জিজ্ঞাসা করিলেন। ধীহার যাহা মত, তিনি তাহা ব্যক্ত করিলেন। রাণী সকলের কথা গুনিয়া এই মন প্রকাশ করিলেন যে, সম্প্রতি সায়ংকাল উপস্থিত হইয়াছে, স্তরা' এ সময়ে যুদ্ধ হইতে বিরত হইয়া নিজেদের শিবিরে প্রত্যাবর্কন করাই শ্রেযঃকল । পরে রাত্রিষোগে শক্রগণকে সহস! মাক্রমণ করিয়। অনায়াসে বিধ্বস্ত করিতে পারা যাইবে । নতুবা আমর এত অল্পসংখাক সৈন্যের পক্ষে এত অধিকসংখ্যক শক্রপক্ষীয় সৈম্তাকে পরাজয়করা অসম্ভব । মল্পসংখ্যক সৈন্য দ্বারা অধিক- সংখ্যক সৈন্য জয়করিবার ইহাই একমাত্র উপায়। অনেক যুদ্ধে অনেকেরই এইবূপেই জয়লাভ হইয়াছে । আর যদি আপনাদের মধ্যে কেহ এ সময়ে শিবিরে প্রত্যাবর্তৃন' করিতে ইচ্ছুক না হয়েন, তাঙ্ছা৷ হইলে যতক্ষণ রাত্রি প্রভাত না হয়, ততক্ষণ পর্যান্ত তাহাকে যুদ্ধ চালাইতে হইবে । রাত্রে শক্রুপক্ষীয় সৈন্যকে আক্রমণ না করিয়া পরদিন প্রভাতে পুনরায় যুদ্ধ আরম্ত কর! ধাহাদের মত, তীহারা ভ্রান্ত! রাত্রে গামা বদি হুটা অতর্কিতভাবে শত্রু. ( ৩৩৭ ) সৈন্যকে আক্রমণ না করি, তাহা হইলে কল্য প্রভাতে আসফর্খা নিশ্চয়ই গঢ়া দখলকরিয়া বসিবে। ইহাই আমার ভবিষ্যৎ বাণী। আমার কথানুষায়ী কার্য ন! করিলে পশ্চা আপনাদিগকে অতান্ত অনুতাপ করিতে হইবে। এই কথা বলিয়! রাণা রাত্রে হটাৎ শক্রসৈন্য আক্রমণকরিবার অভিপ্রায়ে তখন যুদ্ধে ক্ষান্ত হইয়া শ্বীয় শিবির অভিমুখে গমন করিলেন কিন্তু তাহার কতিপয় লান্ত 'ল্লবুদ্ধি সেমানী সর্দার তাহার কথার সারবস্ত উপলব্ধি না করিয়া তখনও মোগলসৈন্যের সাঁহত যুদ্ধে বাপৃত রহিলেন। তীহারা রাণার সহিত শিবিরে প্রত্যাবর্তন করিলেন না। তাহারা এই সিদ্ধান্ত করিলেন যে, আরও কিয়ৎক্ষণ যুদ্ধ চালাইয়৷ পরে তীহার! ক্ষান্ত হইবেন এবং পরদিন প্রভাতে পুনরায় মোগলসৈন্যের সহিত যুদ্ধ করিবেন বলিয়া মোগলসৈল্যাধঃক্ষকে জানাইলেন। তাহারা রাণীকে অনুসরণ করিলেন না। তাহার! যুদ্ধেই ব্যাপৃত রহিলেন। ন্থৃতরাং রাণীর সৈন্য ছুই ভাগে বিভক্ত হইয়৷ পড়িল। একভাগ রাণীকে অনুসরণ করিল। অপরভাগ যুদ্ধে ব্যাপৃত রহিল। রাজ! বা রা্জীর কথা না শুনিয় প্রধান মন্ত্রী, সৈম্যাধ্যক্ষ, বা সেনানীগণ, শব ন্ব- মতানুষায়ী কার্য করায় ও একমতাবলম্বী না হওয়ায় কয়েক শতাব্দী হইতে ভারতের যেরূপ হূর্দশা ঘটিয়া আলিতেছিল, এক্ষেত্রেও তাহাই খটিল। ২ | ৩৩৮ ) রাত্রে মোগলপৈন্যকে হটাত আক্রমণকরা বিষয়ে ,মতদ্বৈধ উপস্থিত হইল। স্থৃতরাং রাত্রে হটাশ মোগল সৈন্যকে অতর্কিত ভাবে আক্রমণকরা হইল না। রাণী ুদ্ধক্ষেত্র হইতে স্ব-শিবিরে চলিয়া আসিলেও তাহার যে লকল সেনানী তাহাকে অনুসরণ না করিয়া তখন শক্রু- পক্ষের সহিত যুদ্ধেই ব্যাপৃত রহিলেন, তীহার! পরদিন প্রভাতে পুনরায় যুদ্ধ করিবেন এই প্রায়, যুদ্ধ ঘটিত সঙ্কেত- বিশেষের দ্বার আসফর্খীকে জানাইলেন। তদনুপারে ধুদ্ধ থামিল। রাণীর কতিপয় সেনানীর পরস্পর তর্ক- বিতর্কেই সমস্ত রাত্রি কাটিয়া গেল। পরদিন প্রভাতে পুনরায় যুদ্ধ আরন্ধ হইল। রাণীর ভবিষ্যুৎ বাণী ফলিল। রাণীর সৈন্যের ক্রমশঃ পরাজয় ঘটিতে লাগিল। আসফখ। গঢ়া আক্রমণ করিয়া চত্ুদ্দিক মোগলসৈন্য ছ।রা বেষ্টিত করিয়। ফেলিলেন। রাণীর সৈন্য বাধা দিতে পারিল না, ক্রমশঃ দলে দলে মৃত্ামুখে পতিত হইতে লাগিল। রাণী এই দৃশ্য দর্শনে অস্থির হইয়া উঠিলেন। তিনি হস্তিপৃষ্ঠে আরোহণ করিয়া আমফখাকে বধকরিবার জন্য কতিপয়, বিশ্বস্ত আঙ্জাপালক সেনানী সর্দার ও ততপরিচালিত সৈম্য- মণ্ডলীর মহিত তদভিমুখে ধাবিত গ্ছইলেন। সেই সময় তিনি প্রধান মন্ত্রী অধর কায়স্থকে নিজ হস্তিপৃষ্ঠে বসিবার ' জগ আদেশ করিলেন। তশুকালে এন্ন্‌প ভীষণ যুদ্ধ চলিতেছিল যে, তাহা বর্ণনাতীত। কামানের বৃহৎ বৃহৎ ( ৩৯) ভীষণ গোলা ও তীক্ষবাণে চতুর্দিক আচ্ছন্ন হইয়া পড়িয়া- ছিল। সেই সময়ে রাণীর পুজ্র গঢ়ামগুল্র ভাবী* অধিপতি ত্রয়োদশবর্ধায় বালক কুমার বীরনারায়ণ সাহ অমিত পরাক্রমের সহিত যুদ্ধ করিতেছিলেন। ভ্রয়োদশ ব্ষীয় বালকের এইরূপ যুদ্ধনৈপুণা ভারত-ইতিহাঁস ছাড়া অন্য কোন দেশের ইতিহাসে কেহ অবগত হইয়াছেন কি? “ভারত কাপুরুষের দেশ” এইরূপ কথা মুখে আনিতে কেহ সাহদী হইবেন কি? এইরূপে প্রাতঃকাল হইতে আরম্ভ করিয়! বেল! তৃতীয় প্রহর পর্য্যন্ত রাণীর সৈন্যের সহিত মোগলসৈন্যের ভীষণ যুদ্ধ চলিয়াছিল। ভ্রেয়োদশ- বর্ষায় বালক কুমার বীরনারায়ণ তিন তিন বার মোগল সৈন্যাকে বাধ। দিয়া_বুধত্র্ট ও বিধ্বস্ত প্রায় করিয়া অবশেষে একটা গুলির আঘাত প্রাপ্ত হইলেন। আহত হইয়া অশ্ব হইতে ভূঙলে পতিত হইলেন। রাণী এই সম্থা্ শ্রবণ করিয়। আহত কুমারকে যুদ্ধক্ষেত্র হইতে শিবিরস্থ চিকিত্দাগারে নিরাপদে বহন করিয়। লইয়া যাইবার নিমিত্ত বিশ্বস্ত কতিপয় ভূত্কে আদেশ করিলেন । ভৃত্যবর্গ রাণীর এই আদেশ যখন প্রতিপালন করিতে- ছিলেন, সেই সময়ে "রাণীর অধিকসংখ্যক সৈন্য রাণীর নিকট হইতে হটাত ইতস্ততঃ অপস্থত হইয়া পড়িল। মাত্র তিন হাজার সৈশ্য তাহার নিকটে বিদ্যমান ছিল এইরূপ ছুরৰস্থায় পতিত হুইয়াও রাণী যুদ্ধক্ষেত্র হইতে ( ৩৪০ ) পলায়ন করেন নাই। প্রত্যুত দৃট়তার সহিত মহা- পরাক্রমের সহিত তাদৃশ লল্পসংখ্যক সৈম্ লইয়া আসফ. খার বিপুল বাহিনীর সহিত যুদ্ধ করিতে লাগিলেন । পাছে, রাণীর অল্প সংখ্যক সৈন্য যুদ্ধে পরাজুখ হয়, এই আশঙ্কায় রাণী তাহার্দিগকে প্রবলরূপে যুদ্ধ চালাইবার জন্য জাতীয় সঙ্গীত-গানে প্রোতসাহিত করিতে লাগিলেন । এই সময়ে দুদ্দেব বশতঃ হটাৎ একটা তীক্ষ বাণ আসিয়া তাহার ললাটে বিদ্ধ হইল। রাণী ততক্ষণাঁৎ স্বহত্তে উহাকে টানিয়া বাহির করিলেন। কিন্তু উহার ফলকটি ক্ষতস্থানের ভিতরে রহিয়া গেল। যেই মাত্র এই ৰাণটি টানিয়া বাহির করিয়। ফেলিলেন, ততক্ষণ।ৎ হটাৎ আর একটি বাণ আসিয়। তাহার গলদেশে বিদ্ধ হইল। তিনি এই বাণটিও পূর্বববণ টানিয়। বাহির করিলেন বটে, কিন্তু তাহার গলদেশ হইতে অবিরল রুধিরধারা বহিতে লাগিল বলিয়!। তিনি ্ীণ-রক্তা হইয়৷ পড়িলেন এবং ক্ষতস্থানে ভয়ানক যন্ত্রণা- বোধ হওয়ায় তিনি কির়ত্ক্ষণ মুচ্ছিত হইয়া! রহিলেন। অবশেষে অধর কায়স্থের চেষ্টায় চৈতন্য লাঁভকরিয়। অধরকে বলিলেন, “অধর, তুমি সর্ববদাই আমার উপদেশানু- যায়ী কার্য করিয়াছ। তুমি সর্ববদা' আমার আদেশ পালন করিয়াথাক বলিয়! তুমি আমার বিশ্বাসভাজন হইতে পারিয়ছ। আমি কখনই তোমাকে অবিশ্বাস করি নাই। কিন্তু অদ্য এক্ষণে তুমি ঘি আমার আদেশ অনুসারে (৩৪১৯ ) একটি কার্য না কর, তাহা হইলে আমি তোমাকে এক্ষণে আমার পরমশক্র বলিয়া মনে করিব”। অধর রাণীর এইরূপ অতূতপূর্বব কথা শুনিয়া সাশ্রুনয়নে বলিল, দমা, আমি আপনার কার্য্যের জন্য মুহূর্তমধ্যে স্বীয় প্রাণ বিসঞ্জ্রন দিতে প্রস্তুত আছি। কি কার্য করিতে হইবে আদেশ করুন”। অধর রাণীর কার্য সম্পাদনের জন্য আদেশ প্রার্থনা করিল বটে, কিন্তু অধরের পক্ষে তাদুশ কার্ধ্য সাধন- করা অত্যন্ত অসন্তব। রাণী বলিলেন “অধর, আমার শরীর হইতে যেরূপ রুধিরধারা বহির্গত হইতেছে, অন্ত লোক হইলে এতক্ষণে সে মৃত্যুমুখে পতিত হইত। আমি কঠিন-প্রাণা,*তাই এখনও জীবিত মাছি। আমার অন্যান্য সেনানী সর্দ।রগণ গতকল্য আমার আদেশ পালন না করায় আমার ভবিষ্যত্বাণী ফলিল। আমার পরাজয় ঘটিল/], পরাজয় ঘটায় যদি আমার দেহ শক্র-সৈম্য কর্তৃক স্পৃষ্ট; হয়, যদি আমি বন্দীকৃত হই, তাহা হইলে তাহারা আমার প্রতি নানা অত্যাচার করিবে, সেই অত্যাচার সহ্য কর! অপেক্ষা ভারতের সতী পতিত্রতা স্বধর্মানিষ্ঠ। কুলমহিলার পক্ষে মরণই শ্রেয়ঃ। তাই বলিতেছি, অধর, আমার এই তরবারিটি গ্রহণকর, "এবং ইহাকে একবার উত্তোলন করিয়া ইহারঘ্বারা আমার মুগুটি ছিল করিয়া ফেল। এবং এঁ মুণ্ড সমেত আমার দেছটি শ্মশানে লইয়া গিয়! শান্্রবিধি অগ্ুুসারে দগ্ধ রুরিও। শক্র-সৈন্ত যেন আমার স্ৃতদেহ (৩৪২ ) স্পর্শ করিতে না পারে” । অধর এই কথা শুনিয়া বালকের ন্যায় কাদিতে লাগিল। অধর বলিল, “ম, এতদিন যে তস্তে আপনার চরণ-সেবা করিয়াছি, যে হস্তে আপনার লবণ খাইয়াছি, লিপি-জীবী সৎকায়স্থের বংশে জন্মিয়া শেষটা কি, সেই হস্ত দ্বারা মাতৃহত্যা করিয়া দুস্তর মহাপাপ-পক্টে মগ্ন হইব? মা, আমাকে এরূপ আদেশ করিয়া কেন আমাকে মহাপাপ-পঙ্কে ডুবাইতে উদ্যত হইয়াছেন ? মা, আমাকে ক্ষমা করুন। আমি পুত্র হইয়া মার মুণ্ডচ্ছেদ করিতে পারিব না। মা, চলুন, আমরা রণক্ষেত্র হইতে পলায়ন করিয়া স্বস্ব মান প্রাণ ও ধন্ম রক্ষাকরি। আসফখার সহিত যখন আমাদের প্রথমবার যুদ্ধ হইয়া- 'ছিল, সেই সময়ে আসফ খু! যেমন রণক্ষেত্র হইতে পলায়ন করিয়া নিজের প্রাণ বাঁচাইয়াছিল, তক্রপ আমরাও এক্ষণে পলায়নের চেষ্টা পরিতে পারি” । অধরের এইরূপ কথ! শুনিয়া রাণী বলিলেন, “অধর, ভারতের ক্ষক্রিয়-কন্তা দুর্গাবভী তজ্রপ কাধ্য করিতে কখনই পারিবে না। ক্ষজিয়-কন্যা প্রাণ অপেক্ষা মানকেই পরম পদার্থ বলিয় গণ্য করে। মানরক্ষার জন্য প্রাণকে ভুচ্ছ জ্ঞানকরে । সেইবার যুদ্ধে আসফর্খী পরাজিত হইয়া সসৈন্ভে পলায়নোদ্যত হইলে আমরা শত্রসৈম্তের অনুসরণ করিয়া- ছিলাম । অনেক শক্রসৈগ্ঠ ধৃত নিহত ও বন্দীরূত হইয়াছিল। আমরাও এবার শক্রসৈন্য কর্তুক-তজ্রপ ধৃত ( ৩৪৩ ) নিহভ ও বন্দীকৃত হইতে পাঁরি। পলাইলেই যে, প্রাণরক্ষা ও মানরক্ষা হইবে, এ বিষয়ে কোনই স্থিরত| নাই । আমি বীরকন্যা বীরপত্বী ও বীরপ্রসবিনী ও বীরজাতীয়া হইয়! পলাইয়৷ প্রাণরক্ষা করিতে চাই না। যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ- বিসজ্জন হইলেই ক্ষভ্রিয়ক্ষাতির স্বর্গে গমন হয়। অধর, শত্রসৈন্য কর্তৃক আমার মু চ্ছিন্ন হইবার পূর্বেই শক্রুসৈন্য কর্তৃক আমার দেহ স্পৃ্ হইবার পুর্ব্বেই, এই দেখ, আমার মুণড চ্ছিন্ন হইল,” এই বলিয়া রাণী স্বীয় তরবারি দ্বারা স্বীয় মুণ্ড চ্ছিন্ন করিয়া ফেলিলেন। বীরের ম্যায় মরিলেন। স্বর্গে গেলেন। অধর রাণীর এইরূপ মুণ্ড- চ্ছেদ দেখিয়ই স্তম্ভিত হইয়া পড়িল। রাণীর অভাবে রাণীর" অবশিষ্ট সৈন্য গুলি যুদ্ধক্ষেত্র হইতে পলায়ন করিতে লাগিল। প্রভুর অভাবে ভূত্যের যেরূপ অবস্থা ঘটে, তাহাই ঘটিল। রাণীর অবশিষ্ট সৈন্য রাণীর মুণ্ড সমেত দেহটি লইয়া অধর কায়স্থের প্চাৎ পশ্চা ছুটিল। শক্র-সৈম্য যুদ্ধ-জয়ে উৎফুল্ল হুইয়া গঢ়া- দুর্গ আক্রমণ ও ছুর্গমধ্যে সঞ্চিত ধনরত্াদি লুষ্টন করিবার জন্ত সেই দিকেই সকলে ধাবিত হইল। রাণীর মৃত্যুর পর মোগলসৈন্য রাণীর * মুতদেহ-আহেষণের জন্য বত্ুবান হইল না। ম্থৃতরাং 'এই অবসরে রাণীর সৈল্ত রাণীর ক শ্াশানে লইয়া গিয়া উহার: সকার করিল $ (৩৪৪ ) লাগিল। রাণীর ব্রয়োদশবর্ধীয় পুক্র কুমার বীরনারায়ণ , সাহ যুদ্ধক্ষেত্রে আহত হইয়া প্রথম স্বীয় শিবিরের চিকিতসাগারে আনীত হইয়াছিলেন। তথায় তৎ- সময়োচিত চিকিৎসার পরই চৌড়াগঢ-ছুর্গে নীত হইয়া- ছিলেন, এবং সেই স্থানেই অবস্থিতি করিতেছিলেন। আসফখ। গডঢ।ছূর্গ আক্রমণ করিয়া তথায় সঞ্চিত অতুল ধনরাশি, এক সহত্র বৃহৎ বৃহ হস্তী এবং বছ যুদ্ধোপ- করণ বস্তু লুষ্টন করিয়া তদানীং স্ব-সৈল্ত' সহ স্বস্থানাভিমুখে প্রস্থান করিলেন। ইহার দুইমাস পরে রাণীর চৌড়াগড়- দুর্গ আক্রমণকরিবার জন্য আসফর্খ। বহু সৈগ্য সহ তদভি- মুখে অগ্রসর হইয়াছিলেন। তিনি চৌ়াগড়-দুর্গের নিকটে উপস্থিত হইলে বালক বীরনারায়ণ তাহার আক্রমণে বাধা দিবার জন্বা দুর্গ হইতে বহিরগ্গত হইলেন। পুনরায় উভয়পক্ষে তুমুল সংগ্রাম বাধিল। উভয়পক্ষের অনেকে হতাহত হইল। ত্রয়োদশবরীয় বালকের বীরত্ব- দর্শনে প্রো আসফখী। বিস্মিত হইয়া গেলেন। এবার মোগলসৈন্যের সংখ্যা অত্যন্ত অধিক হওয়ায় বালক বীর নারায়ণ বাধা দিতে অসমর্থ হইলেন। এবং অবশেষে তিনি এই যুদ্ধে নিহত হইলেন । আসফখ। দুর্গ আক্রমণ করিয়া ছুর্গ অধিকারকরিল। ইংরাজ ও পারসিক এঁতিহাদিকগণ চৌড়াগড়-হূর্গ-সঞ্চিত ধনরাশির যেরূপ বর্ণন। করিয়াছেন, তাহা বর্ণে বর্ণে সত্য। উহা অতি- ( ৩৪৫ ) রঞ্জিত নয়। এই দুর্গে অসংখ্য অমূল্য বা অতি দুর্ম'ল্য বৃহত বৃহৎ হীরক মুক্তা পান্না ও মাণিক্য প্রভৃতি রত্ব ছিল। স্ববর্ণ-নির্িত বহু সহজতর বৃহৎ বৃহৎ থালা, ঘটী, বাটী, এবং অসংখ্য মোহরে পূর্ণ শত শত বৃহত বৃহ স্তৃবর্ণকলস, এবং স্বর্ণনিন্মিত অনেক বৃহ বুহত দেব-দেবীর যুক্তি সঞ্চিত ছিল। এই সকল এবং অন্থান্য বন্ দুর্মুল্য বন্ত বহুপুরুষানুক্রমে তথায় সঞ্চিত হইয়াছিল। আসফখা এই সমস্ত বস্তু লুটনক্ষরিয়া স্বস্থানে লইয়! গিয়াছিলেন। কথিত আছে যে, আসফ খঁ। এই সকল বস্ত্র দিল্লীতে সম্রাট- সমীপে ন! পাঠাইয়া নিজেই আত্মসাৎ করিয়াছিলেন। লুস্তিত এক সহজ্তর হন্ভীর মধ্যে দুইশত মাত্র হস্তী দিল্লীতে সম্রাট- সমীপে প্রেরিত হইয়াছিল। শ্তুবর্ণ রৌপ্য ও মণিমাণিক্যাদি পদার্থ কিছুই প্রেরিত হয় নাই। সে সমস্ত বস্তু আপক- খাঁর নিজ কোষাগারে প্রেরিত হইয়াছিল। সম্রাট, হস্তা ভালবাদিতেন বলিয়া আসফখ। ২ শতমাত্র হস্তী দিল্লীতে প্রেরণ করিয়াছিলেন। অন্যান্ত কিছুই প্রেরণ করেন নাই। উদারহ্ৃদয় উন্নতচেতাঃ সম্রাট আকবর সাহ এই সকল লুঠিত দ্রব্যের বিষয়ে বিশেবরূপ কোন সম্বাঁদ লইতেন না। এ কল" বিষয়ে ভ্রক্ষেপ করিতেন না। সেই জন্যই তাহার প্রাদেশিক সুবেদার বা নবাবগণ প্রভূত ধন সঞ্চয়করিতে সমর্থ হইতেন। .আসফখ। গঢ়ামগুলা জয়করিয়৷ তথায় কয়েকদিন সৈম্য সহ অবস্থিতি করিয়া (৩৪৬ ) ছিলেন। তারপর যখন সত্রাটু, খাজমান্.নামক দুর্দম্য ব্যক্তিকে পরাভূত করিবার জন্ত জৌন্পুর অভিমুখে যুদ্ধ- যাত্রা করিয়াছিলেন, দেই সময়ে আসফর্থ। রাণী দুর্গাবতীর রাজ্য ত্যাগকরিয়! স্বস্থানাভিমুখে প্রস্থান করিয়াছিলেন । এই যুদ্ধে কুমার বীরনারায়ণ ও তাহার সামন্ত সার্দীরগণ একে একে যুদ্ধে নিহত হইলেন। চৌড়াগঢ-দুর্গ আক্রান্ত হইবার কিঞ্চিৎ পূর্বে ছুর্গের অন্তঃপুরবাসিনী রাজকুল- মহিলারা এই পরাজয়-সম্বাদ অবগভ হইলেন। ' কিয়ৎ- ক্ষণ পরে শক্রহস্তে পতিত হইয়া তাহার! বন্দীকত হইবেন, এই ভাবিয়া তীহারা স্ব স্ব ধর্ম, সতীত্ব ও মান রক্ষ।- করিবার জন্য নিজেরাই অতি ক্ষিপ্রহত্তে পর্বতম কাষ্ন্ুপ সাজাইয়া চিতা প্রস্তর করিতে লাগিলেন। যাহাতে এ চিতাগুলি অতি শীঘব প্রজ্বলিত হইয়া উঠে, তজ্জন্য উহাতে রাশি রাশি শুষকতৃণ, (খড়) তুলা, ও ঘ্বৃত প্রভৃতি বস্ত সংযোজিত করিলেন। এবং যখন এ চিতা- গুলি দাউ দাউ করিয়া জ্বলিয়া উঠিল, তখন তাহারা উহাতে আরোহণ করিয়া স্বস্ব সতীত্ব ধর্ম ও মান-রক্ষার্থ প্রাণ বিসর্জন দিতে লাগিলেন। চিতাগ্নির উজ্জ্বল শিখায় চতু্দিক ব্যাপ্ত হইয়া পড়িল। 'সে অগ্নি দাবানলকেও পরাভূত করিয়াছিল। এ ভীষণ প্রলয়াগ্নির শিখা নির্ববাপিত করিবার জন্ত বু মোগলসৈ্ বহুবার চেষ্টা করিয়াছিল, . কিন্তু তাহার! কোন প্রকারেই কৃতকার্য; হইতে পারিল (৩৪৭ ) ন1। দুর্গের এ ভাগে তাহার! অগ্রসর হইতেই সমর্থ হইল না। পরদিনের সায়ংকাল পর্য্যন্ত এ ভয়ঙ্করী চিতাগ্রিশিখা দৃষ্ট হইয়াছিল। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে, রাণী ছুর্গাবতীর প্রতাপ-দূর্যোর অস্তের সঙ্গে সঙ্গে, ভারতমহিলার স্বাধীন রাজত্বের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে এ শিখা নির্ববাপিত হইয়া- ছিল। এরূপ ভীষণ অগ্নিশিখ! গ্রজ্জ্বলিত হইয়াছিল বলিয়াই ভারতের সেই প্রদেশের পবিত্রতা রক্ষিত হইয়াছিল। বীরনারীঁ প্রসবিনী ভৈরবীরূপিনী ভারতজননীর পবিত্র- তম অঙ্গে এরূপ পবিত্রহম চিতাতস্মলেপই শোভা পায়। ভারতের রাণী ছুর্গাৰতীর আত্মসম্ম/নের জ্ঞান ছিল, শিক্ষা! ছিল, সাহস ছিল, বল ছিল, পরাক্রম ছিল, ঈশ্বরে ভক্তি ছিল, এবং তাদ্ুশ রাশি রাশি স্বর্ণ ও মহামূল্য রত্বাদি ছিল বলিয়াই তিনি স্ত্রীলোক হইয়া ও, অনাথা বিধবা হইয়াও, পুরুষের ন্যায় স্বাধীনরাজত্ব করিতে পারিয়াছিলেন, এবং নিজের ক্ষুদ্র গঢামগুলা-রাঙ্গের স্বাধীনতা-রক্ষার জন্য পৃথিবী-বিখ্যাত দোর্দগুপ্রতাগী “জগদীশ্বর”, উপাধিধারী সম্রাট আকবর সাহের সমুদ্র- তরঙ্তুল্য তাদৃশ বহুসংখ্যক সৈন্যর সহিত নিজের তাদুশ অল্লসংখ্যক সৈগ্ভ লইয়া" যুদ্ধ করিতে পারিয়াছিলেন। আসফ- খাঁর মত রাজনীতি-চতুর হুবেদার, বা প্রাদেশিক শানককেও প্রথমবার যুদ্ধে পরান্ত করিতে পারিয়ািজেন। এবং বাজ_বাহাছুরের মত দুর্দমা ব্যক্তিকেও স্ববশে রাখিতে. (৩৪৮ ) পারিয়াছিলেন। তাহার কতিপয় সেনানী যদি তাহার আজ্ঞানুসারে সায়ংকালের পূর্বেই শক্রপক্ষের সহিত যুদ্ধে ক্ষান্ত হইয়া রাব্রিকালে শক্রপক্ষকে হটাৎ আক্রমণ করিত, তাহ! হইলে দ্বিতীয় বারের যুদ্ধেও রাণী আসফর্খার পরি- চালিত সম্রাট-সৈন্যকে পরাস্ত করিতে পারিতেন। তিনি সরা আকববের সহিত বেশীদিন যুদ্ধ চালাইতে জমর্থ না হইলেও যতক্ষণ তাহার প্রাণ থাকিত, ততক্ষণ তিনি সম্রাটের বিরূদ্ধে যুদ্ধ চালাইতে কখনই ক্ষান্ত হইতেন ন1। ভারত ছাড়া এরূপ অদ্ভুত আত্ম-সম্মানজ্ঞ| স্বাধীনতা-রক্ষণ- তে দীক্ষিত রাজনীতিশান্ত্রে সুশিক্ষিতা মহিলা অদ্যাপি পৃথিবীর অন্য কোন অংশে জন্মগ্রহণ করে নাই। রাণাভবানী। রাণীভবানী বঙ্গের রাজসাহী জেলার অন্তর্গত ছাতিন্‌+ গ্রামে ১৭২৪ খ্রীষ্টাব্দে বারেন্দরব্রাহ্গণ-বংশে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। ত্রীহার পিতার নাম আত্মারাম চৌধুরী। আত্মারাম চৌধুরী নবাবী আমলের একজন মান্য গণ্য ধনী ও প্রতিষ্ঠাশালী জমিদার ছিলেন। এখনও ছাতিন্‌-গ্রামের স্থানে স্থানে তাহার প্রাচীন অট্রালিকার গ্নাবশেষ দৃষ্ট হইয়া থাকে। রাণীভবানী নিজের জন্স্থানের চিহ্ন- স্বরূপ তথায় একটি দেবতা-মন্দির নিম্মাণকরাইয়াছিলেন। বি এবং এ মন্দিরের মধ্যে নিজের মাতার নামানুসারে জয়- দুর্গা নামে একটি দেবীমুদ্তি প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন । এ মন্দিরের নিকটে রাণী ভবানীর একটি বৃহত কামান ছিল। কামানটি বহুকাল পর্যান্ত তথায় এ ভগ্ন অষ্টালিকার ই্টক- স্তুপের মধো বিদামান ছিল। কি জন্য তথায় এ কামানটি রক্ষিত হইয়াছিল, তাহার কোন 'এঁতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় না। প্রাচীন নবাবী আমলের নানাবিধ দন্থ্য- তস্করাঁদির ভয় হইফ্ুত পিতাকে রক্ষা করিবার জন্যই বোধ হয়, রাণীভবানী পিত্রালয়ে “একটি কামান রাখিবার ব্যবস্থা করিয়াছিলেন। তাহার পিতা একজন রাজা মহারাজ না হইলেও একজন প্রভৃতসম্পন্তিশালী জমিদার ছিলেন। তীহার ধন প্রা মান-রক্ষার্থ একটি কামানের প্রয়োজন হওয়ায় উহা তথায় রক্ষিত হইয়াছিল । যে সময়ে বাহুবল বা “যার লাঠি তার মাটা” এই নীতিমন্ত্ ৬ বড়যন্ত্ই লোকের সৌন্তাগ্য-লাভের এইমাত্র উপায় “ইয়া উঠিয়াছিল, সেই ভয়ঙ্কর রাজা-বিপ্লবের যুগে সেই প্রাতঃসরণীয়া রাণীভবানী অর্দশতাবদীকাল অর্দবঙ্গেশ্বরী হইয়৷ মহাপ্রভাবে ও প্রধরপ্রতাপে অর্ধবঙ্গরাজ্য' শান করিয়াছিলেন। একটি বাঙ্গালী বিধবা া্মণীর পক্ষে সেই সময়ে তাদৃশ বিস্তৃত রাজ্য শাসনক্রা, মহার্গোরবের র বিষয়। যে সময়ে ই ইর্থিয়াকোনপানি ভারতে সাম্্রাজয- শপ হযোগ-অনূসন্ধানের ছলে কলিকাতা ও. (৩৫০) মুর্শিদাবাদ প্রত্ৃতি স্থানে বাণিজ্যের কুঠী সংস্থাপনকরিয়া প্রভৃত ধন উপার্জনকরিতেছিলেন, সেই সময়ে সেই সম্্াদায়-সংপৃক্ভ হল্ওয়েল্নামক একজন সাহেব বঙ্গের তগুকালীন অবস্থা স্বয়ং স্বচক্ষে পর্্যবেক্ষণকরিয়া লিপি- বন্ধ করিয়াছিলেন। ইতিহাস-পাঠকগণের নিকটে হল্ওয়েল্‌ সাহেবের নাম স্ুপরিচিত। হল্ওয়েল্‌ সাহেৰ স্বীয় “ইণ্টরেষ্টিংহিষ্টরিক্যাল্ইভেপ্টস্”নামক পুস্তকে লিখিয়া গিয়াছেন যে, “রাণীভবানীর রাজ্যের বাধিক আয়. ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ছিল।৮ তন্মধ্যে ৭০ লক্ষ, পটকক, নবাব সরকারে রাজস্ব দিতে হইত। গ্রাণ্ট, সাহের য় 'ঘ্ল্যানালিশিস্‌ অব্‌ ফাইন্যান্সেস্‌ অব্‌ বেঙ্গলগনামক পুস্তকে লিখিয়া গিয়া [ছেন.যে, “বঙ্গদেশে. এমন কি সমুদয় ভারতবর্ষেও, রাজনাহীর ন্যায় এত বড় জমিদারী 'আর কোথাও ছিল কি না সন্দেহ। ১৭৯৩ খ্রীষ্টাব্দ পর্য্যন্ত ও, নদীয়া মুর্শিদাবাদ যশোহর বীরভূম ও বন্ধমান প্রভৃতি জেলা এই জমিদারীর অন্তভূক্তি ছিল। ইংরাজ- হিতে প্রারস্তকালেও রাজসাহীর আয়তম ১২৯০৯ বর্গমাইল শ্থিরীকৃত হইয়াছিল।” রাণী-ভবানীর পিত! আত্মারাম চৌধুরী, কন্তার অইমবর্ষবয়সে নাটোরের মহারাজ রাম- জীবনের পুক্র মহারাজকুমার রামকান্তের সহিত কন্তার বিবাহ দিয়াছিলেন। এই বয়সে কগ্যাদানকে শাস্ত্রে পগৌরীদান” কহে। দিঘাপতিয়া-রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা, নাটোর-রাজ- 6৩৫১) শের প্রধান মন্ত্রী, ইতিহাস, বিখ্যাত বুদ্ধিমান, সুত্র দয়া রাম রায় এই বিবাহের প্রধান যোজক ছিলেন। রাণী ভবানীর বিবাহের লগ্ন-পত্রে ইহার নাম ছিল। রাণী ভবানী বিদ্যা বুদ্ধি সচ্চরিত্র ও রাজাশাসন-পদ্ধতির এঁতিহাসিক বৃসতান্ত-বর্ণনার পূর্বে নাটোর-রাজবংশের পরিচয় প্রদান করা উচিত। নাটোর, রাজসাহী ঞ্জেলার অন্তর্গত একটি নগর বিশেষ । মহারাজ রামজীবন ও তাহার কনিষ্ঠভরাতা মহারাজ রঘুনন্দন*রায় ইহার প্রতিষ্ঠাতা । এই ভ্রাতৃদ্ঘয স্বনামধন্ত পুরুষ ইহারা বারেন্দ্রশ্রেণীর ব্রাহ্ধণ। উহার অতি সামান্য মবস্থা হইতে ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা আদায়ের জমিদ্বারীর প্রভু, হইয়াছিলেন। ইহাদের পিতা | কামদের মৈত্রেয় রাজমাহীর অন্তত পু*টিয়ার তৎকালী ন্‌ মহারাজ নরনারায়ণ ঠাকুরের অধীনে অতি সামান্য বেতানে পরগণে“ল্করপুরের অন্তর্গত বারইহাটা-গ্রামের, “তহশীল”- আদায় কাধ্যে নিযুক্ত ছিলেন। রামজীবন রঘুনন্দন ও বিষুরাম নামে তাহার তিনটি পুত্র পুঁটি রাজধানীতে থাকিয়া বিদ্যাশিক্ষা 'করিতেন। তৎকালে অনেকেই সংস্কৃতভাষা শিক্ষাকরিতেন। বাঁহারা নবাব-দরকারে বা কোন জমিদার-সরকাঁরে চাকরি করিতে ইচ্ছক: রতি, তাহারা আরবি পারসিক ও উর ,ভাষ 'শিক্ষাকরিতেন?: ভতকালে খিনি আরবি ও পারসীক ভাষায় বিশিষ্টরূপে' ব্যুৎপত্তি লাভকরিতে পারিতেন, তিনি চেষ্টা করিলে' ( ৩৫২ ) উচ্চতম রাজকার্য্যে নিযুক্ত হইতে পারিতেন। পুুণটিয়ার মহারাজ নরনারায়ণ ঠাকুর সংস্কৃত-শিক্ষার উন্নতির নিমিত্ত বু অর্থ বায়করিতেন। তিনি স্বীয় রাজধানী পুটিয়ায় বহুসংখাক টোল সংস্থাপনকরিয়াছিলেন। এ লকল টোলে নানাশাস্ত্রঅধ্যাপনের জন্য বন্দেশের বহু ব্রাঙ্মণ- পণ্তিতকে পুঁটিয়ায় আনাইয়া বাস করাইয়াছিলেন এবং তীহাদিগকে উত্তমরূপে আর্থিক সাহায্য করিতেন । : তশ- কালে বঙ্গের নগরে .নগরে ও বড় বড়'গপ্ডগ্রামে অনেক, পারসীক-বিদ্যালয় ছিল। পুটিয়ায়ও অনেক আরবি-. পারসীক-বিদ্যালয় ছিল। মুসলমান মৌলবীর ন্যায় অনেক নিষ্ঠাবান ধর্ঘ্মপর।য়ণ ব্রাহ্মণ ও কায়স্থও, তৎকালে বঙ্গ- দেশে অতি উত্তমরূপে আরবি ও পারসীক ভাষ। অধাপন করিতে পারিষ্তেন। তশুকালে পটিয়া, রাজসাহী জেলার: মধ্যে সংস্কৃত ও পারসীক ভষা-শিক্ষার কেন্দ্রস্থান, ছিল। পু'টিয়ার রাজ-“তহশীলদার” কামদেবের জোষ্ঠ পুক্র রামজীবন ও মধ্যমপুক্র রধুনন্দন পটিয়ায় থাকিয়া সংস্কত ও পারসীক ভাষায় অগাধ বু[ুৎপত্তি লাভ করিয়া- ছিলেন। বাল্যাবস্থাতেই তাহাদের প্রতিভার পরিচয় পাওয়া গিয়াছিল। উহার! দুই ভাই অতি অল্প বয়সেই পু'টিয়ার রাজ-নরকারে একজন রাজকীয়-ব্যবস্থাশান্ত্রবিৎ 'উচ্চ স্কাজ্কর্ম্াচারীর পদে ও আর একজন রাজ-কার্ষ্যা- ধ্যক্ষের উচ্চপদে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিলেন। উচ্চ প্রতিভার ( ৩৫৩ ) সহিত জনশ্রুতির চিরসংস্রব। প্রতিভাবান রামজীবন ও রঘুনন্দনের সম্বন্ধেও একটি কৌতুহলজনক জনশ্রুতি প্রচলিত আছে। 'অনেকে বলেন, তাহার! দুই ভাই পূর্বের পু'টায়া-রাজবা'টার দেবালয়ে পুজকের কা করিতেন। একদিন গ্রীগ্ঘকালে মধ্যাক্তে প্রচণ্ড রৌদ্রের উত্তাপ অসহ্া হওয়ায় ক্লান্ত শ্রীস্ত অন্যতর ভ্রাত' এ দেবালয়ের উদ্যানমধ্যে একটি বৃক্ষের স্গিগ্চঘনপল্লবের স্ীতল- াযাপূর্ণ তলে শয়নকরিয়া সুখে নিড্রা যাইতেছিলেন। কিন্ত রৌদ্র, এ বৃক্ষের শাখা-পল্পবের মধ্যে কিঞ্চিৎ ফাঁক প ইয়া এ বালকের মুখের উপরে আসিয়! পড়িল। সেই সময়ে, এক ভয়ন্র 'কৃষ্ণসর্প এ রৌদ্রোন্তাপ-নিবারণের জন্য বৃহ ফণা বিস্তারকরিয়। উহার দ্বার বালকের মস্তকোপরি ছত্র- ধারণের কার্ধা করিতে লাগিল। এমন সময়ে পু*টিয়ার মহারাজ নরনারায়ণ ঠাকুর পুজা-সমাপনান্তে দেবমন্দির হইতে বহির্গত হইয়া এরূপ অদ্ভুত ব্যাপার অবলোকন করিলেন। তিনি তদদর্শনে বিস্মিত হইয়া এই বিস্ময়কর ঝাপার দেখাইবার জন্য নিকটবন্তী অন্যান্য : ভূত্যদিগকে উচ্ৈঃস্বরে আহ্বান করিতৈ লাগিলেন । সমাগত লোকের : কোলাহলে ভীত হইয়া 'এ সর্পটি সেই স্থান হইতে পলায়ন করিল। কিয়ক্ষণ পরে এ নিদ্রিত বালকের নিদ্রা-ত্গ হইলে মহারাজ নরনারায়ণ তাহাকে নিজ-নিকটে ডাকইিয় বলিলেন, “অদ্য তোমার যেরূপ একটা মহাস্থলক্ষণ ( ৩৫৪.) দেখিলাম, তাহাতে এই বোধ হইতেছে যে, কালে তৃমি একট খুব বড় রাজা হইবে । সর্প যাহার মস্তুকের উপরে কফণ! বিস্তারকরিয়! রৌদ্রোত্তাপ নিবারণকরে, সে, কালে টক্রবপ্তি-তুল্য রাজা হয়। তুমি বদি কালে একজন এরূপ বাজ! হও, তাহা হইলে পু'টিগ়্ার রাজবংশকে সম্মান করিয়! চলিবে, এইরূপ প্রতিজ্ঞাপাশে তোমাকে বদ্ধ হইতে তইবে” । এ বালক এই সকল কথার অর্থ কিছুই বুঝিতে পারিয়া ভীত হইয়া মহারাঁজার ন্মাজ্ঞানুসারে 'তথাস্ত্‌ বলিয়া এরূপ প্রতিজ্ঞাপাশে বদ্ধ হইলেন । মহারাজ নর নারায়ণ সেই দিন হইতে এ বালক ও তাহার ভ্রাতাকে পজকের কার্যা হইতে অবসর প্রদান করিয়া পুটিয়ার একটি টোলে সংস্কৃত শিক্ষাফরিতে আদেশকরিলেন। তাহারা পু*টিয়ার একটি টোলে সংস্কৃতভাষা শিক্ষাকরিয়া পাঁটিয়ায় যতদুর পারসীক ভাষা শিক্ষাকরা তখন সম্ভব ছিল, ততদূর শিক্ষাকরিয়া পারপীক ও আরবী-ভাষায় উচ্চশিক্ষা-লাভের জন্যা তত্কালীন বঙ্গের রাজধানী ঢাকায় গমন কঁরিয়াছিলেন। পুটিয়ার মহারাজ নরনারায়ণ ঠাকুর এ ্াতৃদ্ধয়ের টাকায় এই শিক্ষার বায়-ভার গ্রহণ করিয়াছিলৈন। « তাহারা তথায় আরবি ও. ও পারসীকভাম়ায় উচ্চশিক্ষা প্রাপ্ত হইয়া পু*টিয়ায়, ্রত্যাগমনপূরববক উচ্চ রাজকার্ষ্যে নিযুক্ত হইয়াছিলেন। এই লময়ে ভারতবর্ষে ধীরে ধীরে রাজনীতিক মহাবিপ্লাবের 1৩৫৫ ) সূচনা দৃষ্ট হইতেছিল। অওরঙ্গজজেব তখন দিল্লীর সমা। তিনি তীহার পিতৃদেবকে বন্দীকরিয়া কষ্ট দিতেছিলেন এবং ভ্রাতৃগণের বধ-সাধনের জন্য ষড়যন্ত্র করিতেছিলেন। তীহার কুটবুদ্ধি বাহুবল ও পক্ষপাত-নীতির প্রকাশ্য অভিনয় আরব হইয়াছিল। হিন্দুদিগকে রাজ- কাব্য হইতে অপদারিত করিয়া মুমলমানদিগকে নিযুক্ত করিতেছিলেন। হিন্দুর দেবালয় বিধ্বস্ত করিয়া তথায় মস্জিদ্‌ নিশ্মাণকরাইতেছিলেন। অন্যান্য দেশের হ্যায় বঙ্গদেশেও তখন মোগলসাআ্াজ্যের অধঃপতনের পূর্ব সুচনা আরন্ধ হইয়াছিল । যিনিই বঙ্গ বিহার ও উড়িয্যার নবাব হইয়া শাসন-ভার প্রাপ্ত হইতেন, তিনিই ছলে বলে কৌশলে দিল্লীর সআটকে “অমান্য করিয়! স্বাধীন হইতে চেষ্টা, করিতেন । সম্রাট অওরলজেব এই ব্যাপার দেখিয়া নিজের, পৌত্র আজিম্‌ ওশ্মান্‌কে বঙ্গ বিহার ও উড়িস্যার ধ্নবাৰ নাজিম" নিযুক্ত করিয়া এবং স্বীয় বিশ্বস্ত কর্মচারী মুর্শিদ্কুলিখীকে “নবাব-দিওয়ান্” নিযুক্ত করিয়া ১৭০১ ্ীষ্টাব্দে বঙ্গদেশে পাঠাইয়া দিয়াছিলেন। ইহারা ঢুইজন বঙ্গের তৎকালীন রায়) রী ঢাক -নগ্ররীতে থাকিয়া ব্- মু্শিদকুলিখা ্রাক্মণ- ভান ছিলেন। তিনি বখন অল্প- বয়ক্ক বালক ছিলেন, তখন এক ধনবান মুসলমান তাহাকে ক্রীতদানরূপেব্রয় করিয়া মুসলমানধর্দরে দীক্ষিত করিয়া- ( ৩৫৬ ) ছিলেন এবং তাহাকে আরবী ও পারসীক ভাষায় সুশিক্ষিত করিয়া দিয়াছিলেন। মুর্শিদৃকুলিখ|! উচ্চ- শিক্ষা লাতকরি দাক্ষিণাতো দীর্ঘকাল রাজকার্য্ে নিযুক্ত থাকিয়া স্বীয় প্রতিভার পরিচয় প্রদান করিয়াছিলেন । সআাট অওরল্গজেব, তাহার প্রতিভা-দর্শনে সন্তষ্ট হইয়া! টানে নিজ-পৌত্র আজিম্‌ ওশ্মানের দেওয়ানী-পদ প্রদান করিয়ান্ঠলেন। বুদ্ধিমান মুর্শিদকুলিখা বঙ্গের রাজকোষের ছুরবস্থার মূল কারণ চিরে অবগত হইয়া ঠাহার প্রতিকারপূর্ণব্ক প্রথম বর্ষেই সআাটের নিকটে এক কোটি টাক'-রাজস্ব প্রেরণকরিয়া সম্রাটের মহা- সন্তোষ উৎপাদনকরিয়াছিলেন। এই সময়েই বঙ্গের তৃম্বামিগণের পক্ষ হইতে নবাব-সরকারে দেয় রাজস্বের “হিসাবনিকাশ্”", বুঝাইয়া দিবার জন্য এক এক জন মোক্তারকে ঢাকায় নবাব-দরবারে থাকিতে হইত। এই মোক্ত'রগণের বিদা: বুদ্ধি ও কার্ধযকুশলতার উপরেই বঙ্গের জমিদ'রদিগের সন্মান যশ ও জমিদারীর শুভ পরিণাম নির্ভর করিত। এইরূপ কার্য্যে সর্ববদা প্রত্যুৎ্পন্নমতির প্রয়োজন হইত; পারসীকভাষায় বিশেষব্যুৎপত্তি না থাকিলে কেহই এই কার্ষ্যে নিযুক্ত হইতে পারিতেন না। এই সকল মোক্তারকে নবাবসরকারের “কানন্গো”র নিকটে স্ব ম্বপ্রভু জমিদারের পক্ষ হইতে “হিসাব- নিকাশ” বুঝাইতে হইত। ( ৩৫৭) «কাননগো”-কার্য্যালয়ে দুইজন “কানন্গো” নিযুক্ত খাকিতেন। তাহারা “নবাব দিওয়ানে”র “হিসাব নিকাশ” পত্র পরীক্ষাকরিয়া উহা নিজ-নামাঙ্কিত মোহর দ্বারা অস্থিত করিয়া দিলে তবে তাহা দিল্লীতে সম্রাটের নিকটে প্রেরিত হইত এবং সমআাট উহ! গ্রহণকরিতেন। মুতরাং নবাব-দিওয়ান প্রভৃতক্ষমতাশালী হইলেও, এই দুইজন নিম্মপদস্থ “কানন্গো”কে কিঞ্চিৎ ভয়করিয়া চলিতেন। নবাব-দিওয়ানের ষথেচ্ছাচার-নিবারণের জন্তই সম্রাট এই দুইটি “কানন্গো”র পদ স্থষ্টিকরিয়!ছিলেন। মুর্শিদ কুলিখ! যে সময়ে বঙ্গের নবাব-দিওয়ান্‌ হইয়াছিলেন, সেই সময়ে নাটোর্-রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা রঘুনন্দন পুটিয়ার মহারাজ নরনারায়ণ ঠাকুরের পক্ষ হইতে প্রথমতঃ মোক্তার নিযুক্ত হইয়া ঢাকায় নবাব-দরবারে প্রেরিত হইয়াছিলেন। ইহাই তাহার নাটোর-রাজ্য-লাতরূপ সমৃদ্ধির চরমসীমায় আরোহণের প্রথম সোপান। রঘুনন্দন ঢাকায় নবাব- ধরবারে উপস্থিত হইয়া নিজ প্রতিভার পরিচয় দিতে আরপ্ত করিলেন। তিনি পারপীকভাষায় “হিমাব- নিকাশ” প্রস্তুত করিবার এক সহজ নৃতন উপায় উদ্ভাবন করিয়৷ অতি অল্প দিনের 'মধ্যেই বশন্বী হইয়া উঠিলেন। তাহার বিদ্যা-ুদ্ধির প্রশংসা সআ্রাট-পৌত্র আজিম ওশ্মানের ও মুর্শিদ কুলীর্থার কর্ণে পৌঁছিল। দিল্লী হইতে যে সকল উচ্চশিক্ষিত পারসীকভাাবিৎ মুসলমান তাহাদের ( ৩৫৮ ) সঙ্গে ঢাকায় আসিয়াছিলেন, তাহীরাও, একজন বাঙ্গালীর এইরূপ বিদ্যা-বুদ্ধির উত্তম পরিচয় পাইয়৷ চমত্তকৃত হইয়া- গেলেন। বাঙ্গালীজাতি “হিসাব-নিকাশ” প্রভৃতি বিদ্যা- বুদ্ধির কার্যে অতিশয় নিপুণ, এই ধারণা তাহাদের হৃদয়ে বদ্ধমূল হইল। তাহার! ঈর্ষা ও নিষ্ট-চেষ্টার পরিবর্তে রঘুনন্দনের সহিত মৈত্রীভাব স্থাপনকরিয়া সর্বত্র তাহার প্রশংসা করিতে লাগিলেন। রঘুনন্দন বিদ্বান ও বুদ্ধিমান বলিয়া নবাব-দরবারে আদৃত হইতে লাগিলেন। এবং এই প্রশংসার প্রভাবেই তিনি অল্পদিনের মধ্যেই নবাব- সরকারের “নায়েবকানন্গো”র পদ প্রাপ্ত ভইলেন। তাহার কাধ্য-দক্ষতা গুণে অল্পকাল মধোই- তাহার সন্মান প্রতিপত্তি ও খ্যাতি বাড়িতে লাগিল, এবং সেই সুযোগে তাহার অর্থাগমের পথ স্ুপ্রশস্ত হইতে লাগিল। এই সময়ে কোন কারণবশতঃ আজিম্‌ ওশ্মানের সহিত মুর্শিদ- কুলিখার বিবাদের সূত্রপাত হওয়াতে রঘুনন্দনের ক্ষমতা চরমসীমায় উপনীত হইতে আরম্ত করিল এবং তাহার সৌভাগ্য-লক্গনী স্থৃপ্রসন্না হইতে লাগিলেন। আজিম- ওশ্মান্‌ সম্রাট-পৌত্র বলিয়া গর্বিবত ছিলেন। তিনি মুর্শিদকুলীখাকে সামান্য ক্রীতদাস হইতে “নবাব- দিওয়ানে”র "পদে উন্নীত দেখিয়। কথাচ্ছলে উপহাস করিতেন এবং সকলের সম্মুখে তাহার প্রশংস] শুনিয়। অত্যন্ত ঈর্ষান্বিত হইয়া উঠিলেন। প্রথমে তাহাদের ( ৩৫৯ ) পরস্পর মনোমালিন্য, তগুপরে বিবাদ, তৎপরে বিসম্বাদ, ও অবশেষে প্রকাশ্য শক্রতা আরব্ধ হইল। আজিম্‌ ওশ্মান্‌ মুর্শিদকুলাখাকে হত্যাকরিবার জন্য ষড়যন্ত্র করিতে লাগিলেন । সেই যল়্যন্ত্র, ক্রমে প্রকাশিত হইয়া পড়িল। অবশেষে সে সংবাদ দিল্লীতে সম্রাটের নিকটে পৌছিল। সম্রাট অওরল্সজেব নিজ-পৌত্রকে পাটনার নবাব নিযুক্ত করিয়া স্থানাম্তরিত করিলেন। এবং মুর্শিদ- কুলীখাক্কে এই আদেশ করিয়া পাঠাইলেন যে, তিনি যেন একবার স্বয়ং দিল্লীতে আসিয়া তাহার ( পত্রাটের ) সম্মুখে বঙ্গরাজা-সংক্রান্ত আনুপূর্ব্বিক ঠিক ঠিক হিসাব-নিকাশ উত্তমরূপে ুঝাইয় দেন। সম্রাটের এইরূপ আদেশ অবগত হইয়া আজিম্‌ গশ্মানের এই ভাবনা উপস্থিত হইল যে, যদি মুর্শিদকুলীখা দিল্লীতে সম্রাটের সম্মুখে উপস্থিত হইয়৷ প্রসঙ্গক্রমে তাহাদের বিবাদ বিসম্বাদ ও অবশেষে হত্যার ষড়যন্ত্রের কথ! প্রকাশ করিয়! দেন, তাহা হইলে সম্রাট তাহাকে ( আজিম্‌ ওশ্মানকে ) তিরস্কার করিবেন । অতএব এক্ষণে কি উপায় উদ্ভাবন কর! যায়? তিনি ব্ূক্ষণ ভাবিয়া এই এক উপায় স্থির করিলেন যে, যদি বলের “নায়েব কাননগো” ঘ্বঘুনন্দন মুর্শিদ কুলীর্খার হিসাব- নিকাশ পত্র মোহর-অস্কিত না করেন, তাহা হইলে তাহার বাসনা পূর্ণ হইতে পারে। তিনি সম্রাটের পৌত্র। তাহার আদেশ দ্রঘুনন্দন অবশ্যই প্রতিপালন করিবে । ( ৩৬০ ) এই স্থির করিয়া তিনি রঘুনন্দনকে এ পত্রে মোহর-মক্কিত করিতে নিষেধ করিয়া শাসন করিয়া দিলেন। রঘুনন্দন সমাট-পৌত্রের শাসনবাণী ও নিষেধাজ্ঞ| প্রাপ্ত হইয়া তাবিলেন.যে, মুর্শিদকুলিখখা একজন ভূতামাত্র। অদ্য তিনি স্বপদে আছেন, কল্য থাঁকিবেন্‌ কি ন! জন্দেহ। আর কল্য থাকেন, তো, পরশ্ব থাকিবেন কি না, তাহার স্থির নাই। আর, আজিম্‌ ওশ্মান্‌, সআাট-পৌত্র। ইনি কালে সম্রট হইলেও হইতে পারেন। অতএব ইহার আদেশ সর্ববতোভাবে প্রতিপালন করাই উচিত এবং ইহার আজ্ঞা সর্বব প্রকারে মান্য করা উচিত। নতুবা পরে শাস্তি পাইতে হইবে, এইবূপ ভাবিয়া রঘুনন্দন সম্াট-পৌত্রের আজ্ঞা ও শাসন উল্লঙঘন করিতে কোন প্রকারেই সাহসী হইলেন না। মূর্শিদকুলিখ! মহাবিপদে পড়িলেন। তিনি এই বিপত্তি হইতে উদ্ধারলাভের নিমিত্ত যখন অন্য কোন উপীয়ই শ্থির করিতে পাঁরিলেন না, তখন তিনি «নায়েব- কানন্গে”” রদঘুনন্দকেই রাজদ্বারে বিপদের একমাত্র বন্ধু একমাত্র সহায় স্থির করিয়! তাহার শরণাগত হইলেন এবং তাহাকে বুঝাইতে লাগিলেন যে, সম্াট-পৌত্র যখন পাটনায় থাকিতে আদিষ্ট হইয়াছেন, তখন তিনি তথা হইতে ঢাকার নবাবের কর্মচারীর উপরে সহসা অত্যাচার করিতে পারিবেন না। জার তিনি (মুর্শিদ কুলিখ ) যদি একবার দিল্লীতে গিয়া! সআ্াটকে সন্তুষ্ট করিয়া বঙ্গের, ( ৩৬১ ) নবাব নিযুক্ত হইয়া টাকায় আসিতে পারেন, তাহা হইলে তিনি ঢাকায় আসিবামীত্রই তাহার ( রখুনন্দনের ) কৃত উপকারের প্রত্যুপকার করিতে কখনই বিস্মৃত হইবেন না। মুর্শিদকুলিখী! নানাবিধ যুক্তিযুক্ত ও আাশাজনক বাক্যে রঘুনন্দনকে নানাপ্রকারে বুঝাইয়া তাহার হিদাব-নিকাশ পত্র মোহর-অহ্কিত করিতে সম্মত করিলেন। রঘুনন্দনের মোহরূঅক্কিত হিসাব-নিকাশ পত্র ও নানাবিধ বহুমূল। উপটৌকনদ্রব্য সংগ্রহকরিয়া মুর্শিদকুলীর্খা যথাসময়ে দিল্লীতে গিয়া! পৌছিলেন। ঢাকার “কাননগো”-কার্ধ্যালয়ে দুইজন “কাঁননগে” কার্য করিতেন । এই দুইজনের মধ্যে রঘুনন্দনই প্রধান ছিলেনে। কিন্তু নবাব-দিওয়ানের হিসাব-নিকাশ পত্রে এই রা মোহর দারা স্থাক্ষর করিবার কথ! কিন্তু এই ঘটনায় কেবলমাত্র তি নবাব-দিওয়ান কর্তৃক পূর্ব্বোক্তরূপে প্ররোচিত হইয়া এবং অদৃষ্ট সাহস ও উচ্চতম আশার উপর নির্ভর করিয়া এ পত্র মোহর- অঙ্কিত করিয়াছিলেন। তীহার অধস্তন কর্ধচারীটি সম্রাট- পৌন্রের ভয়ে এরূপ স্বাক্ষর করেন নাই। ু্শিদকুলীখখ" কেবলমাত্র রঘুনদ্দনের সথাক্ষরিত প্র সম্বল, করিয়াই বহূলয অনেক বদ এ এবং রখ লা দু চি ২:28 রি / ১১৪ ছি: . ৭, দি. ট %. ( ৩৬২ ) অধীর হইয়া উঠিলেন। কারণ, সে সময়ে দাক্ষিণাত্য প্রদেশে যুদ্ধে অত্যন্ত অর্থব্যয় হওয়াতে স্াট চিন্তিত হইয়া পড়িয়াছিলেন। রাজকোষে অতিশয় অর্থাভাব ধটিয়াছিল। এই সময়ে মুর্শিদকুলীর্থার আনীত অর্থ পাইয়া সম্রাট অতান্ত আহলাদিত হইয়াছিলেন। বঙ্গরাজ্যের হিসাব-নিকাশ পত্রে দুইজন কাননগো স্বাক্ষর করিয়াছে (কনা, তাহা অনুসন্ধান করিবার আর কোন প্রযোজনই হইল না। তিনি মহামুল্য বহু উপঢৌকন ও প্রভূত অর্থ পাইয়া মুর্শিদিকুলীরখখার উপর অত্যন্ত সন্তু ও প্রসন্ন হইলেন এবং তাহাকে বঙ্গ বিহার ও উড়িষ্যার একমাত্র নবাব নিযুক্ত করিয়া ঢাকায় প্রেরণকরিলেন। মুর্শিদ কুলীখ। ঢাকায় আসিয়া রাজদ্বারে বিপদুদ্ধারের একমাত্র বন্ধু ও সহায় রঘুনন্দনকে নিজের দিওয়ান নিযুক্ত করিলেন এবং তীহার জন্য যথাসময়ে সম্রাটের নিকট হইতে প্রায়রীইয়ান্ত” এই উপাধির সন্দু আনাইয়া তাহাকে প্রদান করিলেন। বঙ্গ বিহার ও উড়িস্যার নবাব- 'দিওয়ান্‌ রঘুনন্দন রায় রাইয়ান মহাশয়ের ঢাকায় নবাব- দরবারে মহতী প্রতিপত্তিই তাহার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা রামজীবনের নাটোর-রাজ্য-লাভের মূল কারণ। নবাৰ মুর্শিদকুলীখা' ঢাক! ত্যাগকরিয়া মুর্শিদাবাদে আসিয়া রাজধানী স্থাপনকরিলেন। তাহার নামানুসারেই এ রাজধানীর নাম মুর্শিদাবাদ হইল। মুর্শিদাবাদ রাজধানী ( ৩৬৩ ) চিরে মহাসমৃদ্ধিশালিনী নগরী হইয়া উঠিল। নবাব, প্রধান মন্ত্রী রঘুনন্দনের স্ুমন্ত্রণার বলে মহাপ্রতাপের সহিত রাজত্ব করিতে আরম্ভ করিলেন। দিওয়ান রথুনন্দন রায়ের তীকষুবুদ্ধি-উন্তাবিত নূতন ও সহজ রাজস্ব-নির্ধারণ- পদ্ধতি ও রাজস্ব-সংগ্রহ-নীতি অনুসারে নবাবের দৌহিত্রী- পতি মহম্মদ রেজাখা রাজস্ব সংগ্রহকরিতে, আরন্ত করিলেনু। ততকালের বঙ্গের জমিদারগণ প্রায় স্বাধীন- ভাবে জমিদারী করিতেন। তণুকালে বঙ্গে নবাবী রাজা- তন্ত্র, ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তনশীল ও যদৃচ্ছা-পরিচালিত হওয়ায় বঙ্গের ভূম্বামিগণ স্বাধীনভাবে প্রবল প্রতাপে রাজদ্ব করিতেন। নবাব-সরকারে নিদিষ্ট সময়ে কর প্রদান করিতেন না। কেহ কেহ মোটেই কর দিতেন ন৷। তাহাদের ধনবল ও জনবল এই দুই উপায়ই থাকাতে তাহারা নবাবের ফৌজদার বা স্বয়ং নবাবকেও অনেক সময়ে তয় করিতেন না। মহণ্মদ রেজার্থা বঙ্গের ভূম্বামি- গণের এইরূপ আচরণ দেখিয়। তাহাদিগকে বাহুবলে শাসনকরিতে আরম্ভ করিলেন । তীহার ভীষণ শাসন- প্রভাবে শীন্র শীঘ্র রাজস্ব আদায় হইতে লাগিল। তাহার কঠোর শাসনের ভয়ে বিহ্বল হইয়া বঙ্গের অনেক জমিদার স্মানাম্তরে পলায়ন করিয়াছিলেন । অনেকে নির্বাসিত হইয়াছিলেন ও অনেকে হৃতসরবন্ব হইয়া নিহত হইয়াছিলেন। যে সকল জমিদার রাজস্ব না ( ৩১৪ ) দিয়া. স্বচ্ছন্দে স্বাধীনভাবে জমিদারী করিতেন, মহম্মদ রেজাথী। বহন ও যুদ্ধোপযোগী প্রভৃত অন্তর-শঙ্রাদি লইয়া তাহাদের আবাস-ভূমিতে যাইতেন এবং তীহা- দিগকে নিহত করিয়া তাহাদের সর্বন্থ লুষ্টনকরিয়া মানিতেন। তাহাদের দেই সকল পরিত্যক্ত তৃম্পত্তি হইতে রাজস্ব-লাভের নিমিত্ত নৃতন নূতন জমিদার সবষ্টিকরা প্রয়োজনীয় হইয়াছিল। সেই কল পরিত্যক্ত ভূসম্পত্তি অন্য লোককে না দিয়া রামজীবনকেই দেওয়া হইল। ইহাই রামজীবনের নাটোর-রাজ্য-লাভরূপ সমৃদ্ধির উচ্চীমায় আরোহণের দ্বিতীয় সোপান। নবাব, রঘুনন্দনকে এ সকল জমিদারীর অধিকার প্রদান করিতে ইচ্ছুক হইলে বিখ্যাত জোষ্টভ্রাতৃ -তক্ত রঘুনন্দন, নিজের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা রামজীবনকে উহা প্রদান করিতে বলিতেন। নবাব তদনুসারে রামজীবনকে এ সকল নূতন জমিদারী প্রদান করিতেন। রামজীবনও, মহম্মদ রেজাখার ন্যায় প্রবল পরাক্রমে ও বাহুবলে নিজের মেই সকল নূতন প্রাপ্ত জমিদারা হইতে কর আদায় করিয়! থালময়ে নবাব- সরকারে রাজস্ব প্রদানকরায় তিনিও, তাহার মধ্যম ্রাতার স্যায় নবাবের অতিশয় প্রিয়পাত্র হইয়া উঠিলেন। এক্ষণে বিনা চেষ্টাতেই অনেক জমিদারী স্রাহার হস্তগত হইতে লাগিল। তিনি নবাবের কৃপায় দিল্লীর সম্রাটের নিকট হইতে রাজাবাহাদবর এই উপাধি “বাইশ থান্‌ ( ৩৬৫ ) খেলাৎ,” -বহুসংখ্যক হস্তী উষ্রশ্ব ও..পুতাকা , এবং পাল্কি রাখিবার অধিকার, এরং প্রহরে প্রহরে লহব্‌ৎ বাজাইবার ও বন্ছসংখ্যক সৈ্য রাখিবার, অধিকার প্রাপ্ত হইয়া ১৭*৬ গ্রীষ্টান্যে নাটোরে একটি বৃহৎ প্রাসাদ নিম্মাণ করাইলেন ও তথায় বাস করিয়। দোর্দগুপ্রতাপে রাজ্যশাপন করিতে আরম্ভ করিলেন 1. এই. বৃহৎ প্রাসাদের উচ্চ গগনস্পর্শিচুড়া, তদুপরি পঙুপত্ড শবে উতততীয়মানা উচ্চ রাজপতাকা, চতুদ্দিকে সমুন্নত পুর- প্রাচীর, প্রাচীরের বাহিরে... প্রশান্তসলিল! দুর্গপরিখা, হস্তিশালা, অশ্বশালা, সেনানিবাস, পাস্থনিবাঁস, দেবমন্দির, অট্রালিকাসমূহ, রাশি রাশি পণ্াদ্রবোর স্ুপ্রশস্ত হট এবং নানাবিধ মনোহারির্ী বিপণিশ্রেণী, নাটোর রাজ- ধানীর গৌবর বৃদ্ধিকরিয়াছিল। যে তিনটি ছুর্গপরিধা, প্রাসাদ বেষ্টন করিয়া শত্রসৈদ্যের আক্রমণ প্রতিহত করিত, তাহা এক্ষণে স্থানে স্থানে : জরশৃন্য, হইয়াছে । প্রাসাদের উচ্চ দৃঢ় সিংহদ্বারের জরাজীর্ণ, ভগ্রাবশেষ মাত্র এক্ষণে বর্তমান-রহিয়াছে। দেই এঁতিহাসিক. প্রাষাদের দোলমঞ্চ ও জন্যান্ত অনেক অংশ বিনষ্ট হইয়া দিয়া নি টড গৌরবে রবাঁছা বি টি ই লট ৩৬৬) ১৭০৬ খ্রীষ্টাব্দে বাণগাছি পরগণার প্রাচীন বিখ্যাত জমিদার গণেশরাম চৌধুরী বথাসময়ে নবাব-দরকারে রাজস্ব দিতে অক্ষম হওয়ায় নবাব তীহাকে অধিকার চাত করিয়। তাহার জমিদারী মহারাজ রামজীবনকে প্রদান করিলেন। আত্রেয়ী ও করতোয়া নদীর সন্মিলন-স্থানের [নকটে সান্তোল্‌ রাজ্যের রাজধানী ছিল। রামকৃষ্ণনামক এক ব্রাহ্মণ জমিদার সান্তোলের রাজা ছিলেন। পাবন! জেলার হরিপুর গ্রামের জমিদার, কলিকাতা হাইকোর্টের বিখ্যাত ব্যারিষার-জজ শ্রীমাশুতোষ চৌধুরী মহাশয়ের পূর্বপুরুষ. রামদেব চৌধুরী মহাশয়, সান্তোল-রাজের সর্বময় কর্ত। প্রধান মন্ত্রী ছিলেন। এই জমিদারী হইতে বথাসময়ে রাজস্ব আদায় না হওয়ায় মহম্মদ রেক্তারখা পসৈন্টে সান্তোলে আসিয়া সান্তোল-রাজবাটাকে শ্মশান- তন্মস্তূপে পরিণত করিয়াছিলেন। গুন! যায় বে, লেই বিপদ্দের সময় রামদেৰ চৌধুরী, অন্তান্ত মূল্যবান বস্তুর মায়া ত্যাগ করিয়া ৬শালগ্রাম শিলাটি লইয়া রাত্রে নদী পার হইয়া নিজের প্রাণরক্ষা করিয়াছিলেন । অদ্যাপি এ শিলা াহাদের হরিপুরের বাটার ঠাকুর ঘরে বখাবিধি পৃঁজিত ইতেছেন। রাজা রামকৃষ্ণের স্ত্রী রানী সর্ববাণী এই বিপদে মানরক্ষার্থে স্বীয় প্রাণ বিসর্ভভন দিয়াছিলেন। ১৭২১ হ্রীষ্টান্ধে নবাব, এই উত্তরাধিকারি-বিহীন সাস্তোল- রাজ্য রাঁজ! রামজীবনকে প্রদান করিয়াছিলেন। রাজার ( ৩৬৭) জেলায় রাজ! উদ্দিত নারায়ণ-মামক একজন প্রবলপ্রতাপ জমিদার ছিলেন। তীহার সৈন্যগণ বেতন ন! পাওয়ায় বিদ্রোহী হইয়া উঠিয়াছিল। উদ্দিত নারায়ণ নবাবের সাহাধ্য প্রার্থনা করিয়াছিলেন । বিদ্রোহ-দমনের নিমিত্ত নবার বহুসংখাক সৈন্য পাঠাইয়াছিলেন। নবাব-সৈম্য উদিত নারায়ণের প্রিয়তম সৈশ্যাধ্যক্ষ গোলাম মহম্মদকে হত্যা করিয় উদিত নারায়ণকে অত্যন্ত অপমানিত করিয়া- ছিল। উদ্দিত নারায়ণ সেই অপমান সহা করিতে না পারিয়া আত্মহত্যা করিয়াছিলেন। তাহার কোন উত্তরাধি- কারী না থাকায় তীহার জমিদারীটিও নবাব, রামজীবনকেই প্রদান করিলেন। যে লময়ে বঙ্গ বিহার ও উড়িষ্যা এই তিন প্রদেশের পরাক্রমশালী ভূম্বামিগণ ভয়ে নবাব মুর্শিদ- কুলীখার পদানত হইয়াছিলেন, সেই সময়ে বঙ্গের যশোহর জেলার ভূষণ! পরগণার রাজা সীতারাম রায়-নামক এক গ্রবলপরাক্রম কায়স্থ জমিদার স্বাধীন পতাকা উদ্ডীন করিয়া নবাবী রাজ্যতন্ত্রকে তুচ্ছ জ্ঞানকরিয়া দোর্দদু- প্রতাপে স্বাধীনভাবে স্বীয় রাজা প্রতিপালন করিতেছিলেন। বশোহর জেলায় মধুমতী নদীর তীরে হরিহরনগরে, তিনি বাদ করিতেন" প্রথমে তাহার শ্মামনগর-নামব একটি ্ষুত্র :তালুক' ভি অন্য কোন জঙ্গিদারী ছিল না। পরে তিনি বঙ্গে নবাবী রাজতন্ত্রের অধঃপতনের সুযোগ পাইয়া ভূষণা গচাকালাগ্র অধিকাংপ স্থান ও আনাস বছ ( ৬৬৮ ) স্থান বাহুবলে অধিকার করিয়াছিলেন। তিনি বঙ্গে স্বাধীন হিন্দুরাজ্য-স্থাপনের উচ্চ আশায় বহুসংখ্যক সৈন্য সংগ্রহ করিয়া. মহণ্মদপুর-নামক স্থানে স্বীয় রাজধানী স্থাপন করিয়াছিলেন এবং তথায় একটি দুর্ভেদা দুর্গ নিশ্মাণ করাইয়৷ স্বাধীনভার্লে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন। তাহার রাজ্যের বাধিক আয় ৭০ লক্ষ টাকার উপরে উঠিয়াছিল। তাহার রাজধানী ও দুর্গের ধ্বংসাবশেষ অদ্যাপি বিদ্যমান আছে । রাজ! সীতারাম কখনই নবাবকে রাজন্ব দেন নাই। নবাব : মুর্শিদকুলীর্থা সীতারামকে বশীভূত করিবার জন্য যতই চেষ্টা করিতে লাগিলেন, সীতারামের সাহস ও পরাক্রম ততই বৃদ্ধি পাইতে লাগিল । নবাব, সীতারামকে বশীভূত করিবার জন্য আবুতোরাপ্‌- নামক এক দুর্দান্ত রাজ-কর্ম্মচারীকে ভূষণার ফৌজদার নিযুক্ত করিয়া বনু সৈন্য সহ তাহাকে ভূষণায় পাঠাইয়া- ছিলেন। আবুতোরাপের দহিত সীতারামের তুমুল সংগ্রাম হইয়াছিল। এই ঘোরতর যুদ্ধে সীতারামের একজন সেনানী, আবুতোরাপের মুগ্ডটি কাটিয়া সীতারামের সম্মুখ উপস্থিত হইয়াছিল। সীতারাম তাছাকে এই কার্য্যের জন্য উপযুক্ত পারিভোষিক প্রদান পকরিয়াছিলেন । যুদ্ধে আবুতোরাপ্‌ ন্থিহত হইলে তাহার * সৈস্তগণ_ ইতস্তত? পলায়ন করায়. সীভারাম. এই. ভীষণ যুদ্ধে জয়ী হইয়া” ছিলেন।. নবাব, আবুতোপের নিধন-মংবাদ শুনিয়া ( ৩৬৯ ) নীতারামকে পরাস্ত করিবার জন্য অত্যন্ত চিন্তিত হইয়া, উঠলেন, এবং আবুতোরাপের নিধন ও পরাজয়-বার্ত! দিল্লীতে সআরাট.সমীপে পৌছিবার পূর্বের যাহাতে সীতা- রামের ধ্বংস সাধিত হয়, তজ্জন্য দেওয়ান রঘুনন্দনের সহিত মন্ত্রণা করিতে লাগিলেন। রনুক্ষণ মন্ত্রণার পর নবাব, রঘুনন্দনের হস্তেই সীতারামের ধ্বংস-সাধনের সমস্ত ভার সমর্পণ করিলেন। রঘুনন্দন নিজের স্তচতুর সাহসী বুদ্ধিমান দরিওয়ান *দয়ারাম রায়কে সংগ্রাম সিংহ-নামক 'সেনানী ও বহুসংখ্যক সৈ্য সহ সীতারামের ধ্বংস-দাধনার্থ মহন্মদপুরে প্রেরণ করিলেন। এইবার দয়ারামের সক্ষম বুদ্ধির কৌশলে সীতারাম পরাস্ত হইয়া! ও লৌহপিপ্ভারে আবদ্ধ হইয়। মুর্শিদাবাদে" নবাব-সকাশে আনীত হইয়া- ছিলেন। লীতারাম মুর্শিদাবাদে বন্দি-ভাষে কিয়কাল জীবিত থাকিয়া ১৭১৪ খ্রীষ্টাব্দে রাজ্য-নাশ ও অপমানজনিত শোক-ছুঃখে জর্জরিত হইয়। অন্তকালে পবিত্রতম গল্গাতীরে প্রাণত্যাগ করিয়াছিলেন। তিনি যে, গঙ্গাতীরে প্রাণ ত্যাগ করিয়াছিলেন, এই বিষয় কোন কোন প্রত্বতত্ববিৎ কর্তৃক বহু অনুসন্ধানে প্রাপ্ত, তীহার শ্রাদ্ধের নিম পত্রের সংস্কৃতক্লোকে 'উল্লিখিত আছে । নবাব মুরশিদ কুলীথা, রাজা রাম্জীবনের দিওয়ান দক্সরামের লাহাযো রাজা নী ৬৭ আ-সাধন করিয়াছিলেন, ই ]. ( ৩৭৩ ) ধ্বংস-সাধন হওয়ায় দয়ারাম, নবাব সরকার হইতে রায়- 'রাইয়ান এই উপাধি এবং সীতারামের অনেক তৈজসপাত্র প্রভৃতি বস্তু পুরক্কার পাইয়াছিলেন। তাহার কতক- কতক অংশ বঙ্গের দিঘপাত্িয়ার রাজবাটীতে অদ্যাপি বিদ্যমান আছে, এইরূপ শুন! যায়। দিঘাপতিয়ার রাজ- বংশের প্রতিষ্ঠাত। দয়ারাম রায়, রাজনীতিশাস্ত্রের সকল বিভাগেই পঞ্চিত ছিলেন। তিনি গ্রন্থ না পড়িয়াও, ' বুদ্ধির প্রভাবে সেই রাজ্যবিপ্লব-যুগে যেরূপ রাজনীতি- বিদ্যার পরিচয় দিয়াছিলেন, তাহা বাস্তবিক মহাপ্রশংসার্হ । তিনি এককোটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা বাধিক আয়ের বুহশু রাজ্যের রাজ! রামজীবনের দদিওয়ানখানা”য় বসিয়া দিওয়ানী কাধ্য ও বিচারকাধ্যও, সম্পাদন করিতেন, এবং প্রয়োজন উপস্থিত হইলে যুদ্ধের সময় যুদ্ধক্ষেত্রে গমন করিয়া যুদ্ধকার্য্যেও সংলিপ্ত হইতেন। সীতারামের বংসের পর তাহার ভূষণা-রাজা নবাব মুর্শিদকুলীখী নাটোরের রাজা রামজীবনকেই প্রদান করিলেন। রাজা রামজীবন ভূষণা-রাজা পাইয়া বঙ্গের সর্ববপ্রধান জমিদার হইয়া পড়িলেন। সীতারামের রাজ্যের বাধিক আয় ৭০ লক্ষ টাকার উপরে উঠিয়াছিল। রাজা রামজীবন নবাব মুর্শিদকুলীরথার অতিপ্রিয়পাত্র ছিলেন' বলিয়া! নিজের নাটোর-রাজয স্বাধীন নরপতির ম্যায় সমুদয় .ক্ষমতা-পরি- চালনের অধিকার লাভ করিয়াছিলেন। এনায়েত্খী, €. 5৭1 কিশোরখা। সম্সেরথা এবং ইস্কিন্দার্বেগ্‌নামক মুলমান জমিদার ও অন্যান্য জাইগির্দারগণ, নর্হত্যা ও* অবশ্বতাদি-দোষে স্ব স্ব জমিদারীর অধিকার হইতে বিচ্যুত নিহত ও নির্ববাদিত হইলে নবাব তাহাদের জমিদারীগ্ালও রাজ! রামজীবনকেই প্রদান করিয়াছিলেন রাজা রাম- জীবন নবাব মুর্শিদকুলীখাকে “সতের লক্ষ তেষটি হাজার তিন শত বিরাশী টাকা বাধিক রাজস্ব প্রদানকরিতেন। 'রামজীবন নাটোরের রাজ। হইয়া নাটোরেই থাকিতেন এবং তাহার, মধ্যমন্রাত। মুর্শিদাবাদের নবাবের দিওয়ান্‌ ছিলেন বলিয়। মুর্শিদাবাদে বড়নগর-ন!মক স্থানে গঙ্গাতীরে একটি প্রাসাদ নিম্দাণকরাইয়া তথায় বাস করিতেন। এই বড়নগর-প্রাসাদের সহিত বাঙ্গালার ইতিহাসের ঘনিষ্ট সংশ্রব। রাণী তবানী ইংরাজকোম্পানির রাজত্বের প্রারস্তে গঙ্গাতীরস্থ এই প্রাসাদে জীবনের অধিকাংশ সময়ে এবং বিশেষতঃ শেষদশায় বাস করিয়াছিলেন। ভূঁষণা-রাজ্য-লাভের পর রাজা রামজীবন দিল্লীর সম্রাটের নিকট হইতে “মহারাজ বাহাদুর” এই উপাধি এবং রাজকীয় বহু উচ্চ অধিকার লাভ করিয়াছিলেন। তিনি সাহমী জিতেক্জরিয় ধার্দিক দীর্ঘকায় সচরিত্র ও বলিষ্ঠ পুরুষ ছিলেন। তীহার মধ্যমত্রাতা রাষ্কা রঘুনন্দীন রায় তৎকালে মহাপ্রতিভাশালী প্রধান রাজনীতিবিত বলিয়! বঙ্গ বিহার উড়িস্তা ও অগ্ঠান্য প্রদেশে বিশেষরূপে স্থপরিচিত ছিলেন। € ৩৭২ ) উভয় ভ্রাতাই সংস্কৃত পারসীক ও আরবী ভাষায় বিশেষ- রূপে সুশিক্ষিত ছিলেন। রাজা রঘুনন্দনের অসীম ক্ষমতাই মহারাজ রামজীবনের নাটোর-রাজা-লাভের মুল কারণ। জ্ঞোষ্ঠভ্রাতা মহারাজ রামজীবনের প্রতি কনিষ্ঠ ভাতা রাজা রঘুনন্দনের অগাধ ভক্তি শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখিয়!। তৎ্কালে লোক সকল আশ্চধ্যান্বিত হইয়া রাজা রঘুনন্দনের অশেষ প্রশংসা করিত। ১৭২০ শ্রীষ্টাব্ডে মহম্মদাবাদের দুইজন পাঠান-জমিদার বন্ুসৈন্ত সংগ্রহ করিয়া নবাব মুর্শিদকুলীরখথার বিদ্রোহী হইয়া উঠিয়াছিলেন। তীহারা একদিন পথিমধ্যে নবাবের যাটু হাজার টাকা লু্টনকরিয়া লইয়াছিলেন।. এ টাকা রাজন্বরূপে মুর্শিদাবাদে নীত হইতেছিল। তগুকালের হুগলির ফৌজদার আহসান আলিখী এ পাঠান বিদ্রোহিদ্ধয়কে বন্দীকরিয় মুর্শিদাবাদে নবাব-সকাশে লইয়া গিয়াছিলেন। নবাব, তীহাদিগকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করিয়া! তাহাদের জমিদারী নিজ্তের দিওয়ান রঘুনন্দনকে প্রদান করিয়াছিলেন। কিন্তু রঘুনন্দন ততক্ষণা্ড উহা! জ্যো্ঠ- ভ্রাতা রামবীবনের চরণযুগলে সমর্পণ করিয়াছিলেন । তিনি নবাবের নিকট হইতে যখন যে জমিদারটি পাইতেন, তাহা ততুক্ষণাৎ জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার শ্রীচরণে উত্সর্গকরিতেন। ১৭২৪ খ্রীষ্টাব্দে মহারাজ রামজীনের একমাত্র পুত্র মহারাজকুমার কালিকা প্রসাদ কালগ্রাসে ( ৩৭৩ ) পতিত হওয়ায় মহারাজ বৃদ্ধ বয়সে পুত্রশোকে অত্ন্ত যন্ত্রণা ভোগ করিয়াছিলেন । সেই মন্ত্রণ। উপশমিত হইতে না ভষ্টতেই তাহার লক্ষণভূল্য ভক্ত কনিষ্ঠ ভ্রাতা নাটোর রাজোর প্রক্কত প্রতিষ্ঠাতা রাজা রঘুনন্দন রায় তাহাকে শোকসাগরের উত্তাল তরঙ্গে ভাসাইয়া ইহলোক হইতে অপস্য 5 হইলেন । তাহার পর তাহার প্রিয়তম প্রভু, বিপদের একমাত্র সহায়, বঙ্গের নবাব মুর্শিদ- কুলীখও, শল্লদিনের মধ্যেই পঞ্চত্ব প্রাপ্তহইলেন। এই সকল নানা কারণে তিনি শোকে ও চিন্তায় অবসন্ন হইয়া পড়িদেন। তীহার মৃত্যুর পর এত বড় বিস্তৃত রাজা নিরসন নির্শিবপদে কে ভোগ করিবে ? এই চিন্তায় তিনি অতান্ত দ্হবল তইয়া পড়িলেন। তাহার সর্ববকনিষ্ঠ ভ্রাতা শিষুধমের পুত্র দেবীপ্রসাদকে দত্তক পুত্র লইবার ভশ গনেকেই তীহাকে অম্মুরোধ করিয়া- ভিলেন, কিন্তু £বান অজ্ঞ কারণবশতঃ তিনি তাহা না করিয়া রাজা" “কুলার রঙ্সিক রায় খা ভাছুড়ীর কনিষ্ঠ পুত্র রামকান্মকে দন্ধুক পুত্ররূপে গ্রহণ করিয়াছিলেন। 'গই রামকান্ত রাযেরই ধর্্মপত্বী প্রাতঃম্মরণীয়া বিখাত রাজ- নীতিকুশল মতাশিক্ষিতা দানশীলা দ্বীনদুঃখ-কাতরা মহারাণী ভবানী। রসিক রায়ের পূর্ব্বপুঁরুঘ জগদানন্দ রায়, প্রীগৌরা্গ চৈতগ্যাদেব মহাপ্রভুর সমসাময়িক লোক ছিলেন। তিনি গৌড়ের মুসলমান নবাধদিগের অধীনে ৩২ € ( ৩৭৪ ) উচ্চ রাজকার্োনিযুক্ত থাকায় বাঙ্গালী ব্রাহ্মণ হইয়াও “্খি। বাহাহ্বর”. এই উপাধি পাইয়াছিলেন। রসিক রায় নিজের কনিষ্ঠ, পুত্রকে দণ্ডক দিয়া মহারাজ রামজীবনের বংশরক্ষা করায় মহারাজ তাহাকে প্রস্ুপকারন্বরূপ ছুষ্টটি মুল্যবান জমিদ।রী প্রদান করিয়াছিলেন। এই দুইটির নাম 'চৌগ্রাম ও ইস্লামাবাদ। রসিক রায়ের ংশধরগণ অদ্যাপি “চৌর্গয়ের রাজা” বলিয়া খ্যাতি পাইয়া আমিহেছেন। মহারাজ রামঞ্জীবন রামবণন্তুকে দন্ডক গ্রহণ করায় তাহার ভ্রাতুষ্পুত্র দেবী প্রসাদ অত্যন্ত মন্মহত ও দুঃখাত্ত হইয়া পড়লেন। তিনি ছুঃখিত মন্তুঃকরণের সহিত কালযাপন করিতে লাখিলেন। বাহিরে দুঃখপ্রকাশ বা ক্রোধপ্রকাশ ন। করিঞা অন্তরে ঠিনি এই দৃট এ্রতিজ্ঞ! করিলেন যে, তিনিই নাটোর-রাজ্যের একৃত উত্তরাধিকারী । . অতএব তিনিই কালে যে কোন প্রকারে উহা আধিকার.করিবেনই। মহারাজ, দেবী প্রসাদকে রাজ্যের ছয় আনা ভাগ দিতে ইচ্ছুক হইয়াছিলেন, কিন্তু দেবী- প্রসাৰ তাহাতে সম্মত হইলেন. না। দেবীপ্রসাদ মহারাজের আদেশ অমান্য করায় মহারাজ সেই ছয় আন অংশও তাহাকে দিলেন না । স্ৃতরাং রাজ্যের যোল আনা অংশই রামকান্তেরই রহিয়া গেল। মহারাজ রামজীবনের বৃদ্ধাবস্থায় শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতার পরিচয় পাইয়া বঙ্গের অনেক শক্তিশালী দুর্দান্ত জমিদার তাহার রাজ্য ( ৩৭৫ ) আত্মসা করিবার জন্য অনেক চেষ্টা করিয়াছিলেন, কিন্তু প্রভুভক্ত বিশ্বস্ত দিওয়ান দয়ারাম রায়ের বিখ্যাত সুন্মন বুদ্ধির প্রভাবে ও শানন-কৌশলে তাহাদের সমস্ত চেষ্টাই বিফল হইয়াছিল। মহারাজ, দয়ারামের প্রভুভক্তি ও বিশ্বাসিতাক পরিচয় পাইয়া তাহাকে ইহার পুরস্কারের স্বরূপ অনেক তালুক প্রদান করিয়াছিলেন। দয়ারামকে তৎ. কালে, সকলেই শ্রদ্ধা ও সম্মান করিত। মহারাজ রামজীবন তাহাকে" ভৃত্য বলিয়া কখনই মনে করিতেন না। নিজের পুত্র বলিয়া মনে করিতেন। দয়ারাম রায়কে গোষ্টভ্রাতা মনে করিয়া “দাদা” বলিয়া সম্বোধন করিবার জন্য' মহারাজ স্বীয় দত্তকপুত্র রামকান্তকে আদেশ করিয়াছিলেন । শুন। যায় যে, পর পুরুষের দৃষ্ঠির অন্তরালে স্থিতা মন্তঃপুরবাসিনী লজ্জাশীলা রাণী ভবানী দিওয়ান 'দয়ারামের সম্মুখ আসিয়া তীহার সহিত কথা না কহিলেও, তাহাকে “দায়াদাদা» বলিয়া ডাকিতেন। রামকান্ত বিবাহধেোগ্য বয়ঃ প্রাপ্ত ছইলে অনেকেই তাহার হস্তে কন্যা- সমর্পণের নিমিত্ত চেষ্টা করিয়াছিলেন, কিন্তু দয়ারামের পছন্দের উপর নির্ভর করিয়া মহারাজ রামভীবন ছাতিন, গ্রামের জমিদার আত্মারাম চৌধুরীর অইমব্ীয়। কণ্মা স্থলক্ষণাক্রান্তা গ্রীমতী ভবানী দেবীর সহিষ্ই স্বীয় দত্তক পুত্র রামকান্তের বিবাহ দিয়াছিলেন। এই বিবাহে যেরূপ অহাসমারোহ হইয়াছিল, তাঁহার -কিন্বদস্তী' অদ্যাপি রাঁজ- ( ৩৭৬) সাহীতে প্রচলিত আছে। এই বিবাহে অনেক দেশের অনেক রাজা, মহারাজা, আমির ওম্রাহ ও রায় রীইয়ান উপস্থিত হইয়াছিলেন। নাটোর-রাজবংশের এই নিয়ম ছিল যে, বর, কন্তার দেশে বা কন্যার বাড়ীতে গিয়া বিবাহ করিতেন না। কিন্তু কন্টার পিতাকে বরের বাড়ীতে আপিয়া নিজকন্যার বিবাহ দিতে হইত। কুমার রাম- কান্তের বিবাহের সময় এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়াছিল। আত্মারাম চৌধুরী প্রাচীন নবাবী" আমলের একজন মহামান্য জমিদার ছিলেন বলিয়া এবং তাহার বাটার কুল- মহিলাগণ তাহার একমাত্র কন্যার বিবাহ দেখিতে না পাইলে অত্যন্ত দুঃখিত হইবেন বলিয়। তাহার আগ্রহাতি- শযো মহারাজ বামজীবন, ছাতিন গ্রমে গিয় স্বীয় দত্তক পুত্রের বিবাহ দিতে স্বীকৃত হইয়াছিলেন। এই বিবাতের পর ১৭৩২ খ্রীষ্টাব্দে মহারাজ রামজীবন স্বর্গারোহণ করিয়াছিলেন । | উ.হ!র স্বর্গরোহণের পর মহারাজকুমার রামকান্ত কয়েক বর পধ্যন্ত দিওয়ান দয়ারামের রক্ষণাবেক্ষণে থাকিয়া রাজাশ(সন করিয়াছিলেন। পরে দিওয়ান মহাশয়ের বিশেষ চেষ্টায় তিনি নবাব-সরকার হইতে প্রথমতঃ নিজনামে জমিদ্বারীর সনদ্‌, পশ্চাত দিল্লীর সম্ত্রাটের নিকট হইতে “মহারাজ বাহাদুর এই উপাধি এবং অন্যান্য রাজকীয় অধিকার প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। ঝলিকা মহারাণী ( ৩৭৭ ) ভবানী শ্বশুরালয়ে আসিয়া এক বিছুষী ব্রাহ্মগণী মহিলার নিকটে সংস্কৃত ব্যাকরণ, বিষু্শন্মার হিতোপ(দেশ, বয়েক- খানি সংস্ক হকাবা, সংস্কৃত রামায়ণ, মহাভারত, যোগবাশিষ্ঠ রামায়ণ ও সংস্কৃত রাজনীতিগ্রন্থ সকল এবং অঙ্কশাস্ত্ অধ্যয়ন করিয়া্ংলন। এবং পঠির নিকটে জ'মনারী- কার্ধা শিক্ষা £রিয়াছিলেন। তীহার পতির নিকট হইতে তাহার বান্াাণস্থায় জমিদারীকাধ্যশিক্ষা বিষয়ে মহা- প্রতিভার পণ্চিয় শুনিয়! বিখাতসুক্ষবুদ্ধিদম্পন্ন দিওয়ান দয়ারামও, পিস্মত হইয়া যাইতেন। মহারানী বিবাহের পূর্বেব ছাঠিনগ্রামে পিহার নিকটে অক্ষর-লিখন- পঠন, “ফটক” পগণ্াকে” ও এনামতা” প্রত্ৃতি অঙ্ক শিক্ষাকবিয়াছিলেন। তশুকালে বঙ্গভাষায় মুদ্রত পুস্তক চিল না। বন্গভাষাও এত পরিপুষ্টহা লাভ করে নাই। তখন সংস্কত-শিক্ষা ভ্তানকরী ছিল এবং উরদদ,- পারসীকত'ষ-শিক্ষা অর্থকরী ছিল। স্ত্রীলোকের মধ্যে ষাহারা শিক্ষিত হইতে ইচ্ছা করিতেন, তীহার! সংস্কৃতই শিখিতেন। মহারাণী ভবানী বাল্যকালেও, অতি, প্রতাষে শয্যাত্যাগ করিয়। প্রাতঃকৃত্য সমাধা করিতেন। তিনি প্রতি, দিনই প্রতষে স্নান করিতৈন। স্লানান্তে শিবপৃজ| ও স্তোত্র পাঠাদি সমাপন করিয়া রামায়ণ, মহাভারত; ওক্রীমদ্‌ ভগবদ্‌- গীতা প্রভৃতি ধর্মপুস্তক সকল পাঠকরিতেন। বালিকা মহারামী ধধন* পাঠ করিতে 'বমিতেন, তখন প্রাসাদের ( ৩৭৮ ) নারীগণ তাহার নিকটে বসিতেন, তাহার নিকট হইতে এ সকল পবিত্গ্রস্থের ব্যাখ্যা শুনিয়া কৃতার্থ হইতেন। , অন্তঃপুরে তাহার শব্ধ প্রভৃতি গুরুজন কেহ না থাঁকিলেও, অনেক পরিচারিকা, সদ্বংশীয়া দীন! বিধবা, এবং স্বজাতীয়া দুরসম্পকীয়া অসহায়া নারী বাসকরিতেন। পরি- চারিকাগণ নানাশ্রেণীতে বিভক্ত ছিল। কতকগুলি নিন্নশ্রেণীর দাস্থাবৃত্তি করিত, এবং কতকগুলি কোন কান্যই করিত না। অথচ তাহারা , উচ্চবেতন ও উত্তম খাদ্য ও বেশ-ভূষ! পাইত। এই শ্রেণীর পরিচারিকাগণ এবং সদ্বংশীয়া ছুদ্দশাপন্না মহিলারা তাহার সখীর কার্ধ্য করিত। মহারাণী ভবানী বাল্যাবস্থায় যেরূপ দৈনিক কাধ্যাবলী নিয়মপূর্ববক সমাধা, করিতেন, যৌবন প্রৌট ও বৃদ্ধাবস্থাতেও, তদ্রপই করিতেন । তবে তীহার স্বামীর মৃত্ার পর যখন স্বহস্তে তাহাকে রাজকার্ধ্য সম্পাদন করিতে হইয়াছিল, তখন পুজা-স্তবপাঠ-পুরাণ-পাঠাদির _সমাপনান্তে তিনি স্বয়ং পাককরিয়া আহারকরিতেন এবং জমিদারীকাধ্যে এবং বিচারকাধ্যে তাহার অনেক সময় | অতিবাহিত হইত। তিনি' ভোজনাস্তে জমিদারীর কাগচ- পত্র সকল দেখিতে বমিতেন। সায়ংকাল উপস্থিত. হইলে সায়ংসন্ধ্যা সমাপ্তকরিয়া পুনরায় রাজকার্ধ্য. করিতে বিতেন | রাত্রি দ্বিপ্রহর পর্যাস্ত রাজকাধ্য সম্পাদন করিয়া, কিঞ্চিৎ ছুদ্ধ পানকরিতেন এবং কিঞ্চিত ফল ( ৩৭৯ ) তক্ষণ করিতেন। পরে শয়ন করিতেন। . বঙ্গের ব্রাহ্মণ বিধনানারী একবেলামাত্র অন্ন আহারকরেন। হারা নিরামিষাশিনী। তাহারা রাত্রে অন্ন কুটি বা লুচি প্রভৃতি দ্রবা ভক্ষণকরেন না। তীহারা একাহাব্তী। রাত্রে কেবল দ্ৃগ্ধ ও ফল ভক্ষণকরিয়া থাকেন। খুগীয় বিংশ- শতাব্দীর উদ্জ্বল জ্ঞানালোক ও পূর্ণ সভাহার দিনেও, বঙ্গের ব্রাঙ্গণ বিধবামহিল! একাহারিণী ও নিবামিষাশিনী। বঙ্গের ব্রাঙ্মণ-বালিকাও বিধবা হইলে এরূপ রীতি আদাাপি অবলম্বন করিয়া থাকেন। মহারাজ রামজীবনের মৃত্যুর পর যে সময়ে তাহার দত্তক পুত্র মহারাজ রামকান্ত, স্বীয় যুবতী পত্রী মহারাণী ভবানী ও দিওয়ান দয়ারামের সাহ্বাযো রাজকার্য সম্পাদনকরিতেছিলেন; সেই মময়ে সফর্রাজা বঙ্গের নবাব ছিলেন। বঙ্গে তখন মহারাজাবিপ্নবের যুগ। তাহার পিতা স্তুজার্থী দিন কয়েক মাত্র সিংহাসনে আরোহণ করিয়া রাজত্ব করিয়াছিলেন। তিনি কুগ্ন হইয়া পড়ায় তাহার পুত্র সফর্রাজ্খী, পিতার নামে রাজত্ব করিতেন। দেশের লোক স্তুঙ্গাখার প্রতি অনুরক্ত ছিল। সফর্রাজ্খীর প্রতি অত্যন্ত বিরক্ত হইয়া উঠিয়াছিল। রাণী ভবানী যখন সর্বপ্রথম জমিদারীকার্য্য মন+- সংযোগ করিতে আরম্তকরিয়াছিলেন, ততকাল হইতে, তার মৃত্যুকালপর্য্যস্ত বঙ্গে রাষ্টরবিপ্লব : প্রায় সমভাবেই (৩০০ ) উগ্রমুত্তি ধারণকরিয়াছিল। সুতরাং এ লময়ের মধ্যে কত মানীধনী ও সতীর মননাশ, প্রাণনাশ, ধননাশ, ও সতীত্বনাশ হইয়াছিল, তাহার ইয়ুত্ত। নাই। এই ভয়ঙ্কর াষ্্রবি্ীনযুগে রাণী ভবাশী অভ বড় বিস্তৃত জমিদারীর কার্যভার গ্রহণ করিয়া পঞ্চ'শ বসর পর্যন্ত মহা প্রতাপের সহিত এরূপ জমিদারী রক্ষাকরিতে পারিয়াছিলেন বলিয়া তাহার প্রবলশক্তি মহাপন্যবাদহ। রামকান্ত, “মহারাজ” উপাধি ও নিজনামে জমিদারীর সনদ্‌ পাঁইয়া স্বীয় শিক্ষিত পত্বী মহারাণী ভবানীর সাহায্যে যখন ম্ত্চারুরূপে রাজকার্ধ সম্পাদদ করিতে আরন্ত করিয়াছিলেন, তখন বুদ্ধ মন্ত্রী দয়ারাম, দেওয়ানীকার্যা হইতে অবসর গ্রঠণরিয়া নাটোরের নিকটনর্তা দিঘাপাতিয়া- নামক স্থানে এক বৃহৎ প্রাসাদ নিশ্ম'ণকরাইয়। তথায় বাম করিতে আরম্ভ করিলেন এবং নিজের জমিদারীর কার্যাবলী পর্যাবেক্ষণকরিতে লাগিলেন। দেবী প্রসাদ এতদ্দিন পর্য্যন্ত দয়ারামের ভয়ে মহারাজ রাম- কান্তের কোন অনিষ্ট সাধনকরিতে পারেন নাই। এক্ষণে দয়ারাম, দিওয়ানীকার্যা হইতে অবসর গ্রহণ- করায় মহান্্রযোগ পাইয়া তিনি 'তীহার অনিষ্ট-চেষ্টায় প্রবৃত্ত হইলেন, মহারাজ রামজীবন রামকান্তাকে যে, , দত্তক গ্রহণকরিয়াছিলেন এ. দত্তক-গ্রহণের অবৈধত। প্রতিপন্ন করিবার জগ্য তিনি প্রথমতঃ লবাব-দরবারে: (৩৮১ ) অনেক চেষ্টা করিলেন। কিন্তু তাহার এই চেষ্টা ফলবতী হইল না। রাজা রঘুনন্দনের অসীম ক্ষমতা তখনও লোক ভুলিয়া যায় নাই। তাহার জোট্টভ্রাতা মহারাজ রাম- জীবন যখন রামকান্তকে দত্তক লইয়াছিলেন এবং পরে রামকান্তের যখন বিবাহ দিয়াছিলেন, তখন নবাবের পারিষদ অনেক ক্ষমতাশালী হিন্দু রাজা মহারাজা ও মুসলমান মআমির-ওম্রাহগণ নাটোরে নিমন্ত্রিত হইয়া আনিয়াছিলেন। উহাদের চক্ষুতে ধূলি নিক্ষেপ করিয়া 'দেবী প্রসাদ নিজ কার্যা সাধনকরিতে কোন গ্রকারেই মর্থ হইলেন না। ১৭৩৭ খ্রীষ্টাব্দে যশোহর জেলার অন্তর্গত নলডাঙ্গার ব্রাহ্মণ রাজা রঘুদেব দেবরায় রাজন্ব- প্রদানে অক্ষন হইলে নবাব সুজার্থার আদেশে তাহার জাঁমদারী রাকান্তের হস্তে সম্পত হইল দেখিয়া দেবী- প্রসাদ, রামকান্তের উপর নবাবের যথেষ্ট কৃপাদৃষ্টি আছে, ইহা উত্তমরূপে বু'ঝতে পারিলেন। : দেবী প্রসাদ এক্ষণে বুঝিতে পারিলেন যে, নবাব স্তুজাখার রাজত্বকালে তাহার বাসন! চরিতার্থ হইবে না। ম্ততরাং তিনি রামকান্তের অনিষ্ট-চেষ্টার জন্য অন্য" স্থযোগ প্রতীক্ষাকরিতে লাগিলেন। রামকান্তও নির্বিবিদ্বে রাজ্যতোগ - করিতে লাগিলেন। তীহায় সময়ে রাজ্যের অবস্থা পূর্ববাপেক্ষা সমুন্নত হইয়! ধাড়াইল। অনেক নৃতন নূতন জমিদারী ভীহার হস্তগভ হইতে লাগিল। যথাসময়ে নবাব-সরকারে (৩৮২ ) রাজস্ব প্রদত্ত হইতে লাগিল। এই সময়ে দয়ারাম রায় দিঘাপাতিয়ায় নিজ বাঁটাতেই থাকিয়া নিজের জমিদারীর উন্নতিসাধন করিতেছিলেন। তিনি কখন কখন অবসর পাইলে নাটোরে আমিয়া৷ মহারাণী ভবানী ও মহারাজ রামকান্তের কুশল-সংবাদ লইতেন। এই সময়ে বঙ্গ- বিহার উড়িষ্যার রাজসিংহাসনে কখন স্ুজার্থী কখনও বা তাহার পুত্র ঘফর্‌ রাজী উপবেশন করিয়া নানারূপ রাষ্ট্র বিগ্ল ঘটাইতেছিলেন। মুর্শিদ!বাদে' ছুইটি দলের স্থষটি হইয়াছিল। এক দলের লোক, রুগ্ন বৃদ্ধ স্বজাখ।র প্রতি অনুবন্ত ছিল, এবং অন্য দলের লোক তাহার পুত্র সফর রাজাকে ভালবামিত। মুর্শিদকুলীখা, প্রতি ব€সর বৈশাখ মাসে দিল্লীে সম্রাটের নিকটে বঙ্গের রাজস্থ প্রেরণকরিতেন বলিয়া বঙ্গের জমিদারগণের নিকট হইছে রাচস্ব সংগ্রহের জন্য “পুণাহ”-নামক এক নূতন পর্ব প্রনস্তিগ করিয়াছিলেন । এই পর্নযাহে জমিদারগণ স্বয়ং কিন্ব। তাদের প্রতিনিধিরা মুর্শিদাবাদে জগশেঠের বাড়ীতে উপস্থিত হইয়া পুর্ব ব€সরের রাজস্ব প্রদান- করিতেন। মহারাজ রামকান্ত -জমিদারী-শান্্ের সুন্মন- তন্বজ্ঞ। »হধর্টিণী মহারাণী ভবানীর দাহাষয লাভ করিতে পারিয়াছিলেন 'বলিয়াই এই ভয়ঙ্কর বিপ্লবযুগে মহা- যোগাতার সহিত রাজস্ব করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। এই সময় বঙ্গের অনেক ভূত্বামী এপ্পুণ্যাহ”-দিবসে দেয় রাজন্থ (৩৮৩) দিতে অক্ষম হওয়ায় তাহাদের জমিদারীগুলি রামকান্তের হস্তগ* হইয়' পড়িয়াছিল। এই সময়ে নবাব স্ুু্জার্থা, আলিবদ্দীর্থী-নামক সৈন্/ বিভাগের একজন প্রধান কর্ম চাণির মহাষোগ্যতা-দর্শনে সন্ুষ্ট হইয়া তাহাকে অত্যন্ত ভালবাসিতেন। আদীবদ্দাথথার শ্থষশ চতুদ্দিকে ব্যাপ্ত হওয়ায় সফরু রাজ্খী ঈর্ষ।ম্বত হইয়। উঠিলেন। সেইজন্য ইহাদের দুইজনের পরস্পর মনোমালিন্রের সুত্রপাত হইয়া- ছিল।* নবাব স্তু্গার্থ| এই ব্যাপার অবগত হইয়া আলিবদ্রীকে সফররাজের দৃ্টির অন্তরাল করিতে ইচছুক হইলেন ও স্রাহাকে পাটনার শান্ভার প্রদান করিয়া স্থানান্ুরিত করিয়া দিলেন। ন্তুজাখার মৃডার পর সফর- রাজখ! বঙ্গের (সি'হাদনে স্থার্য়-কুপে অধিরোহণ কহিলেন। এই সময়ে মুর্শিদাবাদে তাঠার পপনদীর স্রোত খরতর বেগ ধারণ করিয়াঙিল। জগদিখযাত ধনী মুর্শিনাবাদের জগণু- শেঠের পুত্রবধূর অসামান্য রূপলাবণা-আবণে অধীর হইয়া নবীন নবাব সফররাজর্খ! তাহাকে একবার দেখিবার জন্য জগতশেঠের নিকটে প্রস্তাব উপস্িত করিলেন। জগতুশেঠ, নবাবের এই ভয়ঙ্কর প্রস্তাব শুনিয়া কিয়গ্ক্ষণ অধোবদন হইয়া রহিজেন। পরে নবাবকে কাতরস্বরে নিবেদন: করি- লেন, “প্রভো, অন্তঃপুরবাসিনী হিন্দুরমণীকে- অস্যযস্পশ্যা হইয়া থাকিবাঁর জগ্ত হিন্দুশান্ ভূয়োঃভ়ঃ শাসনকরিয়াছেন। পুংলিজবাচক চুন, সূর্য ও বৃক্ষাদি পদার্থ দর্শনকরাও হিন্দু (৩৮৪ ) রমণীর পক্ষে শান্তনিষিদ্ধ। অতএব প্রভো, অনু গ্রহ- পূর্বক এরূপ ভয়ঙ্গর কুপ্রস্তাব আর করিবেন না। আপনি দেশের শাসনকর্তা ধন্মরক্ষক রাজা । প্রজার ধন রক্ষাকরা বা প্রজার ধর্মারক্ষাবিষয়ে বিপু নিবারণ- করাই আপনার ধন? | ইত্যাদিরূপে জগতংশেঠ নবাবকে আনেক বুঝাইলেপ্ নবাব এই সকল কথায় কর্ণপাত করিলেন না। তিনি বলপূর্নক জগৎশেঠের পুত্রবধূর শনির্ব্বচনীয় সৌন্দলা নিরাক্ষণ করিবার জন্য এবদিন সৈন্য সামন্ত সহ শেঠ-ভবনে উপস্থিত হইয়া অন্যঃপুরমধো প্রবেশপুর্ববক ভীহার দর্শন-বাসনা পরিতৃপ্ত করিয়া- ছিলেন, এবং শেঠভবন লুনকবিয়া আনেক দু'্মলা বিখ্যাত ধনরতু শাতুসাৎ করিয়াছিলেন । বাঙ্গালার ইততিহ|সে পর্যান্ত যখন এইরূপ কথা রটিয়াছে, তখন “যাহা রটে, তাহা! কশকট' বটে,” এই শান্্বাকো আস্থা স্থাপন- করা মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক । ফ্ট,য়াটু সাহেব স্বীয় ইতিহাসে এই কথ' লিখিয়৷ গিয়াছেন। কিন্তু শেঠ-বংশধর- গণ এই কথা সতা বলিয়! বিশ্বাস করেন না। জগতুশেঠের হ্যায় মানী ও ধনী ভারতে কুত্রাপি ছিল কি না সন্দেহ। নবাবদ্দিগের টাকার প্রয়োজন হইলেই শ্াহারা জগতশেঠের শরণাগত হইত্নে। “এ হেন জগতশেঠের যখন এইরূপ অপমান ও দুর্দশা হইল, তখন অন্য লোকের মানসন্ত্রম রক্ষা করা অসম্ভব,” এইরূপ আন্দোলন বঙ্গে সর্বত্র চলিতে ( ৩৮৫ ) লাগিল। তীহাকে সিংহাসন-চ্যুত করিবার নিমিত্ত ষড়যন্ত্র হইতে লাগিল। ১৭৪০ খ্রীষ্টাব্দে আলিবদ্ধার্থা গিরিয়ার প্রাস্তরে সফর্রাজ্খাকে সম্মুখযুদ্ধে নিহত করিয়া বঙ্গের প্রঙ্ঞাবর্গের আশীর্বাদ মস্তকে ধারণপুর্দীক সিংহাসনে আরোহণ করিয়াছিলেন । আলিবদ্দীরথা কার্যাদক্ষ স্বনামধন্য পরিশ্রমী বুদ্ধিমান স্বধর্্নরত সচ্চরিত্র প্রজাবতসল নবাব বলিয়া বাঙ্গালার ইতিহাসে স্ত্প্রসিদ্ধ। কিন্তু ঘটনাচক্রের শনি ঘূর্ণন বশতঃ ঈদৃশ নরপতির শাসন সময়েও, মহারাজ রামকান্ত ও মহারাণী ভবাশীর এক মহাবিপদ ঘটল। এনাঁদন পধান্ত দেবী প্রসাদ, মহারাজ হামকান্থকে নাটোর-রাজ্ঃচ্যুত করিবার জন্য স্যোগ আন্বেষণকরিতে- চিলেন। এক্ষণে সেই সুযোগ আয়া উপস্থিত হইল । সুজারখা ও সফর রাজার রাজতবসময়ে ভাতার চেষ্টা ফলবতী হয় নাই। নবাব আলিবদ্রার্|ী ঝঙ্গেন নকল জমিদারকে পুর্ব হইতে সবিশেষ চিনিতেন না। তাহার চিনিবার প্রয়োজন ও ছিল না। কারণ, তিনি পুনে সৈন্য- বিভাগের একজন কর্ম্মচারী ছিলেন মাত্র। তাঁহার রাঁজত্ব- কাল উপস্থিত হওয়ায় দেবীপ্রসাদ মার একবার নিজ, বাসনা চরিতার্থ করিবার জন্য চেষ্টাকরিন্দে আরম্ত করিলেন। তিনি নবাবের দরবারে *উপস্থিত হইয়া নবাবকে জানাটুলেন (য, রাজসাহীর জমিদারীর অত্যন্ত ' বিশৃঙ্খলা উপস্থিত হইয়াছে । তিনি এ জমিদারী প্রকৃত ৩৩ ( ৩৮৬ অধিকারী! তিনিই মহারাজ রামজীবনের আপন ভ্রাতু- পুত্র। মহারাজ, রামকাস্তকে শাহ্ুবিধিপুর্বক দত্তকগ্রহণ করেন নাই। রামকান্ত একজন গরিবের চেলে। সে, মহারাজার শরণাপন্ন হওয়ায় মহারাজ তাহাকে স্বজাতীয় লোক বিবেচনাকরিয়া অন্যান্না লোকের ন্যায় প্রতিপালন করিয়াছিলেন মান । রাজসাহী-জমিদারীর নবাব-সরকারে প্রদেয় যাহ নিদিষ্ট কর আছে, তিনি (দেবী প্রসাদ) হদপেক্ষা বেশী রাজন্ন দিতে প্রস্তুত আছন। ইতাদিরূপে তিনি নবাবকে বুঝাইতে লাগিলেন । তিনি বন্থমুলা অনেক উপটৌকন প্রদান করিয়া এব* বেশী রাজস্ব দিরার প্রলোভন দেখাইয়া নবাবকে সম্মত করিলেন। সফর্রাজ খার-হুমিত | বায়িতা-দোষে মুর্শিদাবাদের ন্বাবী কোষাগারে * অতান্ত অর্থাভাব ঘটিয়াডিল। রাজো সর্বত্র স্থৃশৃঙ্খলা-বিধানের জন্য নৃতন নবাব আলিবদ্দীথার প্রভূত অর্থের মতিশয় প্রয়োজন উপস্থিত হইয়াছিল ॥* “উপস্থিত বুস্তু পরিত্যাগ রা উচিত নয়» এই নীতির বশবর্তী ইইয়া তিনি পুংখানু- পুংখরূপে অনুসন্ধানে কালক্ষয় না করিয়া, দেবীপ্রসাদের প্রস্তাবেই সম্মত হইলেন। দেবীপ্রদাদ নিজ-নামে রাজসাহী- জমিদারীর নৃতন সনদ্‌ সং গ্রহকরিয়া নাটোরে উপস্থিত হইলেন। নাটোরে আসিয়াই মহারাজ রামকান্ত ও কাহার পতী মহারাণী ভবানীকে প্রাসাদ হইতে বহিষ্কৃত করিয়! দিলেন। মহারাজ বাকন্ত এই তয়্কর বিপদের (৭ একমাত্র নঙ্গিনী বুদ্ধিমতী স্ুশিক্ষিতা সহধন্মিণী মহারাণী ভবানীকে এই ঘোর বিপদ হইতে নিষ্কৃতিলাতের জন্য একটা উপায় নিদ্ধীরণকরিতে বলিলেন। প্রসিদ্ধ! বুদ্ধিমতী রাণী কিয়্ক্ষণ চিন্তাকরিয়া বলিলেন, এ বিপদে মুর্শিদাবাদে গিয়া জগৎশেঠের শরণাপন্ন হওয়া ভিন্ন আর কোন উপায়ই নাই মহারাজ রাম্‌কান্ত, মহারাণা হবানীর থমন্ত্রণানুসারে তাহাকে সঙ্গে লইয়: বুদ্ধমন্ত্রী দয়ারাম ও কতিপয় ভৃত্য সহ মুর্শিদাবাদে ফতেচন্দ, জগৎ- শেঠের বাঁটাতে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছিলেন। মহারাণী ভবানীর এই রাজা-টুতি সম্বন্ধে আনেকের অনেক প্রকার মত ৃষ্ট হইয়। থাকে । কেহ কেহ বলেন, মহারাজ রামকান্তের যৌবনোচিত চাঞ্চল্যদোষে বিলানের মাত্র বুদ্ধি পাওয়ায় নবাব স্রকারে দেয় বাধিক রাজন্ব বাকি পড়িয়াছিল। সেই লময়ে তিনি স্বীয় প্রভুঃশক্তির গর্বের স্বগীয় পিতার বাক্য অমান্ত করিয়া বৃদ্ধ দিওয়ান দয়ারাদকে অপমানিত করিয়া তাড়াইয়। দিয়াছিলেন। তখন মহারাজ রাম কান্তের উত্তম মন্ত্রীর অভাবে ও ও কুলংপগ প্রভাবে রাজকা ধ্-পরিচালনার মহাবিজ্রাট ঘটিয়াছিল। : বসরের পর ব€সর অকিক্রান্ত হওয়ায় বাধিক, রাজস্বের পরিমাণ তদনুসারে বাড়িয় গিয়াছিল। “কয়েক বতসর যাব নবাব-সরকারে বাধিক রাজস্ব প্রদত্ত না হওয়ায় নবাবের সৈশ্য "আনিয়া! ন/টোর-রাজবাড়ী লুষ্টন করিয়া- ( ৩৮৮) ছিল। এই ম্থযোগে দেবীপ্রসাদ মুর্শিদাবাদে নবাব- দরবারে গিয়া নিজ-নামে রাজসাহী-জমিদারীর নৃতন সনদ্‌ ংগ্রহকরিয়া নাটোরে আমিয়াই মহারাজ রামকান্ত ও মহারাণী ভবানীকে রাজবাটা হইতে বহিষ্কুতকরিয়া দিয়াছিলেন। ইত্যাদি ইত্যাদি নানা প্রবাদ শ্রুত হইয়া থাকে। কিন্তু মহারাজ রামকান্তের সচরিত্রের বিকুদ্ধে এই সকল কথা ম্বকপোল-কল্িত, জনশ্রুতি-মাত্র- ভিন্ি-প্রতিষ্ঠিত, এবং এতিহাসিক প্রমাণ-বিবর্ভজিত "বলিয়া অগ্রাহ্য । আবার কেহ কেহ এই কথা বলেন যে, দিওয়ান দয়ারাম, মহারাজ রামকান্তের নবাব-সরকাতে এই রাজন্ব- দানে অক্ষমতার সুযোগ পাইয়া অপমানের শোর লইবার জন্য ষড়যন্ত্র করিয়া মহারাজার “রাজ্যনাশ ঘটাইয়াছিলেন। ইত্যাদি হতাদি কথাও অগ্রাহা। কারণ, নবাব-সরকারের প্রাচীন কাগজপত্রে দেখিতে পাওয়া যায় যে, মহারাজ রামকান্তের শানন-সময়েই রাঁজসাহী-রাজ্ের সর্বাপেক্ষা শ্ীরৃদ্ধি হইয়াছিল। পূর্ববাপেক্ষা অনেক নৃ্ঠন নূতন জমিদারী তাহার করাধণ্ত হইয়াছিল। নাটোর-রাজ- কোষাগারে প্রভৃত অর্থ সঞ্চিত হইয়াছিল'। প্রত্যেক বগসরেই নবাব- দপ্তরে মহারাণী ভবানীর নামজারী দেখিতে পাওয়া যায়। কেবলমাত্র এক বওুসরের জন্য দেবীপ্রপাদের চাতুরী- প্রভাবে তিনি রাজাচ্যুত হইয়াছিলেন। সেই বসরের কাগজপত্রে তাহার নাম দেখিতে পাওয়া যায় না। ( ৩৮৭) দ্যারামের এভুভক্তি ও স্বংশ্মননিষ্টা ইতিহাস-প্রসিদ্ধ। তিনি কিঞিত জমিদারী ফাঁকি দিয়া লইবার জন্য ষড়যন্ত্র করিয়া প্রভু-পুজ্র মহারাজ ও লগ্গনীস্বরূপা দয়ান্সেহবতী মভারাণী ভথানীকে রাজাচাত করাইয়াছিলেন ও তাহা, দিগকে মহাবিন্স করিয়াছিলেন, ইহা কোন এ্রকারেই বিশ্বাস করিতে পায়া যায় না। কারণ, তাহার এশ্বযোর মন্তাব ছিল না। তিনি ব্কাল মন্ত্রিত্ব করিয়া গুভূত অথ উপাঞ্জন করিয়াছিলেন । তিনি মহারাজ রামজীবনের সময হইতেই “তরফ, নন্দকুঁজাদিগরে"র তালুকদার বলিয়া "লোক-সমাজ্ে পরিচিত হইয়াছিলেন। মহারাজ রামজীবনের কৃপায় তিনি,এই বৃহ তালক লাভকরিরা কুজ্ভহ্ৃদয়ে উহা ভোগকরিতেছিলেন*ধ তিনি বভবার মহার!'জ রামজীবন ও রাজা রঘুনন্দনের নিকট হইতে বহু মহামুল্য পারিতোধিক লাভকরিয়াছিলেন। কুঁচক্রী দেবীপ্রসাদের ষডমন্ত্র-প্রশ্তাবে মহারাজ রামকান্ত একবার রাজ্যচ্যুত হইয়াছিলেন, এবং প্রভৃতক্ত ক্ষমতাশালী বৃদ্ধ দিশয়ান দয়ারাম ও ফতেচন্দ জগতশেঠের সাহায্যেই তিনি অধিকার- চাত রাজ্যের পুনরুদ্ধার করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন, ইহাই এতিহাসিক সত্য ঘটনা । তিনি ও মহারাণী ভবানী, দেবী- প্রসাদ কর্তৃক রাজবাড়ী হইতে বিতাড়িত হইয়া বিপত- সাগরে পতিত হইয়াছিলেন। পরে মহারাজ স্থীয় সহধর্টিণী বুদ্ধিমতী মহারাণী ভবানীর স্ুমন্ত্রণামুসারে ( ৩৯৪ ) রাজ্যোদ্ধারের জন্য মুর্শিদাবাদে জগংশেঠের বাটাতে আতিথ্য-গ্রছণে বাধ্য হইয়াছিলেন, ইহাই এঁতিহাসিক সতাঘটন! | এই সময়ে জগতশেঠের অতান্ত গৌরবাবস্থা। তাহার ইন্্রপুরীত্ুলা প্রাসাদ মহিমাপুর-নামে বিখ্যাত ছিল। এক্ষণে সেই মহিমাপুরের লেশমাত্র মহিমা নাই । উহার অধিকাংশ ভাগীরখী-গর্ভে বিলীন হইয়া গিয়াছে । এক্ষণে সেই জগণশেঠের দুর্দিশা গ্রস্ত বংশধরগণ দেই জরা- জীণ ভগ্রাবশিষ্ট ইতিহাস-প্রসিদ্ধ "প্রাসাদে বাসকরিয়া মনঃকষ্টে দিনযাপন করিতেছেন। সআাট ফেরোক্সাহার রাজত্বকালে এই শেঠবংশীয়দিগের পূর্ববপু্ষষ পুরুষানু- কমে জগতশেঠ এই উপাধি এবং বঙ্গের নবাবের আসনের ঠিক পার্শেই বসিবার অধিকার লাভ করিয়াছিলেন । সুতরাং মুর্শিদাবাদে যখন যিনি নবাৰ হইয়াছেন, তখন এই বংশের যিনি যখন প্রধান ছিলেন, তিনিই এরূপ সম্মান পাইতেন। ইতিহাস-লেখক বিভারিজ, সাহেব লিখিয়া গিয়াছেন যে, এই শেঠ-ভবনের যে কক্ষে বসিয়। বুটিশ বণিকগণ গুপ্তমন্ত্রণা করিয়া পলাশীর যুদ্ধে জয়ী হইয়া- চিলেন এবং পরে সমগ্র' ভারতবর্ষে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা- করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন, সেই কক্ষ এক্ষণে ভাগীরতী- গর্ভে বিলীন হইয়া গিয়াছে । ইতিহাস-লেখক হণ্টার্‌ সাহেব লিখিয়াছেন যে, যে স্থানে বাঁদ্‌সাহী “টাক্শাল” বা মোহর টাকা পয়সা প্রভৃতি নিন্ধাণের ুদ্রামনত্-গৃহ ছিল, ( ৩৯১ ) তাহার চিহ্ুমাত্র বর্তমান নাই। ইংরাজবণিকগণ তাহার. সামান্য শেষ ইষ্টকখানিও, গুণগ্রাহী ধনী ইং্রাজদিগের নিকটে উচ্চমুল্যে বিক্রয়করিয়াছেন। সেই মুদ্রাষন্থ্ের সাজ্সরগ্তাম গুলির ভগ্নাবশেষ অন্যত্র যাদুঘরের গৌরব বদ্ধিকরিতেছে | জগৎশেঠের গুনের যে কক্ষে বাৎসরিক “পুণ্যাহ পর্নব" উপলক্ষে বঙ্গের বড় বড় জমিদারকে চিন্তাক্রিষ্ট হইয়া অনুগ্রহ-প্রাপ্তির প্রত্যাশায় বহু ঘটিক' পর্যন্ত বিষন বদর্নে বসিয়া থাকিতে হইত, যেখানে বঙ্গ, বিহার উডিষ্যার নবাবগণকে সময়ে সময়ে আসিতে হইত, যেখানে ভারতসামাজা-সংস্থাপক বড় বড় বুটিশ বণিকগণ, খণ গ্রহণের জন) কিম্বা নবাবের অত্যাচার-উত্পীড়ন হইতে রক্ষ! পাইবার জন্য জগগুশেঠের কৃপাকটাক্ষের প্রতীক্ষায় মহাচিন্তান্বিত হইয়া যে কক্ষে বহুক্ষণ পর্যন্ত দাড়াইয়! থাকিতেন, এবং প্রাসাদের সিংহদ্বারস্থ প্রহর-ঘণ্টার ধ্বনি গণনাকরিতেন, সেই সকল এতিহাসিক প্রাসাদ-কক্ষ এক্ষণে মৃত্তিকা-স্তূপে পরিণত হইয়া রহিয়াছে । কেবল রাশি রাশি তৃণ-লতা-গুলো আচ্ছাদিত কয়েকটি জরা-জীর্ণ ভগ্ন তোরণ ও কক্ষ এবং ইফ্টক প্রস্তর ও মৃত্তিকা-স্তুপ ব্যতীত আর তথায় কোন দ্রষ্টব্য বন্তুই নাই। কিন্তু প্রত্যেক জীর্ণ ইক, প্রস্তরখণ্ড ও ধূলিকণার লঙ্গে সার্দ শত বগুসর পূর্বের এতিহাসিক ঘটনাগুলি এখনও যেন সজীব হইয়া, রহিয়াছে । এই শেঠভবনে নাটোর-রাজ- ( ৩৯২ ) পরিবারের যেরূপ মহাসমাদর ও সম্মান ছিল, তাহাতে মহারাজ রামকান্ত ও মহারাণা ভবানী রাজাচাত হইবার পর স্বয়ং মুর্শিদীবাদে না আসিয়া যদি তথায় একজন প্রতিনিধিকে পাঠাইতেন, ও তাহার প্রমুখাত নিজেদের বিপদের কথা জগৎশেঠকে জানাইতেন, তাহা হইলেও, তাহাদের মানরক্ষার ক্রটি হই না এবং তাহার! এই বিপদ হইত উত্ভীর্ণ হইতে পারিতেন। কিন্তু যখন ভাঙার! স্বর কথায় উপস্থিত হইলেন, তখন জগ্শেঃ ভাহাদিগকে মহাসমাদর করিয়! প্রাণপণে ঠাচাদের রাজা- উদ্ধারের জন্য চেষ্টা] করিতে আর্ত কবিল্ীন। নবাব আইলীবাদ্দী খা, তাহার প্রধান মন্ত্রী ও ন্যান্য, ক্ষমতাশালী অমাত্যদিগকে যোগাতানুসাকে বন বন্তমূলা উপটৌকন- দানে সন্ভুষট করিবার নিমিভ্ত এই কাধ্যে বনু অর্থের প্রয়োজন উপস্থিত হইয়াছিল। মহারাজ রামকান্তের সঙ্গে সে সময়ে তাদৃশ অর্থ না থাকায় তিনি পুনরায় মহা, বিপন্ন হইলেন। রাণী ভবানী তীহার বদন বিষণ্ন দেখিয়া বিষাদের কারণ জিজ্ঞাসা করিলেন । মহারাজ তাহাকে বিষাদের কারণ নিবেদন করিবামাত্র রাণী ভবানী ততক্ষণা তাহার ব্ুমূলা সমস্ত অলঙ্কার তাহার হস্তে প্রদান করিয়া বলিলেন, “মহারাজ, এই অলঙ্কারগুলি শেঠজীর নিকটে বন্ধক রাখিয়া বা কিক্রুয়করিয়া প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ- করুন” । পতি বিপদে পড়িলেও, পতিকে, বিপদ হইতে ( ৩৯৩) উদ্ধার করিবার জন্য অনেক সময় অনেক স্ত্রীলোক নিজের অলঙ্কারগুলি গাত্র হইতে উন্মোচন করিয়া পতিকে প্রদান করেন না। এইরূপ ঘটনা বন্ুস্থলে দৃষ্ট ও শ্রণত হুইয়াছে। কিন্তু পতিব্রতা পতিছুঃখকাতরা সতী নারী মহারাণী ভবানীর পক্ষে এরূপ কর! অসন্তব। তাই তিনি স্বামীকে বিপদ হইতে উদ্ধারকরিবার জন্য নিজের বন্ুনুলা অলঙ্কার গুলির মায়! তাগ করিতে পারিয়াছিলেন। তীহার ম্বামী এ অলঙ্কারগুলি এয়ারামের হস্তে প্রদান করিলেন। দয়ারাম এগুলি শেঠজীর নিকটে বিক্রয়করিয়! বা বন্ধাক রাখিয়। প্রয়েজনীয় অর্থ লইয়া বন্থমূল্য বু উপচৌকন সংগ্রহকরিলেন। তারপর মহারাজ রামকান্ত, দয়ারাম ও জগণুশেঠের সহিত নিদ্দিষ্ট ্দবসে এ উপটৌকন সহ ননাব- দরবারে উপস্থিত হইলেন । নবাবকে যথারাতি উপটৌকন দিয়। ও অভিবাদন করিয়া দরবারে বসিলেন! তারপর ফতেচন্দ গজতশেঠ নবাবকে রাজসাহী জমিদারীর প্রকৃত অবস্থা এবং কে ইহার প্রকৃত সন্থাধিকারী, তাহা উত্তমরূপে প্রমাণ প্রয়োগের সহিত বুঝাইয়া দিলেন। তখন নবাব আলিবদ্দী খা, ফতেচন্দ, জগতশেঠের বিশেষ প্রার্থনায় বিশেষরূপে খাতা-পত্র অনুসন্ধান করিয়া মহারাজ রাম কান্তকেই পুনরায় স্বপদে প্রতিষ্ঠিত করিলেন। এই সময়ে মহারাষ্টর-দস্থাগণ বঙ্গদেশে আসিয়া লোকের ধনশস্াদি লুট . করিয়। অকথ্য,অত্যাচার-উতপাত করিতে আর্ত করিয়াছিল। ( ৩৯৪ ) ইতিহাসে ইহা বর্গার উৎপাত বলিয়া প্রসিদ্ধ । সহারাষ্্রনরপতি শিবাজীর অর্থাগমের দৃষ্টান্ত অনুলরণ করিয়া রীঘোজী ভোন্স্লা ও তীহার মন্ত্রী ভাক্করপপ্ডিত- প্রমুখ মহারাষ্দস্থ্দলপতিগণ, বহুদহত্ম অশ্থারোহী সৈন্য সহ প্রতিবষেই বঙ্গে আগমনকরিয়া বঙ্গভূমিকে শশ্মানে পরিণত করিত। তাহাদের ভীষণ উপদ্রবে কত সতার যে, সতীহ্বনাশ হইয়াছে এবং কত লোকের যে, ধন প্রাণ মান নষ্ট হইয়াছে, এবং কত লোককে যে, নিজ নিজ “বাস্ত্ুভিট।” পরিত্যাগ করিয় স্থানান্তরে গিয়া বাস করিতে হইয়াছে, তাহার ইয়ন্ভা নাই । নদিয়ার বিখ্যাত প্রতাপী মহারাজ কৃ্ণচন্দ্রকেও, বীর ভায় কৃষ্ণনগর তাগকরিয়া মুলাজোড়ে গিয়! বাসকরিতে হইয়াছিল। বঙ্গের রাজ মহারাজ ও জমিদারদিগের কথা আর কি লিখিব, ফট,য়াট সাহেবের ইতিহাসে দেখিতে পাওয়া যায় যে, এমন কি, স্বয়ং বজ্র স্বনামধন্য নবাব আলিবদ্দী খ।ও, উ/হার পরিবারবঠ,ক নিরাপদে রাখিবার জন্য অহান্ত উদ্বিগ্ন হইয়াছিলেন। ইতিহাপ-বিখাতি এই ভয়ঙ্কর উপদ্রবের সময় রণ? ভবানা যেরূপ অকুতোভয়ে প্রবল প্রতাপে ধন-জনবলে রাজনীতি জ্ঞন-প্রভাবে তাহার র[গসাহী- রাজো শান্তিরক্ষা করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন, তাহ! শুনিলে বিস্ময় জন্মে। বঙ্গ বিহার উড়িষ্যার স্বনামধন্য পুরুষ স্বয়ং নবাব আলিবদরী খা, যিনি ইতপূর্বে সহজ সহত্র ( ৩৭৫ ) সৈন্যের পরিচালক সৈন্যাধাক্ষ ছিলেন, তিনিও, নিজ- পরিবারধর্গকে বর্গীর উপদ্রব হইতে নিরাপদে রাখিকার জন্য স্থান অন্বেষণ করিয়! যখন কুব্রাপি মনের মত নিরাশঙ্ক স্থান পাইলেন না, তখন মহারাণী ভরানাব রাজধানী নাটোরের নিকটবন্তী রামপুকবোধালিফ়ার আনতিদুরস্ত গোদাগাভী গ্রামে নিজ পরিবারবর্থকে রাখিয়াছিলেন। এই স্বানের নাম কেল্লা! বারুইপাড়া। এই শান নবাধ এক বু চর্গ নিশ্মগিকরাইঘাছিলেন। বর্গীর উপদ্রবের সময়ু এই দুরে তাহার পরিবারনর্গ নির্ভয়ে বাস করিত । ইহ! রাণী ভ্বালীর রাজামধো শ্িত। এখন, এ নবাবী হা গর ভগ্রাবাশষ ও সীমাচিজ্গ দেখিতে পাওয়া যায়। মহারাষ্রদস্থাদিগকে শাসনকাঁরিতে গিয়া নবার হালিবদদী- গার কোষাগার শুন্য প্রায় হইয়া গিয়াছিল। বহুদেনাক্ষয় হইয়াছিল। তিনি ভাঁহাদের নির্যাতনে জর্জরিত হইয়! পড়িয়াছিলেন। প্রতিবর্ষেই এই উপদ্রবের মাত্রাটা মেদিনীপুর বদ্ধমান প্রভৃতি দেশেই বৃদ্ধি পাইত। এমন কি, “মুতক্ষরীণ” প্রভৃতি গ্রন্থে দেখিতে পাওয়া যায় যে, এই মহারাষ্্-দন্থ্যুগণ বঙ্গের রাজধানী মুর্শিদাবাদ পর্য্যন্ত, লুণ্টনকরিয়াছিল। মিল্‌ সাহেবের ইতিহাসেও দেখিতে পাওয়৷ যায় যে, আলিবদ্দীর্থার পঞ্চদশবর্ষর্যাপী রাজত্বের মধ্যে এমন একটি বশসর অতীত, হয় নাই, যে বগসরে তীহাকে বর্গীর, উপদ্রব সহা করিতে হয় নাই। বঙ্গে ( ৩৯৬ ) অদাপি “ছেলে ঘুমল পাড়া জুড়ল বগী এল দেশে। বুল্বুলিতে ধান্‌ খেয়ে গেল খাজ্না দিব কিসে”? এই গানটি গাইয়া শিশুগণকে নিদ্রাক্রিষ করিবার জন্য ভয় দেখান হইয়া থাকে । এই বর্গীর উপদ্রবে উৎগীড়িত হইয়া পশ্চিম বঙ্গের সহ সহজ অধিবাসী দক্ষিণ পুর্ব ও উত্তরবঙ্গে পলাধ়নকরিয়া বাস করিয়াছিল । রাজসাহী, প্রদেশ, শিল্প বাণিজা ও কৃষিকাষোর জন্য ততান্ত সমৃদ্ধি- শালা হইয়া উঠিযাছিল দেখিয়া ইউরোপীয় বণিকগণ, ইহার স্থানে স্থানে আনকগুলি বাণিজ্যালয় স্থাপন করিয়াছিলেন । সেই সকল বাণিজ্যালয় বা কুটার ভগ্নাবশেষ অদ্যাপি বন্ধমান আছে । বগীর উত্পাতের সময় এই সকল ইউরোপীয় বণিকদিগকে ও অত্যন্ত ভীত হইতে হইয়াছিল । ত্কালে জলপথেই অধিকাংশ পণাদ্রবা যাতায়াত করিত। কিন্তু মহারা্-দস্থাগণ সেই সকল পণাদ্রব্য লুণ্ঠনকরিবার জন্য নদী-তীরে বসিয়া থাকিত। সে পময়ে লুখন-ভয়ে কেহ কলিকাতা অঞ্চলে পণ্যপ্রব্য প্রেরণ করিত না) ইহাতে অন্যদেশে বাণিজ্যের অত্যন্ত ক্ষতি হইলেও কৃষি- প্রধান রাজসাহ!র তাদৃশ৷ ক্ষতি হয় নাই। এই সময়ে ১৭৪৮ গ্রীষ্টাব্দে মহারাজ রামকান্ত সহসা পরলোক প্রাপ্ত হওয়ায় তীহ্থার পত্তী মহারাণী তবানীই অদ্ধবঙ্গের অধীশ্বরী হইলেন। তখন চতুদ্দিকেই রাষ্টরবি্নব। স্বয়ং দোর্দপু প্রতাপী নবাব আলিবদ্দীর্থ৷ মহারাষ্র দহ্যদিগের ভয়ঙ্কর ( ৩৯৭ ) দৌরাত্যে অত্যন্ত উৎপীড়িত হইয়া ক্রান্ত-শ্রান্ত হইয়া পড়িয়াছিলেন। কত মহাপরাক্রম রাজা মহারাজা মান প্রাণধন-রক্ষার্থ অসমর্থ হইয়। স্বদেশ স্বরাজা ও স্বগৃহ পরিত্যাগকরিয়া পথে পথে হাহাকার করিয়া কেড়াইতে ছিলেন। ঈদৃশ সময়ে রাণী ভবানী তিন তিনটি ভয়ঙ্কর শোকে জজ্রিত হইয়াও, নির্ভয়ে অদ্ধবঙ্গব্যাগী রাজ্য রক্ষা করিয়াছিলেন। তাহার দুইটি পুক্র ও একটি কন্যা জন্মিয়াছিল। পুঞ্র* দুইটি একের পর এক, অকালে মৃত্যুমুখে পতিত হইয়াছিল | তাহারপরই তীহার স্বামীরও অকাল মৃত্যু হওয়ায় ঠিনি হৃদয়ে দারণ আঘাত প্রাপ্ত হইয়াছিলেন।* একে এই তিনটি ভয়ঙ্কর শোক; তারপর চত্তুদ্দিকেই ভয়ঙ্কর এই রাষ্রবিপ্রব ; ঈদৃশ দুঃসময়ে এই বিশাল রাজ্য-রক্ষার মহতী চিন্তা আমিয়া উপাস্থত হইল। কিন্তু তিনি দৈনিক গীতাপাঠ ও গীতার্থআলোচনার প্রভাবে এই সকল শোক ও চিন্তাকে দ্মনকরিয়া সর্বর- প্রথম মহারাষ্ট্র দন্তাগণের উপদ্রব হইতে রাজ্যরক্ষার্থ উপায় অবলম্বনে সচেষ্ট হইলেন। এই সময় হইতেই যে, তাহার প্রকৃত রাজত্বকাল আরন্ধ হইল তাহা নহে, কিন্তু তাহার, স্বামীর জীবিতাবস্থাতেও তাহার রাজকার্্য-পরিচালনার সুখ্যাতি চতুদ্দিকে বিস্তৃত হইয়! পড়ি্াছিল। তিনি তাহার স্বামী অপেক্ষা রাজকার্য্যের সূক্সমতত্ব বেশী বুঝি- তেন। যখন গয়ারাম দিওয়ান ছিলেন, তখনও মহারাজ . ৯৩৪ ( ৩৯৮ ) রামকান্ত রাণীর সহিত পরামর্শ না করিয়া কোন কার্য্য করিতেন না। রাণীর বুদ্ধি-প্রাখর্য্য দেখিয়! দ্য়ারামও সময়ে সময়ে বিস্মিত হইয়া! যাইতেন। দেবীপ্রসাদের ষড়যন্ত্রে যখন তাহারা রাজ্যচ্যুত হইয়াছিলেন, সেই সময়ে রাজ্যে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হইবার জন্য যে সকল উপায় ও কৌশল অবলম্বনীয় হইয়া উঠিয়াছিল, সেই সকল উপায় ও কৌশল রাণীর বুদ্ধির দ্বারাই উদ্ভাবিত হইয়াছিল । দিওয়ান্‌ দয়ারামের অবসর-গ্রহণের পর রাণীর বুদ্ধির দ্বারাই এতবড় রাজা পরিচালিত হইত । শুনিতে পাওয়া যায় যে, এই অদ্ববঙ্গব্যাপী সমগ্র রাজ্যটা রাণীর নখদর্পণে প্রতিফলিত ছিল। গ্র্যাণ্ট সাহেবের "য়্যানালিশিস্‌ অব. ফাইনান্শেস্‌ অব্‌ বেঙ্গল্‌” নামক পুস্তকে দেখিতে পাওয়া যায় যে, তখন সমগ্র বঙ্গদেশ একাদশ “চাক্লা”য় বিভক্ত ছিল। তন্মধ্যে রাণী ভবানীর রাজ্য আট “চাক্লা”য় বিভক্ত হইয়া পড়িয়াছিল। এই আটণচাকৃলা”ই তখন রাষ্ট্রবিপ্লবে পুর্ণ । “যার লাঠী তার মার মাটা” এই নীতি- বাক্যই তখন বঙ্গের জমিদারদিগের মুলমন্ত্র ছিল। যথা- সময়ে নবাব-সরকারে রাজন্ব দিতে পারিলে স্বীয় অধি- কারের মধ্যে স্বাধীন রাজার ন্যায় তখন রাজত্ব করিতে পার! যাইত। এহেন ছুর্দান্ত অবশ্ব জমিদারগণ বর্গীর 'উপদ্রব-সময়ে স্ব স্ব গৃহ পরিত্যাগকরিয়৷ স্থানান্তরে গিয়া মহারাষ্্রদস্থ্যগণের ভয়ে চোরের মত লুকাইয়৷ থাকিতে ( ৩৯৯ ) ঘখন বাধ্য হইয়াছিলেন, সেই লময়ে অন্তংপুরবাদিনী, পতি, পুত্রহীনা বাঙ্গালী ব্রাহ্মণীর পক্ষে অবিচলিত চিত্তে অত. বড় রাজ্য শাসনকরা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। তিনি প্রথমতঃ বর্গীর উপদ্রব হইতে আত্মরক্ষার্থ ও প্রজারক্ষার্থ মথুরা পঞ্জাব ভোজপুর প্রভৃতি দেশের বলিষ্ঠ যুদ্ধনিপুণ সাহসা লোক সংগ্রহকরিয়৷ একটি বড় সৈন্যদল সংগঠিত করিয়াছিলেন। এই বৃহ সৈম্যদল-সংরক্ষণার্থ তাহাকে বু* অর্থ ব্যয়করিতে হইয়াছিল। নাটোর-রাজবাটীর পার্খে ই এক প্রশস্ত সেনানিবাস নিশ্মিত হইয়াছিল। উহা কালক্রমে *ভূগর্ভে প্রোথিত হইয়া গিয়াছে । যাহা কিছু এবশিষ্ট ছিল, তাহাও ১৮৮৫ খ্রীষ্টান্দের ভূমিকম্পে ভগ্ন- স্থুপে পরিণত হইয়া রহিয়াছে । এই সময়ে তাহাকে মুর্শিদাবাদের বড়নগরস্থ প্রাসাদের মায়া পরিত্যাগ করিয়া নাটোরেই কয়েক' বগুসর যাবৎ ক্রমান্বয়ে বাস করিতে হইয়াছিল। শুনা যায় যে, এই সময়ে তীহার এই বড়- নগর-প্রাসাদও মহা রাষদন্্যগণকর্তৃক লুষ্িত হইয়াছিল । শুনা যায় যে, এই দস্থ্যগণ নবাব আলিবদ্দীর্থার নিকট হইতেও “চৌথ৮ ব| বঙ্গ বিহার উড়িস্ার রাজত্বের চারি অংশের এক অংশ প্রতিবর্ষে আদায় করিত। ইহা ছাড়া তাহারা তাহার নিকট হইতে কখন ,দশলক্ষ কখন ব 'ৰারলক্ষ টাকা অতিরিক্তরূপে আদায়করিয়। লইত। আলবদর ইহাদের তয়ঙ্কর অত্যাচারে অবসঙ্ন হইয়া ৫1885: , অবশেষে কুটনীতি অবলম্বনপূর্ববক ইহাদের মুলোচ্ছেদ করিয়াছিলেন। তিনি একদিন মহারাষ্টরদন্থ্যদলপতি ভাস্কর পণ্ডিতকে নিজের শিবিরে বন্ধুভাবে নিমন্ত্রণকরিয়। আনিয়া তাহাকে বধ করিয়াছিলেন। ইহার পর হইতেই বঙ্গে বগাঁর উপদ্রব নিবৃন্ত হইয়! গিঘ্রাছিল। এই সময়ে নিদ্দিষ্ট রাজস্ব ব্যতীত “মন্মুর্জি” ও «চৌথ.মারহাট্া” প্রভৃতি নামে অনেক প্রকার “বাজে জমা” ঝ। অতিরিক্ত দেয় কর প্রচলিত হইয়াছিল। রাণী ভবানী, নিদিষ্ট রাজস্ব ব্যতীত এই “বাজে জমা” অবিচ্ছিন্নভাবে প্রদান করিয়াও, নির্বিবদ্বে রাজারক্ষ। করিয়াছিলেন । খন ধাহারা রাজন্ব ও “বাজে জমা” মকল ক্রমান্বয়ে কয়েক বতলর বাকি ফেলিতেন, নবাব-দৈন্য উীহাদের গৃহ লুনকরিয়। অকথা উত্পীড়ন করিয়৷ তাহাদিগকে ধরিয়া মুর্শিদাবাদে লইয়৷ যাইত এবং তথায় নবাবী কারাগারে বন্দী করিয়া রাখিত। যতদিন পর্যান্ত তাহারা! তাহাদের দেয় রাজস্ব চুকাইয়। না দিতেন, তাবতকাল পর্যন্ত তাহাদিগকে নবাবী কারাগারের নরকমন্ত্রণা। ভেোগকরিতে হইত। সামান্য জমিদারগণের উপরই যে, এইরূপ উত্পীডন হইত তাহ নহে, কিন্তু নদিয়ার মহারাজ কৃষ্ণ)ন্দ্রের ন্যায় বিখ্যাত প্রতাপী জমিদারদিগের উপরেও এইরূপ ঘোর উৎপীড়ন হইত। মহারাজ কুঝ্১ন্দ্রকে একবার নয়, এমন কয়েকবার এইরূপ ভীষণ যন্ত্র ও অপমান সহা করিতে হইয়াছে৭% (৪৯১ ) মহারাণী ভবানীর দুইটি পুত্র ও স্বামী অকালে মৃত্যু- মুখে পতিত হওয়ায় তাহার একমাত্র কম্যা তারাদেবীই তাহার একমাত্র সাস্তবনাস্থল হইয়া পড়িল। তারাঁদেবীকে তিনি বাল্যকালে উত্তমরূপে শিক্ষা প্রদানকরিয়াছিলেন । তারাদেবী জমিদারী-কার্যযেও অতিশয় শিক্ষিতা হইয়া- ছিলেন। রাণী ভবানী বৃদ্ধাবস্থায় ভারাদেবীর মন্ত্রণা- সাহাযোই রাজকার্ধ্য পরিচালনকরিতেন। কারণ, দয়ারাম ০ শপপাপপিশ পাপিণশা পাপা ৮ পেশা পপাপিপস্পিপিপপিপশাপসপাপনপপাটালপ্পাশিশপাপিিাশিিশাশীিপিপপিাশটিিশত * একবার কোন কারণবশতঃ ত্রিবেণীর জগন্নাথ তকপঞ্চাননের সহিত মহারাজ কুষ্ণচন্ড্রের একটু মনোমালিন্য ঘটিয়াছিল। মহারাজ মনে- করিয়াছিলেন যে, জগন্নাথ সামান্ত দরিদ্র ত্রাহ্ষণ পণ্ডিত ব্যতীত আর কিছুই নয়। একটা! সামা ত্র্ষণ পণ্ডিতকে ভয় করিয়া চলিলে জমিদারী না করাই ভাল। জগন্নাথপপ্ডিত আমার কি করিবে? কিছুই করিতে পারিবে না । এইরূপ ভাবিয়া তিনি নিশ্চিন্ত মনে কাল- যাপন করিতে ছিলেন । বিখ্যাত মেধাবী তেজজস্থী বৃহম্পতিতুল্য পঞ্ডিত জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন, মহারাজ কর্তৃক অপমানিত হইয়! অপমানের প্রতিযোধ লইবার জন্য মুর্শিদাবাদে গিয়! নবাবের হিম্দু পারিষদ একজন মভারাজকে সেই অপমানের কথা নিবেদনকরিয়াছিলেন। তিনি জগক্াথ তর্কপঞ্চাননকে অত্যন্ত সম্বানকরিতেন। তাহাকে কেনা সম্মান করিত? কুঞ্চনগরের মহারাজকে নবদীপের ক্রাঙ্ধণ পণ্ডিতগণ খোবামো্র করিয়া আকাশে তৃলিয়াদিতেন বলিয়াই মহারাজ দিন দিন গর্চিত হইয়! উঠিয়া ছিলেন। তিনি জগল্লাখকেও সেই শ্রেণীর এপ্রধাম পণ্ডিত মনে- করিয়া কাহার প্রতিও প্রতৃত্বভাব দেখাইতে গিয়াছিলেন। জগন্নাথ, যহারাজার ব্যবহারে অন্ধ হইয়া স্বীয় তেজস্থিভাভাব দেখাইতেও ভরি (৪৯২ ) ইতঃপূর্ব্বেই নাটোরের দেওয়ানী-কাধ্য হইতে অবসর গ্রহণকরিয়াছিলেন এবং তাহার কয়েক বৎসর পরে পরলোক" গমন করিয়াছিলেন । খাজুরা-গ্রাম-নিবাসী রঘুনাথ লাহিড়ীর সহিত তারাদেবীর বিবাহ হইয়াছিল। বিবাহের কয়েক বশুমর পরেই তারাদেবী বিধবা হইয়া- ছিলেন। রাণী ভবানী তারাদেবীকে নাটোর-রাজ্োর উত্তুরাধিকারিণী করিবার মানসে নবাব-সরকারের কাগজ- ০ নিল এ 2 পল 2 সন করেন নাই । ইহাতেই পরস্পরের বিবাদ ঘটিয়াছিল এবং অবশেষে মহারাজ জগম্নাথকে অপমান করিয়াছিলেন। জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননের নায় অদ্ভূত মেধাবী পগ্ডিত বঙ্গে জন্মগ্রহণ করেনাই। তাহার প্রথর মেধার কথ। শুনিলে বিস্মিত হইতে হয় ।.তৎকালে ইষ্ট ইপ্ডিয়া কোম্পানির উচ্চ ইংরাজ কশ্মচারিগণ তাহাকে গুরুর ন্যায় সম্মানকরিতেন। বঙ্গের হাইকোর্টের সর্ধবপ্রথম চিফ্জগ্টিশ স্যার উইলিয়াম জোন্স ও তাহার পত্বী লেডী উইলিয়াম জোম্স, শাহার ত্রিবেণীস্থ বাটাতে গিয়। তাহাকে দর্শন করিতে যাইতেন। লেডীজোন্স, তাহার সহিত সংস্কতে কথা কহিতেন। মগরার নিকটবত্ী আকৃনা গ্রামের একটি বৃদ্ধ ভদ্রলোক বলেন, তিনি ক্বাঙ্ার বৃদ্ধপ্রপিতামহের নিকটে শুনিয়াছিলেন যে, এমন কি. ভারতের সর্বপ্রথম বড়লাট্‌ ওয়ারন হোষ্টিংস্‌ সাহেব পধ্যস্ত ত্রিবেনীগ্রামে জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননকে দর্শন করিতে আসিয়াছিলেন। তিনি দরিদ্র ত্রাহ্গণ পণ্ডিত ছিলেন না। তিনি কোম্পানির জন্য “বিবাদভঙ্গার্নব- সেতৃ” নামক হিন্দু “আইন” গ্রশ্থ-সংকলনার্থ' মাসিক সাত শত টাকা . পারিশ্রমিক পাইতেন। তৎকালে একজন ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের পক্ষে সাত শত টাকার কত মূল্য ছিল, তাহা পুরাতত্ববিৎ মাত্রেই '্লবগত আছেন। (৪০৩) পত্রে জামাতা রথুনাথের “নামজারি” করিয়াছিলেন ।: কিন্তু তাহার অকালমৃত্যুতে রাণীর আশ! ফলবতী হয় নাই। তারাদেবীকে সকলে “তারা ঠাকুর্বী” বলিত। "দয়ারাম অবসর গ্রহণকরিয়া যে সময়ে দিঘাপভিয়ায় নিজবাটীতে থাকিয়া নিজের জমিদারীর উক্নতিসাধন করিতেন, সেই সময়ে তিনি অবকাশ পাইলে নাটোরে আসিয়! মহারাণী ও তারাদেবীর তত্ব লইতেন। দয়ারামের সহিত তারাদেবীর এ হেন জগন্ধাথ তর্কপর্ধাননকে অপমানকরায় মহারাজ কৃষণচন্দ্রকে ইহার বিলক্ষণ ফল ভোগকরিতে হইয়াছিল। সেই সমস্ষে নবাঝ*সরকারে মহারাজার বনুলঙ্ষ্চ টাক! দেয় রাজস্ব বাকি পড়িয়াছিল। এইস্ুত্র পাইয়া নবাবের পারিষদ সেই হিন্দু মহারাজ জগন্নাখেরপ্রতি মহারাজা কৃষ্ণচঙ্্রের- কৃত সেই অপমানের শোধ লইবারঞ্জন্ত নবাবকে বলিয়া মহারাজ কৃষণ- চন্ত্রকে কৃষ্ণনগর হইতে বন্দীকরিয়া মুর্শিদাবাদে আনাইয়! নবাবের ভীষণ কারাগারে নিক্ষেপকরিয়াছিলেন। পরে মহারাজ নবাবসরকারে রাজন্ব চুকাইয়া দিয়া সেইবার নিষ্কৃতি লাভকরিরাছিলেন। বহুদিবস পরে দীপান্বিতা কালী পুজার রান্রে হটাৎ জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন কৃষ্ণনগর-রাঁজ- বাড়ীতে আসিয়া উপস্থিত হইলে পূজার সময়ে পৃজার দালানে উপিষ্ট মহারাজ, জগন্নাথকে দেখিয়াই বলিলেন “ কিমভূতম্‌” ! একি অদ্ভূত ব্যাপার? অর্থাৎ আমাকে এত নিগৃহীত করিয়া বিনা নিমগ্রণে আবার, আমার বাড়ীতে আসা হইল কেন ? জগম্নাথ তৎক্ষণাৎ আর তিন চরণ' পূরণ করিয়৷ এই শ্লোকটি রচনা করিয়া তাহার উত্তর দিলেন ;-_ শিবন্ত নিন্দয় যয়াত্যজদ্বপুঃ স্বকীয়কর্মূ। তদংস্রিপন্কজদ্বয়ং শবে শিবে কিমদ্ভূতম্‌ ॥ অর্থাৎ দক্ষকন্তা সত্তর, শিবের নিন্দা-শ্রবণে পাপ উৎপন্ন হইয়াছে জানিয়।, (৪৯৪) মধ্যে মধ্যে কলহ হইত। তারাদেবী জমিদারীর কাগজ- পত্র একবার পুংখানুপুংখরূপে অনুসন্ধান করিতে করিতে দেখিতে পাইলেন থে, দয়ারাম কেবলমাত্র নিজের নামটি স্বাক্ষর করিয়া অনেক ব্রাঙ্গণকে ব্রাঙ্ষোত্বর ভূমি দান করিয়াছেন। রাজভূত্যের রা এইরূপ কার্ধ্য করা অন্যায় । যে সকল ব্রাঙ্ষণকে এ সকল ব্রঙ্গোত্তর ভূমি দেওয়া হইয়াছিল, তারাদেবী তীহাদ্িগকে রাজবাটাতে আহবান করাইয়া জানাইলেন যে, দিওয়ানের রাজদ্ষা্য- পরিচালনার অধিকার থাকিলেও ভূমি-দানের অধিকার নাই। ব্রাহ্মণগণ বিপন্ন হইয়া দয়ারামের শরণাপন্ন হইলেন। দয়ারাম কোন প্রতিবাদ না করিয়া ব্রাহ্মণ- দিগকে বলিলেন, আপনার! মাটোর-রাজবাটাতে চলুন। আমি কিঞ্চিৎ পরেই আসিতেছি। এই বলিয়া তিনি উল ৯ লিলি িলি উল ২০০০৫ 2272 নিযে ছিন্নভিন্ন করিয়াছিলেন । যিনি পতি-নিন্না-শ্রবণে নিজদেহ ত্যাগ, করিয়া পতি-নিন্দা-শ্রবণজনিত পাপের প্রায়শ্চিত্ত করিয়াছিলেন, আক্ত তাহার চরণদ্বয় শিবের বক্ষের উপরে বিরাজমান !! ইহা অপেক্ষা অন্ভূত ব্যাপার আর কি হইতে পারে? ব্রাঙ্গণ পণ্ডিতের ক্রোধ অল্পকাল স্থায়ী। তিনি মহারাজের এতদূর অপমান ঘটাইয়া ভাল কার্ধ্য করেন নাই, ্রাহ্মণ পণ্ডিতের পক্ষে প্রতিহিংসা-প্রবৃত্ি চরিতার্থকরা পাপ। অতএব মহারাজের বাটাতে উপস্থিত হইয়া মহারাজকে সন্তুষ্ট করিলে সেই পাপের প্রায়শ্ঠিত হইতে পারে, এইরূপ বিবেচনা করিয়া তিনি হটাৎ দীপান্বিতা- পূজার রাত্রে কৃষণনগর-রাজবাটীতে উপস্থিত ইযাছিতেন। রত্বিহানিক রজনীকান্ত গুপ্তের নবচরিত। 381 এক-খগু কাগজ লইয়! কিয়ত্ক্ষণ পরে রাজবাটাতে উপস্থিত হইয়া দরবারগুহে প্রবেশকরিলেন। দরবারের এক প্রান্তে পর্দার অন্তরালে মহারাণী ভবানী ও তারাদেবী সমাসীন| ছিলেন। দয়ারাম যথারীতি দরবারে বিলে তারাদেবী পার্দার ভিতর হইতে তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ব্রন্ষোত্তর-দানপত্রে তাহার নিজ নাম স্থাক্ষর করিবার কি অধিকার মাছে? দয়ারাম বলিলেন, মা, রাজ সরকার হইতে যে সকল ব্রন্গোত্তরভূমি ব্রাহ্মণদিগকে দানকরা হইয়াছে, সেই সকল ব্রহ্ষোত্তরভূমির দানপত্রে আমি মাত্র রাজভৃত্য হইয়! নিজনাম স্বাক্ষর করিয়াছি বলিয়। যদি & ভূমিদান অসিদ্ধ হয়, তাহা হইলে এই জীর্ণ পত্রে লিখিত বিষয়টিও কি* সেই নিয়ম অনুসারে অসিদ্ধ হইবে? ইহাতে কেবলমাত্র আমারই স্বাক্ষর আছে । এই বলিয়া তিনি একখানি' জীর্ণ পত্র বাহির করিয়া বলিলেন, দেখুন, ইহা আপনার মাভাঠাকুরাণী মহারাণী মহোদয়ার বিবাহের লগ্নপত্র। ইহাতে কেবল আম।রই স্বাক্ষর আছে। দয়ারাঁম মহারাণী ভবানীর বাল্যদশায় ছাতিনগ্রষমে গিয়া মহারাজ রামকান্তের সহিত তীহার বিবাহ প্রথম স্থির, করিয়াছিলেন। পরে এ বিবাহের লগ্মপত্রে মাত্র নিজের নামটি স্বাক্ষর করিয়াছিলেন। তার! ঠাকুরাণী দয়ারামের এই কথা শুনিয়া মৌনাবলম্বন করিলেন। ব্রঙ্গোত্বরদান অসিজ্ধক্ছইজ ন।। রাণী ভবানীও, পর্দার অন্তরালে বঙিয়া- (৪০৬ ) ছিলেন । তিনি তারাদেবীকে বলিলেন, “তারা, দয়াদাদাকে আরবিরক্ত করিও না| বিরক্ত করিলে আরও স্পষ্ট স্পষ্ট কথা শুনিতে হইবে” | স্বয়ং মহারাণী ভবানী দয়ারামকে দয়াদাদা বলিয়া ডাকিতেন ও স্বামীর জ্ঠ ভ্রাতা ভাস্ুরের ন্যায় তাহাকে লম্মানকরিতেন। দয়াদাদা”ও, তাহাদের জমিদারীর শীবৃদ্ধির জন্য দেহ মন প্রাণ সমর্পণকরিয়া- ছিলেন এবং নাটোর-রাজ্যের উন্নতির জন্য জীবনের প্রায় সমস্ত ভাগই অতিবাহিত করিয়াছিলেন । এই' সময়ে বঙ্গের নবাব আলিবদ্দীর্থার মৃত্যু হয়। তাহার মৃত্যুর পর তাহার দৌহিত্র সর্ববলোক-বিদিত দুর্দান্ত অত্যাচারী যুবক নবাব সিরাজদ্দোল| বঙ্গের সিংহাসনে অধিরূঢ় হইয়াছিলেন। ইহার পূর্ববতন নবাবগণের রাজত্বকালে মহারাষ্দস্থা, গৌসাই, বর্গী, রাটদেশীয় ডাকাত, নিন্সশ্রেণীর দুষ্ট মুদলমান, পট,গিজ২, মগ্‌ ও আরাকান্দেশীয় জলদস্থ্য ও স্থলদস্ত্যদিগের ভয়ঙ্কর উত্পাত হইতে দেশরক্ষার উত্তম বাবস্থা না থাকিলেও রাণী ভবানী স্বীয় অসাধারণ ধীশক্তির প্রভাবে নিজরাজ্যমধ্যে নির্বিবন্বে শান্তিরক্ষা করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। কিন্তু সিরাজদ্দৌলার রাজত্বকালে তাহাকেও বিচলিত হইতে হইয়াছিল। সিরাজের রাজত্ব- কালে সমগ্র বঙ্গ বিহার উড়িষ্য! প্রদেশ মহাবিপন্ন হইয়া উঠিয়াছিল। হছিন্দুপ্রজার ধন্ন অর্থ মান প্রাণ বজায়- রাখিয়া দিন যাপনকরা মহাকগিন হইয়া উদ্ঠিয়াছিল। ( ৪০৭. ) নিতান্ত দুর্দান্ত সিরাজ ও তীহার পারিষদবর্গের উপদ্রবে সতীর সতীত্ব রক্ষাকর! মহাকঠিন হইয়া উঠিয়াছিল। মানীর মান রক্ষাকরা অসম্ভব হইয়াছিল। ধাঙ্মিকের ধর্মা রক্ষাকরা অসাধা হইয়া উঠিয়াছিল। সেই সময় ইংরাঁজগণ এই সিরাজ-উত্পীড়িত দেশ রক্ষা না করিলে দেশের যে,কি ভয়ঙ্কর শোঁচনীয় পরিণাম ঘটিত, তাহা বন্তৃতঃই অবর্ণনীয়। “যার লাঠি তার মাটি” এই নীতি পূর্বেও দেশে অনুস্থত হইত বটে, কিন্তু সিরাজের সময়ে দিল্লীর সম্রাট একেবারে অকর্শাণা ও শক্তিহীন হইয়া পড়ায় অনেষষেই এ নীতিমন্ত্রসাধনায় দীক্ষিত হইতে লাগিল। এই,মন্ত্রের সাধক হইয়া সিদ্ধিলাভ করিতে লাগিল। দেশে পূর্ণমাত্রায় অরাজকতা বিরাজকরিতে লাগিল। দেশের অশান্তি চরমসীমায় উপনীত হইয়াছিল। ইদানীং কোন কোন পুস্তকলেখক দিরাজকে ধর্মপুত্র ুধিষ্টিররূপে প্রতিপন্ন করিতে প্রয়াস পাইলেও সিরাজের চরিত্র সম্বন্ধে জগতের সর্বসাধারণের দৃট় সংস্কারটি কখনই ঘুচিবে না। ছুই একখানি পুস্তক লিখিলে মিরাজের কলম্ক-কালিমা কখনই বিধৌত হইতে পারে না। কারণ, ধাহারা এ সকল পুস্তক পাঠকরিবেন তীহারাই এ সকল পুস্তক হইতে নৃতনতত্ব অবগতহইতে পারিবেন। কিন্তু ধীহারা মোটেই পুস্তক পাঠকরেন না, সিরাজের চরিত্র সম্বন্ধে কেবল প্রচলিত প্রবাদ মাত্র শ্রাবণকরিয়া৷ থাকেন, ( ৪০৮ ) সেই প্রবাদ-শ্রুবণে তাহাদের হৃদয়ে যে সংস্কারটি বদ্ধমূল হইয়া গিয়াছে, সে সংস্কারটি বিলুপ্ত হইবে কিরূপে? কেহ কেহ বলেন, ইংরাজ ইতিহাস-লেখকগণ [সিরাজের চরিত্র বিকৃতরূপে বর্ণন। করিয়া লোকের কুসংস্কার উত্পাদন করিয়াছেন । ইহাও অত্যন্ত ভুল কথা। কারণ, যাহারা সমগ্র জীবনে ইংরাজীর একবর্ও শিক্ষা করে নাই, ঝা ইংরাজি-শাক্ষিত ব্যক্তির নিকট হইতে পুরুষানুক্রমে সিরাজ সম্বন্ধে একবণও শ্রবণকরে"নাই) যাহারা সহর হইতে বহুদুরে অরণ্যময় পল্লীগ্রামে বাসকরে, যেখানে ইংরাজি-শিক্ষিত এক ব্যক্তিও নাই, ঈদৃশ মূর্খ কষকগণও, কোন ছুষ্ট অনিষ্টকারী উদ্ধত ব্যক্তির প্রতি ক্রুদ্ধ হইলে বলিয়া থাকে, পব্যাটা! যেন নবাব সিরাজদ্োৌলা”। কেহ কেহ আবার ইতিহাসের অতি সূক্মমতব্ব বাহির করিয়। বিদ্যা “জাহির” করিয়া থাকেন যে, রাণী ভবানী এদেশে ইংরাজের রাজত্বের পক্ষপাতিনী ছিলেন না। সিরাজের রাজত্বের পক্ষপাতিনী ছিলেন, বাঁ মুসলমান রাজত্বের পক্ষ- পাতিনী ছিলেন। কেহ কেহ ৰলেন, তিনি এদেশে হিন্দু- সাম্রাজ্যের পক্ষপাতিনী ছিলেন। এ সকল কথাও অত্যস্ত ভুল কথা। কারণ, যে দিরাজদ্দৌলা, তাহার কন্যা তারা- দেবীর অসামান্ত“রূপলাবণ্যের প্রশংসা-শ্রবণে কর্ণের তৃপ্তি- সাধন করিয়৷ চক্ষুর তৃপ্তিসাধন করিতে উদ্যত হইয়াছিলেন, 'এবং মহারাণী ভবানীর ধর্ম্ম-প্রাণে মহাভীতিসঞ্চারকরিয়া- ( ৩০&- ) ছিলেন, ধাহার ভয়ে মহারাণী' মহাবিপন্ন হুইয়। ভীম- পরাক্রম বলিষ্ঠ সন্ন্যা্িগণের সাহায্যে সেই মহাবিপদ হইতে উত্তীর্ণ হইয়াছিলেন, তাদৃশ অত্যাচারী [সিরাজের রাজত্বের পক্ষপাতিনী হওয়া মহারাণীর পক্ষে অত্ন্ত অসম্তব। তারাদেবীর প্রতি নবাব পিরাজের অত্যাচার চেষ্টা, জগৎশেঠের পুত্রবধূর প্রতি নবাব সফর রাজের অত্যাচারের কথ! মিথ্যা হইলেও, নবাবদিগের চরিত্রের কথা উহার জানিতে বাকি ছিল না। এক এক জন নবাবের বহুসংখ্যক বেগম থাকিলেও তাহাদের ইন্ড্রিয়- লালসা চরিতার্থ হইত না। তাহারা কোন ভদ্রমহিলার সৌন্দধ্যের নন্ধান পাইলেই অন্ততঃ তীহাকে একবার দেখিবার নিমিন্ত উন্মন্ত ইইয়৷ উঠিতেন। প্রজাদিগের নিকট হইতে বাধিক রাজন্ব যথাসময়ে আদায় করিয়া স্ব স্ব স্ৃখভোগবিলাসের ব্যয়োপযোগী অর্থ রাখিয়া অবশিষ্ট অর্থ দিলীতে সম্াটসমীপে প্রেরণকরাই তাহাদের একমাত্র ক্লার্যয ছিল এবং কোন কোন নবাক দিল্লীতে মোটেই রাজন্ব প্রেরণ করিতেন না, ইহা রাণী ভবানী বেশ বুঝিতেন। নবাব সরকারে যথাসময়ে বাধিক রাজস্ব; দিয়া জ্মিদারগণ, স্ব স্ব জমিদারীর মধ্যে শ্য স্ব: প্রজার: প্রতি সহজ্র সহত্র প্রকার- অত্যাচার রুগিলেও, স্ব? অধিকারের মধ্যে প্রবলতরঙ্পর্ণ পা্গ- মহান সৃষ্টি? করিলে নবীবগণ তাহার “কোন জস্ধানিই, ননপনা ( ৩১৯) এখনকার মত তখন গ্রামে গ্রাযে পল্লীতে পল্লীতে পুলিশের শাসন ছিল না। এত দেওয়ানি-ফৌজদারী আদালত ছিল না। প্রাদেশিক হাইকোর্ট ছিল না। ইংরাজরাজত্বের স্বিচারের ন্যায় স্বিচার ছিল না। ছিল কেবল অদ্ভুত “কাজীরবিচার” ও ফৌজদারের অত্যাচার। তাহার শ্বশুর ধাহার ভূতা ছিলেন, এবং যাহার কৃপায় তাহার শ্বশুরের নাটোর-রাজ্য-লাভ হইয়া- ছিল, সেই মুর্শিদকুলীর্থাও, নিজ প্রভূ 'আজিম ওশ্মানের কিরূপ অনুগত ভূত্য ছিলেন, প্রভুর প্রতি তিনি কেমন ভ্বৃত্যোচিত ভক্তি প্রদর্শন করিয়াছিলেন এবং প্রভুর কথায় --স্মাট পৌত্রের কথায়_-তিনি কিরূপ সহনশক্তির পরিচয় দিয়াছিলেন, রাণী ভবানীম্প তাহ! জানিতেও বাকি ছিল না। নবাবীআমলে রাজ্যশাসন করিয়! রাণী ভবানীকে অনেক ক্লেশ ভোগকরিতে হইয়াছে । তিনি নবাবী চরিত্র ও নবাবী রাজ্যশাসনতন্ত্রের সারমণ্ম বুঝিয়া যেরূপ মন্াহত হইয়াছিলেন, তাহাতে নবাবী রাজত্বের পক্ষপাতিনী হওয়া প্রসিদ্ধ! বুদ্ধিমতী রাজনীতিশাস্ত্রপপ্ডিতা রাণী ভবানীর পক্ষে অত্যন্ত অসস্তব। যে আলিবাদ্দীর্থ৷ ইতিহাসে বুদ্ধিমান স্থবিবেচক ধার্মিক প্রকৃত বিচারক প্রজাহিতৈষী ও সুঙ্ষ- দর্শী বলিয়া ইতিহাসে বিখ্যাত, সেই আলিবদ্ধী্থার রাজন্- কালে সেই আলিবদ্বীর্থার সুক্ষদর্শিতা স্থুৰিবেচনা ও স্থবিচারের ফলে রাণী ভবানীকেও দেবীপ্রসাদপরিচালিত ( ৪১১ ) বিপচ্চক্রে পড়িয়া রাজবাটী হইতে বিতাড়িত হইতে হইয়া, ছিল, দেশত্যাগিনী হইতে হইয়াছিল এবং অসূর্যযস্পশ্যা, রাজকুলবধূ ভাবিনী অর্ধবঙ্েশ্বরী হইয়া কুষীদজীবী জগৎ- শেঠের দ্বারে তাহাকে শরণ লইতে হইয়াছিল । নবাব- দিগের বুদ্ধিমত্তা, সৃন্মমদর্শিতা৷ ও স্থবিবেচকতার পরিচয় পাইয়া রাণী ভবানী বিলক্ষণ ব্লেশ ভোগকরিয়াছিলেন, দারুণ মর্ম্মব্যথা পাইয়াছিলেন। সেই জন্যই স্তুপ্রসিদ্ধ কধি বিদ্বান বিটারক নবীনচন্দ্র মেন মহাশয় তাহার “পলাশীর যুদ্ধ” নামক গ্রন্থে নবাবী অত্যাচারে উৎপাড়িত! নবাবীরাজা-উচ্ছেদকামনায় জগংশেঠভবনে গুপ্ত মন্ত্রণা- সভায় পর্দারঅন্তরালেউপবিষ্টা৷ রাণী ভবানীর উক্তি নিন লিখিতরূপে বর্ণনা করিয়ীছেন। যথা £- “ইচ্ছ! করে এই দণ্ডে ভীম অসি করে নাচিতে চামুগ্ডারূপে সমর ভিতরে পরছুঃখে সদা মম হৃদয় বিদরে সহি কিসে মাতৃদুঃখ” | জগতশেঠ ও দয়ারামের চেষ্টায় তাহার .হস্তচ্যুত রাজ্যের উদ্ধার সাধিত হইলেও, অব্যবস্থিত চিত্ত, যথেচ্ছাচারী, হ্ঠ- কারী, চাটুতাধি-কর্ণেজপদিগের ক্রীড়কন্দুক, ক্ষণে তু, ক্ষণে রুষ্ট, বিলাসী, ব্যসনী নবাবদিগ্রে রাজ্যশাসনতস্ত্রের মন্ত্রের জ্বালায় রাণী ভবানী অস্থির হইয়াছিলেন। তাহার শশুর ুর্শিদকুলীরথীকে মহাবিপদ হইতে উদ্ধারকরিয়া- 1 (এক৯২ 1 ছিলেন বলিয়া__মুর্শিদকুলীথার মহাউ্পকার, করিসাঁছিলেন বলিয়া মুর্শিদকুলীরখার নিকট হইতে প্রত্যুপকার পাইয়া- ছিলেন।' নতুব! বঙ্গের অন্যান্ত অনেক জমিদারকে মহন্মদরেজার্থা-কৃত অকথ্য অপমান ও অবাচ্যন্ত্রণা ভোগ- করিতে হইয়াছিল ও মুর্শিদাবাদের ঘোর অন্ধকার-আচ্ছন্ন ভীষণকারাগারে নিক্ষিগুহইয়! অবর্ণনীয় নরকভোগ করিতেহইয়াছিল, ইহাও বুদ্ধিমতী মহারাণী ভবানী বিলক্ষণরূপে. বুঝিতেন। রাণী ভৰানীর ধের্য/শীলতা। নিভীকতা, শক্তিমন্তা, শ্রমসহিষুতা ও প্রজাবতসলতার তুলনা নাই বলিয়! তিনি সেই ভীষণ রাষ্্বিপ্লবযুগেও স্বীয় বিশাল রাজ্য রক্ষাকরিতে পারিয়াছিলেন। নতুবা অন্যের পক্ষে এরূপ রাজ্যরক্ষা করা “অসম্ভব হইত। ধাঁহারা বলেন, রাণী ভবানী হিন্দু সাস্্রাজ্য স্থাপনের পক্ষপাতিনী ছিলেন, তাহারা অতিশয় ভ্রান্ত । কারণ, রাণী ভবানী যে সময়ে বঙ্গে নিজ রাজ্য শামনকরিতেছিলেন, সে সময়ে হিন্দুদাভ্রজ্যস্থাপনের কথা আকাশে প্রাসাদনির্্মাণের কথার ন্যায় অগ্রাহা। প্রতাপা'দত্ ও সীতারাম বঙ্গে হিন্দুসাস্রাজ্যস্থাপনের প্রয়াসী হইয়া বিফলমনোরথ হইয়াছিলেন, একথাও রাণী ভবানী বিলক্ষণ জানিতেন। যে দেশে পিতা ও পুঞ্র ,একমনাঃ হইয়া একটি কাধ্য করিতে পারে না, যে দেশে আত্মীয় বন্ধু প্রতিবেশীদিগের মধ্যে পরস্পরু মনের মিল ( ৪১৩ ) নাই, সে দেশে পরস্পর সম্মিলিত হইয়া একটি সী্রাজ্য স্থাপন কর! অত্যন্ত অসম্ভব, ইহাও রাণী ভবানী জানিতেন। বাষ্টি উত্তমরূপে প্রস্তুত না হইলে সমষ্টি উত্তমরূপে প্রস্তত হইতে পারে না, ইহাও তিনি জানিতেন। গুনিতে পাওয়া যায় যে, প্রতাপাদিত্য বা সীতারামের সৌভাগ্য-সমৃদ্ধি দেখিয়া ভজশোহর জেলায় তীহাদের স্বজাতীয় পরশ্রীকাতর কায়স্থজমিদারগণ পদে পদে তাহাদিগকে বিপন্ন করিবার জন্য খ্যথেষ্ট চেষ্টা করিয়াছিলেন । রাণী ভবানীর রাজত্ব- কালেও “যার লাঠী তার মাটি,” এই নীতিমন্ত্রের সাধনায় অনেকেই রশথাকিতেন। বঙ্গের জমিদারগণ স্ব স্ব প্রাধান্য- রক্ষার জন্যই সদা বদ্ধপরিকর হইতেন। তাহারা সময়ে সময়ে নবাবকেই প্রদেয় প্লাজস্ব দিতেন না। পরস্পরের সহিত পরস্পরের সহানুভূতি ছিল না। ত্যাগস্বীকার ছিল ন1| সংযম ছিল না” তাহারা সর্বদাই পরস্পর বিবাদমান হইতেন। দেশে পূর্ণ অরাজকতা বিরাজকরিত। নবাব- গণ তীহাদিগকে শীদনকরিৰার জন্য ব্যতিব্যস্ত হইয়। পড়িতেন। তীহাদ্দিগকে সংযত করিতে উপায়াস্তর না দেখিয়! নবাবের কর্ম্মচারিশ্পণ তাহাদের উপর . অকথ্য ঘোর উত্পীড়নের ব্যবস্থাকরিতৈন1.- এক জমিদার অন্য জমিদারের অনিষীসাধনের উপায়-উদ্ভাবনে রত থাকিতেন। এই সকল জমিদারদিগকে -লইপ্রা বঙ্গে একটি: হিন্দু, সা্রাজা স্থাপনের আশা. পোষণকরা বুদ্ধিমতী রাজ্যশাসনে (৪১৪ ) অভিজ্ঞ! রাজনীতিশাস্ত্রে স্থুপণ্ডিতা ধর্্মরত। পধিণামদর্শিনী রাণী ভবানীর পক্ষে. অত্যন্ত অসম্ভব ছিল। তিনি প্রতি- বেশী জমিদারগণের চরিত্র উত্তমরূপে বুঝিয়৷ ছিলেন । তাহার ধনবল জনবল বুদ্ধিবল ধর্ম্মবল ও চরিত্রবল ছিল বলিয়া প্রতিবেশী জমিদারগণ বা নবাবের কন্মচারিগণ তাহার কোন অনিষ্ট করিতে পারে নাই । নবাবী রাজ্য- ধ্বংসের পর বঙ্গের জমিদারগণ স্ব স্ব প্রাধান্য-রক্ষার জন্য সর্ববদ! বিবাদ-বিসন্বাদে প্রবৃত্ত থাকুক্‌, প্রবল কর্তৃক ছুর্বল ক্রমান্বয়ে উৎ্পীড়িত হউক, পরস্পরের কলহ উপলক্ষে দেশ সর্বদাই কুধিরধারায় রঞ্টিত হউক, খরশ্মীধিকরণে বিচারব্যবস্থার পরিবর্তে লগুড়প্রভাবে বিচারসিদ্ধান্ত স্থিরীকৃত হউক, এইরূপ ইচ্ছা রাণী ভবানীর ন্যায় শিক্ষিত রাজনীতিজ্ঞা সুশীল লোকহিতৈষিণী মহিলার হৃদয়ে উদ্দিত হওয়া অত্যন্ত অসম্তব। তির্নি ইংরাজের পরিবর্তে দেশীয় জমিদারগণের সম্মিলনে বঙ্গে একটি স্বাধীন হিন্দু সাস্রাজা স্থাপনের ৰা পৃথক্‌ পৃথক একটি একটি জমিদারের অধীনে পৃথক্‌ পৃথক্‌ স্বাধীন রাজা-স্থাপনের পক্ষপাতিনী ছিলেন, এই কথা বলিয়া তাহার অন্যায় ও অপ্রকৃত প্রশংসা! করা অত্যন্ত গহিত বলিয়া বিবেচিত হয়। কোম্পানির রাজত্বের প্রারস্তে কোম্পানীর কর্মচারী অথচ ব্যবসায়ী ইংরাজগণ বঙ্গের কৃষক ও তন্তুরায়দিগকে দাদন দিয়া তাহাদের উপর ঘোর অত্যাচার করিবেন, তাহাদের (৪১৫ ) .নর্ববনাশ সংসাধন করিবেন, তাহারা বঙ্গ বিহার: উড়িষ্যার দেওয়ানী পদ গ্রহণ করিয়াও দেশের শাসনভার গ্রহণ করিবেন না, সিরাজদেোৌলার সৈম্াধ্যক্ষ নৃতন নবাব মির্জাফর্‌ মালিখাকে তীহারা কলের কাষ্ঠপুত্তলিকার ন্যায় মিংহাসনে বসাইয়া পুনরায় কল টিপিয়া সিংহাসন হইতে নামাইয়া দ্রিবেন, আবার সিংহাসনে বসাইবেন, তাহারা দেশের প্রজার কাতরধ্বনি শ্রবণ করিয়া প্রতিকারে পরাধুখ থাকিবেন," রাণী ভবানীর পক্ষে পূর্ব হইতেই ইত্যাদিরূপে বিবেচনা করিবার কোন কারণই ছিল না। ইংরাজের দেশ বিলাতে যদি সাধু, সদ্বিবেচক, রাজনীতি- বিশারদ, পরছুঃখকাতর উদ্ারচরিত মহাতা। মহাপ্রভাব লোক সকল না থাকিতেন, তাহা হইলে ভারতের সর্বব- প্রথম বড়লাট ওয়ারণ হেষ্টিংস্‌ সাহেবের অপরাধের বিচারের জন্য বিলাতে ইতিহাসবিখ্যাত তুমুল কাণ্ড ঘটিত না। বিলাতে এরূপ মহাপ্রাণ তেজস্বী শ্ববিচারক না থাকিলে ওয়ারেণ হেষ্টিংস সাহেব মহোদয় সহজেই অব্যাহতি লাভ করিতে পারিতেন। তীহাকে এত লাঞ্চিত হইতে হুইত না। যিনি একদা বহুকোটি ভারতীয় প্রজার, দণুমণ্ডের কর্তা ছিলেন, তাহাকেও শ্বদেশ গিয়া স্বদেশ- ঘাসীর নিকটে আত্মপক্ষসমর্থনের জন্য--বিচারালয়ে স্ীয় অপরাধের বিচারকার্ধ্যে ব্যয়নির্র্বাহের জগ্য কপর্দকশূষ্য হইতে হইয়াছিল । ইহাই বিলাতের স্যায়দিষ্ঠার পরিচয়। ্‌ ৪১৯ ) _ একট! রাঁজ্যবিপ্নবের পর রাঁজার বিনাশ সাধিত হইলে দেই রাজ্য যদি বিদেশীয় রাজার হস্তগত হয়, তাহা হইলে এ নূতন রাজত্বের প্রারস্তকালেই সহসা শাস্তি সংস্থাপিত হইতে পারে না, কয়েক বৎসর পর্য্যন্ত দেশে মহাঅশাস্তি ঘটে। এই জন্যই নিজদেশে রাজ্যের ধবংস কামনা করিতে নাই। এরূপ কামনাকর! মহাপাপ। ইহাই পবিত্র হিন্দু শাস্ত্রের উপদেশ। এই তথাটুকু ইতিহাসগ্রন্থ শিক্ষা দিয়া থাকে। নূতন রাজত্বের প্রারস্তে শাসনবিষয়ে জব্যবস্থা অনিবার্ধ্য হইয়া উঠে। নূতন রাজা ভাল হইলেও রাজ- পুরুষগণ বুদ্ধিমান বিবেচক ও কাধাকুশল হইলে ও, দেশে সহস! শান্তি স্থাপিত হইতে পারে না। ইতিহাপ-পাঠে এই তন্বটুকু বুঝিতে পারা যায়। মালিবদ্রীরথার মৃত্যুর পর হার দৌহিত্র সিরাজদেোল! দিল্লীর সমাটের আজঞ ও সনদ ব্যতিরেকেই বলপুর্ববক বঙ্গের সিংহাসনে উপবেশনকরিয়! যে সকল কাণ্ড করিয়াছিলেন, তাহা ইতিহাস-পাঠকের অবিদিত নাই। স্থৃতরাং রাণী ভবানীর বৃত্তান্ত লিখিতে গিয়৷ এ সকল কথা লিখিয়া গ্রস্থকলেবর বিস্তৃতকরা নিষ্্রয়োজন। ' তবে,যেটুকু প্রাসঙ্গিক কথা, সে টুকু না লিখিলে চলেই না। দিরাজদ্দীলাকে ষীহার! অধুনা নির্দোষ বলিয়া প্রতিপন্ন করিবার. নিষিত্ত ইংরাজ ইতিহাস-লেখকদ্বিগকে অন্যায়ূপে আক্রমণকরেন, তাহাদের এই টুকু বুঝা উচিত যে, সিরাজ প্রথম শ্রেণীর (28১৭. ) উদ্ণপীড়ক না হইলে সংসারত্যাগী সাধু ফকির ভিক্ষোৌপ- জীরী দীন দানাশাহ তাহাকে ধরাইয়া দিল কেন? তিনি পলাশীর যুদ্ধক্ষেত্র হইতে পলায়ন করিয়া লুৎফউন্নিশানান্মী তাহার প্রিয়তমা বেগমের সহিত যখন নৌকাযোগে পাটনা অভিমুখে গুপ্তভাবে পলায়ন করিতেছিলেন, সেই সময়ে _জলপথে ক্ষুধায় কাতর হইয়। দানাশাহনামক ফকিরের মস্জিদে তিনি মাশ্রয়লাভ করিয়া খিচুড়ী প্রস্তুত করিতে- ছিলেন । এমন সময্মে দানাশাহ তাহাকে ধরাইয়া দিয়াছিল কেন? তিনি কি নিরীহ দীন ভিক্ষে৫পজীবী এ ফকিরকে পূর্বে একবার নিগৃহীত করেন নাই ? তিনি একবার এ ফকিরের একটি কর্ণ ছিন্ন করিয়! দিয়াছিলেন বলিয়৷ তাহার নামে একট। অপবাদ রটে নীই কি? ব্যক্তিবশেষের নামে একট। অপবাদ রটে কেন? নিষ্কারণেই রটে কি? মুলে কিঞ্ি সত্য নিহিত না থাকিলে অকারণ একজনের নামে একটা অপবাদ কখনই রটে না। সিরাজ(দ্দীল| রাণী ভবানীর মনে একট বিষম আঘাত দিয়াছিলেন এইরূপ একটা প্রবদ থাকাতেই রাণী ভবানী-প্রকরণে দিরাজ সম্বন্ধে এই টুকু লিখিতে হইল। দিরাজ, রাণী ভবানীর, কন্যা তারাদেবার অসামান্য রূপলাবণ্যের প্রশংস৷ শুনিয়। তাহাকে হস্তগত করিবার জন্য মহাব্য গ্রৎ হইয়া পড়েন। এই বিষয় লইয়া অনেক পুস্তকে অনেক প্রকার. বর্ণনা দেখিতে পাওয়া-যায়।...কেহ কেহ .রলেন মুর্শি্দারাদের (৪১৮) বড়নগরস্থ নাটোর-রাজবাটীর ছাদের উপরে তারাদেবী তাহার স্বদৃশ্য সুদীর্ঘ কৃষ্ণবর্ণ কেশরাশি আলুলায়িত করিয়া 'রৌদ্রে শুধাইতেছিলেন। সেই সময়ে নবাব সিরাজদে্লা নদীগর্ভে বজ্রায় আরোহণ করিয়া যাইতে যাইতে তারা- দেবীকে দেখিতে পাইয়া মুগ্ধ হইয়াছিলেন। তিনি তারাদেবীর জন্য উন্মন্ত হইয়া উঠিলেন। প্রথম তিনি রাণী ভবানীকে পত্রদ্বারা নিজের মনের ভাব ব্যক্ত করিয়৷ জানাইয়াছিলেন। পরে রাণী ভবানী এ পত্রংবাহককে যথেষউ অপমানকরাইয়া রাজবাটা হইতে তাড়াইয়। দিলে সিরাজ নিজেকে অপমানিত জ্ঞানকরিযা তারাদেবীকে বলপূর্ববক ধরিয়া আনিবার জন্য এক স্নোনীকে আদেশ করেন। সেনানী কতিপয় সৈন্য সহ বড়নগরস্থ রাজবাটা আক্রমণকরিলে রাণী ভবানী ও তারাদেবী সেই সংবাদ অবগত হইয়! রাজবাটার পশ্চান্তাগস্থিত গঙ্গাতীরে যাইবার গুপ্ত “খিড়কিদ্বার” দিয়া পলায়ন করিয়াছিলেন । গঙ্গা- তীরের উপর দিয়! দ্রুঙবেগে যাইতে যাইতে তীহারা মস্ত- রাম বাবাজীর আখড়ায় পৌছিয়া আশ্রয় লইলে মস্তরাম বাবাজী তাহাদিগকে বলিল, “মাইলোক, কুছ, ডর্‌ নহি। হামূলোক্‌ গোসাই হায়। হাম্লোক্‌ নবাবী রাজত্বকো উড়ায়, দেগা। হামলোগোংকে পাশ্‌ অস্ত্রশস্ত্র সব কুছ, চিজ্হায়। হি'য়া নবাবকে ফৌজ আনেসে হাম্লোক্‌ টুক্‌ড়। টুক্ড়া করকে কাট্ডালেংগে। মাইলোক্‌, কুছডর্‌ (৪১৯ ) নহি হায়। হাম্লোক্‌, আপ্লোক্‌কো ঘর্মে পঁছছায় দেংগে”। অনন্তর সেই সন্নযাসীরা তাহাদিগকে নির্বিদ্ষে নাটোরে পৌছাইয়া দিয়াছিল। এই বিষয় লইয়৷ নানা গ্রন্থে নানারূপ বর্ণনা দেখিতে পাওয়। যায়। তবে সন্ন্যাসীদের সাহায্যে যে প্রকারেই হউক, রাণী ও তারাদেবী যে, এই বিপদ্‌ হইতে উদ্ধার লাভ করিয়াছিলেন, এবং সন্ন্যাসীদের পরাক্রম সেই সময়ে যে, খুব প্রবল হইয়া উঠিয়াছিল, তাহা বস্কিমবাবুর আনন্দমঠ ' ও অন্যান্য গ্রন্থ-পাঠেই জানিতে পারা যায়। হিন্দুস্থানী সন্ন্যাপীরাই যে, কেবল সে সময়ে মহাপ্রবল হইয়া "্উঠিয়াছিল তাহ! নয়, বাঙ্গালী সন্্যাসীরাও অত্যাচারপুর্ণ নবাবীরাজ্য ধ্বংসকরিয়া শান্তিপূর্ণ হিন্দু রাজত্ব-সংস্থাপনের নিমিত্ত বন্ধপরিকর হইয়া উঠিয়াছিল। রাজসাহীর ভবানীপাঠক ইহাদের মধ্যে অন্যতম নেতা- ছিলেন। তীহার পঞ্চাশ হাজার সুশিক্ষিত সন্ন্যাসী সৈন্য ছিল। তাহারা নিবিড় জঙ্গল মধ্যে বাসকরিত। তাহারা নবারের খাজন| লুঠকরিয়া বায়নির্ববাহ করিত এবং নবাবের অত্যাচারে জর্জরিত মহাবিপন্ন জমিদার ও অন্যান্য প্রজাবর্গকে এ ধন দানকরিয়! সাহায্য করিত। মুদলমান নবাবের ধন লুঠকরিয়া হিন্দুকে বিপদ হুইতে উদ্ধার করিত। ভৰানীপাঠক একজন মহামহোপাধ্যায় মহাপগ্িত ছিলেন। কিন্তু তিনি রাজবিদ্রোহী হইয়া পাপ আচরণ করিতেন॥ ইহাই তাহার একটি মহাদোষ ছিল। ভিনি হিন্দুর (৪২৪) / কাতরক্রন্দন শ্রবণ্ণে অস্থির, হইয়। নবাবী উত্গীড়ন হইতে বঙ্গদেশকে উদ্ধার করিবার জন্যই তিনি সন্র্যামী হইত্ব। সন্ন্যাসি-সৈম্য সংগঠিতকরিয়া হিন্দুরাজ্য-স্থাপনের জন্য মহা প্রফচাসা হইয়াছিলেন। ইহা তাহ!র মহাভ্রমেররই পরিচয়। কারণ, বিদ্রোহী হইয়া সাস্রাজাম্থাপন করা যায়না ইহাই হিন্দুরাজশীতিশাস্ত্রের মন্ত। ইংরাজ রাজবের প্রারস্তেও তাহার প্রভাব প্রকটিত ছিল। দেবী- নাম্না তাহার এক শিষ্যা ছিলেন। তিনিও সর্ববশীন্ত্রে ও যুদ্ধকার্ধে। স্থৃশিক্ষিত৷ ছিলেন । ইহাকেই বক্কিম বাঁবু দেবী চৌধুরাণী বলিয়া বর্ণনা, করিয়াছেন। ইহাদিগকে দমন কৰিবার ভন্য ইংরাজ সেনা কয়েকবার অকৃঙকার্য হুইয়া- ছিল। কয়েকজন ইংরাজ সেনানী ও বহু ইংরাজ সৈম্তকে প্রাণ দিতে হইয়াছিল। পরে ভবানীপাঠর ও দ্রেবী ইংরাজ-সৈম্যকে বাধা দিতে অগ্রমর্থ হওয়ায় মান বাঁচবার জন্যু ইচ্ছা করিয়া ইংরাজের নিকটে আসিয়া স্বয়ং ধরা দেন'। এইরূপ শুনিতে পাওয়া যায় ইহাই ইতিহাসে ১৭৭৩ খ্রীষ্টাব্দের সন্যাসি-বিদ্রোহ নামে খ্যাত। সন্ন্যাসীরা স্থানে, স্থানে কেল্লা নির্্মাণকরিয়া তথায় দোর্দগু প্রতাপ বাস: করিত। .. তাহাদের কেল্লার চিহ্ন বছু.,অনুসন্ধান করিলে এখনও বঙ্গের স্থানে স্থানে দেখিতে - পাওয়া যায়. হুগলি 'জেলার অন্তর্গত তারকেশ্বরেও, গৌসাইং: দের; একটি কেল্লা ছিল।. সঙল্যামী জয়রামগিরি দোর্দিু- (৪২১ ) প্রতভাপে এখানে রাজত্ব করিতেন। সন্সযাদী হইলেও: তাহাদের ধনবল ও জনবল খুব যথেষ্ট চুল। ইংরাজ- রাজহ্থের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে গৌসাইদের প্রভাব কমিতে আরম্ত করিয়াছিল। তারকেশ্রের ইত্িকুতগ্রান্থ এই বিষয় উত্তমরূপে লিখিত হইবে। সন্গ্যাশীরা হাণী ভৃবানী ও তারাদেবীকে সেই ভয়ঙ্কর বিপদ তইতে রক্ষা করিয়া- ছিল বিয়া রাণী ভবানী এই সন্গযাসীদিগের ভন্য নাটোরে একটি বড় “মখড়।” নিশ্াণকরাইয়: দিয়াণ্ছজেন এবং তথায় তাহাদের ভরণ-পোঁষণের বাবস্থা কবিয়া দিহাচিলেন। বঙ্গে পিরাঙট্দৌলার রাজত্বের ধ্বংসের পর ইষ্ট ইগ্ডিয়া কোম্পানি, শক্তিশন্য দিল্লীর সম্রাট শাহ মালমের নিকট হইতে বঙ্গ বিহার উ়ম্যাঁর দেওয়ানি-পদ্ গ্রহণকরিয়া- ছিলেন। শাহ মআালম্‌ এই সময়ে এলাহাবাদেই গাকিতেন । মহারাই্র-:সনাপতিগণ তাহাকে দিল্লীতে প্রনেশ করিতে দিতেন না। তিনি কখন বা আহম্মরশাহ মানদ্রালির কখন বা অযোধ্যার উজির বাহাদুরের শরণাগত হইয়া! নষ্ট শক্তির পুনরুদ্ধারের জন্য চেষ্টা করিতেছিলেন। ঠিনি ১৭৬৫ ্ীষ্টাবধে ১২ই আগষ্ট তারিখে বাধিক ২৬ লক্ষ টাক! রাজকর লইয়! ইংরাজদিগকে বঙ্গ বিহার উড়িম্যার দে ওয়ানী- সনদ্‌ প্রদানকরিয়াছিলেন। কোম্পানির সেনাপতি লর্ড ক্লাইভ্‌ ১৭৬৬ খ্রীষ্টাব্দে শুভ পুণ্যাহের নিয়ম স্তাপনকরিয়া বঙ্গ বিহার উড়িস্যায় ইংরাঙ্জ রাজত্বের মুলভিত্তি স্থাপন তন (৪২২ ) করিয়াছিলেন । সেই দ্রিন হইতেই ইংরাজের রাজত্ব আরদ্ধ হইল। ইংরাজ, দেওয়ানী-পদ গ্রহণকরিলেন বটে, কিন্তু শাসনভার গ্রহণকরিলেন না। শাসনভার 'শক্তিশুন্য মিরজাফরের হস্তেই স্বাস্ত রহিল। সুতরাং দেশে পূর্ণরূপে অরাঙ্গকতা বিরাজকরিতে লাগিল। কোম্পানির কর্মচারী অথচ ব্যবসায়ী ইংরাজদিগের অত্যাচারে সহজ্ম সহ তম্থুরায় স্ব স্ব বাবসায় ও জন্মস্থান ত্যাগকরিয়া ইতস্ততঃ পলায়ন করিতে লাগিল । কঝোম্পা- নির কন্মচারিগণ রাজনাহীজেলায় রাণী ভবানীর রাজা- মধ্যে অধিকাংশ বাণিজ্যালয় স্থাপনকরিতে্জ লাগিলেন । কিন্ত তখনও রাণী ভবানীর স্বাধীন শক্তি বিলুপ্ত হয় নাই। সুতরাং “ইংরাজকুঠিয়াল্”দিগের সহিত তাহার মনো মালিন্য ঘটিতে আরন্ত হইল । তীহারা রাণীর রাজা শাসন- পদ্ধতি বিষয়ে নানাপ্রকার দোষ উদযাটনকরিতে আরম্ত করিলেন। রাণী কিন্তু তাহাদের কথায় কর্ণপাত না করিয়া সে বিষয়ে ভ্রুক্ষেপ না করিয়া যখাবিধি নিজরাল্গ্য শ!সনকরিতে লাগিলেন। রাণীর রাজ্যে শিক্ষা, শিল্প, বাণিজ্য ও কৃষি প্রভৃতি রাজ) শ্রীবর্ধক পদার্থ সকল উন্নতির পরাকাষ্ঠ। লাভ করিয়াছিল। কার্পাস, পট্টবন্ত্র ও রেশমের বাণিজোর জন্য তশুকালে রাজসাহীর বিশেষ স্বখ্যাতি ছিল। রাজসাহীর কৃষির উন্নতি চরমসীমায় উপ্রনীত হইয়াছিল। | (৪২৩ ) সংস্কত-শিক্ষার উন্নতির নিমিন্ত রাণী বাধিক লক্ষ ' টাকা ব্যয়করিতেন। তগকালে বঙ্গের এমন কেহ বিখ্যাত পণ্ডিতই ছিলেন না, যানি নিজের টোলের ব্যয়- নির্বাহের জন্য রাণীর সাহাষ্য না লইয়াছেন। পারসীক ভাষার শিক্ষার উন্নতির নিমিত্ত তিনি বু অর্থ দ্রান- করিতেন। রাণীর সময়ে দুইটি রাজকর প্রচলিত ছিল। একটির নাম “আসল্জম।” ও অপরটির নাম “আব ওয়াব” “আসল জমা” যত্সামান্য ছিল। “আব ওয়াবে”র সংখ্যা ও পরিমাণ মনিদ্দিষ্ট থাকায় তাহাই অধিক ছিল। যাহারা কৃষিজীবী ছিল, তাহারা ষত্সামান্য রাঙ্গকর দিত। যাহারা ব্যবসায় ছিল, তাহাদিগকে অধিক রাজকর দিতে হইত। রাণীর রাজো ভূমিকর মত্যন্ত সামান্য ছিল। তাহার রাজ্যে নিরুদ্বেগে তাহার রাজ্যে বাসকরিতে পারিত। এইজন্য তাহার রাজ্যে সুখী প্রজার পরিমাণও যথেষ্ট ছিল। আর দেবোত্তর ব্রন্মোত্তর পীরোত্তর ও লাখেরাজ, প্রভৃতি নামে অধিকাংশ ভূমিই নিষ্ষর ছিল। তীহার রাজ্যে উত্তরদ্ারী গুহের কর ছিল ন! বলিয়া অনেক প্রজাই করদান হইতে, নিষ্কৃতি লাভ করিয়াছিল। তীহার রাজ্যে শিল্পবাণিজ্যাদির লত্যাংশের উপর “মাবওয়াবৃ”কর ধাধ্য থাকায় তাহার অনেক টাকা আয় হইত্ব। সামাজিক পারিবারিক ও মাঙ্গলিক ব্যাপারের জন্য, আবওয়াব-কর দিতে হইত। বিচার- ( ৪২৪ ) , কার্ষোয র্থী প্রচার্থীনগের নিকট হইতেও প্রচুর মর্থ লব্ধ হইত। ইস্ট ইগ্ডিয়া কোম্পানির ব্যবসায়ী কর্ম্মচারিগণ রাণীর রাজ্যের এইরূপ উন্নত অবস্থ! দেখিয়া রাজসাহীর নানাস্থানে বাণিস্যালয় সংস্থাপন করিয়াছিলেন । তগুকালে বাঙ্গলীরা কার্পাপবৃক্ষের কৃষিকার্ষেয কার্পাদ-সুত্রের ক্রয়- বিক্রয়কার্যে এবং কার্পান ও পষ্টবন্্রের বিনিময়কা্ধযে ইউরোপ হইতেও প্রভূত অর্থ উপার্জনকরিত। ইষ্ট, ইপ্ডিয়' কোম্প|নির দিল্লীর সম্রাটের নিকট হইতে সর্বৰ- প্রথম বর্ধমান মেদিনীপুর ও চট্ট গ্রামজমিদারী-লাভ ও বাণিজ্যার্থ অধিকার-লাভের পর হইতেই তীহাদের কর্ম্ম- চারিগণের অসঙ্গত আচরণ ও অত্যাচারে ঝাঙ্গ।লীর শিল্প- বাণিজ্য ক্রমশঃ ক্রমশঃ উত্দন্ন হইয়াছিল। ভারত- সাম্রাজ্যের মুলভিত্তি-সংস্থাপক স্বনামধন্য পুরুষ মহাত্মা লর্ড ক্লাইভ্‌ দ্বিতীয়বার ভারতে আগমনকরিয়া কোম্পানির কর্ম্মচারীদিগের অত্যাচার নিবারণের জন্য প্রাণপনে চেষ্টা করিয়াছিলেন, কিন্তু নূতন রাজত্বের প্রারস্তে শীত শাস্তি স্থাপনকর! তাহার পক্ষে অদাধা হইয়া উঠিয়াছিল। নুতন রাজত্বের প্রারস্তে সর্বত্র সর্ববক।লে এইরূপ অশান্তি হইয়া থাকে। বঙ্গের নবাব মির্জাফর্‌ আলিরখাঁ, প্রভু সিরাজের ধবংস-সাধনের পর নবাব হইয়। রাজশক্তির পরিচয় দিতে অক্ষম হইয়াছিলেন। ইষ্ট, ইগ্ডিয়া কোম্পানি সবেমাত্র রাজ্যের দেওয়ানি-পদ লাভকরিয়াছিলেন। তীহার! (৪২৫ ) রাজের আত্যন্তরীণ শাসনকার্য্যে হস্তক্ষেপ কঞ্জিতে চাহিতেন না। এই সময়ে বাহুবলই সকল তর্কের মীমাংসক ও সকল সমস্তার পূরক হইয়! উঠিয়াছিল। সিরাজন্দোলার মৃত্যুর পূর্বে বঙ্গের যেরূপ অবস্থা ভীষণতর হইয়া দ্াড়াইয়াছিল, এইবূপ ভীষণতর অবস্থায় একটি বঙ্গীয় বিধবা ব্রা্ষণীর পক্ষে স্বাধীনভাবে অতবড় ঝুজ্য প্রতিপালনকর! যে, কিরূপ কঠিন ব্যাপার, তাহা একবার ভাবিলে বিম্মিত হইতে হয়। এই সময়ে বজে দত্যু তস্করের ভয় মহাপ্রৰল হুইয়া উঠিয়াছিল। এই সময়ে বিপন্ন। বিধবার আর্তনাদ, ও অনাথ দুর্ববলের কাতর ক্রন্দন- ধ্বনি-শ্রবণে রাণীর হৃদয় বিদীর্ণ হইত। তীহার রাজ্যে বিংশতি লক্ষ লোকের বান ছিল। তাহার রাজ্যের তত বায়গণ এই বিংশতি লক্ষ লোকের পরিধেয় বস্ত্র প্রস্তত- করিয়। অবশিষ্ট লক্ষ লক্ষ বন্ত্রথণ্ড ইউরোপীয় বণিকদিগের বিকটে বিক্রয় করিত। কিন্তু তাহাদের এইক্প ব্যবসায় কোম্পানির ব্যবসায়ী কর্ম্মচারিগণ সমূলে বিন করিয়া দিয়াছিলেন । তগুকাল হইতেই তন্তুবায়গণ জাতীয় ব্যবসায় পরিত্যাগ করিয়া অন্যবৃত্তি অবলম্বন করিতে বাধ্য হইয়ান্ছে। শিল্প দ্রব্য, উত্তম উত্তম চাউল, নীল, তামাক, খর্তঘুর ও শর্করা ্রচুররূপে উৎপন্ন হইয়া দেশের ্রীরৃদ্ধি করিত। বানানীর। এই নকল দ্রব্যে বৃন্ বৃহৎ বাবিজ্া-গ্টোত পূর্ণ করিক্া বিদেশে প্রেরপকরিত এবং ৰাঁলিজ্য ছার প্রভূত আর্য (৪২৬ ) উপার্জনকরিত। লঙ্‌ সাছেবের “সিলেক্সন্স্‌ ফম্দি রেকর্ডস অব.দি গবর্ণমেণ্ট অব্‌ ইগ্জিয়া”-নামক পুস্তকের : প্রথম খণ্ডের ৪৬ সংখ্যক রেকতে দেখিতে পাওয়! যায় যে, তশকালে ইউরোপীয় বণিক্গণ, বাঙ্গালী বণিকৃদিগের কয়েকটি বাণিজ্যপোত লুষ্টনকরায় নবাব আলিবদ্দীখার আজ্ঞায় তাহাদিগকে দ্বাদশলক্ষমুদ্রা অর্থদণ্ড দিতে হইয়াছিল। এই লময়ে ১১৭৭ বঙ্গাব্দের “সাতাত্তরেমন্থম্তর”- নামক ভীষণ দুর্ভিক্ষ উপস্থিত হওয়ায় বঙ্গে মহামারী উপস্থিত হইয়াছিল। চতুদ্দিক্‌ মৃতদেহে আচ্ছন্ন হইয়া পড়িয়াছিল। গ্রাম ও নগর বিজনবনে পরিণত হইয়া- ছিল। শশ্তাক্ষেত্রে তৃণশৃন্য, হইয়াছিল | চতুদ্দিকে হাহাকার পড়িয়া গিয়াছিল। এই ছুদ্দিনে অন্নপূর্ণারূপিনী মহারাণী ভবানী রাজ-ভাণডারের দ্বার উন্মুক্ত করিয়! দিয়া- ছিলেন। বঙ্গের বু কোটি লোক তীহার কৃপায় অল্ন-বন্ত্র লাভকরিয়াছিল। এই প্রাকৃতিক ভীষণ লীলার সহিত যুদ্ধ করিতে গিয়া রাণী অতিশয় ক্লান্ত হইয়া পড়িয়াছিলেন। হস্তী, ঘোটক, অন্ত্র-শক্্, ও সৈশ্য-সামস্ত লইয়া যে যুদ্ধ হয়, এই যুদ্ধ তদপেক্ষা ভীষণতর হইয়া উঠিয়াছিল। রাণীর কোষাগার শুহ্থাপ্রায় হইয়! গিয়াছিল। সমগ্র রাজসাহী _ জেলা, বিরাট্‌ শ্বাশানে পরিণত হইয়াছিল । অতুল এ্ধ্য- শালিনী রাণী শুন্তাহস্তে উর্ধানেত্রে এই দৈৰী বিপদের কথ! 10৪২৭ ) চিন্তা করিতে করিতে ভগ্নহদয়ে মুহুমুঃ দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগকরিতেন। অধুনা সদাশয় বুটিশ্‌ গবর্ণমেপ্ট দেশ- বিশেষে ভীষণ হুর্ভিক্ষের সময় “রিলিফ্‌” প্রভৃতি দেশ- হিতকর বিপন্ন-পোষণ-কার্যের স্যগিকরিয় দুর্ভিক্ষ-পীড়িত নরনারীগণকে মহামারীর ভয়ঙ্কর করাল কবল হইতে রক্ষা- করেন। তখন মুসলমানগবর্ণমেণ্ট তজ্রপে বা কোন রূপেই বিপন্ন প্রজাবর্গকে রক্ষা! করিতেন না । দেশের রাজা মহারজ-উপাধিধারী জমিদারগণের মধ্যে ধাহাদের হৃদয়ে দয়া-মায়া থাকিত, তাহার! তাহাদের স্থ স্ব প্রজাদিগকেমাত্র অন্ন-বন্ত্র দানকরিয়া সেই বিপদ হইতে রক্ষা করিতে চেষ্টা করিতেন । কেহ কেহ বা অন্যের বিপন্ন প্রজাকেও রক্ষা করিতেন। রাণী ভবানীব্ত মত শক্তিশালিনী মহিলা নিজ- পর বিচার না. করিয়া সেইরূপ বিপদে বিপন্ন সমাগত নর- নারীমাত্রকেই অন্ন-র্রন্্র ও ওঘধাদি প্রদানকরিয়। রক্ষা- করিতেন। রাণী ভবানীর রাজত্বের শেষদশায় মাননীয় ওয়ারেন্‌ হেষ্টিংস্‌ সাহেব মহোদয় কোম্পানি কর্তৃক সর্বপ্রথম তারতের বড়লাট্‌ রূপে নিযুক্ত হুইয়াছিলেন। কোম্পানি, নবাব মির্জাফরকে রাজাযশাসনকার্ষ্যে অত্যন্ত অক্ষম দেখিয়া এবং রাজ্যে দিন দিন অশান্তির মাত্রার বৃদ্ধি দেখিয়া অবশেষে ন্বহন্তে রাজ্যের শাসনভার গ্রহণকরিবার জন্য তাহাদের প্রতিনিধিস্বর্ূপ বড়লাটের পর সৃপ্টিকরিলেন। মাননীয় ওয়ান্ষেন্‌ হেটিংস, বাহাদুরের শ্ায় ভাগ্যবান ও (৪২৮ ) স্বনামধন্য পুকষ ইতিহাসে অতি অল্পই দেখিতে পাওয়া যাল্পু। রুলস” অব. ইত্ডিয়াণদনামক পুস্তকে হেগ্িংস্মধ্যায়ে দেখিতে পাওয়া যায় যে, তীহ্থাকে প্রথম ভারতে আমিবার সময় পাথেয় ব্যয়-নির্ববাহের জন্য খণগ্রহণ করিতে হইয়া- ছিল। তীহার পাথেয়ব্যয়-নির্ববাহের সংশ্থানপর্য্স্ত ছিল না । তিনি ' প্রথম মুর্শিদাবাদস্থ কাসিম্বাজারের ইংরাজকুঠীর সামান্য একজন অতিমল্পবেতনভোগী কেরাণী নিযুক্ত হইয়া ক্রমশঃ ভারতের বড়লাট হইয়াছিলেন। তিনি বড়লাট্‌ হইয়া কোম্পানির “খাস্‌ তহসিল্‌”-নীতি প্রবর্তিত করিয়া রাজন্ব-সংগ্রহের ব্যবস্থাকরিতে আরম্তকরিলেন। তজ্জন্য তিনি বহু পুরাতন জমিদারকে স্ব স্ব জমিদারীর অধিকার হইতে বিচ্যুত করিয়। নৃতন নৃতন জমিদারের স্্টিকরিতে আরস্ত করিলেন। মিডিল্টন্‌, ডেকার্‌, লরেন্স ও গ্রেহাম্-নামক চারিজন সদস্ম লইয়া তিনি একটি কমিটি.গঠনকরিয়াছিলেন । এই কমিটি জেলায় জেলায় পরিভ্রমণ করিয়। পাঁচ বশুসরের জন্য একজন কর-সংগ্রাহক জমিদার মনোনীত করিতেন । সর্বপ্রথম এই কমিটি নদিয়ার মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রকে ধরিয়া বসিলেন। এই কমিটি, নিয়া মহারাজার যে পরিমাণ রাজস্ব নির্ণয়করিয়! দিয়াছিলেন, তাহাতে মহারাজ সম্মত না হইলে তাহার জমিদারী অস্তের' হস্তে সমর্পিত হইযে, এই কথা তার! মহারাজকে জানাইলেন। মহারাজ এই কথা শুনিয়! অত্যক্ক (৪২৯ ) ভীত ও চিন্তিত হইয়া পড়িলেন। পলাশী-যুদদ্ধর পর তিনি কোম্পানির নিকট হইতে পারিতোধিকস্বরূপ একটি কামান ও “রাজেন্দ্র বাহাদুর” এই উপাধি পাইয়া * যে হস্ত- যুগল উত্তোলনকরিয়া কোম্পানিকে আশীর্বাদ করিয়া- ছিলেন, সেই হস্তযুগল 'গঙক্ষণে অগ্তলিবদ্ধ করিয়াও, কমিটির মত পরিবর্তনকরিতে পারিলেন না। অবশৈষে নিরুপায় হইয়। কমিটর প্রস্তাবেই সম্মত হইলেন, এবং তাহার জোোষ্ঠপুজ্র কুমার শিবচন্দ্রের নামে কমিটির মতামু- সারে স্বীয় জমিদারী বন্দোবস্তকরিয়া লইলেন। কমিটির সদস্যগণ নদ্রিয়া হইতে কাসিম্বাজার ও কাসিম্বাজার হইতে রাণী ভবানীর রাজ্য রাজসাহীতে উপস্থিত হইলেন। রাণী ভবানী তীহাদিগকে বিশেষরূপে আদর-অভ্র্থনা করিয়াছিলেন। গিনি দ্বিরুক্তি না করিয়া কমিটির প্রস্তাবেই সম্মত হইয়াছিলেন। তিনি যে, ইংরাজকে সম্মান করিতেন, এই ঘটনার দ্বারাই তাহার পরিচয় পাওয়া যায়। মানণীয় হেগ্টিংস্‌ সাহেবের স্বহস্তলিখিত কার্যয- বিবরণা হইতে তীহার মন্তব্য অনুদিত হইল। “কৃষ্ণনগর প্রদেশের রাজন্ব-নিরূপণ-সময়ে যে নিয়মে কাধ্য সম্পাদিত হইয়াছিল, রাজসাহী ও হুজুরি জেলাতে ও সেই নিয়ম অনুস্থত হইল। রাজসাহী-রাজ্ের ভিন্ন ভিন্ন পরগণ! কে কত অধিক জমায় বন্দোবস্ত করিয়া! লইতে, চাহে, তাহা জানিবার জন্য প্রকাশ্য খোষণাপত্র প্রচার- ( ৪৩৯ ) করিয়া নিরূপিত সময় পধ্যন্ত অপেক্ষাকরা হইয়াছিল । পশ্চিমাঞ্চলের পরগণাগুলি অন্য লোক যে টাকায় বন্দো- বন্ত করিয়া লইতে চাহে, তদপেক্ষা রাণী ভবানীর প্রস্তাব- অনুযায়ী বন্দোবস্ত করাই লাতজনক বোধ হইল । সুতরাং তাহার সঙ্গেই ৫ বৎসরের জন্য বন্দোবস্ত করা হইল। তাহার ধনবল আছে। বিশ্বাসপাত্রী বলিয়া লোক- সমাজে তাহার সুখ্যাতি আছে। তাহার চরিত্রগুণে তাহার কথায় আস্থা স্থাপনকরিবারও যথেষ্ট কারণ আছে। তাহার সহিত বন্দোবস্ত করায় আর এক স্থবিধা এই যে, তিনি কমিটির নির্দেশ অনুসারে বন্দোবস্তী মহাল-" গুলি চতুর্দশ ভাগে বিভক্তকরিয়া য্থাকালে, রাজস্ব দানের অঙ্গীকারে নিজের প্রজাবর্গের “কবুলিয়ত্‌” “দাখিল” করিতে সম্মত হইয়াছেন। পূর্বাঞ্চল সম্বন্ধে অন্য কেহ বন্দোবস্তের প্রস্তাব উত্থাপিত না করায় তাহাও তীহাকেই বন্দোবস্ত করিয়। দ্রেওয়। হইল । রাণী বনু বগুসর রাজ্য- শাসন করিয়া শাসনকার্ষো যেরূপ ভিন্ন লাভ করিয়া- ছেন, তাহাতে অন্য লোক তাহার অপেক্ষা অধিক জমায় বন্দোবস্ত করিয়া লইতে সাহস পায় নাই। রাজসাহীর যায় রাণী ভবানীর বভ্বিস্তৃত সমৃদ্ধ রাজা হইতে যে, পূর্ণ- মাত্রায় যথাসময়ে রাজন্ সংগৃহীত হইবে, তাহাতে আর কোন সন্দেহ নাই। প্রাচীন সমৃদ্ধ রাজুবংশের সহিত বন্দোবস্ত করায় আমাদের রাজব্ব-সংগ্রহে ব্য়ুবাছলাও ( ৪৩১ ) হইবে না। পঞ্চম রিপোর্ট । এই বন্দোবস্ত বাঙ্গ!লার জমিদার সিরেস্তায় “পঞ্চলনা বন্দোবস্ত” নামে পরিচিত। রাণী ভবানী ভারতের সর্বব প্রথম বড়লাট মাননীয়" ওয়ার, হেষ্টিংদ্‌ সাহেবকে সর্ববতোভাবে সম্থুষ করিতে কোনরূপ ত্রুটি করেন নাই। হেষ্টিংস্‌ সাহেব তাহাকে যে সরে রাজস্ব দিতে বলিয়াছিলেন, তিনি অয়ানবদনে সেই সর্ভে সম্মত হইয়াছিলেন এবং সেই সর্ত অনুযায়ী কাধ্যও করিয়াছিলেন কিন্তু তখাপি মানপীয় হেষ্টিংস্‌ সাহেব বাহাদুর রাণীর রঙ্গপুর জেলার অন্তর্গত বাঠারবন্দর- পরগণা-নামক* একটি স্ববিস্তৃত উত্তম আয়ের জমিদারীর অধিকার হইতে রাণীকে বঞ্চিত করিয়া উক্ত জমিদারীটি মীননীয় সাহেবের বিপত্কীলের মহাবন্ধু মহাপ্রিয়পাত্র মহোপকারক “কান্তবাবু”কে প্রদান করিয়াছিলেন। কান্তবাবু তীহার পুর লোকনাথ নন্দীর নামে ইহা গ্রহণকরিয়াছিলেন। তৎকালে কোম্পানির পরমহিতৈষী মহোপকারক শ্রীযুক্ত বাবু কৃষ্ণকান্ত নন্দীকে লোক কান্তবাবু বলিয়া ডাকিত। ইনিই .মুর্শিদাবাদস্থ কাসিম্‌ বাজারের রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা । ইনি অতিসামান্ত অবস্থা হইতে অদৃষ্টবলে একটি রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। এক্ষণে সেই, বংশের.দৌহিত, মহান্নাজ মণীন্দ্র চন্দ্র.নন্দী বাহাছুর এ জমিদারীটি ভোগ কারিতেছেনু। * আত্মপা্মানজঞ। মহারাপী এই সম্পাদিত, ( ৪৩২ ) , অধিকার হইতে শ্িত হইয়া আপনাকে অত্যন্ত অপমানিত ৮ বোধ করিয়াছিলেন। তিনি সেই অপমান ও আভিমানে রাজ্যশাদন বাঁচস্পৃ হইয়া তাহার দন্তকপুর মহারাজ রামকৃতনর হস্তে রাজ্যশাসনভার সম্পপুর্্বক কাশীধামে গমনকরিয়াছিলেন। কাশীধামে গমনকরিরা মহারাণী ভবানী যেরূপ দান- শীলতার পরিচয় দিয়াছিলেন, তাহা শুণিলে বিস্মিত হইতে হয়। তিনি প্রতিদিন প্রাঙঃকালে পুজ-পাঠ সমাপ্ত করিয়া একটি প্রস্তুকনির্দিত বৃহ তট্রুলিকা একটি বেদজঞ নিষ্ঠ।বান সান্তক ব্রাহ্মণকে দান্করিছ্েন। তিনি যে কয়েক ব€সর কাশীতে বাস করিয়াছিলেন,-সেই কয়েক বগুসর প্রতিদিনই প্রাহ্ঃকালে এরূপ ব্রাঙ্গণকে একটি এরূপ বড় বাড়ী দান করিতেন। সুতরাং কাশীতে মহারাষ্ট্র ব্রৈলঙ্গ, দ্রাবিড় ও হিন্দুস্থানী প্রভৃতি ব্রাহ্মণদিগের এমন বাড়ী নাই, যাহা রাণী ভাবানী কর্তৃক দত্ত হয়নাই। এ সকল ত্র ক্ষণগণ ও তাহাদের অধস্তন পুরুষগণ সাংসারিক দায়ে বিপন্ন হইয়া সেই সকল বাড়ীর মধ্যে অনেক বাড়ী অন্ভতের নিকটে বিক্রয়করিতেও বাধ্য হ্ইয়াছিলেন। সুতরাং কাশীতে এমন বাড়ীই নাই, যাহা" রাণী ভবানী কর্তৃক দত্ত হয় নাই, এইরূপ বলিলেও অত্যক্তি-দোষ _শ্ঘটিবে না। রাণী ভবানী কাশীর ৬তঘ়পুর্ণার বর্তমান প্রস্তরময় বৃহৎ অট্টালিকা ও তশ্মধ্যবর্তা মন্দির নিশ্মাধ- 2৬3: 4 করাইয়া ইহার গৌসাইকে সেবায়েত নিযুক্ত করিয়াছিলেন অন্নপূর্ণার দৈনি ক পুজা-ভোগ, ও নহবত-বাদ্য প্রভৃতির বায়- নির্ববাহার্থ প্রচুর ভূমি দান করিয়াছিলেন । ৬বিশ্বেশ্বরের মন্দিরের ঠিক পরবর্তী বৃহৎ প্রস্তরম্য দেবালয়টি তিনিই নিশ্মাণকরাইয়াছিলেন। কাশীর বর্তমান বৃহ প্রস্তরময় দুর্গাবাড়ী ও তৎসংলগ্ন প্রস্তরময় সোপানরাজি-পরিবেষ্টিত দুর্গাকুণ্ড-নামক বৃহত সরোবরটি তিনিই নিশ্্মাণকরাইয়া- ছিলেন । কতকাল অতীত হইয়াছে এবং কতকাল পর্য্যন্ত সহ সহত্র বানর এই মন্দিরে বাসকরিয়! কত ভয়ঙ্কর উপদ্রব করিফাছে, তাহার ইয়ন্তা নাই, কিন্তু তথাপি কাশীর দর্গাবাড়ীটি যন নূতনবত প্রতীয়মান হইয়া থাকে। বানরের উপদ্রবে কত মন্দিরের চূড়া ও কত বাড়ীর ছাদের ভিত্তি যে নষ্ট হইয়াছে, তাহা কাশীবাসী ভিন্ন আর কে জানিবে? কিন্তু কার্শীর ছূর্গাবাড়ী এতই দৃঢ়রূপে নির্মিত হইয়াছিল যে, তথায় সহত্র সহত্র বানরের অত্যন্ত উপদ্রব সন্তেও অন্যাপি উহার অঙ্গহানি হয় নাই । মনে হয় যেন উহ সবেমাত্র নিন্মিত হইয়াছে । এই সকল বাড়ী প্রস্ভৃত করিতে প্রভৃত ব্যয় হইয়াছিল। কাশীর বাঙ্গ(লীটোলার গোপালমন্দির, তারামন্দির, দগ্ডিভোজনছত্র ও মণুরাছত্র প্রভৃতি বৃহণ বৃহতু প্রত্তরময় অট্রালিকাসমুন্ু তিনিই নিশ্ীণ. করাইয়াছিলেন। এ সকল দেবালয়ে দেব-দেবীমুস্তি ' স্থাপন করিয়া * পৃজা-ভোগ 'ও নহবত-বাদ্য প্রভৃতির ব্যয় ৩৭ (8৩৪ ) নির্ববাহের জন্য উত্তম বন্দোবস্ত করিয়াছিলেন। এ লকল' দেবালয়ে শত শত অতিথি সাধু ব্রাহ্মণ দণ্ডী সন্ন্যাসী ও কাঙ্গালীদিগের তোজনের নিমিত্ত যথাবিধি ব্যবস্থা করিয়া- ছিলেন। গঙ্গামহলঘাট, সর্বেশ্বরঘাট, নারদঘাট ও পাঁড়েঘাট প্রভৃতি বড় বড় ঘাট তাহারই ব্যয়ে নিশ্মিত হইয়াছিল। এক্ষণে সংস্কার-অভাবে এ ঘাটগুলি জীর্ণা- বস্থায় পতিত হইয়াছে। কিন্তু দেবালয়গুলি নুতনবত প্রতীয়মান হইয়া! থাকে। অনেক ভদ্রলোক কাশীতে গিয়া যে সকল বাটা ক্রয়করিয়াছেন, বনু অনুসন্ধানের পর ইহ! জানা গিয়াছে যে, এ সকল বাড়ী পূর্বের রাণী ভবানী ব্রাঙ্গণদিগকে দানকরিয়াছিলেন। , এ সকল বাড়ী বন্থবার হস্তান্তরিত হইয়াছে। সেই জন্যই পূর্বে বলা হইয়াছে যে, কাশীতে এমন বাড়ীই নাই, যাহা পূর্বের রাণী ভবানী কর্তৃক দত্ত হয় নাই। ইহা! অত্যুক্তি নহে, ইহা বাস্তবিক কথা। রাণী ভবানী কাশীতে কয়েক বৎসর ধরিয়া বাসকরিয়াছিলেন। "এই কয়েক বশুসর যদি প্রতিদিনই একটি করিয়া বাড়ী দেওয়া হইয়া থাকে, তাহা হইলে তিনি অন্ততঃ কয়েক সহস্র বাড়ী দানকরিয়াছিলেন এ বিষয়ে আর কোন সন্দেহই নাই। গুনিতে পাওয়া যায় যে, কাশীর বর্তমান বিশ্বেশ্বর-মন্দিরটিও পূর্বের ভগ্রা- বন্থায় ছিল, রাণী ভবানীর ব্যয়েই উহা বর্তমানরূপে নির্মিত হইয়াছিল। কাশীর বিশ্বেশ্বর ও অন্পূর্ণাই গরধান দেবতা । ( ৪৩৫ ) স্থতরাং এই ছুই দেবতার মন্দির নিশ্মাণকরাইয়। তিনি বাঙ্গালী জাতিকে গৌরবাদ্বিত করিয়া গিয়াছেন। তারপর কাশীর “পঞ্চক্রো শী”তীর্থে তাহার অনুপমা কান্তি প্রকটিত রহিয়াছে । পঞ্চক্রোশর সমস্ত পথ রাণী ভবানী কর্তৃক নিম্িত হইয়াছিল। “পঞ্চক্রোশী”র যাত্রীরা প্রত্যেক,দিন পাঁচক্রোশ পরিভ্রমণকরিয়া পঁচদিনে পঁচিশ ক্রোশ পথ পরিভ্রমণকরিয়া “পঞ্চক্রোশী”'তীর্থকৃত্য সম্পন্ন করিয়। থাকেন। যাত্রীদিগের রৌদ্রোত্তাপ-নিবারণের নিমিত্ত এই পঁচিশ ক্রোশ পথের দুইধারে ন্িগ্ধপল্ল বাচ্ছাদিত বৃক্ষরাজি স্ুশীতল চ্ছায়া বিতরণকরিতেছে। প্রত্যেক ক্রোশ অন্তরে একটি একটি বৃহ সরোবর ও যাত্রীদিগের বিশ্রামার্থ ধর্্রশালা ও তৎসংলগ্ন উদ্যান আছে। যাত্রী- দিগের সঙ্গে যে সকল ভারবাহী গমনকরে, তাহাদের মন্তকম্থিত দ্রব্যসস্তার-স্থাপনের নিমিত্ত *ধর্ঢ়োকা» নামক প্রস্তরময় স্তন্ত স্থানে স্থানে নিম্নিত রহিয়াছে। এই সমস্তই রাণী ভবানীর ব্যয়ে নির্মিত হইয়াছে । “পঞ্চ, ক্রোশী”র পথে যে সকল তীর্থ ও দেবালয় আছে, তৎ- সমস্তই তীহারই ব্যয়ে নিশ্িত হইয়াছে। যাত্রীগণ স্থখে স্বচ্ছন্দে “পঞ্চক্রোশী”তীর্থকৃত্য সম্পন্ন করে ও অদ্যাপি তাহার জয়গান করিয়া থাকে। তিনি অনন্ত, দিব্যধামে চলিয়- গিয়াছেন, কিন্তু কাশীতে তাহার অতুলকীর্তি অদ্যাপি বিদ্যমান থাকিয়া বাঙ্গালী জাতিকে গৌরবাস্থিত করিয়। (82৬3. রাখিয়াছে। তিনি কাশীতে কয়েক বগসর বাস করিয়া নাটোরে প্রত্যাবর্তন করিয়াছিলেন । নাটোরে মাসিয়াই দ্েখিলেন যে, তাহার দত্তকপুত্র মহারাজ রামকৃ অনবধানতাবশতঃ তাহার বৃহ সম্পত্তির অনেক উত্তম ংশ নষ্টকরিয়া ফেলিয়াছেন । মহারাজ রামকৃষ্ণ বিষয়তোগে বীতস্পৃহ হইয়। ভগবতীর তজন-পুজনে জপ-হোম ও দান-ধ্যানে 'রত হইয়া প্রড়িয়াছিলেন। তিনি একজন উচ্চশ্রেণীর সাধক ছিলেন। তিনি রাজকাধ্যে মনোযোগ দিতেন না। সম্পত্তি-রক্ষণা- বেক্ষণে সর্বদাই অবহেলাকরিতেন। তাহার" কন্মচারিগণ এই স্থষোগ লাভকরিয়া স্ব স্ব উন্নতির পথ পরিষ্কার করিয়া লইতে আরম্তকরিয়াছিলেন। রাজন্ব-দেনার দায়ে যখন একটি একটি জমিদারী নিলামে উঠিয়া বিক্রীত হইতে আরব্ধ হইল, তখন তাহার কর্ম্মচারিগণ এ সকল সম্পত্তি অল্পমুল্যে ক্রয়করিয়া ক্রমে জমিদার হইয়া উঠ্ঠিতে লাগিলেন । মহারাজ রামকৃষ্ণ যে দিন গুনিতেন যে, তাহার অমুক সম্পত্তি রাজন্ব-দেনার জন্ট নিলামে চড়িয়াছে, অমনি তৎক্ষণাৎ কালীর ঈম্মুখে দশহাজার ছাগ বলি- দিবার জন্য ও মহাসমারোহের সহিত কালীপুজার নিমিত ভোলানামক তাহার প্রিয় ভূত্যকে আদেশকরিতেন। ' ভোল! তাহার সাধনাকারধ্্যের আয়োজনকারী মহাপ্রিয় ভৃত্য ছিল। রাণী কাশী হইতে আসিয়া দেখিলেন যে, অনেক (. ৪৩৭ ). সম্পত্তি নউ হইয়া গিয়াছে। “ডিছি আঙুপাড়ী” নামক বৃহৎ সম্পত্তিটি গোবরডাক্সার জমিদার-বংশের প্রতিষ্ঠাতা খেলারাম মুখোপাধ্যায় ক্রয় করিয়াছিলেন । “ডিহিকণেশপুর” ও পডহিস্বরূপপুর”-নামক সম্পন্তিটি কলিকাতার রাজা গোপীমোহন ঠাকুর ক্রয়করিয়াছিলেন। নড়াইলের কালীশঙ্কর রায় অনেক ভাল ভাল বৃহৎ বৃহৎ সম্পত্তি ক্রয়করিয়াছিলেন। দয়ারাম রায় অতি বুদ্ধা- বস্থায় দেওয়ানী-কশ্ হইতে অবসরলইলে নড়াইল- জমিদার-বংশের প্রতিষ্ঠাতা কালীশঙ্কর রায় নাটোর-রাজ- বাটার দিওয়ুন নিযুক্ত হইয়াছিলেন। রাণী ভবানী কাশী হইতে নাটোরে প্রত্যাবৃত্ত হইয়া পুত্রের এ সকল কাণ্ড দেখিয়া কোন কথা কছিলেন না। তিনি ভাবিলেন, পার্থিববস্তরমকল ক্ষণিকমাত্র। ক্ষণিক এহিক বস্ত্র জন্য চিন্তাকরিয়া মনকে প্যথিত করিবার কোন প্রয়োজন নাই। এই মনকে সম্ভষট রাখিতে পারিলে পরম শরয়ন্ষর কার্ধ্য সম্পাদিত হইতে পারে। পরমেশ্বরের ধ্যান- ধারণায় এই মনকে নিযুক্ত করিতে পারিলে পারত্রিক মঙ্গল সাধিত হইবে । অতএব সম্পত্তির অনেক অংশ নষ্ট হইয়! গিয়াছে বলিয়া বৃথা দুঃখ করিয়া কোন ফলোদয় হইবে না। তীহার শ্বশুর ও শ্বশুরের কনিষ্ঠভ্রাতা অনেক কষ্টে অর্থ উপার্জনকরিয়া এই বৃহত রাজ্য সংগঠিত করিয়াছিলেনএ' রাজ্য এঁহিক ও ক্ষণিক হইলেও, রাজ্য ( ৪ ) রক্ষাকরিলে অনেক. লোক প্রতিপালিত হইয়! থাকে । ইহার দ্বারা বছলোকের, বহুপ্রকার উপকার সাধিত হইয়া থাকে বলিয়৷ অতি কষ্টে উপার্জিত সম্পত্তি ক্ষণিক হইলেও উহাকে জলে ফেলিয়া দিতে কোন শাস্ত্র অনুমোদন করেন না। ইহার বারা অন্যান্য আশ্রম উপকৃত ও রক্ষিত হইয়া থাকে বলিয়া ইহা অন্যান্য আশ্রমের আশ্রয়স্বরূপ। জ্কানী যতি সন্ন্যাসীরা ইহাকে তুচ্ছ বলিয়া উড়াইয়া দেন না। যে মহাত্! শঙ্করাচাধ্য অর্থকে অনর্থ বলিয়! ভাবনা করিতে বলিয়াছিলেন, তীহাকেও ভারতে অদ্বৈতবাদ- স্থাপনের নিমিত্ত দক্ষিণদেশীয়, রাজা মহারাজাদিগের সাহাষ্য লইতে হইয়াছিল। তিনি চারিটি স্থানে যে, চারিটি প্রধান মঠ স্থাপনকরিয়াছিলেন এবং এ সকল মঠের ব্যয়- নির্ববাহার্থ যে প্রচুর ভূসম্পত্তির বন্দোবস্ত করিয়া গিয়াছেন, তাহা অর্থ দ্বারাই সম্পাদিত হইয়াছিল! আকাশ বা শূন্যরূপ উপাদানে এ সকল বৃহত বৃহ মঠ নির্মিত হয় নাই বা এ সকল মঠ-সংপৃক্ত তৃদম্পত্তি অধিকৃত হয় নাই। প্রখর রৌদ্রের উত্তাপ নিবারণপূর্বক শাস্তিলাতের জন্য একটি বৃহৎ ভারবান্‌ ছন্র স্বহস্তে 'ধারণকরিয়া দূর পথে গমন করিলে এ ছত্রধারী ব্যক্তিকে যেমন ছত্রভার-বহনে ক্লেশ- ভোগ করিতে হয়, ঘর্্াক্ত কলেবর হইতে হয় এবং শাস্তি অপেক্ষা তাহার 'অশান্তির ভাগ বাড়িয়া উঠে, তত্রপ রাজারও, রাজ্যভার-গ্রহণে সর্ব মহাদায়িত্ব-চিন্তায় ও ( হত ) বুল রাজ-কার্য্যের -নিরীক্ষণে কষ্টই সার হইয়।পড়ে। রাজা অপেক্ষা রাজকর্ম্চারীরা বরং বেশী নখ ও ন্বচ্ছন্দত! উপভোগকরিয়! থাকেন। নিজের হিত অপেক্ষা পরের হিতের নিমিত্তই রাজার রাজ্যপালন অতীব প্রয়োজনীয় হইয়া থাকে । মহারাণী ভবানী ভাবিলেন যে, আমি সেই জন্যই এতকাল রাজ্যশাসনে ক্রেশ স্বীকারকরিয়াছি। পূর্বব- কালে রাজারা বৃদ্ধীবস্থায় উপনীত হইলে পুত্রের হস্তে রাজ্যন্লার সমর্পণকরিয়া কোলাহলশুন্য পবিত্র স্থানে গিয়া পরমেশ্বর-চিন্তায় জীবনের অবশিষ্ট কাল অতি- বাহিত করিতেন। অতএব আমিও রামকৃষ্চের হস্তে ইতঃপূর্বেবই রাজ্যভার সমর্পণকরিয়াছি। আমার তীর্থ- যাত্রা কৃত্যও সমাপ্ত হইম্সাছে। এক্ষণে কোলাহলপূর্ণ নাটোরপ্রাসাদে আর থাকিবার কোন প্রয়োজন নাই। এইবার সকলকলুম্বনাশিনী ত্রিতাপহারিণী ভাগীরধীর পবিভ্রতীরে মুর্শিদাবাদের বড়নগর-প্রাসাদে বাসকরিয়! জীবনের অবশিষ্তাগ: পরমেশ্বরের ধ্যান-ধারণায় অতি- বাহিত করাই আমার পক্ষে একমাত্র শ্রেয়স্কর। এইরূপ বিবেচনা করিয়া মহারাণী ভবানী জীবনের শেষভাগে গঙ্গাতীরে বাসকরিবার নিমিত্ত মুর্শিদাবাদে প্রস্থানকরিয়াঃ ছিলেন। যাইবার-সময় মহারাজ রামকৃষণকে এই উপদেশ ৷ করিলেন, “বগুস, ভারতের প্রাচীন সূষ্যবংশীয় রাজগণের নীতিপথ অবলম্বন করিও । - ( ৪৪০ ) _ অুর্ধাবংশীয় রাজা রা বথাবিধি জপ পুজা ও হোম করিতেন। অতিথিগণকে যথাশক্তি দাঁনকরিতেম। লোককে, অপরাধের অনুরূপ দণ্ড প্রদানকরিতেন। ধথাকালে ( অতিগ্রত্যুষে ) শষ্যা ত্যাগকরিতেন। সত্য- কথনের নিমিত্ত মিতভাষী হইতেন। যশের নিমিত্ত দেশ জয়করিতেন। প্রজার উৎপীড়নের নিনিত্ত দেশ জয়- করিতেন না। তীহারা বংশরক্ষার্থ দারপরিগ্রহ করিতেন। তাহারা বাল্যকালে বিদ্যাত্যাস করিতেন । যৌবনে বিষয়- ভোগ করিতেন। বৃদ্ধাবস্থায় মুনিগণের বৃত্তি অবলম্বন- করিতেন এবং মরণকালে যোগ দ্বারা তনুত্যাগ করিতেন?।। রাণী ভবানী মহারাজ রামকৃষ্ণকে অন্যান্য অনেক হিত- উপদেশ প্রদ্দানকরিয়া গঙ্গাবাচসর নিমিত্ত মুর্শিদা বাদে চলিয়া গেলেন। কিন্ত মহারাজ রামকৃষ্ণ পুর্বববৎ বিপুল আয়োজন ও মহাআাড়ম্বরের সহিত 'শক্তি-সাধনায় রত রহিলেন। রাজকার্্য পর্যবেক্ষণ ন| করায় রাজকার্ষ্যে নানাবিধ বিশৃঙ্খল! ঘটিতে লাগিল। জমিদারীর পর জমিদারী নিলামে চড়িতে লাগিল । দেবীর পূজার আড়ম্বর এবং দেবীর সম্মুখে ছাগ-বলিঙানের সংখ্যাও ক্রমে বাড়িতে লাগিল। একদিন প্রাতঃকালে মহারাজ রামকৃষ্ণ পুজা- করিতে বসিয়াছিলেন, এমন সময়ে এক মহাত্মা! যোগী, রাঁজবাটীর দ্বারদেশে উপস্থিত হইয়া দৌবারিকগ্ণকে বলিলেন, “তোমাদের মহারাজকে গিয়া ব্পু ষে, তিনি (৪৪১ ) পুজা করিতে বিয়া অমুক ভূসম্পত্তিটির বিক্রয়ের চিন্তা করিতেছেন কেন? পুজা-দমাপ্টির পর সেই চিন্তায় মগ্ন হওয়াই তাহার পক্ষে উচিত। মহারাজার করে "এই কথা পৌঁছিলে তিনি বিশ্মিত হইয়। সেই অন্তর্যামী যোগীকে তাহার নিকটে লইয়া আমিতে আদেশকরিলেন। এ যোগী তাহার নিকটে উপস্থিত হইলে নির্জনে তীহাদের পরস্পর কথোপকথন হইয়াছিল । শুন! যায় যে, এ যোগী তাহাকে বলিয়াছিলেন যে, তোমার মা মহারাণী ভবানীই তোমার প্রকৃত গুরু । তিনি তোমার প্রতি স্্বপ্রসন্না না হইলে লক্ষঞ্ন্ষ বলিদান ও সহত্র সহশ্র বার শব-সাধনা করিলেও তোমার সিদ্ধিলাভ হইবে না”। এই কথা বলিয়া সেই যোগী রাজবাড়ী হইতে অন্তহিত হইয়াছিলেন। আর কখনও রাজবাটীতে আইসেন নাই। ইহার পর মহারাজ রানকৃষ্ণ তাহার মাতাঠাকুরাণী মহারাণী ভবানীকে স্থপ্রসন্ন করিবার নিমিত্ত মুর্শিদাবাদে গিয়াছিলেন। ততীহ্বার' প্রিয়ভৃত্য ভোলা তাহার জপের মালা লইয়া তাহার সঙ্গে গিয়াছিল। বড়নগর-রাজবাটীতে কয়েকদিন থাকিবার পর তিনি প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হইয়া পড়িলেন। পরে তাহার অস্তিমকাল উপস্থিত হইয়াছে, ইহা তিনি জানিতে পারিয়া গঙ্গাগর্ভে প্রাণত্যাগ, করিতে উদ্যতু. হইলেন এবং প্রিয়তম ভূত্য ভোলাকে তাহার জপের মালা : আনিতে বলিচলন। ভোঁল! জপের মালা আনিলে তিনি' (৪8৪২ ) গঙ্গাজলমধ্যে গলদেশ পর্যান্ত ডুবাইয়! ই্টমন্ত্র জপকরিতে আরম্ত করিলেন। জপ শেষকরিয়া একটি অস্তিমকালীন সাধনালঙ্গীত গাইতে আরম্তকরিলেন। গান পরিসমাপ্ত করিয়া ভোলার দ্বারা মহারাণী তবানীকে জানাইলেন যে, তিনি (মহাঁরাণী) একবার রাজবাটীর ঘাটে আসিয়া অন্তিম- কালে তীহার পুত্রের ব্রক্মভলে একবার চরণ স্থাপনকরিয়া পুত্রকে যেন কৃতার্থ করেন। মহারাণী ভবানী অন্তিন- কালে পুত্রের এই প্রার্থনা পুরণকরিয়াছিলেন | * শুনা যায়, তিনি মহারাজ রামকুষ্জের মন্তকে চরণ স্থপনকরিবার পরই মহারাজার ব্রর্গাতল সহদ! ফাটিয়! গিয়া একট জ্যোতিঃ বিনির্গত হইয়াছিল এবং তত্ক্ষণা্ড তিনি পঞ্চত প্রাপ্ত হইয়ছিলেন। মহারাজ" রামকৃষ্ের মৃত্যুর পর তাহার স্ত্রী মহারাণী জয়মণি ও তীহার পুত্র রাজা বিশ্বনাথ সুর্শিদাবাদে বড়নগর-রাজবাটীতে আসিয়া মঙ্থারাণী ভবানীর সহিত বাসকরিয়াছিলেন। মহারাণী ভবানী তাহার সমস্ত দেবোত্তরসম্পত্তি “্দানপত্র”” করিয়া, তাহার পুত্রবধূকে অর্পণকরিয়াছিলেন। মহারাণী ভবানী বৃদ্ধাবস্থায় নানাবিধ শোক-তাপ পাইয়াও কর্তব্পথ হুইতে ভ্রষ্ট হয়েন নাই। তিনি বড়নগর-রাজবাটীতে থাকিয়াই যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন নিয়মিতরূপে রাজকাধ্ধ্য সম্পাদনকরিতেন। ৭৯ বগসর বয়সেও রাত্রি চারিদণ্ড থাকিতে শব্য। ত্যাগ- করিয়া স্ানাদিকাধ্য সমাপনপূর্ববক বেলা দিপ্রহর পর্য্যন্ত (৪৪৩ ) পৃজা-পাঠ করিতেন। পরে স্বহস্তে পাক করিয়া হবিত্যান্ন তক্ষণকরিতেন। আহারান্তে রাজকার্ষো মনোনিবেশ করিতেন। সীয়ংকাল উপস্থিত হইলে সায়ং সন্ধা ও স্ত্বব- পাঠাদি সমাপ্ত করিয়া কিঞ্চিৎ দুপ্ধী ও ফল খাইতেন। তৎপরে কুশামনে বসিয়া পুনরায় রাত্রি দেড়প্রহর পর্য্যন্ত রাজকীয় কাগজ-পত্র দেখিতেন। পরে শয়নকরিতেন। ব্রক্মচর্যের কঠোর নিয়মসকল নিয়মিতরূপে প্রতিপালন- করিতেন। অর্দবঙ্গেশ্বরী হইয়াও স্বহস্তে হবিষ্যান্ন পাক- করিয়া খাইতেন। বালিকারাজ বধূরূপে নাটোর-র1ঞবাটাতে প্রবেশকরিয়া' মৃত্যুকাল পর্য্যন্ত তিনি নিয়মিতরূপে দৈনিক ক্রিয়াসকল * প্রতিপাল্নকরিয়াছিলেন। কেবল বিধবা হইবার পর স্বহস্তে হবিষ্যান্নপাক ও ভূমিশষ্যা-গ্রহণ প্রভৃতি তাহার দুই একটি বেশী কার্ধ্য বাড়িয়াগিয়াছিল মাত্র। নতুবা রাত্রি চারিদণ্ড থাকিতে শব্যাত্যাগ, প্রাঙ্যক্নান, ও পুজা, স্তব-পাঠ শেষ করিয়া ও শ্রী'দূভগবদৃগীতা পাঠকরিয়া রাজবাটীর স্ত্রীলোকদিগকে শ্রবণকরান, তাহার অর্থ বুঝাইয়! দেওয়া, আহারের পর জমিদারীর খাতা পত্র দেখা, ইত্যাদি কার্ধ্য তিনি একরূপেই চালাইয়া, ছিলেন। কেবল বৈধব্যের পর তাহার এই কার্য্য- গুলি বাড়িয়াছিল। যথা £ প্রজাগণের শসভিযোগ-শ্র বণ) বিচার, সিদ্ধান্তুকরা বা রায় দেওয়া, জমিদারী কার্ধয সমন্ধে কর্্ঠারিগপকে যধোপযুক্ত উপদেশ প্রদান, জমি- (৪৪8৪ ) দারী-সম্পূক্ত অভাব-অভিযোগ-শ্রবণ, নিয়মাবলী-সংস্কার, প্রধান মন্ত্রীর সহিত পরামর্শ, কাগজ-পত্রে স্বাক্ষরকরা, নবাবসরকারে ও অন্যান্য স্থলে পত্রলিখন-প্রণালী-কথন, বিধিব্যবস্থাপ্রণয়ন, ইত্যাদি ইত্যাদি। এইরূপে পঞ্চাশ বতসর কাল অন্ধবঙ্গব্যাপী বৃহৎ রাজ্যের গুরুভার গ্রহণ করিয়া মহাপ্রতাপের সছিত রাজকার্য্য সম্পাদন করিয়া মহাশিক্ষিতা পুণ্যশ্লোকা৷ আদর্শমহিলা মহারাণী ভবানী ুর্শিদাবাদস্থ বড়নগর-রাজবাটাতে কলুষ-নাশিনী গঙ্গা দর্শনকরিতে করিতে ৭৯ বতসর বয়সে সঙ্জঞানে পরলোকে গমনকরিয়াছিলেন। পপ অহল্যাবাই। মালবদেশে আহম্মদনগর জেলার অন্তর্গত পাথর্ডী- নামক গ্রামে ১৭৩৫ খ্রীষ্টাব্দে অহল্যাবাই জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। তাহার পিতার নাম আনন্দ রাও শিন্দে। তিনি একজন সামান্য কুষিজীবী ছিলেন। কিন্তু তিনি ধান্মিক পরোপকারক ও উদদারচরিত ছিলেন। বন্কাল যাবৎ তাহার একটি সন্তান না হওয়ায় তিনি ও তাহার স্ত্রী নিষন্ন মনে দিনধাপন করিতেন। একদিন একটি সন্ন্যাসী ত্বাহাদের গৃহে, আসিয়াছিলেন। সে সময়ে আনন্দরাও বাটাতে ছিলেন,:না। তীহার স্ত্রী এ সন্গ্যাসীর প্রতি (8৪৫ ) সমুচিত আতিথ্য প্রদর্শনকরিয়াদ্িলেন। সন্ন্যাসী গৃহ- কর্তরীর বদন বিষন্ন দেখিয়া বিষাদের কারণ অবগত হইলেন এবং বলিলেন যে, কোহলাপুরে জগদম্ব! দেবীর আরাধনা- করিলে তাহাদের কামনা সিদ্ধ হইবে। এই বলিয়া এ সন্যাসী প্রস্থান করিলে আনন্দরাও বাটীতে আসিয়া সমস্ত বৃত্তান্ত অবগত হইলেন । পরদিন তাহারা কোহলাপুরে গমন করিয়া জগদম্বা দেবীর আরাধনায় রত হইলেন। এক বঁংসর কাল একাগ্রচিত্তে আরাধনার পর আনন্দরাও একদিন স্বপ্ন, দেখিলেন যে, জগদম্বা দেবী তাহাকে বলিতেছেন যে, আমি তোমাদের আরাঁধনায় সম্ত্রউ হইয়াছি। তোমরা নিশ্চিন্ত মনে গৃহে গমন কর। তোমাদের অভীষ্ট সিদ্ধ হইবৈ। আনন্দরাওর রাও দেই দিন এই স্বপ্ন দেখিলেন যে, উত্তম বস্্রালঙ্কারে ভূষিত ৃ একটি অসামাগ্ত সুন্দরী নারী তাহার ললাটে সিন্দুর দিয়া ও তাহার ক্রোড়ে একটি স্থুলক্ষণা দদ্যোজাতা৷ কন্ঠ স্থাপন- করিয়া অন্তহিতা হইলেন ,পতি ও পত্ী এই প্রকার স্বপ্ন দেখিয়া বুঝিতে পারিলেন যে, তাহাদের একটি স্থলক্ষণা কন্তা জস্মিবে। পরদিন তাহারা জগদন্বা দেবীকে. ফোড়শ উপচারে পুজাকরিয়্া, এবং প্রাঙ্মণ-ভোজনাদি ব্রত- কৃত্য সমাপ্ত করিয়৷ স্বগৃহে প্রত্যাবর্তম করিলেন। প্রায় এক বদর পরে আননারাওর একটি কল্ঠারত্ব ভূমি হইল। এই ্ন্তার নাম অহল্যাবাই-। গ্রামের .একজন তি (8৪৬ ) অভিজ্ঞ জ্যোতিষী তাঁহার কোঠী গণনাকরিয়া বলিলেন, “এই কন্যা কালে একটা স্বাধীন রাজ্যের নির্ভয়! তেজন্থিনী মধীশ্বরী হইবেন এবং ইনি জগদ্বিখ্যাতা। দানশীল হইবেন । ঈহার কীর্তি তারতের প্রায় সর্বত্র বিস্তৃত হইবে এবং বহুকাল পর্যান্ত সেই কীর্তি স্থায়িনী হইবে” | এই জ্যোতি- বীর গণন! উত্তর কালে বর্ণে বর্ণে মিলিয়াছিল। পূর্ববুকালে এইরূপ সত্যগণনায় সমর্থ বু জ্যোতিষী ভারতে জন্দিয়া- 'ছিলেন। এক্ষণে আদল নাই, নকল আছে, প্রকৃত শিক্ষ! কমিয়াছে, চাতুরী বাড়িয়াছে । অহল্যাবাই শৈশবে বড়ই স্থশীল! ও দয়ান্সেহবতী ছিলেন । তীহার পঞ্চমবর্ষ বয়সে তাহার বিদ্যারস্ত হইয়াছিল। পাথর্ডী গ্রামের পাঠশালার গুরুমহাশয় আনন্দরাওর শরমবন্ধু ছিলেন। তিনিই অহল্যাবাইর গৃহশিক্ষক ছিলেন। “অহল্যাবাই ্‌ কালে রাজোশ্বরী হইবেন,” জ্যোতিষীর এই কথায় বিশ্বাস স্থাপন. করিয়া আনন্ঈরাওর এই ধারণা জন্মিয়াছিল যে, রাজোশ্বরী হইতে হইলে শিক্ষিতা হওয়! চাই। রাজোশ্বরী অশিক্ষিত। হইলে রাজা রক্ষাকরা মহাকঠিন হইয়াপড়ে। অশিক্ষিতা রাজ্যেশ্বরীকে পদে পদে বিড়ম্বনা এ্ভাগকরিতে হয়। শিক্ষার অভাবে মন্ত্িবর্গের করতলগত হুইয়। থারিতে হয়। অবশেষে রাজ্যচ্যুত . হইতে ্ুয। অহল্যাধাই বাল্যকালে শিক্ষা পাইয়াছিলেন বলিয়াই উত্তরকালে রাজনীতিশান্ত্র-শিক্ষা-প্রভাবে দোর্দগু-প্রভাপে রাজত্ব করিতে (8৪৭ ) পারিয়াছিলেন এবং রামায়ণ, মহাভারত, শ্রীমন্তাগবত, শরীমন্তগবদগীতা, যোগবাসিষ্টরামায়ণ, উপনিষ এবং অন্যান্য বনু ধর্নশান্ত্র ও মুক্তিশান্ত্র পাঠকরিয়া শান্তচিত্তে কালযাপন করিতে পারিয়াছিলেন। অহল্যাবাইর নবম বর্ষ- বয়সে আনন্দরাও তাহার বিবাহের জন্য পাত্র অনুসন্ধান- করিতে লাগিলেন । পাত্রের ভাবনায় তাহাকে বেশী কষ্ট পাইতে হয় নাই। 'অহল্যাবাইর শুভাদৃষ্টের বলে অতি অল্প সময়ের “ মধ্যেই বিনা €চষ্টায় একটি স্পাত্রের সহিত সম্বন্ধ অযাচিতভাবে স্বয়ং আসিয়া উপস্থিত হইল। এই পাত্র আবার যে পে দ্বাত্র নয়।, ইনি একজন স্বাধীন নরপতির পুক্র। একজন মতি সামগ্ি দরিদ্র কৃষিজীবীর নবম- বর্ষায় কন্যার সহিত একটি স্বাধীন নরপতির বিবাহ সম্বন্ধ অযাচিতভাবে স্বয়ং আাসিয়! উপস্থিত হইলে কন্যার পুর্বব- জন্মের সকৃতিবল বা! ঈশ্বরের পরম অনুগ্রহ স্বীকার- করিতেই-হইবে। যে যেন কর্ম করে, ঈশ্বর তাহাকে তদ্রপ ফল প্রদানকরেন। পূরববজন্মের স্বকর্-দষ্বদ্্ অস্বীকারকরিয়া কেবলমাত্র ঈশ্বরের অনুগ্রহ স্বীকার করিলে ঈশ্বরের পক্ষপাতিতা-দোষ ধটে। যে সময়ে আনন্দরাও কন্ঠার বিবাহের নিমিত্ত পাত্র অনুসন্ধান-. করিতেছিলেন সেই সময়ে পুনার বাজীরাও পেশোয়ার একদল সৈন্য পাখর্ডী গ্রামে আলিয়া উপস্থিত হইয়াছিল। (৪৪৮ ) তাহারা মাঁলবদেশের বিদ্রোহ দমনকরিয়! পুণায় যাইতে- ছিল। তাহারা ক্রান্ত হওয়ায় পাথরডী গ্রামে কিয়গুক্ষণ বিশ্রাম করিতে বাধ্য হইয়াছিল । তাহাদের সহিত মল্হর্‌ রাও হোল্কর্ু-নামক এক স্বনামধন্য সেনানী ছিলেন। তিনি কৃষক আনন্দরাওর গুহের নিকটস্থ এক দেবমন্দিরে দেবতাকে প্রণামকরিবার জন্য উপস্থিত হইয়া অহল্যা- বাইকে দেখিতে পাইলেন ।. অহল্যাবাই সেই সময়ে তথায় তাহার গুরুমহাশয়ের নিকটে বসিয়া সংস্কৃত-স্তব অভ্যাসকরিতেছিলেন। বালিকার মুখে স্তুস্বরে সুমধুর স্তোত্রপাঠ শ্রবণকরিয়। মল্হর্‌ রাও হোল্করের সেনানী- স্থলভ কঠিন হৃদয় ভক্তিরসে আর্্র হইয়! গেল। তিনি আনন্দে পুলকিত হইলেন এবং তীহার নয়নযুগল হইতে আনন্দাশ্র নির্গত হইতে লাগিল। তিনি এরূপ স্তোত্র পাঠ শুনিয়া নিজেকে ধন্য ও কুতার্থ মনেকরিলেন। অহল্যাবাইর শিক্ষক মহাশয়ের নিকটে অহল্যাবাইর কুল- পরিচয় পাইয়া পরক্ষণে আনন্দরাওর সহিত পর্সিচিত হইলেন এবং তাহার কন্যার'. সহিত নিজের পুজের বিবাহের প্রস্তাব করিলেন। আনন্দরাও এই প্রস্তাবে সম্মত হইলেন। শুতদিনে গুঁভক্ষণে পুণানগরীতে মল্হর নাও হোল্করের পুত্র খ্ুণ্ডরাওর সহিত সৌভাগ্যবততী শ্রীমতী অহল্যাবাইর শুভবিবাহ স্থুমম্পন্ন হইল অতি সামান্য দরিদ্র কৃষকের কন্তা। বধূরাণী হইলেন। অহল্যা- ( ৪৪৯ ) বাইর বিদ্যা'বুদ্ধি সুচরিত্র ও রাজয-শাসন-পদ্ধতির পরিচয় দিবার, পুর্ব্বে তাহার শ্বশুর মল্হর্রাও হোল্করের পরিচয় দেওয়া উচিত। মল্হর্রাও হোল্কর্‌ স্বনামধন্য পুরুষ ছিলেন। তিনি সামান্য অবস্থা হইতে নিজে একটি স্বাধীন রাজোর নরপতি হইতে সমর্থ হইয়াছিলেন। তাহার পিতার নাম খণ্ডুজী। তিনি পুণ। হইতে বিংশতি ক্রোশ দূরে হোল্-নামক এক পল্লীগ্রামে বাসকরিতেন। পশুপালন ও কুষিকার্ধ্য তাহার জীবিকা ছিল। পুরুষানুক্রমে পশু- পালন দ্বার" সংসারযাত্র৷ নির্ববাহকরায় তাহাদের বংশ “ধন্গর্৮নামে অভিহিত ছিল। ধন্গরু শব্দের অর্থ পশুপালকণ হোল্নামক স্থানে বাসকরিতেন বলিয়! হোল্কর তাহাদের উপাধি । মহারাষ্ট্র ভাষায় নিবালী অর্থে “কর” শব্দ প্রযুক্ত হইয়া থাকে । যথা-_ভাগু!র্করু নিশ্বাল্কর্‌ পাঁটন্কর্‌ ইত্যাদি । ১৬৯৩ খ্রীষ্টাব্দে মল্হর্রাও হোল্কর্‌ জন্মিয়াছিলেন। তিনি যখন পঞ্চমবর্ষবযুস্ক বালক, তখন তাহার পিতার মৃত্যু হয়। তাহার পিতার মৃত্যুর পর তাহার মাতা অনন্যোপায় হইয়া তাহার ভ্রাতা নারায়ণজীর শরণাগত হইয়াছিলেন। (স্যার জন্‌ ম্যাল্কম্‌, “মধ্য- ভারত ও মালবের ইতিহাস”-নামক স্বীয় পুস্তকে নারায়ণজী এই নাম উল্লেখকরিয়ীছেন। কিন্তু মারায় পুস্তকে ভোজরাজজ্ী এই নাম দৃষ্ট হুইয়! থাকে ।) তলোরদে-নামক গ্রামে নারায়ণত্ীর নিবাদ ছিল। তলোর্দে (8৫৪ ) “একটি ক্ষুদ্র গ্রাম। উহ! খান্দেশ্‌ জেলার অন্তরগত। তথায় তাহার সামান্য কিঞ্িত তৃসম্পত্তি ছিল। তিনি কৃষি, পশুপালন, ও পশুচারণ প্রভৃতি স্বজাতীয়' ব্যবসায় ত্যাগ- করিয়া কোন মহারাষ্রীয় রাজার সৈম্যদলের অধিনায়ক ছিলেন বলিয়া তাহাকে বিদেশেই থাকিতে হইত। সুতরাং নিজের ভূমিকর্ষণ, পশুপালন, পশুচারণ, ও গৃহ-রক্ষণাবেক্ষণ প্রস্ৃতি কাষ্যের জন্য শরণাগত ভগ্গিনী ও ভাগিনেয়কে বাটাতে রাখা তাহার অতি প্রয়োজনীয় হইয়া উঠিল। তিনি ভাগিনেয় মল্হর্কে গৃহের এ সকল কর্মে নিযুক্ত করিয়া রাখিয়াছিলেন। | একদা এক জ্যোতিষী মল্হরের হস্তরেখা গণনাকরিয়া বলিয়াছিলেন যে, কালে এই বালক অসাধারণ যোদ্ধা হুইবে এবং বন্থযুদ্ধে জয়লাভ করিয়! স্বাধীন রাজ! হইবে ॥ জ্যোতিষীর কথা শুনিয়া মল্হরের হৃদয়ে উচ্চ আশা ও উৎসাহ জাগিয়া উঠিল। তিনি পশুচারণাদি কর্ণ ত্যাগ- করিয়া সৈম্যনলে প্রবিষ্ট হইবার জন্য মাতুলের নিকটে আগ্রহ সহকারে প্রার্থনাকরিলেন। তাহার মাতুল তীহার আগ্রহাতিশয্য দেখিয়া স্বীয় প্রভুর আদেশে নিজের দলে তাহাকে প্রবেশকরাইলেন। মল্হর্রাও সৈম্যাদলে প্রবিষ্ট হইয়া অনন্যচিত্তে, শতগুণ উৎসাহে, কঠোর উদ্যমে, 'ও অবিচ্ছিন্ন নিয়মে উচ্চ আশা! ও ঈশ্বরের স্বমু গ্রহের উপর নির্ভর করিয়া যুদ্ধবিদ্যা শিখিতে লাগিলেন। .নিজগুণে (8৯১) তিনি ক্রমে যুদ্ধবি ভাগোর উচ্চ হইতে উচ্চতর পদ লাতকরিয়া অৰশেষে উচ্চতম পদ লাভকরিয়াছিলেন। 'তিনি একদা এক ভীষণ যুদ্ধে নিজাম্‌ উল্মুল্ক্এর এক স্বৃপ্রসিদ্ধ যোদ্ধা সেনাপতিকে নিহত করিয়া চতুদ্দিক্‌-ব্যাপিনী প্রশংসা লাভ- করিয়াছিলেন । তাহার অসীম সাহস ও বীরত্বের প্রশংসা শুনিয়া মহারাগ্রীয় স্বাধীন নরপতিগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, ইতিহাস-্থপ্রসিদ্ধ বাজীরাও পেশোয়া নিজের সৈম্যদলে তাহাকে নিযুক্ত করিয়াছিলেন। মল্হর্রাও প্রথম পাচশত অশ্বসৈনিকের অধিনায়কত্বের পদ পাইয়া- ছিলেন। প্রকৃত গুণবান প্রকৃষ্ট ক্ষেত্র পাইয়া ক্রমে নিজকাধ্যের সাময়িক সুফল লাভকরিতে লাগিলেন। বাজীরাঁও পেশোয়ার মহাশক্র নিজাম আলি তাহার নিকটে পরাজিত হওয়ায় এবং পোর্টু গীজ্দন্থ্য-উৎপীড়িত কম্কনদেশে ততকর্তৃক শান্তি স্থাপিত হওয়ায় বাজীরাও পেশোয়৷ তাহার প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হইয়া ১৭২৮ খ্রীষ্টাব্দে নর্ম্মদানদীর উত্তরকুলস্থ দ্বাদশটি জেলা তীহাকে জায়গীর্রূপে পুরস্কার প্রদানকরিয়াছিলেন। মালবদেশের আধিপত্য ও অধিকার লইয়া মহারাগ্রীয়গণের সহিত মুসলমানগণের তুমুল সংগ্রামু উপস্থিত হইয়াছিল । এই ভীষণ যুদ্ধে মল্হর্রাও যেরূপ যুর্ধকৌশল, পরার্রুম- ও বুদ্ধিমতার পরিচয় দিয়াছিলেন তাহাতে: শত্রুপক্ষ মুসলমানগণও তীহার প্রশংসাকরিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। (485 ) মল্হর্রাও এই যুদ্ধে জয়লাভ. করায় বাজীরাও .পেশোঁয়া তাহার কার্যে অত্যন্ত গ্রীত হইয়া ১৭৩১ খুষ্টান্দে মত্তরটি জেলা এবং ইন্দোর প্রদেশ তাঁহাকে জায়গীররূপে পারি- তোষিক প্রদানকরিয়াছিলেন এবং মালবদেশের সর্বৰ বিষয়ে কর্তৃত্ব প্রদানকরিয়াছিলেন। 'গই সময়েই মল্হর্রাও হোল্কর্‌ ইন্দোরে স্বীয় রাজধানী স্থাপনকরিলেন। এই সময়ে দিল্লার সআাটের গৌরবরবি অন্তমিত্তপ্রায় হ্‌ইয়া- ছিল। মোগল-সাম্রাজ্য ধ্বংসোম্মুখ হইয়াছিল। মহা- রাষীয়গণ যে সকল দেশ জয়করিয়াছিলেন* সেই গুলির পুনরুদ্ধার করা ক্ষীণশক্তি মুসলমানসম্রাটের পক্ষে অত্যন্ত অসস্তব হইয়া উঠিয়াছিল। তখন মহারাষ্্ীযগণই ভারত সামাজোর হত! কর্ত। বিধাতা হইয়। উঠিয়াছিলেন। স্বয়ং সআট্‌ মহারাহ্্ীয়গণের নিকট অন্ুগ্রহপ্রার্থী হইয়া তীহা- দিগকে কখন বা রাজ্যাংশ কখন বা! তাহাদের অভীষ্ট ধন দানকরিয়া সম্ভুষ্ট রাখিতেন এবং নিজের শত্রদমনের নিমিত্ত তাহাদিগের সাহায্য প্রার্থনাকরিতেন। একবার দিল্লীর মোগলসমআ্রাট তাহার শত্রু রোহিলাগণকে দমনকরিবার জন্য মল্হর্রাওকে আমন্ত্রণকরিয়াছিলেন। মল্হর্রাও সম্রাটকে সাহাষ্যকরিবার জন্য রোহিলাযুদ্ধে যোগদান ই করিয়াছিলেন |, তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে আসিয়া দেখিলেন যে, শক্রুপক্ষীয় সৈন্যের সংখ্যা ্বপক্ষীয় সৈহকসংখয অপেক্ষা অনেক বেশী। স্থৃতরাং নূতন কৌশল অবলম্বন,না করিলে ( ৪৫৩ ) এ যুদ্ধে পরাজয় অবশ্যন্তাবী, এইরূপ বিবেচনা করিয়া তিনি এক অদ্ভুত কৌশল অবলম্বন করিয়া এই যুদ্ধে জয়- লাভ করিয়াছিলেন । গভীর অন্ধকার রজনীতে শক্রপক্ষ স্বীয় শিবিরমধ্যে নিদ্রিত হইলে তিনি বনুসংখ্যক মহিষ ও বৃষের শৃঙ্গে প্রজ্বলিত মশালের আধার বাঁধিয়া দিলেন এবং তাহাদিগকে শক্র-শিবিরের বিপরীত দ্রিকে ছাঁড়িয়! দিয়া শক্রশিবির আক্রমণকরিলেন। শক্রগণ গাঢ অন্ধফারে সহসা! আক্রান্ত হইয়৷ কর্তবাজ্ঞানশগ্য হইয়া পড়িল। ই সময়ে বিপরীত দিক হইতে ধাবমান পণ্র- গণের ভঈমনাদ শ্রবণকরিয়া ও তাহাদের শৃঙ্গস্থিত অসংখ্য অলোকমালা অবলোকনকরিয়৷ শত্রগণ ভাবিল 'যে, দু দিক হইতে দুইটি সৈম্তদল তাহাদিগকে লাক্রমণ- করিতে আসিতেছে । এইরূপ ভাবিয়া তাহারা অত্যন্ত ভীত হইয়৷ পড়িল,'এবং যে যেদ্রিকে পথ পাইল, সে সেই দিকে দ্রুতবেগে পলায়নকরিল। শক্রশিবির শত্রশৃন্ হইয়া পড়িল। বিজয়লক্মমী মল্হর্রাওর অন্কশায়িনী হইলেন। এই যুদ্ধে জয়লাভ করায় তাহার বীরত্বখ্যাতি চতুপ্দিকে ব্যাপ্ত হইয়া পড়িল। দিল্লীর সম্রাট তাহার প্রতি সন্তুষ্ট হইয়া তাঁহাকে তীহার কার্য্যের পুরস্কারস্বরূপ চান্দোর্‌ প্রদেশ প্রদানকরিতে উদ্যত হইলে তিনি বলিয়া, ছিলেন “আমি ইন্দোরের স্বাধীন রাজা হইলেও স্দামি বাজীরাও পেশোয়ার অধীন একজন সামান্য সেনানী মাত্র । (৪৫৪ ) স্থতরাং আমার প্রভুর অনুমতি ব্যতিরেকে তাহার অজ্ঞাত- সারে ও অনভিমতে উহা গ্রহণ কর! আমার উচিত নয়, এই কথা বলিয়া তিনি এই পুরস্কার গ্রহণকরিতে সম্মত হয়েন নাই। কেবল চান্দোরু প্রদেশের “দেশমুখ” এই উপাধিমীত্র গ্রহণকরিয়া সম্ত্রাটুকে সন্তুষ্ট করিয়াছিলেন ও তাহার মানরক্ষা করিয়াছিলেন । অন্যাপি ইন্দোরের নরপতির এই উপাধি চলিয়া মাসিতেছে। মল্হর্রাও হোল্কর পূর্বের্ধাস্ত রোহিলাযুদ্ধে যেরূপ কৌশলে জয় লাভ করিয়াছিলেন, শায়েস্তারথাকে পরাজয়করিবার জন্য 'শিবাজীও এরূপ কৌশল অবলন্বনকরিয়াছিলেন এবং কার্থেজের ইতিহাস-পাঠে অবগত হওয়া যায় যে, মহাবীর হানিবল্‌্ও একবার এরূপ কৌশল অবলম্বনকরিয়া- ছিলেন। এই সময়ে আহম্মদ সাহ আব্দালী স্বীয় ছুর্দম্য প্রবল পরাক্রমে আফ্গান্-সৈন্যের সাহাব্যে পঞ্জাব প্রদেশ লুনকরিয়া ঘোর অশান্তি উৎপাদনকরিতেছিলেন। দিল্লীর হীনবল মোগলসম্রাট্‌ পুর্ব হইতে অন্তর্বিবদ্রোহে জর্জরিত হইয়! মহাকষ্টে দ্রিনযাপন করিতেছিলেন। তিনি এই নূতন বহিঃশক্রর গতি রোধকরিবার নিমিত্ত মহারাগ্রীয় শক্তির শরণাপন্ন হইলেন। এই সময়ে মহা- াষট্ীযগণ যদি গৃহবিবাদ পরিত্যাগকরিয়া পরস্পর . সম্মিলিত হইয়া কার্যাকবিতেন, তাহা হইলে বোধ হয়, হিন্দুস্থান হিন্দুরই হইত। পরমেশ্বর মহারাদ্ীয়গণকে (৪৫৫ ) ভাগাপরীক্ষার স্বযোগ প্রদানকরিলেন। কিন্তু তাহারা নিজদোষে-_গৃহবিবাদ-দোষে স্ব স্ব প্রধান্য-রক্ষার জন্য" অপরকে অবজ্ঞাকরারূপ দোষে ভগবদ্দন্ত সেই স্বর্ণ স্তযোগ হারাইয়াছিলেন। মহারাহীয়গণ যদি পাণিপথযুদ্ধে পরাজিত ন| হইতেন, তাহা হইলে হিন্দুস্থান হিন্দুরই,হইত। পাঁণিপথের ভীষণযুদ্ধে অন্যান্য মহারাহীয় বীর পুরুষের ন্যায় মল্হর্রাও নিজের দ্ল-বল লইয়া যোগদান করিতে আঁসিয়াছিলেন। গর্বিবিত সদাশিবরাও শেশোয়া তাহার প্রতি সদ্যবহার করিলেন না । তিনি মল্হর্রাওকে তাহাদের বংশের ভূতা বলিয়া অতান্ত অবজ্ঞাকরিতেন। মল্হররাও তাহাকে একটা উত্তম পরামর্শ দিতে অগ্রপর হইলে ভিনি সর্ববসমক্ষে বলিয়া উঠিলেন, “আমি মেষপালকের পরামর্শ শুনিতে চাহি না। ইহা বারপুরুষদিগের যুদ্ধক্ষেত্র। ইহা মেষপাল চরাইবার ক্ষেত্র নয়।” মল্হর্রাও এইরূপ অবভ্ন্ভাত হইয়া মন্মাহত হইলেন। তিনি যে উৎসাহ ও উদ্যম হৃদয়ে ধরিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে আগিয়াছিলেন, সে উদ্যম ও উৎসাহের মাত্র! কমিয়া গেল। সর্ববসমক্ষে এক্ূপ অপমানে তীহার. হৃদয় ভগ্র হুইয়া গেল। তিনি স্বীয় সামন্ত লহ যুদ্ধক্ষেত্রে নিশ্চেউভাচব মবস্থিতিকরিতে তসংকল্প হইলেন তিনি মহারাষ্্রীয় জাতির দক্ষিণা রর ছিলেন। সেই দক্ষিণহত্ত, গর্বিত নির্বোধ ( ৪৫৬ ) “ সদাশিবরাও পেশোয়ার অবজ্ঞারূপ মুষ্ট্যাঘাতে বেদনা- ' প্রাপ্ত হঈয়। মকম্মণা হইয়া পড়িল। পাণিপথের ভয়ঙ্কর যুদ্ধে মহারাষ্্রীয় জাতির শোকাবহ পরাজয় ঘটিল। এই যুদ্ধে অসংখ্য মহারাষ্রীয় সৈন্য নিহত হইয়াছিল। কেবল একমাত্র মল্হর্রাওই স্বীয় সৈম্য-সামন্তের সহিত অতি সাবধানে আত্মরক্ষা করিয়া স্বস্থানে প্রত্যাগমনকরিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। এই ভীষণ যুদ্ধের পরিণামে অন্যান্য মহারাষ্্রীয় রাজারা হীনবল হইয়া পড়ায় মল্হর্রাও মহা- রাষ্ট্ীয় জাতির নেত| হইয়াপড়িলেন। তিনি অনুরূপা পততী লাভকরিয়াছিলেন বলিয়া মানবজীবনের ঈদৃক্‌ উৎকর্ষ সাধনকরিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। তাহার"সাধবী পত্ী গৌতমাঁবাই তাঠাব সমৃদ্ধির মূল কারণ ছিলেন। তিনি যেমন স্ুুশিক্ষি' পতিব্রতা, গুহ কর্মমদক্ষ! ও ঈশ্বরে ভক্তিমতী ছিলেন, তদ্রু” গনি বীরহৃদয়! দৃটচিন্ত। উৎসাহবতী ও সাহসিনী ছিলে. মল্হর্রাও কোন যুদ্ধে পরাজিত বাঁ অকৃতকার্য *:-: বিষণ্ন মনে গুঁছে প্রত্যাগমন করিলে গৌতমাবাই উ৮ ক নানাবিধ বচন-বিন্তাসে উৎসাহিত ও উত্তেজিত ক. পুনরায় তাহাকে ুদ্ধার্ধে প্রেরণকরিতেন। ুদ্ধক্ষেত্র হইা.' এনি যতদিন পর্যন্ত গৃহে না আসিতেন, “ততদিন পর্য £ !গীতমাবাই কেশসংস্কার ও উত্তম বেশ- ভূষণাদি পক্ি* গ করিয়া ঈশ্বরের নিকটে সর্বদাই পতির কল্যাণ প্রার্থ- « ধতেন এবং যে সকল গৃহকার্য্যগুলি না (৪৫৭ ) করিলে চলে না, তাহাই করিতেন। পতির ন্যায় তাহারও, দানশীল তা, আশ্রিতবাত্দল্য, সদাচার, সত্যবহার ও পরছুঃখ- কাতরতা প্রভৃতি অনেক সদৃগুণ ছিল। 'অহল্যাবাই শ্বশুর শ্বশ্মঠাকুরাণীর নিকট হইতেই এই সকল সদ্গুণ পাইয়াছিলেন। অহল্যাবাইর বিবাহের পর অল্পদিনের মধ্যেই তাহার পিতার ও মাতার মৃত্যু হইয়াছিল । তিনি শ্বশুরালয়ে আসিয়া শ্বশুর ও শ্বশ্রুর সেবায় মনঃ-প্রাণ অর্পণ- করিখ়াছিলেন। তাহার! বালিকা নববধূর ভক্তি শ্রদ্ধা ও যত্ব দেখিয়া বিস্মিত ও মুগ্ধ হইয়া গেলেন। মল্হর্রাও ও গৌতমাবাইৰ অন্তর কোমল হইলেও বাহিরে স্বভাবট! কিছু উগ্র,ছিল। অহল্যাবাই, ভক্তি, শুশ্যা, সহিষুঃতা, 'আজ্ঞাপালন ও গৃহকর্থাদক্ষতা-গুণে তাহাদিগকে অতি অল্পদিনের মধ্যেই বশীভূত করিয়া ফেলিলেন। পল্লীর প্রতিবেশিগণ, এই ধালিকা নববধূকে শ্বশুর ও শ্বশ্রীর উগ্র স্বভাব পরিবন্তিত করিতে সমর্থা দেখিয়া তাহার অত্যন্ত প্রশংসা করিতে লাগিল। বাল্যকাল হইতেই অহল্যা- বাইর প্রশংদা চতুর্দিকে বিস্তৃত হইয়া পড়িল। তীহার প্রশংস! শুনিয়া তীহার প্রতি তীহার শ্বশুর ও শ্বশ্নার স্মেহ দিন দিন বন্ধিত হইতে লাগিল। বালিক! যাহা বলিত, তীহারা তাহাই করিতেন। এমর্ন কি,,মল্হর্রাওর রুগ্রাু বস্থায় এই বালিকা তীহাকে যতটুকু জল পানকরিতে বলিতেন, তিনি ততটুকুই পানকরিতেন। মল্হর্রাও অত্যন্ত ৩৯ ( ৪৫৮ ) অপরিমিতবায়ী ছিলেন। অতি সামান্য কার্যে অত্যন্ত ব্যয় করিয়া ফেলিতেন। অহল্যাবাই ইহা ভাল বিবেচন! করিতেন না। অথচ কিন্তু তজ্ভন্ত শ্বশুরকে কিছু বলিতেও সাহস করিতেন না। ক্রমে বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সাংসারিক বায়ভার স্বহস্তে গ্রহণকরিয়া শ্বশুরের অমিত- ব্যয়িতা'দোষের প্রতিকারকরিতে মমর্থা হইয়াছিলেন। তিনি রাজকুলবধূ ছিলেন। তাহার অত্যধিকসংখাক দাস-দাসী ছিল। কিন্তু তথাপি গৃহকার্ধ্য-পর্য্যবেক্ষণে তাহার আলম্য ছিল না। তিনি পরিশ্রমে বিরক্তি বোধ- করিতেন না। তিনি অতি প্রতাষে শধ্যা 'ত্যাগকরিয়া সানাদিকাধা ॥সমাপ্ডিপূর্বক শিবপৃজা করিতেন। পরে দাসদালীগণকে স্ব স্ব কর্মে নিয়োজিত করিয়া তাহাদের কার্যাবলী নিরীক্ষণকরিতেন। প্রতিদিন প্রাতঃকালে শ্বশুর ও শ্শঠীকুরাণীকে প্রণামকরিতেন। তিনি বাল্যকালেই অন্বাদাস পৌরাণিক-নামক এক সদীচার, নিষ্ঠাবান, জ্ঞানী ব্রান্মণের নিকটে দীক্ষা গ্রহণকরিয়া প্রতিদিন নিয়মিতরূপে যথাবিধি ভক্তিপূর্ববক পুজা-স্তব- পাঠাদি পারলৌকিক কর্ম সকল অনুষ্ঠানকরিতেন। তিনি বাল্যকাল হইতেই ধন্মপরায়ণা ছিলেন। রাজবধূ হইয়াও “বিলাস কাহাকে ৰলে, তাহা তিনি জানিতেন না। পৃজা-স্তব- "পাঠাদি কশ্মে অনেক সময় অতিবাহিত করিতেন । অন্বাদাম পৌরাণিকের নিকটে ভক্তি, জ্ঞান ও রাজনীতি- ( ৪৫৯ ) শান্তু শিক্ষাকরিতেন। বালিকার এইরূপ মতি-গতি দেখিয়া ও শুনিয়া পল্লীর নরনারীগণ তীহাকে ভক্তি করিত। সর্ববদ| পু্জাপাঠ করিলে পাছে শ্বশুর ও শ্বশ্রী- ঠাকুরাণী বিরক্ত হয়েন, এই ভয়ে তিনি অনেক বাহা পুজার পরিবর্তে মানসপুজা করিতেন।" সদাচার! শ্রদ্ধাভক্তিমত্তা পৃজাজপপরায়ণ৷ বালিকা শুদ্রানী অহল্যাবাই অনেক তভ্ভি- শদ্ধাসদাচার-বজিতা প্রৌঢা বা বৃদ্ধা ব্রাঙ্ষণী অপেক্ষা পবিস্দ্রী ছিলেন। অহল্যাবাইর পতিভক্তিও অসাধারণ ছিল। তিনি পতিকে দেবতা বলিয়া জ্ঞানকরিতেন, মানুষ বলিয় জ্ঞান করিতেন না। তীহার একটি পুত্র ও একটি কন্যা, জন্মিয়াছিল। পুত্রের নাম মালেরাও এবং কন্যার নাম মুক্তাবাই। শ্হল্যাবাইর ভাগ্যে দ।ম্পত্যন্থখ বেশী দিন ঘটে নাই। ১৭৫৩ গ্রীষ্টাব্যে ভরতপুরের সমীপবন্তী কুস্তেরী-নামক দুর্গঅবরোধ কালে তাহার স্বামী খণ্ডেরাও যুদ্ধে নিহত হইয়াছিলেন। তখন অহল্যাবাইর বয়ঃক্রম অষ্টাদশ বর্ষ মাত্র। স্বামীর মৃত্যুসংবাদ শুনিয়! শোকার্ত অহল্যাবাই চিতারোহণে কৃতসন্ল্প। হইয়াছিলেন। তাহার আজ্জায় চিতাও প্রস্তুত হইয়াছিল। কিন্তু যখন তাহার বৃদ্ধ শ্বশুর সাশ্রুনয়নে কাতরকণ্টে তীহাকে বলিলেন, “মা, খতুজী আমাকে তৃদ্ধাবস্থায় শোকসাগ্রে. তামাইয়! পলায়ন করিল। তুমি আমাদিগকে ত্যাগকরিয়া* ইহলোক হইত পলায়ন করিলে বৃদ্ধস্বশুর-হত্যার পাতকিনী (৪০ ) হইবে । মা, তোমার এই বালক ও বালিকাকে বিপত- সাগরে ভাদাইও না। মাতৃহীন বালক-বালিকাঁকে কে দেখিবে ? আমরা বৃদ্ধ হইয়াছি। আমাদের মৃত্যুকাল নিকটবর্তী। এ অবস্থায় তোমার এই অল্পবয়স্ক বালক- বালিকাকে কে রক্ষা করিবে মা”? এই বলিয়৷ বৃদ্ধ মল্হর্রাও চিতারোহণে কৃতসম্কল্লা পুত্রবধূর ক্রোড়ে মস্তক স্থাপনকরিয়া৷ বালকের ন্যায় উচ্চৈঃস্বরে ত্রন্দনকরিতে লাগিলেন। দয়ার্্রচিত্তা অহল্যাবাই গুক্জন-বাক্য অলঙ্বনীয় বিবেচনাকরিয়া ও শিশু পুত্র-কন্যার প্রতি কর্তৃব্যতা বুঝিতেপারিয়া চিতারোহণের সঙ্কপ্প পরিত্যাগ করিলেন। মল্হর্রাও অতিশয় বুদ্ধিমান ছিলেন বলিয়াই অতি সামান্য অবস্থা হইতে তিনি আজ একটা বিস্তৃত প্রদেশের স্বাধীন স্বনামধন্য রাজা হইতে পারিয়াছিলেন। বুদ্ধিমান মল্হর্রাও এক্ষণে এই স্থির করিলেন যে, অহল্যাবাইর হস্তে রাজ্যের কয়েকটি কার্য্ের গুরুভার অর্পণকরিলে তিনি কিয় পরিমাণে বৈধব্য-মন্ত্রণ৷ ভুলিতে পারিবেন। এইরূপ স্থির করিয়া তিনি রাজ্যের আয়- ব্যয়ের হিলাব-রক্ষার পধ্যবেক্ষণ, রাজন্ব-সংগ্রহের স্থব্যবস্থা- বিধান, সৈন্যবিভাগের উন্নতিবিধান ও ব্যয়নির্ধারণ, -কম্্মচারিগণের নিয়োগ ও অপসারণ, ও রাজ্যের আয়ের 'ক্ষতি-ৃদ্ধি-নি্ধীরণ প্রভৃতি কার্য্যের গুরুভ্ভার বিধবা! পুক্র- বধূর হস্তে অর্পণকরিলেন। এই সকল রার্জকীয় কার্য্যের 1( ১৪৬১ 1) গুরুতর ভার বিধবা পুত্রবধূর হস্তে অর্পণকরায় মল্হর্- রাওর দুইটি উদ্দেশ্য সাধিত হইয়'ছিল। | _ অহল্যাবাইকে গুরুতর রাজকীয় কাধ্যতারে আক্রান্ত করিয়া রাজকীয় কাধ্য-চিন্তায় নিমগ্ন করিয়া তাহার বৈধব্য- যন্ত্রণা ভ্রাসকরা ও তাহাকে শোক-তাপ-বিলাপাদির অবসর-প্রদান না করাই মল্হর্রাওর প্রথম উদ্দেশ্য ছিল। আর তীহার অদুরবত্তী স্ৃত্যুর পর অতিক্রেশে স্বীয় বাহুবলে উপাজ্ভিত তীহার মালবরাজ্যের রক্ষার জন্য অহল্যাবাইকে রাজকার্যে বিচক্ষণ করা তাহার ছিতীয় উদ্দেশ্য ছিল। অহল্যাবাইর হস্তে এই সকল রাজকীয় কারধ্যের ভার অর্পণ- করিয়া তিনি সন্ধি-বিগ্রহাদি কার্যের ভার স্বহস্তে রাখি- লেন। তিনি ইন্দোররাজধানীতে রক্ষিতবা প্রয়োজনীয় সৈন্য রাখিয়া অবশিষ্ট সৈম্ত ও কতিপঝ় সামন্ত সহ বাফ্গাও-নামক স্থানে বামকরিতেন। অহল্যাবাই পূর্বোক্ত রাজকীয় কাধ্যে চিত্ত সমর্পণকরিয়া দিন দিন দক্ষতার পরিচয় দিতে লাগিলেন । প্রধান মন্ত্রী ও উচ্চ রাজ- পুরুষগণ তাহার আজ্ঞা! বাতীত কোন লামান্য কাধ্যও করিতে সমর্থ হইাতেন না। তাহারা তীহাকে প্রভু মল্হরু রাওর ন্ঠায় সম্মানকরিতেন। অহল্যাবাইর কার্য্যও বড় সহজ কার্য্য ছিল না । বড় বড় 'িদ্ধান্য বুদ্ধিমান রাজ-. কার্ধ্যাভিজ্ঞ উচ্চবেতনভোগী উচ্চ রাজপুরুষগণের উচ্চ' রাজকার্ধ্যাবলী নিরীক্ষপকরিয়া তাহার দোষ- বিচার- (৪৬২ ) করাই তাহার কার্য্য ছিল। -তীহার শ্বশুর রাজ্যের প্রায় সকল বিভাগের এইরূপ গুরুতর কার্য্যভার তাহার হস্তে অর্পণকরিয়াছিলেন। অহল্যাবাইর আর একটি অসাধারণ গুণ এই ছিল, তিনি তীহার "শ্বশুর অপেক্ষা অল্প ব্যয়ে অথচ স্থুচারুরূপে রাজকাধ্য সম্পন্ন করিতে পারিতেন ॥ তীহার শ্বশুর বাফ্গাও হইতে . প্রত্যাবর্তন করিলে তিনি তাহাকে সমস্ত হিসাব-নিকাশ উত্তমরূপে বুঝাইয়া দিতেন। তিনি মালবের রাজন্ব-সংক্রান্ত কার্য্যে যেরূপ অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছিলেন, তাহা দেখিয়া উচ্চ রাজপুরুষগণও বিস্মিত হইয়া যাইতেন। - এই কার্ধ্যে অহল্যাবাই তীহা- দিগের অপেক্ষা এমন কি, তীহার শ্বশুর অপেক্ষাও অধিকতর. দক্ষা হইয়! উঠিয়াছিলেন। রাজ্যরক্ষাকার্্ে তাহার এতই অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা জম্মিয়াছিল যে, তীহার শ্বশুর তাহার দক্ষতার উপর নির্ভররকঁরিয়া--তীাহার হস্তে রাজ্যের সমস্ত বিভাগের সমস্ত ভার অর্পণকরিয়া নিশ্চিন্ত- চিন্তে পাণিপথ-যুদ্ধে গমনকরিয়াছিলেন। উউগ্রপ্রকৃতি মল্হর্রাও ভাল-মন্দ পরিণাম বিচার না করিয়া, হটাৎ কোন একটা কার্য) করিতে উদ্যত হইলে অহল্যাবাই ভিন্ন কেহ তাহাকে প্রয়োজনানুসারে প্রবৃত্ত বা নিবৃত্ত করিতে পারিত না। সেইজন্য মল্হর্রাও রাজ্া-সংক্রান্ত অনেক গুরুতর বিষয়ে প্রধান মন্ত্রীর সহিত অগ্রে পরামর্শ না করিয়া অহল্যাবাইর সহিত সর্ববাগ্রে মন্ত্রণা.করিতেন৭ যে কাধ্যে (৪৬০ ) ধান মন্ত্রী অনুমোদনকরিতেন. ন!, কিন্তু অহল্যাবাই অনুমোগীনকরিতেন, মল্হর্রাও সেই: কার্য্যটি রুরিতেন? যে কাধ্য অহল্যাবাইর অনুমোদিত হইত না, তিনি তাহা কখনই করিতেন না। মল্হর্রাও জীবিত থাকিতেই অহল্যাবাই রাজ্যের সকল বিষয়েই কর্রী হইয়। ফাড়াইয়া- ছিলেন। অহল্যাবাই প্রভুশক্তি মন্ত্রশক্তি ও উৎসাহ শক্তির মানবী মূর্তি ছিলেন। ১৭৬৫ খ্রীষ্টাব্দে চেষ্টা- নির্ভরশীল লক্ীকপাপাত্র স্বনামধন্য পুরুষসিংহ মল্হর্রাও হোল্কর্‌ বন্তৃকাল রাজত্ব ভোগকরিয়া ৭২ বৎসর বয়সে-- পূর্ণ বয়সে* পূর্ণ গৌরবে পরলোকে গমন করিয়াছিলেন। তীহার মৃত্যুর পর তাহার পত্র মালেরাও হোল্কর্‌ ইন্দোরের রাজসিংহানৰে আরূঢ় হইয়াছিলেন। পুত্র রাঁজসিংহাসনে আরূঢ় হইলেও অহল্যাবাইকেই প্রক্ক তরূপে রাজকার্য্য নির্ববাহকরিতে হইত । কারণ, একে মালে- রাওর বয়স কম ছিল, তারপর তীহার চিত্ত অত্যন্ত অব্যব- স্থিত ছিল এবং তিনি রাজকীয় কর্মে অতিশয় অপটু ছিলেন। মল্হর্রাও যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন অহল্যাবাইর হস্তে রাজ্যভার ন্যস্ত থাকিলেও তিনি এই ভার তত ছুর্রবহ বলিয়া মনে করিতেন না। কারণ, তখন তাহার .হস্ত্ে- এই ভার সত্তেও তিনি তাহার শ্বশুরের নিকট. হইতে অনেক - সাহাধ্য. লাভকরিতে পারিতেন 4" তিনি মধ্যে* মধ্যে কিঞ্চিত অবসর : গ্রহণপুর্রক পরিত্র ( ৪৬৪ ) .নর্মাদা নদীর তীরে রাসকরিয়। ব্রত, পূজা ও দান-ধ্যানাদি পারলৌকিক ধর্মম-কর্ম্দে কিয়ৎ্কাল .সথুখে অতিবাহিত করিতে সমর্থ হইতেন। এক্ষণে রাজকার্ধ্যাক্ষম অল্প- বয়স্ক পুত্রের হস্তে রাজ্যভার অর্পণকরিয়! নম্াদা- নদীতীরে নিশ্চিন্ত মানে ধর্্ম-কর্ম্ম-অনুষ্ঠানে পূর্ববব কিয়ত- কাল অতিবাহিত করা তীহার পক্ষে অসম্ভব হইয়া উঠিয়া- ছিল। এই সময় হইতেই তীহার প্রকৃত মহত্ব উপলব্ধ হইতে লাগিল। এক্ষণে তীহার মহত্ব-প্রদর্শনের সুযোগ আসিয়া উপস্থিত হইল। খাঁহাদিগের গর্বক খর্ববকরিয়া ধাহাদিগকে স্ববশে রাখিয়া! মল্হর্‌ রাও বান্তুবলে রাজ্য- প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন, তীহাদের মধ্যে অনেকেই তাহার সৃত্যুর পর তাহার রাজ্য আত্মসাৎ করিবার জন্য উদগ্রীব হইয়া স্থযোগ প্রতীক্ষা করিতেছিলেন। স্ত্বতরাং অহল্যা- বাই শত্রমগ্ুলীর তীক্ষ দৃষ্টির লক্ষ্স্থল হইয়া অতি বিষম সময়ে রাজ্ভার গ্রন্থণকরিয়াছিলেন। তাহার পুত্র মালেরাও বাল্যকালেই অত্যন্ত উচ্ছল ও ছুর্ববৃত্ত হইয়া উঠিয়াছিলেন। অহল্যাবাই মনে করিতেন যে, রাজ্যভার ্বন্ধে পড়িলেই পুত্রের চরিত্র সংশোধিত হইয়! যাইবে ) কিন্তু রাজ্যতার-গ্রহণের পর মালেরাওর চরিত্র আরও মন্দ .হুইয়া পড়িল। যৌবন, ধনসম্পত্তি, প্রভুত্ব ও অবিবেকিতা' ' খই চারিটি পদার্থের একটি একটিই: বিষম অনর্থ ঘটাইয়া থাকে । আর চারিটি একত্র অবস্থিত হইলে তাহারা (৪৬৫ ) কিরূপ ঘোর অনর্থ ঘটাইতে পারে, তাহা বুদ্ধিমান মাত্রেই অনায়াসে বুঝিতে পারেন। তিনি সিংহাসনে আরোহণের পরই মদ্যপান করিতে অভ্যাস করিয়াছিলেন " মদ্যপান করিয়া উচ্চ রাজকর্ম্মচারীদিগকে ও বেত্রাঘাত করিতে কুন্তিত হইতেন না। ভাবী ইন্দোরাধিপতি তুকোজীরাও হোল্কর্‌- নামক তাহার এক অতি নিকট জ্ঞাতি ও উচ্চপদস্থ রাজকম্মচারী তাহাকে সদুপদেশ দিতে উদ্যত হইলে তিনি এক ভঁত্য দ্বারা তাহাকে অতান্ত অপমানিত করিয়াছিলেন । অহল্যাবাই নিষ্ঠাবান বেদবেদান্তজ্ঞ ত্রাঙ্গণ ও জ্ঞানী সন্ন্যাসীদিগক্ষে অতিশয় ভক্তি-শ্রদ্ধা করিতেন বলিয়া মালেরাও স্বেই সকল ব্রাহ্মণ ও সন্যাসীরিগকে অত্যান্ত অপমান ও নির্যাতন করিষ্টেন। তিনি পট্টবন্ত্র ও পাদুকার মধ্যে এবং রজতমুদ্রাপুণণ স্থবর্ণকলসের মধ্যে তীক্ষবিষধারী সর্প ও বৃশ্চিক গোগনে রাখিয়া দিয়। ব্রাহ্মণ ও সন্ন্যাসী- গণকে এ বন্ত্র ও পাছ্ুক। পরিধানকরিতে বলিতেন এবং : এ কলমের ভিতর হইতে যত ইচ্ছা তত মুদ্রা লইতে বলিতেন। তীহারা এ বস্ত্র ও পাদুকা পরিধান করিলেই এবং মুদ্রা-গ্রহণার্থ কলসের' মধ্যে হস্ত নিক্ষেপকরিলেই সর্পাঘাতে এবং বৃশ্চিকদংশনে প্রাণত্যাগ করিতেন। এই ব্যাপার দেখিয়। মালেরাও অসীম আনন্দ উপভোগ- করিতেন। পুত্রের এই সকল নৃশংসকাণ্ড দেখিয়া রাজী. অহল্যাবাইরণ্হদয় লজ্জায় ও দুঃখে বিদীর্ণ হইয়! যাইত। ( ৪৬৩ ) পুত্রের উচ্ছজ্ঘতা দেখিয়া তিনি মন্ত্ীহত হইতেন। তিনি সর্বদাই অশান্তচিত্তে কালযাপন করিতেন। মালেরাও সর্ববদাই মাতার অশান্তি উত্পাদন করিতেন। মাতা, পুজের দৌরাত্যে দুঃখে জর্জরিত হইয়া সর্বদাই অঅ্র্গবিসর্জজন করিতেন এবং পুক্রের চরিত্র যাহাতে সংশোধিত হয়, তন্নীমত্ত পরমেশখ্বরের নিকটে সর্ববদাই প্রার্থনা করিতেন। অতিরিক্ত মদপান ও ইন্দ্রিয়ের অসংযম-দোষ বশতঃ মালেরাও অল্লবয়সেই মৃত্যুমুখে পতিত হইলেন। তাহার দুইটি পত্রীও তাহার সহিত একচিত্ায় আরোহণ- করিয়া সহম্বৃতা হইলেন। এইবার অহল্যাবাই শোক- সাগরে ভাদিতে লাগিলেন। প্রথম, অল্পবয়মে বৈধব্য- যন্ত্রণা, তারপর শ্বশুর ও শ্বশ্ার মৃত্যু, তারপর একমাএ্র পুত্রের বিয়োগ, এবং তণ্পরে পুত্রবধূদ্ধয়ের সহমরণে তিনি শোকসম্তারে প্রগীড়িতা হইয়া গড়িলেন। লসৌভাগা- সমৃদ্ধিমান্‌ পুরুষ বা সৌভাগাসমুদ্ধিমতী নারীকে প্রায়ই সাংসারিক স্থখে বর্জিত দেখ! যায়। তাহার সাংসারিক বিপদের নহিত রাজ্যসংক্রান্ত এক মহাবিপদ আসিয়া উপ- স্থিত হইল। বিপদ একাকী আমেনা । পরস্পর সম্মিলিত হইয়! এক সময়ে সহসা! উপস্থিত হইয়া থাকে। পুজ্র ও পুক্রবধুদ্ধয়ের মৃত্যুর গর শোকার্ত অহুল্যাবাইর হৃদয়ে রৈরাগ্যভাব উপস্থিত হইয়াছিল। তিনি তীহার শ্বশুরের অতি নিকট আত্মীয় তুঁকোজীরাওহল্কর্-নামক তাহার ( ৪১৭ ) সৈম্যাধ্যক্ষের হস্তে রাজ্যভার সমর্পণকরিয়া কিছুদিনের' জন্য নর্মাদা-নদী-তীরে নির্জনে ঈশ্বরোপাসন। করিয়া "চিত্তের শান্তিবিধান করিতে ইচ্ছুক হইয়াছিলেন। কিন্ত বিধাতার ইচ্ছায় তাহ! হইলনা। সেই সময়ে গঙ্গাধর যশোবন্ত- নামক একজন মহারাষট্ীয় ব্রাহ্মণ ইন্দোররাজোর প্রধান মন্ত্রী ছিলেন। মল্হর্রাও্কে যুদ্ধাদি কার্ধ্য উপলক্ষে অধিকাংশ সময় বিদেশে থাকিতে হইত । প্রধান মন্ত্রী গঙ্গাধর যশোবন্তের হস্তেই সমস্ত রাজ্যতার অর্পিত থাকিত। মন্হর্রাওর মৃত্যুর পর কুটবুদ্ধি গঙ্গাধর বশোবন্ত অহল্যাবাইকে সদ! ধর্মকশ্মে নিরতা দেখির। বলিল, “মাতুস্রী, মো) আপনি নিজের বায়োপযোগী কিঞ্চিৎ মাসিক বৃত্তি লইয়া পুণ্যতমতীর্থ কাণীতে বাসকরুন। আপনার এরূপ অবস্থায় কাশী-বাস করাই শ্রেয়ঃকল্প”। অহল্যাবাই গঙ্াধরের কথা শুনিয়া তাহার মনের ভাব বুঝিতে পারিলেন। তাহাকে অপসারিত করিয়! মালব- রাজ্য আত্মসাৎ করাই গঙ্গাধরের উদ্দেশ, ইহা বুঝিতে তাহার বাকি রহিলনা। তিনি বলিলেন, “আচ্ছা, কাশী- বাসের সময় এখনও মহীত হয় নাই। আমার পক্ষে, যাা কর্তব্য তাহা আমিই বুঝিব। আমি আপনার উপদেশের প্রার্ধিণী নহি”। অহল্যারাই আপাততঃ , নর্শদা-তীরে নিজ্জনবাসে বিরতা রহিলেন। গঙ্গাধর যশোবস্ত -স্বার্থসিদ্ধির জন্থা একটি দল গঠিত করিতে- ( ৪৬৮ ) আরম্ত করিলেন। তিনি তাহার মনের মত লোক রঘুরাও বা রাঘোব! দাদা পেশোয়াকে এই দলের নায়ক করিতে চেষ্ট। করিতে লাগিলেন । এই পাপিষ্ঠ রাঘোব! ইতিহাস- পাঠকের নিকটে স্ুপরিচিত। এই কুলাঙ্গারের মুর্খতা- দোষেই ইংরাজদিগের সহিত প্রথম মহারাষ্যুদ্ধ বাধিয়া- ছিল। দাক্ষিণাত্যপ্রদেশ মানব-রুধিরে রঞ্জিত হইয়াছিল । গঙ্গাধর যশোবস্ত, রাঘোবাকে একখানি গুপ্তপত্র লিখিয়া জানাইলেন যে, “ইন্দোররাজায উত্তরাধিকারিশূন্য হইয়াছে। আপনি ইহা এক্ষণে অনায়াসে অধিকার করিতে পােন। আপনি সন্র আয়া এই রাজ্য জ্ধিকারকরুন। মালেরাওর মৃত্ুতে রাজ্যের সকলেই শোকার্ত । ঈদৃশ উত্তম সময়েই ইন্দোররাজ্যের সিংহাসন মধিকারকরাই আপনার একান্ত উচিত। এইরূপ সুযোগ ত্যাগকরা আপনার উচিত নহে। এইরূপ স্থযোগ আর ঘটিবে না” । গঙ্গাধরের পত্র পাইয়৷ রাঘোবার আনন্দের সীম! রহিলনা। কারণ, এই সময়ে যিনি পেশোয়া-রাজ্যের সিংহাসনে অধিরূঢ ছিলেন, তাহার নাম মাধবরাও পেশোয়৷ ৷ রাঘোবা, মাধব- রাওর পিতৃব্য ছিলেন। স্থৃতরাং রাঘোবার একটা স্বাধীন- রাজ্যের সিংহাসনে বসিবার লোভ প্রবল হইয়া উঠ্িল। , তিনি স্বীয় ভ্রাতুষ্পুত্রকে সিংহাসন-ঢাত করিয়৷ রাজদণ্ড ' ধারণকরা অপেক্ষা ইন্দোরের শুন্য সিংহাসনে বসিয়! রাজদণ্ড ধারণকরাই যুক্তিযুক্ত মনে করিলেন। তিনি ( ৪৬৯) ইন্দোরের শৃন্তা সিংহাসনে বসিবার জন্য উদ্ভোগ করিতে লাগিলেন। কিন্তু গঙ্গাধর যশোবস্তের সহিত তাহার ষড়যন্ত্র শীঘ্রই প্রকাশিত হইয়া পড়িল। শিবাজী গোপাল ও রাঁওজী মহাদেব-নামক অহল্যাবাইর দুইজন অতিবিশ্বস্ত কর্মচারী তাহাদের ষড়যন্ত্রের কথা প্রথম অবগত হইয়া- ছিলেন। অহল্যাবাই সে সময়ে অত্যন্ত শোকার্ত হইয়! পড়িয়াছিলেন বলিয়া তাহার! নিজে এই সংবাদ তাহার কর্ণগোঁচর করিতে সাহসী হইলেননা। তাহারা হরকুবাই ও উদাবাই-নান্্রী মল্হর্রাওর দুই কন্যাকে প্রথমতঃ এই বিষয় অবগত'ক্রাইলেন। হর্কুবাই ও উদাবাই অহল্যা- বাইকে এই বিষয় জানাইলেন। অন্যলোক হইলে ঈদৃশ শোকের সময়ে এইরূপ সংবাদ শ্রবকরিয়া কর্তব্যজ্ঞান- শূন্য হইয়া মৃচ্ছিত হইয়৷ পড়িতেন, কিন্তু বার-পুত্রবধূ বীরপত্বী ভারতের বীরনারী অহল্যাবাই এই সংবাদ শ্রবণ- করিয়া তৎক্ষণাৎ প্রধান প্রধান কর্ম্মচারীদিগকে আহ্বান- করাইয়া দ্ব্ণা দৃঢ়তা ও তেজোব্যপ্ক স্বরে বলিলেন, ন্দুইটা পাপিষ্ঠ ব্রাহ্মণ, চণ্ডালোচিত পাপাচরণে প্রবৃত্ত হইয়াছে। তাহারা রাজ-পুত্রবধূকে রাজার ধর্মপত্তীকে, পথের কাঙ্গাল করিতে উদ্যোগ করিতেছে | একট! ব্রাহ্মণ আমার লবগভক্ষক* কৃতন্প গঙ্গাধর যশোবস্ত, আরু অন্য ব্রাহ্মণটি, পেশোয়াকুলের অধম আত্ম-সম্মান-জ্ঞানহীন ছুষ্টাশয় রাঁঘোবা। কিন্তু অমি ৪৬ (8৭ ) 'বলিতেছি, আমি ভীম অসি হস্তে রণক্ষেত্রে চাষুা- , রূপে দীড়াইলে পেশোয়ার সিংহাসন বিকম্পিত হইবে । আমরা যজজন-যাজন-অধ্যয়ন-অধ্যাপনশীল ব্রাহ্মণের জাতি নহি। আমরা “শিলেদার”। ( যুদ্ধোপজীবী অশ্বসৈনিকের জাতি ) আমার শ্বশুর বাহুবলে এই রাজ্য স্থাপন করিয়া- ছেন। কেরাণীগিরি করিয়া রাজ্য স্থাপনকরেন নাই। ( বাজীরাও পেশোয়৷ প্রথমে শিবাজীর অধীনে কেরাণী- গিরি করিতেন, পরে বৃহৎ স্বাধীন পেশোয়া-রাজা প্রতিষ্ঠা- করিয়াছিলেন। পেশোয়া শব্দের অর্থ কেরাণী ) আমার শ্শ্টর পেশোয়ার অধীনে সৈনিকের কার্য করিয়৷ ভৃত্য হইয়াছিলেন বটে, কিন্তু প্রভুর উপকার ছাড়া কখনও কুতত্বতা-আচরণ করেন নাই। তীহার প্রভু এত, সম্তৃষ্ট না হইলে তাহাকে এত জায়গীর দিতেন না। প্রভুকুলোতপন্ন হইয়া ভূত্যবংশের অনিষ্টসাধন করা ্রাঙ্মণোচিত কার্যা নয়। আমার শ্বপুর শ্রীমস্তদিগের ( পেশোয়াদিগের ) সেবক হইয়৷ তীহাদিগের প্রতি আজীবন ভূত্যোচি 5 সম্মান প্রদর্শন করিয়! গিয়াছেন। আমি তাহার পুত্রবধূ হইয়া তাহাদিগকে তক্রপ সন্মান করিতে সদাই প্রস্তুত আছি। কিন্তু সেবিকার অনিষ্ট সাধন করা প্রভুকুলের উচিত কার্য নয়। আমার শ্বশুরের রাজোর ধ্বংস-চেষ্টা কখনই ফলবতী হইবে না”। অহল্যাবাই শিবাজীগোপাল ও রাওজিমহাদেকের প্রতি দৃষ্টি ( ৪৭১ ) নিক্ষেপকরিয়া বলিলেন, “আপনারা ছুইজন যে, আমার অতি বিশ্বস্ত কর্মচারী, তাহা আমি অন্য বুঝিতে পারিলাম।* আপনারা অদ্যই গাইকোয়াড় ভোন্সলে ও' সেনাপতি ভাদাড়ে এবং অন্যান্য মহারাষ্্রীয় মগুলেশ্বর রাজাদিগের নিকটে শক্রপক্ষের উদ্দেশ্য বিবৃত করিয়া সৈম্য-সাহাযা- প্রেরণের নিমিত্ত গুপ্তভাবে পত্র প্রেরণকরুন। পত্রে যাহা লিখিতে হইবে, তাহা আমি বলিয়৷ দিতেছি । আমার বিশ্বস্ত সৈশ্যাধ্যক্ষ তুকোজিরাও হোল্কর্‌ এক্ষণে উদয়পুরে আাছেন। *তাহার নিকটে দুত প্রেরণকরিয়া তাহাকে এখানে ধ্লাহ্বানকরুন। কিন্তু খুব, সাবধান । যেন . আমাদের গ্রই গুপ্তমনতর বাহিরে প্রকাশিত হইয়া না পড়ে। নতগুপ্তি বিষয়ে খুব সাবধান হইবেন।” পূর্বেবাক্ত রাজা: দিগের নিকটে এইরূপ এক একখানি গুপ্তপত্র লিখিত হইয়াছিল £__“মামার স্বর্গীয় শ্বশুর মহাশয় স্বহস্তে অসি- চালনাদিরূপ ইষ্টকপ্রস্তরখগ্াদি দ্বারা দৃঢ়রূপে বীরত্বর্ূপ ভিত্তি নির্মাণকরিয়। তদুপরি একটি উচ্চ প্রশস্ত অট্রালিকার ন্যায় ইন্দোররাজ্য স্থাপিত করিয়াছিলেন। কিন্তু আমার পুর্বজগ্মের কর্ম্রদোষে দৈব এক্ষণে আমার প্রতিকুল হওয়ায় আমি মহাবিপদে পড়িয়াছি। যে সকল "আশ্রিত ভৃত্য, কঠোর সেবা ও দেহরক্তপাত, দ্বারা প্রভু শ্রীমস্ত দিকে ( পরেশোয়ার্দিগকে ) পুর্বে "সাহায্য করিয় সন্তুষ্ট করিয়াছিলেন বলিয়! তাহাদের নিকট হইতে পাঁরিভৌধিক- (৪৭২) স্বরূপ জায়গীর মকল প্রাপ্ত হইয়াছিলেন, সেই সকল প্রভু-সুহাষ্যকারী আশ্রিত ভৃত্যের সন্তানদিগকে রক্ষা করা এবং সেই সন্তানগণের নিকট হইতে বংশপরম্পরাক্রমে সেবা গ্রহণকরাই শ্রীমন্তদিগের ( পেশোয়াদিগের ) উচিত কাষ্য। কিন্তু তাহা না করিয়! তাহারা তাহাদের ভূতের সম্তানদিগকে ৰঞ্চনাকরিয়া! বিপন্ন করিয়া বলপূর্ববক অন্যায়পূর্ববক তাহাদের নিকট হইতে তীহাদের প্রদত্ত সেই ধনসম্পন্তি গুলি আত্মসাৎ করিতে চেষ্টা করিতে- ছেন। নিজপ্রদত্ত ধন নিজে অপহরণকরিয়া দত্তাপহারী পাপী হইতে তাহারা এক্ষণে সচেষ্ট । দত্তাগহার-পাপকে পাপ বলিয়াই তাহারা গণ্য করিতেছেন ন্]য। এক্ষণে তাহার! তাদৃশ পাপানুষ্ঠানের 'জন্য ষড়ঘন্ত্র করিতেছেন । আমার ভাগ্যে যেরূপ ভোগ নিরূপিত আছে, তাহা আমাকে অবশ্যই ভূগিতে হইবে। কিন্তু অদ্য আমি ষে প্রকার বিপদে পড়িয়াছি, কালে আপনাদেরও সেইরূপ বিপদে পড়িবার সম্ভাবনা । কারণ, আপনারাও আমার স্বর্গীয় শ্বশুর মহাশয়ের ন্যায় প্রীমন্তদিগের ( পেশোয়াদিগের ) ভৃত্য । ' স্তরীমন্তগণ ভূত্যবঞ্চনার অভিনয় করিবার জন্য রণ-রঙগ- মঞ্চে উপস্থিত হইতে 'ব্যগ্র হইয়া পড়িয়াছেন। আমার স্বার্থ আপনাদের স্বার্থের সহিত বিজড়িত । উভয় পক্ষেরই সমান স্বার্থ। সেইজন্য আমাকে বিপদ হইতে রক্ষা ( ৪৭৩ ) করিবার নিমিত্ত শীঘ্ব সৈন্য-সাহাষ্য প্রেরণ করুন, ইহাই; আপনাদের পরমবন্ধু স্ুভেদার্‌ মল্হর্রাও হোঁল্করের বিধবা পুত্রবধূর সবিনয় নিবেদন, জানিবেন”। ' মহারাষীয় নরপতিগণ রাজনীতিক শ্থকৌশলে লিখিত এই গুপ্তপত্র খানি অহল্যাবাইর দূতের নিকট হইতে পাইবামাত্র এই বিপদে তাহাকে সাহায্য করিবার জন্য সৈন্য প্রেরণকরিতে লাগিলেন। বরোদার গাইকোয়াড়মহারাজ বিংশতি সহত্ম সৈম্ত ইন্দোরে প্রেরণকরিলেন। মহারাজ জহু,জী ভোন্স্লা বন্ছ সৈন্-সামন্ত সহ নম্মাদান্দীতীরস্থ ভুসেঙ্গা- বাদে কার্ষ্োোপলক্ষে বাসকরিতেছিলেন। তিনি অহল্যা- বাইর পত্র "প্রাপ্থিমাত্র দূত প্রেরণকরিয়া জানাইলেন যে, 'সৈন্য-সামন্ত সঙ্গে লইয়া স্বয়ং তিনি তাহার সাহা্যার্থ শীপ্ব আগমন করিতেছেন। অন্যান্য মণ্ডলেশ্বর নরপতিগণও, অহল্যাবাইকে এই বিপদে সাহায্য করিবার জন্য বন্ছ সৈন্ত প্রেরণকরিতে লাগিলেন। অহল্যাবাই পেশোয়া- সিংহাসনে অধিরূঢ় মাধবরাও পেশোয়া এবং তাহার ধর্ম নিষ্ঠা স্ুস্বভাবা পত্ী রমাবাইকেও একখানি পত্র লিখিয়া তীহাদের পিতৃব্য রাঘোবার কাণ্ড তাহাদিগকে জানাইয়া- ছিলেন এবং এই বিপদে তাহাকে রক্ষা করিবার জন্য তাহাদের সাহায্য প্রার্থনাকরিয়াদ্বিলেন। মাধবরাও. পেশোয়া অহল্যাবাইর এই পত্র পাইয়া নিম্বলিখিচ উত্তর প্রেরণ করিয়াছিলেন £__“ষে ব্যক্তি আপনার শ্বগুরের (8৭৪ ) রাজ্য ও ধনসম্পত্তি আতুলাৎ করিতে উদ্যত' হইবে, এমন কি, ঘে'পাপী উহা৷ মাতুসা করিবার, জন্য পাপ প্রবৃত্তিকে মনে স্থান দিবে, আপনি তাহাকে অতি অবশ্য দণ্ড দিবেন। আপনি এ বিষয়ে কোন সংকোচ বোধকরিবেন না। এ বিষয়ে আমার কোন আপত্তি নাই জানিবেন। আপনি আপনার শ্বশুরের মৃত্যুর পর যে, স্বহস্তে রাজদণ্ড গ্রহণ করিয়াছেন, তাহা আমার সম্পূর্ণ অনুমোদিত জানিবেন। আমি যে, উহা সম্পূর্ণরূপে অনুমোদন করি, তাহার প্রমাণ এই যে, অতঃপর আপনি অন্যান্য স্বাধীন র্লাজাদিগের ন্যায় আপনার দুইজন দূতকে আমার রাজধানীতে পাঠাইয়া দিবেন। দূতদ্বয় আমার রাজধানীতে থাকিয়া আমার রাজসভায় যথাবিধি গতায়াত করিতে পারিবেন। অদ্য হইতে আমি আপনাকে আমার রাজসভায় দূত রাখিবার অধিকার প্রদান করিলাম” । মাধবরীও পেশোয়! তাহার পিতৃব্য রাঘোবা পেশোয়ার ছুঃষ্ট স্বভাব অবগত ছিলেন । শ্বশুর-পতি-পুত্র-বিহীনা অহল্যাবাইর প্রতি তাহার এরূপ কুৎসিত আচরণে তিনি বড়ই ক্ষুব্ধ হইয়াছিলেন। ভূৃত্যবংশের প্রতি পেশোয়াকুলোতপন্ন ব্যক্তির এইরূপ কুৎসিত আচরণ অত্যন্ত ঘ্বণাজনক বোধকরিয়া তিনি বড়ই লজ্জিত হইয়া- .ছিলেন। মাধব রাও পৈশোয়ার পত্বী রমাবাইর সহিত 'অহল্যাবাইর ঘনিষ্ঠ সখ্যভাব ছিল। তীহাদের সর্বদা পরস্পর সাক্ষাৎকার ধটিত না বলিয়! মধ্যে মধ্যে তাহাদের (:8৭€ ) পরস্পরের মধ্যে পঞ্জের ' আদান প্রদান চলিত। একদা? মাধব রাও যখন যন্মারোগে আক্রান্ত হইয়াছিলেন, তখন অহল্াৰাই তাহাকে দেখিবার জন্য পুণ।য় গিয়াছিলেন। সেই সময়ে অহল্যাবাইর সহিত রমাবাইর নানাবিষয়ে কথোপকথন হইয়াছিল। সেই সময়ে রমাবাই অহল্যা- বাইকে বলিয়াছিলেন যে, রাঘোবা ও তীহার পত্বী আনন্দী- বাইর কুটবুদ্ধি ও অপরিণামদর্শিতা দোষে শেষে পেশোয়া- কুলের গৌরব নষ্ট হইবে এবং মহারাহ্রীয় শক্তিপুপ্রের স্বাধীনত| চিরকালের জন্য সমূলে বিধ্বস্ত হইবে। পেশোয়া- বংশ উৎসন্ন হইবে। পেশোয়াবংশের এই ভয়ঙ্কর শোচনীয় পরিণাম দর্শন করিবার পূর্বেই যেন তাহার মৃত্যু ঘটে। ঈশ্বরের নিকটে তিনি সর্বদাই এই প্রার্থনা করিয়া থাকেন। আর তাহার স্ৃত্যুর পূর্বেবে যদি তাহার স্বামীর মৃত্যু হয়, তাহ! হইলে পাছে এই ভয়ঙ্কয় শোচনীয় পরিণাম দর্শনকরিতে হয়, 'এই আশঙ্কায় তিনি স্বামীর সঙ্গে সহমৃত| হইবেন । ইহা! তিনি পূর্ব হইতেই স্থির করিয়া রাখিয়াছেন। তুঁকোজী রাও হোল্কর্‌ দূতমুখে অহল্যাবাইর আজ্ঞা শ্রবণকরিবামাত্র ইন্দোরে আসিয়। উপস্থিত হুইলেন। অহল্যাবাই তীহার হস্তে সৈন্যবিভাগ ও. রাজ্যের অগ্যাপ্ত বনু বিভাগের ভার অর্পণকরিলেন এবং “গাড়! খেরী»নামক স্থানে শিবির স্থাপনপূর্ববক তথায় বছ সৈন্য সহ অবস্থিতি করিয়া! শত্রুপক্ষের গতি-বিধি লুঙষ্য (৪৭৬) ,রাখিবার জন্য আজ্ঞ! প্রদানকরিলেন। মগুলেশ্বর গায়, কোয়াড় ও ভাদাড়ে তীহার' সাহা্যার্থ ষে সকল সৈন্য ইন্দোরে প্রেরণকরিয়াছিলেন, তাহাদিগকে উপযুক্ত রসাদ প্রদানকরিতে ও শক্রসৈন্যকে বাধ! দিবার জন্য তাহা- দিগকে যথোপযুক্ত স্থানে স্থাপিতকরিতে আজ্ঞ৷ দিলেন। কোথায় কোন সৈন্যদল কিপ্রকারে অবস্থিতি করিলে শত্রুপক্ষের গতি রোধকরিতে পারা যাইবে, কিপ্রকার উপায় অবলম্বন করিলে শক্রপক্ষকে পরাজয়করিতে পারা যাইবে, তদ্বিষয়ে রাজনীতিশান্তম্থপপ্ডিতা: অহল্যাবাই কাহারও সহিত পরামর্শ না করিয়া নিজেই অতি অল্প সময়ের মধো মতি উত্তমরূপে বিবেচনা করিয়া স্মব্যবস্থা করিয়া ফেলিলেন। তীহার নিজ সৈম্যগণকেও ুদধার্থ সজ্জিত হইতে আদেশকরিলেন। রাজামধ্যে চতুদ্দিকেই সমরায়োজন এবং সাজ, সাজ. রব পড়িয়৷ গেল। অহল্যা- বাইর স্রেহ দয়া ও সুবিবেচনা গুণে রাজ্যের প্রজাবর্ তাহাকে মাতৃব ভক্তি শ্রদ্ধা ও সম্মান করিত। যে সকল প্রজা যুদ্ধবিদ্যা শিক্ষা করে নাই, তাহারাও তাহার রাজোর রক্ষার জন্য উৎসাহে ও কর্তৃব্য-বিবেচনায় উন্মত্ত হইয়া! উঠিল। এদিকে গঙ্গাধর যশোবস্ত এত অল্ল , সময়ের মধ্যে অহল্যাবাইকে এইরূপ সতর্ক হইতে দেখিয়া রাঘোবাকে গ্রপ্তভাবে সমস্ত বৃত্তান্ত জানাইতে লাগিল। রাক্ষোবা প্রথমতঃ মনে করিয়াছিলেন যে, একটা বিধবার (৪৭৭ ) রাজা আক্রমণকরিয়। আত্মা করা ধন-জন-সম্পন্ন পেশোয়াকুলোতপন্ন পরাক্রমী দুর্দান্ত রাঘোবার পক্ষে অতি সামান্য কথা। তারপর তিনি গঙ্গাধরের নিকট হইতে যখন শুনিলেন যে, ব্যাপারটি বড়ই গুরুতর হইয়া দাড়াইয়াছে, তখন তিনি বুঝিতে পারিলেন যে, এ বিধবা নারী সামান্য বিধবা নারী নয়। এই বিধবা নারীর ক্ষম সম্বন্ধে পুর্ব্বে তাহার যেরূপ ধারণ৷ ছিল, এক্ষণে তাহা পরিবর্তিত হইল । সেই ভ্রান্ত ধারণ! তাহার হৃদয় হইতে অন্তহিত হইল। কিন্তু এইরূপ সময়ে তিনি যদি যুদ্ধীর্থ অগ্রীসর না* হয়েন, তাহা হইলে পেশোয়া-কূল কলঙ্কিত হইবে। একটা ভূত্যবংশীয় সামান্য বিধবার সহিত যুদ্ধ- (ঘোষণা করিয়া পশ্চ।ৎ “যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত ন| হইলে লোকসমাজে তিনি মুখ দেখাইবেন কিরূপে? এইরূপ বিবেচনা করিয়া তিনি সৈম্য-সামন্ত সহ একটি বিধবা অবলার সহিত যুদ্ধার্থ বহিগত হইলেন। অহল্যাবাই এই সংবাদ অবগত হইয়! স্বীয় সৈশঘ সামন্তগণের নেত্রীত্ব গ্রহণপূর্ববক হস্তিপৃষ্টে আরূঢ় হইয়৷ যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হইলেন তিনি ইতঃ পূর্বে হস্তিপৃষ্ঠে আরোহণ, অশ্বারোহণ, অন্ত্রশস্তরস্ালনাদি যুদ্ধবিদ্যা যে, শিক্ষা করিয়াছিলেন, এবিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। কারণ, তাহা না শিখিলে একেবারে হটাৎ যুদ্ধের দিন হস্তিপৃষ্ঠে আরোহণকরিয় যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হওয়া. অন্রষ্ট... (৪৭৮ ) অসম্ভব। তিনি হস্তিপৃষ্টে আরূঢ় হইয়া সমরাঙ্গনে যে, উপস্থিত হইয়াছিলেন, ইহা এতিহাসিক সত্য। স্থৃতরাং তিনি বাল্যকালে বিবাহের পর শ্বশুরালয়ে আসিয়া রাজস্ব- আদায়, রাজারক্ষা-ব্যয় . প্রভৃতি রাজকীয় কাধ্যসমুহের শিক্ষার সহিত যুজ্ধবিদ্যাও, শিক্ষা করিয়াছিলেন, ইহ! নিশ্চয়ই বুঝিতে পার! যায়। তাহাকে সমরাঙ্গনে সৈম্যবেশে উপস্থিত দেখিয়া ও তীহার সাহস বিক্রম ও কঠোর প্রতিজ্ঞ। সন্দর্শনকরিয়া তাহার শক্রবর্গ বিস্মিত হইয়া গেল। রাঘোবা বেশ বুঝিতে পারিয়াছিজেন যে, এ যুদ্ধে তিনি কোন প্রকারেই বিজয়ী হইতে পারিবেন না। কিন্তু তথাপি তিনি স্বীয় প্রতিপন্তির রক্ষার জন্য পঞ্চাশ সহস্র সৈম্ভ সহ ইন্বোর-আক্রমনার্থ সিপ্র/নদীর দক্ষিণতীরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। গঙ্গাধর যশোবন্ত তাহাকে নানাকথায় যুদ্ধার্থ উৎসাহিত করিতে লাগিল। অহল্যা- বাইর সৈন্যাধ্যক্ষ তুকোজী রাও হোল্কর এই সংবাদ অবগত হইয়া অহল্যাবাইর চরণে প্রণামকরিয়া রাঘোবার অভিযানে বাধা দিবার নিমিত্ত সিপ্র-নদীর দক্ষিণতীরা- ভিমুখে সৈন্য সহ যাত্র। করিলেন। কোন স্থানে এক মুহুর্ত বিশ্রাম না করিয়৷ সমস্ত রাত্রি সুর পথ উল্লঙ্ঘন করিয়৷ পরদিন প্রত্যুষে সিপ্রা-নদীতীরস্থ উজ্জয়িনী-নগরীর _ মীপস্থ একটি গিরিসঙ্কটে আসিয়া! তথায় শিবির স্থাপন- করিলেন। পরদিন প্রাতঃকালে রাঘোবার সৈম্ঠদিগকে (8৭৯ ) নিপ্রা-নদী উত্ভীর্ণ হইফার জন্য উদ্যোগ করিতে দেখিয়া তুকোজী রাঘোবাকে দুতমুখে জানাইলেন যে, রাঁঘোবা সিপ্রা-নদী উত্তীর্ণ হইলেই তুঁকোজী উন্মুক্ত তরবারি হস্তে, তাহার সহিত তত্ক্ষণাৎ সাক্ষাৎ করিবেন। রাঘোবা যেন তীহার উদ্যোগের পরিণাম বিবেচনা করিয়া অগ্রপর হয়েন। তাহার উদ্যোগের পরিণাম কিন্তু বড়ই মন্দ ॥ রাঘোবা, তুঁকোজীর তেজন্বিতাব্যগ্তক ও দৃট়তাসূচক বাক্য শ্রবণকরিয়৷ ভীত ও চিন্তিত হইয়া পড়িলেন। এক্ষণে তিনি *এই যুদ্ধের পরিণামই বিশেষভাবে চিন্তা- করিতে আরম্তকরিলেন। তিনি ভাবিলেন যে, যদি এই যুদ্ধে প্রথম বারে ভীহার পরাজয়ই ঘটে, তাহা হইলে দ্বিতীয় বাঁরে পুনরায় যুদ্ধ-ব্যয়-নির্ব্বীতের জন্য তাহাকে পেশোয়া- সিংহাসনে অধিরূট তাহার ভ্রাতুষ্পুত্র মাধবরাঁওর শরণাপন্ন হইতে হইবে । অথচ মাধবরাও কিন্তু এ যুদ্ধে সম্মতি দান- করেন নাই। অধিকন্তু তিনি পিতৃব্যকে বলিয়াছেন যে, আপনার এই কার্য্যের জন্য আপনি নিজেই দায়ী। মাধব- রাওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তিনি নিজেই নিজব্যয়ে সৈষ্ সংগ্রহ- করিয়া এই যুদ্ধ চালাইতে উদ্যত হইয়াছেন। যুদ্ধের সমস্ত ব্যয়ভার তিনি নিজস্কন্ধেই গ্রহণকরিয়াছেন | অহল্যা- বাইর পক্ষে সমস্ত মহারাষ্ট্রশক্তি ধোগণ্ান করিয্লাছেন,। . সকলে একদিকে, আর তিনি একাকী একদিকে । এ অবস্থায় যুদ্ধ না করাই শ্রেয়ঃ। যুদ্ধ চালাইলে শেষরক্ষা (৪৮০ ) করিতে পারা যাইবে না। ইত্যাদিরূপে অনেকক্ষণ পর্য্যন্ত চারিদিকে চিন্তা করিয়া স্বীয় সৈন্যদদিগকে সিপ্রানদী উত্তীর্ণ হইতে নিষেধকরিলেন। তুকোজীর সাময়িক শাসনবাণী মন্ত্রশক্তির ন্যায় কার্য করিয়া রাঘোবার হৃদয়ের ভাব পরিবর্তন করিয়া দিল। রাঘোবা দৃতমুখে তুকোজীকে জানাইলেন যে, তিনি যুদ্ধ করিবার জন্য এখানে আসেন নাই। মালেরাও পরলোকে গমন করিয়াছেন শুনিয়! পুত্রশোকার্তা অহল্যাবাইকে সান্ত্বনা দিবার জন্য কেবল . তিনি পুণা হইতে ইন্দোর অভিমুখে যাত্রা করিয়াছেন মাত্র । তুকোজা রাও রাঘোবার দুতমুখে এই কথা শুনিয়। দত্তকে বলিলেন, “তোমার প্রভু যদি “মাতুত্রী”কে ( অহল্যাবাইকে ) সান্তনা দিবার জন্যই ইন্দোরে আসিতে- ছেন, তাহা হইলে তীহার সঙ্গে এত সৈন্য-সামন্ত কেন” ? রাঘোবার দূত রাঘোবাকে এই কথা নিবেদন করিলে তিনি তুকোজীর সহিত স্বয়ং সাক্ষাৎ করিয়া তুকোজীর সন্দেহ দুর করাই শ্রেয়ঃকল্প বিবেচনা করিলেন। তিনি কতিপয় সামন্ত ( সর্দার ) ও দুইজন মাত্র দেহরক্ষক সঙ্গে লইয়া তাম্জামে আরোহণকরিয়া তুকোজীর শিবিরে গমন- করিলেন। তুঁকোজী দুর হইতে প্রত্যুদগমন ও যথোচিত অভ্যর্থনা করিয়া তাহার তাম্জামের পার্থে পদব্রজে শিবির- দ্বার পর্য্যন্ত আয়! তাহাকে যথাবিধি তাম্জাম্‌ হইতে নামাইলেন এবং ভূত্যবংশোচিত সন্মান প্রদর্শন করিয়! ( ৪৮১) তাহাকে উচ্চাসনে বসাইলেন এবং নিজে নীচাসনে বিয়া টাহীর আজ্ঞা প্রার্থনাকরিলেন। রাঘোব। বলিলেন, “আমি আমার সমস্ত সৈন্য-সামন্ত উজ্জযিনীতে রাখিয়া কতিপয় মাত্র অবশ্য প্রয়োজনীয় ভূত্য সঙ্গে লইয়া আপনার সহিত ইন্দোরে গিয়া পুত্রশোকার্তী অহল্যাবাইকে সান্বনা দিতে ইচ্ছা করিতেছি” । তৃকোজী বলিলেন, “আপনি আজ্ঞ করিলে এ ভূত্য অদ্যই আপনাকে সঙ্গে লইয়া ইন্দোরে যাইতে প্রস্তুত আছে” । তুকোজী দেই দিনই রাঘোবাকে সঙ্গে লইয়া ইন্দোর অভিমুখে যাত্র। করিলেন । এক দূত অগ্রেই ইন্দোরে শিয়া তাহাদের আগমনবার্তা অহল্যা- বাইকে নিধেদনকরিল। অহল্যাবাই তুকোজীর কার্ধ্য- দক্ষতা অবগত হইয়া মত্য্ত সন্ত্রউ হইলেন। সৈন্য- সামন্তদিগকে ুদ্ধসভ্ভা পরিত্যাগকরিয়া ম্বস্স স্থানে প্রত্যাবর্তন করিতে আদেশ প্রদানকরিলেন | যে নকল রাজা তাহাদের সৈম্াগণকে প্রেরণকরিয়াছিলেন, সেই সকল সৈন্তকে যখোপযুক্ত পারিতোষিক প্রদানকরিয়া স্ব স্ব স্থানে প্রেরণকরিলেন। দৈবকৃপায়, বিনা রক্ত- পাতেই যুদ্ধের সফল ফলিল দেখিয়া ও রাঘোবা করায় হইল দেখিয়া সকলেই আনন্দিত হইল । রাজামধ্যে সর্বত্র আনন্দের ্রোত বহিতে 'লািল। তুকোজীর সহিত রাঘোবা যথাসময়ে ইন্দোরে আসিয় পৌঁছিলেন। তাহার বাসের নিমিত্ত অহল্যাবাই নিজ প্রাসাদের সমীপস্থ ১ (৪৮২ ) একটি বৃহ অট্টালিকা স্ুত্জিত করিয়া! রাখিবার জন্য _আগ্রেইই আদেশ প্রদান করিয়াছিলেন। রাঘোবা তখায় আসিয়। প্রায় মাসাবধি কাল বাসকরিয়াছিলেন। তাহার এতদিন বাসকরিবার একটি রাজনীতিক গুঢ উদ্দেশ্য ছিল। যদি কোন প্রকারে তিনি ইন্দোররাজা-সংক্রান্ত সমস্ত বিষয়ে তাহার হস্তক্ষেপ করিবার অধিকার ব্যব- স্থাপিত করিতে পারেন, তাহা হইলে আপাততঃ তিনি ইন্দোররাজ্যের উপর কর্তৃত্ব করিয়া অভিলষিভ ধন আত্মসাৎ করিতে পারেন। পরে, অহল্যাবাইর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারি-শূন্য ইন্দোররাজ্য তাহার হস্তগত হইতে পারে। কিন্বা যদি কোন প্রকারে অহল্যারাইকে একটি দত্তকপুত্র গ্রহণ করাইতে পারা শ্বায়, এবং এ দত্তকপুত্রের রক্ষণাবেক্ষণের অধিকার যদি তিনি লাভ করিতে পারেন, তাহা হইলে সেই দত্তকপুত্রকে জ্রীড়াপুত্তলী করিয়া তিনি স্বীয় অভিসন্ধি সিদ্ধ করিতে পারেন, কিন্তু এই সকল বিষয় হটাত অহল্যাবাইর নিকটে প্রস্তাবকরিলে বুদ্ধিমতী অহল্যাবাই ভঙ্ক্ষণাত বুঝিতে পারিবেন। সমস্ত উদ্দেশ্য ব্যর্থ হইয়া যাইবে । অতএর একদিনে এই সকল বিষয় উত্থাপন করা রাজনীতি শান্ত্রামুমোদিত নহে। সেইজন্য এই সকল উদ্দেশ নিদ্ধ করিতে অন্ততঃ মাসাবধিকাঁল . এখানে থাকা অতি প্রয়োজনীয় । এইরূপ বিবেচনা করিয়। রাঘোবা প্রায় মাপাবধি কাল ইন্দোরে অবশ্থিতি করিয়া- (৪৮৩ ) ছিলেন। এই এক মাসের মধ্যে “সেবা দেবকের কর্ত] ও নবম” এবং রাজ্য-সংক্রান্ত মনেক বিষয় লইয়া অহল্যা- বাইর সহিত রাঘোবার সাত আট বার ঘোরতর তর্ক-বিতর্ক হইয়াছিল। রাঘোবা, বুদ্ধিমতী শিক্ষিতা অহল্যাবাইর নিকটে এই মকল তর্কে পরাজিত হুইয়াছিলেন। অহল্যা- বাই নবদ্ীপের বাঙ্গালী নৈযায়িকের নিকটে তর্কবনুল ন্যায়- শান্তর পড়িয়াছিলেন কি, না, তাহা এক্ষণে জানিবার কোন উপায়ই নাই। কিন্তু তাহাকে রাজনীতিক তর্কে কেহ ষে, পরাভূত করিতে পারিত না, ইহা বখর-নামক মহারাষ্্রীয় ভাষায় লিখিত ইতিহাস হইতে জানিতে পারা যায় । রাঘোবা অহলাবাইর নিকটে তর্কে পরাভূত হওয়ায় ও তাহার উদ্দেশ্ট সিদ্ধ না হওয়ায় তিনি ইন্দোর ত্যাগকরিয়। পুণায় চলিয়া গেলেন। যাইবার সময়ে তুকোজীকে বন্ু- মূলা বন্ত্র উষ্ভীষ ও আভরণাদি বন পারিতোধিক প্রদান- করিয়াছিলেন। গঙ্গাধর যশোবস্ত অহল্যাবাইর চরণে সাষটাঙ্গ প্রণিপাতপূর্বক নিজকৃত মহাপরাধের জন্য অনুতপ্ত চিত্তে বালকের ন্যায় ক্রন্দনকরিয়া শত বার ক্ষমা প্রার্থনাকরিতে লাগিলেন। তাহাকে অত্যন্ত অনুতপ্ত দেখিয়া ন্েহদয়উচিত্তা অহল্যাবাই তাহাকে ক্ষমাকরিয়া- ছিলেন এবং পরে তাহাকে পুনরায় স্বপদে প্রতিষিত . করিয়াছিলেন | গুন! যায় যে, গঙ্গাধর যশোবন্ত নিজের' অকৃতজ্ঞতা। ও বিরুদ্ধাচরণ স্মরণকরিয়। মধ্যে মধ্যে এতই ১ অনুতপ্ত হইতেন যে, রাজকার্য করিতে করিতে সময়ে সময়ে তাহার নয়নযুগল হইতে অশ্রাধার বিনির্গত হইত। সেই অনুষ্পের ফলে ভীহার সংসারে বৈরাগ্য জন্মিয়া- ডিল, এবং অবশেষে তিনি প্রধান মন্ত্রিত্ব ত্যাগকরিয়া গৃহস্থাশ্রম পরিত্যাগপুর্ব্বক সন্ন্যাস-আাশ্রম গ্রহণকরিয়া- ডিলেন। অহল্যাবাই সৈম্যাধাক্ষ তুকোজীকে প্রধান দৌত্যপদ প্রদানকরিয়া পুণায় পেশোয়া-দরবারে থাকিতে আদেশ করিলেন। বুদ্ধিমতী অহল্যাবাই ইহা উত্তমরূপে বুঝিয়াছিলেন যে, তুকোজীর ন্যায় বুদ্ধিমান শক্তিমান রাজনীতি-চতুর ব্যক্তিই পেশোয়া-দরবারের ,মত দরবারে থাকিয়া সকল বিষয়ে তীক্ষু দৃষ্টি রাখিতে একমাত্র সমর্থ । তুকোজীর এক কথায় রাঘোনার হৃদয়ে ভীতি সঞ্চার হওয়ায় যুদ্ধ আরব্ধ হয় নাই এবং ধরাতল অনর্থক নর- শোণিত-ক্রোতে প্লাবিত হয় নাই । *« বিনা রক্তপাতে ইন্দোররাজ্যে পুনরায় শান্তি স্থাপিত হইল । তুকোজী পুণায় গিয়া পেশোয়াদরবারে অহল্যা- বাইর প্রধানদূতরূপে নিযুক্ত হইলে অংল্যাবাই, বিপদে উপকারক গাইকোয়াড়, সিদ্ধিয়া ও ভোন্সল! প্রভৃতি স্বাধীন মহারা্রীয় নরপতিদিগকে ইন্দোরে নিমন্ত্রকরিয়া মহাসমাদর ও যত্তের স্িত ভোজন করাইয়াছিলেন এবং (ভোজনাস্তে তাহাদিগকে মূল্যবান বন উত্তরীয়, উ্ধীষ ও নানাবিধ রত্বালঙ্কার প্রদানকরিয়া কৃতজ্ঞতা , মিত্রতা ও (৪৮৫ ) সন্ভাব-সুচক বচনে সবিনয় নিবেদন করিলেন, “আপনারা আমাকে বিপদে সাহায্য করিয়া যেরূপ হৃদয়ের মহত্ব ও দয়া-দাক্ষিণ্য প্রদর্শনকরিয়াছেন, তাহা আমি কোন ভাষার দ্বারা বর্ণনা করিতে নিতান্ত অক্ষম, জানিবেন। আমি আপনাদের নিকটে আজীবন কৃতজ্ঞতাপাশে বদ্ধ রহিলাম। আপনাদের দয়ার তুলনা নাই। আমি ও আমার পরবর্তী উত্তরাধিকারিগণ আপনাদের নিকটে চিরকাল খালী রহিল, জানিবেন।” নৃপতিগণ অহল্যাবাইর আদর যত্ব ও সদ্াবহারে পরম আপ্যায়িত হইয়' স্ব স্ব রাজধানীতে * চলিয়া গেলেন। যখন অহল্যাবাই পুত্র- শোকে শষ্যাগত হইয়া মৃতপ্রায় হইয়/ছিলেন, তখন গঙ্গাধর যশোবন্ত ও রাঘোঁবা পেশোয়া তাহার অন্য আর একটি ভয়ঙ্কর বিপদ ঘটাইয়! তাহার মুতপ্রায় শরীরে খড়গ- প্রহারব অমানুষিক বা পৈশাচিক বাবহার করিয়াছিলেন। সেই বিপদের উপর বিপদে পড়িয়া অহল্যাবাই ঘেরূপ ধৈর্যা, সাহস, কর্তৃব/জ্ঞান, রাজনীতিশাস্ত্রে দক্ষতা, এবং মানসিক ও শারীরিক বলের পরিচয় প্রদান করিয়াছিলেন, তাহা গুনিয়। উদয়পুর যোধপুর জয়পুর প্রভৃতি দেশের স্বাধীন নরপতিগণ বিস্মিত হইয়৷ তাহার বহু প্রশংসা করিয়াছিলেন, এবং তিনি এই হৃদয়বিদারক পুত্রশোকের : সময়ে বুদ্ধিবলে পূর্ব্বোস্তি বিপদ হইতে শীঘ্র উত্তীর্ণ" হওয়াতে তীহারা সহানুভূতি ও আনন্দ প্রকাশ করিয়া (৪৮৬ ) ও তাহার ভূয়সী প্রশংসা! করিয়া তীহার সহিত মিত্রতা- লাভের জদ্য ত্রাহীর নিকটে বন্ুমুূল্য উপহারসকল প্রেরণ- করিয়াছিলেন । অহল্যাবাই তাহাদিগকে সহত্্র ধন্যবাদ প্রদান করিয়া তাহাদের নিকটে প্রত্যুপহার প্রেরণকরিয়া- ছিলেন ও তাহাদের সহিত মিত্রতা-বন্ধনে বদ্ধ হইয়া তাহা- দিগের সম্মানরক্ষা করিয়াছিলেন। তুঁকোজী, পেশোয়া- দরবারে অহল্যাবাইর প্রধান দূত হইয়া যখন পুণায় গমন- করিয়াছিলেন, সেই সময়ে অহল্যাবাই নারোগণেশ নারায়ণগণেশ ) ও শিবাজীগোপাল-নামক দুই জন অতি বিশ্বস্ত কর্মচারীকে তাহার সহিত তথাম পাঠাইয়া ছিলেন। তাহারা তিন জন পেশোয়া-দরবারে উপস্থিত হইলে মাধব রাও পেশোয়া, তাহাদিগকে উপযুক্ত স্থানে ব্িতে আদেশ দিয়! অহল্যাবাইর ও তুঁকোজীর প্রশংসায় রাজনতা৷ প্রতিধবনিত করিয়াছিলেন" পেশোয়ার পক্ষ হইতে মহারাণী অহল্যাবাইর দরবারে একজন বিশ্বস্ত রাজনীতিজ্ঞ দূত রাখিবার প্রস্তাব উপস্থিত হইলে মাধব রাও বলিলেন, “মামার দরবারের কোন লোক তথায় নিযুক্ত হইলে তাহার মতের ও মনের সহিত তোমাদের মতের ও মনের একা সংসাধিত হইতে বহুদিন লাগিবে। অত এব আমার ইচ্ছা এই যে, মহারাণীর নিজের দরবারের একজন বিশ্বস্ত রাজনীতিজ্ঞ লোক তথায় আমার দূতরূপে নিযুক্ত হইলে আমি তাহাকে নিয়োগপত্র গ যথোপযুক্ত মাসিক বেতন প্রদানকরিব। ইন্দোরের লোক ইন্দোরে থাকিয়া পেশোয়া-দরবারের কার্ধ্য করিলে তাহার যথেষ্ট স্থুবিধ! ও পরম লাভ হইবে । মহারাণী যাহাকে মনোনীত করিবেন, তাহাকেই আমি আমার দৃতরূপে তথায় নিযুক্ত করিব। অহল্যাবাইর ইচ্ছামুসারে নারোজীগণেশ এই পদে নিহুক্ত হইয়াছিলেন। অহল্যাবাই প্রতিদিন রাজোচিত বেশ পরিধানকরিয়া রাজন্িংহাসনে বগিয়া দরবার করিতেন। তীহার শ্বশুরের ও পুত্রের মৃত্যুর পর রাজোর সকল বিভাগের সমস্ত কার্য্য- তার তাহার হস্তে পতিত হওয়ায় পূর্ববাপেক্ষা তাহার পরিশ্রম অত্যন্ত বাড়িয়া গিয়াছিল। তিনি অকাতরে সেই সমস্ত ভার বহনকরিয়া নির্বিবিস্বে রাজকার্ধ্য সম্পাদন-. করিতেন। ততকালে তীহাকে সর্ববপ্রধান বিচারালয়ের সর্ববপ্রধান বিচারকের কাধ্য করিতে হইত। মহারাণী 'অহল্যাবাই প্রাণদণ্ডের বিচার হইতে আরম্ত করিয়া ক্ষুদ্র ক্ষুত্র অপরাধের বিগার পর্যান্ত করিহেন। তাহার কোন প্রজা দরিদ্রতম হইলেও তীহার সম্মুখে আসিয়া নিজের অভাব-অভিযোগ জ্ঞাপনকরিতে পারিত এবং উহা জ্ঞাপন- করিলে তিনি পুষ্থানুপুথনুরূপে অনুসন্ধান লইয়া : উহা সুবিচার করিতেন। তুচ্ছ ও গুরুতর সকল বিষয়েই.তিনি, সমভাবে বিচার করিতেন? তিনি স্বকর্ণে প্রজার আরেদন শুনিতেন। *ন্যান্ত বিচারকগণ-যে সকল রিচার করিতেন, (৪৮৮ ) তিনি সেই সকল বিচারের দোষ-গুণ স্বয়ং পরীক্ষা করিতেন। তাহার রাজকার্ধ্য-সম্পাদনের অসাধারণ ক্ষমতা শ্রবণ করিলে বিস্মিত হইতে হয়। মালব ও মধ্য-ভারতের ইতিহাসপ্রণেত। স্তার্‌ জন্‌ ম্যাল্কম্‌ সাহেব একস্থলে এইরূপ লিখিয়াছেন যে, “হোল্কর্বংশীয় ব্যক্তিগণের নিকটে অহল্যাবাইর সম্বন্ধে কিছু জিজ্ঞাসা করিলে পাছে তাহারা অহল্যাবাইর পক্ষপাতী হইয়া তাহার অতিরিক্ত প্রশংসা করেন, এবং অতিরিক্ত প্রশংসায় পাছে এঁতিহাঁসিক তন্তের সত্যতার হানি হয়, এই বিবেচনায় আমি তাহার নিঃসম্পর্ক পক্ষপাতশুন্ বাক্তিগণের নিকট হইতে তাহার ইতিবৃত্ত সংগ্রহকরিতে চেষ্টা করিয়াচি। তাহার বিষয় যতই অনুসন্ধান করিয়াছি ততই'আমার বিস্ময় ও তীহার প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও সম্মান বদ্ধিত হইয়াছে” । অহল্যা- বাই শ্বহস্তে রাজাভার গ্রহণের পরই রাজোর সমগ্র কৃষি- ক্ষেত্রের পরিমাণ গ্রহণ করাইয়াছিলেন। ক্ষেত্রের পুনঃ- পরিমাণ-নিরূপণ করিতে গেলেই সাধারণতঃ সর্বত্রই পুর্ববাপেক্ষা পরিমাণের বৃদ্ধিই সম্পাদিত হইয়া পড়ে। ইহাতে ভূস্বামিগণেরই যথেষ্ট লাভ-ুদ্ধি হইয়া থাকে। এই পরিমাণ-নিরূপণচ্ছলে অনেক ভূম্বামী প্রজাদিগকে ছলে বলে কৌশলে প্রবঞ্চিত করিয়া নিজ নিজ বাধিক মায়ের পথ স্ুপ্রশস্ত করেন। কিন্তু অহল্যাবাই এইরূপ কার্য দ্বারা প্রজাদিগকে বঞ্চিত না করিয়! তাছাদের স্থৃখ- ( ৪৮৯ ) শান্তি বদ্ধিত করিয়া দিরাছিলেন। তাহাদের কোন ক্ষতি, করেন নাই। তাহার শ্বশুরের, সময় হইতে যেঃ যেরূপ প্রজাম্বত্ব উপভোগ করিয়া আসিতেছিল, তিনি তাহাকে সেস্বত্বে বঞ্চিত করেন নাই। এবং সেই স্বন্বের উপর ূর্ববাপেক্ষা অতিরিক্ত কর দিবার জন্য তাহাদিগকে বাধা করেন নাই । অহল্যাবাইর রাজত্বকালে প্রজাগণ পরম সুখ-শান্তিতে কালযাপন করিত। তিনি প্রজাগণকে এতই ভাল বাসিতেন যে, প্রজা হুষই হউক আর শিষ্ট হউক, তাহার নিকট দুইজনই স্সেহের ও দয়ার পাত্র ছিল। উচ্চতম বিচারালয়ে বিচারকরিয়া কোন মপরাধীর প্রতি প্রাণদণ্ডের আজ্ঞ! প্রদানের সময় অহল্যাবাই ধিচারাসনে বসিয়া সর্ববসমক্ষে এই কথা বলিতেন, যে, “ঈশ্বরের স্থ্ট অন্য কোন মানুষকে বধকরিবার পুর্বেব পুঙ্ানুপুঙ্মরূপে বিশেষভাবে তাহার অপরাধের বিচারকরিয়া ও দণ্ড নীতি-শটান্ত্রর মন্্মার্থ বিশেষভাবে চিন্তা করিয়া তাহাকে বধকরাই মরণশীল মানবের একান্ত উচিত কার্ধ্য”। সাধারণতঃ মহিলাজ্াতির মধ্যে অনেকেই আলস্তা, ওদাস্য, তানুলাদিচর্বধণ, “তাস্‌” ও “দশ পঁচিশ” প্রভৃতি ক্রীড়া, নিদ্রা, তন্দ্রা, পরনিন্দা, পরগ্নীনি, পরচ্চ। বন্ত্রালঙ্কারচর্চা, নাটক-“লভেল”-পাঠ, শিশু ুত্র-কম্তারা রোদনকরিলেই তাহাদিগকে প্রহার, এবং ননদ, যা, শব, শ্বশুর, দেবর ও ভাস্কর প্রন্ভৃতি একাল্নবনথী লোকদিগের সহিত বিবাদ- ( ৪৯০ ) ধবিসম্বাদেই অনেক সময় বৃথ! নষ্ট করেন। ধাহাদের পারিবারিক অবস্থা মন্দ, ধাহাদের দাস-দাসী নাই, তাহারা প্রাতঃকাল হইতে সমস্থ গৃহকর্ট্ের পর মধ্যাহ্ছে ভোজনাদি কার্য্য সমাপ্ত করিয়া অপরাহ্নে একটু নিদ্রা! যান্‌। তারপর উত্থিত হইয়া পুনরায় অদ্ধরাত্রি পর্যান্ত গৃহকর্ম্ে নিযুক্ত থাকিয়া ভোজনান্তে ক্রান্ত-শ্রান্ত হইয়া নিদ্রামগ্ন হয়েন। পুনরায় প্রত্যুষে শধ্যাত্যাগ করিয়া পূর্বববৎ গৃহকর্শে নিযুক্ত হইয়া থাকেন। তাহার! ঈশ্বরোপাসনার সময়ও , পান্‌ না। রন্ধন, ভোজন, গৃহমার্ডন, ও ভোজনপাত্র ধৌত কর! প্রভৃতি কার্যের জন্যই যেন তাহারা এ ঠগতে জন্ম- গ্রহণ করিয়াছেন। স্থতরাং তাহাদের বিষয়' আলোচ না, করা নিশ্প্রয়োজন। কিন্তু হারা এশ্বর্য্যের অভিমান করেন, ধাহাদ্রের যথেষ্ট দাস-দাসী আছে, পাচক-পাচিকা আছে, যাহারিগকে গৃহের কোন কর্ম করিতে হয় না, তাহারা কেবল তোজনে, পানে, উত্তম উত্তম বেশভূষা- পরিধানে, আলম্তে, নিদ্রায়, সদা শয়নে) ও নিষ্কম্ম উপ- বেশনে শরীরের মেদ বৃদ্ধিকরিয়৷ নিজেরাই ইচ্ছাপূর্ববক নিজেদের বাতব্যাধি উৎপাদনকরেন ও কষ্ট পাইয়া _ থাকেন। অহল্যাবাই কিন্ত্ব এই শ্রেণীর মহিলা ছিলেন 'না। তিনি একটা স্বাধীন রাজ্যের অধীশ্বরী ছিলেন। 'উাহার এশ্বর্োর মত এই্বর্যের ভোগ এ জগতে অতি অল্প মহিলার ভাগ্যেই ঘটিয়াছে। কিন্তু তিনি ঈদৃশ 'শ্বর্যযের ( ৪৯১ ) অধীশ্বরী হইয়াও পূর্বের্বাক্ত এশ্বরযাভিমানিনী মহিলাগণের, ্যখুয় সদা পান-ভোজনে বেশ-ভৃষা-পরিধানে। শ্বয়নে ও নিষ্দ্ উপবেশনে অমূল্য সময় বৃথা নষ্ট কপ্সিতেন না। তাহার দৈনন্দিন কার্যের নিয়মাবলী ছিল। তিনি সেই নিয়মের সহিত প্রাত্যহিক কার্য্য সম্পাদনকরিতেন। তিনি কখনই নির্দিষ্ট সময় উল্লঙ্ঘন করিয়া কোন কার্ধ্য করিতেন না। তিনি অতি প্রত্যুষে শধ্যাত্যাগ করিয়া প্রাতঃকৃত্য, স্নান সন্ধ্যা, পুজ| ও স্তবপাঠের পর কোন দিন রামায়ণের কয়েক অধ্যায়, কোন দিন শ্রীমন্তাগবতের, কোন দিন শরীমন্তগদ্বগীতার ও কোন দিন মহাভারতের কয়েক অধ্যায় স্বয়ং পাঠকুরিতেন। কোন কোন দিন নিত্যপুরাণ- "পাঠক ব্রাক্মণ যেখানে » বসিয়া পাঠকরিতেন, সেখানে গিয়াও কিয়ৎক্ষণ তীহার পুরাণপাঠ শুনিতেন এবং রাজবাটীর অন্যান্য" মহিলাদিগকে এই সকল ধব্দগ্রম্থের অর্থ বুঝাইয়া দ্দিতেন। তৎপরে রাজবাটার দ্রারদেশে সমাগত ভিক্ষুকগণকে স্বহস্তে ভিক্ষা প্রদানকরিয়! প্রতিদিন নিদ্দিষটসংখ্যক নিমন্ত্রত ব্রাহ্মণগণকে ভোজন- করাইয়া স্বয়ং ভোজনকরিতেন। তাহার ভোজন বিষয়ে রাজোচিত কোন আড়ম্বর ছিল না। বিধবা হইবাঁর পর তিনি কোন উত্তম, মিউদ্রধ্য ভক্ষণকরেন নাই, এইরূপ শুনিতে পাওয়া যায়। বৈধব্যদশায় শয়ন, অশন, বন, ও তৃষরাদি সম্বন্ধে শাস্ত্রে যে সকল কঠোর ব্রহ্চর্য/- ( ৪৭২ ) বিধি আছে, তিনি সম্যকরূপে সেই সকল বিধি পালন- 'করিতেন। ভোজনের পর নির্দিষ্ট রাজকীয় কাধ্যালয়ে গিয়া সায়ংকাল পর্যন্ত রাজকার্ধ্য সম্পন্ন করিতেন। তৎপরে হস্তপদাদি প্রক্ষালনপূর্ববক পটবন্ত্র পরিধান- করিয়া সায়ংসন্ধ্যা-বন্দনা ও স্তোত্রপাঠাদি সমাপ্ত করিতেন ও পুনরায় রাজকাধা করিতে বসিতেন। প্রায় রাত্রি দ্িপ্রহর পর্য্যন্ত রাজকার্যা করিয়া কিঞ্চিৎ ছুগ্ধপান ও ফলভক্ষণের পর দাসীগণ ভূমিতে শয্যা পাতিয়া দিলে তাহার উপর শয়ন করিতেন। বৈধবে)র পর তিনি লাঙ্কোপরি শয়ন করিতেন না। ইহাও বেধব্যদশায় রঙ্গচধ্যের অন্যতম অবশ্য পালনীয় কঠোর বিধি। তিনি বৈধবাদশায় মস্তকে কেশ উদগত হইলেই মুগ্ডনকরিয়া ফে লতেন। দাক্ষিণাত্যপ্রদেশে বিধবারা মস্তকে কেশ রক্ষা করেন না। বঙগদেশেও. দাক্ষিণাত্য বৈদিক ক্রাঙ্মাণ- কুলের বিধবা মহিলাগণ মস্তকে কেশ রক্ষা করেন না। অহল্যাবাইর পূর্বেবাক্ত দৈনন্দিন কার্যযাবলীতে কখনও আলল্য.ব৷ ওঁদাস্য ছিল না। তীহার দৈনন্নিন কার্য্যগুলি নিয়মিতরূপে প্রতিপালিত হইত। নিয়মিতরূপে দৈনন্দিন কাধ্ধযানুষ্টানের রীতি ইউরোপীয় নর-নারীর মধ্যে প্রায় দৃষ্ট হইয়া থাকে। অধুনা ভারতের নর-নারীগণের মধ্যে এই- রূপ রীতি নাই ধলিলেই চলে। কিন্তু ূর্বকালে ছিল? এক্ষণে বৃটিশ রাজত্বকালে যেরূপ মহাস্মখন্বচ্ছন্দে ভারতের (৪৯৩ ) নর-নারী বাস করিতেছেন, তাহা অপক্ষপাতে সম্টক্‌ উঠ্ীলব্ধিকরিয়া এই রাজত্বকে রামরাজত্ব বলিলেও*অতুযুক্তি ব! চাটুবাক্য হয় না। কারণ, এক্ষণে কোন প্রবল ুর্ববলকে বধকরিয়া জেলাকোটের বিচারে নিষ্কৃতি পাইলেও হাই- কোটের ব্যয়সাধ্য মহাসুন্মন স্থৃবিচারে বধের উপযুক্ত দণ্ড- লাভ করিয়! থাকে । কিম্বা জেলাকোটের বিচারে কোন নির্দোষ বাক্তি প্রাণদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত হইয়। হাইকোর্টে আগীল্‌ করিলে হাইকোটের মহাপ্রশংসনীয় সুন্গন স্ুবিচারে সে ব্যক্তি একেবারে নিষ্কৃতিলাভ করে, কিন্ব! যাবজ্জীবন বা নিন্দিষ্ট কয়েক বতসর পর্যান্ত দ্বীপান্তর-বাসের আদেশ প্রাপ্ত হইয়া, থাকে । দৈণিক ইংরাজি সংবাদপত্রপাঠে “প্রায় নিত্যই এইরূপ ঘটনা অবগত হওয়া যায়। আবার এহেন উত্তম হাইকোটের বিচারে কোন ব্যক্তির প্রকৃত রূপে কাধ্যসিদ্ধি না হইলে সর্ববপ্রধান বুটিশরাজধানী লগুন-মহানগরীর “প্রিভি কাউন্সিল্‌”-নামক উচ্চতম উত্তমোত্তম বিচারালয়ের সর্বেবোত্তম সুষ্ষন স্মবিচারে স্রফল ফলিয়া থাকে । প্রকৃত দোষী দণ্ড পায়, ও প্রকৃত নির্দোষ নিষ্কৃতি পাইয়া থাকে। খাঁহারা তারতের “পুলিশ্‌”- শাসনের নিন্দ। না করিয়া জলপান করেন না, তাহারাও শপথ করিলে ইহা বলিতে বাধাঁ হইবেন যে, ভারতীয়, পুলিশের কঠোর শাসন না থাকিলে “গ€1৮ ও “্বদ্মাস্‌” নামক দুবৃর্তগণের দৌরাঝ্য্ে কিচ্থা অনিষ্টচেষ্টক ছদ্যবেশী ৪২ ( ৪৯৪ ) ভদ্রের উত্পীড়নে এতদিন বাস করা অসম্ভব হইত । পুলিশ বা গুপ্তঙরবিভাগীয় সুদক্ষ কন্্মচারীর বিস্ময়জনক, শিক্ষা প্র, ওৎস্থক্যবদ্ধক অনুসন্ধানপদ্ধতির প্রভাবে দোষী ব্যক্তি ধৃত হইয়! হাইকোর্টের স্ৃবিচারে দগুপ্রাপ্ত হইয়া থাকে । ক্ষচিগ কোন পুলিশ-কর্ম্মচারী ভ্রমবশতঃ কোন নির্দোষ ব্যক্তিকে ধরিয়া অভিযুক্ত করিলে এ অভিযুক্ত ব্যক্তি স্থুবিচারকের সুন্মম স্ৃবিচারে নিক্কৃতিলাভ করিলেও, সাধারণতঃ পুলিশকে দৌষ দেওয়া কখনই উচিত নয়। ব্যক্তিবিশেষের দোষে সমগ্র বিভাগটা দোষাস্পদ হইতে পারে না& পৃথিবীতে ভাল মন্দ লোক সকল বিভাগেই আছে ।* যে সময়ে মোগলগাত্রাজ্য ধ্বংসোম্মুখ হইয়াছিল, সেই সময়ে ভারতের সর্বত্রই যেরূপ অশান্তি ও অরাজকতা বদ্ধিত হইয়াছিল, এমন কি, মোগলসাত্্রজ্যের পুর্ণ উন্নতির সময়েও, দিল্লী হইতে স্ত্দূর দেশে যেরূপ অশান্তি ও বিশৃঙ্খল শাসন- পদ্ধতি ছিল, তাহা। একবার চিন্ত। করিলে সমপ্রাণ সম- বেদন ব্যক্তির হৃশুকম্প উপশ্থিত হয় নাকি? উহার একটা চিত্র মনে অস্কিত করিয়া লইলে আধুনিক ভারতীয় পুলিশের দোষদর্শী ব্যক্তিকে সত্যের অনুরোধে বাধ্য হইয়া ইহা বলিতে হইবে যে, আধুনিক শাসনপদ্ধতি বা বিছ্বারপদ্ধতি বাদসুহী সকল শাসনপদ্ধতি ও সকল বিচার- 'পন্ধতি অপেক্ষা কোটি কোটি গুণে শ্রেষ্ঠ। সেই জন্যই রামক্জত্বের সহিত বৃটিশরাজত্বের তুলনা দেওয়া হইয়া (৪৯৫ ) খাকে । ষাঁহারা ইহা অস্বীকার করেন, তাহার! প্রকারান্তরে, রাঁজদ্রোহী ব| অকৃতজ্ঞ বা কৃতদ্ব, কিন্ব৷ তাহাদের রাজকীয় অনুগ্রহলাভের ক্ষুধা এতই প্রবল যে, তহারা ক্ষুধার জ্বালায় অস্থিয় হইয়া দুষ্ট কাঙ্গালের ম্যায় চিতকার করিয়া দাতার প্রতি কটুবাক্য-বাণ বর্ণকরেন। যিনি ঈদৃশ সত্যকথনকে ইংরাজের চাটুবাদ বলিয়া মনে করেন, তিনি কৃতত্ব না ভ্রান্ত কিন্বা নীচচেতাঃ। চিগুকার করিয়া ভিক্ষা করিলে কিন্থা কটুক্তি বর্ষণকরিলে উন্নতির দ্বার উন্মুক্ত হয় না। নিজের চরণের উপর ভর দিয় ঈড়াইতে না পারিলে স্বীগ্নু অভীষ্ট পথে কেহ অগ্র্র হইতে পারে না। “আমি খঞ্জধ্ক্তি। আমাকে গাড়ী দাও, পা্থী দাও? বলিয়া উচ্চৈঃম্বরে ভিক্ষা করিলে বা উন্মস্তের ন্যায় প্রলাপ বকিলে কেহ গাড়ী পান্কী দিবে না। কিম্বা “ঘোড়৷ দিলায়দে রাম্‌,” বলিয়া ঘোড়। প্রার্থনা করিলে রাম সদয় হইয়া ঘোড়। দিলেও বিচিত্র ঘটনাচক্র বশতঃ সেই ঘোড়! উল্টে যদি বহনীয় হইয়া উঠে, তাহা! হইলে “উল্ট! বুক্লি রাম”, এই কথ বলিয়! রামকে দোষ দেওয়া কি ভাল? অহল্যাবাই যে সময়ে রাজত্ব করিতেছিলেন, সে সমগ্র একটি স্ত্রীলোকের পক্ষে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করা যে, কিরূপ কঠিন কার্ধ্য ছিল, তাহা ইতিহাঁসপাঠকের নিকটে অবিদিত নহে। তখন ভারতের সর্বত্রই রাজা মহারাজা ও জমিদারগ্রণ পরস্পরের স্বাধীনতারক্ষার নিমিত্ত পরস্পর (৪৯৮ ) করিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইল। ভীল-উপদ্রব তিরোছিত হইল।' উপজ্রত প্রদেশে অচিরে শাস্তি স্থাপিত হইল। তীলদিগের এই এক নিয়ম ছিল যে, তাহাদের অধিকৃত প্রদেশের মধ্য দিয়া অন্য রাজোর লোক সকল গমনাগমন করিলেই তাহার! ইহাদের নিকট হইতে কিঞ্ি কিঞ্চিৎ কর আদীয় করিত। এই করের নাম “ভীলকড়ি” | স্থানভেদে এই “ভীলকড়ি”র পরিমাণ ভিম্নভিন্নরূপ ছিল। একটি বুষ যত পরিমাণ জিনিষ বহিয়! লইয়া যাইতে পারে, এ পরিমাণ জিনিষের উপর জাধ্‌ পয়স।৷ কর নির্দিষ্ট ছিল। অহল্যাবাই তাহাদিগের পুরুষামুক্রমে প্রচলিত এই কর-আদায়-পদ্ধতির উচ্ছেদ সাধন না করায় তাহারা তাহার প্রতি বড়ই সন্তুষ্ট হইয়াছিল। তিনি তাহাদিগকে দন্থ্যবৃত্তি পরিত্যাগকরিয়া কৃষিকার্ধ্য ও বাবসায় দ্বারা জীবিকা নির্ববাহকরিতে উপদেশ দিয়া- ছিলেন। প্রত্যেক ভীল সর্দীরকে তীহার রাজ্যের প্রজা পথিকগণের ধন-প্রাণ রক্ষার্থ দায়ী হইতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করিয়াছিলেন। অহল্যাবাইর রাজ্যে পরম স্তুখ-শান্তি ও উত্কৃষ্ট শাসননীতির প্রশংসায় আকৃষ্ট হইয়! অনেক ধনবান বণিক নানাম্থান হইতে ইন্দোরে আগিয়া বাদকরায় ইন্দোর, ক্রমশঃ একটি সমৃদ্ধিশালিনী নগরীতে পরিণত 'হইয়াছিল। পূর্বে ইন্দোর একটি সামান্ট পল্লীগ্রাম মাত্র ছিলু। অহল্যাবাইর রাজত্বকাল হইতেই ইহার শ্রীবৃদ্ধি, (৪) হইতে আরম্ত হয়। নাগরিকগণের প্রতি কেহ অত্যাচার করিলে তিনি তাহাকে উপযুক্ত দণ্ড প্রদ্দানকরিতেন।- অত্যাচারী ব্যক্তি অতি উচ্চপদস্থ রাজকর্ম্মচারী হইলেও তিনি কখনই তাহাকে ক্ষমা করিতেন না। একদা রাজ্যের প্রধান সেনাপতি ও প্রধান মন্ত্রী তুকোজী রাজবিধি অনুসারে কোন উত্তরাধিকারি-বিহীন বণিকের প্রচুর সম্পত্তি রাজকোষাগার-ভুক্ত করিতে আদেশ দিয়াছিলেন। এ বণিকের পত্রী পিত্রালয়েই বাঁ করিতেন। এ বণিক্‌- পতী এই মংবাদ অবগত হইয়া অহল্যাবাইর শরণাপন্ন হইলেন এবং তীহাকে স্বীয় অবস্থা জ্ঞাপন করিলেন। মহল্যাবাই সমস্ত বৃত্তান্ত অবগত হইয়! এ বণিক্পত্ীকে অভয় প্রদান করিলেন এবং তাহাকে সম্মানসূচক পরিচ্ছদ প্রদান করিয়া তাহাকে বলিলেন, “আপনি আপনার স্বামীর সম্পত্তি নিরাপদে তোগকরুন এবং জীবনাস্তে যাহাতে উহা কোন ধণ্মকার্যে বায়িত হয়, তাহার ব্যবস্থা করিবেন । আপনার সম্পত্তি লইয়৷ আমার কোষাগার পুর্ণ করিবার প্রয়োজন এখনও উপস্থিত হয় নাই । আমার, কোষা- গারের এখনও এমন দুরবস্থা উপস্থিত হয় নাই যে, আপনার সম্পত্তি লইয়া উহ্থা পুর্ণ করিতে হইবে”। তুকোজীরাওকে এই বগিক্পত্ীর সপ্পাত্তি লইতে চা করিলেন। খগ্ডেরাও-নামক তার রাজস্ব? ৃ একজন, প্রধান কর্মচারী একজন ইজার্দার্কে (৫০০ ) ক্লরিয়াছিলেন বলিয়৷ অহল্যাবাই তাহাকে লিখিয়াছিলেন, “আপনি'ম্মরণ রাখিবেন, যথাসময়ে কর সংগ্রহকর! অপেক্ষা প্রজাগণকে সুখী করাই আপনার প্রধান কার্য । আপনি প্রজাগণকে স্তখী করিতে পারিয়াছেন, ইহা জানিতে পারিলেই আমি অধিকতর সন্তোষ লাভ করিব ।৮ অহল্যা- বাইর রাজ্যের কোন নিঃসন্তান প্রজা মৃত্যুর পূর্বের ্বীয় ধর্মপত্বীকে দত্তকপুত্র-গ্রহণের আদেশ প্রদান না করিয়া মরিয়। গেলে দত্বকপুক্র-গ্রহণের জন্য এ মৃত প্রজার পত্তীকে অহল্যাবাইর নিকটে অনুমতি গ্রহণকরিতে হইত । দত্তক- পৃত্র না লইয়া এঁ প্রজার পত্বী মরিয়া গেলে এ প্রজার সমস্ত সম্পত্তি রাজনীতি অনুসারে রাজকোষাগারভুত্ত হইত। অহুল্যাবাই কিন্তু এই বিধি অনুসারে কার্যা করিতে ইচ্ছুক হইতেন না। তিনি বলিলেন, “যে ব্যক্তি বু কষে অর্থ উপার্জনকরিয়া উত্তরাধিকারি-বিহীন হইয়া মরিয়া যায়, তাহার উপাজ্ডিত সম্পত্তির রক্ষার নিমিত্ত দত্তকপুত্র গ্রহণকরাই তাহার স্ত্রীর পক্ষে উচিত কাধ্য । যদি তাহার স্ত্রী দত্তকুপুত্র গ্রহণ না করে, তাহা হইলে ধর্্ার্থে তাহার স্বামীর কফটোপার্জিত অর্থের সদায় হওয়াই উচিত। ধর্মার্থে এ অর্থের সদ্বায় হইলে এঁহিক ও পারত্রিক' এই 'উভয়বিধ,কল্যাণই সাধিত হইতে পারে”। একদা তাহার রাজ্যের অধিবাসী 'এক নিঃসন্তান ধনবান বণিক্‌, স্ত্রীকে দত্তকপত্র-গ্রহণের অনুমতি দিয়া.পরলোক প্রাপ্ত হইয়া- (৫৯) ছিল। তাহার স্ত্রী, স্বামীর আদেশ অনুসারে দত্তকপুত্র গ্রহণ করিয়াছিল। কিন্তু অহল্যাবাইর এক উচ্চপদস্থ রাজকন্ম্নচারী এ বণিকৃপত্বীকে এই বলিয়া ভয় দেখাইয়া ছিলেন যে, যদি তুমি তিন লক্ষ টাকা উৎকোচ প্রদান না কর, তাহা হইলে তোমার সমস্ত সম্পত্তি রাজকোধাগারভুক্ত হইবে। আর তোমার এই দক্তকপুপ্র-গ্রহণ অসিদ্ধ করিয়া দিব। নিরুপায়া বিপন্না বণিকৃপত্বী সেই দত্তক পুত্রকে সঙ্গে লইয়া অহলাবাইর শরণাগত হইলেন, ও সেই কর্মম- চারীর উৎ্গীড়নের কথা তীহাকে নিবেদনকরিলেন। অহল্যাই সে কর্মচারীকে ততক্ষণাত কর্ম্চ্যুত করিলেন, এবং বণিকৃপত্বীর সেই দত্তক পুন্রটিকে ক্রোড়ে লইয়৷ মাতৃবত আদর করিতে লাঁগিলেন। আদর করিবার সময় তাহার নয়নযুগল মস্রুপূর্ণ হইল। বণিক্পত্বী রাজার এইরূপ দয়া-স্সেহ-দর্শনে আনন্দে পুলকিত হইলেন এবং তাহারও নেত্রদ্বয় হইতে আনন্দাশ্রুধারা নির্গত হইতে লাগিল। অহল্যাবাই সেই বালককে বন্ুমূল্য জরীর জামা, পাজামা, টুপী ও হার-বলয়াদি স্থৃবর্ণালঙ্কারে, ভূষিত করিয়া তাহাকে ও তাহার মাতাকে হ্থন্দর হৃপজ্জিত বন্ছমূল্য শিবিকায় আরোহণকরাইয়৷ গৃহে প্রেরণ করিলেন। এ বণিকৃপত্বী অহল্যাবাইকে অনেক মুলা- বান্‌ উপঢৌকন দিতে উদ্যত হইলে তিনি তাহা গ্রহণ করেন নাই। তিগি বলিয়াছিলেন যে, অগ্য কোন অবদর হুইলে ( ৫০২ ) তিনি উহ! লইতে পারিতেন, কিন্তু এরূপ অবস্থায় তিনি উপটৌকন-গ্রহণে অক্ষম। এ বালক কোন এক সম্মান্দিত ধনী বণিকের দত্তকপুত্র বলিয়া তাহার সম্মানার্থ তিনি তাহাকে এ শিবিকাটি প্রদান করিয়াছিলেন । তৎকালে ভারতে অনেক রাজার রাজো উচ্চমট্রালিকানির্্মাণ, শিবিকারোহণ, ও গৃহে ঝ দেবালয়ে প্রহরে প্রহরে নহবত- বাদ্য প্রভৃতি প্রজার পক্ষে নিষিদ্ধ ছিল। এখনও কোন কোন স্বাধীন রাজার দুর্গমধাস্থিত প্রাসাদের স্বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গনে রৌদ্র বা বৃষ্টির সময়েও ছত্র ব্যবহারকরা (প্রজার পক্ষে নিষিদ্ধ। রাজার বাড়ীর ভিতরে অন্য বাক্তি হৃত্র ব্যবহার করিলে রাজার একছত্রত্বের ব্যাঘাত হয়, মানহানি হয়। স্বৃতরাং কর্মমচারীদিগকে বাধা হহঁয়া রৌদ্রে পুড়িতে হয়: এবং বৃষ্টিতে ভিজিতে হয়। অহল্যাবাইর রাজো এইরূপ অদ্ভুত নিয়মের বন্ধনে বদ্ধ হইয়! প্রজাণকে কখনও ক ভোগ করিতে হইত না। তাহার রাজ্যের কোন প্রজ্জা উচ্চ উত্তম অট্রালিকা নির্মাণ করিয়াছে, কিন্ব। কোন প্রজা বন্ধ অর্থ উপার্জন করে ও উত্তম যান-বাহনে আরোহণকরিয়া থাকে, এই কথা শুনিলে অহল্যাবাই ' অত্যন্ত আনন্দিত হইতেন এবং এইরূপ ধনী ও সম্মানিত প্রজা তীহার রাজ্যে বাদ করে, বলিয়। তিনি নিজেকে অত্যন্ত সৌভাগাবতী বলিয়া বিবেচনা করিতেন। তণগুকালে অনেক রাজার রাজ্যে প্রজারু পক্ষে প্রভূত অর্থ সঞ্চিত করা৷ মহাবিপজ্জনক ছিল। ( ৫০৩) রাজার ভয়ে প্রজার! প্রভৃত অর্থ সঞ্চিত করিয়া ভূগর্ডে* প্রোথিত করিয়া রাখিত। অনেক রাজা প্রজার প্রভূত অর্থ-সঞ্চয়ের সংবাদ অবগত হইয়া লুটন করিয়। লইতেন,। একদা অহল্যাবাইর রাজ্যের প্রজা নিঃসন্তান ধনবান দুই ভ্রাতা প্রভূত সম্পত্তি রাখিয়া পরলোক গমনকরিলে তাহাদের বিধব| পতী ছ্ুইটি অহল্যাবাইকে তীহাদের সমস্ত সম্পত্তি প্রদানকরিতে ইচ্ছুক হইয়াছিলেন। অহল্যা- বাই তীহাদিগকে বলিলেন, *শাপনারা এই অর্থ ধন্মার্থে ব্যয়করুন। *তাহা হইলেই আমি পরিতৃপ্ত হইব। আপনাদের *অর্থেরও সদগতি হইবে”। বিধবাদ্ধয় তাহার অনুমতি করুম তাহাই কারয়াছিলেন। কোন মৃত প্রজার পত্ী তাহার নিকটে দত্তক-গ্রহণের অনুমতি প্রার্থনার সময় উপচৌকন দিতে চাহিলে তিনি তাহা লইতেন না। ইহাতে তাহার প্রধান প্রধান কর্ম্মচারিগণ তীহাকে বলিতেন, «প্রজা রাজকীয় বিধি অনুসারে রাজ-প্রাপ্য উপঢৌকন দিতে বাধা । আাপনি তাহ! লইবেন না কেন” ? তাহাতে তিনি এই উত্তর করিতেন যে, “প্রজাকে দত্তকপুত্র- গ্রহণের জন্য রাজার নিকটে অনুমতি প্রার্থনা করিতে হয় এবং রাজাকেও অনুমতি দিতে হয়, ইহাই ধর্নশান্ত্রের আদেশ । কিন্তু ত্জন্য তাহার নিকট,হইতে অর্ধ গ্রহণ- (করিতে শান্্র আদেশ করেন নাই। ইহা! সবেচ্ছাচারী, বে কোন উপায়ে ধন-বৃদ্ধিঃকাঁমী রাজার রাজতন্ত্রের নিজ- ( ৫০৪ ) রচিত বিধি মাত্র । ইহা! প্রাচীন শান্ত্রবিধি নহে । অহল্যা- বাইর দরঁয়া-স্েহের তুলনা দৃষ্ট হয় না। ১৭৯৫ খ্রীষ্ডে উত্তর ভারতে ভীষণ দু্তিক্ষ উপস্থিত হইলে তথা হইতে দুতিক্ষত্রিষ্ট বু সহস্র লোক দলে দলে অহল্যাবাইর রাজ্যে আশ্রয় প্রার্থী হইয়! আগমন করিয়াছিল। অহল্যা- বাই তাহাদের জন্য নিজের অন্নভাগারের দ্বার সদা উন্মুক্ত করিয়া দিয়াছিলেন। শ্রাদ্ধাদি ধর্মকর্ম অনুষ্ঠান সময়ে সাধারণতঃ লোক ব্রাঙ্ষণ ও স্বজাতীয় আত্মায় বা অন্য জাতীয় মিত্রগণকে ভোজন করাইয়া থাকে । কিন্তু দরিদ্র চণ্ডালাদি ইতর জাতিকে প্রচুররূপে চর্বক্ চোষ্য লেহা পেয়-প্রদানে পরিতৃপ্ত করে না। সেইজন্য অহল্যাবাই . ইহাদিগকে মধো মধ্যে নানাবিধ উত্তমোত্তম দ্রব্য ভোজন- করাইতেন ও উত্তম উত্তম বস্ত্র প্রদানকরিতেন। মন্ুষ্যজাঁতির প্রতি তীহার দয়া-স্সেহের কথা ছাড়িয়া দিয়া পশু-পক্ষী প্রভৃতি জীবের প্রতি তাহার দয়া-্মেহের কথা শুনিলে বিন্মিত হইতে হয়। পক্ষিগণ ক্ষেত্রের শম্ত তক্ষণকরিয়া কৃষকের ক্ষতি করে বলিয়া তাহারা সর্বত্রই কৃষক কর্তৃক বিতাড়িত হইয়া থাকে । অহল্যাবাইর প্রাণে ইহা সহিত না।. তিনি পতঙ্গগণের ভক্ষণের নিমিত্ত একটি স্বতন্ত্র শসাক্ষেত্র নির্দিষ করিয়া রাখিয়াছিলেন। পতজগণ 'নানাস্থান হইতে বিতাড়িত হইয়! তথায় নির্ভয়ে আনন্দে শহ্য, ভক্ষণকরিত। মৎস্থের প্রতি তাহার, দয়ার কথা (৫৫) শুনিলে চমণ্ুকৃত হইতে হয়। মত্স্তগণের ভক্ষণের বিমিত্ত নর্্দানদীর জলে প্রতিদিন ভূরি ভূরি খাদাত্রব্য নিক্ষিপ্ত হইত। তিনি যখন যে তীর্ঘে গমনকরিয়াছেন, তথায় এত অন্ন-বন্ত্র ও ধন বিতরণকরিয়াছেন যে, তাহার ইয়ত্তাই হয় না। ভারতে এমন তীর্থ ই নাই, যেখানে অহল্াযাবাইর কীর্তি নাই। কাশীতে “অহল্যাবাই- ত্রহ্মপুরী”তে তাহার বৃহ 'অন্নসত্রে অদ্যাপি বনুলোক ভোঁজনকরিয়া তৃপ্ত হইয়া থাকে । কাশীর “অহল্যাবাইর ঘাটে”র উপ্নর উচ্চছূর্গতুলা বৃহ প্রস্তরময় প্রাসাদের মাধো এ অন্মলত্র এখনও চলিতেছে “অহল্যাবাইর ঘাটে”র উপরিস্থ এ ন্নসন্্রের একটি কক্ষে এখনও প্রহরে প্রহরে | স্মধুর “নহবত”-বাদা-ধর্বনি শ্রোতার কর্ণকুহর পরিতৃপ্ত- করিছেছে। “অহল্যাবাইর ঘাটের মত অমন স্থন্দর সু পরিচ্ছন্ন প্রস্তরনির্শিত প্রশস্ত ঘাট ুত্রাপি নাই বলিলেই চলে। কত্তকাল পূর্বে ইহা নির্িত হইয়াছে, কিন্ত অদ্যাপি নৃহনবত প্রতীয়মান হইয়া থাকে। কাশীতে ইছাই সান্ধ্য সমীরণ-সেরনের .একমাত্র স্থান। কাশীর " “অছল্যাবাই ঘাট”, ৬বিশেশ্বরের মন্দির, মনি কর্গিকাধাট” প্রভৃতি, এবং গয়ায় বিকন্যাত প্রস্তর শিল্পের, নিদর্শন বিষুপাদমন্দির প্রস্ৃতি পুণ্যতীর্থ অদযাপি তীয় পবিত্র রা ঘোষগ্মকরিতেছে। তিনি দি্লী 'হইতে ৪2 ( ৫০৬ ) পুরী পর্যন্ত এক স্থদীর্ঘ স্থপ্রশস্ত পথ নিম্মাণকরাইয়া পথিকগ্ণের যে, কি মহান উপকার করিয়াছিলেন, ডাহা বস্তৃতঃই অবর্ণনীয়। পথিকগণ ক্লান্ত-শ্রান্ত হইয়া ফল- উনি বুক্ষের স্বণীতল ছায়ায় বসিয়! বিশ্রাম করিবে, এবং উহাদের ফল ভক্ষণকরিবে, এবং পক্ষিগণ এ সকল বৃক্ষের শাখায় নীড় নিম্মাণকরিয়া বাসকরিবে, এই উদ্দেশে তিনি এই বিখ্যাত সুদীর্ঘ স্থৃপ্রশস্ত পথের ছুই পার্থে নানাবিধ ফলবৃক্ষ রোপণকরাইয়াছিলেন। ইহাতে তাহার প্রভূত অর্থ বায়িত হইয়াছিল। তাহার শশুর মল্হর্রাও মৃত্যুর সময় ৭০ লক্ষ টাকা বাষধিক আয়ের সম্পত্তি এবং ১৬ কোটি টাকা নগদ ও বন্তুসংখ্যক ম্ণি- রত্বাদি বলুমূল্য সম্পত্তি রাশিয়াগিয়াছিলেন। শুনিভে পাওয়া যায় যে, অহল্যাবাই এই ১৬ কোটি টাকাই পুণা- কাধ্যার্থে ব্যয় করিয়াছিলেন । মল্হর্রাওর মৃত্যুর পর তাহার কোষাগারে ১৬ লক্ষ টাকা সঞ্চিত আছে, এই সংবাদ অবগত হইয়া রাঘোবা পেশোয়া উহা আত্মসাৎ করিবার জন্য অহল্যাইকে দূতমুখে জানাইয়াছিলেন যে, “আপনার হ্বর্ীয় শ্বশুর মহাশয় আমাদেরই বংশের ভৃত্য হইয়। অনেক কোটি টাকা উপার্ডজনকরিতে সমর্থ হইয়া- ছিলেন। ইহা আমাদেরই গৌরবের কথা, তাহাতে আর , কোন সন্দেহ নাই । কিন্তু সমপ্রতি আমাদের সৈম্তপোষণ- ব্যয়ের নিমিত্ত আমাদের কোষাগারে অর্থাভার ঘটিয়াছে। ( ৫০৭ ) আপুনি আমাদের ভৃত্যের পুত্রবধূ। অতএব এ সময়ে : আর্পনার শ্বশুরের প্রভুবংশের উপকার সুধনকর! আপনার একান্ত কর্তব্য কম্ম। আপনার শ্বশুরের অর্থ- দ্বার আমাদিগকে সাহাযযকরা আপনার উচিত”। অহল্যাবাই রাঘোবার দুষ্ট অভিপ্রায় অবগত হইয়া দৃত- মুখে তাহাকে জানাইলেন, “মামি আমার কোষাগারে সঞ্চিত অর্থগুলি দানাদি ধর্্মকণ্ার্থে ব্যয়করিবার জন্য রাখিয়াছি। আপনি ব্রাহ্মণ স্ততরাং আপনি প্রতিগ্রাহী ব্রাহ্মণের ন্যার়্ উহা গ্রহণকরিতে পারেন। আমি এ অর্থগুলির উপ্র তুলসীপত্র রাখিয়া ও উহাতে গঞঙ্জাজল স্লিঞ্চনকরিয়। * দানমন্ত্রপাঠপুর্বক উহা উৎসর্গকরিয়া একাদশী সংক্রান্তি বা পুণিমা পুণ্যতিথিতে উহা আপনাকে দ্বানকরিতে পারি। আপনি এইরূপে এই দান গ্রহণ- করিতে পারেন” । রাজত্বাভিমানী মহা্দীস্তিক রাঘোব। অহল্যাবাইর এইরূপ কথা শুনিয়া অহল্যাবাইকে লিখিয়। জানাইলেন যে, তিনি যাজনাদি-উপজীবী প্রতিগ্রাহী ব্রাহ্মণ নহেন। সুতরাং তিনি এঁরূপে দান গ্রহণকরিতে পরস্তত নহেন। কিন্তু যুদ্ধে জয়লাভ করিয়া এ টাকা" লইতে প্রস্তুত আছেন। তীহাকে, আপাততঃ যুদ্ধদান করিলে তিনি সাদরে উহা গ্রহণকরিতে প্রস্তুত আছেন। অহল্যাবাই রাঘোবার এই কথার এই উত্তর দিলেন যে, ক্ষুদ্ধ মরি, সেও ভাল, তথাপি দানি ধর্ঘমকর্দের জন যে (৫০৮ ) অর্থ বায়করিৰ বলিয়া সংকল্পকরিয়াছি, তাহা অন্য + কর্পের "নিমিত্ত কখনই ব্য়করিব না”। রাঘেবি আহল্যাবাই কর্তৃক এইরূপে প্রতাখ্যাত হইয়া! তাহার বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণ। করিলেন ও যুদ্ধের নিমিত্ত প্রস্তত হইতে লাগিলেন। নিরূপিত দিবসে তিনি সৈন্য-সামান্তে পরিবৃত হইয়া নিরূপিত যুদ্ধস্থানে উপস্থিত হইলেন। অহল্যাবাইও, যুদ্ধবেশে সড্জিতা পাঁচশত দালীর সহিত তথায় উপস্থিত হইলেন। রাঘোবা, অহলাবাইর স্ত্রী সৈন্যকে আক্রমণকরিবার জন্য নিঞ্জের “সন্যাধাক্ষাকে আজ্ঞ। দিলেন। সৈন্াধ্যক্ষ বলিল, “মহারা্রীয় সৈম্ত- পেনাপতিগণ স্ত্রীলোকের সহিত যুদ্ধ করিতে সনিচছুক” | তখন রাঘোবা অহল্যাবাইর "নিকটে উপস্থিত হইয়া জিজ্ঞস। করিলেন, “আপনার পুরুষ সৈন্য-দামন্ত সকল, যুদ্ধকরিতে হাসে নাই কেন”? অআহল্যাবাই বলিলেন, “আমরা পেশোয়ার ভূত্য। প্রভুর সহিত যুদ্ধকরিয়া কৃত প্রভুদ্রোহী হইতে চাহি না। পক্ষান্তরে ভৃত্য বধ- কর! যদি আপনার অভিপ্রেত হয়, তাহা! হইলে আপনি আমাদিগকে বধকরিয়া আমার ধর্মকর্ম অনুষ্ঠানার্থে রক্ষিত মর্থগুলি অনায়াসেই লইতে পারেন । পারলৌকিক ধর্্মানুষ্ঠানে ব্যাথা উতপাদনকর! ও ভূতা বধকরা যদি আপনার ধর্ম হয়, ত্বাহ! হইলে আপনি অনায়াসেই এ ধর্ণের অনুষ্ঠান করিতে পারেন। , ইহাতে মামি অগুমাত্র (৫৯৯) ভীত-চকিত নহি”। কর্তব্যজ্ঞানসম্পন্না প্রকৃত মহারাপ্্ীয মূহিলা ধর্ধ্মার্থে প্রাণের মমতাকে তুচ্ছ জ্ঞানকরেন,। তাহার নিকটে প্রাণ অপেকা ধর্ম বড়। ত্রাঙ্মণ পুরু রাঘোবা শূদ্রা মহিলা অহল্যাবাইর এই প্রকার ধর্্মাবুদ্ধি ও তেঞীঃ- সূচক রাজনীতি-কৌশল-পূর্ণ কথা শুনিয়া লজ্জিতবৎ প্রতীয়মান হইলেন। তাহার প্রকৃত লজ্ডাবোধ 'হইয়া- ছিল কি না, তাহা অন্তর্যামী ভগবানই জানেন। যখন তিনি দেখিলেন যে, তীহার সৈন্য-সামন্তগণই নারীদিগের সহিত যুদ্ধক্রিতে অনিচ্ছুক হওয়ায় তাহার অভিলাষ পূর্ণ হইল না, তখন সেস্থলে অহল্যাবাইর নিকট হইতে মানে মানে বিদ]যু লওয়াই তিনি বুদ্ধিমানের কার্য বলিয়! বিবেচনা করিলেন। তাহার নিজের সৈন্য-সামন্ত সকল নারীগণের সহিত যুদ্ধ করিতে চাহিতেছে না, এ কথা মহল্যাবাইর নিকষ্ট প্রকাশ করিতে লজ্জা বোধ করিয়া__ প্রকৃত কথ বাক্ত না করিয়৷ অহল্যাবাইকে বলিলেন, “তোমার শ্বশুর আমাদের অনেক লৰণ তক্ষণকরিয়াছে, তুমি তাহারই পুত্রবধূ। একে তাহার পুত্রবধূ, তায় আবার বিধবা, তাহাতে আবার একটিও পুরুষ-সৈন্য ভোমার সঙ্গে নাই। স্থতরাং তুমি আমাদের ক্ষমা ও দয়ারই পাত্রী। অর্এব এ যাত্রা! তোমার সহিত যুদ্ধ কর্সলাম না| পাঁচশত মাত্র অবলার সহিত আমার প্রবলা বাহিনী যুদ্ধকরিয়৷ জয়লভ করিলেওোকে বলিবে, “ওরূপ জয় জয়ই নয়”। এরূপ ( ৫১০ ) জয়ে কোন “বাহাছুরী” নাই। তাই এ যাত্রা, তোমার সহিত ধুদ্ধ করা হইল না”, এই কথ বলিয়া রার্থোব! স্বকীয় সৈশ্যমগুলীর দ্রকে চলিয়া গেলেন।: অহল্যা- বাইও পাঁচশত স্ত্রী-সৈম্ সহ যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগকরিয়া স্বস্থানে প্রস্থানকরিলেন। রাঘোব! যেরূপ কুটিল প্রকৃতির লোক ছিলেন, তীহার স্ত্রীও, তক্রপাই ছিলেন। অহল্যাবাইর অন্তঃকরণটি খুব নির্মল স্থুন্দর ছিল। কিন্ত তিনি সুপ্রী সুন্দরী রমণী ছিলেননা। একদ| রাঘোবার স্ত্রী অহল্যাবাই সুন্দরী কি না, তাহা জানিবার নিমিত্ত ইন্দোর-রাজবাটীতে একটি দাসী পাঠাইয়াছিলেন। দাসী, অগ্ল্যাবাইকে দেখিরা রাঘোবার স্ত্রীর নিকটে গিয়। বলিয়াছছিল, “অহল্যা- বাই দেখিতে তেমন সুন্দরী ন| হইলেও, তাহার মুখমণ্ডল হইতে যেন একটা অসাধারণ জ্যোতি; বা তেজ নির্গত, হইতেছে, এইরূপ বোধ হয়”। রাঘোবার স্ত্রী বলিলেন, “সে যাহা হয় হউক, তজ্জগ্ত আমি ভাবিত নহি। অহল্যা- বাই সুন্দরী না হইলেই হইল। সে তন্তন্দরীনয়, তাহা হইলেই ,হইল”। রাঘোবার স্ত্রী খুব সুন্দরী ছিলেন।, একদা জয়পুরের মহারাজার নিকটে হোল্করু-রকারের প্রাপা প্রায় চারি লক্ষ টাকা বাকি পড়িয়াছিল। তুকোজিরাও হোল্কার্‌ তখন ইন্দোর-রাজ্যের প্রধান মন্ত্রী হইয়াছিলেন। তিনি জয়পুররাজের তদানীন্তন প্রধান মন্ত্রী দওয়ান্‌ দৌলতরামের নিকটে সেই প্রাপ্য টাকার! ( &১১ 0 জন্য ক্ষয়েকবার “তাগাদা” করিয়া সেই টাক আদার করিতে পারেন নাই। তুকোজিরাওর সহিত গোয়ালিয়রের' মহারাজ মহদাজী সিদ্ধিয়ার সৈন্যাধ্যক্ষ জিউব! দাদা বক্চির সহিত কোন কারণবশতঃ বিবাদ ঘটিয়াছিল। জিউবাদাদা দিওয়ান্‌ দৌলতরামকে লিখিলেন, “মাপনি তুকোঞ্জিকে & টাকাটা দিবেন না। যদি তুকোজি এ টাকার জন্য আপনাদের সহিত বিবাঁদকরিতে উদ্যত হয়, তাহা হইলে আমি আপনাদ্দিগকে সাহায্যকরিতে প্রস্তুত আছি, জানিবেন। * দ্িওয়ান্‌ দৌলতরাম তুকোজীকে লিখিলেন, , “আপনাদের প্রাপ্য টাকা বিনা আপত্তিতে আমরা চঢুকাইয়৷ দিতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু জিউবা দাদা বক্সি বলিতেছেন, এ টাকাটা তাহারই প্রাপ্য। অতএব” আপনাদের ছুইঞ্জনের মধ্যে যিনি প্রবল হইবেন, তিনিই আমাদের নিকট হইতে এ টাকা লইতে পারেন”। তুকোজি, দিওয়ান দৌলতরামের অতি প্রায় বুঝিতে পারিয়া' যুদ্ধের নিমিত্ত প্রস্তুত হইতে লাগিলেন। কিন্তু জিউবা দাদা তুকোজির প্রস্তত হওয়ার -পূর্ব্বেই তুকোঙ্গীকে সহলা আক্রমণকরিলেন। যুদ্ধের নিথিন্ত সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত না হওয়ায় তুকোজি সেযাত্রায় পরাজিত হইলেন। তুকোজির অনেক সৈগ্ঠ * কয়েকজন" দক্ষ সেনাপতি সে যুদ্ধে হত হওয়ায় তিনি ুদ্ধক্ষেত্র হইতে পলায়ন, করিয়াছিলেন তিনি জয়পুর হইতে দ্বাধিংশতি- ( ৫১২.) ক্রোশ দুরে “ব্রাহ্মণ গাও”-নামক স্থানে অবস্থিত, একটি দুর্গের মধ্যে পলায়নকরিয়া নিজের প্রাণ রক্ষাকরিয়াছিলেন্‌। তুকোজি রাও এইরূপ বিপন্ন হইয়া তাহার বিপর্তি-বার্ত জানাইবার জন্য ও শীপ্ উপযুক্ত অর্থ ও সৈম্য-প্রেরণের নিমিত্ত অহল্যাবাইর নিকটে গোপনে একটি লোককে প্রেরণকরিয়াছিলেন। অহল্যাবাই সে সময়ে নর্্মদানদী- তীরস্থ মহেশ্বরক্ষেত্রনামক তীর্থে ধর্ম্ানুষ্ঠানার্থ অবস্থিতি করিতেছিলেন। রাজকার্ধা করিতে করিতে র্লান্ত-শ্রান্ত হইয়া পড়িলে তিনি এইখানেই কয়েকদিন ধর্মানুষ্ঠানে রত হইয়৷ শান্তিলাভ করিতেন। ঠিনি তুকোজির পরাজয় ও পলায়নবার্তা শুনিয়া মহাক্রোধসুচক স্বরে বলিলেন, “কি! তুঁকোজি পলায়ন করিয়া প্রাণরক্ষা। করিয়াছে? মানরক্ষা না করিয়া প্রাণরক্ষার্থ পলায়নকরা কাপুরুষের কার্যয। সে যুদ্ধে মরিল না কেন? এরূপ লোক'মরিয়! গেলে কোন ক্ষতি ছিল না। ও2, শেষটা এই বৃদ্ধাবস্থায় তুকোজির কাপুরুষতার দরুণ সিন্ধিয়ার একটা ভূত্যের হস্তে জিউ- বার হস্তে আমার এত অপমান !! ইহা! কখনই সহা হয়, না”। এইরূপ মাক্ষেপ প্রকাশকরিয়া অহল্যাবাই সেই বার্ভাবাহককে বলিলেন, “যাও, তুকোজির নিকটে গিয়া বল.যে, পে যেন অপুমাত্র ভীত চিন্তিত ও হতাশ না হয়। “হটাৎ আক্রমণকারী, কুটবুদ্ধি, কাপুরুষোচিতবাবহারকারী জিউরাকে যেন সে উপযুক্ত শিক্ষা, দেয়। আমি তুকোজির ( ৫৩ ) সহাযোর জন্য সমুদ্রের তরলের ন্যায় যুদ্ধক্ষেত্র সৈন্য- সমূহে ব্যাপ্ত করিয়া দিতেছি এবং সৈম্-সমুদ্রের উপরে অর্থের সেতু নিশ্মাণকরিয়া দিতেছি। আর" যুদ্ধক্ষেত্র হইতে পলায়নকরিয়া তুকোজির সামর্থা ও উৎসাহ যদি নষ্ট হইয়া গিয়া! থাকে, সে যদি যুদ্ধ করিতে অক্ষম হয়, তাহা হইলে তাহাকে বলিও যে, আমি স্বয়ং শীঘ্বই যুদ্ধার্থ প্রস্তত হইয়৷ যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হইতেছি” | এই বলিয়া তিনি তুকোজির নিকটে বহুপংখ্যক সৈগ্য ও কয়েক লক্ষ টাকা পাঠাইয়া দ্িলেন। তুঁকোজি উপযুক্ত সৈন্য ও অর্থ পাইয়া জিউবা দাদ বক্সির সহিত তৃমুল সংগ্রামে প্রবৃত্ত হইলেন। প্রায় তিন মস পর্যান্ত এই যুদ্ধ চলিয়াছিল | অবাশেষে 'জিউবাদাদা তুকোজির নিকটে পরাজিত হইয়া ক্ষম। প্রার্থনা, করায় এই যুদ্ধের অবসান হুইয়াছিল। এই যুদ্ধ সম্বন্ধে স্যার্জন্‌ ম্যাল্কম্‌ শুই কথ। লিখিয়াছেন যে, “তুকোজি ও জিউবাদাদার মধ্যেই পরম্পর কলহ উপস্থিত হওয়াতেই এই যুদ্ধ সংঘটিত হইয়াছিল । নতুবা দিন্ধিয়। ও হোল্কর্‌ এই ছুই বংশের মধ্যে পরস্পর মনোমালিগ্ বশত: এ যুদ্ধ স্টে নাই। উভয়ের ছুই কর্মচারীর দোষেই ইহা ঘটিয়া- ছিল। অহল্যাবাই যুন্প্রিয়া ছিলেন না। তিনি সদাই শাস্তিপ্রিয়া ছিলেন। তাহার রাজ্যে হিন্দু মুদলমান প্রভৃতি পরম্পর বিরুদধধর্মাবলনী প্রজাগণ তুল্য "সুখ শান্তি উপভোগকরিয়া বাসকরিত। রাজকীয় কার্থ্যে (৫১৪ ) হিন্দুর ন্যায় মুনলমানকেও তিনি নিযুক্ত করিতেন। 'তিনি, মুসলমান 'প্রজা বা কর্মচারীর প্রতি বিদ্বেষ বা পক্ষপাত' প্রদর্শন করিতেন না। জমান অধিকার প্রদান করিতেন তিনি কাহারও খোসামোদ ভালবাসিতেন না। তিনি চাটুভাবীকে অত্যন্ত ঘ্বণাকরিতেন । কেহ কেহ তীহাকে ্রাহ্মণ ও সন্নাসীর পক্ষপাতিনী বলিতেও কুষ্টিত হয়েন নাই। কিন্তু তিনি ব্রাহ্মণের কোন দোষ দেখিলে ত৫্‌- ক্ষণাত তাহাকে ভবিষ্যতের জন্য সাবধান করিয়া দিতেন । তিনি বড়ই স্পষ্টবন্তুীী ছিলেন। একদা এক ব্রাঙ্মণ কিঞিত শর্থ প্রাপ্তির প্রত্যাশায় তাহার অতিরিক্ত প্রশংস বর্ণনাকরিয়। বনুষ্লোকপুর্ণ একখানি গ্রন্থ রনাকরিয়া -তাহাকে গুনাইয়াছলেন। অহল্যাবাই এই গ্রন্থখানি আদ্যোপান্ত শুনিবার অভিপ্রায় প্রকাশ করিলে গ্রন্থকার আনন্দে অধীর হইয়াছিলেন। তিনি মনে করিয়াছিলেন, এইরূপ গ্রন্থ অহল্যাবাইর মনের মত না হইলে তিনি ইহা কখনই আদ্যোপান্ত শুনতে চাহিতেন না। কারণ, রাজ- কার্যে তিনি এতই ব্যস্ত যে, অন্য কারধ্যের জন্য তাহার এক মুহুর্ত মাত্র সময়ও ঘটিয়৷ উঠে নাঁ। তীহাকে একট! বা দুইটা শ্লোক শুনাইবার অবসরলাত অন্য কবির ভাগ্যে ঘটিয়। উঠে না.। আর তিনি যখন আমার এতগুলি কবিতা শুনিতে "ইচ্ছ। প্রকাশ করিয়াছেন, তখন নিশ্চয়ই এইবার আমার সৌভাগ্মের চক্র শীত্রই ঘুরিতে আরম্ভ করিবে। * এইব্ধপ (৪১৫ ) আশান্বিত হইয়া এ ব্রাহ্মণ স্বরচিত গ্রন্থখানি অহল্যাবাইকে আদ্যোপান্ত শুনাইয়াছিলেন। শুনাইবার পর অহল্যা বাই তহার নিকট হইতে এ গ্রস্থখানি লইয়। একজন ভূতাকে নিকটে আসিতে ইঙ্গিত করিলেন। ভৃত্য নিকটে আসিলে তাহার হস্তে এ গ্রন্থখানি অর্পণকরিয়া বলিলেন, “এই গ্রন্থখানিতে একটি প্রস্তর বাঁধিয়া নন্্মদা নদীর জলে নিক্ষেপকরিয়া আইস। যেন এখানি ভাসিয়া না'উঠে। ভাসিয়! উঠিলে ইহা পুনরায় লোকের নেত্রগোচর' হইবে” | কৰি ব্রাহ্মণটিকে বলিলেন, “মহাশয়, আমি অতি দীনা হীন! নারী। আমি এত অতিরিক্ত প্রশংসার যোগ্য * নহি। নিজে নিজের অত অতিরিক্ত প্রশংসা শুনিলে পাপ হয়। ঠাকুর, আমাকে পাপগ্রস্ত করিবেন না” এই কথা বলিয়া অহল্যাবাই সেম্থান ত্যাগকরিয়া চলিয়৷ গেলেন। এ ব্রাহ্মণের আর কোন সংবাদই লইলেন ন[। একদা অনস্ত.ফন্দী-নামক এক স্থৃপ্রসিদ্ধ কৰি ও স্পঞপ্ডিত ্রাঞ্মণ অর্থপ্রার্থী হইয়৷ তাহার নিকটে আসিয়াছিলেন। অনন্ত-ফন্দী মহারাষ্ট্রের “লাওনীকার” (শীত্ত পদ্ভরচয়িতা ) কবিগণের মধ্যে পর্ববশ্রেষ্ঠ কবি ছিলেন। তাহার কবিতা শুনিবার জন্য লোকসকল কুড়ি ক্রোশ দূর হইতে সমাগত হইত। তিনি চিন্তা নাকরিয়া হূ্তমধ্যে অতি উত্তম উত্তম কবিত্তা রচনা ও পাদ-পূরণ- করিতে পারিডেনণ কিন্তু তিনি' এত বড়, প্রসিদ্ধ কবি ও ব্রাঙ্মাণ হইয়াও, (৫১৬ ) ্রাহ্মণবৃত্তি পরিত্যাগপূর্ববক ইন্দ্রজালবিৎ কোন মুসল- মানের সংসর্গে থাকিয়া ইন্দ্রজাল দেখাইয়! জীবিকা নির্ববাহ- করিতেন। একদ! রাজ্ী অহল্যাবাই কোন কারণবশতঃ কোন ব্যক্তির উপরে অত্যন্ত কুপিত! হইয়াছিলেন। সেই ক্রোধ তাহার মনে তখন অতিশয় অশান্তি উতপাদন- করিয়াছিল। সেই সময়ে হটাত অনন্ত ফন্দী ইন্দোরের রাজবাটীতে উপস্থিত হইয়া রাজ্জীর দর্শনলাভের জন্য প্রার্থন৷ জানাইলে রাজ্জী এইরূপ মনের অশান্তির সময় তাহার দুইটী কবিতা শুনিয়া আমোদ উপভোগকরিবার নিমিত্ত তাহাকে দর্শন দিতে সম্মতা হইলেন। অনন্ত ফন্দী রাজ্ভীর সম্মুখে বসিবা মাত্রই এমন একটি উৎকৃষ্ট কবিতা _রচনাকরিয়া রাজভ্ীকে শুনাইয়াছিলেন, যে, এ কবিতাটি শুনিব! মাত্রই রাজ্জীর চিত্ত মহাপ্রসন্ন হইয়া উঠিল। তিনি অত্যন্ত মানন্দিত হইয়া তৎক্ষণাৎ একজোড়া মূল্যবান অতি উৎকৃষ্ট কাশ্মিরী পাল্লাদার শাল অনন্ত ফন্দীকে পারিতোধিক প্রদান করিলেও তিনি ব্রাঙ্মণ হইয়া মুসল- মানের সহিত ইন্্রজাল দেখাইয়া জীবিকা নরববাহকরেন বলিয়। তীহাকে যথেষ্ট তিরক্কার করিতে কটি করেন নাই। রাজ্জীর তির্কারে অনন্ত ফন্দীর মতি-গতি পরিবর্তিত হইয়াছিল। তিনি, এন্দ্রজালিক বৃত্তি পরিত্যাগকরিয়া ্রাঙ্মাণের বৃত্তি অবলম্বন করিয়াছিলেন রাজী, অহল্যা- (৫১৭: ) বাই ব্রাহ্মণের ভক্ত হইলেও ব্রাহ্মণের দোষ দেখিলে : তিরস্কার করিতেও ক্রুটি করিতেন না। তিনি অশিক্ষিত ব্রাহ্মণ দেখিলে বড়ই দুঃখ প্রকাশ করিতেন। ব্রাহ্মণ- সন্তানের বেদাদিশান্ছ্রে সুশিক্ষার জন্ট তিনি অনেক সংস্কৃত- বিদ্যামন্দির স্থাপনকরিয়াছিলেন । এই বিদ্যামন্দির গুলির কাধ্যপরিচালনের নিমিত্ত তিনি বু অর্থ ব্যয়- করিতেন। অদ্যাপি তাহার কাঁশীন্ম অন্সসত্র-বাটীতে ব্রাহ্মণ ছাত্রগণ অবৈতনিক সংস্কতশিক্ষা পাইয়া থাকে। তিনি অশিক্ষিত নরনারীকে ভয়াবহ জীব বলিয়া মনে করিতেন। কথিত আছে যে, মল্হরুরাওর ঢুই কন্যা তাহার ননন্দা হর্কুবাই ও'উদ্বাবাইকে তিনি নিজে গুরুতর রাভকার্ষা- ভার সত্ত্বেও লেখাপড়া শিখাইয়াছিলেন। অস্কশান্ত্ে তাহার বিদ্যাবত্তা, দেখিয়া রাজন্কবিভাগের' প্রধান প্রধান কর্্ন- চারিগণ বিস্মিত হইয়া .যাইঠেন। রাজব্বসংগ্রহ ও রাজন্ব- বিধির নৃতন ও' সহজ প্রণালী প্রগয়নকরিয়া।তিনি তীহার শ্বশুরেরও বিগ্মায় ৭ মহাসস্তোষ উৎপাদন্করিয়াছিলেন:। রাজ্যশাসন সন্মন্ধেও, নূন ও অনায়াষে কার্াকর উত্তম বিধিষক্চল প্রণয়নকরিয়া' তঙগানীন্তম 'রছ' স্বারীন রাজার প্রধান মেত্রীদিগেরও জ্্ঞাননেত্র: উদ্মীলিত করিয়া ছিলেন: [তাহার মৃতার স্পক্: বু বুসরবীপ্ত ভাছাক পরবর্তী; +বহরাজোর রাজারা 'রাজ্যসংক্রান্ত লোন পরিবর্তন না নুঙ্নরূপে প্রণৃনের। গর়োজনকপ ৪9 (৫১৮) সে*্বিষয়ে অহল্যাবাই কিরূপ মত প্রকাশ করিয়াছেন ঙ্হি' মন্ুসন্ধান করিয়। তাহার মতই মন্গুসরণ করিতেন ! রাজনতিশান্ত্রে তাহার এইরূপ অসাধারণ বুণুপত্তি অবগত হইয়াই শ্যার্জন্‌ মযাল্কম্‌ বলিয়াছেন যে, “অহল্যা- বাইর ন্যায় স্থশিক্ষিতা সৃদক্ষা রাজ্ভী পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল" । অহল্যাবাইর গুণাবলী সম্বন্ধে মহারা্রীয় ভাষায় অনেক গাথা প্রচলিত আছে । বোম্বাই য্যান্থোপলজি- ক্যাল্‌ সোসাইটির সভাপতি (৬০9 [763105171) মিষ্টার এইচ, এ, ফ্যাক্ওয়ার্থ-নামক গুণগ্রাহীর জাতি* একজন ইংরাক্ত সেই সকল গাথা পরিশ্রমপূর্বক সংগ্রইকরিয়। পুস্তকাকারে মুদ্রিত করিয়াছেন । আমাদের "দেশেও ঈলীলর যুদ্ধ, মহারাজ নন্দকুমারের ফাসি, ও তিতুমিরের লড়াই সম্বন্ধে বঙ্গভাঘায় অনেক গাথা প্রচলিত আছে। সেইপ্চল সংগ্রহকরিয়া পুস্তকাকারে মুদ্রিত করিলে ইতিহাস লিখিবার জন্য উত্তম উপাদানসকল সংগুহীত হইতে পারে । অহল্যাবাই শেব দশায় তুকোজির হস্তে রাক্তোর ন্সমন্ত কার্যাভার অর্পণকরিয়া' কোলা ছলশুন্য শান্তিপূর্ণ নর্্মাপনদীভীরস্থ মহেশ্বরক্ষেত্রে বাপ করিয়া পরমেশ্বরের ধ্যান-ধারণায়নিযুক্ত থাকিতেম | রাজনীতি- শান্ত রাজার তিনটি শক্তির উল্লেখ আছে!। বথা--প্রভুশক্তি “উতঙাহকতি-ও মন্ত্রশক্তিন। : এই“জ্িশক্তিসম্পক্স 'রাজারই ( ৫১৯ ) সমস্ত কার্ধাভার মপিত হইলেও, তাহাতে উৎসাহশন্ভ্ি ও মন্ত্রশক্তি নিহিত হইলেও, ' অহলাবাই স্বীয়” প্রভৃশক্কি- রক্ষণে কখনই উদাসীন হয়েন নাই । যিনি তীহারু এই প্রভুশক্তির ব্যাঘাত ঘটাইতে চেষ্টাকরিতেন, অহলাবাই ট্াহাকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়! তাহার জ্ঞাননেত্র উন্মীলিত করিয়া দিতেন । একদা পুণাব পেশোয়া-দরবারের,প্রতি- নিধি ও দু, ইন্দোর-দরবারে নিযুক্ত, শিবাজ্জি গোপালের কন্ম্পটুতা-দর্শনে সন্তুষ্ট হইয়া মাধবরাও পেশোয়! তাহাকে একটি উচ্চপদ প্রধান করিয়া পুণায় নিজদরবারে রাখিতে ইচ্ছুক “হইয়াছিলেন। তুকোঙ্জিরাও, পেশোয়ার মান- রক্ষার্থ শিবাজী গোঁপালকে পুণায় পেশোয়া দরবারে কার্ষা গ্রহণ করিতে অনুমতি দিয়াভিলেন। এই বুদ অবগত হইয়! রাজী অহলাবাই তুকোজিকে নিকটে ডাকাইয়া বলিয়াছিলেন যে, “তোমাদের ব্যবহারে ইহা স্পষ্টই বোধ হইতেছে যে, ইন্দোররাজ্যের সহিত আমার কোন সম্পর্কই নাই। ইহাতে আমার কোন অধিকারই নাই”। তুকোজি এই কথা শুনিয়া বিস্ময়ের চিহু প্রকাশ করিলে তিনি বলিলেন, “এরাজ্যে যদি আমার ,কোন অধিকার থাকিত, তাহা হইলে আমার আজ্ঞ! না লইয়া শিবাজী গোপাল পুণায় পেখোয়/দরবারে ,খিয়া' কখনই ক গ্রহণ করিতে পারিত না। পেশোয়া, শিবাজী গোপা যখন: নির্জ দরবাঁরে* রাখিতে ইচ্ছ। প্রকাশ করিঙ্াছিলেন, ( ৫২০ ) খন সে কথাটা মামাকে একবার জ্ঞাপন করাও কি-উচিত ছিল নাঃ 'শিবাজী গোপাল ইন্দোরে আমার.দরবারেই থাকিয়া পেশোয়া-দরবাবের দৌত্যকার্য; করিবে,'-এইদূপ একটা নিয়ম পূর্বের ধার্যা হয় নাই কি? যাহার' দরবারে সে এতদিন ছিল, অন্য দরবারে যাইবার সময় তাহাকে একবার সেই কথাট! জানান, কি তাহার উচিত কণ্ম নয়? তুমি বা শিবাজী গোপাল আমার অনুমতি ব্যতিরেকে কোন কাধ্য করিলেও আমি অণুমাত্র দুঃখিত নহি | কারণ, আমি এক্ষণে গীতার সার কথ! প্রতিপালনের শ্িমিন্ত সমস্ত ত্যাগ করিয়! মহেশ্বরক্ষেত্রে বাদ করিতেছি । লাত, ক্ষতি, মান, অপমান, জয় পরাজয়। ও নিন্দা-স্তৃতিতে সম'জ্ঞান '“্ষরাই গীতার উপদেশ। এ অবস্থায় এইরূপ সমজ্ঞ্ঞানের সাধনাহই আমার ব্রত হইয়া দড়াইয়াছে। তোমার হপ্ডে রাজ্যভার প্রদান করিয়াছি ।” তুমি এক্ষণে উতসাহ- শক্তি ও মন্ত্রশক্তি-সম্পন্ন হইয়াছ। প্রভুশক্তিসম্পন্ন হইতে ষাহ৷ একটু তোমার বাকি ছিল, তাহাও হুইয়াছে। যাহাই হউক, তজ্জগ্ক আমি অপুমাত্র চিন্তিত নহি। কিন্তু বাপু, আমার এই শেষ কথা, ,আার শ্বশুর মহাশয়ের কীন্তি টা বজায় রাখিয়া যাহাতে পেশোয়ার অনুগ্রহপাত্র হইতে পর, তদ্বিষয়ে লক্ষ্য রাখিও । আমি মরি কি 'ঝাঁচি,'দে সংবাদ তুমি যেরূপ রাখিবে, তাহার পূর্বব লক্ষণ এখন হইতেই প্রকাশ পাইতেছে”। উঁকোড্রিরাও ( ৫২৯১ ) রাজ্জীর এইরূপ কথা শুনিয়া লজ্জায় অজোবদন হইলেন । এবং নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করিবার জন্য নিজগণ্ডে নিজে চপ্রেটাঘাত করিয়া বালকের ন্যায় রোদন করিতে করিতে রাত্ভ্বীর চরণে মস্তক স্থাপনকরিলেন এবং অনুতগ্তচিত্তে বলিতে লাগিলেন, “মা, অপরাধ হইয়াছে । মার্জনা করুন। “কুপুত্র যদি বা হয়, কুমাত| কখনও নয়”। আঁমার কুল-দেবতা স্বয়ং মার্তগুদেব মানবীমুত্তি ধরিঘ্া আমাকে আজ্ঞা করিলেও আপনার অনুমতি বিনা আমি আর কোন কার্যই করিব না। আপনি আমার প্রতি প্রসন্ন হউন, মা, ইহাই আমার একান্তিক প্রার্থনা” | * রাজী 'অহলাযাবাই * তৃকোজীকে অত্যন্ত অনুতপ্ত দেখিয়া বলিলেন, “্ষাও। আর এরূপ যেন না হয়। নিজের কথার মন্ত কার্ধায করিও। লৌকিক মর্যাদা রক্ষাকরিয়া .কারধ্য করিলে পরমেশ্বরের পরম অনুগ্রহ লাভকরিতে পারা যায়। এহিক ও পারজ্রিক মঙ্গল লাধিত হয়”। ঈশ্বরের অনুগ্রহ ' লাভকরিয়। হারা বড়লোক হইয়াছেন, তাহাদের মধ্যে অনেকেই সাংমারিক স্থখে বঞ্চিত। :অনেকেই পারিবারিক দুঃখে জঙ্ভরিভ। অহল্যারাই শ্রীলোক হইয়! যেব্কুপ রাজশক্তির পরিচয় দিয়ান্ছিলেন, তাহার: ৃীন্ত ই্তিছাসে অভিবিয়ল । কিন্তু তিনি, সাংসারিক স্থখে স্থৃখিনী . ছিলেন না, ্ ( ৫২ ) অল্নবয়সে তাহার পিতৃ-মাতৃ-বিয়োগ হইয়াছিল। তাহার পর অষ্ট্রাদশ বধ বয়সে তিনি বিধবা হইয়াছিলেন্ু। তাহার পরু তাহার একমাত্র পুত্র মালেরা এর. অকাল মৃত্যুতে তাঙ্ার হৃদয় ভাঙ্গিয়াগিয়াছিল। তাহার পর মালেরাগর দুইটি পত্রীও সহমৃতা হইয়াছিলেন। তাহার পর তাহার একমাত্র কন্যা মুক্তাবাই তাহার একমাত্র সাত্ুনার স্থল হইয়া দাড়াইয়াছিল। কিন্তু 'সেই মুক্তা- বাই৪ অকালে বৈধবাঘন্ত্রণা পাওয়ায় অহল্যাবাই «যে, কিরূপ কষ্ট অনুভবকরিয়াছিলেন, তাহা অবর্ণনীয়। নুক্তাবাইর একটি পুত্র হইয়াছিল। অভল্যাবাই তাহাকেই রাজোর উত্তরাধিকারী করিবেন বলিয়া নিজের কাছে রাখিয়া তাহাকে প্রতিপালন করিগ্রাছিলেন। “কিন্তু সেই দৌহেত্রটিও যৌবনাবস্থায় উপনীত হইয়া অকালে মুত্বা- মুখে পতিত হইলে অহল্যাবাই শোকের সাগরে নিমগ্ন হইয়াছিলেন। বিধবা কন্যা, মুক্তাবাইও বৈধবাযন্ত্রণ হইতে মুক্তিলাভের নিমিন্ত স্বামীর সহিত এক চিতায় আরোহণ করিয়া এহিক লীলা সম্বরণ করিয়াছিলেন। অহল্যাবাই তাহাকে সহমৃতা হইতে বার বার নিষেধ কদ্দিয়াছিলেন, কিন্তু মুক্তা বাই *বলিয়াছিলেন, “মা, তোমার মৃত্তার পর তোমার ঝুজ্যের প্রজাদিগকে প্রতিপালন: করিবীর জন্য আমাকে সহমৃতা হইতে নিষেধ করিতেচছ কিন্ত'মা, তুমি একবার ভাবিয়া দেখিতেছ নাশ্যে, তোমার' ০৩ ) মৃত্যুর পর আমার ম্যায় সামান্য বিধবার" পক্ষে এত বড় স্কুধীন রাজা সসম্মানে রক্ষীকর! কিরূপ ভয়াবহ ন্যাপার ? আমি ক্রি ম', তোমার ন্যায় শক্তিশালিনী* প্রতাপিনী হইতে পারিব? কর্তবাজ্ঞানহীন রাজা-লোলুপ দুশ্চরিত্র রাজাদিগের হস্তে তখন নিগৃহীত হওয়া অপেক্ষা এক্ষণে মানে মানে পতির সহিত এক চিতায় আরোহণ করিয়া ধর্ম রক্ষাকরাই শ্রেয়” । অহলাবাইর তানেক অনুনয় ও নিষৈধ সাম ও মুক্তাবাই$পতির সহিত এক,.চিতায় আরোহণকরিয়া প্রাণতাগ করিয়াছিজেন। যেন্বলে এই চিতা সজ্জিত হইয়াছিল, ,মহলাবাই তথায় জামাতা ও কন্যার স্মৃতিরক্ষার নিমিন্ত একটি উত্তম স্মৃতিমন্দির নিশ্মাণকরাইয়াছিলেন । 'উপযুগপরি কয়েকটি শেক্ক পাইয়া! অহল্যাবাই জীবন্মতা! হইয়াভিলেন। তিনি গীতা! ও যোগবাসিষ্ঠ-রামায়ণ প্রভৃতি পবিত্র গ্রন্থ অধায়ন্করিতেন বলিয়া এই নকল শোকে উন্মত্ত ও অধীরা হয়েন নাই! এই সকহী গ্রন্থ- শিক্ষা-প্রভাবেই ঠিনি নিজ কর্তৃব্যপালনে সমর্থ ইইয়া- ছিলেন । ফলাকাওক্ষা-বঞ্ভজিত হুইয়া নিজকর্তবামাত্র পালিন- করিতেন । তিনি কর্তৃব্পথ হইতে কখনই ভ্রষ্ট 'হয়েন নাই। শোকসম্তরে প্রগীর্ডিত হওয়ায় জ্রামেই তীহাঁর শরীর জীর্ণ শীর্ণ হইয়া পড়িতে" লঙগগিল। কিন্তু তথাপি তিনি এ অবস্থাতেও, পারলৌকি কশান্ত্-পাঠ. ও কত উপবাসাদি হইতে নিবৃত্ত হয়েন নাই । তীহার প্রজাগণ ( ৫২৪. ) তাহাকে কেবলমাত্র প্রতিপালিকা রাজী বলিয়া মনে করিত ন। তাহার! তাহাকে তাহাদের সাক্ষাৎ জনন বলিয়া মনেকরিত। সেই জন্য তাহারা সময়ে, সময়ে তাহাকে দেখিবার জন্য অতান্ত বাণী হইয়' পড়িত। তিনি তাহাদের অতিশয় আগ্রহ হেতু মাহশ্বরক্ষেত্র ত্যাগকরিয়া ইন্দোরে আসিয়া! জীবনের অবশিষ্ট কাল বাস করিয়াছিলেন । উ।হার মৃত্া যতই নিকটস্থ হইতে লাগিল, তিনি ততই পুণাকাধোর মাত্রা ঝাড়াইতে ফ্লাগিলেন। শ্রই সময়ে তিনি “মুক্তদ্বারঅন্নসত্র”নামক একাট দীন-ভোজনা- লয় স্থাপন করিয়া প্রতিদিন এক সহজ াঙ্মাণের ভোজনের বাবস্থা করিয়াছিলেন । এই সত্রে কেবলমাত্র বে, ব্রাহ্মণ- _ ভোজনেরই বাবস্থা হইয়াছিল, তাহ নহে, কিন্তু এই জত্রে যেকোন জাতীয় ও যে কোন ধন্মাবলন্বী দরিদ্র, অন্ধ, খষ্ভী, আতুর প্রভৃতি আসিয়া যাহাতে খাদা ও*্বন্্র পাইতে পারে, তিনি তাহ্লারও বাবস্থা করিয়াছিলেন। তাহাদের একট সংখ্যাঃবিধিবদ্ধ করেন নাই। তীহার প্রজাগণ তাহাকে দেখিতে ইচ্ছা করিত বলিয়া তিনি তাহাদের বাসনা- পরিপুরণের জন্য তাহার শেষ অবস্থাতে ও অন্তঃপুর হইতে দরবার-গুহে আসিয়া বাঁসতেন। এরূপ প্রজারপ্িকা কোন রাজ্ঞী এ পৃথিবীতে জন্মিয়াছে কিনা সন্দেহ । ্ ঈদৃশী স্শিক্ষিতা ধর্ম্নিষ্ঠা রাজী ভারতে জন্মিয়াছেন বলিয়াই ভারত গৌরবান্বিত। পৃণ্যশ্লোকা প্রাভঃস্মরণীয়। ( ৫২৫) রাজ্জী অহল্যাবাই ১৭৯৫ গ্রীষ্টাজে শ্রাৰণ-মাসে কৃঞ্ঝ! চতুর্দশী তিথিতে ষাট বর বয়সে তাহার প্রজাবর্গকে শোকসাগরে ভামাইয়া অনন্ত দিব্য ধামে গমন করিয়া- ছিলেন। তাহার পরলোকপ্রাপ্তির পর তাহার পরম- স্নেহাম্পদ, পুত্রসম। নিজগ্তুণে উন্নতির চরম মীমায় আৰ মহারাজ তুকোজারাও হোল্কর্‌ বাহাদুর এডি সিংহাসনে অধিঝ্ঞড হইয়াছিলেন। তুকোজীর বংশধরই এক্ষণে ইন্দোরেন্ব অধিপতি । সমাপ্ত ।